Divorce Part-20

0
5029

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 20

মাঃ এমন একজনকে যে কোনদিন তোমাকে বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারবে না,,??

হৃদয়ঃ বাবা হওয়ার স্বাদ আমার সিয়াম আমাকে দিয়ে দিয়েছে,,,, আর কাউকে চাই না আমি,,,,

মাঃ সিয়াম যতই তোমাকে বাবা ডাকুক সে তোমার নিজের ছেলে নয়,,,, সেটা তুমিও জানো আর বাকি সবাই,,, আবেগে জীবন কাটে না হৃদয়,,, একটা সময় আবেগ ফুরিয়ে যায়,,,, সামনে দাঁড়ায় কঠিন বাস্তবতা,,,,,

হৃদয়ঃ অন্তরা শুধু আমার আবেগ নয় মা,,, শুধু আবেগ হলে হয়তো সময়ের সাথে হারিয়ে যেতো,,,, কিন্তু ভালোবাসা সময়ের সাথে হারায় না বরং বাড়তে থাকে,,,, আর ভাইয়া তার প্রমাণ,,,,

মাঃ তুমি চাইলেও রিয়াদের মতো হতে পারবে না,,, একটা সময়ে গিয়ে তোমার মনে হবে এই ভালোবাসার থেকে বাবা ডাক শোনার আনন্দ বেশি,,, তখন অন্তরার কী হবে,,,??

হৃদয়ঃ পৃথিবীতে অনেক মানুষের সন্তান হয় না,,,, তাতে কী তারা বাঁচে না,,,

মাঃ হয়তো বেঁচে থাকে,,, কিন্তু ভালো থাকে না,,, আর তারা ভাগ্য কে মেনে নেয় কিন্তু তুমি নিজেই নিজের ভাগ্য এমন করছো,,,

হৃদয়ঃ আমি এতো কিছু জানি না মা,,,, আমার শুধু অন্তরাকে চাই,,,, আর কিছু না,,,,।

মাঃ কিন্তু আমি এমন কাউকে ছেলের বউ করতে পারবো না,,, যে নাতি নাতনির মুখ দেখাতে পারবে না,,,,

হৃদয়ঃ মা,,,,, তুমি এই কথা বলছো,,,, এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না,,,,, এখানে অন্তরার কী দোষ তুমি বলো,,,,?? ওর জীবনটা এমন হওয়ার পিছনে আমার মতো একজন পুরুষ দায়ী,,,,তোমার মতো কোন একজন শাশুড়ী নামের মহিলা দায়ী,,,, ওর দোষ কোথায়,,,??? আমি ওর পাশে থাকবো সে যাই হয়ে যাক,,,,, তবে তোমার থেকে আমি এটা আশা করিনি,,,, ভাবেছিলাম তুমি অন্তত অন্তরার কষ্টটা বুঝবে,,, কিন্তু আমি ভুল,,,

(হৃদয় আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো,,,,, আর হৃদয়ের মা পেছন থেকে রহস্যময় একটা হাসি দিলো,,,)

মাঃ কী যেন বলেছিলে শরীফ চৌধুরী,,,,,। তোমার ছেলেরা তোমার মতোই হবে,,,, কারণ তোমার রক্ত বইছে তাদের শরীরে,,,, আমি তোমাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম,,,, প্রমাণ করে দিবো ওরা শুধু আমার সন্তান,,,, জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না,,,, ওরা ওদের মায়ের আদর্শে বড় হবে,,,, আজ আমি চ্যালেঞ্জে জিতে গেছি,,,, আমার দুই সন্তানই আমার শিক্ষায় বড় হয়েছে,,,, ওরা তোমার সম্পুর্ন বিপরীত মেরুর,,,,,
,,,,,

অন্তরার মাঃ কী হলো,,,, এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছো কেন,,,??

অন্তরার বাবাঃ আমাদের মেয়েটা ধুঁকে ধুঁকে মরছে আরাভের মা,,,, সত্যি তো ওর একটা প্রশ্নের উত্তর আজ আমাদের জানা নেই,,,, শেষ হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা,,, আর এই সবকিছুর জন্য আমরা দায়ী ,,,, দায়ী এই সমাজ নামক বিষাক্ত তীরের আঘাত,,,, যার ছুঁড়া তীরে,,, ধুঁকে মরছে আমাদের মেয়ে সাথে আমরা,,,

মাঃ কী করতে পারি এখন বলো,,, তোমরা নয় সবকিছুর জন্য আমি দায়ী,,, বিয়ে দেওয়ার আগে যদি মেয়েটাকে নিজের দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে দিতাম,,,, তাহলে মানুষ আড়ালে কিছু বললেও সামনে কিছু বলার সাহস করতো না,,, জীবনের এই লড়াইটা অন্তরার হয়তো একটু সহজ হতো,,,,

বাবাঃ হুম ঠিক বলেছো,,,, ডিভোর্স অনেকটাই মানুষের ভাগ্য,,, কিন্তু আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আগেই মেয়েকে বিয়ে দেওয়াটা সম্পূর্ণ আমাদের ভুল,,,, আত্মনির্ভরশীল হলে অন্তত কোন ডিভোর্সি বা বিধবা মেয়েকে কারো সংসারের বোঝা হতে হয় না,,, নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে পারে,,, আর সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে বিয়ের আগে ছেলে সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ না নেওয়া,,,,, যার হাতে নিজের কলিজা তোলে দিবো তার সম্পর্কে না জেনে,,, অন্ধের মতো বিশ্বাস করি, আমার মেয়ে ভালো থাকবে,,, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল

মাঃ এখন আর এই ভুল শুধরানোর সুযোগ নেই আমাদের,,,, তবে এবার আর একই ভুল করবো না,,, এখন ঘুমাবে চলো,,, অনেক রাত হয়েছে,,,

বাবাঃ যেদিন অন্তরাকে এই বাড়িতে ফেরত নিয়ে এলাম,,, সেদিন থেকেই এই চোখের ঘুম হারিয়ে গেছে,,,

মাঃ সকালে আবার কাজে যাবে,,, এখন চলো,,,

বাবাঃ হুম চলো,,, (একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো অন্তরার বাবা,,)

জ্যোতিঃ অন্তরা তাড়াতাড়ি বের হ,,,, জ্বর চলে আসবে,,,, এই রাতের বেলা কতো গোসল,,, ও সরি সরি কতো কান্না করবি,,, বের হ বলছি,,, নাহলে দরজা ভাঙবো,,,

অন্তরাঃ আ,,আসছি,,, আমার ড্রেসটা দে

(জ্যোতি অন্তরার একটা ড্রেস দিলো,,, অন্তরা রীতিমতো শীতে কাপছে,,, তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে বের হলো,,,)

জ্যোতিঃ এখন কেন শীতে ঠকঠক করে কাঁপছিস,,,?? এই রাতের বেলায় কেউ শাওয়ার নেয়,,,?? কান্না করবি ভালো কথা,,, পানির ট্যাব ছেড়ে নিলেই হতো,,, শওয়ারই কেন ছাড়তে হবে,,,?

অন্তরাঃ জ্যোতি,,,, শেষ হয়েছে তোর মজা করা,,

জ্যোতিঃ হ্যাঁ,,,, শেষ

অন্তরাঃ আমি বুঝি না,,, একটা সিরিয়াস টাইমে তোর ফান করার কথা মাথায় আসে কী করে,,,??

জ্যোতিঃ তুই তো জানিস আমি এমনই,,,??

অন্তরাঃ হুম জানি,,,

জ্যোতিঃ আজকে অনেকগুলো বাসার খোঁজ নিলাম,,, কিন্তু একা মেয়ে বলে বাসা ভাড়া দিতে চাইছে না,,,, আর বাবাও নাকি মাকে বলেছে,,,, তাদের একটা মেয়ে আছে সেটা ভুলে যেতে,,, মা ফোন করেছিলো,,, বাবাকে লুকিয়ে,,,

অন্তরাঃ(জ্যোতির কথা শুনে মুখটা কালো হয়ে গেলো,,, কানে বাজতে লাগলো ভাইয়া ভাবির কথাগুলো,,,) আমিও বাসায় থাকবো জ্যোতি,,, আর একটা জব করবো,,,নিজের দায়িত্ব নেওয়ার সময় হয়ে গেছে,,, আমি কারো বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না,,,

জ্যোতিঃ কী পাগলের মতো কথা বলছিস,,,?? আঙ্কেল আন্টি তোকে যেতে দেবে নাকি,,,??

অন্তরাঃ অনেক বেঁচেছি তাদের ইচ্ছায়,,, তাদের পছন্দ অপছন্দে,,, এবার নিজের মতো বাঁচার সময় হয়েছে,,, আমার জীবন আজ থেকে আমার কথায় চলবে,,,

জ্যোতিঃ কিন্তু,,,

অন্তরাঃ কোন কিন্তু নয়,,, আগামীকাল তুই অফিসে যা,, আমি অনলাইন আর পত্রিকা দেখে কিছু বাসা সিলেক্ট করছি,,, পরশু শুক্রবার আছে,,, তুই আর আমি দেখতে যাবো,,, আমি বিয়ে করবো না আবার,,, আর না এই বাড়িতে আর থাকবো,,

জ্যোতিঃ হৃদয় ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবাসে অন্তরা,,,, সবার ভাগ্য তোর মতো হয় না,,, তোর কষ্টের পর সুখ হয়তো হৃদয় ভাইয়ার রুপেই পাঠিয়েছে আল্লাহ তাআ’লা,,

অন্তরাঃ হৃদয় ভাইয়াকে মেনে নেওয়ার মানে নিজেকে স্বার্থপর প্রমাণ করা,,, যা আমি কোনদিন হতে দেবো না,,, অনেক কথা শুনেছি কিন্তু আর না,,, আর তোর ঐ হৃদয় ভাইয়ার ভালোবাসা একসময় ফুরিয়ে যাবে,,, সন্তান না দিতে পারায় তার কাছেও তখন বেশী হয়ে যাবো,,,

জ্যোতিঃ একটা সুযোগ দিয়ে দেখ,,, অন্তরা সবার জীবনে দ্বিতীয় সু্যোগ আসে না,,, তোর জীবনে এসেছে,,, সুযোগটা কাজে লাগা,,,,

অন্তরাঃ আমি এতো কথা শুনতে চাই না জ্যোতি,,, ঘুম পাচ্ছে,,, তোর ঘুম পেলে তুইও ঘুমা,,,

জ্যোতিঃ হ্যাঁ,,,, ঘুমাচ্ছি,,,
,,,,

(হৃদয় ধীরে ধীরে সিয়ামের পাশে বসে পড়লো,,,সিয়ামের কাঁপালে একটা চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,,,)

হৃদয়ঃ আমি কী সত্যি তোর বাবা নই সোনা,,, তুই যখন ছোট ছোট পা দিয়ে দৌড়ে বাবা ডেকে কাছে আসিস,,, তোর ছোট ছোট হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরিস,,,, তখন মনে হয় তুই আমার নিজের সন্তান,,,, হ্যাঁ শুধু আমার,,,, আচ্ছা জন্ম না দিলে কী বাবা হওয়া যায় না,,,,??

(হৃদয়ের মা দূরে দাঁড়িয়ে ছেলের আহাজারি দেখছে,,)

মাঃ আমি জানি তুই সিয়ামকে অনেক ভালোবাসিস,,, তুই যতটা ভালোবাসিস রিয়াদও হয়তো ততটা ভালোবাসে না,,,, তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য মাফ করে দিস আমাকে,,,,

(হৃদয় সিয়ামের কপালে আর একবার চুমু দিয়ে ওঠে চলে গেলো,,, হৃদয়ের মা গিয়ে সিয়ামের পাশে শুয়ে পড়লো,,,)

রিয়াদঃ কেমন আছো সিয়া,,,,, হয়তো ভালো আছো আমাকে ছাড়া,,,, আমি ভালো নেই তোমাকে ছাড়া,,, একটুও ভালো নেই,,, একটা অনুভূতিহীন মানুষ হয়ে বেঁচে আছি,,,, কতদিন নিজের সাথে লড়াই করে বাঁচতে পারবো জানি না,,,, দিনদিন ক্লান্ত হয়ে পরছি,,,, খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো তোমার কাছে,,,, সিয়ামকে নিয়ে আমার কোন চিন্তা নেই,,,,, ওকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে তোমার আর আমার ভাই হৃদয়,,, তুমি যে ভালোবাসা হৃদয়কে দিয়েছিলে সিয়ামকে সেই ভালোবাসা দিয়ে ঋণ শোধ করছে হয়তো,,, তাই তোমার কাছে যেতে আমার কোন বাঁধা নেই,,,

(রিয়াদ একটা গিটার হাতে নিয়ে বাজাতে শুরু করলো,,,)

Tere jaane ka gham
Aur na aane ka gham
Phir zamane ka gham
Keya karein,,,??
Raah dekhe nazar
Raat bhar jaag kar
Par teri to khabar na mile
Bahat aayi gayi yaadein
Magar iss baar tum hi aana
Iraade phir se jaane ke
Nahi laana,,, tum hi anna
Meri dheleez se hokar
Baharein jab guzarti hai
Yaaha kya dhoop kya savaan
Hawayein bhi barsaati hai
Humme pucho kya hote hai
Bina dil ke jiya jaana
Bahat aayi gayi yaadein
Magar iss baar tum hi aana
O,,,, koi toh raah woh hogi
Jo meri ghar ko aati hai
Karo peecha sadaaon ka
Suno kya kehna chahti hai
Tum aaoge mujhe milne
Khabar yeh bhi tumi laana
Bahat aayi gayi yaadein
Magar iss baar tumi hi aana,,,,,,,,,,,,,,,,
Marjaavaan,,,,,,,, marjaavaan,,,,,,,,,,,,,,,
{বিঃদ্রঃ আমার খুব পছন্দের একটা গান😊}

রিয়াদঃ আ,,,,,,,,,,, কেন চলে গেলে সিয়া কেন,,,,???(চিৎকার করে কান্না করে)

হৃদয়ঃ ছাদে এসেছিলাম সিয়ামের কাছ থেকে,,, এসে দেখি ভাইয়া গান গাইছে,,,, ওর গানের গলা অনেক ভালো,,, তাই পিছনে দাঁড়িয়েই শুনতে লাগলাম,,,, গান শেষে ভাবির নাম ধরে চিৎকার করে কাঁদছে ভাইয়া,,,, তাই আর থাকতে পারলাম না,,,, চোখ মুছতে মুছতে চলে এলাম ছাদ থেকে,,,,

চলবে,,,