#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_04
কিছুক্ষন পরে পাত্র পাত্রী ফিরে আসে। খালামণি গিয়ে সুরাইয়াকে জিজ্ঞেস করে ওর পছন্দ হয়েছে কিনা। আর এদিকে পাত্র কেও তার বাবা জিজ্ঞেস করে ।
রাই অতি আগ্রহের সাথে দেখছিল , দেখে দুজনেই হ্যাঁ বলেছে।
সবাই খুশি হয়ে একে অপরকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। দুপক্ষ মিলে বিয়ের তারিখ ও ফিক্স করে ফেললো।
রাই মিহিরের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বললো “কি দুলাভাই …. সেকেন্ডের ঘরেই হ্যাঁ করে দিলেন। এতো পছন্দ হয়েছে!”
ভেবেছিলাম ভাইয়া খুব শান্তশিষ্ট । কিন্তু আমাকে পিছে ফেলে উনি বললেন “আরে শালি সাহেবা …. আপনার জন্যই তো তাড়াতাড়ি হ্যাঁ বললাম। শীঘ্রই আবারো দেখা করতে হবে না?” বলে মিটিমিটি হাসলেন।
রাই হাসতে হাসতে সেখান থেকে সরে এলো। সবাই এখন সবাইকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে। রাই গিয়ে মিহিরকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো।
এই ফাঁকে নিশান এসে রাই এর মুখের সামনে মিষ্টি ধরলো। রাই মাথা নেড়ে না করে দিল। বাকিরা অতটা লক্ষ্য করেনি নিশান আর রাই কে।
নিশান রাই এর ঠিক মুখের সামনে এসে দাড়ালো “নতুন সম্পর্কের শুরু …. মিষ্টিমুখ দিয়েই হোক?” খুব আস্তে করে বলল। রাই ব্যতীত কেউই শুনতে পায়নি।
রাই এর চোখ ডিম এর মত বড়ো বড়ো হয়ে গেল।
নিশান একগাল হেসে জোরেই বলে উঠলো “আরে এখন তো আমরা বেয়াই বেয়াইন….. মিষ্টিমুখ করেন….”। (সবার অগোচরে বাকা হেসে তাকালো) বোঝেননি?”
বলে রাই এর মুখে মিষ্টি ঠেলে দিল।
না চাইতেও রাইকে খেতেই হলো।
বাকি সবাই হাসাহাসি করছে। কেউ নিশ্চই বোঝেনি নিশান কি বুঝিয়েছে কিন্তু, রাই ঠিকই বুঝেছে।
জবাব দেওয়া ফরজ। তাই এই ও শয়তানি হাসি হেসে একটা আস্ত কালোজাম চামচ দিয়ে নিয়ে নিশান এর সামনে ধরলো। নিশান হা করতেই রাই দ্বিগুণ জোরে ওর মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলো “ঠিক বলেছেন… বেয়াই “…….
নিশান আর রাই যেনো চোখে চোখেই এক অদৃশ্য যুদ্ধের ঘোষণা করে দিল। ঠিক ইঁদুর বিড়াল এর মত। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুজনই দুজনকে সুযোগ পেলেই পেরেসান করবে।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই হাত মুছে উঠে যাচ্ছে… কিন্তু রাই দেখলো আবির কিছুই খেলো না ….শুধু দুটো মিষ্টিই খেয়েছে।
“ভাব …. যতসব… বড়লোকের ছেলে হলে যা হয় আরকি… ” মনে মনে ভাবছে আর আবিরের দিকে কটু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাই।
হটাৎ করেই আবির রাই এর দিকে তাকালো…. আচমকাই রাই ভয় পেয়ে গেল , যদি ওর চেহারার ভঙ্গি দেখে আবির কিছু ভাবে! একটা শুকনো ঢোক গিলে নিলো রাই… তখনি আবির উঠে দাড়ালো।
আর রাই এর দিকে এগোতে লাগলো।
রাই এর পরাণ যায় যায় অবস্থা…. “এদিকে কেনো আসছে?'” কপাল থেকে ঘাম ছোটার উপক্রম।
ক্রমেই আবির রাই এর দিকে এগোচ্ছে আর রাই ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যাচ্ছে ।
আবির যখন রাই এর খুব কাছে তখন রাই ভয়েই চোখ বন্ধ করে দিল…. “আল্লাহ আল্লাহ এইবার বাঁচিয়ে নাও …. জীবনেও কিছু বলবনা কাওকে…. প্লিজ প্লিজ প্লিজ”
পরক্ষণেই রাই এর নাম ধরে ডাক পড়লো “এই রাই…. চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে কেনো আছিস?”
রাই ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখে সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে….. কিন্তু আবির নেই। কাছেও নেই , আশপাশেও নেই।
রাই তাড়াতাড়ি আশপাশে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তার ঠিক পেছনে যে দরজা সেদিকে তাকালো…..
দেখে আবির বাহিরের বেসিনের কাছে…… হাত ধুচ্ছে।
এটা দেখে রাই একটা বড়ো করে শ্বাস ফেলে প্রশান্তির হাসি দিয়ে সামনে তাকালো।
কিন্তু হাসি আর স্থায়ী হলো না। কারণ বাকিরা সবাই ওর দিকে প্রশ্নকতো চোখে তাকিয়ে…..
“অা…… কি কিছুনা” বলে ও মাথা নাড়লো….
ওর খালা ওর দিকে একটা তোয়ালে ছুরে দিলো “আবিরকে দিয়ে দে… ” বলে।
রাই মাথা নেড়ে ঘুরে তাকালো আবির হাত ঝাড়তে ঝাড়তে আসছে। ও দরজার কাছে আসতেই রাই তোয়ালেটা এগিয়ে দিল। কিন্তু আবির ওকে এমনভাবে এড়িয়ে গেল যেনো রাই অদৃশ্য কিছু। যেনো ও দেখলোই না রাই কে। আর রাই কে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়ে নিজের যথাস্থানে বসে গেলো।
রাই মূর্তির মতো দাড়িয়ে হা করে রইলো। “ইগনোর” অস্ফুট স্বরে বলল রাই। “এতো বড়ো কলিজা…. আমাকে ইগনোর! আশ্চর্য”
রাই ঘুরে তাকালো আবিরের দিকে। সে তার বাবার সাথে কথা বলছে আর মায়ের হাত থেকে নেওয়া তোয়ালে তে হাত মুছছে। রাই তো খাড়ার উপর অপমানিত। “ব্যাটা তোরে ভালো ভেবেছিলাম , ভদ্র ভেবেছিলাম, এখন তো দেখি তোর থেকে নিশান লাখ গুন ভালো …” মনে মনে গাবাচ্ছে রাই।
পাশ থেকে কে যেন রাইকে আস্তে ডাকলো ….. রাই নিশানের দিকে তাকাতেই নিশান হেসে তোয়ালে টা চাইলো….. যেহেতু এই মুহূর্তে রাই রাই না জ্বলন্ত আগুন হয়ে গেছে তাই রাগে তোয়ালেটা ছুড়ে দরজার পাশের টেবিলে ফেলে রেগেমেগে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
নিশান তো অবাক……… কিহল!
পেছনে আবির বিষয়টা খানিকটা লক্ষ্য করলো……..
বাহিরে এসে রাই উঠোন জুড়ে ঘুরঘুর করছে আর বকবক করে যাচ্ছে নিজের সাথেই “ব্যাটা খাটাশ….. ক্রাশ যাক ধান ক্ষেতে ….. এতো ভাব কিসের তোর!? তোর দেখিস বিয়ে হবে না… বউ আদর করবে না। তোর এই খাটাশপানাই তোরে উচিত শিক্ষা দিবে….. তোর কপালে বউ নাই” বকবক করছে আর একটা আমগাছের চারপাশে গোলগোল ঘুরছে রাই।
তখনি এক বোন এলো রাই এর।
“রাই….”
ওর হেলদোল নেই। নিজের মতই ঘুরছে।
“এই রাই”?
রাই দেখছেই না। মেয়েটি রাই এর পিছুপিছু হাঁটা শুরু করলো “এই রাই কীরে এভাবে ঘুরছিস কেনো? ”
“মণি মণি মণি আমার রাগে গা পিত্তি জ্বলছে”
মণি একটু মজা করলো “কেনো তুই কি ডাল এর জাগায় কয়লা খেয়েছিস?”
রাই হাটতে হাটতে থেমে গিয়ে রাগান্বিত চোখে তাকালো মণির দিকে। মণি চুপ করে গেলো। আবারো রাই ঘোরা শুরু করলো।
“আচ্ছা কি হয়েছে বলবি তো। ”
“বলে লাভ নেই। অপমান…. অপমান করেছে আমাকে …”
“কে!!!!!! ?” মণি অবাক
রাই হাটতে হাটতে মাঝপথে থেমে গেলো ফলে মণি ও যেহেতু হাঁটছিলো ওর পিছ পিছ তাই দুজনের ধাক্কা লেগে গেলো।
আবারো রাই মণির দিকে রেগে তাকালো। মণি বেচারি কিছু না জেনেও ভয় পেয়ে গেল।
অবশেষে পাত্র পক্ষের যাবার সময় হয়ে গেল। রাই মুখ চোখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে।
বড়রা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
মিহির ভাইয়াকে গোমরা মুখ করেই বিদায় জানালো রাই।
সুরাইয়া দুর থেকে দাড়িয়ে দেখছে। আর মিহির সুরাইয়ার দিকে তাকিয়ে শুধু ইশারায় ওকে কাছে এসে দাড়াতে বলছে। কিন্তু সুরাইয়া তা করছে না।
রাই সেটা লক্ষ্য করলো কিন্তু তবুও ওর এখন মজা করার মুড নেই।
নিশান ধির পায়ে এগিয়ে এলো রাইয়ের কাছে। এসে ওর কানের সামনে ফিসফিস করে বললো “খুব শীঘ্রই তাহলে দেখা হচ্ছে …. কি বলেন বেয়াইন?”
রাই এমনিতেই রেগে তার উপর মশকরা?
“আপনার সাথে দেখা করার জন্য কেউ বসে নেই। ”
“উহু…. বসে কেনো থাকবে… দাড়িয়ে থাকবে তাও আমার আপ্যায়ন করার জন্য” বলে বাকা চোখে তাকালো।
“হুম…. গোবরের মালা নিয়ে দাড়িয়ে থাকবো। আইসেন……” বলে ভেংচি করলো রাই।
“দেখাই যাক নাহোয়” বলে রাই এর ডানহাত আলতো করে ছুঁইয়ে দিয়ে চলে গেলো গাড়ির দিকে। রাই প্রথম টের না পেলেও পরে বুঝতে পারলো।
ততক্ষণে নিশান গাড়িতে গিয়ে উঠে পড়েছে।
গাড়ির পেছনে রেজোয়ান আঙ্কেল, মিহির ভাই ও তার বাবা। আর সামনের ড্রাইভিং করবে আবির আর পাশে নিশান।
রেজোয়ান সাহেব হঠাৎই সবার সামনেই রাইয়ের মাকে বলে উঠলেন “আপা।।।।। আপনার মেয়েটা সত্যিই খুবই ভালো….. আমার খুব পছন্দ হয়েছে । এমন একটা ব্যাটার বউ পেলে তো “,,,,,,,,,
সাথে সাথেই মিহিরের বাবা কেশে উঠলেন “মানুষ অতিরিক্ত ই মজা করে” ……. খালামণি অবাক হয়ে হেসে উঠলেন।
আর রাইয়ের মা জোরপূর্বক হেসে বললেন ” মেয়ে তো একটা যাচ্ছেই। তো আর কিসের কথা তাইনা ভাই” বলে কোনমতে কথা এড়ালেন……
মণি হেসে উঠে রাইকে শুনিয়ে বললো “কবুল কবুল কবুল”
রাই ওকে হাতে চিমটি দিলো। মণি ঠোঁট চেপে হাসছে।
অবশেষে সবাই গাড়িতে উঠতে লাগলো। আবির ও প্রস্তুতি নিয়ে গাড়িতে বসবে তখনি ওই রাস্তা দিয়েই কতগুলো ছোটো বাচ্চা ছেলেরা খেলতে খেলতে যাচ্ছিলো… ওদের হাতে মনেহয় রং এর পানি ছিলো। ওরা একজন আরেকজনকে রং মারতে গিয়ে সোজা খানিকটা রং এসে আবিরের বুকের ডানদিকে কাঁধ জুড়ে লেগে গেলো আর ওর হাতে ও লেগে গেলো।
বেচারা রেগে উঠে কিছু বলতে গেলো কিন্তু তার আগেই ছেলেগুলো এক ছুটে দৌড় “চাচা মাফ কইরেন” বলতে বলতে সব ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে গেলো।
ওদের কান্ড দেখে সবাই একে তো অবাক + রেগে গেছে। এদিকে রাই আবিরের ওপর রেগে নিশ্চই ছিলো। কিন্তু “চাচা ” শব্দটা শুনে রাই এর হাসি চলে এলো। কিছুতেই আটকাতে পারছিল না।
রাইয়ের মা বলতে গেলো “বাবা, তুমি রাগ করো না ওরা সব বাচ্চা……”
পুরোটা শেষ ও করতে পারলো না পেছন থেকে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল রাই। হো হো করে হেসে ওর জান ওষ্ঠাগত ।
খালামণি, মা , মণি সবাই রাই এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু বেচারি হাসিটা থামাতেই পারছে না।
গাড়ির ভেতর থেকে রেজোয়ান আঙ্কেল বেরিয়ে এসে বলতে লাগলেন “কাজের কাজ হয়েছে … সব সময় মুড নিয়ে থাকিস, ওই বাচ্চারাই তোর মুড উড়িয়ে দিয়ে গেছে” বলে উনিও হাসতে লাগলেন।
“বাবা” কঠোর কণ্ঠে আবির বললো।
রাই কোনমতে নিজের হাসিটা দমিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল। তবুও মুখে হাসি।
খালামণি বললেন “বাবা রাগ করো না। এক কাজ করো ভেতরে গিয়ে পরিষ্কার করে এসো”
আবির বলতে গেলো “না , ঠিকাছে” মুখে চরম বিরক্তি।
রেজোয়ান সাহেব বললো “কিসের না… যা গিয়ে হাত আর শার্ট পরিষ্কার করে আয়। নইলে আবার গাড়িতে রং লেগে যাবে”
নিশান বলে উঠলো “বাবা!!!! তোমার গাড়ি দামী বাকি ভাইয়া দামী?”
রেজোয়ান সাহেব ঠাট্টা করে বললেন “অবশ্যই গাড়ি…. ”
সবাই হেসে উঠলো। রাই আরো জোড়ে হেসে উঠলো। আবির রাগী দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে। রাইয়ের মা বললেন “তুমি বাদ দাও আবির। যাও গিয়ে ধুয়ে এসো”
রেজোয়ান সাহেব বললেন “হ্যাঁ যা…. রাই মা….. ওকে একটু নিয়ে যাও তো একটু সাহায্য করো”
খালা আর মা একসাথে আমার দিকে তাকালো। আমি তো না চাইতেও হাসছি। নিষেধ করার আর উপায় নেই। আবির হেঁটে আসতে লাগলো। আমিও হাত মুখে চেপে পিছন পিছন গেলাম।
মিটিমিটি হাসছি আর ভাবছি “বেশ হয়েছে….. ভাব ? তোমার ভাব একেবারে ঘুচিয়ে দিয়েছে”
তাকে নিয়ে বাসার ভেতরের বেসিনের সামনে দাঁড়ালাম। উনি হাত বাড়িয়ে বেসিন এর কল ধরতে গেলেন
“এক মিনিট” বলে তাকে থামালাম। আর আমিই কল ছেড়ে দিলাম। নইলে রং লেগে গেলে পরিষ্কার কে করতে যাবে….। উনি ভাব দেখিয়ে একহাত দিয়ে পানি নিয়ে টিশার্ট এর দিকটা মুছতে গেলেন কিন্তু ভাগ্য ভাগ্য….. রং কমবে কি উল্টো তার হাতে থাকা রং আরো লেগে গেল টিশার্ট এ। জ্যাকেট টা গাড়িতেই খুলে ফেলেছিলেন তাই এ যাত্রায় সেটা বেঁচে গেলো।
আমি ফিক করে একটু হেসে উঠি। উনি একটা শ্বাস ছাড়লেন।
রাই তাকে থামিয়ে বললো “আমি হেল্প করছি…..” বলে হাতে সাবান মেখে আবিরের দুহাত ধরে সাবান লাগিয়ে দিতে লাগলো রাই।
আবির এখনও চোখ মুখ কুচকে রাই এর দিকেই তাকিয়ে আছে।রাই খুব হাসিখুশি স্বভাবের। ওর মুখে একটা চিলতে হাদি সর্বদাই বিরাজমান। আবির সেই হাসিটাকেই কতক্ষন দেখলো। যেহেতু রাই ওর খুবই কাছে তাই খুব ভালো ভাবেই পর্যবেক্ষণ করলো আবির। আবিরের হাতদুটো ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে দিল রাই।
তারপর হাতে পানি নিয়ে টিশার্ট এর বুকের দিকটায় রং মুছে দিতে গেলো। একটু একটু করে পানি দিয়ে উঠাচ্ছে, আর রাই কিছুটা ইতস্তত ও করছে। বারবার আবিরকে স্পর্শ করাটা ওর একটু অসস্তিকর মনে হচ্ছে। তবুও দিচ্ছে।
বারবারই একটা অজ্ঞাত মেয়ের স্পর্শ আবিরের ঠিক অতটাও ভালো লাগছে না । কিন্তু ও নিষেধ ও করছে না।
আর রাই ও ভুলেই গেছে যে এখন তো আবিরের হাত পরিষ্কার। এখন আর ওর আবিরের দাগ পরিষ্কার করতে হবেনা। ও নিজের কাজে অব্যাহত।
শার্ট এর রঙ পুরোপুরি তো যায় নি তবে কোনমতে যা উঠেছে আরকি।
রাই হাত ধুয়ে আবিরের দিকে একপলক তাকালো । দেখে ওর টিশার্ট এর কলার থেকে একটু উপরে গলায় এক দুটো ছিটে লেগে আছে।
স্বাভাবিক ভাবেই রাই চট জলদি গলায় হাত দিয়ে মুছে দিতে গেলো ,
মুহূর্তেই বাঘের থাবার মতো আবির রাই এর হাত ধরে ফেললো।
আচমকাই রাই বিস্মিত হয়ে আবিরের দিকে তাকায়। আবির খুব তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রাই এর দিকে তাকিয়ে একটু একটু করে ওর দিকে এগোতে লাগলো।
তাই বিস্ফোরিত চোখে আবিরের দিকে তাকালো। কিন্তু আবির ভাবলেশহীন ভাবে রাই এর দিকে এগোচ্ছে , আর রাই পিছতে পিছোতে
একপর্যায়ে দেওয়ালের সাথে ঠেকে গেল।
“কি কি হচ্ছে কি! হাত ছা ছাড়েন”
আবির ততই এগোচ্ছে। একপর্যায়ে রাই এর মুখের সামনে এসে ও থেমে গেলো “এতই যখন ভয় , তো হাসছে কেনো? ”
এই প্রথম আবির রাই এর সাথে কথা বললো। রাই অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবে তাকিয়ে রইলো। আবিরের কন্ঠটা শুনতে একদম কোনো রেডিও আরজে এর মতন শুনাচ্ছে । খুবই আকর্ষক ………
“ভয়! আপনাকে! আমার বয়েই গেছে” বলে রাই মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
“তাই?” বলে একটু একটু করে রাই এর দিকে এগোতে লাগলো। রাই আবারো বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে সাথে সাথেই ওর বুকে হাত দিয়ে ওকে আটকালো “কি অসভ্যতা এসব? দূরে যান”
বলে ঠেলে সরে যেতে গেলো। কিন্তু উল্টো আবিরের ওর হাত আরো জোরে চেপে ধরলো রাই ব্যথায় “আহ্……” বলে উঠলো।
আবির তীব্র চোখে রাইয়ের নুইয়ে যাওয়া চেহারাটা দেখে এক চিলতে পরিমাণ হেসে রাই এর মুখের সামনে এসে পড়া চুলগুলোর দিকে লক্ষ্য করে ফুঁ দিল।
একদিকে ব্যাথা লাগছিলো হাতে অন্যদিকে আবিরের এমন কাজে রাই কষ্টমাখা চেহারায় আবিরের চেহারার দিকে তাকালো।
কি যেনো একটা মনে করে আবির আগের মত নিজের ভাব নিয়ে এক ঝটকায় রাই এর হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়াল।
“নিজের অবাঞ্ছিত হাসি নিয়ে আমার থেকে দূরেই থাকবে । ” বলে ঘুরে দাড়ালো আবির।
রাই রেগে গিয়ে জবাব দিলো “আপনার কাছে আসার না কারো সখ নেই। আর আমার দূরে থাকা লাগবে না। দেখা যাবে নিজেই আমার পিছন পিছন আসছেন”
আবির বাকা হেসে ঘুরে তাচ্ছিল্য চোখে রাই এর দিকে তাকালো “তোমার পেছনে? হাহা….. কোনদিক থেকে তো দেখে কোহিনুর মনে হচ্ছে না” বলে এক ভ্রু উঁচু করলো আবির।
রাই আরো ক্ষেপে গেল “কোহিনুর ও সবার কপালে থাকে না……”
হুহ “সবাইকে নিশান ভেবে বসে থেকো না” জিন্স এর পকেটে বাম হাত ঢুকিয়ে…।
রাই থ মেরে গেলো “কি বলতে চান… নিশান আমার পিছনে ঘুরঘুর…….”
ওকে শেষ করতে দিলো না “নিজেই যখন বলছো……..”
“শাট আপ…..” বলে চিৎকার করে উঠলো রাই।
আর যাইহোক , আবির কখনো নিজের সামনে কারো গলা উচু আওয়াজ শুনতে পারে না। গিয়ে রাই এর মুখ চেপে ধরলো “তোমার ধমক শোনার জন্য নিশ্চই আসি নি”
রাই ওর হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিলো “আপনার মত নিচ চিন্তা ধারার মানুষ শুধু পারে অন্যদের কষ্ট দিতে । নিজের ভাই সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতেও আপনার খারাপ লাগলো না। ছি….. আপনার সাথে যার ভাগ্যের রেখা মিলেছে সে জাস্ট কষ্টেই কাটাবে…… মুখ পোড়া মানুষ”
বলে রাই হনহন করে সে স্থান ত্যাগ করলো। আবির এর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল……………
চলবে💛