In_The_Depths_Of_Love Part-05

0
11657

#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_05

ভেজা সিক্ত চোখদুটো খুলে তাকালো রাই। তবে এই অডন্ধকরে চোখ খোলা না খোলা একই কথা। আবির এখনও ওকে জড়িয়েই শুয়ে আছে। সেই প্রথম দেখার ঘটনা মনে করে রাই এর খারাপ লাগার পরিমাণটা আরো বেড়ে গেলো।
আস্তে করে নিজের উপর থেকে আবিরের হাতটা সরিয়ে দিলো রাই। আর ওর থেকে দূরে সরে গেলো।

এই মুহূর্তে আবির জেগে থাকলে নিশ্চই ওর হাতটা সরানোর সুযোগটা রাই পেত না। বদলে আবির আরো ক্রুর ভাবে ওকে নিজের কাছে টেনে নিত।
উঠে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসলো রাই। আর নিজের মাথাটা দুহাতে চেপে ধরলো। কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার। আর না দুচোখে ঘুম আসছে।

“মাথায় কি ব্যাথা করছে নাকি?”

রাই চমকে ওঠে। “আ আপনি ঘু ঘুমান নি?”

আবির রাই এর ডান হাত ধরে নিজের কাছে এনে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে মাথায় বিলি কাটতে লাগলো……” হাতটা তো সরিয়ে দিলে। ঘুমটা আর কিভাবে হয় বলো?”

রাই অসস্তিতে চোখ বুজে নিলো “আপনার মনে হয় আপনার সাথে সংসার করলেই আমি আপনার হয়ে গেলাম? সব এতই সহজ?”

আবির হালকা হাসে “আলাদা ভাবে তোমাকে নিজের নামে লেখার কোনো প্রয়োজনই নেই আমার।”

রাই বুঝলো না বিষয়টা একটু অবাক হলো। “মানে!”

আবির তৎক্ষণাৎ কিছু বললো না।বিলি কাটতে লাগলো। রাই এর কানে অনবরত আবিরের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দটা আসছে।

“তুমি কখনো নিজের শরীরের একটা অঙ্গ কে আলাদাভাবে বাহির থেকে এনে জোড়া দিতে পারবে? ”

রাই কপাল কুঁচকে ভাবতে থাকলো কি বলছে এসব। কিন্তু রাই এর মন চাচ্ছে না এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে।
চুপ করে রইলো।

“হুম?” আবির পুনরায় প্রশ্ন করলো।

রাই বিরক্তি সুরে বলল “কিসব বলছেন। নিজের শরীরের অঙ্গকে বাহির থেকে কিভাবে আনা যায়! যেখানে সেটা ইতোমধ্যেই আপনারই । আপনার কাছেই আছে। ”

আবিরের হাত দুটো থেমে গেলো। মাথা থেকে হাত সরিয়ে আবির রাই এর গেল রাখলো “তুমিও তার ব্যতিক্রম ছিলে না। শুরু থেকেই আমারই ছিলে” ।

রাই স্তব্ধ হয়ে গেল। আবির পুনরায় ওর মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলো। আবিরের কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যে রাই ঘুমিয়ে গেছে সে জানেনা।

“সখি, ভালোবাসা কি এতই সোজা? এই দেখো না নিজেকেই…….মানতেই পারছো না।
আর এই দেখো আমাকে…… ছাড়তেই পারছি না। ”

আবির শুন্যেই কথাগুলো ছড়িয়ে দিল। যদিও এর প্রত্যুত্তর দেওয়ার মানুষটি আপাতত গভীর ঘুমে। অপেক্ষা করাটাও নাটকীয়।
একফোঁটা শান্তির ঘুমের আশায় চোখদুটোর পাতা এক করে দিল আবির। একা একা কথা বলে নিজেকে পাগল প্রমাণিত করার ইচ্ছেটা ওর নেই।

______________🎗️______________

সকালে অনেক শব্দ কানে আসায় ঘুম ভেংগে গেল রাই এর। তৃপ্তির ঘুমটুকু বিসর্জন দিয়ে ঘুমে লেগে আসা চোখ দুটো পিটপিট করে খুললো। আবিরও শব্দের জন্য চোখ মুখ কুঁচকে ঘুম থেকে জেগে গেলো।

“কি হচ্ছে কি!” বলে রাই চোখ ডলতে লাগলো।

আবির এখনও রাই কে জড়িয়েই রেখেছে। “আমার বিয়ে লেগেছে” বলে আবির রাই এর চুলে মুখ গুজে আবারো ঘুমোতে গেলো।

রাই আড়চোখে তাকালো “তিনদিন আগে বিয়ে হইসে আবার বলে বিয়ে লাগছে। পেট ভরে না নাকি”!

আবির ওভাবেই বললো “না । মন ভরে না। বাড়ির মানুষ ও জানে আমার বউ আমাকে পছন্দ করে না … তাই আমার আবার নিয়ে দেবে”

রাই মুখ বাঁকিয়ে বললো “লাভ নেই। বউ পাল্টালেই কি কপাল ঘুরবে নাকি? যেখানে ছেলে নিজেই ঘাড় ত্যাড়া। ”

আবির চুলের মধ্য থেকেই মুখ তুলে বললো “আমি ঘাড় ত্যাড়া!? ”

“আর নয়তো কি? ” চোখ ছোটো ছোট করে নিলো রাই ” যেটা নিজে বোঝেন সেটাই ঠিক। আর বাকি মানুষেরা তো ফিডার খায়। ”

আবির রাই এর কোমর ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরালো….”আমি খুব নিখুঁতভাবে চিন্তা ভাবনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেই। তোমাদের মেয়েদের মতো না বুঝে চিল্লাই না”

রাই প্রথমে রাগতে গেলেও মুহূর্তেই শান্ত হয়ে বাকা ঠোঁটে হাসলো “আমি যদি চিল্লানো শুরু করি আপনি এখানে টিকতে পারবেন? ”

আবির আড়চোখে তাকালো “সকাল সকাল তোমার শালিকের মত গলা শোনার সত্যিই ইচ্ছে নেই। ”

“আমি শালিক!” জোরেই চেঁচিয়ে উঠলো রাই। সামনাসামনি থাকায়
আবির চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। “উফফ , সোজা বাজ পড়লো কানে”

রাই বাকা চোখে তাকালো। একটা দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় এলো । রাই আবিরের কানের সামনে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
সাথে সাথে আবির ওকে ছেড়ে কান চেপে ধরলো।

এই ফাঁকে রাই হেসে দিয়ে উঠতে গেলেই আবির ওর হাত টেনে আবারো নিজের উপর ফেলে দিল।

“তোমাকে টিয়া বলে ডাকি শালিক না”

রাই হেসে ওঠে “তো এখন থেকে শালিক বলে ডাকবেন” বলে আবারো চিৎকার দিতে গেলেই আবির ওর মুখ চেপে ধরলো “ভালো টা ভালো লাগে না………. মানুষের স্বভাব”

রাই উম উম করে আওয়াজ করতে লাগল। আবির চোখে দুষ্টু হাসি নিয়ে রাই এর দিকে তাকালো “ইউ নো হোয়াট? ”
রাই ভ্রু উঁচু করে কি জিজ্ঞেস করলো।
আবির ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে বাকা হেসে বলল ” তোমার মুখ বন্ধ করার উপায় আমার জানা আছে। কিন্তু এই বাসিমুখে সেটা এপ্লাই করতে চাচ্ছি না”
রাই ১ সেকেন্ড বোকার মতো তাকিয়ে থাকলো।

“ছি। কি আপনি হ্যাঁ! পিচাশ” বলে রাই উঠতে গেলে আবির ওকে ধরে বালিশে শুইয়ে ওর উপরে উঠে গেলো “কিহ্! পিচাশ?”

রাই মাথা নাড়লো “হুম”
“বুঝাচ্ছি পিচাশ কি জিনিস” বলে আবির মুখ এগিয়ে নিতেই রাই মাথা ঘুরিয়ে নিল। আর আবির রাই এর থুতনিতে একটা কামড় বসিয়ে দিল।

“আহ্…. রাক্ষস” বলে নিজের থুতনিতে হাত দিল রাই।

“তুমি……” আবিরের কিছু বলার আগেই দরজায় কড়া নাড়ল কেউ।
দুজনেই চমকে তাকালো দরজার দিকে।

“রাই…… রাই দরজা খোলো….”

“নীলা!” রাই এর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো। আবির কি যেনো একটা ভেবে রাই এর দিকে তাকালো। “ছাড়ুন… দরজা খুলতে হবে ” বলে রাই উঠতে গেলেই আবির ওকে জড়িয়ে ধরলো ….

“এই রাই…. মরে গেছো নাকি ? দরজা খোলো… এই রাই” নীলা রেগে বারবার দরজা ধাক্কাচ্ছে।

“আরে কি হয়েছে কি আপনার? ছাড়ুন….. ” বলছে রাই…..

আবির চুপ করে মিটিমিটি হাসছে।
“আরে হাসছেন কেনো?”

“এই রাই,,,, দরজা খোলো না কেনো?” নীলা অনবরত চেঁচিয়ে যাচ্ছে।

“দেখুন আপনি এবার বাড়াবাড়ি করছেন কিন্তু ” রাই পুরো ঘাবড়ে গেছে। নীলা কি মনে করবে আর যদি বাকিদের গিয়ে রাই এর নামে বিচার দেয় তো?

আবির এবার জোরেই বলে উঠলো “রাই….. উফফ…. রাই ছাড়ো… ছাড়ো”

রাই বেয়াকুব বনে গেলো । থ মেরে আবিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
নীলা এটাশুনেই চমকে গেলো “কি করছে রাই ওর সাথে? এই রাই রাই… দরজা খোলো”

আবির আবারো নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে ওঠে “রাই…. প্লিজ ছাড়ো… দেখো এসব কেনো করছো? আমি কি করেছি তোমার? ” রাই স্বাভাবিক হয়ে কিছু বলতে গেলেই আবির ওর মুখ চেপে ধরলো। “রাই….. আমার ব্যাথা লাগছে তো নাকি। আমার মুখটা এতো শক্ত করে কেনো ধরেছো? ”

নীলা পুরো আকাশ থেকে খেজুর গাছে পড়লো। “আমার আবিরের সাথে ও কি করছে”! (চোখের সামনে ভেসে উঠল ওদের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত) নীলা মাথা ঝাড়া দিলো “না…. রাই…..”

আবির শব্দ ছাড়া হেসে উঠলো “রাই দেখো এভাবে ছুচ্ছো কেনো? রাই প্লিজ ,,,,, না না চুলগুলো ধরো না… দেখো হাতটা ছাড়ো না”

রাই এর চোখ বিস্ফোরিত হয়ে গেল “উম উম ” করে ও হাত পা ছোড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আবির নিজের নাটক চালিয়েই যাচ্ছে।
“রাই দেখো …. রা……” বলে আবির চুপ করে গেলো আর দরজার দিকে তাকালো। রাই বিস্ময়ের চরম সীমায়। ও নিজেও দরজার দিকে তাকালো।
নীলার কলিজায় ছ্যাৎ করে উঠলো। “আবির…… আবির তোমার কি হয়েছে ? ও কি তোমাকে কিছু করেছে নাকি? আবির” বলে দরজা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতে লাগলো নীলা। আবির চট করে খাট থেকে লাফ দিয়ে উঠে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো। রাই তো ঘটনাক্রমে মূর্তি হয়ে গেছে।
আবির নিজের টিশার্ট টা খুলে হাতে নিলো আর রাই এর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিল।

“আ….” ডাকতে গিয়েই দরজাটা খুলে গেলো….. নীলা হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো “আবির!”
নীলার চোখে যেনো কেউ বিষ ঢেলে দিয়েছে। আবির ঠোঁটে হাত দিয়ে রাই এর দিক থেকে মাত্রই মুখ ঘুরিয়ে নীলার দিকে তাকালো “আরে তুই!?” স্বাভাবিক স্বরেই বললো।

নীলা আবিরের উন্মুক্ত শরীর আর অগোছালো চুল , ঠোঁটে হাত দেখে তো ওখানেই ফিট। মুখ ঘুরিয়ে খাটের দিকে তাকিয়ে দেখে রাই উঠে বসছে……. নীলার চোখ উটপাখির ডিমে পরিণত হলো। রাই দ্রুত উঠেই নিজের শাড়ির আঁচল ঠিক করে উঠে আবিরের পাশে এসে দাড়ালো “নীলা….”

নীলা কাঁদো কাঁদো মুখে দুজনের দিকে তাকালো ……. আবির কিছু যেনো বোঝেই নি এমন ভঙ্গিতে বলল “ভ্যাবলার মত তাকিয়ে আছিস কেন ? কি হয়েছে?”

নীলা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল “ওই….”

আবির হাই তুলে রাই এর পেছনে গিয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখলো “তুই জানিস না , স্বামী স্ত্রীর…. একান্ত ব্যক্তিগত সময়টাকে ব্যক্তিগত থাকতে দেওয়া উচিত?”

নীলা এবার প্রায় কেঁদেই ফেললো “আমি…. (নাক টেনে) আমি… কাকী বলেছে তোমাদের ৯ টার মধ্যে বাহিরে আসতে। ”

“পারবো না…. দেরি হবে…. তুই যা” বলে আবির একটা ভাব নিলো।
রাই চেষ্টা করছে কিছু বলার কিন্তু ততবারই আবিরের কথা শুনে ও নিজেই কোমায় চলে যাচ্ছে।

“না না নীলা” রাই বলতে গেলো.
তার আগেই নীলা হাত উঁচু করে ওকে থামিয়ে দিল “বাহিরে চলে আয়”
বলে ও হুরহূর করে বেরিয়ে গেলো।

রাই চরম লজ্জা এর রাগে আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো “কি করলেন এগুলো আপনি?”

“কি করলাম?” কেনো কিছু জানেই না।
“এসব কি নাটক ছিল” বলে ওর হাতে ধাক্কা দিল রাই।

“দেখো যে কাজটা তোমার করা উচিত ছিল সেটাই করলাম। এখন কাওকে না কাওকে তো একটু এগোতে হয়ই। ” ভাবলেশহীন ভাবে বললো।

“আপনি…… ” রাই চরম ভাবে বিরক্ত। “ধুর” বলে ঘুরে দাড়ালো। আবির ওর দিকে না তাকিয়েই বাথরুমের দিকে এগোতে গেলেই রাই পেছন থেকে ওর হাত থেমে ধরলো “কোথায় যাচ্ছেন…. দাড়ান এখানে… আমি যাবো” বলে রাই আবিরকে ঠেলে সরিয়ে নিজে বাথরুমে ঢুকে গেলো।
আবির হাসিমাখা চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল।

“কোনো মেয়ের কারণে যে আবির চৌধুরী হাসতেও পারে…. সত্যিই অবিশ্বাস্য”

কথাটা কানে আসতেই আবির ঘুরে দরজার ধিকে তাকালো। নীলা রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে।
আবির প্রশ্নক্ত চোখে তাকালো।

“তুমি আবির চৌধুরী….. জীবনে কখনো মেয়েদের পাত্তাই দিতে দেখলাম না। তোমার মতে মেয়েরা শুধুই স্বার্থপর আর টাকার লোভী হয়। আমাকে পর্যন্ত কখনো কাছে আসতে দাও নি…. ”

আবির ওর কথার কোনো বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখলো না । টিশার্টটা হাতে নিতে নিতে বলল “সোজা কথা বল”

নীলা ধেয়ে এসে আবিরের হাত ধরলো “রাই কি করছিল তোমার সাথে হ্যাঁ? ও কেনো তোমার কাছে এলো”

মুহূর্তে আবিরের মুখভঙ্গি বদলে গেলো। নীলার হাতটা ঝটকায় সরিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা দিলো আবির । নীলা ব্যথায় গুঙিয়ে উঠলো।

“রাই নিজের স্বামীর সাথে কি করছিল সেটা জেনে তোর কি কাজ? স্ত্রী নিজের স্বামীর সাথে থাকবে না তো কি বাহিরের তোর মত নষ্টারা থাকবে?”

নীলা খুব কষ্টে বললো “আবির… কি বলছো?”

“রাই তোর ভাবি….. (মুখ চোখ শক্ত হয়ে এলো) সম্পর্ক , বয়স, মানসিকতা সব দিক থেকেই তোর বড়ো….. ওকে নাম ধরে ডাকার সাহসটুকু যেনো দ্বিতীয় বার না হয়। ” বলে সর্ব শক্তি দিয়ে নীলাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল আবির।
নীলা একপলক ক্রোধান্বিত নজরে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।

বাহিরে নিশান এর সাথে একটা ধাক্কা লাগলেও নীলা সোজা হেটে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। নিশান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

চলবে🌝🌝🌝🌝