In_The_Depths_Of_Love Part-07

0
10916

#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_07

রাই প্রায় অনেক্ষন ধরেই ওই ছোট্ট একটা চিরকুট বারবার পড়ছিল, আর নিশান এর বলা একটা কথাই ওর মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল

“এই সাজে সেজো”
মনে পড়তেই কেমন অদ্ভুত অনুভব হতে থাকে। যখনই মনে পড়ে।
নিশান এর পাঠানো পেন্ডেন্ট টা খুবই সুন্দর লেগেছে ওর। সাথে সাথেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওটা গলায় পরে নিল।

“মিস্টার নিশান, আপনার জন্য না তবে লকেটটা খুব সুন্দর তাই পরেছি” বলে খিলখিল করে হাসতে লাগলো রাই।

“রাই” তখনি সুরাইয়ার গলায় ডাক পড়লো “আসি” বলে রাই ওরনাটা গলায় পেঁচিয়ে লকেটটাকে ঢেকে নিলো।

পাত্রের বাড়ির পাঠানো জিনিসপত্র খোলা হচ্ছে।সবাই গোল হয়ে বসেছে। রাই গিয়ে সুরাইয়ার পাশে বসে পড়লো।

“কিরে এতো দেরি কেনো হয় তোর?” সুরাইয়া জিজ্ঞেস করলো।

“মেকআপ করছিলাম” বলে দাঁত বের করলো রাই।

সুরাইয়া দুটো বড়ো বড়ো ডালা খুলে সব বের করতে লাগলো। বড়ো একটা লাল লেহেঙ্গা, কসমেটিকস থেকে শুরু করে সবই আছে। আর বাড়ির বড়দের জন্য শাড়ি, পাঞ্জাবি দিয়েছে। সবার জন্যই যা যা দিয়েছে তার প্যাকেটের ওপরে নাম লেখা।
কাপড় যা দিয়েছে মিহিররা সবার খুবই পছন্দ হয়েছে।

“লেহেঙ্গা টা কিন্তু খুবই সুন্দর” বললো রাই।সবাই সায় দিল।
কিন্তু রাই খুঁজছে অন্যকিছু “এই আমার নামে কিছু পাঠায় নি নাকি?”

সবাই তাকালো। নাহ। রাই এর নামের তো কোনো কিছুই নেই। এটা দেখে রাই বাচ্চাদের মত অভিমান করলো “এটা কোনো কথা! ভাইয়া আমার জন্য কিছু পাঠালো না”?

রাই এর মা বললেন “ঠিক করেছে। জামা কাপড় তো কম আনোনি ”

রাই পুরো দমে কান্না করার অবস্থায় “মা….. ( ইমোশনাল ভাব নিয়ে) নিজের টা পেয়ে মেয়ে কে ভুলে গেলে! ইয়া আল্লাহ ”

সুরাইয়া ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো আরো একটা ডালা রয়েছে ” এই থাম তুই। দেখ এইটায় কি আছে”? বলে ডালা টা সামনে নিয়ে খুলতে লাগলো।

রাই হতাশ ভঙ্গিমায় বলল “থাক,,, তোদের জন্যই ভাইয়া ভাবে। আমি। আর কে”….. বলে শিনচেন এর মত মুখ ফুলিয়ে নিলো।

সুরাইয়া পাশ থেকে ওর মাথায় থাপ্পড় দিলো “এই নে ড্রামেবাজ। তোর ডালা”

“কিহ!” খুশিতে চেঁচিয়ে ওঠে রাই “দেখি” ডালা টা হাতে নিয়ে কাপড়টা বের করে। সবাই একসাথে বলে ওঠে “বাহ…… সুন্দর তো” কিন্তু রাই এর চোখ মুখ কুচকে ওঠে “এগুলো কি! এগুলো আবার কেউ কাওকে দেয়!”?

রাই তাকিয়ে দেখে একটা ধূসর রঙের সিম্পল লং ফ্রক । কিন্তু টপ টায় খুব সুন্দর পাথরের কাজ করা, আর সাথে খুব সুন্দর একটা প্রিন্টের ওরনা । মোট মিলিয়ে অসাধারণ বলা চলে কারণ রং যাই হোক ড্রেসটা চোখ লাগানো। এজন্য সবাই ওয়াও বলে ওঠে। কিন্তু রাই এর এটা বিশেষ পছন্দ হয় নি। তার কারণ এটার রং।

“ড্রেস সুন্দর তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর রঙ! মানে বিয়ের দিন কি আমি এই সাদা কালো সাজে সাজবো নাকি! আশ্চর্য” বলে রাই ড্রেস টা রেখে দিল। রাই এর মা ওর খালার দিকে তাকালো। রাই এর খালা বললো “মা , রাগ করিস না। ড্রেস টা তো সুন্দরই। ওরা হয়ত রং এর বিষয়টা মাথায় নেয় নি। ”

“হ্যাঁ , আর তোর যদি ভালো না লাগে তাহলে পড়িস না। ড্রেস তো তুই ও এনেছিস” বললো ওর মা।

রাই মাথা নাড়লো “হুম……” জিনিসগুলো হাত দিয়ে নেড়ে দেখতে লাগলো। একটা ফ্রক, সিলভার রঙের চুড়ি (খুবই সুন্দর) , আর কিছুই না। রাই মুখ ফুলিয়ে ওখান থেকে উঠে চলে গেলো নিজের ঘরে।

______________

“এই ভাবি….” সুমির ডাকে ভাবনার জগৎ ছেড়ে বাস্তবে ফিরলো রাই। “কিহলো?”
রাই মুচকি হেসে মাথা নাড়লো “কিছুনা”
দাদী গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন “বড়রা কিছু দিলে , গিয়ে সালাম করতে হয়।”

রাই অবুঝের মতো তাকালো। পায়ে ধরে সালাম করবে? কেমন যেনো লাগলো রাই এর কথাটা। রাই মাথা নাড়িয়ে উঠতে গেলেই ওর ফুপি বলে ওঠে ” আম্মা , ওসব পুরনো দিনের রীতি । এখনকার সময় ওগুলো আর হয় নাকি। বাদ দাও। রাই যাও এগুলো ঘরে রেখে আসো। আর এতক্ষণ তো সবাই আড্ডা দিলেই। এবার একটু আরাম করো গিয়ে।”

রেজোয়ান সাহেব বললেন “হ্যাঁ সেটাই, ভাই… আপনারা গিয়ে আরাম করুন অনেকদিন পর এসেছেন” মেহমানদের উদ্দেশ্যে বললেন।

“হ্যাঁ,,, আপনারা যান। আমরা সবাই ভাবির সাথে থাকবো।” বললো সুমি। সাথে আবিরের বাকি কাজিনরাও সায় দিল।
মিসেস কামাল বললেন “না , আর যা কথা সব সন্ধ্যায়। এখন গিয়ে সবাই রেস্ট নাও। ওঠো ওঠো”
বলতে দেরি, দাদী, সাবিনা, আর আবিরের চাচীর ওখান থেকে উঠতে দেরি হলো না। তারা এতটাই অপছন্দ করেন রাই কে। রাই তাদের দেখে একটু মন খারাপই করলো। উপস্থিত সকলেই বিষয়টা ভালো চোখে দেখলো না। ওনাদের ওঠার সাথে সাথেই আবির ও উঠে দাড়ালো “রাই, ঘরে আসো….. কাজ আছে” বলে আবির হেঁটে নিজের ঘরে চলে গেল।

মিসেস সাবিনা যেনো ছেলের আচরণে ক্ষুব্ধ হলেন। রাই কোনমতে জোরপূর্বক হেসে আস্তে করে উঠে চলে গেলো।
.
.
___________

বিয়ের দিন চলে এসেছে। সবেমাত্র রাই গোসল সেরে বের হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাড়িতে ধুমধাম, হইহুল্লোড় চলছেই। বাড়ির পুরুষেরা সব বাহিরের আয়োজনে ব্যস্ত। পাশের মাঠেই বড়ো করে স্টেজ সাজানো হয়েছে , আর রান্নাবান্না ও হচ্ছে।

“পোলাও এর গন্ধে আর টেকা যাচ্ছেনা বাড়িতে” বলে রাই চুল ঝাড়তে লাগলো। বাহিরে কাজিনরা ডাকাডাকি করছে ওর হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে। রাই জানালা খুলে একপলক বাহিরে তাকালো।

“বাহ কি সুন্দর , সবাইই ভাইয়ার দেওয়া শাড়ি পরেছে। ” ভাবছে আর তাকিয়ে আছে। অবশ্য ওর মা ওকে বুঝিয়ে গেছে মন খারাপ না করতে । ওর জন্য পাঠানো ড্রেসটা হাতে নিলো রাই। হাজার হোক একটা মানুষ এত সুন্দর করে পাঠিয়েছে, না পরলে তো তার খারাপ লাগতেই পারে। ভেবে রাই ড্রেসটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো।

বরযাত্রী সেই অনেক আগেই এসে পড়েছে। এর মধ্যে নিশান এর চোখ জোড়া খুঁজছে অন্য কাওকে। সবাই খুব আনন্দে মেতে উঠেছে। স্তেজটা এমনভাবে সাজানো , যে দুপাশে বর কনে কে রেখে মাঝে একটা চওড়া লাল পর্দার মত দেওয়া। যেমনটা সিনেমায় দেখায়। পর্দার এপারে ওপরে দুইজন। তবে দেখা যাচ্ছে। মিহির বারবারই সুরাইয়া কে দেখছে। আর সেই নিয়ে দুপক্ষের হাসাহাসি।

অবশেষে সময় এলো নাচ দেখানোর। এর ঠিক সামনেই আরো একটা স্টেজ সাজানো হয়েছে । সেখানেই সাউন্ড সিস্টেম রাখা। নিশান এমন এক পরিস্থিতিতে যে কারো সামনে থেকে সরতেও পারছে না। আবার রাই কেও খুঁজে পাচ্ছেনা। ও কি অনুষ্ঠানে আসবেনা নাকি!
তখনি চারদিক মাতিয়ে গান বেজে উঠলো আর রঙিন আলোর কেন্দ্রবিন্দু হলো একটা মেয়ে।

মুখের সামনে হাত থাকায় প্রথমে কেউ ধরতে পারেনি। গানের তালে তালে সে নাচতে শুরুকরলো

“ওহে শ্যাম তোমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিব অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো……..

ওহে শ্যাম তোমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিব অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো……..” সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠলো। স্টেজ এ রাই নাচছে।
পরনে সেই লং ফ্রক। গর্যেস সাজ, হাতে নিশান এর দেওয়া চুরিগুলোর একডজন, আর গলায় সেই পেন্ডেন্ত।
দুপাট্টা এককাঁধে নিয়েছে। আর চুলগুলো খোলা। খুবই অসাধারণ লাগছে রাই কে। সবাই অবাক + ওর কাজিনরা তো সেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে। তখনি সুরাইয়ার এক ভাই স্টেজ এ উঠলো

“বাগিচার ফুল তুমি তুলিয়া আনিয়াছি আমি
মালা গেঁথে গলায় পরিব
অন্য কেউরেনা আমি চাইতে দিবো…. ওহে শ্যাম……..”

রাই এর সোহম (যে ছেলেটা ওর সাথে নাচ করছে) খুব সুন্দর করে তালে তাল মিলিয়ে নাচ করছে। এদিকে নিশান তো পুরোই অবাক ওর উপস্থিতির পদ্ধতি দেখে।

এবার নিশান স্টেজ থেকে নেমে অপরদিকে রাই এর স্টেজ ই খুব ভাব নিয়ে উঠলো। আর সোহম সরে গেলো। সবাই ইচ্ছামত তালি দিচ্ছে।
রাই মাথা নাড়িয়ে ওকে ইশারায় চ্যালেঞ্জ করলো নাচার। নিশান ও বাকা হেসে শুরু হয়ে গেলো

“সুবাস মিশিয়া থাকে পাপড়ির ভাজে ভাজে……
তেমন তুমি আছো মিশে আমার দেহের মাঝে।।।।।(রাই)

সুবাস মিশিয়া থাকে পাপড়ির ভাজে ভাজে……
তেমন তুমি আছো মিশে আমার দেহের মাঝে…….(নিশান)

সাত রাজার ধন তুমি….. খুঁজিয়া পাইয়াছি আমি,,,,
মনের মনে কোঠায় রাখিব
অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো”

নিশান আর রাই একসাথে মুখোমুখি এসে দাড়ালো ঠিক গানের মতো

“ওহে শ্যাম তোমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিব……
অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো…
ওহে শ্যাম…….”

দুজনের নাচ শেষ হলো। নিশান রাই এর দিকে হেসে তাকিয়ে আছে। রাই মুখ ভেংচি দিয়ে স্টেজ থেকে নেমে গেলো।

স্টেজ থেকে নেমে আসার পর অন্যান্য ভাই বোনেরা নাচ করছে। আর রাই ঘুরে ঘুরে সব জায়গাতেই দেখছে। সবাই যে যার মতো বিজি। ওদিকে নিশান ও স্টেজে নাচানাচি করছে। “হুহ পুরো ক্যাঙ্গারুর মত লাফাচ্ছে” বলে নিজেই হাসতে লাগলো রাই….
তাকিয়ে দেখে একটা চেয়ার ফাঁকা আছে। রাই গিয়ে চেয়ারটায় বসলো আর ফোন দিয়ে ওদের ভিডিও রেকর্ড করতে লাগলো।

হটাৎ রাই এর চোখে পড়লো একটা অজ্ঞাত ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রাই ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষন একটু আড়চোখে তাকিয়ে ছেলেটাকে পর্যবেক্ষণ করলো। হুম ছেলেটা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। রাই এর অসস্তি হচ্ছে। ও ভাবলো এখান থেকে সরে অন্য জায়গায় যাবে।
তাই ও উঠে অন্য একপাশে গিয়ে বসলো।
কিন্তু মহাবিপদ ছেলেটা দেখি ওর পাশেই এসে চেয়ারে বসে গেলো।
রাই এর মেজাজটা পুরোই বিগড়ে গেলো।
যতই সময় যাচ্ছে ততই ছেলেটা যেনো ওর দিকে আরো লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রাই অসস্তির জন্য সেখান থেকেও উঠে গেলো । “দাড়াও বুঝাচ্ছি” বলে রাই এবার হাঁটা শুরু করলো। এবারে ছেলেটাও ওর পিছু পিছু হাটতে লাগলো।
রাই এইটা লক্ষ্য করে দ্রুত হাটতে লাগল। সেম ছেলেটাও ওর পিছনেই।

হাটতে হাটতে একপর্যায়ে রাই থেমে যায়। আর ছেলেটা আচমকা থেমে যাওয়ার জন্য প্রায় রাই এর সাথে ধাক্কা লাগতে গেলেই রাই পেছনে ঘুরে ছেলেটার পাঞ্জাবির কলার ধরে সামনে এনে মাটিতে ফেলে দেয়।
তাল সামলাতে না পেরে ছেলেটা মুখ থুবড়ে পড়ে যায়।

“কি সমস্যা হ্যা?” রাই কোমরে হাত বাঁধলো।

ছেলেটা রেগে ওঠে “কি ,? কে আপনি ? আমাকে এভাবে ফেললেন কেনো?”

“আমি ফেলেছি? তোর তো মাথায় ফাটিয়ে ফেলবো….” বলে রাই পাশে ফেলে রাখা একটা লাঠি উঠাতে গেলেই রাই এর বাবা এসে ওকে ধরে ফেলে। গান বাজনা বন্ধ হয়ে যায়।

“রাই কি করছিস তুই!”

“বাবা , এই ছেলেটা অনেক্ষন যাবৎ আমাকে ফলো করছে। দেখছি যেখানেই যাই সেখানেই আসে। ” বলে রাই ছেলেটার দিকে অগ্নিদৃষ্টে তাকায়। ততক্ষণে ছেলেটার মা , বাবা উপস্থিত।

“এই মেয়ে তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত দিচ্ছ কেনো?” বলে মহিলা কটমট করে তাকালো

“ছেলে তো স্বয়ং কৃষ্ণচূড়া? টোকা দেওয়া যাবেনা?” বলে রাই ও ক্ষেপে গেল।

“রাই চুপ কর….”

“কি চুপ করবো খালামণি? ছেলেটাকে তোমরা কিছু বলবে না? ওকে জিজ্ঞেস করুন না ও কি করছিল.?”
রাই এর কথা শুনে ছেলেটার বাবা ছেলেটাকে ধরলো “ও কী ঠিক বলছে?”

ছেলেটা বোধহয় একটু ভয় পেলো
“বাবা….. না।।। আমি”
সজোরে একটা চড় পড়লো ছেলের মুখে “এই দিন দেখার জন্য তোকে বড়ো করেছি?” লোকটি আবারো হাত তুলতে গেলে রেজোয়ান সাহেব এসে তাকে ধরে ফেলেন।

বুঝিয়ে সুঝিয়ে সে মামলা ওখানেই রফাঁদফা করা হয়। তবে রাই শেষে বলে ওঠে “এই বাড়ির ত্রিসীমানায় যেনো না দেখি……” বলে তুড়ি মেরে রাই ওয়ার্নিং দিয়ে দেয়।

নিশান মনে মনে বেশ অবাক ও খুশি দুটোই হয়। ” পুরোই গুন্ডি” বলে নিশান হেসে দেয়।

পুরো অনুষ্ঠানটা খুবই ভালো করে সম্পন্ন হলো। এই মুহূর্তে কাজী সাহেব সুরাইয়া আর মিহির এর বিয়ে পড়াচ্ছেন। সুরাইয়া কে কবুল বলতে বলা হলো । ও কিছুক্ষন চুপ থেকে কবুল বললো। সবাই খুশি হয়ে গেলো।
রাই হেসে ওই কথাটাই রিপিট করলো

“কবুল” বলে রাই পর্দা ভেদ করে মিহির এর দিকে না তাকিয়ে সোজা নিশান এর দিকে চোখ চলে গেল। নিশান দুষ্টু হেসে নিজেও শব্দহীন ভঙ্গিতে বলল “কবুল”
রাই এর চোখ বিস্ফোরিত হয়ে গেলো। ও সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো। “ভালো হইসে তিনবার বলি নি” ভেবে হাফ ছাড়লো রাই।

এভাবেই বর কনে তিনবার করে কবুল বলে একে অন্যকে জীবনসঙ্গী বানিয়ে নিলো।
সুরাইয়া কান্না শুরু করে দিয়েছে ইতোমধ্যেই। কিছুক্ষণের মাঝেই ওর বিদায় হবে।

রাই কিছু একটা কাজের জন্য বাড়ির ভেতরে গিয়ে দোতলায় উঠেছিল।
কাজ সেরে ও দোতলার ঘর থেকে নামার জন্য পা বাড়াবে ঠিক তখনই পেছনে দরজা লাগানোর শব্দ এলো।
ও চমকে পেছনে ঘুরে তাকায়….

কেউ একজন গাঢ় চকলেট কালার পাঞ্জাবি পরে আছে। মুখ দরজার দিকে। দরজা লাগলো মাত্রই

“কে ? কে আপনি!” রাই ভয় পেয়ে গেল।
লোকটি ঘাড় বেঁকিয়ে ঘুরে দাড়ালো আর একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করল রাই এর দিকে।যাকে দেখে ঘৃণায় রাই এর মুখভঙ্গি বদলে গেলো “আপনি এখানে কি করছেন? ”

আবির কিছু বললো না। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। তবে আজ ওর চেহারায় কোনো হাসির রেখা নেই।

“কিহলো ? দরজা খুলুন…..” বলে রাই পিছতে লাগলো
কারণ আবির ওর দিকে এগোচ্ছে।
“আপনি….. দরজা খুলুন” ততক্ষণে রাই দেওয়ালের সাথে গিয়ে ঠেকেছে।
আবির ওর সামনে এসে ঠিক ওর দুপাশে দুটো হাত দিয়ে ঘিরে দাড়ালো।
রাই বরফের ন্যায় জমে গেছে। লোকটা কি মতলবে এসেছে!

আবির আস্তে আস্তে রাই এর দিকে মুখ এগোতে লাগলো। রাই নড়তেও পারছেনা। ওর হাতপা এমনভাবেই জমে এসেছে, ভয়ে ও চোখ বন্ধ করে নিলো।

মুহূর্তেই একটা গরম শ্বাস ওর মুখে আছড়ে পড়ল “কি মনে করছ আমি কি বাহিরের ওই ছেলেটা নাকি?”

রাই তাকিয়ে গেলো । ওর মাথায় ঢুকলো না কি বললো আবির।
আবির আবারো বললো “বাহিরে তো ছেলের মাথাই ফাটিয়ে দিচ্ছিলে। কি শেষ সব?”

আবিরের কথায় রাই একটা ঢোক গিলে নিলো। রাই হৃদপিণ্ড মিনিটে ১০০ এর উপরে চলে গেলো।
আবির অদ্ভুত গলায় বলল “নাচটা ভালো ছিল…… তার থেকে ভালো ছিল তোমার চেহারার চমক। একদম চম্বুকের মতো ”

রাই এর কপাল সংকুচিত হয়ে যায় “কি বলছেন এগুলো!”

“হুম….. (রাই কে আপাদমস্তক একবার দেখে) হট লাগছিলো। সব দিক থেকেই…… উম….. হুম চেহারাটা যথেষ্ট বাজে লাগছে….. যাইহোক…. তবে (ওর কাছে এসে) নাচের মাধ্যমে তুমি ছেলেদের নিশ্চই পুরোদমে আকর্ষণ করতে পেরেছ। ” কথাটা এমনভাবে বললো যেনো এর মধ্যে রাই কে কি পরিমাণে অপমান করা হচ্ছে বোঝা যায়।

“চুপ করেন….. অসভ্য……”ওকে থামিয়ে দিল আবির

“আ আ….. অসভ্য কেনো! সেই তো লাগছিলো।।।। শুধু….. বিকৃত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওরনা টা না নিলেও পারতে…”

“শাট আপ” ওর কথা শুনে রাই থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত তুললো , কিন্তু আবির ওর হাতটা ধরে ফেললো। আর আবিরের মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠলো।

“হাত ছাড়ুন…..” আবির ওর হাত এতই শক্ত করে ধরেছে যে হাতের কাচের চুড়ি গুলো একটা একটা করে ভাঙতে লাগলো “ভালো লাগেনি? কমপ্লিমেন্ট টা?”

“ঘৃণা করি। আপনি এমনই , বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ….. ছি”

আবির আরো জোরে ওর হাত চেপে ধরলো “কেনো! আমি বিকৃত মস্তিষ্কের!? কিন্তু স্টেজ এ তো ঠিক এই একই মানষিকতার কিছু ছেলের মাঝে নাচানাচি করছিলে….. যারা তোমার দিকে তাকিয়ে ছিল তারাও তো এইভাবেই তাকিয়ে ছিল….” রাগান্বিত স্বরে “তাহলে আমি কি দোষ করলাম?”

“আহ্…. ছাড়ুন।।।। আপনার কথামত কি আমি চলবো নাকি?”

আবির বাকা হাসলো “আমার কথামত যদি নাই চলতে চাও … তো এই ড্রেস কেনো পরেছ?”

রাই ব্যথায় কাতরাচ্ছে “মানে!”

আবির কিছু বললো না , চুপ করে তাকিয়ে রইলো। পরমুহূর্তেই রাই বুঝতে পারলো আবির কি বোঝাচ্ছে
” মানে এই ড্রেস…. আপনি দিয়েছেন?”
আবির শয়তানি হাসি হেসে রাই কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।

” আমার প্রতি তোমার ঘৃণার উপহার ছিলো এটা…..হুম, হট লাগছে । . ” আবিরের তীব্র কঠোর দৃষ্টি রাই কে ভেতর থেকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।

রাই হাতের ব্যাথা উপেক্ষা করে ওরনা টা ঠিককরে দু কাঁধে দিলো।

আবির আরকিছু বললোনা। সজোরে দরজা খুলে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।

_______________

দরজা লাগানোর শব্দে ধ্যান ভাঙলো রাই এর। সেদিনের আবিরের হিংস্রতা দেখে রাই সত্যিই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আবির এসে খাটে বসে পড়লো। রাই সেদিনের কথা ভাবছে আর আবিরের দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে।
আবির তাকিয়ে দেখলো রাই অভাবে তাকিয়ে…… ও চোখ ছোটো ছোটো করে বললো

“এই নজরটা দেখলে মনে চায় খেয়ে ফেলি। ”

রাই চোখ ফিরিয়ে নিলো। আবির বাকা ঠোঁটে হাসে” আমার ব্যাপারে এত গভীর চিন্তা করার কিছুই নেই। ”

রাই চমকে উঠে ওর দিকে তাকায়।

“সহজ জিনিসকে জটলা পাকানোর সহজ উপায়ই হলো খুব বেশিই চিন্তা করো। আর এই অভ্যাসটা মানুষের অত্যন্ত প্রিয়। তুমিও সেই একই ধারণার”

কথাগুলো রাই এর বোধগম্যতার খুবই উর্ধ্বে। আবির আর সেদিকে তাকালোনা। উঠে বেলকনিতে চলে গেলো………

চলবে…..।।।।।।🎗️🎗️🎗️🎗️