In_The_Depths_Of_Love Part-06

0
11253

#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_06

তৈরি হয়ে দুজনে বাহিরে ড্রইং রুমে এসে দাড়ালো। আজও আবির এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য এলো না। রাই এর হাত ধরে নিয়ে এসেছে। রাই একটা সোনালী পাড়ের লাল শাড়ি পরেছে। আর আবির ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি।
সবাই যে যার মতো কাজ করছে। একটু পরেই আবিরদের অন্য আত্মীয়রা আসবে। বাড়ির বড়ো বউকে দেখতে।

ওদের দুজনকে একসাথে দেখে নীলার গা জ্বলে যাচ্ছে। নীলার মা আবারো বললো “নাও…. কিছু বললেই লোক বলবে বেশি কথা বলি ….. কিন্তু মানুষ নিজের কাজটাও চেয়ে দেখেনা। ”

আবির রাই কে নিয়ে সোফায় বসিয়ে নিজের চাচীর দিকে ঘুরল “কথাটা কোনোভাবে কি তুমি আমাকে বললে ? ”

উনি মুখ বিকৃত করলেন। আবিরের মা বলে উঠলেন “না বাবা , তোমাকে কি বলা যায় নাকি? তুমি তো সব অসাধ্য সাধন করে বসে আছো” বলতে বলতে টেবিলের উপরে পায়েসের বাটি রাখলেন।
ওর চাচী তাল মিলিয়ে বললেন “অসম্ভব কে সম্ভব করেছে”

আবির বাকা ঠোঁটে এক ভ্রু উঁচু করে বললো “এক্সাক্টলি ….. বড়মা। (ওর চাচীকে) এখন বড়ো আব্বু তো এত সুন্দর করে হাত ধরে বা যদি বলি তোমার সাথে এইসব অসাধ্য সাধন করেন না। তো সেই ঘাটতি টা তো কাওকে না কাওকে পূরণ করতেই হবে। তাই ভাবলাম নিজেই যোগদান করি….. কি বলো?”

আবির এর কথা শুনে ওর মা আর বড়মায়ের চোখ তুঙ্গে উঠে গেলো।

“আবির…..”
“চৌধুরী…..” গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো আবির তার বড়মা কে। “তোমাদের মহিলাদের সমস্যা একটাই , তোমরা স্টার জলসার সো কল্ড শ্বাশুড়ি সাজতে চাও……”

শুনে রাই অজান্তেই হেসে ওঠে। কিন্তু সে হাসিতে আওয়াজের অভাবে কেউ শুনতে পেলো না। নীলা অবাক হয়ে শুধু আবিরকে দেখেই যাচ্ছে।

আবির বললো “কিন্তু এই চক্করে যে নিজেদের পরিচয়টাই ভুলে যাও সেটা কি ঠিক? বড়ো…….. মা…..?”

আবিরের মা বলে উঠলেন “তুই একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছিস আবির…. তোর “…….

“হুম… আছে। মাথা, মন , মস্তিষ্ক সবই ঠিকাছে” বলে আবির পা উঠিয়ে এগোতেই যাচ্ছিলো রাই উঠে দাড়িয়ে আবিরের হাত ধরে ফেললো আর বললো “শুধু শুধু কেনো তিলকে তাল করছেন? ”

আবির ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বললো “ইচ্ছে নেই। তবে কিছু কথার জবাব দেওয়া ফরজ”
ততক্ষণে নিশান হাতের ঘড়ি পড়তে পরতে বের হয়েছে মাত্র , রাই কে আবিরের হাত ধরতে দেখে নিশান এক সেকেন্ডের জন্য তাকিয়ে রইলো।

“এসব কথা ছাড়ুন…. প্লিজ , (নিম্নমাত্রার কণ্ঠে বলল) নিজের গুরুজনদের সাথে কেনো যেচে পড়ে লাগছেন।।।। ”

আবির আর কথা বাড়ালো না। নিজের মা , চাচীর দিকে একপলক তাকিয়ে ,ঘুরে এসে রাই এর পাশে বসে পড়লো। নিশান পলক ফেলে , নিজেকে নিজেই কিছু একটা বললো বিড়বিড় করে আর কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো। রাই , আবিরের মা , বড়মা সকলেই বিষয়টা লক্ষ্য করলো। কিন্তু আবির সেদিকে নজর দিল না।

রান্নাঘর থেকে আবিরের ফুফু বেরিয়ে এলেন “আপা সুমি কোথায়?”

আবিরের মা জবাব দিলেন “ও তো ছাদে গেছে ,,,,, আঁচার দিয়েছিলাম। সেটাও রোদে দিতে”

“ওহ…… রাই”

রাই দাড়িয়ে পড়লো যেনো স্কুল এর প্রেজেন্ট দিতে এসেছে “জ্বী ফুপ্পি”

মহিলা একগাল হেসে রাই কে নিজের কাছে ডাকলেন “এখানে এসো মা”

রাই একপলক আবিরের দিকে তাকিয়ে ওনার দিকে এগিয়ে গেলো।
“দেখো…. বিয়ের পর বিভিন্ন ঝায় ঝামেলা থাকলেও, আজ প্রথম আমাদের আত্মীয় , গুরুজনেরা আসবেন তোমাকে দেখতে, যতই হোক। বাড়ির বড়ো বউ তুমি….”

আবির বিড়বিড় করে হেসে বললো “মনে তো হয় না”….

ফুপি বললেন” তো তোমাকে কিছু একটা রান্না করে তো তাদের খাওয়াতেই হবে কি বলো?”

রাই মুচকি হেসে মাথা নাড়লো….

“তো এখন তুমি ছোটো খাটো কোনো আইটেম রান্না করে ফেলো, যেনো কেউ এটা না বলতে পারে , বউ পায়ের উপর পা তুলে খাচ্ছে” বলে উনি আদরে রাই এর মাথায় হাত রাখলেন।

পেছন থেকে বিদ্রুপ করে নীলা বলে উঠলো “আদৌ রান্না জানে কিনা জিজ্ঞেস তো করে নাও…… দেখা যাবে পোড়া মাংস, আর শক্ত ভাত খেতে হলো”

ওর কথা শুনে রাই একটু মন খারাপ করলো। কিন্তু আবির কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। এটা দেখে রাই এর মন আরো খারাপ হয়ে গেলো।
ফুপি বললেন “যাই রাধুক, অন্তত রাঁধবে তো … তোর মত বসে নেই ও… কি রাই?”

রাই জোরপূর্বক হেসে বলল “আমি করছি। কি রাঁধবো এটুকু বলেই হবে। ”
ফুপি খুশি হয়ে গেলেন “আসো….”

দুজনে রান্নাঘরে ঢুকে গেলো। নীলা রেগে ওই জায়গা থেকে নিজে ঘরে চলে গেল। আর আবিরের মা চাচী ও অন্যান্য কাজে চলে গেলো।
আবিরের মা যেতে যেতে বললো “দেখা যাক কি রেঁধে আনে”
চাচীও সায় দিল “সেটাই”

আবির ডানে রান্নাঘরের ভেতরে রাই এর দিকে তাকালো “সব কথার উত্তর মুখে নয়, মাঝে মাঝে কাজের মাধ্যমে দিতে হয় হলদেটিয়া”

ফুপির থেকে সব বুঝে নিয়ে শাড়ির আঁচলটা ঘুরিয়ে কোমরে গুজে নিলো রাই। বেশি কিছু না ,তবে মুরগির কোরমা রান্না করতে হবে ওকে। মিসেস কামাল (আবিরের ফুপি) সব প্রয়োজনীয় মসলা, মাংস এনে রাই কে দিয়ে দিলো।
রাই চুল গুলোকে একটা খোঁপা করে বেঁধে কাজ শুরু করলো “ফুপি, আপনি গিয়ে বসুন আমি করছি”

“তুমি একা কিভাবে পারবে?”

“আমি রান্না মোটামুটি পারি। মা কে দেখতাম, তো ওভাবেই টুকটাক শেখা”

“তাই নাকি (উনি খুশি হলেন) তাহলে ঠিকাছে। করো….. কিছু লাগল ডাক দিও আমি বাহিরেই আছি। ”

রাই মাথা নাড়লো। উনি হেসে বেরিয়ে গেলেন।
এই মুহূর্তে সোফায় শুধু আবির বসে। বাকিরা নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত।
রাই একে একে মাংস নিয়ে মসলা মাখিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিয়েছে।
আস্তে আস্তে সব কাজই করছে রাই। কিন্তু ওর একটু অসুবিধে হচ্ছে শাড়ির জন্য। শাড়ি পরে কাজ করা সত্যিই ঝামেলার।

এদিকে আবির বারবার কোনো না কোনোভাবে চোখ ঘুরিয়ে সেই রাই কেই দেখছে। একবার রাই এর খোঁপা করা চুলগুলো দেখছে। তো একবার ওর রান্নার হাত পর্যবেক্ষণ করছে।

রাই এর খবর নেই যে কে ওকে দেখছে। বা কেউ কি তাকিয়ে আছে কিনা। ও নিজের মতই কাজ করেই যাচ্ছে।
আর আবির ও নিজের কাজ করেই যাচ্ছে। মানে রাই কে একটু পরপর দেখা। তবে আর কি? এই প্রথম রাই কে রান্না করতে দেখছে । দেখতে তো হবেই।
___________

এদিকে সুমি মাত্রই ছাদ থেকে ফিরলো, আর দরজা দিয়ে ঢুকেই দেখে ম্যাগাজিন হাতে আবির ডান দিকে তাকিয়ে আছে….. সুমিও সেদিকে তাকালো । দেখে হেসে কেশে উঠলো সুমি “তো ভাইয়া….”
আবিরের ধ্যান ভাঙলো। আবির সুমির দিকে তাকালো ___

“তুই ম্যাগাজিন কি সো অফ করার জন্য হাতে রাখছিস? তোর নজর তো ম্যাগাজিনে নাই*”

আবির চোখ টিপটিপ করে সুমির দিকে তাকালো আর ম্যাগাজিনের দিকে মাথা ঘোরালো “ম্যাগাজিনে তোর নাম এসে গিয়েছিল তো তাই আরকি চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম।” বলে আবির একটা পাতা উল্টে ম্যাগাজিনে মুখ গুজলো। সুমি মুখ ফুলিয়ে নিলো “ভাবি ও ভাবি , দেখো কেউ তোমায় ডাকছে…..” বলে সুমি এক দৌড়।
আবির চোখ রাঙাবে তার সুযোগ ও পেলো না, এর মধ্যেই হাত এর পানি ঝাড়া দিয়ে রাই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো ।
“কেউ ডাকেনি তোমায়…..” বলে আবির একটু কেমন যেনো করলো। রাই চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো “ধুর, আপনার জন্য আসছি নাকি আমি…বলে রাই ফ্রিজের দিকে গেলো আর ফুপি কে ও ডাক দিল। মিসেস কামাল এসে দাড়ালেন

“ফুপি , ফ্রিজে কি নারকেলের দুধ আছে? ”
উনি ফ্রিজ খুলে চেক করলেন “আহহা, ওটা তো নেইই। ওটা ছাড়া কিভাবে রান্না হবে! আমি তো খেয়ালই করিনি।”

রাই ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো এক প্যাকেট মিল্কভিটা রাখা। রাই মুচকি হেসে ওটাই বের করে নিল “সমস্যা নেই হয়ে যাবে”

“প্যাকেটের দুধে কি ভালো রান্না হবে?”

রাই আশ্বস্ত করে বললো “চিন্তা করেন কেনো. আমি আছিনা?” বলে ও হেসে চলে গেলো রান্নাঘরে।
আবির ওর ফুপির দিকে তাকালো।

“তুই কি পেঁচার মতো চেয়ে আছিস? যা বাইরে যা হেঁটে আয়। ঘরের কাজ করতে দে। যা” বলে উনি চলে গেলেন।

___________________
রান্না শেষ । রাই সব খবর টেবিলে গুছিয়ে রেখে হাত মুখ ধুতে চলে গেলো। সবাই তখন মেহমানদের অপেক্ষায়।
বেল বেজে উঠলো “সুমি যা দরজা খোল”

দরজা খুলতেই রেজোয়ান সাহেব, সুমির বাবা, নীলার বাবা আর অন্যান্য অনেক আত্মীয়রা এসে ভেতরে ঢুকলেন। সবাই সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিলো।

“কিগো, তোমাদের বউ কোথায়?” এক মহিলা বললেন। আবিরের মা বললেন “তোমরা সবাই মাত্রই এলে। বসো, আগে। হাতমুখ ধুয়ে আসো খাবার বাড়ছি , এমনিতেই দুপুর হয়ে গেছে”

সবাই সেভাবেই কথায় কথায় হাত মুখ ধুয়ে এসে জড়ো হলো ডাইনিং টেবিলে।

রাই হাত মুখ মুছে , একটু চুল আচড়ে নিজেকে দেখে নিল ঠিকঠাক আছে কিনা। পেছন থেকে আবির এসে দাড়ালো । রাই ঘুরে চলে যেতে গেলেই আবির ওকে ধরে আয়নার সামনে দাঁড় করায় ।

“আপনার এই ফালতু কাজের জন্য সময় নেই ছাড়ুন”

আবির ভাবলেশহীন ভাবে বললো”তোমাকে ধরে রাখার সখ আমার নেই। ”

“ও , এখন তো আমাকে ভূতে ধরে রেখেছে” রাই তাকালো।

“তোমার যে গুণ! ভূতে হার্ট অ্যাটাক করবে না?” ঠাট্টা স্বরে

“কোন গুণ?”

“আমি কাছে আসলেই যে আর্তনাদের নাটক শুরু করো সেটা……” গম্ভীর গলায় বলে আবির রাই কে ছেড়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিল থেকে নিজের ঘড়িটা নিয়ে পরতে পরতে ঘর থেকে বাহিরে চলে গেলো।
রাই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো। কথার অর্থটা বুঝতে ওর বেশি অসুবিধে হলোনা।

________________

টেবিলে বসে প্রায় সবাইই রেজোয়ান সাহেবের কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। বউ কই। আসেনা কেনো। আবিরকে ও প্রশ্ন করছে। তবে আবির কারো কোথায় কোনো উত্তর দিচ্ছে না।তাতে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। সবাই জানেই যে আবির কোন মেজাজের ছেলে।

আবিরের এক আণ্টি বলে উঠলেন “সাবিনা,(আবিরের মা) তোর ছেলের যে মেজাজ , ওর যে বিয়ে হয়েছে, আর ওকে যে কেউ বিয়ে করেছে এটাই তো বিশ্বাস হচ্ছে না। ”

রেজোয়ান সাহেব হেসে উঠলেন “আরে আপা, এক্কেবারে খাঁটি কথা বললেন , আমি তো ভেবেছিলাম আমার এই ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ব্যাটা কাজ , পড়ালেখা ছাড়া কিছুই বোঝে না”

“একেবারেই নিরামিষ” বলে হেসে উঠলো হৃদয় (আবিরের কাজিন) ।

অন্য একজন আবিরের দাদী কে বললেন “আম্মা, আপনার নাতবউ কেমন লেগেছে?”

আবিরের আরো কয়েকটা কাজিন ও জিজ্ঞেস করলো। দাদী মুখ গোমরা করে নিলেন “মাত্রই তো কয়দিন হলো। আস্তে আস্তে বোঝা যাবে আমার নাতি, হিরে এনেছে না কয়লা বেছেছে”

সবেমাত্র রাই সেখানে এলো। এসেই দাদীর এমন মন্তব্যে ওর পা থমকে গেলো।
রেজোয়ান সাহেবের নজর পড়লো ওর দিকে “আরে এইতো রাই। ”

রাই হুশে এসে তাড়াতাড়ি মাথায় অঞ্চল টেনে এগিয়ে সবাইকে সালাম দিল। আবিরের দুটো কাজিন বোন উঠে রাই কে জড়িয়ে ধরলো। “কেমন আছো ভাবি?”
রাই উজ্জ্বল মুখে জবাব দিল।
রেজোয়ান সাহেব রাই কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তার মধ্যে হৃদয় আবার কিছুক্ষন রাই এর দিকে তাকিয়ে ছিল। যেটা আবিরের চোখ এড়ায় নি।

“আণ্টি , নিশান কোথায়?” হৃদয় বললো।

সাবিনা জবাব দিলেন “ও তো ওর ঘরে। একটু আগেই ফিরেছে”

রাই একে একে সবাইকেই খাবার বেড়ে দিলেন। এনাদের মধ্যে যারা রাই কে পছন্দ করত না যেমন দাদী, সাবিনা, আবিরের বড়মা । এনারা রাই এর রান্না করা খাবার নিলেন না।
ওদিকে সবাই রাই এর রান্নার ভালোই প্রশংসা করলো। আবির চুপ করেই আছে। হৃদয় তো পারেনা রাই কে গোল্ড মেডেল দিয়ে দিক।
তবে এত ও বিশেষ কিছুই ছিলনা । শুধু কোরমাই তো ছিলো। রাই ভেবে পায় না।

দাদী বলে উঠলেন “নিশান বাবা তো কিছু খায় নি।”

সাবিনা মুখ ঘুরিয়ে বললেন “ও ঘর থেকে বেরোবে না বলেছে”

দাদী একটু চিন্তিত স্বরে বললেন “এভাবে তো হয় না। রাই……”

রাই সোজা হয়ে দাড়াল “জ্বী”

“খাবার বেড়ে নিয়ে যাও নিশান এর জন্য। ওকে ঘরে খাবার দিয়ে এসো” বলে উনি খাবার খেতে লাগলেন।

কথাটা শুনে রাই চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। মন কোনোভাবেই চাচ্ছে না যেতে, কিন্তু নিষেধ ও করতে পারছে না। রাই আবিরের দিকে তাকালো। আবিরের মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই। না চাইতেও প্লেটে খাবার বেড়ে রাই নিয়ে গেলো নিশান এর ঘরে।
পেছনে হৃদয় রাই এর দিকে তাকিয়ে রইলো।

নিশান দাড়িয়ে ছিলো , তখনি রাই এর প্রবেশ । রাই কিছু না বলে খবরটা টেবিলে রেখে ঘুরে দাড়ালো

“খবরটা নিয়ে যাও। আমি খাবো না”

রাই উত্তরে বললো “আমি আনিনি, দাদী পাঠিয়েছেন”

এটা শুনে নিশান আরো চটে গেলো “বললাম তো নিয়ে যাও। ”

রাই কিছুক্ষন চুপ রইলো “খাবারটা যদি আমি নিয়ে যাই তবে বাড়ির লোকেরা কি বলবে নিশ্চই জানো। তাই খেয়ে নাও”

নিশান গিয়ে রাই এর হাত চেপে ধরলো “তুমি কি সত্যিই এতই বদলে গেছো? সবই কি মেনে নিয়েছো?”

“নিশান তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি কে…. হাত ছাড়ো” শান্ত দৃষ্টিতে

নিশান নিজের প্রশ্নের উত্তর এভাবে পাবে বলে আশা করেনি। আপনাআপনিই ওর হাতটা আলগা হয়ে এলো। রাই তীব্র যন্ত্রণার চোখে নিশান এর দিকে তাকালো

“যেই মুহুর্তে তোমার আমার পাশে থাকার কথা ছিল , তখনই তো ছিলেনা। এখন কত্থেকে এতো কষ্টের ভান্ডার একত্রিত করেছো?”

নিশানের কাছে এর কোনো জবাব নেই। রাই মুখ ঘুরিয়ে প্রস্থান করলো।

_______________

খাওয়া শেষে সবাই গল্প করছে। গল্পের কেন্দ্রবিন্দু রাই। রাই কে সবাই ঘিরে রেখেছে। আর একেকজন একেকটা উপহার হাতে তুলে দিচ্ছে রাই এর।
আবির দুর থেকে দেখছে সব কিছু।
অবশেষে এক বোন এসে রাইয়ের হাতে একটা ছোটো খাটো চকোলেটের ঝুড়ি ধরিয়ে দিল “ভাবি,,,, জানি তুমিও আমার মতই চকোলেট প্রিয়, নাও নাও , সব তোমার”
সবাই হেসে উঠলো।
রাই ঝুরিটার দিকে তাকিয়ে রইলো।
এই ঝুড়িটা দেখেও ওর অতীত চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

[ ]
সুরাইয়ার গায়ে হলুদে জমিয়ে মজা করেছে সবাই। বিশেষ করে রাই। নাচগান , আড্ডা সবই জমজমাট ছিলো।
আগামীকাল পাত্রদের বাড়ি থেকে নাকি কিছু ডালা পাঠাবে। মিহির ভাইয়ার অনুরোধে পাঠানো হচ্ছে।

“সুরাইয়ার হলো কপাল বুঝলা খালামণি। বিয়ের জন্য নাকি আলাদাভাবে সব পাঠাচ্ছে ভাইয়ারা” বলে রাই হাসছে।

“কেনো তোর হিংসা হচ্ছে নাকি?” সুরাইয়া ঘরে এলো।

“উম আপাতত না। তবে ভাইয়া যদি তার একমাত্র শালীকে কিছু না দেয় তাহলে নিশ্চই ভাইয়া আস্ত থাকবে না” বলে রাই নাক এ আঙ্গুল ঘষলো।

“ওরে আমার পালোয়ান” বলে রাই এর মা ভ্রু উঁচু করলেন।

_________
ওভাবেই হাসাহাসি করে রাত পার।
পরেরদিন বিকেলে পাত্রদের বাড়ি থেকে তিনজন এলো। রাই মাত্রই বাহির থেকে এসেছে। বাড়িতে ঢুকে দেখে নিশান সহ আরো ২ জন বসে আছে সোফায়। দেখেই রাই এর মাথা এমনিতেই বিগরে গেলো।

রাই বাহিরে বেরিয়ে গেলো “ধুর এই ছেলের চেহারাই দেখতে মন চায় না”

বলতে বলতে রাই বাড়ির পেছনের একটা গাছের নিচে গিয়ে বসলো ।
হটাৎ পেছন থেকে কেউ ওর কানে কিছু একটা ধরলো। সাথে সাথে ও চমকে লাফিয়ে উঠলো। দেখে নিশান গলা ফাটিয়ে হাসছে ।
রাই দেখে ওর হাতে একটা লম্বা ঘাসের মত কিছু। এজন্য কানে অমন সুড়সুড়ি লেগেছিল।

“অটিস্টিক”

“কি বললে?” নিশান এগিয়ে গেলো।

“বললাম বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার খুব সুন্দর উদাহরণ আপনি মহাশয়” বলে রাই ঢং করলো

“ওহ, থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু…. ” বলে নিশান ও ঢং করলো। “তো আমাকে দেখে পালালে কেনো? তুমি হরিণ নাকি আমি বাঘ?”

“শেয়াল দেখলে বাচ্চারা ভয় পায়। স্বাভাবিক” দাঁত বের করে বললো রাই।

নিশান কপাল সংকুচিত করে একপা একপা রাই এর দিকে এগোলো। রাই সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে।
নিশান রাই এর খুব কাছে এসে বলে ওঠে “এমন বাচ্চাকে তো মন চায়….. খেয়ে ফেলি” বলে বাকা হাসলো নিশান।

রাই মনে মনে বললো “দাঁত ভেঙে দিবো। ঢং”

“গাগালি করছো নাকি?” তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে নিশান বলে।

“বাহ বুঝলেন কিভাবে?” রাই এর চোখ চকচক করে ওঠে।

নিশান কিছুক্ষন বাকা চোখে তাকালো। রাই ঠোঁট চেপে হেসে বাচ্চা বাচ্চা ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইলো।

“থাক অবুঝদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই” বলে নিশান।

“প্রতিবন্ধীরা কথা ও বলতে পারে?” বলে ঠাট্টা করে রাই।

“সবাইকে নিজের মত কেনো ভাব তোমরা মেয়েরা বলবে?” নিশান কোমরে একহাত রাখে।

রাই হাত ভাজ করে ভাব নেয় “সরি আমরা মেয়েরা অযথা তর্কাতর্কি করিনা”

“দেখাই যাচ্ছে” বাকা চোখে তাকিয়ে

“আপনার চোখ ও আছে!” রাই বলে ওঠে।

“নির্ঘাত তোমার ব্রেনে সমস্যা ” নিশান বলে।

“হুম…. ভাইরাস সামনে থাকলে যা হয় আরকি……” বলে রাই ঠোঁট হ
চেপে হাসলো। কারণ নিশান রীতিমত ওর সাথে তর্ক করে হাঁপিয়ে উঠেছে। বেচারা গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে।

“পারবেন না পারবেন না,,,, গার্লস পাওয়ার ইউ নো?’ রাই নিজের কাঁধেই চাপড় দিলো।

নিশান কিছু না বলে ওর দিকে আরেকটু এগিয়ে এসে এক দৃষ্টিতে তাকালো। রাই একটু অসস্তিতে পড়ে গেল। “দূরে যান”

নিশান বাকা ঠোঁটে বলে “শেষ গার্লস পাওয়ার?”

“আব বা….” রাই কিছু বলবে তখনি রাই এর একহাত ধরে সামনে এনে নিশান একটা রঙিন প্যাকেটে মোড়ানো ডালা ওর হাতে ধরিয়ে দিল । রাই তাকিয়ে দেখে ওটায় চুড়ি দেখা যাচ্ছে। “এটা!”

“এই সাজে সেজো কেমন?” বলে নিশান রাই এর চোখে গভীর দৃষ্টিপাত করে ধীরে ধীরে সেখান থেকে হেঁটে চলে গেলো।

রাই ডালা টা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রইলো।

রাতে রাই ওই ডালাটা খুব একান্ত ভাবে নিজের ঘরে খুলতে লাগলো।
“লাল রঙের খুব সুন্দর চুড়ি, আরো দু ডজন অন্য রঙের ছিলো। একটা পেন্ডেন্ট যার সাথে চিরকুট ছিলো (সবসময় গলায় পরে রেখো) আর একটা কাজল” ব্যাস……

উপহারগুলো দেখে রাই এর মুখে নিজ থেকেই একটা হাসির উদয় হলো। ও বেশ খানিকক্ষণ জিনিসগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলো………….

চলবে🌿🌿🌿