LoVe Effect part-17+18

0
566

#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 17

🍁🍁🍁

সবুজ ঘাসে ভরা নিচের মাঠ দূর থেকে একটা মস্ত বড় বাড়ির মতো কি একটা দেখা যাচ্ছে চারদিকে রঙিন আলোয় আলোকিত কিছুটা দূরে একটা সুইমিংপুল পুরো পুলের পানি হালকা আকাশি রঙের মাঠের ঠিক মাঝখানে এসে প্লেন টা ধীরে ধীরে নিচের দিকে ল্যান্ড করতে থাকে তিন ফুট উঁচু থেকে হঠাৎ নীরের হাতের বাঁধন চুলের মুঠির বাঁধন হালকা হয়ে যায় নীর একটা শুকনো ঢোক গিলে কয়েক সেকেন্ডর ব্যবধানে নীর ঠাস করে মাঠে পড়ে যায় ব্যথায় মুখ দিয়ে আহ শব্দ বেরিয়ে আসে চোখের কোণে চিকচিক করা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। নীর মাঠ থেকে কোনোভাবে উঠে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে কিডন্যাপার নামক ব্যক্তির দেখে ১২২০ ভোল্টেজের শখ খায় অস্পষ্ট সুরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে

নীরঃ মিষ্টার চৌধুরী

নীরের কথা সামনের যুবকের কর্ণদ্বয় হতেই আলতো হেসে উঠে সামনে থাকা যুবকের হাসি দেখে নীরের মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠে নীর চেঁচিয়ে বলে উঠে

নীরঃ এসবের মানে কি আমাকে এভাবে তুলে আনলেন কেনো সমস্যা কি আপনার আপনি আমার সাথে সবসময় এমন করেন কেনো বিয়ের দিন ও ছাড়লেন না বাড়ির সবাই কি ভাববে এটা একটা বার ভেবে দেখেছেন এন্সার মি চুপ করে আছেন কেনো

নীরের এরকম একটার পর একটা প্রশ্ন করায় সামনে যুবকের কপালে বিরক্তির ভাঁজ পড়ে বিরক্তি মাখা দৃষ্টিতে নীরের বাম হাত চেপে ভেতরে বাড়ির মতো ব্লিডিং এর দিকে অগ্রসর হয় নীর হাত মোচড়া মোচড়ি করে নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা শুরু করে হঠাৎ ব্লিডিং এর উপরের দিকে বেনারে চোখ যেতেই চোখ কপালে এটা কোনো বাড়ি না এটা একটা সেন্টার নীর মনে মনে সেন্টারের নাম টা আওড়ায় ” স্বপ্নকুঞ্জ কমিউনিটি সেন্টার & চিলেকোঠা রেস্টুরেন্ট ” নীর রুক্ষ কন্ঠে বলে

নীরঃ মিস্টার চৌধুরী ছাড়ুন ভেতরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আজ আমার বিয়ে ছাড়ুন বলছি

নীরের কথায় সামনে এগিয়ে যাওয়া যুবকের কোনো রেসপন্স না পেয়ে নীর হতাশ হয় কিন্তু পরক্ষণেই আবার হাত মোচড়ানো শুরু করে সেন্টারের সামনে আসতেই মিলিত ভাবে কয়েকজন বলে উঠে

_ ওই তো ওরা এসে গেছে

চেনা কন্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই নীর হাত মোচড়ানো ছেড়ে সামনে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া এরা এখানে কি করছে নীর সবার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তখনই হাতে জোড়ে টান পড়ায় নীর হুমরি খেয়ে কয়েক পা এগিয়ে যায় একেতেই লেহেঙ্গা পড়া তার উপর আবার ভারী ভারী গহনা আবার এই শক্তপোক্ত হাতের টান নীর নিজেকে সামলে রক্তচক্ষু নিয়ে সামনে থাকা যুবকের দিকে তাকায় ততক্ষণে ওরা ভেতরে চলে গেছে সেন্টারের মধ্যজায়গা বরাবর এসে নীরের হাত ছেড়ে দেয় হাত ছাড়া পেয়ে নীর একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।

সায়নঃ ওয়েলকাম মিস নীর

সায়নের মুখে নিজের নাম শুনে নীর আরো রেগে যায় সায়নের দিকে তেড়ে গিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে

নীরঃ সমস্যা কি আপনার বলুন তো একটা মিনিট আমাকে শান্তি দিতে পারেন না আর ইউ ম্যাড এভাবে বিয়ের আসর থেকে আমাকে তুলে আনলেন আপনি তো পিকনিকে গিয়েছিলেন তাহলে ঢাকায় কি করছেন আরে ভাই চুপ করে আছেন কেনো কিছু তো বলুন

সায়নঃ আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছো নিজেই তো একা বকবক করছো এতো প্রশ্ন একসাথে আমি ভাইভা পরীক্ষায় ও করতে দেখিনি

নীরঃ দেখবেন কিভাবে দিয়েছেন জীবনে ভাইভা পরীক্ষা বাপের অফিসে গিয়ে ঢুকে পড়েছেন আবার আসছে ভাইভা নিয়ে জ্ঞান দিতে

নীরের কথা শুনে জানভি রা মুখ চেপে হেসে সায়নের দিকে তাকায় সায়ন বোকার মতো নীরের দিকে তাকিয়ে আছে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীর বিরক্তি নিয়ে বলে

নীরঃ দেখুন ভাই এতো মেয়ে দের দিকে হা কটে তাকিয়ে থাকার শখ থাকলে বিয়ে করে নিজের বউয়ের দিকে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা তাকিয়ে থাকেন কিন্তু পরপুরুষের বউয়ের দিকে এভাবে তাকাবেন না

নীরের কথায় সায়ন ভ্রু কুঁচকে বলে

সায়নঃ তুমি কি আমাকে ইনডিরেক্টলি ক্যারেক্টারলেস বলতে চাইছো

নীরঃ এটা কখনো বললাম আজব তো

সায়নঃ বাই দ্যা ওয়ে বাদ দাও তোমার মতো মেয়ের সাথে ঝগড়ায় পারবো না নেহাৎ আমি নাদান শিশু

নীরঃ আহ ঠিক টাইমে বিয়ে করলে আজ বারো বাচ্চার বাপ হতো আর উনি নাদান শিশু তো এক কাজ করে রাস্তার পাশের শপ থেকে ফিডার কিনে গুঁড়ো দুধ গুলিয়ে খান

বিহানঃ তিয়াস ভাই আবহাওয়া আজ খুউব গরম

রিয়াঃ হুমমম

সায়নঃ সাট আপ সিনিয়র হয় তোমার

নীরঃ সরি ভাইয়া ভুলেই গেছি সরি আপনি তো সিনিয়র ভাই বলছি কেনো আপনাকে তো কাক্কু ডাকা উচিত

সায়নঃ ওহ গড এই মেয়ে এতো ফালতু কথা কিভাবে বলে ( বিরক্তি নিয়ে)

নীরঃ আমাকে এভাবে বিয়ের আসর থেকে টুপ করে তুলে না আনলেই হতো হুহহ

সায়নঃ তোমার মতো তো আমি না অন্যের ভালোবাসার মাঝে গিয়ে দেয়াল হবো

নীরঃ ওয়াট ডু ইউ মিন

সায়নঃ এতো মানে খুঁজো কেনো সবকিছুর চুপ করে সোফায় বসো ( ধমকে)

সায়নের ধমকে নীর চুপসে যায় নীর গুটিগুটি পায়ে সায়নের থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায় সায়ন ডান হাতে অনামিকা আঙুল দিয়ে কপাল চুলকে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে নীর একবার সায়নের দিকে তাকিয়ে রাগে বিড়বিড়িয়ে সায়নের গুষ্টি উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে যায় সায়ন আড়চোখে নীরকে বিড়বিড় করতে দেখে স্মিত হাসে।

নীরদের বাড়ি বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজমান সবার মুখ টা অমাবস্যার চাঁদের ন্যায় আঁধার হয়ে আছে নীরের বাবা মাথা নত করে বসে আছে সামনেই শুভ সহ শুভর পরিবার বসে আছে অন্য পাশে নীরের মা শ্রাবণীর মা রিহি এশা অভি আয়াত শ্রাবনীর বাবা দাঁড়িয়ে আছে শুভ উপরে উপরে মন খারাপের ভাব দেখালেও ভেতরে খুশি যেনো আর ধরছে না শুভর থেকে কয়েক হাত দূরত্বে মাহির আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে তবে ওদের মুখে বিস্ময় ভরাট আশপাশে পাড়াপ্রতিবেশির মানুষে ভরপুর । উপস্থিত সবাই হতবাক আচমকা সায়নের এমন এন্ট্রি তে সবাই কয়েক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় বর্তমানে পুরো ড্রয়িংরুম জুড়ে পিনপন নীরবতা মৌনতা ভেঙে শুভর বাবা আগে বলে উঠে

শুভঃ দেখুন মিজান সাহেব এতে আমার আপনার কোনো দোষ নেই এটা আমরা বলতে পারবো না কারণ আমরা আমাদের সিদ্ধান্তই ওদের জানিয়ে ছিলাম কিন্তু ওদের সিদ্ধান্ত একটা বারও নেই নি ওরা এখন আর ছোট নেই এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে ছেলে-মেয়েদের ১৬ বছর অবধিই শাসন করা যায় তারপর থেকে ওদের সাথে উচিত বন্ধুর মতো মেলা যেনো ওরা কোনো কিছু বলতে দ্বিধাদ্বন্দে না ভোগে লাইফ টা ওদের বিয়েও ওদের হবে আর বিয়ে মানে তো শুধু দুইটা মানুষের একবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নয় বিয়ে মানে দুইটা মনের মিলন এটা কোনো খাবার না আমরা ওদের ধমকে বকে খাইয়ে দেবো এটা আল্লাহ তালার দেওয়া মহান এক বন্ধন যার উপর ভিত্তি করে ওদের বাকি জীবন টা কাটবে আর আমরা ওদের মা-বাবা আমাদের উচিত ওদের ডিসিশন নেওয়া কিন্তু তা করে নিজেদের মতামত চাপিয়ে দেওয়া টা বাবা-মার বৈশিষ্ট্য না যায় হোক আপনি ও ভুল করেছেন আমি ও ভুল করেছি কিন্তু সায়ন আমাদের মস্ত বড় ভুল থেকে বাঁচিয়েছে আপনার মেয়েকে আমার ছেলে বিয়ে করলেও কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিতো না কারণ আমার ছেলেও অন্য একজন কে ভালোবাসে

এতোটুকু বলে শুভর বাবা থামে শুভর বাবার কথায় সবাই চমকালেও শুভ চমকায়নি শুভ আগের ন্যায় রোবটের মতোই বসে আছে মাহিরদের বুঝতে বেগ পেতে হলো না শুভ ওর বাবাকে সবটা বলেছে শুভর বাবা আবার বলে উঠে

শুভর বাবাঃ যা হয়েছে বাদ দেন আমরা আজ আসি আর একটা কথা মনে রাখবেন আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন আল্লাহ তার বান্দার খারাপ চাই না কখনো নীর মাকে আমি একটু ও দোষ দেবো না দোষ সম্পূর্ণ আমাদের যায় হোক আজ আসি আল্লাহ হাফেজ

শুভর পরিবার চলে যায় একে একে বাড়ি পুরো নীরব হয়ে যায় কিছুক্ষণ আগের পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশের মধ্যে আসমান-জমিন তফাৎ নীরের বাবা উঠে ধীরে ধীরে নিজের রুমে চলে যায় শ্রাবণীর মা-বাবা ছেলের করা কাজের জন্য লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে নীরের মা’র থেকে বিদায় নিয়ে শ্রাবনীরা ও চলে যায় শ্রাবণী অখুশি ভাববেন না ও তো পারছে না ডিস্কো ডান্স দিতে খুশিতে তবুও এখন মুখটা গোমড়া করে রেখেছে নয়তো বিনাদোষে সবাই ওকে প্রশ্ন করবে।

সেন্টারের বড় জানালা দিয়ে নীর বাইরের বাগান পর্যবেক্ষণ করছে বাইরে মিষ্টি বাতাস এসে নীরের সারা শরীর শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে আকাশে একটা মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে মাঝে মাঝে কালো মেঘের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলার খেলায় মেতেছে নীর বাগানে শেষ দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তাকিয়ে আছে কিন্তু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে হাজারো প্রশ্ন যার সমীকরণ মেলাতে ব্যর্থ নীর।

সায়নঃ তোমাকে বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে এসেছি তাই বলে ভেবো না আই লাভ ইউ তাহলে ভুল ভাবছো তোমাকে আমি ভালোবাসি না কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও

আচমকা পেছনে থেকে সায়নের তিক্ত কথা শুনে নীরের মুখশ্রী বিরক্তিতে ছেয়ে যায় নীর সায়নের দিকে ফিরে জানালার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় সোফায় সায়ন বসে আছে ওর পাশে তিয়াস বিহান অন্য একটা সোফায় রিয়া আর জানভি নীর সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে পুনরায় সায়নের দিকে দৃষ্টি তাক করে সায়ন পুনরায় বলে উঠে।

সায়নঃ আমি জাস্ট শুভর ভালোবাসা বাঁচাতে তোমাকে তুলে এনেছি শুভ আমার কাছে হেল্প চেয়েছিলো তাই হেল্প করলাম আর এর থেকে আর কোনো ভালো ওয়ে ছিলো না হয়তো সবাই ভাবছে ইনফেক্ট তুমিও ভাবছো আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু এটা তোমার সম্পূর্ণ ভুল ধারণা বলে রাখলাম আগে থেকে ফিউচারে কখনো বলতে যেনো না পারো তোমাকে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়ে অন্যজন কে বিয়ে করেছি মেয়ে মানুষ তো তোমরা আর মেয়ে মানুষ মানেই ঝামেলা যেখানে যাবে ঝামেলা ক্রিয়েট করায় তোমাদের মহিলাদের কাজ শুভ নেহাৎ অনেকবার করে বলেছিলো তাই তোমাকে তুলে আনলাম বাট আই ডোন্ট ইন্টারেস্ট ফর ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড

সায়নের কথা শুনে তিয়াস রা পূর্ণ দৃষ্টিতে নীরের দিকে তাকায় নীর বুকে হাত বেঁধে শান্ত দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকিয়ে আছে নীর অদ্ভুত হেসে এক পা এক পা করে এগিয়ে জানভি রিয়ার পাশের সোফায় ধপ করে বসে পড়ে সবাই কিছু টা ভয় পেয়ে যায় নীর মাথার ওড়না খুলে টেবিলের উপর রাখে তারপর একে একে কানের নাকের গলার গয়না খুলে টেবিলে রাখে বর্তমানে শুধু গোলাপি লেহেঙ্গা আর মুখে বিয়ের সাজ নীর ভালো করে লেহেঙ্গার নিচের পার্ট ছড়িয়ে বসে টেবিল থেকে একটা আপেল নিয়ে দুইটা বাইট বসিয়ে খেয়ে বাকি আপেল টা সাইডে রেখে দেয় অতঃপর সায়নের দিকে তাকিয়ে কপালে বিরক্তির ভাজ ফেলে সায়নের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়

নীরঃ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণ দেওয়া শেষ জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তুরী জাতির লাভগুরু মিস্টার সায়ন চৌধুরী

নীরের কথা শুনে সবার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম সায়ন ভ্রু কুঁচকে নীরকে মিন করে বলে

সায়নঃ ওয়াট আমার কথা তোমার ভাষণ মনে হচ্ছে

নীরঃ তার থেকে কম কি যেই ভাষণ শুরু করেছিলেন আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভেবেছিলাম বাংলাদেশের সব লাভার এসে আপনার ওই পায়ে লুটে পড়ে তাদের ভালোবাসা ভিক্ষা চাইবে আর আপনি আমার মতো গিয়ে সবার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ের আসর থেকে তুলে আনবেন ওয়াও আপনার মতো জনদরদী মানুষ প্রতি দে-শে একজন থাকা উচিত বুঝলেন তবে পার্থক্য একটায় ওদের গার্লফ্রেন্ড তুলে আনবেন আর আমাকে সিঙ্গেল তুলে এনেছেন

সায়নঃ তুমি কি বলতে চা

সায়নকে থামিয়ে নীর বলে

নীরঃ মিস্টার চৌধুরী আপনি বড্ড প্যাচাল পারেন যার ফলস্বরূপ আপনাকে পাবনায় তাড়াতাড়ি যেতে হবে আপনি কথা বলার সময় আমি চুপ ছিলাম এখন আপনি চুপ থাকবেন বুঝলেন

সায়ন বোকার মতো মাথা নেড়ে সায় জানায় নীর টেডি স্মাইল দিয়ে বলে

নীরঃ দ্যাটস লাইক এ গুড বয় নাউ ইউর ফাস্ট কুয়েশ্চন আমি যেনো না ভাবি আপনি আমাকে ভালোবাসেন আম রাইন মিস্টার চৌধুরী

সায়নঃ হুমমম

নীরঃ আমাকে দেখে কোন দিক দিয়ে আপনার মতো মাথায় নিউরন ছেড়া মনে হয় বলেন একটু

সায়নঃ মানে কি বলতে চাইছো

নীরঃ আহ মিস্টার চৌধুরী কথার মাঝে কথা ভালো লাগে না আমার টা শেষ করতে দেন

সায়ন চুপ হয়ে যায়নীর মুচকি হেসে বলে

নীরঃ আমি সুস্থ সবল ফ্রেশ মস্তিষ্কের একজন অধিকারী মানুষ তাই আপনার মতো হিটলার আমার প্রেমে পড়েছে বা পড়বে এটা ভাবা আর নিমপাতা কে মধু মনে করা এক আন্ডারস্ট্যান্ড

নীরের কথায় সবাই হেসে দেয় সায়ন রক্তচক্ষু নিয়ে নীরের দিকে তাকায় নীর আবার বলে উঠে

নীরঃ দ্বিতীয়ত শুভ ভাইয়া অন্য একজন কে ভালোবাসে আহ এতোই মহান প্রেমিক উনি যে কিনা নিজের বাবাকে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে ভয় পায় উনার হাঁটু কাপে কেমন ভালোবাসা উনার মনে এলজন নিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করতে আসে আর এখন উদাহরণ দেবেন ওর বাবাকে ও ভয় পায় তাহলে আমি বলি শুনুন কবি বলেছেন “ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না” কেনো উনি আগে উনার বাবাকে ভয় পেতো না রাহাপির সাথে রিলেশনপ যাবার পর ভয় পাওয়া শুরু করেছে হাস্যকর বিষয় ভালোবাসলাম একজনকে বিয়ে করবো আরেকজন কে এমন প্রেমিক যদি আমার কপালে জুটতো না মাইরি বলছি ভাই ওকে আমি প্রেমে পিএইচডি করিয়ে ছাড়তাম এমন ঝাঁটার বাড়ি দিতাম নেক্সট ভালোবাসি বলতে আসতো না। এতোদিন ভালোবাসা কনসেপ্ট টা তে বিশ্বাসী ছিলাম না আর আজ থেকে এই কনসেপ্ট টার উপর ঘৃণা জন্মে গেছে তাই আমি ভাবিনি আপনি আমাকে ভালোবাসেন এসব ফালতু জিনিস নীরের মাইন্ড ব্রেইন কোথাও আসে না আন্ডারস্ট্যান্ড

নীরের কথা শুনে সায়ন বিষম খায় নীর আলতো হেসে বলে

নীরঃ তৃতীয় অর লাস্ট আমি আপনার কাছে আজ সত্যিই কৃতজ্ঞ এইভাবে তুলে আনায় নয়তো যেই ছেলেকে ভাই ভাবি সেটাকে নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকলে বর বর ফিলিংসের বদলে ভাই ভাই ফিলিংস আসতো আর আপনারা তো কিছু হলে পারেন প্রেমিকার ছবি নিয়ে বুক ভাসাতে ফালতু ড্রামা উনি প্যান প্যান করতো আমার ও বিরক্ত লাগতো দিতাম খু*ন করে আর আপনার কৃতজ্ঞতা আমি স্বীকার করছি অকৃতজ্ঞ আমি নয় আপনার কৃতজ্ঞতার উপহার স্বরূপ আপনার বিয়েতে আপনার বউ কে আমি সাজিয়ে দেবো পারলে আপনাকেও দেবো বুঝলেন আর হুমম লাস্ট বার আবারো বলছি আমি ভালোবাসায় বিশ্বাসী না তাই ভাবিনি আপনি আমাকে ভালোবাসেন। বাই দ্যা ওয়ে এই সেন্টার টা কার

তিয়াসঃ আ আমার বাবার

নীরঃ লাভলি তিয়াস ভাইয়া আমি আমার নেক্সট বিয়ে এই সেন্টারে করবো দারুণ সেন্টার টা

নীরের কথা শুনে সবাই বিষম খায় নীর আলতো হেসে জানালার কাছে চলে যায়। ধীরে ধীরে রাত ঘনিয়ে আসে সায়নরা সবাই যে যার ফোন টিপছে আর গল্প করছে নীর জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে সায়ন ফোন দেখার ফাঁকে ফাঁকে নীরকে দেখছে হঠাৎ উঠে নীরকে টেনে নিজের জায়গায় বসিয়ে সামনে খাবার দেয় নীর হতভম্ব হয়ে বলে

নীরঃ এভাবে টেনে আনলেন কেনো

সায়নঃ খেয়ে নাও নয়তো বলবে খাবার দেয়নি

নীরঃ আমি খাদক না আমার খিদেও পায়নি সো খাবো না

নীর উঠে যেতে নিলে সায়ন সোফায় দুপাশে হাত দিয়ে নীরের দিকে ঝুঁকে পড়ে নীর সায়নে এভাবে ঝুঁকতে দেখে সোফার সাথে ঘেঁষে বসে সায়ন বলে উঠে

সায়নঃ কি খাবে

নীরঃ কিছু না

সায়নঃ বিরিয়ানি খাবে

নীরঃ নাহ

সায়নঃ মোগলাই খাবে

নীরঃ নাহ ( কাঁপা কাঁপা গলায়)

সায়নঃ বাড়ি যাবে

নীরঃ হুমমম

সায়নঃ কিস খাবে

নীরঃ হুমম

সায়ন ঠোঁট কামড়ে হেসে নীরের দিকে তাকায় নীর হতভম্ব হয়ে দ্রুত মাথা নেড়ে বলে

নীরঃ কি কিস মিস ক কিসমিস খা খাবো

তিয়াসরা নিঃশব্দে হাসে সায়ন নিজের ফোনের লক খুলে নীরের দিকে এগিয়ে বলে

সায়নঃ নাও গেমস খেলো ছোট বাচ্চা নয়তো ভয় পাবে

নীর ঠোঁট ফুলিয়ে সায়নের কাছ ফোন নিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে সায়নের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে হেসে ফোন নিয়ে গেমসে ডুকে সায়ন নীরের পাশে বসে তিয়াসদের সাথে গল্প শুরু করে ঘন্টা খানেক পেরুতে কাঁধে কারো স্পর্শে সায়ন পাশ ফিরে দেখে নীর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ফোন হাতে নিয়ে বুকের সাথে চেপে রাখা কাটা চুলো গুলো চোখে-মুখে আছড়ে পড়া বাতাসে উড়ছে জানভিরা নিঃশব্দে হেসে যে যার ফোনের দিকে তাকায় সায়ন নীরের কাছ থেকে ফোন নিতেই নীর সায়নের একহাত জড়িয়ে ভালোভাবে ঘুমায় সায়ন নীরের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে ফোন অন করে কিন্তু লক দিতেই সায়নের মাথায় হাত

চলবে,,,,,

( গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি)

#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 18

🍁🍁🍁

ঘুমের মাঝে আচমকা হাতে টান পড়ায় সদ্য ঘুম চোখ থেকে উদাও হয়ে যায় নীর বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে সামনে সায়নের রক্তচক্ষু দেখে মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ এসে হানা দেয় তবু আনন্দ মনের ভেতর পুষে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলে

নীরঃ সমস্যা কি টিকটিকি কামড়িয়েছে এভাবে ছোট বাচ্চাদের মতো টানাটানি করছেন কেনো

নীরের কথায় সায়নের মেজাজ এবার ঠুঙ্গে উঠে যায় সায়ন নীরকে বসা থেকে উঠিয়ে হাত জোরে চেপে বলে

সায়নঃ ভালোর জন্য ফোন দিয়েছিলাম আর তার এই প্রতিদান দিলে

নীরঃ কি করলাম মিস্টার চৌধুরী আমি ( না জানার ভান ধরে)

সায়নঃ ফোনের লক পাল্টালে কেনো

নীরঃ আমি কখন কোন সময় কিভাবে কোন লগ্নে

সায়নঃ ফাজলামো করছো আমার সাথে

নীরঃ কি বলেন আপনি আমার সিনিয়র কাক্কু আর কাক্কুর সাথে মজা করা যায়

সায়নঃ নীর লক খুলো

নীরঃ আমি জানি না

সায়নঃ মাথা গরম করো না লক খুলো ফাজিল

একেতেই চোখে ঘুম তারমধ্যে সায়নের মুখে ফাজিল শুনে নীর রাগে কটমট করে সায়নের থেকে হাত ছাড়িয়ে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পুরো পানি সায়নের মাথায় ঢেলে দেয় নীর অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণে সবাই বোকা বনে যায় সায়ন মুখ হা করে নীরের দিকে তাকায় নীর কটমট দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে

নীরঃ কমনসেন্স নেই এতো টুকু সদ্য ঘুমন্ত মানুষকে এভাবে তুলে কেউ হিটলারের বাপ কোথা কার

সায়নঃ কিহহ

নীরঃ আমি লক বদলেছি বেশ করেছি আপনাকে বলেছিলাম দরদ দেখিয়ে আমাকে গেমস খেলতে ফোন দিতে দিয়েছেন কেনো ফোন আমার হাতে ছিলো তাই ফোনের মালকিন আমি ছিলাম সো কি করবো না করবো একান্ত আমার বিষয় এখন ঘুমাবো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি আর হুমম আর একটা কথা বললে আপনাকে আমি এখন বাথটবে চুবাবো মনে রাখবেন

নীর ধপাস করে শুয়ে পড়ে সায়ন ফোনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নীরের দিকে তাকায় তিয়াস বিহান সায়নের দু কাঁধে হাত দিয়ে বলে

তিয়াসঃ একটা পুচকি মেয়ের কাছে এভাবে বোকা হয়ে যাস ব্যাপার টা আশ্চর্য না

সায়নঃ ও পুচকি আহ হাসাস না আমাদের দশ বার বেছে কিনার বুদ্ধি আছে

জানভিঃ গাইস অন্নেককক রাত হয়েছে গুড নাইইইট

রিয়াঃ আমিও ঘুমাবো

সায়নঃ সারাটাদিন ঘুম ছাড়া পারিস কি তোরা

জানভিঃ তো কি করবো বসে বসে মশা মারবো

সায়নঃ না মশা মারা লাগবে না ঘুমা কুম্ভকর্ণ কোথাকার

রিয়াঃ এ আবার রেগে গেলো কেনো

জানভিঃ সায়নের মন বুঝা নয় রে নয় সোজা ( সুর তুলে)

সায়নঃ ফাজিলের দল ঘুমা ধ্যাত আমাকে আবার চেঞ্জ করতে হবে

তিয়াসঃ উপরের বা পাশের একটা স্টোর রুম আছে ওখানে চলে যা

সায়ন রাগে কিড়মিড় করতে করতে চলে যায় সায়ন যেতেই সবাই শব্দ করে হেঁসে দেয়

পূর্ব গগনে সবেমাত্র সূর্য উঠেছে হালকা রোদে ঝলমল চারিপাশ দূর থেকে ভেসে আসছে ট্রাকের শা শা শব্দ করে বিকট কর্কশ শব্দে হন দিয়ে গেলো। কর্কশ হনের শব্দে নীরের ঘুমের রেশ হালকা হয়ে আসে নীর আড়মোড়া ভেঙে সোফা থেকে উঠে বসে সোফায় ঘুমানোর ফলে ঘাড় ব্যথা উঠে গেছে নীর ঘাড় বাঁকিয়ে পাশের সোফায় চোখ যেতেই সায়নের ঘুমন্ত মুখশ্রী ভেসে উঠে গায়ে আকাশী কালার একটা শার্ট রাতে তো হলুদ শার্ট ছিলো হঠাৎ মনে পড়লো কালেকের মধ্যরাতের কথা নীর আনমনে হেসে আবার সায়নের দিকে তাকায় চুলগুলো হালকা সিক্ত দুই পা টেবিলের উপর তুলে সোফায় মাথা হেলিয়ে ঘুমাচ্ছে। নীর সায়নের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে বিহান তিয়াস রিয়া আর জানভির ঘুমন্ত মুখ তিয়াস বিহানের কোলের উপর পা তুলে আছে রিয়াদ বিহানের কাঁধে মাথা ফেলে ঘুমাচ্ছে আর জানভি রিয়ার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে নীর ধীরে ধীরে উঠে সেন্টারের বেলকনিতে চলে যায় রাতে জায়গা টা যতটা না সুন্দর লাগছিলো সূর্যের আলোয় সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে নীর দু দিকে দু হাত প্রসারিত করে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয় সূর্যের একফালি রোদ্দুর এসে নীরের মুখে পড়ে হঠাৎ কানের কাছে পুরুষালি কন্ঠে কেউ বলে উঠে ” প্রেয়সী ” ডাক টা কর্ণপাত হয়ে নীরের ব্রেইনে পৌঁছাতেই নীর চট করে চোখ খুলে পেছনে তাকায় কই কেউ তো নেই ভেতরে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন নীর ভয়ের চোটে বাতাসে ও কপাল বেয়ে সিক্ত ঘাম বেয়ে পড়ে নীর ধীর পায়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে না দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে পেছনে তাকাতেই ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠতে নিলে এক বলিষ্ঠ হাত নীরের মুখ চেপে ধরে নীর চোখ বড় বড় করে তাকায় সামনের ব্যক্তি দাঁতে দাঁত চেপে বলে

সায়নঃ চেঁচাচ্ছো কেনো কেউ শুনলে কি ভাববে

নীরঃ উহুমমম উহুমমমম

সায়ন নীরের মুখ থেকে হাত সরিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায় নীর একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বিস্ময় নিয়ে বলে

নীরঃ আপনি এখানে কি করছেন

সায়নঃ আমার ও সেইম কুয়েশ্চন তুমি এতো সকালে এখানে কি করছো

নীরঃ আ আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো তাই আসলাম

সায়নঃ ওহ রেডি হয়ে নাও তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আমি বাড়ি যাবো সারারাত ঘুমাতে পারিনি

নীরঃ বাড়ি যাবো ( শুকনো ঢোক গিলে)

সায়নঃ সারা জীবন এখানে থাকার ইচ্ছে

নীরঃ এমন একটা জায়গায় ম*রে ও শান্তি ওপাশ টা দেখুন কি সুন্দর কত্তো ফুল গাছ এরা ফুল চাষ করে

সায়নঃ না ফুলের টব কিনে সেখান থেকে লাগিয়েছিলো আর এখন এতো বড়

নীরঃ ওহ কিন্তু আমি গাছ লাগালে সব মরে যায় একটা ও বড় হয় না ( মন খারাপ করে)

নীরের কথায় সায়ন স্মিত হেসে পকেটে দু হাত গুঁজে বাগানের দিকে মুখ করে দাঁড়ায় পাশেই নীর দাঁড়িয়ে বাগানের ফুলগুলো মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে কোন ফুল নেই ডালিয়া, গোলাপ, রজনীগন্ধা, হলুদ গোলাপ, সাদা গোলাপ আরো নানান বাহারি ফুলের গাছ বেশ কিছুক্ষণ এভাবে কেটে যায় হঠাৎ জানভির কথার দুজনই পেছনে তাকিয়ে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে আছে

জানভিঃ এখানে কি করছিস তোরা এতো সকালে

সায়নঃ কিছু টা আমি এমনি দাঁড়িয়ে ছিলাম আর উনি ফুলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলো

সায়নের কথায় সবার কপালে ভাঁজ পড়ে নীর ভ্রু কুঁচকে বলে

নীরঃ আমি হাবুডুবু কখন খেলাম আমি তো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি আর সুইমিংপুল কতো দূরে

সায়নঃ এই হাবুডুবু আর ওই হাবুডুবু এক না তুমি বুঝবে না বোকা কি না ( শেষ টা বিড়বিড় করে বলে)

নীরঃ শেষে কি বললেন

সায়নঃ কিছু না তিয়াস তোর ফুলের বাগান একজনের ভারী পছন্দ হয়েছে

তিয়াসঃ কার

নীরঃ নাম বলতে কষ্ট হয় আজব’স

সায়ন পকেটে হাত ঢুকিয়ে নীরের দিকে ঝুকে সামান্য ফুঁ ফিচেল কন্ঠে বলে

সায়নঃ ইয়াহ আমি আজব তাই তো সবাই বুঝে না

সায়ন ভেতরে চলে যায় নীর হতভম্ব হয়ে সায়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর সবাই বেরিয়ে পড়ে এখনো এতোটা সকাল হয়নি বিধায় রাস্তাঘাটে মানুষের আনাগোনা গাড়ির আনাগোনা হাতে গোনা কিছু তাই ট্রাফিক জ্যামে পড়ার কোনো আশংকা নেই মাঝ রাস্তায় জানভি রিয়া বিহান তিয়াস নেমে সায়ন নীরকে বাই বলে চলে যায় সায়ন আবার নীরের বাড়ির উদ্দেশ্য গাড়ি স্টার্ট দেয় নীর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সায়ন চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ সায়ন শান্তকন্ঠে বলে উঠে

সায়নঃ বাড়িতে কি বলবে

সায়নের কথায় নীর বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে সায়নের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে

নীরঃ জানি না

সায়নঃ কিছু ভাবো নি

নীরঃ আমি কি জানতাম এমন হবে জানলে ভেবে রাখতাম

সায়নঃ কষ্ট হচ্ছে

নীরঃ কিসের জন্য

সায়নঃ এই যে বিয়ে ভেঙে গেলো তাই

নীরঃ নাহ

সায়নঃ এক কাজ করো বাড়ি না গিয়ে অন্য কোথাও চলে যাও

নীরঃ কোথায় যাবো

সায়নঃ বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালাও

নীরঃ বয়ফ্রেন্ড থাকলে অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে বসতাম না

তারপর নেমে আসে আবার নীরবতা নীরের বাড়ির সামনে এসে সায়ন গাড়ি থামিয়ে নীরকে বের করে হাত ধরে টেনে নীরদের বাড়ির সদর দরজার সামনে ছেড়ে আবার গাড়ির কাছে ফিরে যায় নীর আহাম্মকের মতো সায়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে নীরকে সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবির মিহি দৌড়ে নীরের কাছে যায়

আবিরঃ নীর তুই ঠিক আছিস

নীরঃ হুমমম

মিহিঃ নীর তুমি আর সায়ন কি একে অপরকে ভালোবাসতে

নীরঃ নাহ

আবিরঃ তাহলে কাল এসবের মানে কি আর আজ আবার দিয়ে গেলো কেনো তুই জানি খালু কতটা রেগে আছে

নীরঃ আমি জানতাম না এসব হবে

মিহিঃ এখন কি হবে

পুরুষালি ভরাট কন্ঠস্বর শুনে নীরের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল হাওয়া বয়ে যায় বুক ধক করে উঠে চোখে কার্নিশে পানি এসে পড়ে নীর অশ্রুসিক্ত নয়নে ড্রয়িংরুমের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ওর বাবার দিকে তাকায় নীরের বাবা রাগান্বিত সুরে বলে

নীরের বাবাঃ কেনো ফিরে এসেছো আমাদের মান-সম্মান শেষ করার অবশিষ্ট কিছু আছে নাকি

নীরঃ বাবা আমি

নীরের বাবাঃ সায়নের সাথে গোমার কি সম্পর্ক

নীরের বাবার কথায় নীর চমকে উঠে সায়নের সাথে কিসের সম্পর্ক কেনো সম্পর্ক না তো নীর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে

নীরঃ উনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই বিশ্বাস করো বাবা

নীরের বাবাঃ একটা ছেলে বিয়ের আসর থেকে এভাবে তোমাকে তুলে নিয়ে গেলো আর ছেলপটার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই বোকা মনে হয় আমাকে তোমার ( ধমকে)

নীরের বাবার ধমকে নীর কেঁপে উঠে শব্দ করে কেঁদে দেয় কাঁদতে কাঁদতে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলে

নীরঃ আ আমার কোনো সম্পর্ক নেই আমি নিজেও জানি না উনি কেনো এমন করলো

নীরের বাবাঃ আজ থেকে শ্রাবনী+শ্রাবনীর বাড়ির সবার সাথে তোমার যোগাযোগ বন্ধ আজকের পর থেকে ওদের কারো সাথে কোনোরকম কথা বলতে আর মিশতে যেনো না দেখি তোমাকে আমি শীগ্রই তোমার বড় চাচ্চুর কাছে পাঠিয়ে দেবো বাংলাদেশে থেকে আর আমাদের মান-সম্মাম বৃদ্ধি করতে হবে না

নীরের বাবার কথা শুনে নীরের মাথা বিনা মেঘে বজ্রপাত হয় নীর দৌড়ে নীরের বাবার পা জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে বলে

নীরঃ প্লিজ বাবা এমন টা করো না আমি শ্রাবনীর সাথে কথা না বলে থাকতে পারবো না

নীরের বাবাঃ আমি যা বলেছি তাই আমার লাস্ট ডিসিশন কারোর দ্বিমত শুনতে বাধ্য নয় চলো রুমে চলো

নীরের বাবা নীরকে টেনে সিঁড়ি দিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয় নীর বার বার ওর বাবাকে আকুতি মিনতি করছে কিন্তু নীরের বাবার কান অবধি সেই আকুতিভরা স্বর পৌঁছাতে ব্যর্থ নীরের বাবা নীর রুমে এনে ভেতর থেকে লাগিয়ে দেয় নীর ধপ করে ফ্লোরে বসে চিল্লিয়ে কেঁদে দেয়।

দাঁড়াওও

নিজের বাবার গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে সায়ন সিঁড়ির কাছে দাড়িয়ে যায় সোফায় বাড়ির সবাই বসে আছে সায়ন বিরক্তি নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে

সায়নঃ কিছু বলবে

শ্রাবনীর বাবাঃ নীর কোথায়

সায়নঃ কোথায় আবার থাকবে নিজের বাসায়

অভিঃ মানে তুই ওকে ওর বাসায় পৌঁছে দিয়েছিস

সায়নঃ তো কি করতাম বউ করে বাড়ি নিয়ে আসতাম আশ্চর্য

আয়াতঃ ওকে যদি ভালোই না বাসিস তাহলে ভরা আসর থেকে এভাবে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলি কেনো

সায়নঃ কি আশ্চর্য নিয়ে যাওয়ার সাথে ভালোবাসার কি আছে

এশাঃ তুমি বুঝতে পারছো তুমি কি বলছো

সায়নঃ বউমণি আমি বর্তমানে খুব টায়ার্ড এখন ঘুমাবো প্লিজ তোমাদের সব প্রশ্নের উত্তর আমি পরে দেবো

শ্রাবনীর বাবাঃ একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে তুমি ঘুমাতে চাইছো এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে

সায়নঃ বাবা আমি ওর জীবন নষ্ট করিনি আর শুভ যার সাথে ওর বিয়ে হবার কথা ছিলো সেই ছেলে আমাকে নিজে বলেছে বিয়ে টা ভাঙতে আর শুভ অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে সেখানে আরেকজনকে ভালোবেসে স্ত্রীর মর্যাদা কিভাবে দেবে আর আমি যা করেছি ভেবেচিন্তে করেছি এতটুকু বিশ্বাস আমার উপর রাখতে পারো তোমার ছেলে অমানুষ না কোনো মেয়ের সম্মানহানি হোক সেটা আমি কখনো চাইনি আর এটা তো নীর আমি কখনো চাইবো ও না আমি ওর জীবন নষ্ট করিনি বাঁচিয়েছি

অভিঃ তুই ওকে বিয়ের আসর থেকে তুলে আনলি সমাজের মানুষ কি ভাববে কোনো চোখে দেখবে এটা ভেবেছিস সায়ন নীর একটা মেয়ে আমাদের ছেলেদের গায়ে কলঙ্ক লাগার আগে মেয়েদের চরিত্রে এ সমাজ দাগ দেয় তুই না মেয়ে টাকে বিয়ে করলি আর না বিয়ে হতে দিলি মেয়েটা কোথায় যাবে এটা ভেবেছিস

সায়নঃ সমাজের সাথে মিলিয়ে চলা যায় না ভাইয়া আর নীরের যোগ্য জীবনসঙ্গী সময় মতো এসে যাবে নীর দুর্বল না কারো কথায় ভেঙে পড়ার মেয়ে নীর না এতোটুকু বিশ্বাস আমার আছে তাই আমি আবারও বলছি ওর খারাপের জন্য আমি কিছু করিনি গুড বাই ঘুমাবো এখন

সায়ন চলে যায় সায়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সবাই দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে সবাই জানে সায়ন কতটা জেদী একরোখা নীর ঠিকই বলে সায়ন এক নাম্বারের ঘাড়ত্যাড়া।

চলবে,,,,