Marriage With Benefits 2 Part-06

0
3194

#Marriage_With_Benefits_2
#Part_6
Writer:: Sanjida Nahar Shaanj
.
.
আমি তাকিয়ে চারপাশ দেখছি।সবাই আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে যেনো আমি তাদের অনেক আপন আর অনেক অপরিচিত।কিন্তু আমি এদের কাউকে মনে করতে পারছি না।কে এরা?কেনো এরা এমন করে আমার দিলে তাকিয়ে আছে?কি চায় এদের এই চোখ গুলো আমার কাছ থেকে?
অবশেষে আমি আভিকে নিজের থাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম।

ছাড়ুন আমাকে!কে আস্থা?আমি আস্থা না আমি আবনি। আবনি খান।আমি আস্থা নামে কাউকে চিনি না।(আমি রেগে)

তুমিই আমার আস্থা।
বলেই আভি আমাকে আবার জড়িয়ে ধরতে আসে।

খবরদার।একদম আমাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করবেন না।আমি আপনাকে চিনি না।কিন্তু তবুও আপনি বেহায়ার মতো আমাকে জড়িয়ে ধরছেন?সাহস তো কম না আপনার।(আমি রেগে)

কি হয়েছে তোমার আস্থা?তুমি কেনো এমন করছো?(আভির চোখে যেনো আবার সেই উদাস হওয়া চাহুনি)

আমার সাধ্য নেই সেই চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার।কেনো উনার উদাসীন চোখটা দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে।মনে ভিতরে চিন চিন করে ব্যাথা অনুভব করলাম।কিন্তু কেনো জানি আমি এই অনুভূতি থেকে অপরিচিত।চাইলেও মনে করতে পারছি না উনাকে?কেনো উনি আমাকে উনার এই উদাসীন চোখ দিয়ে দেখছে আমি সহ্য করছে পারছি না উনার এই চাহুনি।

আস্থা।কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছো কেনো?(আরিফ আমার কাছে এসে)

আবার আপনারা আমাকে আস্থা বলছেন!আমি আস্থা না কয়বার বলবো।(আমি চিৎকার করে)

তুমিই আমাদের আস্থা!(মিস সাবিনা)

আমি আস্থা না।আমি আবনী।(আমি চিৎকার করে)

ভাবী।কি হয়েছে তোমার কেনো তুমি ভাইকে চিনেও না চেনার ভান করছো?(আয়ুশ অবাক হয়ে)

আমি কেনো উনাকে চিনেও না চেনার ভান করবো?আমি সত্য উনাকে কিছুই জানি না।আমি আপনাদের চিনতে পারছি না।(আমি কাদতে শুরু করলাম)

অনেক হয়েছে আস্থা।
বলেই আভি আমার বাহু জোরে চেপে ধরলো।আর তাতে আমি খুব ব্যাথা পেলাম।
ছাড়ুন আমাকে।আমার খুব লাগছে।ব্যাথা পাচ্ছি আমি।(আমি ছুটার চেষ্টা করছি)

লাগুক।আমি চাই তোমার লাগুক।তুমি এই ছয় বছর আমাকে যেই কষ্ট দিয়েছো।এইটা তার সামনে কিছুই না।কেনো দিয়েছো আমাকে এতো কষ্ট? বেচেঁ থেকেও নিজেকে মৃতো বলে দাবি করেছ।এতই আমার কাছে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলে?আর এখন আমাকে না চেনার ভান করছো? ও আমি তো ভুলেই গেছি তোমার তো এখন নতুন প্রেমিক জুটেছে আর সে আর কেউ না ডক্টর জয়।(আভি দাত চেপে চেপে)

আপনি ডক্টর জয়কে কি করে চিনেন?(আমি অবাক হয়ে)

ও তাহলে ডক্টর জয়কে ঠিকই মনে আছে।শুধু আমাদের মনে নেই।তোর মত মেয়েকে কেনো ভালোবেসে ছিলাম তাই ভেবে এক নিজেই লজ্জা পাচ্ছি।(আভি ঘৃণিত চোখে)

আমি আভিকে হেচকা দিয়ে সরিয়ে
মুখ সামলে কথা বলবেন! প্রথমত আমি আপনাকে চিনে না আর সেখানে ভালোবাসা তো দূরে থাক।আর দ্বিতীয়ত ডক্টর জয় আমার হবু বর।আমি উনার হবু স্ত্রী।বুঝতে পারছেন না?
এইটা বলতে না বলতেই আমার গালে কষে একটা চড় পড়লো।

আভি আবার আমাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
তুই ওকে বিয়ে করবি তাই না?তাহলে আমার কি হবে?এই বাচ্চাদের কি হবে?(আভি আমাকে আরাভ আর আরাভীর কাছে নিয়ে গেলো)

আমি তাকিয়ে দেখি বাচ্চা দুটো খুব কাদছে।হয়তো ওরাও বুঝতে পারছে না আমার মত যে এখানে কি হচ্ছে?কিন্তু আমি কি করে এদের বুঝাবো?আমি সত্যিই কিছুই বুঝতে পারছিনা আর না কিছু চিনতে পারছি না।

আবু ঠিক বলছে! ও কিছু জানে না।(ছায়াও কাদতে কাদতে এতক্ষন কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু আয়ুশ ওকে চুপ করে দিচ্ছে)

তোমাকে না একবার বলছি চুপ করতে একদম চুপ।সব গুলো মিলে এখন নাটক করছিলে।(আয়ুশ চিৎকার করে)

আমি আর আবু সত্যিই বলছি।বিশ্বাস করুন আমাদের কথা(ছায়া কাদতে কাদতে)

এই মেয়ে বলছি না চুপ করতে না হলে তোকে এক্ষুনি খুন করে দিবো বলে দিলাম।(আয়ুশ রক্ত চক্ষু দিয়ে)

আরিফ মিস সাবিনা বাচ্চাদের অন্য রুমে নিয়ে যাও(আভি আমাকে ধরে রেখে কিন্তু আমি এখনও ছুটার চেষ্টা করছি)

ওরা কথা মত বাচ্চাদের অন্য রুমে নিয়ে গেলো।এখন রুমে শুধু আভি,,আমি,,আয়ুশ আর ছায়া আছি।আভি আমাকে একের পর এক জেরা করছে।কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছি না।কিন্তু উনি আমাকে বিশ্বাস করার বদলে আরো রাগ দেখাচ্ছে,,চিৎকার করে যাচ্ছে আমার উপরে।অন্যদিকে ছায়াকে আয়ুশ কিছু বলতেই দিচ্ছে।

এক পর্যায়ে আমি আর সইতে না পেরে জোরে চিৎকার করে উঠি
আমি কিছু জানি না।(আমি)

তুমিই জানো!(আভি চিৎকার দিয়ে)

আ,,বলেই মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়লাম।

আস্থা।আস্থা কি হয়েছে তোমার?(আভি ভয়ে পেয়ে আমাকে ধরে ফেললো)

আমার মাথা যেনো খুব ব্যাথা করতে শুরু করলো।আর সাথে সাথেই চারপাশ ঘুরতে শুরু করলো।আমি ঢলে পড়লাম আভির কোলে।
আস্থা।এই আস্থা কি হয়েছে তোমার?(আভি অস্থির হয়ে)

ছায়া আয়ুশ এর হাত ছেড়ে
আপনাদের বলেছিলাম।ওকে এত প্রেসার দিয়েন না।ওর পক্ষে এত প্রেসার নেওয়া একদম ঠিক না।ওর ব্রেনে যদি বেশি প্রেসার পরে তাহলে ওর ব্রেনে সমস্যা হতে পারে হয়তো ও কোমায় চলে যাবে।(ছায়া আস্থাকে ধরে কাদতে কাদতে)

ব্রেনে সমস্যা?ওর কবে ব্রেনে সমস্যা হলো?(আভি অবাক হয়ে)

ছয় বছর আগে একটা অ্যাকসিডেন্ট ও ওর সব আগের জীবনের স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফলে। ও অনেক চেষ্টা করেছে ওর স্মৃতি শক্তি ফিরে পাবার কিন্তু যখনই ও কিছু মনে করতে যায়।তখনই ওর মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করতো।আর সাথে সাথেই ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যেত।আর বেশি হলে অজ্ঞান হয়ে যেতো।কিন্তু আজ আপনারা একটুও বেশিই চাপ দিয়েছেন।না করছিলাম কিন্তু আপনার আমার একটা কথাও শুনেন নি। এখন দাড়িয়ে কি আমার মুখ দেখছেন?যা গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকুন।(ছায়া কাদতে)

ভাই তুমি ভাবীর কাছে বসো।আমি অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে আসছি।
বলেই আয়ুশ বাহিরে চলে গেলো।

আভি সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ভালোবাসার মানুষকে এতো বছর পর ফিরে পেয়েও আবার হারাতে বসেছে।এখন কি সত্যিই সত্যি আমাকে আবার আস্থাকে হারাতে হবে!(আভির চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে)

আপনি,,,
বলেই ছায়া আভির দিকে তাকাতেই দেখলো আভি কাদঁছে।
এই লোকটা একটু আগে রাগে আবুর সাথে খারাপ ব্যবহার করছিলো।আর এখন ওর এই অবস্থা দেখে কাদঁছে।ওদের কথা শুনে যা বুঝলাম এই লোকটা আবুর স্বামী আর ওই বাচ্চা দুটো আবুর বাচ্চা।ছয় বছর আগের এদের থেকেই আবুকে আলাদা করা হয়েছে।কিন্তু আমাদের তো বলা হয়ে ছিলো আবনী অনেক খারাপ অবস্থা থেকে উঠে এসেছে।অনেক খারাপ অবস্থা থেকে ওকে মামা মামী ফিরে এনেছে।তাই আমরা কেউ যেনো ওকে ওর জীবনের আসল সত্য না বলি।কিন্তু ওর জীবনে এইসব ছিলো আর আমি যদি তা জানতাম তাহলে কখনই আমি ওকে এদের কাছ থেকে দূরে থাকতে দিতাম না।কিন্তু ভাই কি কোনো ভাবে এইসব জানতো?আর ভাই জেনে শুনে কি এই জঘন্য কাজ করে ছিলো?যদি করে থেকে আমি ভাইকে কখনও ক্ষমা করবো না।আর ভাইকে আমি আবু আর ওর পরিবারের মধ্যে আসতে দিবো না।(ছায়া মনে মনে)

ভাই।চলো। অ্যাম্বুল্যান্স চলে আসছে।
বলেই আয়ুশ আভিকে ধাক্কা দিলো।আয়ুশ এর ধাক্কায় যেনো আভির হুশ ফিরল।

আপনি আবু কে নিয়ে যান।(ছায়া আভিকে বললো)

হ্যা।দাও ওকে আমার কাছে দাও।
বলেই আভি আস্থাকে কোলে তুলে নিয়ে চললো।


হসপিটালের নিরব পরিবেশে একটু আওয়াজ অনেক জোরে শুনা যায়।তাই তো যখন আভির গায়ে চড়টা তখন ওর মনের কষ্টের চেয়ে চড় এর আওয়াজটাই বেশি জোড়ে শুনা গেলো।যদি মনের আওয়াজ শুনা যেতো তাহলে তাহলে হয়তো সবাই জানতে পেতো আভির মনের কি অবস্থা?
ঠাস।এই জন্যই ছয়টা বছর আমি তোমার থেকে আমার মেয়েকে আলাদা করে রেখেছি।কিন্তু কি হলো?সেই তুমি আমার মেয়ের কাছে চলেই আসলে।কি চাও তুমি?(কলি চিৎকার করে)

আপনার মেয়েকে।আর আমি আপনার মেয়ের কাছে আসি নি।ওই আমার কাছে এসে ধরা দিয়েছে।আসলে কি বলেন যাদের মিলন ওই উপরওয়ালা মিলিয়ে রেখেছে তাদের আপনার মত কলি খান কিছুই করতে পারবেন না।আস্থা আর আমার মিলন আপনি কে কেউ আটকাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।(আভি রাগী চোখে)

ছয় বছর।তোমার কাছ থেকে ওকে দূরে সরিয়ে দিলাম।পরের সময় ঠিকই পারবো।(কলি)

আপনাকে চান্স দিলে তো করবেন।আরিফ?(আভি)

জ্বি।আভি স্যার?(আরিফ)

একটা খানও যাতে আমার স্ত্রীর কাছে যেতে না পারে।দেখা করা তো দূরের কথা(আভি)

ইয়েস স্যার। একজনও যাবে না।(আরিফ)

আভি তুমি একটু বেশি বেশিই করছো।(কলি রেগে গিয়ে)

এতো দিন আপনি বেশি বেশি করেছেন।এখন আমার পালা।খালি দেখবেন।আপনার জামাই কতো বেশি বেশি করে।
বলেই আভি চলে গেলো।

আভি আভি।(কলি পিছু ডেকে)

জিসান আভি এইসব কি বললো?(কলি)

যা বলছে ঠিকই।অনেক হয়েছে তোমার মত নিয়ে কাজ করা।এখন আভি আস্থাকে পেয়ে গেছে।এখন তো অন্তত নিজের চোখ খুলে দেখো মেয়ের ভালো করতে গিয়ে ওর কতটা খারাপ করে ফেলেছো।ওকে ওর বাচ্চাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছো।তোমার কারণে মেয়েটাকে নিজের নাম পর্যন্ত বদলে ফেলেছে।কতটা সার্থপর তুমি এক বার ভেবে দেখেছো?তুমিও সন্তান ছাড়া ছিলে এই জন্য তোমার মনে এমন ভয় ঢুকে গেছে যে মেয়েকে আগলে রাখতে গিয়ে ওর কাছ থেকে মা হাওয়ার কথাটাও লুকিয়ে গেলে।আমি তোমাকে কথা দেয়ার কারণে তোমাকে কিছু বলতে পারি নি।কিন্তু এখন আমি আর চুপ থাকবো না।এখন তুমি যদি আভি আর আস্থাকে আলাদা করার চিন্তাও করে থাকো।তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।এখন চলো এখান থেকে বাসায় নিয়ে শান্তি মতো ভাবো তোমার করা কাজ গুলো কতো নিচ ছিলো।আর ওদেরও একটু শান্তিতে থাকতে দাও।(জিসান)


চলবে,,,,