Marriage With Benefits 2 Part-05

0
2871

#Marriage_With_Benefits_2
#Part_5
Writer:: Sanjida Nahar Shaanj
.
.
বললেন না আপনি কে?(আভি এগুতে লাগলো)

আমি এখন কি করবো?ধরা তো পরে গেলাম।এইবার তো আমার রক্ষে নেই।বাবা আমায় এই কোন জায়গাতে ফাঁসিয়ে চলে গেলো।আমি এই লোক থেকে এখন কি করে বাঁচবো?কিছুই তো আমি বুঝতে পারছি না।যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয় এইটা কি এখনই প্রমাণ হতে হলো?(আমি মনে মনে কথা গুলো বলছি আর দোয়া দুরুদ পড়ছি যাতে এই লোক থেকে বাঁচতে পারি)

আপনি চুপ করে থাকলে কিন্তু আমি সিকিউরিটি ডাক দিবো।(আভি রেগে)

হায় আল্লাহ বলে কি?সিকিউরিটি ডাক দিবে মানে?আমাকে কি বাড়ি থেকে পুলিশে দিয়ে দিবে?না না আমি জেলে যাবো না।
আমি কথা গুলো ভাবছিলাম তখনই বাহিরে আবার কারো চিৎকার শুনতে পেলাম।লোকটি(আভি)চিৎকার শুনে পিছনে তাকাতেই আমি উনাকে ধাক্কা মেরে রুমে থেকে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম।

কিন্তু লোকটার থেকে বাঁচতে পারলেও এখন সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে কি করে বাহিরে যাবো তাই আমার জন্য মুশকিল।আমি হিশেহারা চোখে এদিক ওদিক দেখছিলাম তখন একটা রুমে থেকে হোটেলের বাচ্চাগুলো আমাকে ডাকছে।

আন্টি আণ্টি।এদিকে(আরাভী আর আরাভ হাত দিয়ে ইশারা করে)

তোমরা এখানে কি করছো?(আমি অবাক হয়ে ওদের কাছে গেলাম)

এইটা আমাদেরই বাড়ি আন্টি।তুমি আমাদের সাথে রুমে এসো।
বলেই ওরা দুটো আমাকে রুমে টেনে নিয়ে গেলো।

আন্টিকে তুই চিনিস ভাই?(আরাভী)

হুম।এইটাই সেই আন্টি যে আমাকে বকা দিয়েছে।(আরাভ মুখ ফুলিয়ে)

ওরে। বাবারে আসো আমি আজ আদর করে দেই।
বলেই আরাভকে কোলে নিয়ে একটা চুমু দিয়ে দিলাম।

আন্টি আমি কেনো বাদ পড়বো?(আরাভী মুখ ফুলিয়ে)

ওরে আমার মা টারে এসো তোমাকেও আদর করে দেই।
বলেই আমি আরাভিকে চুমু দিয়ে দিলাম।

তোমরা দুইজন ভাই বোন?(আমি অবাক হয়ে)

হুম।আমরা দুজন যমজ।আমি বড়ো আর ও ছোটো।(আরাভী)

কিন্তু বুদ্ধিতে আমি তোর থেকে বড়ো।(আরাভ ভাব নিয়ে)

তাই নাকি?(আরাভী কোমরে হাত দিয়ে)

হুম।তাই।(আরাভ)

হয়েছে হয়েছে।সত্যিই তোমরা কিউট এর ডিব্বা।(আমি)

ভাই।যেহেতু আমাদের আন্টি গুলো এক সেহেতু বাবা কাকে বিয়ে করবে তা নিয়ে আমাদের ঝগড়া করলে চলবে না।(আরাভী আরাভের কানের কাছে ফিসফিস করে)

তা যা বলেছিস।কিন্তু এখন আন্টিকে রাজি করা আমাদের মাম্মাম হওয়ার জন্য।(আরাভ ফিসফিস করে)

কি ফিসফিস ফুসফুস চলছে?শুনি?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

আন্টি তুমি আমাদের মাম্মাম হবে?(আরাভ আর আরাভী কিউট ফেস করে)

হ্যা?(আমি অবাকের সাত আসমান পৌঁছে গেছি)

হ্যা। ইয়েয় কি মজা?(আরাভ আর আরাভী নাচতে নাচতে)

এই না।দাড়াও।নাচা বন্ধ করো।তোমাদের মাম্মাম কি নেই?।(আমি ওদের থামিয়ে)

না।নেই।আর আমরা জানিও না সে কেমন ছিলো।কেউ তার বেপারে আমাদের কিছু বলে নি।(আরাভ মুখ গোমরা করে)

আরাভী চুপ করে আছে।ওদের দেখেই বুঝা যাচ্ছে।মা নেই বলে ওরা কতো কষ্টে আছে।কিন্তু আমার বুকটা কেনো ছিঁড়ে যাচ্ছে ওদের কষ্ট দেখে?যেনো মনে হচ্ছে এই দুটো বাচ্চাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ইচ্ছা মত আদর করে দেই।আমি জানি না তখন আমার কি হয়েছে?আমি ওদের ধরে চোখ মুখ চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলাম।আর আমার চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি বের হতে লাগলো।

আন্টি তুমি কাদঁছো কেনো?আমরা কি তোমাদের হার্ট করে কিছু বলছি।(আরাভী)

না।মা বলোনি।(আমি)

আন্টি তাহলে কি তুমি আমাদের মা হবে?(আরাভ)

আমি তো আর চাইলে হবে না।তোমার বাবাকেও তো রাজি হতে হবে?উনি কি রাজি হবে?(আমি)

আরাভ আর আরাভী একে অপরের দিকে তাকালো।পরেই আবার বলতে শুরু করলো।
যদি বাবা রাজি থাকে তাহলে তোমার আর কোনো সমস্যা নেই।(আরাভ)

আমরা বাবাকে রাজি করিয়ে ফেলবো।কোনো সমস্যা নেই।(আরাভী)

কি ছেলে মেয়েরে!আমাকে ওর বাবার সাথে বিয়ে দিয়েই দম নিবে!(আমি মনে মনে)

হুম।তোমরা বাবাকে রাজি করাও।তবে এখন আমাকে সাহায্য করবে? এখান থেকে বেরুতে।(আমি)

ওকে। আন্টি এসো।
বলেই ওরা আমাকে নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে বের করে দিলো।

থ্যাঙ্ক ইউ। সোনারা।(আমি টাটা দিয়ে)

আন্টি মনে থাকে যেনো।বাবাকে বিয়ে করবে।(আরাভ আর আরাভী)

হায় আল্লাহ।(আমি মাথায় হাত দিয়ে)


কিছুদিন পর
আমাকে কিডন্যাপ করে আনা হয়েছে।কেনো জানি এই সিনটা আমার পরিচিত।আমাকে কি আগেও কিডন্যাপ করা হয়েছিল?জানি না।তবে আজ সকালে আমি একটা জরুরি কাজে বাহিরে বের হতেই একটা গাড়ি এসে আমার চোখে মুখে কালো কাপড় পরিয়ে ধরে নিয়ে আসলো। কোথায় আসলো জানি না।তবে মনে হচ্ছে কোনো অফিসে। হটাৎ অফিসের কীবোর্ডের শব্দ ভেদ করে একটা লোককে বলতে শুনলাম।

এই মহিলার মুখ থেকে কাপড় সরা দেখি তো কার এতো বড়ো সাহস আভি চৌধুরীর বাচ্চাদের কিডন্যাপ করে।(খুব রাগে)

শিট।উনিই কি আরাভ আর আরাভীর বাবা?আমি ওদের কিডন্যাপ করেনি স্যার।আজ সকালে ওরাই আমার কাছে ইচ্ছে করে এসেছে হোটেলে।(আমি বলার বৃথা চেষ্টা করছি।কারণ আমার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে)


আজ সকালে
খুব জোড়ে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙলো আমার আর ছায়ার।
ছায়া গিয়ে দেখনা। কে এসেছে?(আমি ঘুমে ঘুমে)

আমি পারবো না।আমার খুব ঘুম পেয়েছে।তুমি গিয়ে দেখ। আবু প্লিজ।(ছায়াও ঘুম ঘুম চোখে)

দূর।যা গিয়ে খুলে দে না হলে কলিং বেলটা নষ্ট করে দিবে।যেই হারে টিপসে।(আমি)

না যামু না।(ছায়া)

ওমনি আমি একটা লাফি মারি।

দূর।বড়ো হয়েছে বলে সবাই নিজের হুকুম চালায় আমার উপর ভাল্লাগেনা।
বলেই মুচড়া মুচরি করতে করতে ছায়া গেলো দরজা খুলতে।
কেরে এতো সকালে আমার সুন্দর ঘুম ভাঙলো।কোনো হাউস কিপার হলে তার রক্ষে নেই।
বলেই যে দরজা খুললো।ওমনি আরাভ আর আরাভী রুমে ঢুকে আমাকে এসে মাম্মাম বলে জড়িয়ে ধরলো।
কি হলো কি হলো?(আমি হকচকিয়ে)

মাম্মাম।বাহ!এতো তাড়াতাড়ি প্রসেস!আবু তুমি কবে মা হলে গো?(ছায়া ভ্রু কুঁচকে)

ওয়।চুপ(ছায়াকে)।তোমরা কি করছো?আর এখানে কিসে জন্য এসেছো?(আমি অবাক হয়ে)

যেখানে মাম্মাম থাকবে সেখানে তো তার বেবিরাই থাকবে তাই না?(বলে দুটো দুষ্টু আমাকে জড়িয়ে ধরলো)

দেখি দেখি।তোমাদের ইউনিফর্ম দেখে তো বুঝা যাচ্ছে।তোমরা স্কুলে যাওয়ার নাম করে এখানে এসেছো।(আমি ভ্রু কুঁচকে)

না।সত্যিই আমরা স্কুল কামাই করি নি।আমরা তোমার সাথে মিট করতে এসেছি।(আরাভ)

কেনো?(আমি সন্দেহর দৃষ্টিতে)

পাপা।রাজি তোমাদের বিয়েতে।এখন বলো কবে তুমি বিয়ে করবে?(আরাভী)

তোমাদের পাপা বলেছে তোমাদের এখানে আসতে?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

হ্যা।বিশ্বাস না হলে নিচে গিয়ে দেখো।হোটেলের সামনে যেই রাস্তা যায় সেই রাস্তার বিপরীত পাশেই উনি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমাদের বললো তোমাকে বলতে।(আরাভী)

ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।
বলেই ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম।


আসল কাহিনী
স্কুলে যাওয়ার কথা বলে আরাভ আর আরাভি বের হলেও।ওরা স্কুলে না গিয়ে আস্থার সাথে দেখা করতে হোটেলে এসেছে।এতো দিন আভিকে বিভিন্ন ভাবে রাজি করানোর চেষ্টা করেছে আরাভ আর আরাভী।কিন্তু আভি হচ্ছে এক কথার মানুষ উনি কাউকে বিয়ে করবেন না তো করবেন না।তবে আরাভ আর আরাভীও তো আভির সন্তান।ওরাও নাছোড়বান্দা পাপকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।কিন্তু ওদের এই ছোটো মাথা এতো বড়ো কাজ কি করবে সেটা ওরা জানতো না।তাই অবশেষে ওরা জিসানের সাহায্য নিলো।জিসান আগে থেকেই জানতো যেই আন্টিকে ওরা মাম্মাম বানানোর চেষ্টা করছে।সে আসলেই ওদের মা।কারণ সেদিন পার্টিতে আস্থা আর বাচ্চাদের সব কথা জিসান শুনতে পায়।তাই জিসানের সাথে আরাভ আর আরাভি মিলে প্ল্যান করে যে
স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হবে কিন্তু মাঝ পথে আভিকে ফোন দিয়ে জানানো হবে যে আরাভ আর আরাভি কিডন্যাপ হয়ে গেছে।আর কিডন্যাপার টাকা নেওয়ার জন্য হোটেলের রাস্তার বিপরীত পাশে দাড়িয়ে থাকবে।আর আভির প্রাণ হারায় ওদের বাচ্চাদের উপর তাই যে ওদের কিডন্যাপ করেছে তাকে আভি নিজের হাতে শাস্তি দিবে।কিন্তু যখন যদি দেখে ওইটা আস্থা তখন হবে আসলো মজা।


সরি আন্টি।ওই নানুটা এমন প্ল্যান করেছে।বিশ্বাস করো।আমরা ভাবতেও পারি নি এইসব করার।(আরাভ মনে মনে)

কিন্তু ওইসব করলে যদি তুমি আমাদের মাম্মাম হও।তাহলে আমরা করতে রাজি আছি।(আরাভি মনে মনে)

নানুর প্ল্যান সফল হবে তো?(আরাভ আর আরাভি)

এই পুচকো পুচকি।কি ব্যাপার কাহিনীটা কি?(ছায়া সন্দেহের চোখে)

কি কাহিনী আন্টি?(আরাভ জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

এই যে তোমরা আবুকে নিজের মা বলে দাবি করছো?ওর তো কোনো বেবি আছে বলে আমি জানি না।(ছায়া ভ্রু কুঁচকে)

আরে আন্টি তুমিও কি উকিলের মতো জেরা করছো?(আরাভি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

কারণ আমি উকিল মা।(ছায়া)

ছায়া আর বাচ্চাদের এমন প্রশ্ন উত্তর জবাব চলছিলো তখনই আয়ুশ আর ওদের দলবল নিয়ে হোটেলের দরজা ভেঙ্গে ঢুকলো।

কেরে বে।আজ সব গুলো দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে।
বলেই বিরক্ত হয়ে তাকাতেই ছায়া দেখলো হাতে বন্দুক আয়ুশ দাড়িয়ে আছে।

হায় আবার এই লোক।(ছায়া মনে মনে)

তুমিও এই কিডন্যাপের সাথে মিলিত।এই জন্যই ওই দিন হোটেলে আর বাসায় গিয়েছিলে যাতে ওদের কিডন্যাপ করতে পারো।(আয়ুশ রাগী গলায়)

কিডন্যাপ! ইন্নালি্লাহ।কি বলছেন এইসব?আমি একজন উকিল।(ছায়া অবাক হয়ে)

উকিল হয়ে কিডন্যাপিং করো।(আয়ুশ)

দূর।আবার শুরু করে দিয়েছেন।আসল কথা হলো
পরেই ছায়াকে থামিয়ে দিয়ে আয়ুশ বললো
চুপ তোমার অনেক বক বক শুনেছি এখন একদম চুপ।চলো আমার সাথে।
বলেই আয়ুশ ছায়াকে ধরলো।

আয়ুশ কারো কথা শুনলো না। আরাভ আর আরাভীর কথাও না।ওদেরকে মিস সাবিনা আর আরিফের কাছে দিয়ে চলে গেলো। আভির কাছে যেখানে আভি মেইন কিডন্যাপার মানে আস্থাকে রেখেছে।


বর্তমান
মাম্মাম বলেই কান্না করছে আরাভ আর আরাভি কান্না করছে।কারণ আস্থাকে বেধে রাখা হয়েছে।সাথে ছায়াও আয়ুশ ধরে রেখেছে।

কি হলো এর মুখ খুলো?(আভি রাগে)

পরেই আরিফ মুখ থেকে কাপড় সরাতেই অবাক
আস্থা।
বলেই আভি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।সাথে সাথেই আমার চোখ মুখ চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিল।আমাকে ধরে উনি বাচ্চাদের মত কাদতে শুরু করলো।আমি উনার এই রাগ থেকে কান্নার পরিবর্তন দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।কিন্তু উনি এইভাবে কাদছেন কেনো?আর উনি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলেন কিন্তু আমার কোনো খারাপ লাগলো না।অস্বস্থি লাগলো না।কেনো?

ভাবী।(আয়ুশ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর সাথে করে ছায়াকেও ছেড়ে দিলো।)
ছায়া আয়ুশ এর মুখে ভাবী শুনে অবাক হয়ে ওর ছল ছল করা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

আভি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদছেন।আর বলছে আস্থা তুমি ফিরে এসেছো!আমি জানতাম তুমি ফিরে আসবে।


চলবে