Marriage With Benefits 2 Part-08

0
3018

#Marriage_With_Benefits_2
#Part_8
Writer::Sanjida Nahar Shaanj
.
.
সারারাত আস্থার জ্ঞান ফিরে নেই।ডক্টর বলছে ব্রেনে খুব ভালোই চাপ পড়েছে।ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছে আজ বিকালের আগে ওর জ্ঞান ফিরবে না।জ্ঞান ফিরে আসার পর যদি ওর কোনো সমস্যা না থেকে তাহলে ওকে রাতেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবে।তবে ওর স্মৃতি শক্তি ফিরানোর জন্য কোনো প্রকার জোর জবরদস্তি করা যাবে না।
আস্থার কাছে থাকার অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই আভি সারারাত আস্থার সঙ্গে থেকেছে।আস্থার হাত ধরে সারারাত আস্থার দিকে চেয়েছিলো।যেনো ছয় বছরের দূরত্বটা এক রাতেই মিটিয়ে নিতে চায়।
আসুমনি।আমার আসুমনি।তুমি কি কোনো দিন আমাকে মনে করতে পারবে না?আমাদের ছেলে মেয়েকে কি কোনো দিন চিনতে পারবে না তুমি?আমাদের পরিবারের সব সদস্য তোমাকে কতো ভালোবাসে তুমি কি তাও চিনতে পারবে না তাদের?থাক আল্লাহর কাছে যেটুকু পেয়েছি সেটুকুর জন্য আমি শুকরিয়া করি।তোমাকে ফিরে পাওয়াটাই আমার কাছে অনেক।আমার আর কিছুই চাই না আসু।তোমার কিছু মনে করতে হবে না আমি আর বাচ্চারা মিলে তোমাকে এতো ভালো ভালো মেমোরি দিবো যাতে করে তুমি অতীতের কথা মনেই না করো।অতীত গুলো খুব কালো আমাদের আস্থা।আসলে কি বলতো ভালোই হয়েছে তোমার অতীত ভুলে গেছো তুমি।না হলে পালিত পরিবার থেকে পাওয়া সেই কষ্ট গুলো,,তারপর তোমার জীবনে ঘটে যাওয়া এক এক খারাপ ঘটনা তোমার মনে না থাকাই ভালো আসু।শুধু মাত্র তোমাকে চাই আসু।
বলেই আভি আস্থার কপালে চুমু দিলো।
সকাল আটটায় আয়ুশ,, আর সুমাইয়া এসেছে।আদি আর বাকি সবাই আরাভ আর আরাভীর কাছে বাসায় আছে।দাদু আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আভিই উনাকে না করে দিয়েছে।
ভাই,,,?(আয়ুশ কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে)

আয়ুশ তোরা এসে পড়েছিস ভালোই হয়েছে।ডক্টরকে বল উনি এখনও কেনো ওর চেক আপ করার জন্য আসে নি কেনো?(আভি চিন্তিত হয়ে)

আভি।দেখ নিজের কি অবস্থা করেছিস?চুল গুলো অগোছালো,,কাল সকাল থেকে কিছু খাসনি।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে,, শার্ট এর কি অবস্থা?কি হয়েছে আভি?তুই তো এমন ছিলে না!এতো অগোছালো কি করে হয়ে গেলি?(সুমাইয়া আভির কাছে গিয়ে ওর গিয়ে চুল গুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে)

আভি টুলে বসা ছিলো তখনই সুমাইয়ার কোমর জড়িয়ে কান্না করতে লাগলো।
মা।ও মা।আমি কি কখনো সুখ পাবো না?কখনও কি খুশি এসে আমার কাছে ধরা দিবে না?ছোটো বেলা জীবন থেকে তুমি চলে গেলে।যেই আস্থা আমাকে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছিল সে আস্থাও পরে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।সবাই কেনো আমাকেই ছেড়ে চলে যায়।কেনো সবাই আমাকেই কষ্ট দেয়।(আভি কাদতে কাদতে)

এখন আর কেউ তোকে কষ্ট দিবে না।আমিও ফিরে এসেছি আস্থাও ফিরে এসেছে।এখন আস্থার স্মৃতি শক্তি ফিরে আসলে বা না আসলেও ও আমাদের সাথেই থাকবে।এখন কেউ তোর থেকে আর দূরে থাকবে না।(সুমু আভির কপালে চুমু দিয়ে)

ভাই।তুমি গিয়ে বাসায় ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি আর বড়ো মা তো আছিই।(আয়ুশ)

না আমি যাবো না।আমি গেলেই যদি আস্থাকে চলে যায়।ওকে এক বার হারিয়েছি আর আমি ওকে হারাতে পারবো না।ওর জ্ঞান না আসা পর্যন্ত আমি ঠিক ওর পাশে বসে থাকবো আর ওকে আমি আমার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে দিবো না।(আভি ভয়ে ভয়ে)

আভি তুই যদি এমন করিস তাহলে কি হবে বলতো।ঐদিকে বাসায় তোর জন্য ছোটো ছোটো বাচ্চারা বসে আছে। তোর দিক চেয়ে ওরা তাকিয়ে আছে তুই এত ভেঙ্গে পড়লে ওদের সামলাবে কে?আর আস্থা,এখন ওর সব চেয়ে বেশি তোর প্রয়োজন।আর তুই যদি এখন এই অবস্থায় থাকিস তাহলে ওদের কে সামলাবে?আস্থা আর বাচ্চাদের জন্য তোকে ঠিক থাকতে হবে সুস্থ থাকতে হবে।(সুমাইয়া)

এই জন্যই তো বলে মা সব জ্ঞানর ভান্ডার।তুমিই ঠিকই বলেছো।এখন আমাকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না।আমার পরিবারের জন্য আমাকে শক্ত থাকতে হবে।আস্থাকে সুস্থ করে বাচ্চাদের একটা সম্পূর্ন পরিবার দিতেই হবে আমার।
বলেই আভি চোখ মুখ মুছলো।

এই না হলো আমার ভাই।(আয়ুশ আভির কাধে হাত রেখে)

মা আমি আস্থাকে তোমাদের ভরসায় রেখে গেলাম।প্লিজ আমাকে নিরাশ করো না।(আভি)

হুম।(সুমাইয়া আর আয়ুশ)


বাড়িতে
পাপা পাপা তুমি এসেছো?
বলেই আরাভ আর আরাভী দৌড়ে এসে আভিকে জড়িয়ে ধরলো।

আব্বু আম্মু।আমি হসপিটাল থেকে এসেছি।ফ্রেশ হয়ে তোমাদের সাথে কথা বলছি।বাকি সবাইকে বলো ড্রয়িং রুমে বসতে।ওকে বেবি?(আভি ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে)

ওকে পাপা।(আরাভ আর আরাভী)


ফ্রেশ হয়ে এসে
সবাই এখন ড্রয়িং রুমে বসে আছে।আজ আদি আর রোহান কেউই অফিসে যায়নি।আভি গিয়ে সোফায় বসলো।পরেই একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো
বাবা।তোমরা হয়তো জানো আস্থা ফিরে এসেছে।(আভি খুব শান্ত গলায়)

হুম।আয়ুশ,,আরিফ আর মিস সাবিনা বলেছে!(আদি)

ফুপি।আস্থা মানে কি সেই আস্থা রানী।(আরাভী ফিসফিস করে আরশির কানে কানে)

হুম।এখন পাপার কথা শুন।(আরশি)

পাপা আস্থা কে?(আরাভ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

আভি আরাভের প্রশ্ন শুনে সবার দিকে একবার তাকালো।আভির কারণেই কেউ ওদের আস্থার কথা বলে নি।এখন যেহেতু আরাভ জানতে চেয়েছে তাই আভি এখন এর উত্তর কি করে দিবে তাই সবার জানার ইচ্ছা।

আরাভ আরাভী আমার সামনে এসে দাঁড়াও।
আরাভ আর আরাভী সামনে এসে আভির সামনে এসে দাড়ালো

আভি ওদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে শুরু করলো
আম্মু আব্বু।তোমরা সব সময় বলতে না যে আমরা কেনো তোমাদের মায়ের ব্যাপারে তোমাদের কিছু বলতাম না।আজ বলবো।শুনবে?

ওরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।
তোমার মায আর কেউ না ওই আন্টিই যাকে তোমরা মা বানাতে চেয়েছিলে।(আভি)

আবনী আন্টি?(আরাভি অবাক হয়ে)

হুম।ওর আসল নাম আস্থা।(আভি)

কিন্তু আস্থা তো একটা রানীর নাম?(আরাভি অবাক হয়ে)

হুম।এই বাড়ির রানীর নাম ছিল আস্থা।(আভি আরাভীর গালে হাত দিয়ে)

কিন্তু উনি যেহেতু আমাদের মাম্মাম সেহেতু উনি কেনো আমাদের সাথে দেখা করতে আসে নি।উনি কি আমাদের পছন্দ করতো না?(আরাভ মুখ ফুলিয়ে)

আভি এই ভয়টাই পেয়েছিল।বাচ্চারা নাকি আবার আস্থাকে ঘৃণা করতে শুরু করে?এখন আস্থার পক্ষে এইসবের মধ্য দিয়ে যাওয়া ঠিক না।আমি তো কোনো দিন চাইনি বাচ্চারা ওকে ঘৃণা করুক।তবে কি আরাভ ওকে মনে মনে ঘৃণা করছে?আভি আরাভকে কোলে তুলে নিয়ে
আব্বু।তোমার মার এইসব কিছু মনে ছিলো না।(আভি)

মনে ছিলো না মানে?(আরাভ কৌতূহল হয়ে)

পরেই আরাভ আর আরাভিকে সব কিছু সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বললো।

এই জন্য মাম্মাম আমাদের থেকে দূরে ছিলো?(আরাভ)

হুম।আব্বু।(আভি)

এখন কি মাম্মাম আমাদের চিনতে পারবে না?উনি কি আবার চলে যাবে আমাদের ছেড়ে?(আরাভি ভয়ে ভয়ে)

আভি আরাভকে কোল থেকে নামিয়ে দাড়িয়ে সবার উদ্দেশ্য বললো
আস্থা আমাদের ছেড়ে আর যাবে না।আমি ওকে আমাদের ছেড়ে দিবনা।কিন্তু এর জন্য আমার তোমাদের সবার হেল্প লাগবো।(আভি)

আমরা তৈরি এখন বল শুধু তোর কি সাহায্য লাগবে?(দাদু)

আমি আজ রাতেই আস্থাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসবো।কিন্তু কেউ ওকে কিছু মনে করানোর চেষ্টা করবে না।সব কিছু স্বাভাবিক থাকবে।যদি ওর এমনি এমনি মনে পড়ার হয় পড়বে আর যদি না হয় তাহলে পড়বে না।কিন্তু এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।তাই সবাইকে বলছি আমরা এমন কোনো কাজ করবো না যাতে ওর মাথায় প্রেসার পড়বে।ঠিক আছে?(আভি)

ঠিক আছে।(সবাই)


পরেই আভি কোনো মত আরাভ আর আরাভীর সাথে কিছু মুখে দিয়েই গেলো আস্থাকে আনতে।আয়ুশ ফোন করে বলছে ওর এখনও জ্ঞান ফিরে নেই।ডক্টর চেক আপ করে গেছে বলেছেন ওর নাকি কোনো সমস্যা নেই।জ্ঞান ফিরলে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে।আভি,,আদি আর রোহান আসলো হসপিটালে। আরাভ আর আরাভী আসতে চেয়েছিল।কিন্তু ওদের মাম্মামের ওয়েলকামের জন্য নাকি স্পেশাল কিছু করবে তাই আর আসলো না।


হসপিটালে আমার জ্ঞান ফিরে এসেছে।আমার জ্ঞান ফিরতেই আভির হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখতে পেলাম।উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনার চোখগুলো লাল হয়ে আছে।হয়তো সারারাত নির্ঘুম কেটেছে উনার।হয়তো কান্নাও করেছে।কিন্তু কেনো?আমার জন্য?আমি কি সত্যিই উনার স্ত্রী আর ওই বাচ্চাদের মা।কিন্তু আমাকে তো আমার পরিবার এইগুলো বলেনি কেনো?কেনো এইসব লুকিয়ে গেছে?আমার কাছ থেকে আমার পরিবারের কাছ থেকে আমাকে সরিয়ে রেখেছে।আর উনার(আভির দিকে তাকিয়ে) এই চেহারাতে কতো খুশি আমি ফিরে এসেছি বলে।আমার জ্ঞান ফিরেছে বলে উনি হয়তো অনেক খুশি হয়েছে।উনার এই খুশি উনার চোখে একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।আমি উনার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো ভাবছিলাম তখনই ডক্টর আমাকে জিজ্ঞেস করলো
তোমার কি কিছু মনে পড়েছে?(ডক্টর)

না।আমার কিছুই মনে পড়ে নেই।(আমি)
এইটা শুনতেই সবার মুখ যেনো শুকনো হয়ে গেলো।

থাক মনে করতে হবে না।এমনি এমনিই সব মনে পড়ে যাবে।
বলেই একটা মহিলা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে একটা চুমু দিলো।যতটুকু জানি উনি হচ্ছে আমার শাশুড়ি মা সুমাইয়া দেখে মনে হচ্ছে খুব ভালো মহিলা।কিন্তু আমার উনার সম্পর্কেও কিছু মনে নেই।আমি শুধু উনাকে দেখেই যাচ্ছি।

কিছু ক্ষন পর আমাকে হসপিটাল থেকে নিয়ে যাওয়া হবে।আভি এখন আমার পাশে বসে আছে।

আভি,,?আভি না আপনার নাম?(আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আভির দিকে তাকিয়ে)

হুম।কিছু লাগবে তোমার?(আভি শুকনো হাসি দিয়ে)

কেনো জানি উনার এই শুকনো হাসি দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।তাই আমি উনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
আমি আমার মার সাথে দেখা করবো।(আমি)

কিছুতেই না।আমি কিছুতেই ওই মহিলার সাথে তোমার দেখা করতে দিবো না।(আভি রেগে গিয়ে)

কিন্তু আমি দেখা করবো।(আমি উনার দিকে তাকিয়ে)

না।উনি আবার আমার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করবে।
এই কথা বলতেই আমি উনার চোখে নিজেকে হারানোর কষ্ট দেখতে পেলাম। যেনো উনি আমাকে আর হারাতে চায় না।আমার কি হলো জানি না আমি উনার হাত ধরে উনাকে আশ্বস্ত করতে বললাম
আপনি চিন্তা করবেন না।হতে পারে আমার কিছু মনে নেই।আমি আপনাকে ভুলে গেছি বা আমাদের সম্পর্ক ভুলে গেছি।তবুও আমি যা করব ভেবে চিনতেই করবো।বিশ্বাস করতে পারেন।
বলেই একটা মুচকি হাসি দিলাম।

আভি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে দিলো
আস্থা।তোমার এই অপরিচিতা রূপ আমাকে খুব কষ্ট দেয় আমি সহ্য করতে পারি না।তুমি কি কোনোভাবে কি আমাকে মনে করবে না?আমাদের ভালোবাসার সম্পর্কটা মনে করতে পারবে না?(আভি শান্ত চোখে আস্থার দিকে তাকিয়ে ভাবছে)


চলবে,,,,