Marriage_With_Benefits Part-15+16

0
6438

#Marriage_With_Benefits
#Part_15
Writer::Sanjida Nahar Shaanj
.
.
আমার দাপট?তুমি কি বলতে চাও আমি তোমার চাচী মা হই।(ঈশানি রাগে)

ভুল বলেছেন।আপনি আমার চাচী হোন।মা না।কোনো শব্দের পরে মা লাগলে মা হওয়া যায় না।(আভি চিৎকার করে)

কি?হয়েছে কি এইখানে?(মিস:সাবিনা।আভির কেয়ার টেকার।ছোটো থেকেই আভিকে মায়ের মত মানুষ করে আসছে।আভির দাদুর খুব বিশ্বস্ত একজন লোক।আভিও উনাকে খুব ভালোবাসে।)

মিস:সাবিনা।দাদু কি সত্যি মানা করেছে আমার স্ত্রীর খাবার বানানোর জন্য?(আভি)

আমাকে তো এই ব্যাপারে কিছু বলা হয় নি! মি:চৌধূরী আমাকে এই ব্যাপারে এখন কিছু বলে নি।(সাবিনা)

কিন্তু আমাকে বলে দিয়েছে।ওই ভিখারীর বাচ্চার জন্য যেনো কোনো খাবার না বানানো হয় (ঈশানি)

মিস:ঈশানি(আভি রাগে চিৎকার করে)

আভি,,(সাবিনা আভিকে শান্ত হওয়ার জন্য ইশারা করলো)

মিস:ঈশানি।যেহেতু এই বাড়ির সবার খেয়াল রাখার দায়িত্ব আমার।সেহেতু আভি আর ওর স্ত্রীর খেয়াল রাখার দায়িত্বও আমার।আর আমাকে আরমান স্যার কিছু বলেনি।তাই আমি আপনার কথা মানতে পারলাম না।এই জন্য ক্ষমা করবেন।এই(একজন সেভেন্ট কে উদ্দেশ্য করে)আভির স্ত্রীর জন্য খাবার দাও।
(সাবিনা খুব শান্ত ভাবেই বললো। মিস:সাবিনার স্বভাব খুব শান্ত।উনি ঠান্ডা মাথায় কাজ করার লোক।মুখে সব সময় গম্ভীর ভাব নিয়ে থাকে।প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।আভি আর ওর দাদুর মধ্যে প্রায় জিনিসের মীমাংসা তিনি করে দেন নাহলে এত ক্ষন দাদী নাতির বিশ্ব যুদ্ধ শুরু যেতো।বাহির সবার খাওয়া থেকে শুরু করে পরা পর্যন্ত উনার দায়িত্ব।আর উনি উনার দায়িত্ব খুব ভালো করেই পালন করছে।)

ঈশানি মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো।
থ্যাংকস মিস:সাবিনা।সব সময়ের মতো এইবারও আপনি ঠিক সময় এন্ট্রি নিয়েছেন।(আভি মুচকি হেসে)

ব্যাপার না।খাবার নিয়ে যাও।আর হা তোমার খাবারও নিয়ে যাও একসাথে।
বলেই সাবিনা সেখান থেকে চলে গেলো।

আভি আর একজন সার্ভেন্ট খাবার গুলো নিয়ে গেলো রুমে।
এইদিকে আস্থা ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে বসে নিজের চুল ছিরছে। মানে চুলে যেই টায়রা আর খোপায় যেই ফুল লাগিয়েছিল তা টেনে টুনে খুলছে।

দূর বাবা।এই ফুল গুলো কি করে লাগানো হলো।খুলতেই চাইছে না আমার চুল গুলো ছেড়ার কাম।(আমি)

আভি সার্ভেন্টকে দিয়ে খাবার গুলো সব টেবিলে রেখে।তাকে বিদায় দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।

কি হলো?পেত্নীর মতো চুলের এই অবস্থা করেছো কেনো?(আভি ভ্রু কুঁচকে)

কি করবো?না ফুল গুলো খুলছে আর না টায়রা।সব গুলো একসাথে পেচ লেগে বসে আছে।আর আমার চুল গুলো সব ছিড়ে যাচ্ছে।(আমি কাদো কাদো হয়ে)

আভি মুচকি হেসে বলল
দাও আমি সাহায্য করি।

না না।আমি পারবো আপনার কোনো হেল্প করতে হবে না।(আমি উনাকে বাধা দিতে লাগলাম)

সরো তো।হেল্প করতে সমস্যা নেই আমার।(বলেই আভি আমাকে বসিয়ে মাথার হাত দিলো)

উনি খুব আলতো করে আমার খোঁপার ফুল গুলো খুলছে।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার।আমার ঘাড়ে প্রচন্ড সুরসুরি।উনার হাত যখনই আমার ঘাড়ে স্পর্শ করছে তখনই আমার শরীর ঝাড়া দিয়ে উঠছে।

অন্যদিকে
এই মেয়েটির সেন্টিভ পয়েন্ট মনে হয় এই জায়গা।যখনই টাচ করছি। নড়েচড়ে উঠছে। ও হয়ত ভাবছে আমার অজান্তেই হাত স্পর্শ করছে।কিন্তু ও জানে না আমি ইচ্ছে করে করছি।আমার খুব ভালো লাগছে ওকে বিরক্ত করতে।(আভি মনে মনে খুশি হয়ে)

আভি আমার মাথার খোঁপা থেকে সব ফুল গুলো খুলে দিলো।আশ্চর্য ব্যাপার আমার একটা চুলও ছিড়লো না।আমি একটু ব্যাথা পেলাম না।

এখন উনি আমার সামনে এসে আমাকে টায়রা খুলছে।টায়রা খুলার সময় উনার মুখ একদম আমার মুখের সামনে এসে পড়লো।দূরে থেকে কেউ দেখলে বলবে উনি আমাকে কিস করছে।উনার এতো কাছে আসা আমার কেমন যেনো লাগলো।তাই আমি তাড়াতাড়ি নিজের চোখ বন্ধ করে দিলাম।

আভি আস্থার কান্ড দেখে হাসছে
নিহাল ঠিকই বলছে! ও মরে যাবে কিন্তু আমার অ্যাডভান্টেজ কখনও নিবে না।সব সময় এই মেয়ের সাহসী রূপ দেখছি এই প্রথম আমি ওর লজ্জা মাখা মুখ দেখলাম।সত্যিই লজ্জা মেয়ে মানুষের ভূষণ তা আজ ভালোকরে বুঝতে পারলাম।ওর মুখে লজ্জা খুব মানাচ্ছে।
আভি এইসব ভাবছে তখনই আস্থা বলে উঠলো।

কি হলো?খোলা হয়েছে?(আমি চোখ বন্ধ করে)

হুম।হুম।এইতো হয়ে আসলো।একটুও ধৈর্য বলতে নেই!(আভি)

এতক্ষন লাগে বুঝি।(আমি)

হ্যা।এই নাও হয়ে গেছে শান্তি!(আভি)

অনেক শান্তি(আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

আচ্ছা।শুনো তুমি এইগুলো খুলতে খুলতে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি!(আভি)

ঠিক আছে।(আমি)

আভি ওয়াশরুমে ঢুকলো।আমি এইদিকে নিজের গয়না গুলো খুললাম।খুলে বেলকনির দিকে গিয়ে দাড়ালাম।
এই বাড়িটা শহর থেকে একটু ভিতরে।বাহিরে তাকালে দেখা যায় সামনের ব্যাস্ত তম শহরটা। কতো জলমল করছে।দেখে খুব ভালো লাগছে।
আমি বাহিরের অট্টালিকা উপভোগ করছিলাম তখনই আভি পিছন থেকে বললো
আস্থা। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।

আমি উনার দিকে তাকিয়েই চিৎকার করে উঠলাম
আ আ(আমি)

কি হলো?চিৎকার করছো কেনো?(আভি আমার কাছে এসে)

যান যান।আমার থেকে দূরে থাকুক।(আমি উনাকে দূরে সরিয়ে)

কি হলো?(আভি অবাক হয়ে)

আপনার কি লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই।এমন খালি গায়ে ঘুরছেন কেনো আপনি?(আমি হাত দিয়ে বন্ধ করে)

কই আমি তো টাওয়েল পেঁচিয়ে আছি!(আভি ভ্রু কুঁচকে)

টাওয়েল পেঁচিয়ে থাকলেই কি হবে?আপনি খালি গায়ে ঘুরছেন লজ্জা করছে না(আমি)

আমার আবার কিসের লজ্জা?আর আমি ওয়াশরুমে কিছু নিয়ে যাই নি তাই টাওয়েল পেচিয়ে বের হতে হলো।(আভি)

আপনি বললে কি আমি কাপড় দিতে পারতাম না?এইভাবে বেরিয়ে আসতে হলো!লজ্জা নেই আপনার(আমি)

না।এই আমার থেকে তো বেশি তুমিই লজ্জা পাচ্ছো।এতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে মুখখানা তোমার লাল হয়ে গেছে তাই না আমার বউটা।
বলেই আভি আমার দিকে ঝুকে গেলো।

হবেই তো নির্লজ্জের মতো আপনি ঘুরতে পারবেন আর বললেই দোষ।আর আমার মুখ মোটেও লজ্জায় লাল হচ্ছে না।গরমের লাল হচ্ছে।(আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে)

মিসেস আভি চৌধূরী।মিথ্যা কথা বলতে না পারলে না বলা উচিত না। হাই পাওয়ার এসি চলছে আর আপনার নাকি গরম লাগছে?(আভি ভ্রু কুঁচকে)

আমার শরীর আমি বুঝতে পারছি আমার গরম লাগছে কি না?(আমি)

ও তাহলে আপনি আমাকে দেখে হট ফিল করছেন?(আভি ভাব নিয়ে)

আমি তো আপনাকে,,,
বাকিটুকু বলতে যাবো তখনই উনি আমাকে আটকে বললো

যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।অনেক রাত হয়েছে।(আভি)

কিন্তু আমি ফ্রেশ হয়ে কি পড়বো?কিছু তো আনি নি(আমি)

তাও তো কথা।আমারও তো এতো কিছুর খেয়াল ছিলো না।(আভি মাথা চুলকাতে চুলকাতে)

আমি চুপ করে দাড়িয়ে আছি।

Wait।বলেই উনি আলমারি খুললো।সেখান থেকে একটা সাদা সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবি বের করলো।

এইটা কি?এইটা দিয়ে করবেন?(আমি অবাক হয়ে)

এইটা এখন তুমি পড়বে!(আভি)

আমি,,?এইটা পড়বো?(আমি আরো অবাক হয়ে)

হ্যা।এইটাই একমাত্র কাপড় যা আমার ছোটো হয়।বাকি গুলো তোমার অনেক বড় হবে।(আভি)

এইটা আমার লম্বায় ঠিক হলেও এইটা পরলে আমাকে কাকতাড়ুয়া দেখা যাবে।(আমি)

কিছু করার নেই।আজ রাতটা অ্যাডজাস্ট করতেই হবে।আর তুমি যদি না চাও তাহলে শাড়ি পড়েই ঘুমাও।(আভি)

এই শাড়ি পরে ঘুমালে আমি প্যাচ খেয়ে মরবো!এইটাই দেন আমি পরে নিচ্ছি(আমি)

এইতো লক্ষী বউ আমার।আর এই নাও ট্রাউজারটা।
বলেই আভি মুচকি হাসি দিলো।

আমার উনার হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে।আমি পাঞ্জাবি আর ট্রাউজরটা নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লাম।


অন্যদিকে আভি ড্রেস চেঞ্জ করে বেলকনিতে গিয়ে নিহালকে ফোন করলো।

হ্যাল্লো।বন্ধু বিড়াল মারা কি কমপ্লিট?(নিহাল)

না। বিড়ালের কি করে মারবো বলতো?বিড়াল তো পিছন থেকে যে পালিয়ে গেছে কখন জানি না।এখন বিড়ালকে পাই।ইচ্ছা মত কেলাবো!

কি কেলাবি?তুই কবে থেকে আস্থা বুলি বলা শুরু করলি?(নিহাল হাসতে হাসতে)

ওই মেয়ের সাথে থাকার কিছু তো প্রভাব আমার উপরও পড়ছে।(আভি মাথায় হাত দিয়ে)

দেখিস বিয়ে শেষ হতে হতে না।আবার পুরো প্রভাবই পরে(নিহাল)

ওইসব নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না!এখন বল তুই কোথায় গায়েব হয়ে গেছিলি পিছন থেকে?(আভি)

যখন তোদের বরণ পালা চলছিলো।তখনই পিছন থেকে কেটে পড়ি আমি!(নিহাল জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

তোকে তো মীর জাফরের উপাধি দিয়া দরকার।কি সুন্দর করে পালিয়ে গেলি(আভি দাঁত চেপে চেপে)

আরে রাগ করিস কেনো?আমি জানি তো আমার যোদ্ধারা বাকিটা একাই সামলে নিবে।এখন বল পরিস্থিতি কেমন?(নিহাল)

ভালোই।এখন দাদুকে মজা দেখানোর পালা।(আভি)

আচ্ছা।যা করিস ভেবে চিন্তে করিস।(নিহাল)

হুম।যার জন্য তোকে ফোন দাওয়া তা শোন।আস্থার জন্য কাল সকালে কিছু কাপড় নিয়ে আসিস তো।(আভি)

আচ্ছা।তাহলে এখন রাখি কাল দেখা হবে। খোদা হাফেজ।(নিহাল)

খোদা হাফেজ।
বলেই আভি ফোনটা কেটে দিলো।
আভি বাহিরে তাকিয়ে আছে।আজ আমার বিয়ে হয়ে গেলো।আমি এখন কারো স্বামী। স্বামী কথা শুনতেই এক শিহরণ জাগায়।অনেক দায়িত্ব বোধ কাজ করে।খুব ভালো লাগে। স্বামী হাওয়ার অনুভূতিটা খুব সুন্দর।


অন্যদিকে আস্থা ওয়াশ রুমে থেকে বেরিয়ে
আভি,,(আমি)

আভি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়ে গেলো।
কি হলো হাসছো কেনো?(আমি)

আস্থা তোমাকে সত্যি কাকতাড়ুয়া লাগছে!(আভি হাসতে হাসতে)

হইছে আপনার?(আমি গিয়ে বেডে মুখ ফুলিয়ে বসে আছি)

আভি একটা টাওয়েল নিয়ে এসে আমার মাথার চুল গুলো মুছে দিচ্ছে।

কি করছেন?(আমি অবাক হয়ে)

চুলে পানি থাকলে ঠান্ডা লাগবে।(আভি)

আমি চুপ করে আছি।মনে মনে অনেক ভালোলাগছে।কেউ এতো যত্ন করে আমার চুল মুছে দিচ্ছে।এইটা আমার জীবনে প্রথম।নিজের অজান্তেই আবার আমার মুখে হাসি ফুটলো।

তুমি আবার এইটা ভেবো না যে এইটা আমি তোমার জন্য করছি।তুমি অসুস্থ হলে আমার নাটকের বারোটা বাজবে তাই এমন করছি।ক্ষতি টা তো আমারই হবে।(আভি আমার মাথা মুছতে মুছতে কথা গুলো বললো)

উনার এই কথা শুনে আমার মুখের হাসি বিলিয়ে গেলো।এই পৃথিবীতে কেউ স্বার্থ ছাড়া কিছু করে না।মানুষ নিজের স্বার্থটাই আগে খুঁজে। মি:কোবরা ও তো মানুষই। উনিও নিজের স্বার্থ আগে খুঁজবে।ভুলটা আমারই আমিই একটু বেশিই আশা করছিলাম।এই marriage with benefits থেকে আমার এতো কিছু আশা করা উচিত হয় নি।
আমার ভাবনার ছেদ পড়ল আভির কথা শুনে।
এই নাও হয়ে গেছে।যাও এখন ঘুমাও।(আভি)

আমি বেডে শুয়ে পড়লাম।তখনই উনি আমার পাশে শুয়ে পড়লো।এইটা দেখে আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে বললাম।
এইটা কি করছেন?(আমি)

কি করছি মানে?(আভি অবাক হয়ে)

আপনি আমার পাশে ঘুমাচ্ছেন কেনো?(আমি)

তাহলে কোথায় ঘুমাবো?(আভি)

সোফায় ঘুমান!(আমি)

কি আভি চৌধূরী সোফায় ঘুমাবে?(আভি ভাব নিয়ে)

তো কি আমার পাশে ঘুমাবেন?(আমি অবাক হয়ে)

তোমার যদি সমস্যা থেকে তাহলে তুমি গিয়ে সোফায় ঘুমাও!(আভি)

ওকে।নো সমস্যা।আমি এখুনি সোফায় যাচ্ছি।
বলেই বালিশ আর চাদরটা নিয়ে সোফায় এসে বসলাম।

খুব শখ না সোফায় ঘুমানোর!ঘুমাও!গুড নাইট।
বলেই আভি ওপাশ করে শুয়ে পড়লো।

গুড নাইট।
বলেই সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম।


চোখে আলো পড়তেই ঘুম ভাঙলো।রাতের ঘুমটা ভালোই হয়েছে।যদিও সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম।তবুও খুব ভালই ঘুম হলো।

ঘুম ভাঙতেই দেখি মি:কোবরা এদিকে মুখ করে ঘুমিয়ে আছে।

কতো ইনোসেন্ট লাগছিলো উনাকে।কেউই বলতে পারবে না এই লোকটার নাকের ডগার এতো রাগ থাকে।আমার কেনো জানি উনার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকলে অনেক ইচ্ছা করছে।কি হচ্ছে ইদানিং আমার।

হটাৎ উনি মোচরা মুচরি করা শুরু করলো।মনে হয় উঠে যাবে না।এই পূর্বাস পাওয়া সাথে সাথেই আমি ঘুমানোর ভাব নিয়ে চোখ বুজে নিলাম।

আর উনি সত্যিই ঘুম থেকে উঠে পরলো।উঠেই এসে আমার গাল ধরে টেনে দিলো।তারপর ওয়াশরুমে চলে গেলো।এইদিকে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
কি হলো? মি:কোবরা ঘুম থেকে উঠেই আমার গাল টেনে দিলো।এইটা কি বিয়ের পর কাপলরা করে?আমি গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম।

তখনই চোখ গেলো ঘড়ির কাঁটার দিকে।তাকিয়ে দেখি প্রায় বারোটা বাজতে চললো।এতো ক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম আমি। অবশ্য কালকের ধকলে আমি খুব ট্রাইড ছিলাম।কাল রাতেও দেরি করে ঘুমিয়ে ছিলাম।আজ ভার্সিটি কামাই করতেই হবে কোনো উপায় নেই।ডালিয়াকে বলে পড়াগুলো জানা যাবে!কিন্তু পার্ট টাইম জব থেকে ছুটি নিয়া যাবে না।সেখানে নতুন জয়েন্ট করছি।ছুটি নিলে সমস্যা হবে।এইসব ভাবতেই আভি বলে উঠলো।

উঠে গেছো আস্থা!(আভি)

যেই জোরে গাল ধরে টেনে দিলেন।না উঠে কি আর পারা যায়!(আমি)

তোমার গুলোমুল গাল দেখলে শুধু টানতেই মন চায়।(আভি

আমি কি আপনার বিয়ে করা বউ?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

সেকি ভুলে গেলে কালকেই তো আমরা বিয়ে করছি(আভি দুষ্টু হাসি দিয়ে)

আমি জানি বিয়ে করছি!তা আর মনে করাতে হবে না।(আমি বিরক্ত হয়ে)

দেখো আস্থা।আসল কাপলরা কপালে চুমু দিয়ে
ঘুম থেকে উঠে।আমরা নকল তাই তোমাকে গাল টেনে উঠলাম।


চলবে,,,

#Marriage_With_Benefits
#Part_16
Writer::Sanjida Nahar Shaanj
.
.
আমি উনার কথা শুনে হাসবো না কান্না করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।কিন্তু এখন না আমার হাসি পাচ্ছে না কান্না।নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছি এখন আর কি করার? একেই সহ্য করতে হবে।আর কিছুই করার নেই।(আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম)

আস্থা ফ্রেশ হয়ে আসো।তোমাকে আজ কিছু কথা বলবো।(আভি গম্ভীর গলায়)

আমি তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম।ফ্রেশ হতে।আভি কি বলবে! হয়ত কিছু সেরিয়াস!ওকে আমি কখনই এমন গম্ভীর হতে দেখি নি। হা উনি অনেক রাগী মানুষ।
আমি এই সব ভেবেই ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি আভি মুখে হাত দিয়ে সোফায় বসে কিছু ভাবছে?

আভি,,?(আমি)

আস্থা এসো।এইখানে বসো।
বলেই আমাকে বেডে বসালো।তারপর উনি আমার সামনে সোফায় বসে আমার উদ্দেশ্য বলা শুরু করলো
আস্থা।তোমাকে এখন অনেক কিছু করতে হবে।(আভি)

অনেক কিছু মানে?(আমি অবাক হয়ে)

দেখো এই বাড়ি যতই বড়ো এই বাড়ির মানুষের মন ততই ছোটো।আমার মা আর বাবার লাভ ম্যারেজ হয়েছিল।কিন্তু আমার দাদু আমার মাকে মেনে নেন নি।যেমন উনি কাল তোমাকে মেনে নেন নি।উনি আমার বাবার বিয়ে উনার বন্ধুর মেয়ে ঈশানির সাথে দিতে চেয়েছিলেন।ঈশানি ওই মহিলা যে তোমাকে কাল বরণ করে ছিলো।যখন আমার বাবা বিয়ে করে নি তখন দাদু উনার সাথে আমার ছোটো চাচুর বিয়ে দেন।কিন্তু তখনও দাদু আমার মাকে পছন্দ করতো না।কারণ আমার মা অনাথ ছিলো।তার কোনো বংশ পরিচয় ছিলো না।তখন আমার বাবা মাকে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলো।সেখানে মা বাবা একসাথে কাজ করে নিজেদের সংসার চালাতে শুরু করলো।কিন্তু যখন আমার আট কি নয় বছর ছিলো তখন দাদু হঠাৎ আমাদের সুখের সংসারে আসলো।উনি আমাদের মেনে নিলো।আমরা উনাদের সাথে এই বাড়িতেই থাকতে শুরু করলাম।সব কিছু ভালোই চলছিলো কিন্তু হটাৎ মা আর বাবার মধ্যে ঝগড়া হতে শুরু করলো।মা বাবা প্রতিদিন ঝগড়া করতো।ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ফাটল ধরা শুরু করলো।আমি তখন বুঝার ক্ষমতা রাখি।আমি বুঝতে পারি আমার মা বাবার সম্পর্কে কিছু ঠিক নেই।একদিন বাবা মায়ের ঝগড়া এতো বেড়ে যায় যে বাবা মাকে ডিভোর্সি দেওয়ার কথা বলে।আর এই কথাটা আমার মনে অনেক আঘাত করে।যেইটা উনি কখনও আশা করেননি।আমার মার একটাই পরিবার ছিলো সেটা হলো আমি আর বাবা।বাবাকে খুব ভালোবাসত মা।সেদিন আমি মাকে অনেক কান্না করতে দেখি।মা চিৎকার করে ভিক্ষা চাইছিলো যাতে তাকে ডিভোর্স না দেয়া হয়।কিন্তু সেদিন আমার বাবার মন পাথর হয়ে গেছিলো।উনি আমার মাকে ডিভোর্স দিয়েই শান্তি হলো।আমাকে আমার দাদু আর বাবা নিজের কাছে রেখে দিলো।আমাকে শেষ দেখাও দেখতে দিলো না আমার মাকে।আমি সেদিন খুব কান্না করছিলাম আর সেইটাই ছিলো আমার জীবনের শেষ কান্না।তার কিছু দিন পর আমার বাবা জানতে পারলো উনি যেই কারণে আমার মাকে ডিভোর্স দিয়েছে সেটা আমার মা করেই নি।সব ছিলো আমার দাদুর কাজ।উনি আমার বাবার সামনে আমার মাকে চরিত্রহীন বানিয়েছেন।আমার বাবাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছেন আমার মা তাকে টাকার জন্য বিয়ে করছে।কিন্তু ততক্ষণ অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার মা কোথায় ছিলো আমরা কেউই জানতাম না।আমার বাবা মাকে খুঁজে বের করার সব চেষ্টা করে কিন্তু পারে নি।মার পরিচিত সবার সাথে কথা বলে কিন্তু তারাও মার সম্পর্কে কিছুই জানতো না।আমার বাবা পাগলের মত হয়ে উঠল আমি তখন বুঝতে পারলাম আমার বাবা আমার মাকে কতো ভালোবাসত।কিন্তু এখন দেরি হয়ে গেছে।বাবা মাকে হারিয়ে নেশাকে আপন করে নেয়।একদিন বাবা মাতাল হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো তখনই বাবার অ্যাকসিডেন্ট হয়।এখন বাবা কোমায়। ডক্টর বলছে উনার নাকি সুস্থ হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।উনার ব্রেইন থেকে সুস্থ হওয়ার কোনো রেসপন্স করছে না।উনি এখন হসপিটালে আছে।
আভি আমাকে সব গুলো কথা বলে এখন চুপ করে আছে।আমি এতো দিন যেই মি:কোবরা কে চিনতাম উনি একদম তেমন না।এখন আমি বুঝতে পারলাম কেনো উনার নাকের ডগার এতো রাগ থাকে।আমি ভাবতাম আমিই শুধু দুঃখী এখন দেখি উনি আমার থেকেও দুঃখী।আমি অন্তত যাদের কাছ থেকে কষ্ট পাইছি তারা আমার আপন না কিন্তু উনি তো আপন মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছে।তবুও উনি এখনও ঠিক আছে এইটাই তো অনেক।আমি জানি না আমার বাবা মা কে?আমি উনাদের পাই নি।কিন্তু উনি উনাদের পেয়ে হারিয়েছেন।কোনো জিনিসের না পাওয়ার কষ্ট থেকে পেয়ে হারানোর কষ্ট বেশি।আমার কেনো যেনো উনার কষ্ট দেখে বুকটা কেঁপে উঠছে।মনে হচ্ছে উনাকে জরিয়ে ধরতে।আচ্ছা উনি কি মাইন্ড করবে যদি আমি উনাকে জড়িয়ে ধরি।না থাক আস্থা নিজের অনুভূতি গুলো কাবু করে রাখ।

কিছুক্ষণ শান্ত থাকার পর উনি আবার বলতে শুরু করলো
আমি তোমাকে এই জন্য বিয়ে করেছি কারণ আমার মনে হয় তুমি আমার এই বাড়ির সবাইকে শিক্ষা দিতে পারবে।যারা আমার মাকে কষ্ট দিয়েছে তাদের সব কয়টার শেষ দেখে ছাড়বে তুমি!দাদুকে বুঝিয়ে দিবে আমার মা কি ছিলো এইবাড়িতে।দাদুকে বুঝিয়ে দিবে উনি কতো ভুল ছিলেন আমার মাকে তাড়িয়ে দিয়ে।উনাকে যেনো আফসোস করতে হয়।তুমি উনাকে আফসোস করতে বাধ্য করবে।আর এইটাই আমার বেনিফিটস্।তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমার বেনিফিটস্ কি বিয়েতে?আমার বেনিফিটস্ এইটাই বিয়েতে।কি আস্থা তোমার উপর কি আস্থা রাখতে পারি?(আভি)

আমি জানি না।আমি কি করে এইসব করবো?কিন্তু আমি করবো এইটা শিউর।আমি দাদুকে বুঝিয়ে দিবো উনি আপনার মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে ভুল করছে।আর এই বাড়ির সবাইকে শিক্ষা দিবো।(আমি উনার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

আমি জানি আস্থা তুমি পারবে।এই বাড়িতে কেউ তোমাকে কিছু বলতে পারবে না।কারণ আমি এই বাড়ি,এই চৌধূরী গ্রুপের উত্তরাধিকার। দাদুও তোমার কোনো ডিসিশনে কিছু বলতে পারবে না যদি না আমি কিছু বলি।তাই তুমি যা খুশি করতে পারো।ফুল পাওয়ার আছে তোমার।(আভি)

আপনাকে ঠিক করার পাওয়ার আছে?(আমি টিটকারি করে)

স্বামীর ঘাট তো স্ত্রীর কাছেই থাকে!
বলেই আভি হেসে দিলো।

আপনার এই হাসির জন্যই আমি সব করবো।আস্থা এখন কি কি করবে খালি চৌধুরীরা দেখবে!(আমি মনে মনে)

তখনই কেউ দরজায় নক করলো।
কিরে দুপুর একটা বাজতে চললো।তোরা কি এখনও বাসর করবি?ভাই থাম থাম।(নিহাল দরজার বাহিরে থেকে)

দেখো মীর জাফর এসে পড়ছে।(আভি)

আমি মুচকি হেসে দরজা খুলতে যাবো তখনই আভি আমার হাত ধরে একটানে নিজের বুকে মিশিয়ে নিলো।আমি এই ঘটনায় প্রচন্ড অবাক
গেলাম।

আরে।সোফা থেকে চাদর আর বালিশ টা বেডে রাখো আগে।তারপর দরজা খুলো।নাইলে সন্দেহ করবে ওরা।(আভি)

ওহ।হা।আমি করছি।
বলেই উনার বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোফা থেকে বালিশ আর চাদর বেডে রাখলাম ঠিক করে যাতে কেউ আর সন্দেহ না করতে পারে।

দরজা খুলেই দেখি নিহালই।
কেমন আছেন নিহাল ভাইয়া?(আমি মুচকি হেসে)

আলহাদুলিল্লাহ ভাবি আপনি কেমন আছেন?এইতো ভালো।ভিতরে আসুন!(আমি)

আচ্ছা চলুন।
বলেই নিহাল ভিতরে আসলো।আমি গিয়ে বেডে বসলাম আর নিহাল গিয়ে সোফায় বসলো।তখনই আভি এসে নিহালের মাথায় একটা থাপ্পড় মারলেন।
তোর আসার সময় হলো?একে তো তুই মীর জাফর গিরি করলি। দ্বিতীয়ত তুই এত লেট।(আভি ভ্রু কুঁচকে)

আরে তোদের প্রাইভেট টাইমে বেঘাৎ ঘটাতে চাই নি।তাই লেট।(নিহাল জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

কি করে বলবো আমি কেনো লেট?(নিহাল মনে মনে)

আচ্ছা। যাই হোক।এখন কি কি জামা এনেছিস তা দেখা আমার বউয়ের জামা খারাপ হলে তোর খবর আছে।(আভি ভাব নিয়ে)

ইস।দুই দিন হলো বিয়ে হয়েছে এখনই বউ ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না।(নিহাল টিটকারি মেরে)

আমি উনাদের কথোকথনটি শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি।আমার মনে হচ্ছে আমি আভির সত্যিকারের বউ আর নিহাল ভাইয়ার ভাবী।আর এদের কথা যেই শুনবে সেই কোমায় চলে যাবে।(আমি মনে মনে)

সেকি তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো?তুমি যাও।গিয়ে ড্রেস গুলো দেখো পড়ে।তোমার দেবর এনেছে।(আভি)

যাচ্ছি যাচ্ছি।
বলেই আমি ওয়াশ রুমে চেঞ্জ করতে গেলাম।

কাপড় পরেই অবাক একদম আমি যেই কাপড় পড়া পছন্দ করি সেই কাপড়।আর সব গুলো কাপড় আমার সাইজের।কিন্তু নিহাল ভাইয়া এতো নিখুঁত ভাবে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে।না…আমার তো মনে হয় না।হতে পারে উনি এমনি এনেছে আর ভাগ্যক্রমে তা আমার একদম ঠিক হয়ে গেছে।(আমি মনে মনে এইসব ভেবে বের হলাম)

আভি সব কাপড় আমার একদম ঠিক লাগে।আর আমার পছন্দও হয়েছে।ধন্যবাদ নিহাল ভাইয়া আপনাকে।(আমি খুব খুশি হয়ে)

নিহাল সত্যিই করে বলতো।তুই কি আস্থার জন্য কাপড় কিনেছিস?(আভি ভ্রু কুঁচকে)

আরে হা বাবা।(নিহাল)

ওকে।(আভি সন্দেহর দৃষ্টিতে)

নিহাল আভির দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিচ্ছে।

তখনই কেউ একজন আমাদের খাওয়ার জন্য ডাকলো।

পরেই আমি আর আভি খেতে গেলাম।

অফো।হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।এখনই আভি আর আস্থা জেনে ফেলত এই গুলো কিনতে ডালিয়া আমাকে সাহায্য করছে।(নিহাল বিড়বিড় করে)


আজ সকালে
দূর।এই আস্থার মি:কোবরা কি কিনতে বলেছে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।আমি কি আর আস্থা পছন্দ জানি?আমি কি কোনো দিন মেয়েদের কাপড় কিনছি?এখন আমার কি হবে?আমি কি করবো? কোথায় কার কাছ থেকে সাহায্য চাইবো?(নিহাল শপিং মলে বসে বসে মাথা চুলকাচ্ছে)

ভাগ্যক্রমে সেইখানে ডালিয়া গিয়েছিলো।কিছু বই কিনার জন্য।


চলবে….