My First Crush part-13+14

0
222

#My_First_Crush
#পর্ব-১৩
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

ফ্লোরিডার মায়ামিতে রাতের শহরটা দেখতে অন্যরকমই সুন্দর। রাস্তাঘাটে আনাচে কানাচে জ্বলজ্বল করছে লাইটের আলো। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল দালানগুলোও প্রজ্বলিত হয়ে আছে রং বেরঙের আলোতে। রাতের নিকষ আলো অন্ধকারকে খান খান করে ভেঙে দিয়ে এ যেন আলোরই মেলা। যা অন্ধকারকে আরো সুন্দর করে রাঙিয়ে দিয়েছে। এমনই এক হাইওয়ে ধরে গাড়িতে করে যাচ্ছি আমরা। রাইয়ান ড্রাইভ করছে আর আমি তার পাশের সিটে বসে আছি। আমরা যাচ্ছি মি. অ্যান্ড মিসেস ডেভিডের ওয়েডিং এনিভারসিরি অনুষ্ঠানে। শহরের মধ্যেই একটা হোটেল বুক করে আয়োজন করা হয়েছে সেখানে। রাইয়ান তো আসতেই চাইছিল না। বলা বাহুল্য তাকে রাজী করাতে আমাকে অনেক কাঠখোর পোড়াতে হয়েছে। নেইবারদের ইনভিটেশন বলে কথা! না গিয়ে কিভাবে পারি! আর তার চাইতেও বড় কথা, আমি শুনেছি সেখানে কাপলদের জন্য অনেক স্পেশাল একটিভিটির আয়োজন করা হয়েছে। দারুণ মজা হবে! তাই তো, যেভাবেই হোক রাইয়ানকে রাজী করেই ছেড়েছি। আজ আমি পরেছি একদম হালকা বেগুনি রঙের লং গাউন। চুলগুলো পেছনে ফ্রান্স বেণী করে রাখা। সেখানে গোজা সাদা ছোট ছোট পাথরের ক্লিপ। গলার সাথে লাগানো খুবই সিম্পল পাথরের একটি নেকলেস৷ আর রাইয়ানের পরনে কালো ব্লেজার স্যুট। তাকে দেখতে খুবই হ্যান্ডসাম লাগছে। একদম জেন্টেলম্যান। তিনি যা পরেন তাকে ঠিক সব রঙেই মানিয়ে যায়। আমি গাড়ির জানালাটা নামিয়ে দিলাম। বাতাসে ছোট ছোট চুলগুলো আমার মুখের সামনে এসে উড়তে লাগলো। আমি হাত দিয়ে তা একটু সরিয়ে দিলাম। রাস্তার লম্বা দূরত্বও আমি বেশ উপভোগ করতে পারলাম। বুঝতে পারলাম, কেন সিনেমায় প্রিয় মানুষের সাথে রাতের শহরে লং ড্রাইভের ব্যাপারটা হাইলাইট করা হয়। যদিও আমাদেরটা লং ড্রাইভ হলো না। খানিক বাদেই আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে হোটেলের ভেতরে ঢুকলাম আমরা। মি. অ্যান্ড মিসেস ডেভিড আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে হাসিমুখে এগিয়ে আসলেন। রাইয়ান তাকে একটা বড় ফুলের তোলা দিয়ে উইশ করলো। আমরা ভেতরে গেলাম। খুব সুন্দর করে ভেন্যু সাজানো হয়েছে। হালকা সফট একটা মিউজিক প্লে করা রাখা। আমি আর রাইয়ান একটা টেবিলে গিয়ে বসলাম। আশেপাশে তাকিয়ে অনুষ্ঠানের সাজ সজ্জা দেখতে লাগলাম আমি। আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের লোকই বেশি। অনেক চেনা পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে গেলো। আমি হাসিমুখে তাদের হাই বলতে লাগলাম। রাইয়ান ওয়েটারের থেকে দুটো সফট ড্রিংকস নিলো। আমি রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাইয়ান ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঠোঁট চেপে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম তার দিকে।
তেমন সময় স্টেজে কাপলদের ডান্সের জন্য ডাকা হলো। মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো আমার। আমি রাইয়ানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার হাত টেনে স্টেজে নিয়ে আসলাম তাকে। রাইয়ান আশেপাশে তাকিয়ে স্মিত হেসে আমার কোমরে এক হাত আরেক হাত আমার হাতে রাখলো। আমিও আমার এক হাত রাইয়ানের কাঁধে তুলে দিলাম। সবার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও স্লো মোশনে ডান্স করতে লাগলাম। ঘুরতে ঘুরতে আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের অনেক নেইবার আমাদের কাছে চলে এলে তারা প্রত্যেকই আমাকে নাম ধরে ডাকতে লাগলো। আমিও তাদের দিকে তাকিয়ে হাসি বিনিময় করতে লাগলাম। মিস. গোমজ আমাকে দেখে বললেন,
‘হেই হৃদি, তোমাকে খুবই মিষ্টি দেখতে লাগছে।’
আমি মৃদু হাসলাম। রাইয়ান ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুমি তো দেখি আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে পপুলার হয়ে গেছো। সবাই তোমাকে চেনে।’
ডান্সরত অবস্থায় রাইয়ান আমাকে হাত দিয়ে একবার ঘুরিয়ে আনলে আমি মুচকি হেসে বললাম,
‘অবশ্যই।’
রাইয়ান ঠোঁটের কোণে সুক্ষ্ম হাসি ঝুলিয়ে বলল,
‘কিভাবে করলে?’
আমি বললাম, ‘ম্যাজিক।’
রাইয়ান হেসে ফেললো। আমি বললাম,
‘যা বুঝলাম প্রথমবার হলেও আমি বেশ ভালোই ডান্স করতে পারি।’
রাইয়ান ঠোঁট চেপে হেসে বলল, ‘ওটা তো আমি আগেই জেনেছি।’
আমি মৃদু মুখ ফুলিয়ে বললাম,
‘তুমি আবারো ঐ কথা উঠাচ্ছো!’
রাইয়ান তাড়াতাড়ি সিরিয়াস হয়ে বলল,
‘মুখ ঠিক করে রাখো। ছবি তুলছে।’
আমি ঝটপট স্বাভাবিক হয়ে মুখ হাসিখুশি করে রাখলাম। পরক্ষণেই রাইয়ানের মুখের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পারলাম রাইয়ান মিথ্যা বলেছে। আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম রাইয়ানের দিকে। হঠাৎ আমার পায়ে ব্যাথার মতো লাগলো। মুখে মৃদু শব্দ করে উঠলাম আমি। রাইয়ান আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে?’
তারপর আমাকে নিয়ে স্টেজ থেকে নেমে একটা টেবিলে বসালো। আমি মানা করলাম। রাইয়ান শুনলো না। আমার পা থেকে হাইহিল খুলে দেখলো পা লাল হয়ে ফুলে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এসব পরে যখন তুমি কম্ফোর্ট ফিল করো না তাহলে পরো কেন?’
আমি হড়বড় করে বললাম ‘সমস্যা নেই। আজকে তো অমন উঁচু পরিনি। এতটুকুতে আমি ম্যানেজ করতে পারি।’
রাইয়ান বাইরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো হাতে এক জোড়া স্নেকার্স নিয়ে। আমার পায়ে পরিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘ভাগ্য ভালো গাড়িতে আমার এক জোড়া স্নেকার্স ছিল। একটু বড় হবে। কিন্তু এখনের মতো এটাতেই চালিয়ে নাও।’

রাইয়ান আমার জুতোর ফিতা লাগিয়ে দিতে লাগলো। আমি হাসিমুখে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। জুতা পরা শেষ হলে আমি উঠে দাঁড়িয়ে দেখালাম তাকে। আমার পায়ে তার সাইজ অনেক বড় দেখাতে লাগলো। তবুও চলবে। এমন সময় স্টেজে কাপলদের জন্য একটা গেমের কথা বলা হলো। গেমের তিনটা ধাপ থাকবে। শেষ পর্যন্ত যে বেশি স্কোর নিয়ে টিকে থাকবে তাদেরকে বেস্ট কাপলের পুরষ্কার দেওয়া হবে। আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে পড়লাম। রাইয়ান আমার অবস্থা দেখে বলল, ‘কি? আমরা কিন্তু খেলছি না। এসব আমি কখনো খেলিনি।’
আমি মুখ করুণ করে বললাম, ‘আমিও তো খেলিনি। একারণেই তো খেলা উচিত। মজা হবে অনেক। প্লিজ রাইয়ান!’
‘কিন্তু তোমার না পায়ে ব্যাথা।’
‘ইশ! এতটুকুতে আবার কি হয়! আমার তো এখন কিছু লাগছেও না। প্লিজ চলো না রাইয়ান!’

শেষমেশ রাইয়ান আমার জোরাজুরিতে পরে রাজী হলো। আমরা সবাই গিয়ে এক সারিতে দাঁড়ালাম। প্রথম ধাপে গেম হলো হাজবেন্ডরা একটা ঝুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। আর ওয়াইফরা অনেক দূর থেকে সেই ঝুড়িতে বল ছুরে মারবে। হাজবেন্ডরা সেই বল ঝুড়ি নিয়ে ক্যাচ করার চেষ্টা করবে। যার ঝুড়িতে যত বেশি বল হবে তার স্কোর তত বেশি। একসময় গেম শুরু হলো। আমি বল ছুড়ে মারতে লাগলাম। রাইয়ান ঝুড়ি নিয়ে ক্যাচ করার চেষ্টা করতে লাগলো। কয়েকটা বল নিচে পড়লেও বেশ অনেকগুলো বলই ঝুড়িতে জায়গা পেলো আমাদের। স্কোরও পেলাম ভালো। অনেকেই প্রথম রাউন্ডে বাদ পরে গেলো। আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে গেলাম। আমি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে এক্সাইটেড হয়ে পড়লাম। রাইয়ান প্রথমে মানা করলেও এখন মনে হচ্ছে সেও গেম টা বেশ ইনজয় করছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওয়াইফদের চোখ একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়া হলো। আর সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করানো হলো হাজবেন্ডদের। এক্ষেত্রে পারফিউমের ঘ্রাণ শুঁকে ওয়াইফকে তার হাজবেন্ড শনাক্ত করতে হবে। এই রাউন্ডেও অনেকে ভুল শনাক্ত করে ব্যর্থ হলো। আমি ঠিকই আমার রাইয়ানের ঘ্রাণ শুঁকে এক সেকেন্ডেই তাকে চিনে ফেললাম। তাকে চিনতে পারবো না আমি!এও কখনো সম্ভব! আমরা সহ আরো দুটি কাপল ফাইনাল রাউন্ডে গেলো। আমি লাফিয়ে উঠে রাইয়ানের সাথে হাইফাইভ করলাম।

এরপর শুরু হলো তৃতীয় রাউন্ড। শুরুতেই আমাদের আলাদা করে সবার হাতে একটা কাগজ দিয়ে শুন্যস্থান পূরণ করতে বলল। পূরণ করা শেষ হলে কাগজটা জমা নিয়ে নিলো তারা। এরপর একে একে কাপলদের মুখোমুখি বসিয়ে মাঝখান থেকে একজন হোস্ট একে অপরের পছন্দ অপছন্দের জিনিস নিয়ে প্রশ্ন করতে লাগলো। প্রত্যেকের জন্য পাঁচটা প্রশ্ন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে একটি কাপলের হাতে আছে দশ নাম্বার। আমাদের আগে যে দুই কাপলকে প্রশ্ন করা হলো তারা কেউ কেউ পাঁচের মধ্যে চারটা, তিনটা আবার দুইটা এরকম সঠিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো। শেষমেশ পালা এলো আমাদের। রাইয়ান ওপাশ থেকে আর আমি এপাশ থেকে এসে মুখোমুখি চেয়ারে বসলাম। প্রথমে প্রশ্ন করা হলো আমাকে। হোস্ট আমাকে উদ্দেশ্য করে হাসিমুখে প্রশ্ন করলো,
‘তো চলুন মিসেস হুদি এবার শুরু করা যাক।’
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। হোস্ট প্রশ্ন করলো,
‘মি. রাইয়ানের পছন্দের রং কি?’
আমি রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে উত্তর দিলাম, ‘ব্লাক।’
‘মি. রাইয়ানের পছন্দের খাবার?’
‘লাজানিয়া।’
‘মি. রাইয়ান কিসের ঘ্রাণ সবথেকে বেশি অপছন্দ করেন?’
‘কাপর চোপরে নেপথলিনের ঘ্রাণ। উনি খুবই অপছন্দ করেন।’
‘মি. রাইয়ানের পছন্দের কাজ কি?’
‘গিটার বাজানো।’
‘পছন্দের ফুল?’
‘হোয়াইট লিলি।’
এক নিঃশাসে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেললাম আমি। এবং পাঁচটার মধ্যে পাঁচটাই সঠিক বললাম। সবাই ইমপ্রেসড হয়ে হাত তালি দিলো। উইনার হওয়ার ধাপে সবার থেকে অনেকটা এগিয়ে গেলাম আমরা। এবার রাইয়ানের পালা। হোস্ট সবার প্রথমে কঠিন প্রশ্নটাই রাইয়ানকে করলো,
‘মিসেস হৃদি কিসের ঘ্রাণ সবথেকে বেশি অপছন্দ করেন?’
রাইয়ান কিছুক্ষণ ভেবেও কিছু বলতে পারলো না। আমি ঈষৎ ঠোঁট ফুলিয়ে হেসে ফেললাম। হোস্ট দ্বিতীয় প্রশ্নে চলে গেলো। ‘মিসেস হৃদির ফেভারিট কাজ কি?’
রাইয়ান এই প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারলো না। সবাই একটা আফসোসের সুর তুললো। এরপর তৃতীয় প্রশ্ন,
‘মিসেস হৃদির পছন্দের ফুল?’
রাইয়ান ইতস্তত করতে লাগলো। এবার আমার মুখের হাসিও ধীরে ধীরে মলিন হতে লাগলো। খানিক অবাক হলো চোখের দৃষ্টি। হোস্টের কন্ঠের এক্সাইটমেন্টও সরে গিয়ে নেতিয়ে পড়লো। সে ধীর গলায় প্রশ্ন করতে লাগলো,
‘পছন্দের খাবার?’, পছন্দের রং?’
তিনি একে একে প্রশ্ন করে যেতে লাগলেন। রাইয়ান কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারলো না। হুট করেই সবাই একদম নিশ্চুপ হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। কারণ রাইয়ানই প্রথম যে তার পার্টনারের সম্পর্কে কোন কিছুই জানে না। সেই রাউন্ডে অন্য আরেক কাপল উইনার ঘোষিত হলো। অনুষ্ঠান শেষ হলে যে যার মতো চলে যেতে লাগলো। চলে আসলাম আমরাও৷ হুট করেই পরিবেশটা কেমন যেন অস্বস্তিতে ভরে উঠলো। গাড়িতে ফেরার পথেও দুজনের মধ্যে কেউ কোন বলার মতো কথা খুঁজে পেলাম না। দুজনেই একদম নিশ্চুপ।

চলবে,

#My_First_Crush
#পর্ব-১৪
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

একটা সাত তলা বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলা বাসা থেকে বেরিয়ে এলো জিশান। তার পাশে আরেকজন লোক দাঁড়ানো। হাতে কিছু ডকুমেন্টস। জিশান প্রসন্ন মনে লোকটির উদ্দেশ্যে বলল, ‘বাসা আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। আমি ভাড়া নিতে ইচ্ছুক।’
জিশান তৎক্ষনাৎ একটি পেপারে সাইন করে বাসা কনফার্ম করে নিলো। দুই মাসের অগ্রিম পেমেন্ট সাথে এডভান্সড। মনটাই ফুরফুরে হয়ে গেলো তার। অনেকদিন ধরে খুঁজে খুঁজে মন মতো একটা বাসা পেয়েছে জিশান। ভাড়াও সাধ্যমতো। জিশান থুতনিতে হাত রেখে বাসার বাইরের দরজার ডিজাইনটা দেখতে লাগলো। সেই সময় নিচ থেকে জেরিন এলো উঠে। জিশানকে সেখানে দেখে কাছে গিয়ে কৌতূহলী চোখে শিওর হতে গেলো। অন্যমনষ্ক ভঙ্গিতে পাশে তাকাতেই আচমকা ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো জিশান। চেঁচিয়ে বলল, ‘তুমি এখানে?’
জিশানের এভাবে চমকে উঠায় জেরিনও নড়ে উঠেছিল। নিজেকে ধাতস্থ করে সে বলল,
‘আমি এখানে মানে?’
জিশান বলল, ‘ওহ! বুঝতে পেরেছি। আবার আমাকে স্টক করা শুরু করেছো তাই না?’
জেরিন একটা ব্যঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বলল,
‘স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসো। আমার বাসা এখানে তাহলে আমি কোথায় যাবো। স্টক তো মনে হয় এবার তুমি আমাকে করছো!’
জিশান আকাশ থেকে পড়ার মতো মুখ করে তার মুখোমুখি দরজার দিকে ইশারা করে বলল,
‘এখানে তুমি থাকো?’
জেরিন সহজভাবে বলল, ‘হ্যাঁ।’
জিশান তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নিচে তাকালো। ব্রোকার কি চলেই গেছে! আর কি কোন উপায় নেই ক্যান্সেল করার? আরেকটু সময় নিয়ে কনট্রাক্ট সাইন করলো না কেন? ধুর! জিশানের মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। জেরিন তার সামনের বাসার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুমি কি এই বাসায় উঠছো নাকি?’
‘হ্যাঁ, আমি সবসময় দূর্ভোগের সামনে গিয়েই পরি।’
জেরিন মুখ হা করে বলল, ‘এই তুমি দূর্ভোগ বললে কাকে?’
এমন সময় জিশানের খেয়াল হলো অনেকক্ষণ হলো সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া না দিয়ে ত্যাড়ামি করে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক এবার গাঢ় হলো। পেছনে নিজের সদ্য ভাড়া নেওয়া বাসার দরজা ঠেলতে গিয়ে খেয়াল করলো দরজা লক হয়ে গেছে। আর চাবিও মনে করে সে রাখেনি ব্রোকারের কাছ থেকে। এদিকে জিশানের প্রচন্ড চাপ পাচ্ছে। জেরিন জিশানকে এরকম অদ্ভুত অঙ্গিভঙ্গি করতে দেখে বলল,
‘কি হয়েছে?’
জিশান কোন উত্তর না দেওয়ায় জেরিন গিয়ে নিজের বাসার দরজা খুলতে লাগলো। দরজা খুলে গেলে জিশান হঠাৎ এগিয়ে এসে বলল,
‘তোমার বাসায় কি বাথরুম আছে?’
জেরিন বলল, ‘গাধা তুমি! বাথরুম ছাড়া বাসা হবে কেন?’
পরক্ষণেই জেরিন বুঝতে পারলো জিশান কেন এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে। জেরিনের কথা শেষ হতেই জিশান তাড়াতাড়ি দৌড়ে জেরিনের বাসায় ঢুকতে চাইলো। জেরিন তৎক্ষনাৎ দরজার কপাটে হাত রেখে আটকে ফেললো তাকে। জিশান চোখমুখ কুঁচকে বলল,
‘দাও একটু যেতে। তোমার মধ্যে কি মানবতা নেই?’
জেরিন বলল, ‘কেন আমি না তোমার দূর্ভোগ! এখন দূর্ভোগের বাসায় কেন পা রাখতে চাইছো?’
জিশান কাতর চোখে তাকালো জেরিনের দিকে। জেরিন বলল, ‘আগে ভালো করে ‘প্লিজ’ বলো।’
জিশান করুণ গলায় বলল, ‘প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
জেরিন বাঁকা হেসে হাত ছেড়ে দিলো। বিদ্যুৎতের বেগে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো জিশান।
___________________________________________________

রাতে একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পরেছিলাম আজ। ঘন্টা দেঢ় দুয়েক পরেই কেমন যেন ঘুম ভেঙে গেলো। গলাটা শুকিয়ে এসেছে। রাইয়ান বিছানায় বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আমি পানি খাওয়ার জন্য উঠে বসলাম। টেবিলে রাখা বোতল হাতরে দেখলাম পানিশূন্য। অগত্যা উঠতেই হলো। রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলে থাকা জগ থেকে পানি খেয়ে নিলাম। বোতলেও সাথে পানি ভরে রুমে ফেরার পথে হঠাৎ বারান্দায় চোখ পড়লো আমার। রাতের খোলা আকাশ। অন্ধকারের মাঝে যেখানে একের পর এক ফায়ারওয়ার্কস ফুটছে। কি সুন্দর সেই দৃশ্য! আমি ধীরে ধীরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার চোখ অভীভূত। মুহুর্তেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। আকাশ আমার বরাবরই পছন্দ। তার মধ্যে রাতের আকাশে এত সুন্দর ফায়ারওয়ার্কস যে কারোরই মন কেড়ে নেয়। অদূরের চার্চ থেকে রাত বারোটা বাজার শেষ ঘন্টাটা বেজে উঠলো। মুখে হাসি ফুটে উঠলো আমার। আসলে, আজ আমার জন্মদিন। জন্মদিনের শুরুটা এতো সুন্দর দৃশ্য দেখে হওয়ায় ভালো লাগছে।

সকালে খুব তাড়াতাড়িই ঘুম ভেঙে গেলো আমার। প্রতিদিনকার মতোই দাঁত ব্রাশ করে, ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাতে নেমে পড়লাম। কয়েক পদের নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম। এরপর ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিলাম বাড়ি। একটুপর ফ্রেশ হয়ে রাইয়ান রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আমি হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘গুড মর্নিং রাইয়ান।’
রাইয়ানও আমাকে গুড মর্নিং বলল। সে ডাইনিং টেবিলের কাছে এলে আমিও তার সামনে চেয়ার টেনে বসলাম। রাইয়ান জেলি মাখানো ব্রেডে কামড় দিয়ে বলল, ‘আজকে ঠিক করে রেখেছিলাম সকালে একটু তাড়াতাড়ি উঠবো। তবুও দেরিই হয়ে গেলো। আজকে একটা বিশেষ দিন….

রাইয়ান এই পর্যন্ত বলতেই আমি ভাবলাম রাইয়ান বুঝি আমার জন্মদিনের কথা বলছে। আমার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠতেই রাইয়ান বলল, ‘যেই প্রেজক্টটা ফাইনালাইজড হয়েছিল সেটা নিয়ে কাজ শুরু হবে আজ। অফিসে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।’
আমি আস্তের উপর একটু চুপসে গেলাম। রাইয়ান বলল, ‘কিন্তু তুমি আজকে এতো তাড়াতাড়ি উঠেছো কেন?’
আমি খানিক লাজুক স্বরে বলতে নিলাম, ‘আসলে রাইয়ান আমার আজকে….
আমার কথার মাঝে রাইয়ানের ফোন বেজে উঠলে কথা কাটা পরে গেলো। রাইয়ান ফোন রিসিভ করেই ব্যস্ত হয়ে পরলো। ফোন কানে নিয়েই কোনমতে নাস্তা সেড়ে চলে গেলো রেডি হতে। এরপর আমিও চলে এলাম কফিশপে। কফিশপে পা রাখতেই উপর থেকে একটা বেলুনের মতো বাস্ট হলো। কানের কাছে একটা বাঁশি দিয়ে পে পু শব্দ বাজাতে লাগলো জেরিন। আমি কানে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলাম। জেরিন মুখ থেকে বাঁশি সরিয়ে জোরে বলে উঠলো,
‘হ্যাপি বার্থডে মাই জান।’
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও খুশি হয়ে বললাম, ‘থ্যাংক ইউ।’
এরপর জেরিন আমার কাঁধে হাত রেখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ওয়েটারকে বলল,
‘আজকে এই পৃথিবীর সবথেকে ভালো মেয়েটার জন্মদিন। সেজন্য আজ আমাদের কফিশপে আসা সব কাস্টমারের পাঁচ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট।’
আমি ওর পেটে খোঁচা মেরে বললাম,
‘ওই, কি বলছিস! ব্যবসা লাটে উঠবে।’
জেরিন চোখ মেরে আমাকে বলল, ‘মাঝে মাঝে একটু এমন চলে।’
আমি কথা শেষ করে কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলাম। জেরিনও এলো আমার পিছুপিছু। এই কথা সেই কথা বলে আমাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললো। খানিক বাদেই একজন কাস্টমার এসেছে ভেবে আমি এগিয়ে গেলাম৷ গিয়ে দেখি অ্যালেন। আমি স্মিত হেসে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম, ‘অ্যালেন!’
অ্যালেন হাসিমুখে চেয়ার টেনে বলে উঠলো, ‘আজকে কিন্তু আমি তোমার অনেক সময়ের কাস্টমার। একে একে সব কফি ট্রাই করবো। তাড়িয়ে দেবে না তো!’
আমি হেসে উঠলাম। বললাম, ‘কাস্টমার যতো অর্ডার করবে ততো আমাদেরই লাভ।’
অ্যালেন হাসলো। একটা চেয়ার টেনে বসে আমি এবার সিরিয়াস হয়ে বললাম, ‘তুমি কি কোন বিশেষ কাজে এসেছো?’
অ্যালেন বলল, ‘কেনো বিশেষ কাজ ছাড়া আসতে পারি না বুঝি! আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করলাম?’
আমি দ্রুত বলে উঠলাম, ‘না না ডিস্টার্ব হবে কেন! তুমি থাকতে পারো যতক্ষণ ইচ্ছে।’
রাইয়ানের বন্ধু অ্যালেন। একজন মানুষের সম্পর্কে আদ্যপান্ত জানার বিশেষ মাধ্যমই হয় তার বন্ধু। এজন্যই সেই প্রথম দিন থেকেই রাইয়ানের সম্পর্কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আরো সবকিছু জানার জন্য আমি আগ্রহ নিয়ে অ্যালেনের সাথে কথা বলি। ইতিমধ্যেই কথায় কথায় আমি রাইয়ানের ইউনিভার্সিটি লাইফের অনেক ঘটনাই জেনে ফেলেছি। তবুও আমার আগ্রহের শেষ হয় না। আমার আরো জানতে ইচ্ছে করে। তার সম্পর্কে জড়িত ক্ষুদ্র বৃহৎ আনাচে কানাচে সবটুকুই আমি জানতে চাই, শুনতে চাই, তাকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে চাই।

ওয়েটার এসে এক কাপ ক্যাপিচিনো অ্যালেনের সামনে রাখলো। অ্যালেন আমাকে বলল,
‘তুমি নিবে না?’
আমি বললাম, ‘না না, আমার এখন ইচ্ছে করছে না।’
অ্যালেন বলল, ‘তুমি মিল্ক টি অনেক পছন্দ করো তাই না?’
‘তুমি কিভাবে জানলে?’
‘তোমার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে। সেখানে তোমার এগারোটা সেলফির মধ্যে পাঁচটাতেই হাতে অথবা আশে পাশে মিল্ক টি রাখা।’
আমি মৃদু হেসে ফেলে বললাম, ‘তুমি কি আমার সব পোস্ট স্ক্রল করেছিলে নাকি!’
‘হুম। তুমি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করার পরেই একদম আইডির আনাচে কানাচে সবই দেখে নিয়েছি।’

বটে, কিছু মানুষের এই অভ্যাস থাকে। যেমন আমাদের জেরিনেরই। জেরিন শুধু আইডির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব পোস্ট দেখবে তা না, বরং কমেন্ট, রিয়্যাক্ট চেক করে সেইসব আইডিতে ঢুকেও কার সাথে কার রিলেশন, কে কার এক্স সেগুলোও খুঁজে বের করে ফেলবে। এমনকি কিছু মানুষের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট ওঁ একারণেই একসেপ্ট করে যাতে তার আইডিটা ঘুরে দেখতে পারে। দেখা শেষে আবারো আনফ্রেন্ড!

অ্যালেন নিজের মতো বলতে লাগলো, ‘আমি যে শুধু তোমার মিল্ক টি’য়ের ব্যাপারটাই ধরেছি তা কিন্তু না। আরেকটা বিশেষ খবরও কিন্তু আবিষ্কার করেছি।’
আমি মৃদু হেসে বললাম, ‘কি?’
অ্যালেন মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘হ্যাপি বার্থডে।’
আমি বললাম, ‘থ্যাংক ইউ।’
‘উহুম! শুধু থ্যাংক ইউ’তে হবে না।’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘তাহলে?’
অ্যালেন বলল, ‘আমাকে এক কাপ কফি আজকে ফ্রি তে খাওয়াতে হবে।’
আমি এবার হেসেই ফেললাম। বার্থডে উপলক্ষে অ্যালেন আমার দিকে একটা চকলেটের বাক্স এগিয়ে দিলো। আমি ভেতরে ভেতরে আঁতকে উঠলাম। আবারো চকলেট! তারপর চকলেটের গায়ের লেখা পরে অতঃপর নিশ্চিন্ত হলাম। যাক! নরমাল চকলেটই। অ্যালকোহল ফ্রি!

অ্যালেন চলে গেলে আমি কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বেলা বাড়তে লাগলো। একটি কাগজ নিয়ে কিছু হিসাব লিখে রাখতে লাগলাম আমি। এমন সময় হাতের কাজ শেষ করে জেরিন এসে দাঁড়ালো আমার পাশে। ওর ফোন আমার দিকে দেখিয়ে বলল,
‘দেখ, এই ড্রেসটা কেমন?’
আমি বললাম, ‘ভালোই।’
জেরিন উৎফুল্ল হয়ে বলল, ‘তোর গায়ে দারুণ মানাবে।’
‘আমার মানে?’
‘তোর জন্য নিচ্ছি।’
‘শুধু শুধু কি দরকার জেরিন!’
জেরিন মজার সুরে বলল, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ! এখন আর আমাদেরটা ভালো লাগবে কেন? এখন তো তোকে আরো অসাধারণ গিফট দেওয়ার জন্য তোর হাজবেন্ড আছেই।’
জেরিন এরপর উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘হৃদি, রাইয়ান তোকে কি গিফট দিয়েছে?’
জেরিনের প্রশ্নে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। জবাব না খুঁজে পেয়ে শুধু ইতস্তত করতে লাগলাম। জেরিন আমার মুখের ভাব বুঝে গিয়ে বলল,
‘রাইয়ান তোকে কিছু দেয়নি?’
আমি হেসে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম,
‘দূর! তুইও না কি নিয়ে পড়লি বল তো?’
জেরিন আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শীতল কণ্ঠে বলল,
‘রাইয়ান তোকে কোন উইশও করেনি তাই না?’
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। জেরিন সামনে দৃষ্টি নিয়ে হাতের ফোন শব্দ করে রেখে দিলো। মুখ কঠিন হয়ে উঠলো ওঁর। আমার দিকে তাকিয়ে এরপর বলল, ‘তুই ওঁর ওয়াইফ। আজকে তোর বার্থডে, আর তোর হাজবেন্ড তোকে একটা উইশ পর্যন্ত করেনি!’
আমি নরম স্বরে বললাম, ‘জেরিন, তার কোন দোষ নেই। আমার মনে হয় সে জানে না।’
‘এটা তো আরো রাগের কথা বললি। তার ওয়াইফের জন্মদিন আর সে জানেই না!’
আমি কিছু বলতে চাইলাম তার আগেই জেরিন আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘এখন প্লিজ বলিস না সে কাজের চাপে অনেক ব্যস্ত থাকে। এটা কোন বাহানা হতে পারে না। তার বন্ধু পর্যন্ত এসে তোকে উইশ করে গেলো। তোর পুরনো নেইবাররা তোকে কল দিয়ে উইশ করলো আর তোর হাজবেন্ড হয়ে রাইয়ানেরই কোন খবর নেই! আমি সত্যিই অবাক।’
আমি মাথা নিচু করে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। জেরিন নরম হয়ে এবার আমাকে বলল,
‘হৃদি তুই মানা করেছিলি বলে আমি কিন্তু এতদিন সত্যিই রাইয়ানকে নিয়ে চুপ থেকেছি। কিন্তু এটা চুপ থাকার মতো ব্যাপার না। কারণ সত্যি এটাই যে, রাইয়ান তোর কোন কেয়ার করে না। তোর ভালো লাগা খারাপ লাগা নিয়েও তার কোন আগ্রহ নেই। আসলে রাইয়ানের কাছে তোর কোন মূল্যই নেই। যদি থাকতো তাহলে আজ যে তোর জন্মদিন অন্তত এটা ওঁর মাথায় থাকতো।’

জেরিন আরো অনেক কথা বলল। আমি শুধু চুপ হয়ে শুনলাম। সারাদিন আর আমার মুখে হাসি ফুটলো না। মন আকাশের সবটুকু জায়গা দখল করে নিলো কালো মেঘের দল। রাতে বাড়ি ফিরতেও দেরি হয়ে গেলো। লিফট থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার পথটুকুতেও পা যেন চলতেই চাইছিল না আর। আজ শরীরের চাইতে মনটা বেশি ক্লান্ত। পুরো পৃথিবী আমাকে একটা সত্য বোঝাতে চাইছে অথচ আমার মন সেই সত্য মানতে নারাজ। আমি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে দরজা খুলে পা রাখলাম। হঠাৎ কানে ভেসে এলো,
‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ হৃদি, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।’
আমি সামনে তাকালাম। ডাইনিং টেবিলের পাশে রাইয়ান হাসি হাসি মুখ নিয়ে একটা চকলেট কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার চোখ ছলছল করে উঠলো। আবেগি হয়ে উঠলাম আমি। রাইয়ান কেকটা পাশে টেবিলের উপর রেখে স্মিত হেসে আবারো বলল,
‘হ্যাপি বার্থডে হৃদি।’
এবার চোখ থেকে পানি বেরিয়েই এলো আমার। এক দৌড়ে গিয়ে তার বুকে মাথা রেখে আমি জড়িয়ে ধরলাম তাকে।

চলবে,