Three Gangsters Love Part-01

0
6188

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_1.

রিমি,নিধি,সিমি তিন জন তিন জনার হাত শক্ত করে ধরে খুব জোরে দৌঁড়াচ্ছে। পরনে হলুদের শাড়ি। বুঝাই যাচ্ছে বিয়ের আসর থেকে পালাচ্ছে। রিমি,নিধি,সিমির মনের মধ্যে ভয় । বুকের মধ্যে ধুক ধুক শব্দটা ক্রমশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতটাই জোরে দৌড়াচ্ছে তিন জন,রাস্তার মানুষ রা যে তাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সেদিকে ওদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা যে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে । কেন? কী কারণে এভাবে দৌঁড়াচ্ছে সেটাই তারা ভাবছে। হঠাৎ সামনে একটি সাদা রঙের গাড়ির তীব্র আলো দেখে ওরা থেমে যায়। দাঁড়াতেই জোরে জোরে নিঃশ্বাসে শব্দ আসতে লাগলো ওদের ভেতর থেকে। নিধি বলল,
-“রিমি,সিমি এই রাস্তা দিয়ে আয়।”

নিধির কথা মতো ঐ রাস্তা দিয়ে যেতেই এই রাস্তার মাঝখানে ওই একি রঙের সাদা গাড়ি দাঁড়ান‌ দেখে। ওরা এটা দেখার পর থেমে যায়নি। অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে শুরু করল। ঐ রাস্তাত পাশেই বড় খোলা মাঠ ছিল। সম্ভবত খেলার মাঠ। ওরা ভুল করে সেই মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়ে। রিমি,নিধি,সিমি পিছনে তাকিয়ে দেখে পিছন থেকে সাদা রঙের গাড়ি ওদের দিকে ধেয়ে আসছে। ওরা দৌঁড়ের গতি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কতইবা দৌঁড়ান যায়। শাড়ি পড়ে যে ঠিক মতো দৌঁড়ান যায় না। কিছু দূর দৌঁড়াতেই সেই সাদা রঙের একটি গাড়ি ওদের সামনে চলে আসে। ওরা থেমে যায়। ঐ গাড়ির পিছনে আরো দুটি গাড়ি এসে ওদের চারপাশ দিকে গোলগোল ঘুরতে শুরু করে। ওরা তিন জন গাড়ি তিনটির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি তিনটি দেখে ওদের বুঝতে আর বাকি নেই এটা কাদের গাড়ি বা এরা কারা। ভয় জড়ানো চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে গাড়ি তিনটির দিকে। পিঠের সাথে পিঠ ঠেকানো,হাত এখনো ধরে আছে তিন জন,তিন জনার। এতক্ষন দৌঁড়ানোর ফলে গা দিয়ে ঘাম ঝঁড়ছে। কপালে,নাকে,থুতনিতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। আতঙ্ক চোখে মুখে লেপ্টে আছে। হাত-পা কাঁপছে। গাড়ি তিনটি এখনো আগের ন্যায় গোল গোল ঘুরেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বেশ ক্রোধ নিয়ে গাড়ির ভেতরে থাকা মানুষ তিনটি জোরে জোরে গাড়ি চালাচ্ছে। এখন কী করবে? কোথায় পালাবে ? আর কেনই বা বাঘের গুহা থেকে পালাতে গেল? ক্ষিপ্ত বাঘ আরো বেশি ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে। ফুটে উঠছে তাদের হিংস্রতা । ভয়তে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ছে ওদের তিন জনার চোখ থেকে।

কোনো সমস্যা নেই। কিছু বুঝেন নাই বুঝতে পেরেছি। চলেন ওদের পাস্ট থেকে ঘুরে আসি।

পাস্ট…..

সাদা রঙের গাউন পড়ে দাঁড়িয়ে আছে রিমি,সিমি,নিধি । সাদা শার্ট, কোট,প্যান্ট পড়া অপর দিক পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি সুদর্শন যুবক। রিমি,নিধি,সিমি ওদের মুখে হাসি ফুটে উঠল যুবক তিন জনকে দেখে। চোখ জোড়া খুশিতে চিকচিক করছে। একে অপরের দিকে তাকিয়ে গাউন ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। যুবক তিন জন তখনো অপর দিক মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি,সিমি,রিমি যুবক দিন জনের কাঁধের উপর হাত রাখল। যুবক তিন জন ওদের দিকে ঘুরে তাকাতেই তিন জন জোরে চিৎকার দিয়ে উঠল……।

আআআআআআআআআআআ…….

এক চিৎকার ওদের ঘুমের ধফা-রফা । তিন জন হাপাচ্ছে। সপ্নের কথা মনে পড়তেই নিজেদের দিকে আর‌ একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো।

রিমি বলে,
-“হ্যাঁ রে, সিমি,নিধি এতক্ষণ আমরা সপ্ন দেখছিলাম?”

নিধি বলে,
-“হ্যাঁ । কিন্তু তোরাও কী আমার সাথে একি সপ্ন দেখছিলি নাকি?”

-“আমি দেখলাম,আমরা সুন্দর গাউন পড়ে দাঁড়িয়ে আছি। আামদের থেকে কিছুটা দূরে তিন জন যুবক দাড়িয়ে ছিল। তাদের চেহারা দেখার পরি…..আল্লাহ্ কী বিশ্রী।” রিমি বলে।

-“প্রতিদিন প্রিন্স প্রিন্স করে ঘুমাই তো তাই,মনে হয় একি সপ্ন দেখেছি। তাও আবার এমন…..।”নিধি বলে।

সিমি নাক ছিটকিয়ে বলে,
-“ছিঃ কী খারাপ সপ্ন ছিল?”

রিমি বলে,
-“ঠিক! কী কালো চেহারা ছিল। আর কী খারাপ। তার চেয়ে ভূতও ভালো।”

-“হুম, বাট প্রথম দিক থেকে সপ্নটা ঠিক ছিল। কিন্তু গুদর্শন আই মিন সুদর্শন ছেলে তিন জনের চেহারা দেখে গাঁ কিন কিন, আই মিন, টিন টিন আই মিন……।”

সিমিকে তামিয়ে রিমি বলে,
-“থাক,থাক । আমি বলছি? গাঁ ঘিঁন ঘিঁন করছে, তাই তো।”

-“হ্যাঁ ঠিক বলছিস।” সিমি বলে।

নিধি বলে,
-“ফালতু সপ্ন। ওঠ তাড়াতারি,কাজে যেতে হবে ।”

রিমি ছোট্ট নিশ্বাস টেনে বলে,
-“হুমমম,,,খালি কাজ আর কাজ। কবে যে আমার প্রিন্সকে খুঁজে পাবো।”

-“হু,দোয়া করি যেন খুব তাড়াতারি তোর প্রিন্স কে বুঝে পাস।” সিমি বলে।

রিমি সিমিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
-“বুঝে না খুঁজে হবে।”

-“ওই আর কী!”

নিধি বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে,
-“অনেক কথা হইছে। এবার ওঠ তোরা।”

তিন জন বিছানা থেকে ওঠে পড়ে। ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় শুরু হয় মহা যুদ্ধ । নিধি বলে ও আগে যাবে? রিমি বলে ও আগে যাবে? সিমি বলে ওঠে,’আমি আগে যাব’। ব্যাস,ঝগড়া শুরু।

পরিচয়…

রিমি,নিধি,সিমি এরা তিন বান্ধবি। ওরা তিন বান্ধবি অনাথ। নিধির আপন মামা থেকেও নেই বললেই চলে। ছোট থেকে এতিম খানায় বড় হয়েছে । ইন্টার পর্যন্ত পড়তে পেরেছে। তার বেশি পড়া-লেখা করতে পারেনি। দু’বছর হলো এতিম খানা থেকে চলে এসে নিজেরা কাজ করে ছোট একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকে। তিন জনের চেহারা দেখতে বেশ সুন্দর ছিল। তিন জন তিন প্রকৃতির। আস্তে আস্তে ওদের বিষয় আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন।
___________________________________

রুদ্র,শুভ্র,অভ্র তিন জনে একজন লোকের দিকে গান তাক করে ক্ষিপ্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি বেঁচে থাকার জন্য আঁকুতি-মিনতি করছে। ভয়ে লোকটির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। হাত দিয়ে বার বার ‘না,না’ বলে যাচ্ছে। কিন্তু লোকটির মিনতি ওদের কাছে ঘেঁষতে পারেনি। বিকট তিনটি শব্দ হলো। লোকটি নিস্তেজ হয়ে যায়। গল গল করে বুক থেকে রক্ত বেড়িয়ে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে । তিন জনের মুখে তৃপ্তিময় হাসি ফুটে ওঠে। পিস্তল তিনটি পাশে দাঁড়ান সাব্বিরের দিকে ছুঁড়ে দেয় । সাব্বির ক্যাচ ধরে পিস্তল তিনটি জাগা মতো রেখে দিল। সুইমিংপুলের সামনে থেকে তিন জন হেঁটে ভেতরে আসতে লাগলো । ভিতরে গিয়েই ঘটল আরেক কাণ্ড। বিকট একটি শব্দ তৈরি হয়ে ড্রইংরুমের বড় ঝারবাতিতে এসে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে ঝারবাতি ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে চার দিক ছড়িয়ে ছিটকে গেল। সাব্বির কান চেপে সোফার পিছনে লুকিয়ে পড়ে। এ আর নতুন কী? উন্নিশ থেকে বিশ হলেই আলতাফ চৌধুরী গুলি করে ঘরের জীনিস পত্র ভেঙে চূড়মার করে দেয়। আজও মনে হয় ভুল কিছু হয়েছে । যার ফলে তিনি প্রচণ্ড রেগে আছেন।

রুদ্র,অভ্র,শুভ্র কোনো ভ্রক্ষেপ না করে সোফায় বসে ওদের দাদুকে ডাকতে লাগলো।

রুদ্র চেঁচিয়ে বলে,
-“দাদু! আজ আবার কী হলো? কোন বিষয় নিয়ে রেগে আছো?”

অভ্র বলে,
-“নিচে নেমে আসো। কী হয়েছে শুনি?”

-“কী হলো? কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন দাদু?” শুভ্র বলে।

আলতাফ চৌধুরী তাঁর নাতিদের কথা শুনে রাগী মুডে করিডোরে দাঁড়িয়ে ওদের সামনের টেবিলের উপর ফুলেট টপটি নিশানা করে গুলি ছুঁড়ে । ঠাসস করে বিদঘুটে শব্দ হয়ে ভেঙ্গে চূড়মার হয়ে যায় । রুদ্র,শুভ্র,অভ্র স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে। কিন্তু সাব্বির চোখ,মুখ খিঁচে বন্ধ করে সোফার আরেকটু ভিতরে ঘেঁষে বসলো। ওর মন চাইছে সোফার ভেতরে ঢুকে যেতে।

রুদ্র করিডোরের থাকা আলতাফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আচ্ছা দাদু! কী হয়েছে না বললে কিভাবে বুঝবো বলো?”

অভ্র বল,
-“নিচে এসে, মাথা ঠান্ডা করে বলো কী হয়েছে? ”

ওদের কথা শুনে আলতাফ চৌধুরী গুটিগুটি পায়ে নাক ফুলিয়ে লাঠি ভর দিয়ে নিচে নেমে ওদের পাশের সোফায় মুখ ভার করে বসে পড়ে।

শুভ্র ওর দাদুর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এবার বলো কী হয়েছে? ”

রাগ নিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আলতাফ চৌধুরী বলে,
-“পৈ পৈ করে বলি আমার চায়ে চিনি দিবে না,চিনি দিবে না। কিন্তু গাঁধা গুলো আমার কথা শুনেই না।”

কথাটা শুনেই রুদ্র চিল্লিয়ে সাব্বিরকে ডাক দেয়,
-“সাব্বির,সাব্বির সাব্বির।”

সাব্বির ডাক শুনবে কী করে। আতঙ্কে কান চেপে ধরে বসে আছে সোফার পিছনে ।

আলতাফ চৌধুরী চোখ কুঁচকিয়ে বলেন,
-“এভাবে ডাকলে হবে না। ও’কে সুন্দর করে ডাকতে হবে।”

-“তুমি ডাকো।” অভ্র বলে।

-“গাঁধা সাব্বির। ঐ পাঠা সাব্বির। আরে ঐ হারামজাদা।” চিল্লিয়ে বলে আলতাফ চৌধুরী ।

-“জি…জি .জি..ডাডু থুক্কু দাদু বলেন বলেন।” সোফা থেকে বেরিয়ে আলতাফ চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে থমথম খেয়ে বলে।

-“এতক্ষন কোথায় ছিলি রে হারামজাদা?” কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করেন দাদু।

-“সোফার পিছনে না না…আমার রুমে ছিলাম । রুমে ছিলাম।”

-“তাহলে ডাক শুনিস নি কেন?”

-“কানে ইয়ারফোন লাগানো ছিল তো তাই।” দাঁত কেলিয়ে বলে সাব্বির।

-“তাই নাকি….।”

-“হ দাদু।”

-“বুঝছিস রুদ্র,অভ্র,শুভ্র কয়দিন ধরে আমার হাতের লাঠিটা কারো পিঠে পড়ে না। আজকে মনে হয় পড়বে।”

সাব্বিরের মুখের হাসি উধাও হয়ে যায়। কান্নার ভান করে বলে,
-“দাদুউউউউউ…..। তুমি সব সময় আমার লগে এমন কর ক্যা? আমি কী করছি?”

-“তাহলে মিথ্যে কথা বলছিস কেন? ” দাদু বলে।

-“তো কী কইতাম।” কান্নার ভান করে।

-“ঐ হারামজাদা কান্না থামা।”

-“ধুর দাদু! কাঁনদি না তো। আমি তো ঢং করতাছি।” হাসতে হাসতে বলে।

-“দেখছস নি কারবার। ওরে মন চায় না পিটাাইতে।” দাদু রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওদের দিকে তাকিয়ে বলে।

ওরা তিন জন ফোনের স্ক্রিনে তাকান অবস্থায় মুচকি হাসে। সাব্বির ও দাদুর কথা+ঝগড়া ওদের কাছে ভালোই লাগে। তাই ওরা সব সময় চুপ থেকে ওদের কথা গুলো শুনে ইনজয় করে। সাব্বির আর দাদু তর্ক করেই যাচ্ছে । ওদের দু’জনকে রুদ্র থামিয়ে বলে,
-“অনেক হয়েছে,এবার থামো। সাব্বির শোন সার্ভেন্ট দের ভালো করে বলে দে দাদুর চায়ে যেন ভুলেও সুগার না দেয়।”

বলেই উপরে চলে যায় রুদ্র। ওর সাথে অভ্র,শুভ্র উপরে চলে আসে। তিন জন রেডি হয়ে হাতে কোট নিয়ে নিচে চলে আসে। টেবিলের বসে খাবার খেতে খেতে ওদের দাদুর সাথে সকালের খুন করা লোকটির সম্পর্কে কথা বলতে থাকে,

দাদু বলে,
-“কিছু জানতে পারলে?”

-“না দাদু।” রুদ্র বলে খেতে খেতে।

-“তাহলে মারলে কেন?”

-“মুখ না খুললে ও’কে রেখে কী লাভ?” অভ্র বলে ।

-” এখন কী করবে? বিপলপ তালুকদার তো বসে থাকবে না। কারণ,তোমরা তাঁর খাস লোক কে মেরেছো?”

-“আমরাও বসে নেই দাদু। তালুকদারের পিছনে লোক লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব খবর আমাদের কাছে চলে আসবে ।” শুভ্র বলে।

-“তারপরও সাবধানে থেকো তোমরা।”

-“তুমি চিন্তা কোরোনা দাদু।”রুদ্র ওর দাদুর হাতের উপর হাত রেখে বলে।

-“হুমম।”

খাওয়া শেষ করে একেক জন এক গাড়িতে ওঠে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সাব্বির রুদ্রের গাড়িতে বসেছে। কিছুক্ষণ পর ‘চৌধুরী গ্রুপ অফ কম্পানির’ বিশাল ভবনের সামনে এসে গাড়ি থামে। রুদ্র,অভ্র,শুভ্র চোখের সানগ্লাস টা পড়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে। ওদের থেকে কিছুটা দূরে মিডিয়ার লোকরা জড়ো হয়ে মাইক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেদিনের পার্টিতে আলতাফ চৌধুরীর উপর গুলি ছুঁড়া হয়েছিল । কে? বা কারা এটা করেছে সেটা জানার জন্য ওদের সাথে কথা বলতে চায় মিডিয়ার লোকরা। রুদ্র সাব্বিরকে ইশারা করে ভিতরে চলে আসে। ওর সাথে অভ্র,শুভ্র ও পা মিলিয়ে হাঁটছে। লিফটে ওঠে ওদের কেবিনে এসে বসলো। রুদ্র ওর চোখের সানগ্লাস খুলে টেবিলের উপর রেখে বলে,
-“বুঝতে পারছি না কে দাদুর উপর আক্রমন করেছিল?”

-“তালুকদার হবে?” শুভ্র ওর গায়ের কোট খুলে চেয়ারের উপর রেখে বলে।

-“উহু! অন্য কেউ হতে পারে।” মুখে সিগারেট নিয়ে লাইটার দিয়ে আগুন জ্বালাতে জ্বলাতে বলে অভ্র।

-“কে সেটাই জানতে হবে।” গাম্ভীর্য স্বরে বলে রুদ্র।

সাব্বির কেবিনে ঢুকে বলে,
-“ভাই । মিডিয়ার লোকরা পাগল করে দিচ্ছে।”

-“আউট করে দে।” অভ্র বলে।

-“জি ভাই।” হাতের ফাইল গুলো রেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

শুভ্র চেয়ার ছেড়ে ওঠে থাইগ্লাসের সামনে এসে মিডিয়ার লোকদের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে,
-“যেই হোক না কেন? শাস্তি তাকে পেতেই হবে।”

কথাটা শুনে রুদ্র ও অভ্রের চেহারায় রাগের আভা ফুটে ওঠে।

পরিচয়….

চৌধুরী পরিবার। তাদের আরেকটি নাম আছে, #Three_Gangsters.
আলতাফ চৌধুরীর তিন ছেলে ছিল নাম,বিজয় চৌধুরী,অজয় চৌধুরী,অমিত চৌধুরী। তার কোন মেয়ে ছিল না। তাদের তিন জনের তিন ছেলে ছিল নাম রুদ্র,অভ্র,শুভ্র । ওদের তিন জনেরও কোনো বোন ছিল না। ওদের মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। ওদের বয়স যখন ১০ বছর ছিল, তখন রুদ্রর জন্মদিন উপলক্ষে চৌধুরী পরিবারের সবাই পিকনিকে যাওয়ার সিদান্ত নেয়। কক্সবাজার যাবার কথা ছিল তাদের। দু’টি মাইক্রো ও দু’টি প্রাইভেট কার নিয়ে বের হয়। প্রথম মাইক্রোতে ওদের বাবা,মা রা ছিল। আর দ্বিতীয় মাইক্রোতে রুদ্র,অভ্র,শুভ্র আর ওদের দাদু ছিল। এই পিকনিক যে ওদের জীবন থেকে ওদের বাবা,মাকে কেঁড়ে নিবে,কে জানত এ কথা? শত্রুরা মাইক্রোতে টাইম বোম লাগিয়ে দিয়েছিল । কিছু দূর যেতেই রাস্তার মাঝখানে প্রথম মাইক্রোটি বোম ব্লাস্ট হয়। তাতে থাকা ওদের তিন জনের বাবা,মা মারা যায়। আলতাফ চৌধুরী নিজের চোখের সামনে তার ছেলে, বউদের মৃত্যু দেখেন। তখন তিনি তার নাতীদের নিয়ে মাইক্রো থেকে নেমে পরেন। তারা নামার সাথে সাথেই দ্বিতীয় মাইক্রোটিও ব্লাস্ট হয়। ভাগ্যক্রমে তারা বেঁচে যান। প্রথম গাড়ির চালক ছিল সাব্বিরের বাবা। তিনিও তাদের সাথে মারা যায়। সাব্বিরের মা,সাব্বির ছোট্ট থাকতেই মারা যায়। সাব্বির ওদের তিন জনের ছোট ছিল। আলতাফ চৌধুরী তার নাতীদের সাথে সাব্বিরকেও লালন-পালন করে বড় করেন। একদিকে আলতাফ চৌধুরীর তাঁর তিন ছেলের শোক কাতর ছিল। আরেক দিকে তার নাতিদের নিয়ে টেনশনে ছিল। যদি আবারও শত্রুরা ওদের উপর আক্রমন করে? কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি। পড়া-লেখার পাশাপাশি কারাটে,বক্সিং,খেলা-ধুলা আর সব ধরনের রিভাল বার,সর্ট গান চালানো শিখিয়েছেন। আলতাফ চৌধুরীর ইচ্ছা ছিল তার নাতিদের গ্যাংস্টার বানানোর। তিনি সার্থক হয়েছেন। ‘চৌধুরীর’ পাশাপাশি #Three_Gangsters নামে সবাই তাদের চিনে।
.
.
.
বিপলপ তালুকদার চিন্তিত হয়ে এদিক সেদিন পায়চারি করছেন। সিলেটবিভাগের একজন নাম করা গুন্ডা।এয়াবা,হিরয়িন,ড্রাকস স্মাগলিং আর চাদাবাজি করাই তার কাজ। তাঁর স্ত্রী মৃত। রিদয় তাঁর একমাত্র ছেল। যেমন বাপ,তার তেমনি ছেলে। সারাদিন নেশা জাতীয় দ্রব্য পাল করে, নেশায় বুদ হয়ে থাকে । ওর নামে ইভটিজিং,রেপ কেস ফাইল করা। বাবার টাকার জোরে এই কেস গুলো থেমে মুক্তি পেয়ে যায়। ওর বড় নেশা মেয়ে মানুষ। মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলা করা ওর বাঁ হাতের কাজ। যখন যে মেয়েকে পছন্দ হয় তখনি তাকে তুলে নিয়ে এসে ওর খায়েশ মিটিয়ে নেয়। তারপর হয়তো খুন করে আবার কখনো রাস্তার মাঝখানে ফেলে রেখে দেয়। সব প্রমান এমন ভাবে লুপাট করে,পুশিল তদন্ত করে ক্লু পায় না। কিন্তু রিদয় কাল রাতে ক্লাব থেকে বাসায় ফিরেনি। এবং তাঁর খাশ লোক মোস্তাকও গায়েব। তাই বিপলপ হাসান ভীষন চিন্তিত। সকাল থেকে এক ফোটা পানিও মুখে দেননি। বড্ড আদরের ছেলে তাঁর। চার দিকে লোক পাঠিয়ে দিয়েছে ছেলেকে খোঁজার জন্য। ওসি পলাশ হাসান তাঁর রুমে প্রবেশ করে হতাশ কন্ঠে বলেন।
-“স্যার,কাল রাতের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নষ্ট করা হয়েছে। তাই খবর নিতে পারছি না কে,বা কারা রিদয়কে কিডন্যাপ করেছে।”

বিপলপ তালুকদার কথাটা শুনে ক্ষুপ্ত হয়ে পলাশের কলার চেপে ধরে বলে,
-“আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। যেখান থেকে পারো আমার ছেলেকে খুঁজে বের কর।”

পলাশ হাসান ভয় জড়িত কন্ঠে বলে,
-“জি..জি স্যার ।”

বিপলপ তালুকদার কলার ছেড়ে দিয়ে বলেন,
-“যাও! খুঁজে বের কর আমার ছেলেকে।”

পলাশ হাসান দ্রুত রুম ত্যাগ করেন । বিপলপ তালুকদার আগের ন্যায় পায়চারি শুরু করে।
.
.
.
.
.
.
রিমি বিয়ের ডেকোরেশনের কাজ করে। আর নিধি,সিমি ঢাকার বড় ‘ডে,নাইট রেস্টুরেন্ট এন্ড হোটেল’ এ চাকরি করে। ওরা যে যার কাজে এসে পড়েছে। বিশাল বড় এড়িয়া জুড়ে হোটেলটি। এখানে বেশির ভাগ নামি,দামি মানুষরাই আসে।

রেস্টুরেন্টের টেবিল পরিষ্কার করছিল নিধি। সিমি এসে ওর কানে কানে বলে,
-“আজকে তাড়াতারি বাসায় যাবি?”

-“কেন?” আস্তে করে উত্তর দেয় নিধি।

-“কাল শুক্রবার তাই বিকালে ঘুরতে বের হতাম।”

-“কোথায়?”

-“সেটা পরে বলবো,এখন না।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতারি বাসায় যাব,কিন্তু রিমিকে খবরটা দিয়ে দে।”

-“ওকে।” বলেই সিমি চলে যায়।

দূরে গিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে রিমিকে কল দেয়। একবার রিং হতেই ফোন রিসিভ করে রিমি।
-“হুম বল সিম।”

-“তিমি শোন আজ তাড়াতারি বাসায় আসবি। বিকালে ঘুরতে বের হবো।”

-“কই যাবি ঘুরতে?”

-“মেলায় যামু।”

-“হুর! মেলায় মানুষ যায়। খালি মানুষের ঠেলাঠেলি ।”

-“আমরাও কী কম ঠেলতে পারি নাকি? ঠেলেঠুলে আমরাও মেলায় ঢুকে যাবো।”

-“আচ্ছা আচ্ছা বুঝছি। তুই এখন রাখ সিম।”

-“ঠিক আছে,কিন্তু চারটার আগে বাসায় যেন তোকে দেখি হু।”

-“ওক্কে ।”

-“হুম,রাখি।”

টু..টু..টু….
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……