Three Gangsters Love Part-2+3

0
4355

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part-2. [ 2+3 ]

থ্রি জি হাউস…

স্যুাইমিং পুলের স্লিপিং চেয়ারে শুয়ে আছে আলতাফ চৌধুরী । সাব্বির তাঁর পায়ে সরিষার তেল মালিশ করে দিচ্ছে আর বেশুরা গলায় গান গাচ্ছে। গান শুনে আলতাফ চৌধুরীর চেহারায় বিরক্তি এসে ভর করে।

-“দাদা পায়ে পড়ি রে,,,ঠেলা থুক্কু মেলা থেকে বউ এনে দে…ও দাদা পায়ে পড়ি রে মেলা থেকে বউ এনে দে,আরে দাদু দে দে দে……।”

আলতাফ চৌধুরী এবার রাগ নিয়ে সোয়া থেকে ওঠে সাব্বির কে ঝাঁড়ি দিয়ে বলে,
-“হুর শালা,মেলায় কী বউ নিয়ে বসে রয়েছে নাকি? যে যাব আর বউ নিয়ে চলে আসবো?”

-“বুড়ায় দেহি কথাটা সিরিয়াসলি নিছে,আমি তো গান গাইছিলাম। যাই হোক,নিছে ভালো হইছে। এখন একটু বুড়োকে খোঁচাই।”মনে মনে বলে সাব্বির । তারপর আবার আলতাফ চৌধুরীর পায়ে হাত দিয়ে মালিশ করতে করতে আদুরে কন্ঠে বলে,
-“দাদু,ও দাদু, তুমি তো যানো আমার বিয়ের বয়স হইছে। এখন একটা বিয়া করন লাগতো। কবে জানি মইরা যাই। বিয়া না করলে এই আফসোস টা মনে রইয়া যাইব।”

-“আরে তোর বিয়ের আগে আমার তিন নাতিরে বিয়ে দেওয়া লাগবে। ওদেরও বিয়ের বয়স হইছে।”

-“তো এক সাথে চার জন মেয়ে দেখো। তারপর এক সাথে বিয়ে দিও চার জনকে।” দাঁত কেলিয়ে বলে সাব্বির ।

-“তোর হলদে মাখা দাঁত গুলো ভিতরে নে।”

সাব্বির ফট করে মুখ বন্ধ করে নিল। আলতাফ চৌধুরী আবারও বলেন,
-“বিয়ের কথা যখন ওঠেছে,তখন বিয়ে হবে। মেয়ে দেখা শুরু করে দেবো আজ থেকে ।”

-“দাদু,আই লাভ ইউ দাদু।” খুশি হয়ে আলতাফ চৌধুরীর পা ধরে বলেন।

-“শালা পা ছাড়।” ছাড়াতে ছাড়াতে বলে‌ন।

-“দাঁড়াও দাদু, তোমার পা আরো মালিশ করে দেই।”

-“দে।” আলতাফ চৌধুরী শুয়ে পড়েন।

কিছুক্ষণ পর তিনটি গাড়ি বাসার ভিতরে প্রবেশ করেন। বডিগার্ড রা দরজা খুলে দেয়।‌ রুদ্র,অভ্র,শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে ওদের রুমে চলে আসে। রুমে এসে নিজেদের কাঁপড় পালটে স্যুাইমিং পুলে আসে। এসে আলতাফ চৌধুরী ও সাব্বির কে কথা বলতে দেখে । রুদ্র,অভ্র,শুভ্র তাদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল।

রুদ্র হাত তুলে বলে,
-“হাই দাদু।”

-“হ্যালো দাদু।” অভ্র বলে।

-“হাই,হ্যালো দাদু জি।” শুভ্র বলে ।

-“আরে আমার বাঘের বাচ্চা তিন জন। অফিস থেকে এসেছ তোমরা।” মুচকি হেসে বললেন আলতাফ চৌধুরী ।

-“কুত্তার বাচ্চা নি……।” সাব্বির ভ্রু কিঞ্চিৎ বাকা করে বলে।

আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরের কথাটা শুনেই দাঁত কটমট করে ওর দিকে তাকায়।
সাব্বির আমতা আমতা করে বলে,
-“এটা কইছি না,এটা কইছি না। খুব সুন্দর বাচ্চা কইছি।”

তারপরও আলতাফ চৌধুরী কঁপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ।

-“ইয়াপ ।” বলেই রুদ্র স্লিপিং চেয়ারে বসে পড়ে।

-“শাওয়ার নিয়েছো তোমরা?”আলতাফ চৌধুরী বলেন।

অভ্র বলে,
-“না নেই নি দাদু। এখানে নেবো ভাবছি।”

-“তো রেস হয়ে যাক।” শুভ্র বলে।

-“কেন নয়,অবশ্যই ।”রুদ্র বলে।

-“চল তাহলে।” বাকা হেসে বলে অভ্র।

সাব্বির খুশি মডে বলে,
-“আমি বাঁশি বাজাব।”

-“ওকে।” রুদ্র বলেই ওঠে দাঁড়ায়।

ওর সাথে অভ্র,শুভ্র ওঠে দাঁড়ায় । একসাথে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তিন জনে। সাব্বির প্রথম বাঁশিতে ফু দেওয়ার পর ওরা ওদের পায়ের কাছে ঝুঁকে। দ্বিতীয় বাঁশি ফু দেওয়ার পর পরি এক সাথে জাম্প মারে পানিতে। একি সাথে সাঁতার কাঁটছে তিন জনে। আলতাফ চৌধুরী চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে “রুদ্র,অভ্র,শুভ্র” বলে যাচ্ছে। ওপারে গিয়ে তাড়াতারি এপারে আসছে তিনজন। তিন জনে এক সাথেই আছে। তারপর এক সাথেই এপাশে এসে থামে। সাব্বির,আলতাফ চৌধুরী জাগর দিয়ে উঠে। তিন জনেই ফাস্ট হয়েছে। আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“আমি জানতাম তিন জনিই ফাস্ট হবে,কেউ কারো চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।”

রুদ্র, অভ্র,শুভ্র মুচকি হাসে।

-“উঠে এসো,তোমাদের সাথে কথা আছে আমার।” আলতাফ চৌধুরী বলেন।

রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওঠে আসে। নিজেদের জাগায় বসে মাথা তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে অভ্র বলে,
-“হুম বলো দাদু কী বলতে চাও?”

আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“আমি তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চাই।”

কথাটা শুনেই সাব্বিরের মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটে। খুশি হয়ে যায় ও।

অভ্র বলে,
-“দাদু এখন বিয়ে করা সম্ভব নয়। এই টপিক অফ কর।”

কথাটা শুনেই ‘ঠাসস’ করে সাব্বিরের মনের লাড্ডু টা ফেটে যায়। মুখ কালো হয়ে যায় ওর।

-“অভ্র ঠিক বলেছে দাদু। এখন এই বিয়ে করার প্যারা নিতে চাই না।” রুদ্র বলে।

-“আমার কথার কোনো দাম নেই তোমাদের কাছে?”

-“এমন করে বলছো কেন দাদু? আমরা তো এটা বিলিনি যে বিয়ে করব না। করব কিন্তু পরে।” শুভ্র বলে।

-“পরে কবে? আমি মারা গেলে পরে।” কিছুটা ক্ষুপ্ত হয়ে বলেন ।

-“দাদু! এমন কথা আর বলবে না। প্লিজ দাদু ।” রুদ্র বলে।

-“তাহলে বল। তোরা বিয়ে করবি।”

-“হ্যাঁ! করব যাও।”অভ্র বলে।

-“মেয়ে তো খুঁজতে হবে তাই না। ভালো…….।”

শুভ্রকে থামিয়ে আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“সেটা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। মেয়ে ঠিক বা খুঁজার দায়িত্ব আমার আর সাব্বিরের। কিরে সাব্বির তাই না।”

-“হুম,হুম দাদু।” সাব্বির মাথা দুলিয়ে বলে।

-“তাহলে আমরা আর কী বলব। তোমরাই মেয়ে ঠিক কর।” কথাটা বলেই রুদ্র চলে যায়।
ওর সাথে অভ্র,শুভ্রও উপরে চলে আসে ।

আলতাফ চৌধুরী তার মনে মনে কিছু একটা ভেবে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। সাব্বির টেরা চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হঠাৎ-ই সাব্বিরের দিকে চোখ পরায় সাব্বির চোখ সরিয়ে নেয়। আলতাফ চৌধুরী চেয়ার ছেড়ে উঠে মুচকি হাসতে হাসতে লাঠি ভর দিয়ে সেখান থেকে চলে যান।

সাব্বির তাঁর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
-“বুড়োর মনে কী চলছে কে জানে?”
.
.
.
.
পিট পিট করে চোখ মেলে তাকায় রিদয়। ওর হাত,পা চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে যায়। একটা পরিত্যক্ত বন্ধ রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে। রুমে আলো বলতে একটা ছোট্ট ডিম লাইট জ্বালান। নিজেকে স্পষ্ট ভাবে দেখা গেলেও আবছা আবছা আলোই বুঝতে পারে এটা একটি পরিত্যক্ত রুম। নিজেকে উনমুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ছাড়াতে পারছে না। মুখে কাপুড় দিয়ে বাঁধা। জোরে চিৎকার করবে তারও কোন উপায় নেই। নিজেকে ছাড়ানো ও মুখ দিয়ে গোঙ্গানির আওয়াজ বের করছে। ওর এই গোঙ্গানির আওয়াজ শুনে একজন বড়িওয়ালা লোক ভেতরে প্রবেশ করেন। তারপর লাইট অন করে রিদয়ের মুখ খুলে দিতেই রিদয় হুংকার দিয়ে বলে,
-“আমাকে এখানে কেন বেঁধে রেখেছিস? তুই কার লোক? তোর বস কে?”

লোকটি কোন উত্তর দিলেন না। সোজা ওর পায়ের কাছে বসে,সিকল পড়িয়ে দিয়ে, খাবারের প্যাকেট ফ্লোরে রেখে হাতের বাঁধান খুলে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রিদয় চিল্লিয়ে লোকটিকে অনেক কিছু বলে। কিন্তু লোকটি তার কথার উত্তর দেয় না। রিদয় ওর হাতের বাঁধান খোলা পেয়ে পায়ের বাঁধানও খুলে ফেলে। খাবার লাথি মেরে ফেলে দিয়ে দরজায় জোরে বারি দিতে দিতে বলে,
-“দজরা খোল। আমাকে বাহিরে যেতে দে। কেন বন্দি করে রেখেছিস আমাকে? দরজা খোল বলছি।”
রিদয়ের কথা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছাল না । তারা তাদের মতো রাউন্ড দিয়ে যাচ্ছে । রিভল বার হাতে নিয়ে।
_________________________________

মুখে পানি নিয়ে এদিক,সেদিন নাড়া চাড়া করছে সিমি। আজকে যে মেলাতে যাওয়া হবে না সেটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে । এদিকে সন্ধ্যের আজান দিল বলে। রিমির এখনো কাজ আছে । বের হতে রাত হবে ওদের সেটা ফোন করে বলে দিয়েছে । কিছুক্ষণ পর নিধি তার ইউনিফর্ম চেঞ্জ করে সিমির বাহুরে হালাক ধাক্কা দিয়ে বলে,
-“চল সিমি।”

সিমি এক রাশ বিরক্তি নিয়ে নিধির পিছু পিছু হাঁটছে। একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসে ওরা দু’জন। বাসায় এসে রান্নার কাজ শেষ করে। রিমি ৪টার সময় বাসায় আছে। এসেই কান ধরে বলে,
-“স্যরি রে। আজকে কাজের চাপ বেশি ছিল। তাই বের হতে পারিনি।”

-“তোর স্যরি নিয়া তুই সর।” অভিমানি স্বরে বলে সিমি।

রিমি সিমির গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
-“স্যরি বললাম তো।”

-“হুহ।”

-“আচ্ছা আচ্ছা শোন,কাল শুক্রবার । আমাদের সবার বন্ধ । কালকে মেলাতে গিয়ে খাব,ঘুরব অনেক মজা করব।রাগ করে না বোন।”

-“যা যা রাগ করলাম না।”

-“গুড। তা আমাদের ধিমি কোথায়?”

নিধি রান্না ঘর থেকে চিল্লিয়ে বলে,
-“আমি এখানে আছি ।”

-“আপনি কী করছেন ধিমি জি?” রিমি নিধির কাছে যেতে যেতে বলে ।

-“আকাম করি।”

-“হ তা তো দেখতেই পাচ্ছি ।”

-“যা সর। দেখতাছোস রান্না করতাছি তারপরও জিগাস আমি কী করি?”

-“লেরি থুক্কু স্যরি। কী রান্না করতাছিস?”

-“ডিম,আলু,শাক।”

-“বাহ! তাড়াতারি রান্না কর। হাত মুখ ধুয়ে আসছি।”

-“যা।”

রাতে এক সাথে খেয়ে ধেয়ে গল্পগুজব করতে করতে ঘুমিয়ে যায় ওরা তিন জন।
.
.
.
থ্রি জি হাউস….

সকালে….

বেলা ১০টা। আলতাফ চৌধুরী টেবিলের উপর চিন্তিত ভাব নিয়ে বসে আছে । সাব্বির তাঁর দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে তাঁর চিন্তার কারনটা কী? কী এত চিন্তা করছেন তিনি?
রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ফোন ঘাঁটছে আর নাস্তা করছে। কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে ওঠেছে ওরা। হঠাৎ রুদ্র ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে আলতাফ চৌধুরীর দিকে একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে ওর দাদুকে প্রশ্ন করে,
-“দাদু কী হয়েছে ? এভাবে মুখ গম্ভীর করে বসে আছো কেন? ”

রুদ্রের কথা শুনে অভ্র,শুভ্রও প্রশ্ন করেন,
-“কিছু হয়েছে কী দাদু?”

-“এত কী ভাবছো শুনি?” ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়েই বলে শুভ্র।

আলতাফ চৌধুরী ছোট নিঃশ্বাস টেনে
বলেন,
-“ভাবছি আজ একবার ফার্ম হাউসে যাব। অনেকদিন হলো যাই না।”

রুদ্র,অভ্র,শুভ্র এবার ওর দাদুর দিকে তাকায়। শুভ্র বলে,
-“আচ্ছা দাদু তুমি সব জানো। তারপরও এটা বলার যুক্তি আমি খুঁজে পাচ্ছি না। ”

-“হ্যাঁ আমি জানি। তারপরও বলছি যাওয়ার কথা । অনেক দিন হলো যাওয়া হয় না। আর আমি একা যাব বলে তো বলিনি। সাব্বির কে সাথে নিয়ে যাব।”

-“না তোমার ফার্ম হাউসে যাওয়ার দরকার নেই।” অভ্র কঁড়া গলায় বলে।

-“কেন দাদু ভাই? আমি তো বলছি সাব্বিরকে সাথে নিয়ে যাব। আর আমার সাথে তো বডিগার্ডও থাকবে।”

-“তারপরও তুমি যেতে পারবে না। আমরা একা ছাড়ব না।” রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে ।

-“আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাতে থাকব না দুপুরে থেকে বিকালের দিকে বাসায় চলে আসবো।প্লিজ দাদু ভাইরা অমত করে না।”কিছুটা আবেগী স্বরে বলেন।

-“ঠিক আছে,যাও। কিন্তু কথার নড়চড় যেন না হয়। বিকালে চলে আসবে।”রুদ্র বলে।

-“হ্যাঁ! হ্যাঁ! অবশ্যই চলে আসবো দাদু ভাইরা।” কিছুটা খুশি হয়ে বলেন আলতাফ চৌধুরী ।

রুদ্র,অভ্র,শুভ্র আর কিছু বলে না। সাব্বির এখন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে আলতাফ চৌধুরীর দিকে। কিছুতেই তাঁর ভাব মুর্তি বুঝতে পারছে না।

-“শালার বুড়োর মনে যে কী চলছে আল্লাহ্ মালুম।”
.
.
.
.
.
.
.
Continue To…..

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part-3.

তিন জনেই কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে ওঠেছে। তিন কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে‌‌ আছে। ঘড়িতে তখন ১১ টা ছুঁই ছুঁই ।
রিমি কপিতে চুমুক দিতে দিতে বলে,
-“অনেক দিন হলো এতিম খানায় যাওয়া হয় না। যাবি আজ?”

-“আজ তো যেতে পারবো না,তবে সামনের সপ্তাহে যাই।” নিধি বলে।

-“হুমম।”

-“আচ্ছা এখন রান্না করতে হবে চল ।” সিমি তাড়া দিয়ে বলে।

-“আজকে তুই রান্না কর। আমরা খাব।” রিমি বলে ।

-“হ্যাঁ! তুই রান্না কর সিমি।”

-“এহহহ্! আইছে। আমি একা রান্না করতে পারবো না।” মুখ ভেংচি কেটে বলে সিমি।

-“জানতাম এই কথা বলবি। আচ্ছা চল। তর্ক করার সময় নাই। রান্না তাড়াতারি শেষ করি। তারপর আবার মেলায় যেতে দেরে হয়ে যাবে।” রিমি বলে।

-“হুমম ঠিক।”

তিন জনে ভেতরে এসে রান্নার কাজে লেগে পড়ল ।
.
.
.
থ্রি.জি হাউস…

কিছুক্ষণ আগেই আলতাফ চৌধুরী সাব্বির কে সাথে নিয়ে ফার্ম হাউসে এসে পৌঁছায়। সাব্বিরের কাছে আলতাফ চৌধুরীর হাব-ভাব দেখে ভালো মনে হচ্ছে না। তাঁর মনে যে কী চলছে সেটা সাব্বির ধরতে পারছে না। খালি সন্দেহ চোখে আলতাফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে থাকে। তাঁর হাতের লাঠিতে ভর দিয়ে ধীরে পায়ে কক্ষে চলে আসলো । সাব্বির একা একা বিড়বিড় করতে করতে বাহিরে এসে দাঁড়াল।

-“বুঝতাছি না,এই দাদুর মনের মধ্যে চলতাছে কী? কী করার চিন্তা করছে? মাথা ঘুরায়,এ সব ভাবতে ভাবতে। ধুর বুইড়া!” বলেই ওর রুমে চলে এলো।
.
.
বিকালের দিকে খাওয়া,দাওয়া সেরে মেলায় যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলো । তিন জনেই এক রঙ ও ডিজাইনের থ্রিপিস পড়েছে। মাথায় মেচ করে হিজাব বেঁধেছে। হালকা সেজেছে। সব কিছুই পারফেক্ট মতো আছে।
-“আমার কিন্তু হয়ে গেছে। তোদের হয়েছে? ” রিমি বলে হিজাবে পিন লাগাতে লাগাতে।

-“আমারও সব কমপ্লিট ।” নিধি আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে বলে।

-“আমিও রেডি।”

-“তাহলে চল।” রিমি বলে।

হাতে ছোট পার্স নিয়ে রুমে তালা মেরে বেড়িয়ে পড়ল তিন জনে।
.
.
.
সাব্বির মুখ ভার করে বসে আছে। তার অবশ্য কারণ আছে। ও’কে বুড়ো কাকু বানিয়ে দিয়েছে আলতাফ চৌধুরী । মুখে আলগা দাড়ি,পরনে ঢিলাঢালা শার্ট,প্যান্ট । মাথায় টুপি । আলতাফ চৌধুরী নিজেও অন্য রকম সাজ সেজেছে।তিনি তাঁর দাড়িতে কলব লাগিয়েছে। পরনে টাইট,ফিট একটি শার্ট,প্যান্ট পড়েছে। আর চোখের মোটা চশমা পরিবর্তন করে মাজারি আঁকারের চশমা পড়েছে । দু’জনকে চেনার উপায় নেই। কেউ বলতেই পারবে না এরা কারা। আলতাফ চৌধুরী আয়নায় শার্টের হাতা বোল্ড করতে করতে বলে,
-“বুঝেছিস সাব্বির, আমার নাতি দের জন্য নাতিবউ খুঁজতে হবে সুন্দর দেখে। আর নিশ্চয় তাদের মন ভালো হতে হবে। গরিব হোক সমস্যা নেই।কিন্তু অহংকার থাকতে পারবে না তাদের মধ্যে হুম।”

সাব্বির করুন স্বরে বলে,
-“সব ঠিক আছে দাদু,কিন্তু তুমি আমারে এমন সাজ সাজিয়েছো কেন? আমাকে দেখতে পুরাই কাকু,কাকু লাগে।”

-“লাগুক,সমস্যা নেই। আমি তো চাই,আমাদের কেউ চিনতে না পারে। এখন আয় চল।”

-“কোথায় যামু দাদু?”

-“গেলে দেখতে পারবি।তবে হ্যাঁ! এই কথা কিন্তু রুদ্র,অভ্র,শুভ্রকে জানাবি না। ওরা জানলে আমাদের রফা,দফা করে দেবে।”

-“কমু না,কিন্তু যামু কই হেইডা কও?”

-“গাড়িতে ওঠে বসি চল। পরে দেখবি কোথায় যাই।”

কথাটা বলেই সাব্বিরের হাত ধরে ধীরে পায়ে হাঁটতে লাগলো। সাব্বির প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তাঁর দিকে। মাথায় প্রশ্নরা জেঁকে বসেছে । বাহিরে বডিগার্ড রা পাহারা দিচ্ছিল । আলতাফ চৌধুরী বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে একজন বডিগার্ডকে ডাক দেয়। বডিগার্ড তার কাছে এসে মাথা নিচু করে চুপ চাপ দাঁড়ায় । আলতাফ চৌধুরী বডিগার্ডের উদ্দেশ্যে বলে,
-“একটা ট্যাক্সি নিয়ে আসো। নো,নো পাল্টা প্রশ্ন করবে না। আমি ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে আসতে বলেছি,নিয়ে আসো যাও।”

বডিগার্ডটি কিছু বলতে গেলেও থেমে গিয়ে আলতাফ চৌধুরীর কথা মতো একটি ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে আসে । আলতাফ চৌধুরী সেই বডিগার্ড এর উদ্দেশ্যে বলেন,
-“দেখো তো আমাদের দু’জন কে চেনা যাচ্ছে কী না?”

আলতাফ চৌধুরীর কথায় বডিগার্ড টি তাদের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। তারপর মাথা এদিক,সেদিক দুলিয়ে না,না বলে।
উত্তর শুনে আলতাফ চৌধুরী কিছুটা খুশি হলেন। মুখে হাসি নিয়ে বডিগার্ড কে বলে,
-“আমরা যে বাসা থেকে এমন ছদ্মবেশে বের হয়েছি এটা রুদ্র,অভ্র,শুভ্রকে বলবে না। কথাটা মনে থাকবে?”

বডিগার্ড বলে,
-“জি স্যার ।”

-“যাও তুমি তোমার কাজ কর ।”

বডিগার্ড চলে গেলেন। আলতাফ চৌধুরী,সাব্বির গাড়িতে ওঠে বসলেন। আলতাফ চৌধুরী গাড়ির ড্রাইভার কে বললেন,
-“শোনো ড্রাইভার? উত্তরা মেলা হয়। সেখানে যাব আমরা ।”

ড্রাইভার আলতাফ চৌধুরীর কথা শুনে গাড়ি চালাতে শুরু করল। সাব্বির এবার ভ্রু কুঁচকে আলতাফ চৌধুরীর দিকে তাকায়।
আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরের চাওনি দেখে বুঝে যায়। তিনি বলেন,
-“তোর কথা মতো মেলাতে গিয়ে নাতিবউ খুঁজবো। তুই কী বলিস?”

সাব্বির ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আগের চেয়ে অনেকটাই অবাক হয়ে হা করে তাকায় তাঁর দিকে ।
আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরের মুখ বন্ধ করে বলে,
-“হারামজাদা মুখটা বন্ধ কর। নয়তো তোর দাড়ি খুলে পড়ে যাবে।”

সাব্বির ওর দাড়িতে হাত দিতে এদিক,সেদিক তাকায়। ওর মনে হচ্ছে ও যেনো খাটের চিপায় পড়ে গেছে। এখনও সবটা ওর কাছে ঘোলাটে লাগছে। দুঃখি হয়ে বসে রইল। আর আলতাফ চৌধুরী তাঁর রঙিন দাড়িতে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে । তিনি মনে মনে খুশি,সেটা তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আধা ঘন্টা পর তারা পৌঁছে গেল। আলতাফ চৌধুরী ট্যাক্সির ভাড়া দিল, দু’জনে দাঁড়িয়ে মেলার আশে পাশের পরিবেশটা পর্যবেক্ষন করছে। বড় এড়িয়া জুড়ে মেলা বসেছে। খাবারের দোকান,কেটা,কাটার জন্য অনেক জীনিস সামগ্রি বসেছে। আসে,পাশে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়েদেরও দেখা যাচ্ছে। আলতাফ চৌধুরী খুশিতে গদগদ করে বললো,
-“ওহ! আজ মেয়ে তিনটিকে ধরবোই।”

সাব্বির ঠাস করে ঘাড় ঘুরিয়ে হা হয়ে আলতাফ চৌধুরীর দিকে তাকান। আলতাফ চৌধুরী কথা ঘুরিয়ে আমতা আমতা করে বলেন,
-“না মানে খুঁজবোই।”

সাব্বির স্বাভাবিক হয়ে গেল।

-“সাব্বির শোন,তুই ওই দিকটায় যা। আমি এই দিকটায় যাচ্ছি । যদি কোনো সুন্দরী মেয়েদের দেখিস বয়ফ্রেন্ড ছাড়া,তাহলেই আমাকে ফোন দিবি। মনে তাকবে?”

-“হ দাদু ।”কিছুটা আহত কন্ঠে বলে সাব্বির।

-“তাহলে যা। আমি গেলাম।”

বলেই ধীরে পায়ে তাঁর লাঠি ভর দিতে হাঁটা শুরু করল। সাব্বির কান্নার ভান করে বলে,
-“আগে যদি যানতাম রে বুইড়া,তাহলে আমি তোমার সাথে আইতামি না।”

বিরক্তি নিয়ে হাঁটছে সাব্বির । কিছুক্ষণ পর এদিক,সেদিন হাঁটতে হাঁটতে সাব্বিরের মনটা ভালো হয়ে যায়। এখন নিজেই ইনজয় নিচ্ছে মেলার।
.
.
.
রিমি,নিধি,সিমি ওরা আধা ঘন্টা হলো মেলায় এসেছে। নৌকা,চড়কগুল্লায় উঠে। এখন নিজেদের মতো এদিক,সেদিক ঘুরাফেরা করছে। হাতে হাওয়াই মিঠাই নিয়ে খেতে খেতে হাত ধরে হাঁটছে তিন জন। হুট করে রিমি থেমে যায়। ইশারা করে সামনের দিকে দেখিয়ে বলে,
-“দেখ কত জোড়া শালিক।”

নিধি,সিমি তাকিয়ে দেখে কিছু কাপল’স গাছের নিচে হাত ধরে বসে আছে। আবার কেউ তার প্রিয় ভালোবাসার মানুষটিকে এটা,ওটা খাইয়ে দিচ্ছে। নিধি চোখ সরিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এগুলা দেখলে মন চাই একটা প্রেম করি।”

-“আমারও মন চায়।” সিমি আহত কন্ঠে বলে।

-“আজ ‘বাবু খাইছো’ নাই বলে।” রিমি ছোট নিশ্বাস ফেলে বলে।

রিমির কথা শুনে সিমি,নিধি জোরে জোরে হাসতে লাগলো। রিমিও হাসছে।

সিমি হাসতে হাসতে বলে,
-“ঠিক বলেছিস রিমি।”

আবারও হাসতে লাগলো তিন জনে।
এদিকে আলতাফ চৌধুরীর কাছে যে মেয়েকে ভালো লাগছে সেই মেয়ের ছবি তুলছে আড়াল থেকে । ভাগ্যেস কেউ দেখছে না।
.
রিমি,সিমি,নিধি একটি বড় দোকানে ঢুকে । সেই দোকানে মাটি,কাঁচের,চাচের অনেক জীনিস ছিল। ওরা ঘুরে ঘুরে দেখছে। ওদের কাছে খুবি ভালো লাগছে। আশেপাশে আরো মানুষ জনও ছিল। সাব্বিরও ঐ দোকানাটাই প্রবেশ করে। এই দোকানে অনেক গুলো মেয়েছিল। তাই সাব্বির দেরি না করে আলতাফ চৌধুরীকে ফোন দেয়।

আলতাফ চৌধুরী অন্য একটা মেয়ের ছবি তুলছিল। ঠিক তখনি ফোন আসার কারণে বেশ বিরক্ত হয়। ফোন রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করে।
-“কী হইছে তোর?”

-“আরে দাদু,তুমি কই?”

-“কেন? কী হয়েছে?”

-“তুমি এখান কার একটা দোকা……।”

বাকিটা বলার আগেই সাব্বির কে একটা মেয়ে পিছন থেকে ডাক দিল। সাব্বির কান থেকে ফোন সরিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। এদিকে আলতাফ চৌধুরী হ্যালো,হ্যালো করতে করতে রেগে ফোন কেটে দেয়। মেয়েটির সাথে আরো দুটি মেয়েছিল।সাব্বির সুন্দর করে বলে,
-“হ্যাঁ! আপু কিছু বলবেন?”

-“জি কাকু বলবো।”

কাকু ডাকটি শুনেই সাব্বিরের বুকে ঠাসস করে তীরের মতো কাটা ফুটে। তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
-“বলেন।”

-“আপনি কী এই পুতুলটি একটু ধরবেন? আমি একটু ওয়াশরুমে যাব।” মিষ্টি করে বলে মেয়েটি।

এতটাই মিষ্টি করে বলেছে যে সাব্বির আর কিছু বলতে পারল না। মৃদু হেসে বলে,
-“দেন আপু। আমার কাছে দেন।”

-“ধন্যবাদ কাকু ।” বলেই তাড়াতারি মেয়েটি কাঁচের পুতুলটি সাব্বিরের হাতে দিয়ে দোকান থেকে হুরমুড় করে বেড়িয়ে যায়। সাব্বির পুতুলটি হাতে নিয়ে সেখানের একটি চেয়ারে বসে থাকে । প্রায় পাঁচ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু মেয়ে তিনটি এখনো ফিরে আসছে না। সাব্বিরের বিরক্তি লাগছে। পুতুলটি না দিয়েও দোকান থেকে বের হতে পারছে না। এদিকে দোকানের মালিক বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছে । তিনি বোধ হয় ভাবছে সাব্বির পুতুলটি নিয়ে পালিয়ে যাবে। বিরক্তি মাখা ফেস নিয়ে সাব্বির পুতুলটি দোকানদারের কাঁচের টেবিলের উপর রাখে। একটু জোরেই রাখে। সাথে সাথে পুতুলটির মাথা ভেঙ্গে টেবিলের উপর পড়ে যায়। ফট করে সাব্বির দাঁড়িয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে পুতুলটির দিকে তাকিয়ে আছে।
সাব্বির এবার বুঝতে পেরেছে মেয়েটি কেন ওর হাতে পুতুলটি দিয়ে পালিয়ে গেছে। এরি মধ্যে দোকানের মালিক এসেই সাব্বিরের কলার ধরে রাগী কন্ঠে বলে,
-“ঐ শালা,অনেকক্ষন ধইরা দেখতাছি তোরে এই পুতুলটি নিয়া দাঁড়াইয়া থাকতে। তলে তলে এমন আকাম কইরা তুই একখানে চুপ চাপ বইসা রইছস?”

সাব্বির ওর কলার থেকে লোকটির হাত ছাড়িয়ে বলে,
-“ভদ্রভাবে কথা কন। আমি কে আপনি জানেন না? আর আসল কথা হলো,আমি এই পুতুলটি ভাঙ্গি নাই।”

-“আব্বে শালা চুরি করে কী কেউ কয়,যে আমি চুরি করছি ।তুইও এমটাই করছস?”

-“কইছি তো আমি এটা ভাঙ্গি নাই। আর ভাঙ্গলেও আমি আপনাকে ক্ষতি পুরন দিয়ে দিচ্ছি।”

-“দে,দে তিন হাজার টাকা নগতে বের কর।”

-“তিন হাজার কেন? আমি আপনাকে দশ হাজার টাকাই দিতাছি।”

-“আগে দে চাড়াম ফুটাবি পরে।”

সাব্বির লোকটির দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে টাকা বের করতে নিলে দেখে মানি ব্যাগ পকেটে নেই। সাব্বির এবার ছোট গোল গিলে বলে,
-“খাইছি লারা,মানি ব্যাগ তো বাসায় রাইখা আইছি। দাদুর জন্য মানি ব্যাগটাও আনতে পারি নাই। এহন কী করমু?”

-“কিরে টাকা দেস না।”

সাব্বির আমতা আমতা করে বলে,
-“আমি মানি ব্যাগটা বাসায় রাইখা আইছি। তবে সমস্যা নাই আমি এখনি দাদু কে কল দিয়া আপনাগো টাকা দিতাছি…..।”

-“ফাইজলামি করছ আমার লগে। ঐ তোরা কই। ধর শালারে। ধইরা ইচ্ছা মতো বানান দে।”

বলতে দেরি সাব্বিরের পিঠে তাল পড়তে দেরি নেই। দোকানের চারজন কর্মচারি ও দোকানদার মিলে গন দোলাই দিল। সাব্বির এত করে বলছে তাদের টাকা দিয়ে দিবে, কিন্তু তার ওর কথা শুনলই না। কিছুক্ষণ পর সাব্বিরকে দোকান থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল। ওর অবস্থা কাহিল। এত দোলাই খাওয়ার পরও মুখে দাড়ি খুলে যায়নি। তার কারণ,সাব্বির উপুড় হয়ে ওর মুখে হাত দিয়ে ডেকে রেখেছিল। পিঠে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে। যার কারণে গুজো দিয়ে হাঁটছে। মান-সম্মান আর কিছুই রইল না। ব্যাথায় কাতর কন্ঠে বলে,
-“ঐ মাইয়া তিন ডারে যদি পাই‌…আল্লাহ গো…গেছে রে আমার পিঠ।”
.
.
.
রিমি,নিধি,সিমি দৌঁড়ে একটি বড় বট গাছের সামনে এসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।এই কাণ্ডটা এরাই ঘটিয়েছে। ঐ দোকানের শো-পিস গুলো রিমি,নিধি,সিমি ধরে ধরে দেখছিল । একটা কাঁচের পুতুল দেখে রিমির খুব ভালো লাগে। পুতুলটি হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিল রিমি। পুতুলটির দাম ছিল দু’হাজার টাকা। দাম দেখেই রিমি হতাশ হয়ে পুতুলটি জাগা মতো রেখে দেয়। ঠিক তখনি সিমি ডাক দেওয়ার ফলে তাড়াতারি ডানে তাকাতেই হাতে লেগে পুতুলটি পড়ে যেতে নিলে রিমি খপ করে পুতুলটি ধরে ।ফেলে। জোরে ধরার ফলে পুতুলটির মাথা ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে তাড়িঘড়ি করে পুতুলটি ধরল। আর সেটাই হলো। রিমি ভয় পেয়ে যায়। ওদের কাছে এখন এত টাকা নেই যে এই ভাঙ্গা পুতুলটি কিনবে। ততক্ষনে নিধি,সিমিও রিমির কাছে এসে দাঁড়ায়। ভয়ের ছাপ লেগে আছে ওদের চেহারায়। কী করবে ভাবছে হঠাৎ খেয়াল হলো সিমির ব্যাগে সুপার গ্লো আছে। ব্যাগ থেকে বের করেই হালকার উপর গ্লো দিয়ে পুতুলটির মাথা লাগিয়ে দিল। ঠিক তখনি সিমির মাথায় একটা প্লান আসে। তখন পাশে কাকু টাইপের একজন মানে সাব্বিরকে দেখে পুতুলটি ধরিয়ে দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। আর সাব্বির যখন পুতুলটি একটু জোরে টেবিলের উপর রাখে তখনি পুতুলটির মাথাটা পড়ে যায়। কাঁচ তো আর গ্লো দিয়ে লাগান সম্ভব নয়। রিমি হাপাতে হাপাতে বলে,
-“বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম রে।”

-“লোকটাই মাইর খাইব রে। যদি দোকানদার দেখে তাহলে।”

-“হ,গন দোলাইও খেতে পারে । বলা তো আর যায় না।”

-“তবে,কাজটা ঠিক হইনি।” রিমি মন খারাপ করে বলে।

-“এ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না রে। আমাদের কাছে টাকা থাকলে ঠিকিই পুতুলটি কিনতাম।” সিমি বলে।

-“হুমম। আচ্ছা যাই হোক,এ সব মনে করে লাভ নেই। চল বাসায় যাই।” নিধি বলে।

-“হ্যাঁ! চল যাই। আর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে। “রিমি বলে।

ওরা গাছের নিচ থেকে হেঁটে মেলা থেকে বের হবে ঠিক তখনি দেখে কিছু ছেলে,মেয়ে মিলে ‌একজন মধ্য বয়ষ্ক লোককে অপমান করছে। লোকটি মাথা নিচু করে তাদের কথা শুনছে । রিমি, নিধি,সিমি ওদের কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগেনি দেখে ওরা একে অপরকে বলে,
-“এই দেখ,এরাই পারে। দেখ,লোকটিকে কিভাবে অপমান করছে।” রিমি বলে।

-“আয় চল ওদের যোগ্য জবাব দিয়ে আসি।” নিধি বলে।

-“চল,চল।”

দেরি না করে ওরা মেয়ে গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-“কী হয়েছে আপু,ভাইয়া রা? আপনারা আমাদের দাদুকে অপমান করছেন কেন? ” রিমি বলে।

-“কী করেছে আমার দাদু?” নিধি বলে।

এখানের একটি মেয়ে বলে,
-“আপনার দাদু বেহায়ার মতো আমাদের ছবি তুলছিল। আমরা এটা দেখে তাকে বলতেই তিনি মাথা নিচু করে নির্লজ্জের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ”

-“চুপ করুন। একজন দাদার বয়সি লোককে এমন কথা বলতে বিবেক এ বাদে না।”

মেয়েটি বলে,
-“বিবেকে বাদবে কেন? যা বলেছি সত্যি বলেছি ।”

-“সত্যি কিভাবে হয়। আমার দাদু এমন কাজ করতে পারে না। দাদু তোমার ফোনটা দেও তো।” বলেই রিমি আলতাফ চৌধুরীর ফোনটা নিয়ে গ্যালারিতে গিয়ে দেখে একটি ছবিও নেই । রিমি মেয়েটির সামনে ফোনটা ধরে বলে,
-“দেখেন তো একটাও ছবি আছে কি না। ভালো করে চেক করে দেখেন।”

মেয়েটি রিমির হাত থেকে ফোনটি নিয়ে গ্যালারি চেক করে দেখে । একটি ছবিও নেই! অবাক হয়ে যায় মেয়েটি।

রিমি ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে মেয়েটিকে বলে,
-“ছবি তো ছিল বাহানা। কিভাবে লোকদের অপমান করতে হয় সেটাই শিখেছো তোমরা। লজ্জা করে না,এমন একজন বৃদ্ধ লোককে সবার সামনে অপমান করতে?”

মেয়েটি মাথা নিচু করে রিমির কথা শুনছে।
নিধি বলে,
-“এই বৃদ্ধ লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখ। তোমার দাদুর মতো দেখায় তাকে।”

সিমি বলে,
-“কাউকে যদি সম্মান নাই করতে পারো তাহলে অপমান করো না।” দাদু চলো।

সিমি আলতাফ চৌধুরীর হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসিয়ে দিল। আলতাফ চৌধুরী মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিমি,নিধি,সিমির দিকে। তার মন নাড়া দিয়ে উঠল। যাদের খুঁজতে এসেছিল? পেয়ে গেছেন তিনি ।
-“দাদু তুমি কী একা এই মেলাতে এসেছো?” রিমি বলে।

আলতাফ চৌধুরীর মৃদ হেসে বলে,
-“তোমাদের ধন্যবাদ।”

-“আরে ধন্যবাদ ছাড়ো। বল তুমি মেলায় একা এসেছো কি না?”

-“না,সাথে একজনকে নিয়ে এসেছিলাম। ও’কে আমি হারিয়ে ফেলেছি । ”

-“তাহলে ফোন দেও?” নিধি বলে।

-“আচ্ছা।” আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরকে ফোন দিল। সাব্বির পায়ে হাত রেখে খোড়াতে,খোড়াতে হাঁটছে। চেহারার নকশা কিছুটা পাল্টে গেছে। কিন্তু গালের দাড়ি এখনো অক্ষয় রয়েছে।

-“ছেঁমড়ি কয়ড়ারে পাইলে,খরবি আছে। এ্যা,,,এ্যা,,,এ্যা। শালার কেমন ধোলাই না দিল। তোগো মনে মায়া-দয়া নাই। কুফা দিলাম, শালা তোগো একটারও বিয়া হইবো না।”

ফোন বেজে উঠল সাব্বিরের। পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে কানে দেয়।
-“হ দাদু কও?”

-“তুই কই?”

-“আছি,টাট্টির সামনে।”

-“টাট্টি?”

-“আরে বাথরুম,বাথরুম।”

-“শালা সেখানে কী মেয়ে খুঁজতে গেছিস?”

-“বইয়া কাম নাই,ভাত চাইয়া নাম কামাই।‌ বালের মাইয়া।” বিরক্তি নিয়ে ঝাঁড়ি দিয়ে বলে সাব্বির ।

-“কী বললি?”রেগে।

-“কিছু না। কও তুমি কই আছো?”

-“মেলার বড়ো বট গাছটার নিচে বেঞ্চে বসা।”

-“খারাও,আইতাছি।”

-“হারামজাদা।”

-“আবার কী হইলো?”

-“তুই জানস আমার হাঁটুতে ব্যথা,তারপরও দাঁড়াতে বলিস।”

-“ওরে মাবুত,ওরে মাবুত,ওরে মাবুত,,,।” উপরে তাকিয়ে বলে সাব্বির । “দাদু,তুমি ঐখানে বহো,আমি আইতাছি।”

-“হ,তাড়াতারি আয় ।”

ফোন কেঁটে দেয় সাব্বির । পা দিয়ে খোড়াতে খোড়াতে হাঁটতে লাগলো ।
.
.
রিমি আলতাফ চৌধুরীকে বলে,
-“দাদু,অনেক দেরী হয়ে গেছে । আমরা এখন বাসায় যাই ।”

-“হ্যাঁ! দাদু আমাদের এখন বাসায় যেতে হবে। আপনি এখানে বসে থাকের আর সে তো আসছেই।”নিধি বলে ।

-“আরেকটু বোসো তোমরা। আসলে তোমাদেরকে খুব ভালো লেগেছে । আর নামটাও জানা হলো না তোমাদের।”

-“আমার নাম রিমি,ওর নাম নিধি,আর ওর নাম সিমি ।”

-“বাহ! বেশ সুন্দর নাম। রিমি,সিমি,নিধি। তা তোমাদের ভাই বোন কয়জন? আর তোমার বাবা কী করে?”

-“দাদু আমরা এতিম। এতিম খানায় বড় হয়েছি।”
রিমি কিছুটা মন খারাপ করে বলে।

-“স্যরি। আমি জানতাম না।”

-“না দাদু সমস্যা নেই। স্যরি বোলো না।” নিধি হেসে বলে।

-“তোমরা খুব ভালো। আসো তোমাদের সাথে একটা ছবি তুলি?”

-“ঠিক আছে।” সিমি বলে।

তিন জনে মিলে সেলফি তুলে। এরি মাঝে সাব্বির এসে উদয় হয়। রিমি,নিধি,সিমি কে দেখেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। রিমি,সিমি,নিধিও সাব্বির কে দেখে ছোট্ট ধাক্কা খায়। ওদের চোখও কিছুটা বড় আঁকার ধারন করে। সাব্বির আঙুল তুলে ওদের সামনে এসে বলে।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……