#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সিজন-২
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
১৩
চারিদিকের কোলাহলেও মাঝে মাঝে শান্তির আবাস থাকে। আজ বুঝতে পেড়েছে কুহু। ইউসুফের সাথে সে এসেছে এক পার্টি এটেন্ড করতে। প্রথম প্রথম মহা বিরক্তিতে কঁপাল কুঁচকে ছিল কুহুর। কিন্তু কিছু মুহূর্ত আগের ঘটনায় সব পালটে দিলো। কুহু কাপল ডান্স করতে যানে না। পার্টিতে আসা প্রতিটি কাপেল যখন ডান্স ফ্লোরে যাচ্ছে! কুহু তখন অস্থির আর বিরক্তি নিয়ে এদিক-ওদিক চোখ বুলাচ্ছে। মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে বলছে, কেন এলি? এই হাই সোসাইটির মানুষ গুলো তোর জন্য নয়! একদম না! উহু।
কুহুর বিরক্তি যখন হুরহুর করে বাড়চ্ছে। ঠিক তখনি তাতে গরম তেল ঢালতে উপস্থিত হলো পৃধা।কুহুকে তাচ্ছিল্যের চোখে তাকিয়ে দেখে মুখ বাকিয়ে নাক উঁচিয়ে বলল,,
—” শাড়ি? তোমার রুচির সাথেই যায়! একবার চারপাশ দেখে নিজের দিক একটু চোখ বুলালেও তো পার্থক্যটা চোখে পড়ে। উপস্ তোমার তো আবার সেই চোখ-ও নেই? তবে বলতে হবে! লাইফে সব থেকে বড় জিনিস জিতে নিয়েছো তুমি! ইন্টেলিজেন্ট গার্ল!”
পৃধার তিক্ত কথায়। মনটা খুব ক্ষুন্ন হলেও। নিজেকে সামলে নিলো কুহু। যেখানে সেখানে সে রাগ দেখায় না। আবার সব জায়গায় রাগ করে লাভের বদলে ক্ষতিটা বেশি। এর এখানে নিজের বাক্য ব্যয় মানে উলুবনে মুক্ত ছড়ানোর মত। কুহু এবার পৃধার দিক তাকালো। অর্ধ নগ্ন বুক খোলা একটি ব্ল্যাক ড্রেস পড়ে আছে। মাথার চুল গুলো পাখির বাসার মতো করে উপরের দিক তুলে রেখেছে। আচ্ছা? এটাকে কি রুচিসম্মত গেটাপ বলে? তাহলে কুহু খুব খুশি এমন রুচি তার নেই। কুহু এবার পৃথার দিক পুরো দৃষ্টি মেললো। মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,,
—” আপু! কেউ দামি দামি বেশভুশার কারণে কেউ কাউকে জাজ করে না আপু। সকলেই তার কর্মে পরিচিত হয়। আর আপু আপনি নিজেকে একবার দেখুন তো! নির্লজ্জের মতো নিজের গোপন অঙ্গ বের করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন? এটা কি খুব রুচি সম্মতো? তার থেকে আমার শাড়িই ভালো! আমার রুচিসম্মত হতে হবে না।”
কুহুর কথায় বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইলো পৃথা। মাথায় তখন ধপ ধপ করে চলছে “নির্লজ্জ” শব্দটি। কতবড় সাহস এই মেয়ে পৃথাকে কথা শোনায়? পৃথা কিড়মিড় করে তাকালো। মুখটা নাটকীয় ভাবে কুচঁকে কিড়মিড় করে বলল,,
—” হাউ ডেয়ার ইউ? আমায় তুমি নির্লজ্জ বললে? আমি দেখে নিবো তোমায়! ওয়েট এন্ড ওয়াচ!”
কুহু হাওয়ায় মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে তুলে বলল,,
—” অপেক্ষায় থাকবো আপু।”
পৃথা তার চোখ জোড়া দিয়ে গিলে ফেলবে এমন ভাব করলো কিছুক্ষণ। নিজে নিজেই বিড়বিড় করে ধপাধপ পায়ে চলে গেলো কুহুর সামনে থেকে। কুহুর সেই বিরক্তিটা এখন বিস্বাদ লাগচ্ছে। এই হল রুমের হওয়াটুকু যেন বিষাক্ত মনে হচ্ছে। কুহু অস্থির হয়ে চোখ বুলালো। তখনি কানের কাছে ভেসে এলো গিটারের টুংটাং শব্দ। খানিকটা অবাক হয়ে কুহু তাকালো তখন হলের মধ্য বিন্দুতে। ইউসুফ গিটার কাঁধে ঝুলিয়ে টুং টাং সুর তুলে তাকিয়ে আছে কুহুর দিক। কুহুর এবার বিস্ময়ে চোখ বেড়িয়ে আসতে চাইলো। ইউসুফ যেন তাকে সেই সময়টুকু-ও দিলো না। গম্ভীর ভরাট আর চমৎকার স্বরে গেয়ে উঠল
Hamein tum se pyar kitna ye hum nahin jaante
Magar jee nahin sakte tumhaare bina
ইউসুফ মাদক চাহনিতে এগিয়ে এলো কুহু কাছে খুব কাছে। কুহুকে আজ লাল খয়েরী শাড়িতে মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগচ্ছে। মাঝে শিঁথি করে খোপা করে লাল গোলাপ গুঁজেছে। সামনের কাঁটা চুল গুলো অযত্নেই বের হয়ে এসেছে। কুহুর কাঁধের কালো কুচকুচে তিলটি আরো জলজল করছে। ইউসুফ কুহু মুখোমুখি দাঁড়ালো। কুহুর চোখে চোখ রেখে ফু দিলো কুহু মুখে। আবেশে বিস্মিত চোখ জোড়া বুঝে নিলো। কুহুর এমন ভাবে চোখ বুঝায় ইউসুফের ঠোঁটা বাঁকা হাসি ফুটলো। কুজুর দিক ঝুঁকেই গানের পড়ের অন্তর গুলো শুরু করলো…
suna gham judaai ka uthaate hain log
jaane Zindagi kaise bitaate hain log
Din bhi yahaan to lage baras ke samaan
hume intezaar kitna yeh hum nahin jaante
Magar jee nahi sakte tumhaare bina
কুহু চোখ মেলে চাইলো। তার চোখে, মুখে, ঠোঁটে কেমন কেমন হাসি। ইউসুফের মাথা খারাপ করার মতো হাসি। এ হাসিতে কতশবার ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলতে রাজি। ইউসুফ এবার গিটার রেখে কুহুকে টেনে নিলো বুকের মাঝে। হলে মধ্যবিন্দু হয়ে কুহু নিয়ে নাচতে লাগলো। তাদের সাথে জোগ দিলো আরো কিছু যুগল। ইউসুফ তখন কুহুকে ঘুড়িয়ে তার বুকের সথে কুহু পিঠ ঠেকালো। কোমোরের মাঝে হাত দুটো বেঁধে সুন্দর কুহুর কানের কাছে মুখ নিয়ে আবার গাইলো,,
tumhein koi aur dekhe to jaltaa hai dil
baDi mushkilon se phir sambhalta hai dil
kya kya jatan karte hain tumhein kya pataa
ye dil beqaraar kitna ye hum nahin jaante
Magar jee nahi sakte tumhaare bina
গান আর সুন্দর ডান্স প্রদর্শনের শেষ হতেই চারিদিকে সকলের প্রশংসার কলরব পড়লেও। সেদিকে পাত্তা দিলো না ইউসুফ কুহু হাত জোড়া নিজের হাতে পুরে বের হয়ে গেলো পার্টি থেকে। কুহু ইউসুফের দিক বিরতিহীন ভাবেই তাকিয়ে আছে সেই কখন থেকে। ইউসুফ আজ ব্ল্যাক কালার সুটের সাথে ড্রার্ক রেড শার্ট পড়েছে। শরীরে শুভ্র রং যেন ঝিলিক দিচ্ছে। কুহু কাতর চোখে তাকিয়ে আছে ইউসুফের প্রতিটি কাজে। মনের মাঝে ঘন্টার মতো বেজে চলছে “ইউসুফ তোর অর্ধাঙ্গ”। যতবার কানের মাঝে বাজে ততবার শরীরে কেঁপে কেঁপে উঠে। লোম দাঁড়িয়ে যায়। মন তখন খুব কাছে পেতে চায় ইউসুফকে। এতটাই কাছে যদটা কাছে এলে শ্বাসরুদ্ধ হয়। অসহ্য ভালো লাগা লেগে থাকে ঠোঁটের কোনে।
মাঝে মাঝে ইউসুফকে বড্ড অবুঝ মনে হয় কুহুর কাছে। যার জন্য মনের কোনে একটু একটু করে ঘর বানচ্ছে! সে কি যানে না, সে কি বুঝে না? তার বাবুইপাখি চায় তাকে। খুব করে চায়। একান্ত নিজের করে পেতে। কিন্তু আফসোস সে ব্যর্থ হয় গলায় দলাপাকিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে কথা গুলো তার। আচ্ছা কুহু কি কখনোই তাকে বলতে পারবে? বুঝাতে পাড়বে? সে বলতে পাড়বে তার ভালবাসার কথা??
চলবে,