#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#Part_11
বিয়ের কথা শুনতেই, আহিল একদৌড়ে রায়হানের পায়ের নিচে এসে ঝাপিয়ে পড়ে। কান্না করতে করতে বলে,,,,, আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না কাকা, আমাদের চার বছরের সম্পর্ক। আপনি এইভাবে শেষ করে দিয়েন না,,,,,কথা গুলো একনাগাড়ে বলে রায়হানের পা ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করছে আহিল।আহিলের এই কান্না দেখে রায়হানের কিছুটা খারাপ লাগছে। তাই আহিল কে পায়ের কাছ থেকে তুলে, তিশার দিকে তকিয়ে দেখে তিশাও খিচকি তুলে কান্না করছে। তিশার কান্না যেনো রায়হানের বুকে গিয়ে লাগছে। মানুষ যতোই খারাপ হোকনা কেনো নিজের সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসা থাকে অগাধ।রায়হান তিশার দিকে এগিয়ে গিয়ে তিশাকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়,,,,, তিশা বাবার বুকে মাথা রেখে আরও জোরে কান্না শুরু করে দেয়। আহিলও পাশে দাড়িয়ে আছে, তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে তার প্রেয়সীকে হারিয়ে ফেলবার ভয়ে। রায়হান তিশার মাথাটা বুক থেকে তুলে আবার বলতে শুরু করে,,,,,
__যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে , এখন আর কান্না করে কোনো লাভ নেই।তুমি আমার মেয়ে, আমি তোমার জীবনটা উচ্ছনে যেতে দিতে পারি না।কিছুতেই আমি তোমার বিয়ে আহিলের সাথে দিবো না। তোমার জন্য আমি ভালো শিক্ষিত বড়োলোক দেখে একটা ছেলের ব্যবস্তা করবো। আহিলের কি আছে শুনি, নিজেদের ভালো করে একটা ঘর নেই আমাদের যায়গায় ঘর ওঠিয়ে থাকছে আর তুমি এই দু’পয়সার ছেলের সাথে বিয়ে করার কথা মাথায় আনলে কি করে! অবশ্য তোমার শরীরে তো আমার পাশাপাশি মীরার ও রক্ত বয়ছে, তাই ওর মতো তোমার রুচি ও নিচু হয়ে গিয়েছে। কিন্ত আমার রুচি এখনো এতটা নিচু হয় নায় যে আমার মেয়েকে আমি আহিলের মতো একটা ছেলের হাতে তুলে দিবো। এই এক সপ্তাহের ভিতরে আমি তোমার বিয়ে দেবো, এতে তোমার মা ও আমাকে বাধা দিতে পারবে না। আমি যেই ডিসিশন নিয়েছি তা-ই ফাইনাল।
রায়হানের মুখে এই দু’পয়সা ছেলে কথাটা শুনে আহিলের যেনো কান্না বন্ধ হয়ে এলো, সত্যিই তো সে দু’পয়সার ছেলে। তার শহরে একটা থাকার যায়গা নেই, বাড়িতেও নিজেদের কোনো যায়গা নেই, তিশাদের যায়গায় ঘর উঠিয়ে এত দিন ধরে আছে। আর তিশা কোথায় রাজকন্যা, তার বাবার এতো এতো সম্পত্তি,শহরে কয়েকটি বাড়ি, এবং ব্যাংক ব্যালেন্স। কিন্তু আহিল তো তার বাবার সম্পত্তি পাওয়ার জন্য তিশাকে ভালোবাসেনি। তাহলে কেনো সে তার প্রয়সীকে হারাবে,,,
__কিন্তু,,,, আব্বু আমিতো আহিল কে ভালোবাসি!আমি অন্য কাওকে বিয়ে করতে পারবো না, বিয়ে করলে আমি আহিলকেই করবো আর না হলে আমি সারাজীবন কুমারী থাকবো। তাও আমি অন্য কাওকে বিয়ে করতে পারবো না।
__তুমি বিয়ে করবে না তোমার গাঁট করবে বিয়ে, আমার কথার যেনো কোনো নড়চড় না হয়।আর যদি হয় তাহলে তুমি আমার মরা মুখ দেখবে,, আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে তুমি, শুধু তুমি,,,,
__আব্বু,,,,, আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না,,,
__তো করে ফেলো ওকে বিয়ে, বাবার মরা লাশের ওপর দিয়ে গিয়ে।
তিশা আর কিছু বলতে পারলো না, একটা মেয়ে সবসময় অসহায়, কখনো তার ভালো বাসার কাছে। আবার কখনো তার পরিবারের কাছে। তিশা কান্না করতে করতে ছাদ থেকে নিচে চলে আসে। আহিল এখনে আগের যায়গায় দাড়িয়ে আছে তার পা যেনো নড়তেই চাইছে না। চোখ দিয়ে পানি পরছে, কে বলে যে পুরুষ মানুষ কান্না করতে পারে না! পুরুষ মানুষ কখনোই তার প্রিয় নারীর পাশে অন্য পুরুষকে সহ্য করতে পারে না। আহিলের মন অজানা ভয়ে বার বার কেঁপে ওঠছে, সে তার প্রেয়সীকে কি হারিয়ে ফেলবে,,,,
আহিলের এই নিরবতা দেখে রায়হান আহিল কে বলে,,,,
__কাল কে সকালের মধ্যে তুমি এ-ই বাসা ছেড়ে চলে যাবে । আমি যেনো সকালো ওঠে তোমার মুখ না দেখি। আর আমার মেয়ের আশেপাশে আসবার চেষ্টা ও করো না, তাহলে এর ফল কিন্তু বেশি একটা ভালো হবে না। এই আমি বলে দিলাম,,,,
কথা গুলো বলে রায়হান ও নিচে চলে যায়। আকাশের অবস্থা বেশি একটা ভালো না মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে,,, আহিল এখনো স্থীর হয়ে দাড়িয়ে আছে। গরিব হওয়াটা কি আসলেই অপরাধ! যদি আজকে আমার কাছেও টাকা পয়সা, বাড়ি গাড়ি থাকতো তাহলে কি তিশার আব্বু আমাকে এই ভাবে অপমান করতে পারতো! এইসব ভেবে কান্না করছে আহিল, এরি মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। আহিলের কোনো হেলদোল নেই বৃষ্টিতে সারা শরীর ভিজে গছে। আহিলের চোখের পানি,আর বৃষ্টির পানি মিশে একাকার।
,,,,,,
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে, রেডি হয়ে নাস্তা তৈরি করছেন সায়ান।এটা তার রোজকার ডিউটি,সকালে ঘুম থেকে ওঠে শাওয়ার নিয়ে তারপর নাস্তা তৈরি করে খাওয়া দাওয়া সেরে অফিসে যায়। সে একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে জব করে, বেতনও মোটামুটি ভালো। তার এই দুনিয়াতে আপন বলতে কেও নেই, সায়ান এর জন্মের আগেই তার বাবা মারা যায় আর তার মা কিছুদিন আগে রোড এক্সিডেন্ট করে মারা যায়। সে তার বাবা মার একমাএ সন্তান,। নিজেদের একটা ফ্ল্যাট আছে, যেটাতে সায়ান থাকে। বয়স ও অনেকটা হয়ে গিয়েছে কিন্তু এখনো বিয়ে করে নাই। তার মা বেঁচে থাকতে এতো করে বলেছেন বিয়ে করার কথা, কিন্তু তার মধ্যে বিয়ের জন্য কোনো আগ্রহ নেই।ছেলে যে দেখতে খারাপ এমন না,, উচ্চতায় পাঁচ ফুট আট, ফর্সা গায়ের রং,স্ট্রেইট হেয়ার, সিগারেট খাওয়ার জন্য ঠোঁট গুলো কিছুটা কালো,জিম কর বডি সব মিলিয়ে এক সুর্দশন যুবক। সায়ন আর সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে, নাস্তা সেরে বেড়িয়ে পরে অফিস এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে।রাস্তায় আসতেই বাজে একটা বিপত্তি, রাস্তায় একটাও রিকশা নেই আজকে, তাই হেঁটেই অফিসে যেতে হবে । হেঁটে গেলে বিশ মিনিটের মতো লাগবে, তাই সায়ান হাটা শুরু করলো। রাস্তায় আনমনে হাটতে হাটতে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যায় সায়ান। সাদা শার্ট পরে থাকায় কাঁদা পানিতে সায়ানের শার্টের অবস্তা নাজেহাল। এই শার্ট নিয়ে কিছুতেই অফিসে যাওয়া যাবে না। সায়ানের মনটা সাথে সাথে খারাপ হয়ে যায়, একরাশ বিরক্তি নিয়ে পাশে পরে থাকা মেয়েটার দিকে তাকায়। তাকাতেই সায়ান আর চোখ ফিরাতে পারছে না,,, আরে এটাতো ওইদিনের সেই মেয়েটা!
______
আজকে রায়হানের ঘুম থেকে ওঠতে অনেক দেরি, হয়ে গিয়েছে। ঘুম থেকে ওঠে রায়হান ফ্রেশ হয়ে, নিচে আসে নাস্তা করার জন্য। নিচে এসে দেখে কেও নেই ডাইনিং টেবিলে। তারপর তিশার নাম ধরে ডাকতেই মীরা আসে রায়হানের কাছে।
__কি হয়েছে তিশাকে ডাকছো কেনো!
__তিশা কোথায়! আর আহিল কি এখনো আছে নাকি চলে গেছে!
__আহিলতো কোন সকালেই চলে গেছে, আর তিশা কিছুখন আগে তার বান্ধবীর বাসায় গেছে।
__কি,,, তিশা তার বান্ধবীর বাসায় গেছে! তুমি ওকে যেতে দিলে কেনো।
__বান্ধবীর বাসায় যাবে আমি ওকে আটকাবো কেনো”!
__মেয়ে যে বড় হয়েছে, সে দিকে কি খেয়াল আছে! কার সাথে মিশছে, কখন কি করছে সে দিকে তোমার কোনো খেয়াল নেই, অবশ্য থাকবে কি করে, যে মহিলা নিজেই ভালো না, সে তার মেয়েকে আর কি শিক্ষা দিবে। নিজের মতো নষ্টা তৈরি করতে চেয়েছো।
__কি বলছো,,,,এসব তুমি রায়হান! তুমি আমার শিক্ষার ওপর আঙ্গুল তুলছো, এটা কিন্তু আমি মেনে নিবো না। আমার মতো হয়েছে মানে কি, বোঝাতে চাইছো তুমি!
___কেনো তুমি বুঝতে পারছো না আমি কিসের কথা বলছি! তোমার মেয়ের যে আহিলের সাথে চার বছরের সম্পর্ক তা কি তুমি জানো না । এই তোমার ভালো শিক্ষা! নিজের মতো একদম বানিয়ে ফোলেছো আমার মেয়েকে, নিজেতো একটা ব্যা*,,,,,বলতে গিয়েও থেমে গেলো রায়হান। রাগে তার সারা শরীর হির হির করছে।
__আহিলের সাথে তিশার চার বছরের সম্পর্ক তোমাকে কে বলেছে! ওরা তো ভালো বন্ধু, তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।
__আমার কোথাও ভুল হচ্ছে তাই না,,একেতো মেয়েকে ভালো শিক্ষায় বড়ো করতে পারোনি, এখন আবার সাফাই গাইছে। তোমার মেয়ে মনে হয় আহিলের সাথে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
__ও কখনো তোমার মানসম্মান ডুবিয়ে পালাবে না, তুমি নিশ্চিত থাকো। আর মেয়েকে ভালো শিক্ষায় বড়ো করতে পেরেছি কি না, তা তুমি সঠিক টাইমে দেখতে পারবে। আর ও আহিলের সাথে যায় নাই, আহিল চলে গেছে একদম ভোরে , তিশা গেছে কিছুখন আগে।
রায়হান আর একমুহূর্ত দেরি না করে, মীরার থেকে তিশার বান্ধবীর বাসার ঠিকানা নিয়ে, পার্কিং থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয় তিশার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।রায়হান গাড়ি নিয়ে মাঝ রাস্তায় আসতেই রায়হানের মুঠোফোনটি ভেজে ওঠে। স্ক্রীনে মীরার নাম দেখে ভ্রুকোচকায়,,,এখনইতো বাসা থেকে আসলো,তাহলে আবার কল দেওয়ার মানেটা কি!কিছুটা বিরক্তি নিয়ে রায়হান কলটি ধরে,,,,,,
__হ্যালো রায়হান আহিলের মা মায়া আর বেঁচে নেই, ওনাকে কেও মেরে ফেলেছে। তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো আমরা এখন গ্রামে যাবো,,,,
চলবে,,,,,,
#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়ক
#MD_Nachemul_Hasan
#Part_12
” রায়হান আহিলের মা মায়া আর বেঁচে নেই,কে যেনো মেরে ফেলেছে তাকে। আমাদের এখন তাড়াতাড়ি গ্রামে যেতে হবে, মায়াকে আসরের আজানের আগেই দাফন করা হবে। তুমি তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় নিয়ে আসো।আর তিশার চিন্তা করতে হবে না আমি ওকে কল করেছিলাম, ওর বান্ধুবীর বাসায়ই আছে। এখন তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো,,,,,,
__তিশা ওর বান্ধবীর বাসায় আছে, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আর আহিলের মা মায়া মারা গেছে তুমি জানলে কি করে!
__আহিল কল করেছিলো, তুমি বেরিয়ে যাওয়ার পরে। আহিল ই জানিয়েছে যে ওর মা মায়া আর বেঁচে নেই, কেও ওকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে।ছেলেটা কান্নার জন্য কথা পর্যন্ত বলতে পারছিলনা, ওর এই দুঃখের সময়ে আমাদের ওর পাশে গিয়ে দাড়ানো উচিত।
__আচ্ছা আমি আসছি বাসায়,তুমি রেডি হয়ে থাকো।(বলেই রায়হান কলটি কেটে দেয়)
যাক এতখনে মাথা থেকে একটা চিন্তা নামলো। আহিল যেহেতো, গ্রামে আছে তাহলে আমার মেয়ে তিশা ওর বান্ধবীর বাসায় আছে। অবশ্য আমি কখন থেকে ওকে কলে ট্রাই করছি, কিন্ত ও আমর কল তুলছে না। হয়তো আমার ওপর তার অভিমান হয়েছে,,,,
______
“আরে এটাতো ওইদিনের সেই মেয়েটা! ওইদিন ফুচকার দোকানের সামনে দেখে ছিলো,, হ্যা এটাই সেই মেয়ে। যাকে দেখার সাথে সাথে সায়ানের মনে ভিতর ঝর শুরু হয়েছিলো। ধবধবে ফর্সা ত্বক, লম্বা চুল, ঠোঁটের নিচে তিল, হাশিটাতো আরও সুন্দর, হাসলে গালে টুল পরে, এ যেনো সাক্ষাৎ কোনো নায়িকার থেকে কম না।সায়ানের এই ছাব্বিশ বছর বয়সে এই মেয়েই প্রথম যাকে দেখার সাথে সাথে সে প্রেমে পরে যায়।ওইদিন সায়ান অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি করে বাসায় যাচ্ছিলো,, কিন্তু রাস্তায় সিগনাল পরায় গাড়ি থেমে ছিলো। তখন সায়ান এমনিতেই আশে পাশে দেখছিলো,,, আর তখন-ই তার চোখ যায়,,, মেইন রাস্তা দিয়ে দৌড়ে কোনো মেয়ে পার হচ্ছে। সায়ান ভাবলো হয়তো মেয়েটার কিছু হয়েছে তাই,,, আগ্রহ নিয় সে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে।কিন্তু কিছুতেই মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছিলো না। তারপর মেয়েটা দৌড়ে একটা ফুচকার দোকানের সামনে গেলো,, গিয়ে দোকানিকে কি যেনো বলছিলো।তখন ই সায়ান মেয়েটার মুখ দেখতে পায়,,আর সাথে সাথে তার এই পঁচিশ বছর ঘুমিয়ে থাকা ইনোসেন্ট মনটা জেগে ওঠে । মনের ভিতর এক ঝর শুরু হয়, সে শুধু মেয়েটিকেই দেখে যাচ্ছে। এরি মধ্যে সিগনাল ছেড়ে দেই,আর সায়ানের গাড়ি চলতে শুরু করে। সায়ানের গাড়ি কিছু দূরে চলে আসার পর, সায়ান গাড়ি থেকে নেমে পরে। আবার ফুচকার দোকানের সামনে আসে,,, এসেই দেখতে পায়,,,,সেই মেয়েটির সাথে একটি ছেলে দাড়ানো,, আর মেয়েটিকে কি যেনো বলছে।সায়ানের আর বুঝতে বাকি থাকে না, যে ছেলেটা এই মেয়ের বফ। সায়ান তখন একটা ছোটো হাঁটো ছেঁকা খায়। কি আর করার তারপর ফুচকার দোকানের সামনে থেকে চলে আসে।
__এই আপনি দেখে চলতে পারেন না। রাস্তায় হাঁটার সময় চোখ কোথায় থাকে! দিলেনতো আমার জামাটা নষ্ট করে। আমি এখন এই জামা পড়ে বান্দবীর বাসায় জাবো কি করে।
__ধাক্কা আপনি খেয়েছেন, আর আমাকে কথা শোনাচ্ছেন। আপনার জন্য আমার আজকে আর অফিসে যাওয়া হলো না, আমার এতো সুন্দর শার্টটা নষ্ট করে দিলেন। আবার আমাকেই কথা শোনাচ্ছেন। আজিব মেয়ে-তো আপনি!
__কি আমি আপনাকে ধাক্কা দিয়েছি! আমি আজিব মেয়ে! আপনি কি,কালা বিলাই চোখ আকাশে দিয়ে চলে। আবার আমাকে কথা শোনাচ্ছেন, সুন্দর মেয়ে মানুষ দেখলেই শরীরে ঢ’লে পড়তে ইচ্ছে করে। যত্তসব,,,,
__আমি কালা বিলাই!আপনি কি সাদা বিলাই, আর আমি চোখ আকাশে দিয়ে চলি না, সেটা আপনি চলেন। আপনি কোথা থেকে দৌড়ে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন। আর আমি এরকম ছেলে না যে সুন্দর মেয়ে দেখলেই গিয়ে শরীরে ঢ’লে পরবো। আমারতো মনে হচ্ছে আপনার এইসব গায়ে পরা স্বভাব আছে।
__কি আমার গায়ে পরা স্বভাব! নিজেই আমার গায়ে এসে পড়েছেন এখন আমাকে কথা শোনাচ্ছেন!
__আমি আপনাকে কথা শোনাচ্ছি না, আপনি আমাকে কথা শোনাচ্ছেন। একেতো ধাক্কা খেয়ে আমার সুন্দর শার্ট টা নষ্ট করে দিয়েছেন, ক্ষমা না চেয়ে এখন ম্যানারলেস এর মতো ঝগড়া করছেন।
__ আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইবো!আপনি ভাবলেন কি করে!তিশা চৌধুরী কখনো কারো কাছে ক্ষমা চাই না।
তাহলে এই মেয়ের নাম তিশা চৌধুরী, চেহারার সাথে নামটা একদমই যায়নি। কি সুন্দর একটা মেয়ে কিন্তু কথা বলার স্টাইল যা মারাত্মক,,।
__তা আপনার নাম শুনেই বুঝে ফেলেছি। আচ্ছা আপনি এখানেই কাঁদা মাটিতে বসে থাকেন আমি আসছি।
তিশা যেইনা ওঠতে যাবে কোমরের জন্য, আবার বসে পরে। পরে যাওয়ার সময় কমরে ভালো ব্যাথাই পেয়েছে। এখন এই কমর নিয়ে একা একা বাসায় যাবে কি করে। তাই অনথ্যায় সায়ান কে বলে,,,,
__আরে আপনি কি সত্যিই মানুষ একটা মেয়েকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন, সাহায্য না করে আবার চলেও যাচ্ছেন। একটু জিজ্ঞেস ওতো করেন নাই ব্যাথা পেয়েছে কি না!
__ আপনিই তো তখন থেকে আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে যাচ্ছেন, তো আমি জিজ্ঞেস করবো কি করে! আর আমার সাথে যে খারাপ ব্যাবহার করে তাকে আমি কোনো সাহায্য করি না।
__প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করেন! আমাকে বাসায় পর্যন্ত কষ্ট করে একটু দিয়ে আসেন। আমার কোমরটা মনে হয় ভেঙে গেছে । আমি ওঠতেও পারছিনা, প্লিজ,,,, প্লিজ,,,,,
তিশার এইভাবে অনুরোধটা সায়ান আর ফেলতে পারলো না, তাই তিশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,,
__আমার হাত ধরে ওঠার চেষ্টা করুন,,,
তারপর তিশা সায়ানের হাত ধরে ওঠে দাড়ায়, মনে হচ্ছে কোমরটা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে। সায়ানের এক হাত ধরে দাড়িয়ে আছে তিশা।তারপর সায়ান একটা গাড়ি দাড় করিয়ে দু’জনেই গাড়িতে ওঠে বসে। তারপর গাড়ি চলতে শুরু করে। তিশাদের বাসার যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
________
রায়হান আর মীরা গ্রামে আসতে আসতে যোহরের আজান দিয়ে দিয়েছে। এসেই দেখে মায়ার লাশ দাফন করা হয়ে গিয়েছে। আহিল দুচালা ঘরে বসে কান্না করছে,, আর তার পাশে তার কিছু বন্ধু বান্ধব বসে ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। রায়হান আর মীরা গিয়ে দুচালা ঘরে প্রবেশ করে। দুচালা ঘরে প্রবেশ করে রায়হান অবাক হয়,,কারন আহিলের নানার বাড়ি থেকে একজন ও আসে নাই। আর মীরা বলেছিলো,, আসরের নামাজের পরে দাফন করা হবে। আর এখানে এসে জানতে পারে যোহরের আগেই দাফন করা হয়ে গিয়েছে। রায়হানের এসব চিন্তার মাঝে মীরা এসে রায়হান কে বলে,,,
__রায়হান আমাদের ঘরের তালার চাবি কোথায়!
__আমার কাছে কোনে চাবি নেই, আর হঠাৎ এই ঘরের তালা খুলবে কেনো।
__চাবি নেই মানে! তুমিইতো কিছুদিন আগে এসে এই ঘরে প্রবেশ করেছো।পুরোনো তালাটা ভেঙে নতুন তালা লাগিয়ে গেছো। আর এখন বলছো তোমার কাছে চাবি নেই!
রায়হান কিছুটা ভ্রুকুচকে মীরার দিকে তাকায়, মীরা এসব জানলো কি করে! আমি এখানে এসেছি, কে বলেছে ওকে।আর ও আমাদের ঘরে ঢুকতে চাইছে কেনো! ওর মনে কি চলছে,,,,,
চলবে,,,,,,,