ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৯+১০

0
7442

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৯

মুম্বাই কিটি সু নাইট ক্লাব এর সামনে গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে তোড়া মাথা উঁচু করে সামনে নাম টা দেখে নেয়। তোড়া নামার কিছু সেকেন্ডের মধ্যে হইচই শুরু হয়ে যায়। ভিতরে পার্টি চলছে তাই বাইরে রিপোর্টার ভরা ছিল আর সেখানেই তোড়া আসতে সব ঘিরে ধরে। তবে তোড়া সব কিছু ম্যানেজ করে ভিতরে ঢুকে যায়। পুরো জমজমাট ভরা। চারিদিকে বড় বড় নামি দামি লোকে ভরা ভিতরে পার্টি চলছে। আর ডান্স ফ্লোরে একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ডান্সে মত্ত হয়ে আছে অভি তানিয়া। তোড়া চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। তোড়া ভিতরে ঢুকতেই সবার নজর তোড়ার দিকে গিয়ে পড়ে। নাইট ক্লাব এর সবাই এবার তোড়ার সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসছে তোড়া কারোর দিকে না তাকিয়ে সোজা গিয়ে বার কাউন্টারে বসে পড়ে। মুখে লেগেছে ক্রূর হাসি আর চোখে লেগেছে আছে হিংস্রতার চিহ্ন। তোড়া সিটে বসে বসে চারিদিকে তাকিয়ে নিজের শিকার ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে তোড়া এখানে আসতেই অভির নজর গিয়ে পড়ে তোড়ার ওপরে সে আস্তে আস্তে তার মনোযোগ তানিয়ার ওপর থেকে সরে তোড়ার ওপর যেতে থাকে। এতক্ষণ তাদের ঘনিষ্ঠ ভাবে ডান্সে মত্ত থাকলেও এখন কেমন ছাড়া ছাড়া ভাব চলে এসেছে। তানিয়া অভির হঠাৎ করে এই গা ছাড়া ভাব দেখে ভ্রু কুঁচকে রেগে গিয়ে অভির কলার টেনে নিজের দিকে টেনে নেয়। অভি চমকে গিয়ে তানিয়ার দিকে তাকায় দেখে রেগে গিয়েছে।

-“বেবি আমি একটু ড্রিংক নিতে চাই আমার গলা শুকিয়ে গেছে তুমি এনজয় করো আমি এসে জয়েন করছি তোমায়। অভি তানিয়ার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে ওঠে।

অভি তানিয়া কে ছেড়ে ডান্স ফ্লোর থেকে বেরিয়ে আসে আর তানিয়া অন্যদের সাথে আবারো মত্ত হয়ে যায়। তোড়া এতক্ষণ বসে বসে সব কিছুই লক্ষ করছিলো। অভি তোড়ার দিকে এগিয়ে আসে বার কাউন্টারে তোড়ার পাশের সিটে বসে পড়ে। তোড়া নিজের মত বসে আছে হাতে গ্লাস নিয়ে অল্প অল্প করে ড্রিংক নিচ্ছে আর সামনের দিকে দৃষ্টি করে রেখেছে তার পাশে অভি এসে বসেছে এটা দেখেই দৃষ্টি স্থির করে নিয়েছে। যেনো অভি কে দেখেনি বা চেনে না এমন একটা ভাব। অভি ড্রিংক এর গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে গিলতে গিলতে তোড়া কে দেখতে থাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখে আছে একটা লোভনীয় দৃষ্টি। সে তোড়ার সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তু তোড়া তাকে দেখতে পাই নি এটা ভেবেই অভি আরেকটু সরে বসে তোড়ার দিকে।

-“হাই বিউটিফুল। অভি তোড়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে ওঠে।

তোড়া নিজের দৃষ্টি সরিয়ে পাশে দেখে অভি তার দিকে হাত গ্লাস বাড়িয়ে তাকিয়ে আছে। কোনো কথা না বলে তোড়া নিজের হাতের গ্লাস অভির গ্লাস এর সাথে মিলিয়ে আবারো খেতে থাকে তোড়ার ঠোঁটে রয়েছে এক ক্রূর হাসি।

-” আই ডোন্ট নো ইফ ইউ উইল বিলিভ মি। বাট সিরিয়াসলি আই হ্যাভ নেভার সিন এ বিউটিফুল গার্ল লাইক ইউ বিফোর। অভি তোড়ার দিকে কিছুটা ঘেঁষে বসে বলে ওঠে।

তোড়া আবারো কোনো কথা না বলে একই ভাবে হাসতে থাকে। আর নিজের গ্লাসে চুমুক দিতে থাকে তার নজর এখন ডান্স ফ্লোরে তানিয়ার দিকে যে অন্য একটা ছেলের সাথে ডান্সে মেতে উঠেছে। অভি তোড়ার কিছু না বলাতে আরেকটু সাহস জুগিয়ে তোড়ার হাতের ওপর হাত রাখে হঠাৎ তোড়া নিজের হাতের ওপর হাতের স্পর্শ পেতেই ঘুরে তাকায় নিজের হাতের ওপর অভি হাত দিয়ে রেখেছে। এটা দেখতেই তোড়ার সারা শরীরে যেনো কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। রাগে ফেটে যাচ্ছে কিন্তু নিজের চোখ মুখ একদম শান্ত রেখেছে । মুখের দিকে তাকালে বুঝতেই পারবে না যে তোড়া এখন কতটা রেগে আছে। তোড়া কোনো কিছু না বলে নিজের গ্লাসে চুমুক দেয়ার দিকে মন দেয়। অভি তোড়ার কোনো রকম সাড়া না পেয়ে এবার যেনো একটু বেশি সাহস পেয়ে গেছে এবার সে তোড়ার হাতে স্লাইড করতে থাকে।

-“তো মিস তুমি কি ঠিক করলে কবে কন্ট্রাক্টড সাইন করছো? দেখো আমার কোম্পানি সাইন করো তার পর দেখো তোমার ক্যারিয়ার কোথায় থেকে কোথায় পৌঁছে যায়। আর তাছাড়া আমার কোম্পানি এখন মুম্বাই টপ ফাইভে রান করছে তুমি সবে সবে মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি জয়েন করেছো এর থেকে ভালো অপরচুনিটি পাবে না। অভি
তোড়ার হাতে আলতো চাপ দিয়ে বলে ওঠে।

তোড়া কোনো কথা না বলে অভির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে সামনের দিকে তানিয়া আসছে অভি মুচকি হেসে নিজের পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে তোড়ার হাতে ধরিয়ে দেয় তোড়ার দিকে কিছুটা ঝুঁকে তোড়ার কানে বলে ওঠে।

-“আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব। বলেই উঠে যায়।

তানিয়া এতক্ষণ ডান্স ফ্লোরে ছিল অভির না আসা দেখে সে অভি কে দেখতে থাকে দূরে বসে থাকা অভির দিকে নজর যায় দেখে কালকের সেই মেয়েটা তোড়া দেওয়ান এর সাথে বসে আছে এটা দেখেই তানিয়া রেগে এগিয়ে যেতে থাকে ওদের দিকে কিন্তু তার আগেই অভি চলে আসে। তানিয়ার হাত ধরে ক্লাব থেকে বেরিয়ে এসে তানিয়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে তানিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। অভি জানে কিভাবে তানিয়ার মন ঘোরাতে হয় আর এখন টেকনিক এপ্লাই করছে সে তানিয়ার ওপর। কিছুক্ষণ পর তানিয়া কে ছেড়ে তানিয়ার কোমরে হাত রাখে অভি।

-“অভি তুমি তোড়ার সাথে কি করছিলে ওখানে। তানিয়া খানিকটা রেগে বলে ওঠে।

-” আরে বেবি আমি ওখানে গিয়েছিলাম আমাদের জন্য আমি তোড়া দেওয়ান কে সাইন করার জন্য কথা বলছিলাম। অভি তানিয়ার ঠোঁটে হাত রেখে স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে।

-“রাজি হলো ওই মেয়ে। তানিয়া বলে ওঠে।

-“ইয়েস বেবি রাজি তো হতেই হবে নাহলে কি করে হবে সোনা। ওকে যে করেই হোক আমার কাছে আসতেই হবে আর আমি কার্ড দিয়ে এসেছি। অভি বলে ওঠে।

-“মানে তোমার কাছে মানে? তানিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” মানে আমার কোম্পানীতে আসতে হবে। অভি বলে উঠে তানিয়া কে নিয়ে অভি গাড়ি করে বেরিয়ে যায়।

এদিকে কাউন্টারে বসে তোড়া একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে। আর যে হাত টা অভি ধরে ছিল সেই হাতের ওপর গ্লাসের সব টা হাতের ওপর ঢেলে দেয়। পাশের কাউন্টারে থেকে লাইটার নিয়ে জ্বালাতে নিলেই হঠাৎ করেই কেউ হাত থেকে কেড়ে নেয়। তোড়া মাথা তুলে নেশায় ভরা চোখে পিট পিট করে তাকাতে দেখে তার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে কেউ। মুখে মাস্ক লাগানো আর মাথায় টুপি পরা আছে। শুধু জ্বল জ্বলে চোখ দুটোই দেখা যাচ্ছে যেটা তার দিকে চেয়ে আছে। তোড়ার কাছে কেনো জানে না এই চোখ দুটো খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। তাই তোড়া শুধু ঘুর ঘুর করে দেখে যাচ্ছে। তোড়া কিছু বলতে নেওয়ার আগেই লোকটা তাকে এক হ্যাচকা টান মেরে কোলে তুলে নেয়। তোড়া অবাক হয়ে যায় এমন কাজে সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে কিন্তু তার পরেই নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করছে কিন্তু তাকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে তোড়ার দিকে রাগী চোখে দেখে। সাথে সাথে তোড়া চুপ হয়ে যায় পুরো।

তোড়া কে গাড়িতে এনে বসাতে তোড়া পিট পিট করে তাকিয়ে দেখে লোকটার মুখের দিকে সে এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে রাগী চোখে।

-“এই তুমি কে বলতো তো? আমাকে কেনো নিয়ে এসেছ? তোড়া নেশার ঘোরে জড়িয়ে জড়িয়ে বলতে থাকে।

কোনো কথা বলছে না দেখে তোড়া নেশার ঘোরে টলতে টলতে লোকটার দিকে এগিয়ে গিয়ে গলায় হাত রেখে মুখের থেকে মাস্ক টেনে খুলে ফেলে আর এক মাথায় থেকে টুপি ও।

-“এই তুমি… তুমি সেই ছেলেটা না? কি যেনো নাম রে…রেয়ান্স । আজকে দাদুর বাড়িতে তোমাকে দেখেছি না। তোড়া জড়িয়ে জড়িয়ে বলে ওঠে।

রেয়ান্স কোনো কথা না বলে চুপ করেই আছ কেমন । সে এতক্ষণ ভিতরে থেকে তোড়ার ওপরে নিজের নজর রাখছিল। অভি কে তোড়ার কাছে এসে বসতে দেখেই রেয়ান্স রেগে যায়। কিন্তু চুপ করে ছিল। শেষে যখন তোড়ার হাতের ওপর হাত রাখে তখন রেয়ান্স পুরো শরীর যেনো আগুন জ্বলছিল। শুধু মাত্র তোড়া চুপ করে ছিল বলেই রেয়ান্স চুপ করে তোড়ার কাজ দেখ ছিল। শেষে অভি চলে যেতে তোড়ার রেগে ড্রিংক নেয়া আর তারপরে হাতে ড্রিংক ঢেলে পোড়াতে নিলেই টেন বের করে আনে। রেয়ান্স ঘুরে তোড়ার দিকে দেখে যে এখন পিট পিট করে বড় বড় করে চোখ করে তাকিয়ে কথা বলছে এখন তোড়া কে দেখতে এতটাই আকর্ষণীয় লাগছে যে নিজেকে আটকে রাখতে তার কষ্ট হচ্ছে। রেয়ান্স বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

-“এই তুমি…. তুমি আমাকে কেনো নিয়ে এলে এখানে হ্যাঁ? আমার এই হাতটা নোংরা হয়ে গেছে আমি আমার এই হাতটা পুড়িয়ে ফেলতে চাইছিলাম কিন্তু তুমি তুমি আমাকে নিয়ে এলে। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে ঝুঁকে এসে বলে ওঠে।

রেয়ান্স এতক্ষণ চুপ করে থাকলে ও এবার যেনো মাথায় আবারো আগুন জ্বলে ওঠে। ঘুরে বসে রেয়ান্স তোড়ার কোমরে হাত রেখে নিজের বুকের ওপরে এনে ফেলে রাগী চোখে দেখতে থাকে।

-“একদম চুপ কোনো বাজে কথা নয়। আর একটা খারাপ কথা বেরোলেই মুখে টেপ মেরে দেবো। রেয়ান্স খানিকটা ধমক দিয়ে বলে ওঠে।

-” এই তুমি চুপ। আমি কেনো কথা শুনব তোমার ? আর তুমি আমাকে ধমক দিচ্ছ কেনো? আমার হাতটা নোংরা হয়ে গেছে। আমার এই হাতটা ধরে ছিল ওই নোংরা লোকটা আমি আমার হাতটা পরিষ্কার করতে চাই। বলেই তোড়া নিজের হাতের ওপর অন্য হাত দিয়ে খামছি দিতে থাকে।

রেয়ান্স তোড়ার হাত দুটো ধরে তোড়া কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে জড়িয়ে ধরে।

-“আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমার হাত পরিষ্কার করে দিচ্ছি তুমি শান্ত হয়ে বসো। রেয়ান্স তোড়া কে নিজের বুকের সাথে পিট লাগিয়ে বসিয়ে রেখে বলে ওঠে।

তোড়া রেয়ান্স এর কথা শুনে চুপচাপ শান্ত হয়ে বসে যায়। রেয়ান্স গাড়িতে থাকা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ওয়াশ করিয়ে আবারো ওয়েট টিস্যু দিয়ে মুছে দিতে থাকে। তারপর হাত নিজের মুখের সামনে তুলে ধরে আলতো করে চুমু খেতে থাকে। এতে রেয়ান্স কেঁপে ওঠে খানিকটা আর সাথে তোড়া ও কেঁপে উঠে ঘুরে পিট পিট করে রেয়ান্স এর দিকে দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ পর রেয়ান্স মুখ তুলে তাকাতে দেখে তার দিকে কেমন বিড়াল চোখ করে তাকিয়ে তোড়া।

-“এই তুমি আমার হাতে চুমু খেলে কেনো? তোড়া বলে ওঠে।

-” তোমার হাত নোংরা হয়ে গেছিল তাই। রেয়ান্স তোড়া কে ঘুরিয়ে ঠিক বসিয়ে কাঁধে জড়িয়ে রেখে বলে ওঠে।

-“চুমু খেলেই কি হাত পরিষ্কার হয়ে যায়। তোড়া বাচ্চাদের মত মুখ করে বলে ওঠে।

-” হুম তবে শুধু আমি চুমু খেলে হবে। অন্য কেউ নয়। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-” কেনো কেনো তোমার চুমু তে কি এক্সট্রা পাওয়ার আছে নাকি? তোড়া রেয়ান্স এর দিকে ঝুঁকে গিয়ে বলে ওঠে।

-” হুম আছেই তো আমার ঠোঁট আর আমার চুমু এতদিন ভার্জিন ছিল যেটা তোমার হাত খেয়ে নিয়েছে এখন। আমার ঠোঁট প্রথম তোমার হাত ছুঁয়েছে তাই আমার চুমুর পাওয়ার বেশি বুঝেছ। রেয়ান্স তোড়া কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

-” ভার্জিন হলে বুঝি চুমু এর এক্সট্রা পাওয়ার হয়? তোড়া বলে ওঠে।

-“হুম হয়তো ।রেয়ান্স দুষ্টু হেসে বলে ওঠে।

-“তাহলে তো আমার চুমুতে ও এক্সট্রা পাওয়ার আছে। তোমার যদি হাত নোংরা হয়ে যায় তাহলে আমাকে বলো আমি তোমার হাতে চুমু দিয়ে পরিষ্কার করে দেবো ওকে তাহলে ইকুয়াল হয়ে যাবে। তোড়া বলে ওঠে।

রেয়ান্স কোনো কথা না বলে তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তোড়া বকতে বকতে ঘুমিয়ে যায় রেয়ান্স এর বুকের ওপর। রেয়ান্স এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মাথা নিচু করে তোড়ার মুখের দিকে। কি সুন্দর করে ঘুমাতে আছে। বাচ্চাদের মত করে ঠোঁট দুটো কেমন ফুলিয়ে রেখেছে। রেয়ান্স মুগ্ধ চোখে তোড়া কে দেখতে থাকে আর ভাবতে থাকে তোড়ার সাথে প্রথম দেখা হওয়া মেয়েটা কে প্রথম থেকে দেখে কেমন একটা মনে হয়েছিলো যেনো শরীর আছে কিন্তু প্রাণ নেই। একদম চুপচাপ কিন্তু আজকে এখন বুঝতে পারছে পরিস্থিতি মেয়েটা কে কতটা পাল্টে দিয়েছে কতটা কঠোর আর নিঃপ্রান করে দিয়েছে। নেশার ঘোরে একদম বাচ্চাদের মত হয়ে গিয়েছিলো তার মানে মেয়েটা আগে এইরকম হাসি খুশি আর চঞ্চল ছিল কিন্তু পরিস্থিতি তাকে পাল্টে দিয়েছে। ভাবতে রেয়ান্স এর মুখ শক্ত হয়ে ওঠে। তোড়া কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।

-“তোমাকে আমি আবারও আগের মত করে নেবো। তোমার সব কষ্ট দূর করে দেবো আমার ভালোবাসা দিয়ে। হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি কালকে থেকে আমি বুঝতে না পারলেও আজকে আমি বুঝতে পেরেছি যখন অভি তোমার হাত ধরে ছিল তখন আমার বুকের মধ্যে আগুন জ্বলছিল মনে হচ্ছিল এই আগুনে অভি কে পুড়িয়ে ফেলি। তুমি শুধু আমার তোড়া। তোমার গায়ে আর কোনো আঁচ আসতে দেবো না সব সময়ে তোমাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখব আর তোমার প্রতি হওয়া সব প্রতিশোধ ও নেবো। এবার শুধু দেখতে থাকো কি কি হয়। রেয়ান্স দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_১০

-“দাদু আমি বিয়ে করতে চাই। রেয়ান্স খেতে খেতে বলে ওঠে।

ডাইনিং রুমে বসা সবার মধ্যে যেনো একটা বাজ পড়ার মত শব্দ হল তারা নিজের নিজের খাওয়া রেখে রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো তারা কোনো ভুল কথা শুনে ফেলেছে। যে ছেলে কে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে বিয়ের জন্য রাজি করাতে হয় যে কিনা মেয়ে দেখতে গিয়ে রিজেক্ট করে এসেছে এখন সেই কিনা বলছে সে বিয়ে করতে চায়। তারা কি ঠিক শুনছে ভেবেই রেয়ান্স এর দাদু লেখা তাসনীম দেওয়ান শাহীন সবাই একে অপরের মুখ এর দিকে তাকিয়ে সবাই একসাথে রেয়ান্স এর দিকে তাকায়।

-“হোয়াট? তোমরা সবাই আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো? রেয়ান্স খানিকটা ধমক দিয়ে বলে ওঠে।

-” না মানে তুই বিয়ে করবি সত্যি বলছিস ব্রো? লেখা বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ কথা যখন দিয়েছি বিয়ে করব তখন কথা তো রাখতে হবে তাই না। রেয়ান্স খেতে খেতে অ্যাটিটিউড নিয়ে বলে ওঠে।

-” কিন্তু তুই তো মেয়েটা কে রিজেক্ট করে এসেছিস। কি আর করার আমি আবার কথা বলে নেবো। রেয়ান্স এর দাদু কোনা চোখে একবার তাসনীম দেওয়ান এর দিকে তাকিয়ে নিয়ে রেয়ান্স কে বলে ওঠে।

-” মানে? বিয়ে করব বলেছি দাদু। আমি বলিনি ওই মেয়েটা কে বিয়ে করবো। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-“মানে তাহলে তুই কি মেয়ে ঠিক করে ফেলেছিস নাকি? নাকি আমি দেখবো? রেয়ান্স এর দাদু বলে ওঠে।

-“তোমার দেখা মেয়ে কে তুমি বিয়ে করো। রেয়ান্স বলে ওঠে।

-“আচ্ছা সেটা বড় কথা না আমি না হয় বিয়ে করবো তাতে ক্ষতি কি? বলছিলাম যে মেয়েটা কে শুনি? রেয়ান্স এর দাদু বলে ওঠে।

-” দাদু তুমি সত্যি বিয়ে করবে? লেখা বলে জোরে জোরে হেসে ফেলে।

-” দাদু পিপি আমি তোড়া কে বিয়ে করতে চাই। আর সেটা কালকের মধ্যে তোমার দেয়া এক সপ্তাহ শেষ এর দিনের দিন। রেয়ান্স সিরিয়াস ভাবে বলে ওঠে।

-“কি তোড়া? সবাই এক সাথে চেঁচিয়ে ওঠে।

-” হ্যাঁ তোড়া । বলেই রেয়ান্স টেবিল ছেড়ে উঠে যায়।

তার সাথে সাথে শাহীন ও ওই অবাক হয়ে যাওয়া বড় হা হয়ে থাকা মুখ নিয়ে বেরিয়ে যায়। আর এদিকে টেবিলে বসে থাকা সবাই এখনও মুখ হা আর চোখ বড় বড় করে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ এই রকমই ভাবে একে অপরকে দেখে নিয়ে হাসিতে ফেটে পড়ে। তারা জানত এইরকম কিছু হবে। কারণ তারা রেয়ান্স এর তোড়ার দিকে তাকানো আর তোড়ার প্রতি রেয়ান্স এর বলা কথা গুলো আর কাল যখন বাড়ি ফিরে ছিল রাতে তখন তোড়া রেয়ান্স এর কোলে তার বুকের সাথে লেপ্টে ছিল। আর তোড়ার জন্য রেয়ান্স এর চোখে দেখেছিল একরাশ ভালোবাসা। আর তখনই বুঝে নিয়ে ছিল কেস জন্ডিস হয়ে গেছে ওয়ার্ল্ড টপ ওয়ান বিজনেসম্যান দ্য রেয়ান্স রাওয়াত ফেসে গেছে।

—————–

সকালে মিষ্টি রোদ্দুর পর্দা ভেদ করে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বিন বুলায়ে মেহমান এর মত। মুখের ওপরে রোদ্দুর এর আলো পড়তে ভ্রু কুঁচকে ফেলে । আসতে আসতে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় উঠে বসতে নিলে মাথা টা ভারী ভারী মনে হয় আর তার সাথে কিছুটা যন্ত্রণা মত লাগছে। দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে চারিদিকে এক নজর বুলিয়ে নেয়। সে তো রুমে আছে কিন্তু এটা কোন রুম ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে এটা তো দাদুর বাড়ি তার রুম। কিন্তু তোড়া এখানে কি করে এলো সেতো কাল রাতে নাইট ক্লাবে ছিল তাহলে। উফ মাথাটা যন্ত্রণা করছে আর তার সাথে মনে পড়ছে না কিছু ও কি করে বাড়ি এলো।

তার এখনও মনে আছে কালকের ঘটনা গুলো অভি এর সাথে সব কিছু তারপরেই সে তো ড্রিংক করছিলো নিজের হাতের ওপর ও ড্রিংক ঢেলে ছিল তার পর লাইটার নিয়ে আগুন জ্বালাতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই কেউ ধরে নেয় কে ওটা হ্যাঁ মনে পড়েছে লোকটার শুধু চোখ দেখা যাচ্ছিলো আর তাছাড়া পুরোটাই ঢাকা ছিল। তার পর তারপরে কি হয়েছিলো মনে কেনো করতে পারছে না আর সে বাড়ি কি করে এলো তোড়া মাথায় হাত দিয়ে ভেবে যাচ্ছে। মাথাটা যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে। সে কেনো কালকে অত ড্রিংক করতে গেছিলো এই লাল পানিতে সে তো অভস্ত্য নয়। ধুর।

-“উঠে গেছিস? এখন কেমন লাগছে? নে এই স্যূপ টা ঝটফট খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে দেখবি একদম ফিট লাগছে। তাসনীম দেওয়ান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে।

-” মম আমি এখানে কি করে এলাম? তোড়া তার মম এর কোলে মাথা রেখে বলে ওঠে।

-“তোকে তো রেয়ান্স নিয়ে এসেছে। আচ্ছা তুই এই জিনিসটা সহ্য করতে পারিস তাহলে খেতে গেলি কেনো শুনি। আর ওখানে যদি রেয়ান্স না থাকতো তাহলে কি হতো বলতো? তোড়ার মম মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে।

-” কে রেয়ান্স মানে কালকের ওই ছেলেটা? তোড়া জিজ্ঞাসা করে ওঠে।

-“হুম ওটাই রেয়ান্স আর ওই ছেলেটা না ওটা আমার ভাই এর ছেলে আর তোর দাদুর নাতি হয়। আর তাছাড়া তোর ও….বলতে বলতে থেমে যায় তোড়ার মম।

-“কি মম? তোড়া জিজ্ঞেস করে।

_” কিছুনা এখন যাও এটা খেয়ে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। তোড়ার মম বলে ওঠে।

-“তার মানে কালকে নাইট ক্লাবে ওই বিড়াল চোখ ওয়ালা ছেলেটা ওই রেয়ান্স ছিলো। কিন্তু বিড়াল চোখ দুটো বেশ কিউট ছিল। বিড়বিড় করে বলে ওঠে তোড়া।

-” কিছু বলছিস? তোড়ার মম বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ ওই বিড়াল চোখ ওয়ালা….

বলতে বলতে থেমে যায় তোড়া। সে ভাবতে থাকে সে এতক্ষণ কি ভাবছিল। তার মাথায় কেনো এইসব চলছিলো। এটা ভাবতে আবারো এক্সপ্রেশন একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে একদম আগের মতো। তোড়া দেখে তার মম তার দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে। সে আর কোনো কথা না বলে স্যূপ টা ঝটপট শেষ করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। এদিকে তাসনীম দেওয়ান এতক্ষণ তোড়ার হাব ভাব খেয়াল করছিলো তার আগের মত আবারো বিড়বিড় করে কথা বলছিল ভাবতেই তার খুব খুশি খুশি লাগছিলো। তার মানে তাদের ধারণা ভুল নয় হ্যাঁ আবারো তোড়া আগের মত হয়ে যাবে। কথাটা মাথায় আসতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

————–

তোড়া ওয়াশরুমে থেকে বেরোতে দেখে তার মম তার বিছানা গুছিয়ে বসে আছে। চোখে মুখে কেমন একটা অস্বস্তিকর ভাব। তোড়া চুপ চাপ গিয়ে তাওয়াল টা নিয়ে তার মম এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে তার মম এর কোলে শুয়ে পড়ে। তোড়ার মম ও মুচকি হেসে তার মাথায় মুছে দিতে থাকে।

-“মম । তোড়া আলতো ভাবে ডেকে ওঠে।

-” হুম আদর বল । তোড়ার মম বলে ওঠে।

-“তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও মম? তোড়া তার মম এর কোমর জড়িয়ে রেখে বলে ওঠে।

-” আদর তুমি তো জানো তোমার মম তোমাকে কতটা ভালোবাসে। তোড়ার মম বলে ওঠে।

-“হুম মম ।আর আমি জানি আমার মম সব সময়ে আমার ভালো চায় আমার পাশে আছে আর যা কিছু করে আমার ভালোর জন্য ভেবেই করে। এবার তুমি বলতো কি বলতে চাও।তোড়া বলে ওঠে।

-“আদর তোমার মম যদি তোমার ভালোর জন্য কোনো ডিসিশন নেয় তাহলে তুমি কি সেটা মেনে নেবে? দেখো তোমার ওপরে আমার কোনো জোর নেই তোমার মন যেটা বলে তুমি সেটাই করবে। তোড়ার মম মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে।

-” মম আমি জানি তুমি যা করবে আমার ভালোর জন্য করবে। তোড়া তার মম এর পেটে মুখ রেখেই বলে ওঠে।

-” হুম আদর তোমার মম সব সময়ে চায় তার আদর যেনো খুব ভালো থাকে সব সময়ে হাসি খুশি থাকে । আসলে রেয়ান্স তোমাকে বিয়ে করার কথা বলেছে আজ সকালে সবার সামনে। তোড়ার মম খুব মিষ্টি ভাবে বলে ওঠে।

-” মম…. ।তোড়া আলতো ভাবে ডেকে ওঠে।

-“আমি জানি আদর তোমার কাছে ব্যাপারটা সহজ নয়। রেয়ান্স তোমার ব্যাপারে সব কিছুই জানে তারপর ও তোমাকে বিয়ে করতে চায় এতে আমরা কেউ তাকে কিছু বলিনি। এতে তোমার দাদু ও খুশি আর আমি জানি রেয়ান্স এর সাথে তুমি ভালো থাকবে। রেয়ান্স কে আমি চিনি ছোটো থেকেই ওকে আমি বড় করেছি। ওর থেকে কখনো কোনো মেয়ের কথা শোনা যায়নি সেই তোমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি জানি তোমার পক্ষে এটা খুব সহজ হবে না তবে এটা বলতে পারি তুমি ওর সাথে খুব ভালো থাকবে আর তুমিও ওকে একদিন ভালোবেসে ফেলবে। প্রথম প্রথম হয়তো সব কিছুই তোমার কাছে বিরক্তিকর লাগবে। তোড়ার মম ধীরে ধীরে বলে ওঠে।

-“আদর তোমার মম তোমাকে খুব ভালোবাসে। তোমার মম সব সময়ে তোমার ভালো চায়। আমি কখনো তোমাকে তোমার মতের বিরুদ্ধে যেতে বলব না। তোমার ডিসিশন আমার কাছে ইম্পর্টেন্ট তাই এক্ষেত্রে তুমি যেটাই বলবে তাই হবে। এই বিষয়ে তোমার ওপরে কোনো জোর নেই। তুমি ভেবে দেখতে পারো তোমার যদি না মনে হয় তাহলে না ঠিক আছে এতে কোনো চাপ নেই। মুচকি হেসে বলে ওঠে তোড়ার মম।

-“হুম ।তোড়া বলে ওঠে।

-” চলো এবার ওঠো আমি যাচ্ছি তুমি নিচে এসে খেয়ে নাও। তোড়ার মম বলে বেরিয়ে যেতে নেয়।

-“মম…. আমি রাজী। তোড়া বলে ওঠে।

-” আদর তোমাকে আমার কথা শুনে নয় তোমার মনের কথা শুনে চলতে হবে। তাই তুমি আগে এটা ভেবে দেখো তারপর বল কেমন। তোড়ার মম ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।

-” মম আমি জানি তুমি আমাকে কত টা ভালোবাসো। আমার জন্য তুমি সব সময়ে ভালো টাই করবে সেটা আমি জানি। আর আমি তোমাকে আমার শূন্য জীবনে আমার মম হিসাবে পেয়েছি যেটা আমার জীবনের সব থেকে বেস্ট ছিল আর তুমি সব সময়ে আমার জন্য বেস্ট টাই পছন্দ করো। তাই আমি এই ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাই না। আর না আমি এই ব্যাপারে কোনও মতামত বলতে চাই। তাই এটাই ফাইনাল আমি রাজি আছি এই বিয়েতে। তোড়া তার মম কে জড়িয়ে বলে ওঠে।

-“ওকে তোমাদের বিয়ে কালকে হবে এটা রেয়ান্স দাদু কে বলে গেছে। তোড়ার মম বলে ওঠে।

-” ওকে মম কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে। তোড়া মুখ সিরিয়াস করে বলে ওঠে।

-“শর্ত কিসের শর্ত? তোড়ার মম বলে ওঠে।

-” সেটা আমি সবার সামনে বলবো। তোড়া তার মম এর গালে একটা চুমু খেয়ে বলে ওঠে।

-” ওকে নিচে আয়। রেয়ান্স কে বাড়ি আসতে বলে দিচ্ছি আমি। বলে তোড়ার মম বেরিয়ে যায়।

-” আমি জানি মম তুমি আমার ভালোর জন্য বলছো। আর আমি এতেই রাজি জানি আমি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো। তুমি আমাকে নিজের মেয়ের জায়গায় বসিয়েছো যেটা আমি সারাজীবন তোমার মেয়ে হয়ে থাকতে চাই । তোমাকে মম হিসাবে পেয়ে আমি জানতে শিখেছি আসলে মায়ের এর ভালোবাসা কি। আমি তো এটা জানতাম না মম। আমার মা থাকতেও ছোটো থেকে কখনো বুঝতে শিখিনি জানতে ও পারিনি। আসলে মায়ের ভালোবাসা কি। আমি প্রথমে তোমার কথা না শুনে একটা ভুল করে ছিলাম ওই অভি কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে আর তার পরিণাম ও আমি দেখে নিয়েছি তোমার সাবধান বাণী আমি গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু আমি আর কোনো ভুল করতে চাইনা মম। তোড়া আনমনে বলে ওঠে।

-“কিন্তু ওই বিড়াল চোখ ওয়ালা কেনো আমাকে বিয়ে করতে চায়। তাও নিজের থেকে বিয়ে করতে চাইছে। তোড়া নিজের মনে ভাবতে থাকে।

—————

লিভিং রুমের সোফায় সব গোল হয়ে বসে আছে তাদের সবার দৃষ্টি এখন তাদের সামনে বসে থাকা তোড়ার ওপরে। তারা সবাই এখন তোড়ার শর্ত শোনার জন্য বসে আছে। তারা বুঝতে পারছে না যে তোড়া কি শর্তের কথা বলছে আর সেটা কি হতে পারে। রেয়ান্স তো শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তোড়ার দিকে।

-“দেখুন আমি এই বিয়ে করতে রাজি আছি কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে সেগুলো মানলে তবেই আমি বিয়ে করব। তোড়া সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ দিদি ভাই বলো তুমি কি বলতে চাও। রেয়ান্স এর দাদু বলে ওঠে।

-” আমি কোনো রকম জাঁকজমক ভাবে বিয়ে করতে চাইছি না যা হবে সিম্পল হবে। আমি যেহেতু নিজের মডেলিং ক্যারিয়ার শুরু করেছি সেহেতু আমি কারোর পরিচয় এর ওপর ভিত্তি করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাইনা। আমি চাই সবাই আমাকে আমার নামে চিনুক নাকি কারোর ওয়াইফ এর পরিচয়ে। আগে আমি নিজের যোগ্যতা অর্জন করতে চাই তারপরেই আমি বিয়ে টা কে সবার সামনে আনতে চাই। ততদিন আমি চাইনা এটা সবার সামনে আসুক। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।

-“আর কিছু? রেয়ান্স বলে ওঠে।

-” না। তবে হ্যাঁ আমি এমন কোনো কাজ করব না যাতে আপনাদের অসম্মান হয়। আমার এই শর্ত মানলে আমি বিয়ে করতে রাজি। তোড়া বলে ওঠে।

-“বাহ দিদি ভাই এটা তো খুব ভালো কথা। তুমি নিজের পরিচয় গড়তে চাও এটাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তুমি যে এমনি স্বাধীন চিন্তা ভাবনা রাখো এটা জেনে আমি খুব খুশি হলাম। এখন কার মেয়েরা সব টাকা পয়সা নাম খ্যাতির পিছনে ছুটে যাচ্ছে আর সেখানে তুমি নিজের পরিচয় গড়তে চাইছো এটাতো খুব ভালো কথা। তবে হ্যাঁ এটা এখন সিম্পল ভাবে বিয়ে হলেও আমি ছয় মাস পর কিন্তু তোমাদের জাঁকজমক ভাবে বিয়ে দিতে চাই। যেহেতু তোমার ড্যাড ও এখন এখানে নেই তাই এখন সিম্পল হবে। তোমার হাতে ছয় মাস সময় আছে আশা করছি তুমি তার মধ্যে তোমার সব হিসেব মিটিয়ে নিতে পারবে। রেয়ান্স এর দাদু বলে ওঠে।

-“ইয়েস দাদু আমাকে তো সব হিসেব মেটাতে হবে একদম শুদে আসলে গুনে গুনে সব কিছু মিটিয়ে নেবো। তোড়া চোখ মুখ কঠিন করে বলে ওঠে।

-” তোমার তো আমাকে ভালোবাসতেই হবে। সেটা এখন না হলেও আসতে আসতে। আমি তোমার মনে আমার জায়গা বানিয়ে নেবো। এই ছয় মাসে আমি তোমাকে আমার প্রতি আসক্ত করে ফেলবো। যে তুমি আমাকে ছাড়া আর কোনো চিন্তা মাথায় আনতে পারবে না সব কিছুর আগেই আমার নাম থাকবে। কথা দিচ্ছি তোমার মধ্যে জমে থাকা সমস্ত কষ্ট দুঃখ ভুলিয়ে দেবো আমার ভালোবাসা দিয়ে। তোমার প্রতি হওয়া এক একেকটা অন্যায়ের হিসেব আমি নেবো। আবারও আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেবো তোমার জীবনের চাঞ্চল্যতা। আবারও তোমার মুখের হাসি ফিরিয়ে দেবো। আমি তোমাকে ভালোবাসি আমি সেটা তোমাকে মুখে প্রকাশ করব না কিন্তু আমি আমার কাজের দ্বারা প্রতিনিয়ত বুঝিয়ে যাব। যতো দিন না তোমার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি। তোমার মুখে আমাকে ভালোবাসার কথা না শুনতে পাচ্ছি ততদিন আমি তোমাকে বলব না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তুমি বুঝতে পারবে আমি ভালোবাসি তোমাকে কিন্তু শুনতে পাবে না। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের মনে মনে বলে ওঠে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।