চন্দ্রপ্রভা রজনী পর্ব-০৭

0
325

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ৭
লিখাঃসামিয়া খান

ধোঁয়া উঠা গরম কফিতে চুমুক দিয়ে পেপারে চোখ বুলালো আরিয়ানের বাবা দেওয়ান সাহেব।পাশে থমথমে মুখে বসে আছে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম।তার চোখে মুখে মনে হয় গভীর অমাবস্যা ছেয়ে গিয়েছে।পেপার থেকে চোখ না সরিয়ে দেওয়ান সাহেব স্ত্রীর উদ্দেশ্য বলল,

“মুখ ওরকম শামুকের মতো করে রেখেছো কেন?”

“আমার মুখ তো আপনার কাছে শামুকের মতোই লাগবে।”

“তেতে উঠো কেন?সুবাহ এ যুগের মেয়ে।আর একটা ভার্সিটির প্রফেসর।তাহলে তোমার কথা মানবে সেরকম মনে হয়?”

“কেন!আমার কথা মানবেনা কেন?আমি ওর স্বামীর জন্মদাত্রী।আমার কথা মানতে বাধ্য।”

“তা অবশ্য ঠিক।কিন্তু সব বিষয়ে মানতে বাধ্য না।যেমন-ওর চাকরী করার বিষয়টা।”

“আমি এটা বুঝিনা ওর কেন চাকরী করতে হবে?আরিয়ান বা তোমার কি কোনো কম আছে?”

“আচ্ছা তুমি টাকা দিয়ে কেন বিবেচনা করছো।মেয়েটা এত পড়ালেখা করেছে কি শুধু সংসার করতে।ওর ইচ্ছা বা স্বাধীনতায় তো আর আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারিনা।”

“তাই বলে যা খুশী করবে।”

“যা খুশী তা কই করছে।শুধু তো জবটা ছাড়ছেনা।আর সুবাহ যদি যা খুশী তাই করে তো তোমার মেয়েরা কী?তারাও তো চাকরি করে।এবং রিশা যে প্রফেশনে আছে তাতে কিন্তু কলঙ্কমুক্ত থাকা খুব কঠিন।অথচ দেখো কত সহজে নিজের হাতে ” চন্দ্রপ্রভা” গড়ে তুলেছে।”

“রিশা অবিবাহিত।আর সুবাহ বিবাহিত।”

“শুনো গিন্নি অরিও বিবাহিত।সাথে এক সন্তানের মা কিন্তু কতো সহজে আমার বিজনেস দেখাশোনা করছে।নিজের মেয়েরা যা করছে তাতে তুমি কোনো দোষা পাওনা কিন্তু ছেলের বউ করলে দোষ?”

“হ্যাঁ দোষ।কারণ আমি আমার আরিয়ানের জন্য একটা মেনি বিড়াল চেয়েছিলান।চাকরি করা কোনো বাঘিনী নয়।”

আনোয়ারা বেগমের কথাটা শুনে আর কোনো কথা বাড়ালো না দেওয়ান সাহেব।কারণ সে জানে আমাদের সমাজটা এগিয়ে গেলেও মনমানসিকতা এখনো সেই পিছিয়ে রয়েছে।নিজের ঘরের মেয়ে চাকরি করলে কিছুনা কিন্তু ঘরের বউ চাকরি করলে সে মহা অন্যায় করে ফেলে।এই প্রাচীনকালের ধরাবাঁধা নিয়ম যে কবে শেষ এবং আদৌ কি শেষ হবে কীনা তা হয়ত কেও বলতে পারবেনা।
,
,
,

সুবাহার মনটা বেশ খারাপ।তার বিয়ের আজ তৃতীয় দিন।তো সে হিসেবে কাল রাতের রিসেপশনের পর তার আজকে বাবার বাড়ী যাওয়ার কথা কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হয়নি।তার বাবাও তাকে নিয়ে যেতে চায়নি।বিষয়টা খুব খারাপ লেগেছে সুবাহার কাছে।সব থেকে বেশী কষ্ট পেয়েছে যখন দিহান তাকে না বলে পার্টি থেকে চলে গিয়েছে।কতদিন পরে নিজের ভাইকে দেখেছিলো সে অথচ এক ঘন্টাও তার সাথে ভালোভাবে সময় কাঁটাতে পারেনি।এদিকে তার কলেজে আসা যে শ্বাশুড়ির খুব একটা পছন্দ হয়নি সে বিষয়ে অবগত সে।আরিয়ানের পাশে বসে এগুোলো চিন্তা করে চলেছিলো।হঠাৎ আরিয়ানের কথায় সচকিত হলো,

“ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম হয়তো আর কখনো ঠিক হবেনা।”

“উহু।এটা ভুল কথা আমরা চাইলেই পারি।”

“তার জন্য আমাদের চাইতে হবে।কিন্তু আমাদের চাওয়ার বড্ড অভাব।যে দেশে রাস্তায় মানুষ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বসে সে দেশে উন্নতি হবে কী করে?”

“চাইলেই সম্ভব।তার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।”

“সচেতন নাকী কচু।তোমার রাজনীতি সম্পর্কে কতোটুকু জ্ঞান আছে?”

“একটুও নেই।আমি এসব নিয়ে কখনো মাথা ঘামায়নি।”

“তা ঘামাবে কেন?তোমার ভাই তো আবার নায়ক।তো সারাদিন মিডিয়া জগতের মসলাদার নিউজ নিয়ে পড়ে থাকো।”

আরিয়ানের একথায় ফুঁসে উঠলো সুবাহ।তার দিকে ঘুরে তর্জনি নাচাতে নাচাতে সুবাহ বলল,

“আরিয়ান আপনি বড্ড বেশী কথা বলেন।আমার মিডিয়া জগত নিয়ে আমার কোনো কালে ইন্টারেস্ট ছিলোনা।আর শুধু আমার ভাই না আপনার বোনও মিডিয়া জগতের সাথে জড়িত।”

“তুমিও বেশী কথা বলো প্রফেসর।”

“আপনি একটা শয়তান।চিন্তায় আছি আমাদের বাবুগুলো যদি আপনার মতো হয় তো কী হবে।”

সুবাহার মুখ থেকে বাবুর কথার শুনে বেশ অবাক হলো আরিয়ান।যার সাথে সে এক বছর থাকবে কীনা সন্দেহ অথচ সে তাকে নিয়ে সারাজীবনের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছে।তার সন্তানের মা হওয়ার আশা বুনছে।অথচ আরিয়ান সুবাহার সাথে ঠিকঠাক ভাবে কথাটাও বলেনা।এমনকি সারারাত সুবাহার জড়োসড়ো হয়ে ঘুমাতে হয় যাতে আরিয়ানের সংস্পর্শে সে না আসে।হুট করেই মেয়েটার জন্য বড্ড মায়া লাগলো আরিয়ানের।এই মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই।কিন্তু ওর ভবিষ্যতে যে খুব কঠিন সময় আসতে চলেছে।

“এইযে শুনেন দেখেন ওই বিলবোর্ডটা। দিহান ভাইকে কতো সুন্দর লাগছেনা? ঠিক রাজকুমারের মতো।”

সুবাহ আঙুল দিয়ে ইশারা করলো একজায়গায়। সেদিকে তাঁকিয়ে আরিয়ান যেনো জমে গেলো।দিহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রয়েছে মায়া।আর দিহান একহাত দিয়ে আস্টেপৃস্টে জড়িয়ে তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।তা আবার বিশাল আকারে বিলবোর্ডে।বিষয়টা দেখে ধপ করে উঠলো আরিয়ানের মাথা।এদিকে সুবাহ বলে চলেছে,

“ভাইয়াকে কতো সুন্দর লাগছে।সাথে মডেলটাকেও।”

মডেল শব্দটা শুনে মনে হয় রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো আরিয়ানের।এদিকে জ্যাম ছেড়ে গিয়েছে।আরিয়ান দ্রুত গাড়ী ছুটালো সুবাহার ভার্সিটির উদ্দেশ্য। কারণ তার মায়ার কাছে যেতে হবে।তার সাথে যে অনেক বোঝাপড়া বাকী!
,
,
,

চন্দ্রপ্রভা নিজের হাতে গড়ে তুলেছে রিশা।তার অক্লান্ত পরিশ্রম, নিরলস চেষ্টার ফলে চন্দ্রপ্রভা আজ এত গর্বের সহিত দাড়িয়ে রয়েছে।কখনো কোনো কিছুতে আপোষ করেনি সে।সব কাজ যথাসময়ে করেছে।কিন্তু আজ সে এক বিষয়ে বেশ বিরক্ত। এএস কোম্পানির একটা ব্র্যান্ডের ফটোশ্যুট ছিলো কালকে।অথচ আজকেই সেই ছবির বিলবোর্ড জায়গায় জায়গায়।একদিনে যে বিলবোর্ড তৈরী হতে পারে তা তার জানা ছিলোনা।তারমধ্যে যে মডেলের সাথে শ্যুট করার কথা ছিলো তার সাথেও করা হয়নি।সব মিলিয়ে বেশ বিরক্ত সে।

একনাগাড়ে মায়ার ছবি দেখে চলেছে দিহান।কী অদ্ভুত একটা নেশা কাজ করে মেয়েটাকে দেখে।কালকে রাতে বেশ কষ্টে নিজেকে সংবরণ করেছে সে।একটা মেয়ের সাথে এক ঘরে রাত কাঁটানো একটা পুরুষের জন্য যে কতোটুকু মুশকিল তা যে সেই পরিস্থিতির উপর দিয়েছে গিয়েছে সে জানে।

“মাহসিন তোমার কী মনে হয় মায়া আমার কথায় রাজী হবে?”

“স্যার আমি যদি বলি হবে।”

“আমিও তো সেকথাটাই বলি।”

“তাহলে প্রশ্ন করলেন কেন?”

“হুম সেটাও ভাবার বিষয়।আসলে মানুষের স্বভাব চরিত্রের মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষ তার করা অনুমান অন্যের কাছে ব্যক্ত করে পুলকিতবোধ করে।তো তোমাকে বলেও আমি পুলকিতবোধ করলাম।”

মাহসিন কিছু বলার আগে দিহান রিশা রুমে প্রবেশ করলো।

“হোয়াট ইজ দিস দিহান?একদিনে বিলবোর্ড কীভাবে তৈরী করলে।তার মান যদি নিম্নহয় তো আমাদের নামটা কতোটুকু খারাপ হবে ভেবেছো?”

“রিশামণি।তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো শুধু ছবিটা আমরা তুলে দেই।আর বিলবোর্ড তৈরীর কাজ সব তারাই করে।”

“তারপরও ছবি এডিট করতে সময় লাগে।আবার ম্যাগাজিনেও যাবে সেম ছবি।অথচ তুমি অন্য মডেল দিয়ে কাজ করিয়েছো।”

“তুমি কি ছবিগুলো দেখেছো রিশা?”

“নাহ এখনো দেখা হয়নি।”

“তো না দেখে এতগুলো কথা বলা উচিত না।দাড়াও দেখাচ্ছি।”

ছবিগুলো দেখে বেশ অবাক হলো রিশা।তার থেকে বেশী অবাক হলো মডেলের জায়গায় মায়াকে দেখে।গলাটা শুকিয়ে আসছে মায়ার।এ ছবিগুলো যদি আরিয়ান দেখে তো মায়ার কপালে দুঃখ আছে।অথচ পুরো শহরে ছবিগুলো ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।নাহ তার তাড়াতাড়ি আরিয়ানের কাছে যেতে হবে।যে করে হোক আরিয়ানকে বুঝাতে হবে এ বিষয়ে।

“কোথায় যাও রিশা?”

“আমার কিছু কাজ পড়ে গিয়েছে।আমি সেখানে যাচ্ছি।তোমার আজকে শ্যুটিং আছে তো।তা ভালোভাবে কভার করো।বেস্ট অফ লাক।”

“এক মিনিট রিশা।”

দিহানের কথায় থেমে গেলো রিশা।

“হ্যাঁ বলো।”

“আরিয়ান তো সুবাহার কেয়ার করে?”

“করে কিন্তু কেনো?”

দিহান রিশার দিকে কিছুটা এগিয়ে আসলো।তার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

“আমার বোন অনেক সহজসরল।তো দয়া করে তোমার ভাই যেনো তাকে কোনো কষ্ট না দেয়।আমার কানে একবার সুবাহার কষ্টের আর্তনাদ আসলে আমি তোমার ভাইকে ছাড়বো না।ঠিক আছে যাও।”

দিহানের কথায় কাঠ হয়ে গেলো রিশা।যে করেই হোক তার ভাইকে মায়ার থেকে দূরে সরাতে হবে।তা নয় ভবিষ্যতে কি হবে তা কল্পণা করে সে শিওরে উঠলো।
,
,
,

নিজেকে বারবার আয়নায় দেখছে মায়া।তার কপালটা পুরো লাল হয়ে আছে।অথচ দিহান বেশ আলতো করে অধর স্পর্শ করেছিলো।তখন ওতোটা লাল ছিলোনা কিন্তু এখন যখুনি মায়া আয়নায় নিজের মুখ দেখছে তখুনি মনে হয় কপাল আরো লাল লাগছে।বিষয়টা মায়ার কাছে বোধগম্য হচ্ছেনা।এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠলো।দুর্বা অনেক আগে কলেজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছে।হঠাৎ মায়া মনে হলো দিহান এসেছে।দিহান এসেছে তা ভাবতেই মায়ার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগলো।কোনোরকম নিজেকে সামলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।

দরজা খুলতে দেরী হয়েছে কিন্তু মায়ার গলা চেপে ধরতে দেরী হয়নি আরিয়ানের। গলা চেপে ধরা অবস্থায় টানতে টানতে মায়াকে বেডরুমে নিয়ে আসলো আরিয়ান।এনেই বিছানায় চেপে ধরলো।

“মডেল হয়েছিস তাই নাহ?নায়ককে জড়িয়ে তার সাথে ছবি তুলে পুরো শহরে ছড়িয়ে দিচ্ছিস।কেনো টাকার অভাব?তো আমি যেগুলো পাঠায়েছি ব্যাংকে ওগুলো কি তোকে কামড়ায় যে তোর নিজের রুপ দেখিয়ে টাকা কামাতে হবে।”

কথাগুলো বলে আরিয়ান মায়াকে ছেড়ে দিলো।আরিয়ানের ছাড়া পাওয়ার পরে সজরে কাঁশতে লাগলো মায়া।মায়ার কাঁশি দেখে আরিয়ান এগিয়ে গিয়ে পানি আনতে যাবে তখন দেখতে পেলো একটা ছেলের জ্যাকেট মায়ার রুমে।জ্যাকেটটা হাতে নিয়ে আরিয়ানের মনে হলো কোথায় জানি এটা দেখেছে।দিহানের কথা মাথায় আসতেই আরিয়ান ঘুরে এলোপাতাড়ি কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মায়ার গালে।টাল সামলাতে না পারে মায়া আবার বিছানায় পরে গেলো।তাতেও ক্ষান্ত হলোনা আরিয়ান।কোমড় থেকে বেল্ট খুলে ইচ্ছামতো মায়ার শরীরে আঘাত করা শুরু করলো।মায়া প্রতিবাদ করার সময় টুকুও পেলো না।

পুরো দশমিনিট ইচ্ছামতো মায়াকে আঘাত করলো আরিয়ান।ফাঁকা ফ্ল্যাটে মায়ার আর্তনাদ শোনার মতো কেও ছিলোনা।অঝোরে কেঁদে চলেছে সে।আঘাত করা শেষ হলে আরিয়ান ঝুঁকে মায়ার চুলের মুঠি ধরলো।তারপর বলল,

“শরীর বেঁচে টাকা কামানোর তোর কী খুব দরকার ছিলো?নায়ক দেখেছিস ওমনে বিছানায় চলে গেলি।তোকে তো এখন আমার রেইপ করতে মন চাচ্ছে।কিন্তু কি বলিস তো তোকে বৈধভাবে পাওয়ার ইচ্ছা আমার।এবং তা খুব তাড়াতাড়ি নিবো।নিজের নারীত্ব তো বলি দিয়েই দিয়েছিস।ওটার জন্য শাস্তি দিয়ে দিলাম।এখন আশা করি আর কোনো পুরুষকে নিজের বিছানায় ডাকবিনা।”

শাওয়ার ছেড়ে কেবল বের হয়েছে মায়া।তার চোখ মুখ গাল সব অসম্ভব লাল হয়ে ফুলে রয়েছে।আরিয়ান চলে গিয়েছে এক ঘন্টা আগে কিন্ত যাওয়ার আগে তলপেটে অনেক জোড়ে একটা লাত্থি দিয়ে গিয়েছে।ব্যাথায় মনে হয় মায়া এখন মরে যাবে।তার সাথে পুরো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জ্বলে যাচ্ছে।এটা আরিয়ানের কোন ধরণের ভালোবাসা। এটা তো সেই আরিয়ান না যাকে মায়া চিনতো।

“মায়ার তোমার কী হয়েছে?কে এভাবে মেরেছে?”

দুর্বা তাড়াতাড়ি এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরলো।কিছু জিনিস রেখে গিয়েছিলো দুর্বা। তা নিতেই বাসায় এসেছে।আর এসে মায়ার এ অবস্থা দেখতে পেলো।মায়ার শরীরে একসাথে এত ক্ষত দেখে ভয় পেয়ে গেলো দুর্বা।

“হায়-আল্লাহ!এগুলো কে করেছে?আরিয়ান স্যার?”

আরিয়ানের নাম শুনে কান্নায় ফেটে পড়লো মায়া।দুর্বার আর পুরো বিষয়টা বুঝতে বাকী রইলো না।বেশ কিছুক্ষণ পর মায়া শান্ত হলে দুর্বা কথা বলা শুরু করলো।

“মায়া তোমার এখন উচিত দিহান স্যারের কথামতো কন্ট্রাক সাইনা করা।”

“তুমি জানো এ ব্যাপারে?”

“হ্যাঁ আমি জানি এবং কালকে পুরো পাঁচবার পড়েছি পেপার্সগুলো।ওখানে তোমার ক্ষতি হবে এমন কিছু নেই।বরং লাভ হবে।আজকে যদি তোমার কোনো সাপোর্ট থাকতো বা তুমি অসহায় না হতে তাহলে আরিয়ান স্যার মারার সাহস পেতো না।তোমার খুঁটির প্রয়োজন মায়া।দিহান স্যার যদি সে খুঁটি হয় তাহলে তার থেকে শক্ত খুঁটি আর কেও হবেনা।”

“কিন্তু দুর্বা আমি নিজেকে কীভাবে বিক্রি করবো।”

” বিক্রি করার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে।মায়া তুমি সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন পড়েছো?”

“নাহ!”

“সাতকাহন উপন্যাসে দ্বীপাবলির ঠাকুরদা তাকে কতোগুলো কথা বলেছিলো
কথাগুলো ছিলো এরকম

“তুমি পথিক,পথ তোমার।সেই পথ রাজা তৈরী করেছেন না কোন অসৎ ধনীর টাকায় তৈরী হয়েছে তা তো তোমার জানার কথা নয়।পথিকের কাজ পথ ধরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া।শরীরের জন্য জীবন নয়,জীবনের জন্য শরীর।”
তো তোমার নিজের বেনিফিট কীসে তুমি তা বিবেচনা করো।দিহান স্যারের সাথে তোমার কোনো ক্ষতি হবেনা বরং লাভ হবে।তুমি আমার কথা বুঝতে পারছো মায়া?”

দুর্বার কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো মায়া।তারপর নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“আমাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে দুর্বা।যাতে করে আঘাতের দাগগুলো না বুঝা যায়।লাল টুকটুকে একটা শাড়ী আছে আমার।দিহান স্যারের কাছে আমি আজকে যাবো।আমি যে পথিক।আমার পথ চলা শুরু আমি আজ থেকেই করবো।”

চলবে,,