তিলকপুরের মিঞা বাড়ি পর্ব-০৪

0
176

#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
Sumon Al-Farabi
৪র্থ পর্ব

ঘুমের মাঝেই মনে হচ্ছে একটা ছায়া ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসছে। যখন ছায়াটা এক বারেই কাছে চলে আসছে তখন ভয় পেয়ে উঠে বসলাম।
– কি হয়েছে! এভাবে চমকে উঠলে কেন!
– ওহ আপনি রুমে আসছেন! আমি স্বপ্নে দেখলাম একটা ছায়া ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসতে তাই ভয় পেয়ে গেছলাম।
– আমি তোমায় ডাকতে আসলাম।
– সকাল হয়ে গেছে!
– সকাল আর ভোরের মাঝামাঝি এখন। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও বাইরে মর্নিং ওয়াকে যাবো।
– আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

একটা নিরিবিলি প্রাকৃতিকর মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।
– পরিবেশটা সুন্দর না!
– হুম। কতদিন যে ভোরের পরিবেশ দেখা হয় না!
– দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নাকি!
– তেমনই কিছুটা।
– তুমি কি জানো তোমায় কেন এখানে ডাকা হয়েছে!
– আপনি তো কিছু বলেন নি!
– তুমি যে বাসায় সে রাতে সেহেরি করছো সেইটা মিঞা বাড়ি নামে পরিচিত। তুমি যে মুরুব্বি মহিলা আর মেয়ের কথা বলছো তারা আজ থেকে প্রায় চার মাস আগে মারা যায়।

আমজাদ স্যারের কথায় গায়ের লোম শিহরণ দিয়ে উঠলো। আমার পা হঠাৎই থেমে গেলো। তাহলে কি আমি ঐদিন আত্মার সাথে ছিলাম।
– কি বলছেন স্যার!
– শক লাগলো না! তুমি যখন কাল আমায় বললে তুমি রমজানে ঐ বাসায় ছিলে তখন আমারও শক লেগেছিলো।
– সবাই একই দিনে কি করে মারা যায়!
– ঐ বাসার যে মেয়েটা ছিলো হাসনাহেনা! এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে তাকে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব করতো। এ নিয়ে মুরুব্বি চেয়ারম্যানকে বিষয় টা জানায়। কিন্তু ছেলে একেবারেই বখাটে পর্যায়ে চলে গেছে তাই সে বাবার কথা না শোনায় মুরুব্বি কে থানায় মামলা করতে বলে।
– তারপর কি হয়েছিলো!
– তারপর বিরক্তের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। যেহেতু ছেলেটা বখাটে আর নেশাখোর ছিলো তাই সবাই নিজের কথা ভেবে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে নি। তখন আমি নতুন নতুন এখানে এসেছি মাত্র। হাসনাহেনার দাদু থানায় বিষয়টা জানানোর পর ঐ ছেলেকে আমরা আটক করি মাদকসহ। কিন্তু চেয়ারম্যানের বউ এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। সে রাতেই চেয়ারম্যানের ছেলে আর তার বন্ধুরা ঐ পরিবারের সবাইকে হত্যা করে।
– কিভাবে হত্যা করে!
– মুরুব্বি আর তার বউকে বালিশ চাপা দিয়ে মারা হয় কিন্তু মেয়েটাকে
এতটুকু বলেই স্যার থেমে গেলো। এদিকে আমার চোখে পানি ছলছল করছে।
– মেয়েটাকে কি স্যার!
– মেয়েটাকে সংঘবদ্ধ ভাবে রেপড করা হয় তারপর তাকে… বাদ দাও।
এতক্ষণে আমার দুচোখে পানি গাড়িয়ে পড়তে শুরু করছে। স্যার কে ও দেখলাম চোখ মুছলো।
– আমার জীবনে সব থেকে নিকৃষ্টতর ঘটনা এটাই ছিলো। কিন্তু আমার হাতে ক্ষমতা থাকা স্বত্তেও আমি কিছুই করতে পারিনি।
– কেন!
– সেই বাড়ির আশেপাশে হাতে গোনা দুই তিনটে বাড়ি ছিলো তাদের ভাষ্যমতে মেয়েটা খারাপ মেয়ে ছিলো ঐ বৃদ্ধ মেয়েটাকে দিয়ে ব্যবসা করতো। প্রায় প্রতি রাতেই তাদের বাড়িতে দূর থেকে মানুষ আসতো। তাদের মাঝেই কেউ তাদের হত্যা করে।
– আপনারা কোনো তদন্ত করেননি!
– তদন্ত তো দূর সেই ঘটনার কোনো কেইস ফাইল হয়নি। এমপি সাহেবের বক্তব্য সমাজের একটা নষ্ট পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে এটা সমাজের জন্য ভালোই হয়েছে এটার আবার কিসের তদন্ত।

কিছু বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেলাম না।
– আমায় কেন ডেকেছেন!
– তাদের পরিবারের মৃত্যুর পর ঐদিকে মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে দেখা যেতো। তাই ঐদিকে কেউ যেতো না। হঠাৎই কিছু দিন আগে থানায় অভিযোগ হয় চেয়ারম্যানের ছেলের বন্ধুদের মাঝে কয়েকজন নিখোঁজ। যেদিন তোমায় কল করলাম তার দুই দিন আগে সেই বাড়ির চারপাশে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সেই গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে একসাথে চারজনের মৃত দেহ পাওয়া যায়। এলাকার সবার কথা হচ্ছে ভুতে তাদের মেরেছে।তাদের সবার পরিবার ও এটা মেনে নিয়েছে প্রায়। আসলে এইসব গ্রাম্য এলাকায় কুসংস্কারটা এখনো জীবিত আছে। কিন্তু তাদের শরীর অতিরিক্ত নেশাজাত দ্রব্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সেই সাথে শরীরে বিদ্যুৎ তাড়িত করার চিহ্ন। অতিরিক্ত নেশার অস্তিত্ব এটা স্বভাবিক কিন্তু শরীরে বিদ্যুৎ তাড়িত করার বিষয়টা আমার কাছে কিছুটা অদ্ভুত মনে হয়। তাই আমি আবার মিঞা বাড়ি যাই। সেখানে একটা কাগজে তোমার নাম্বার টা পাই।
– চেয়ারম্যানের ছেলের মতো আমিও হাসনাহেনার মায়ায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। তাই নাম্বার টা লিখে দেই যাতে সে আমার সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করার পরও কোনো কল আসেনা।
– তুমি কি এইসব ভুত পেত বিশ্বাস করো!
– মাঝে মাঝে করি। কিন্তু এগুলোর অস্তিত্ব যে একেবারেই নেই সেটাও তো বলা ঠিক হবে না। নয়তো সবাই ঐ বাড়ির আশেপাশে যেতে ভয় কেন পাবে!

– চলো ফিরে যাই অনেকটা হেঁটেছি।

ফিরে আসার সময় অরও অনেক কিছু গল্প হলো।
– তুমি তো আজকেই চলে যাবে তাই না!
– হ্যাঁ। দুপুরে একটা ট্রেন আছে। ঐটাতে করে রাতে পৌঁছে যাবো।
– একটা কথা তো বলাই হয়নি সেই ঘটনার পর চেয়ারম্যানের ছেলে ঢাকায় চলে যায়। ওখানে কিছু দিন আগে বিয়েও করে। শুনলাম গত পরশু নাকি নতুন বউ নিয়ে বাসায় এসেছে । আমি ওর সাথে আজ দেখা করতে যাবো দেখি এই ভুতের বিষয়ে তার কি মতামত ।

বাসায় ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে একটু শুইলাম। তখন প্রায় ১০ টা বাজে। রাসফি এসে ডাকছে।
– আংকেল! এই আংকেল!
চোখ খুলে রাসফির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
– কি হয়েছে পিচ্চি!
– আম্মু খেতে ডাকে।

আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলাম।
– সব সময় কি এমন দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা হয় নাকি!
– আমাদের হোস্টেল জীবন ভাবী সকালের খাবার বলতে কিছু নেই। আমরা একবারেই দুপুরে ব্রাঞ্চ করি।
– ব্রাঞ্চ আবার কি?
– ঐ ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ।
– বাহ। ভালো তো।
– স্যার কোথায়! দেখছি না যে।
– একটা কল আসলো আর তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেলো।

আমার খাওয়া শেষ করে দুইটা টিশার্ট বাইরে ছিলো সেগুলো ব্যাগে নিচ্ছি। হঠাৎ সেই সময় আমজাদ স্যার কল দিলো।
– কোথায় তুমি!
– বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।
– তোমার আজ বাসায় যাওয়া হবে না। তুমি বাসায় থাকো আমি আসছি।

তার ঠিক কিছুটা সময় পরেই পুলিশ জিপে করে আমজাদ স্যার আসলো। এসে কোনো প্রকার কথা না বলেই আমার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে গাড়িতে উঠালো।
আমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম কি জন্য আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন কিন্তু তিনি কোনো উত্তরই দিচ্ছেন না। রাগে ফোঁসফোঁস করছেন শুধু।

To be continue….