#তিলকপুরের_মিঞা_বাড়ি
Sumon Al-Farabi
#৭ম_পর্ব
হাসনাহেনাকে দেখার পর থেকে আমজাদ স্যার তেমন কোনোই কথা বলছেন না। আনমনে কি যেন ভেবেই যাচ্ছেন।
স্হানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুজনেই ছিলে যাওয়া জায়গার ট্রিটমেন্ট নিচ্ছি। ডাক্তার একটার পর একটা প্রশ্ন করছে। কিন্তু সেদিকে আমজাদ স্যারের কোনো ধ্যান নেই। তার মস্তিষ্ক জুড়ে বিরাজ করছে হাসনাহেনা। ডাক্তারের সব প্রশ্নের উত্তর আমিই দিচ্ছি।
ডাক্তার জিজ্ঞেস করলো- এই রোডে সচরাচর এমন এক্সি*ডেন্ট হয় না। আপনারা কি অসাবধানতায় বাইক চালাচ্ছিলেন!
ডাক্তারের প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবো ঠিক তখনই আমজাদ স্যার মুখ খুললেন – সুমন তুমি কতদিন হাসনাহেনা কে দেখেছো!
ডাক্তারের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে স্যারের দিকে তাকালাম। স্যার আমায় প্রশ্ন করলেও দৃষ্টি নিচের দিকে। এখানে এসেছে থেকেই ঐদিকে তাকিয়ে আছে।
– ঐ এক দিনেই দেখেছি স্যার।
– তুমি সেটাও তো দিনের বেলা দেখো নি তাই না!
– না। মধ্যরাতে সাহরি এর সময় দেখেছিলাম। লাইটের আলোতে।
– আমিও ওকে কয়েকবার দেখেছি। সেটাও বাস্তবে নয়, ছবিতে। কেস ফাইল ছিলো সেই ফাইলে ওর বান্ধবীর থেকে পাওয়া ছবিতে।
ডাক্তার এতক্ষণ আমাদের কথা শুনলো – আপনারা কি নিয়ে আলোচনা করছেন!
– তেমন কিছু না। আমরা কি এখন যেতে পারবো!
ডাক্তারের উত্তর দেওয়ার আগেই সেখানে ভাবী এসে হাজির। দু-চোখে পানি টলমল করছে। কিন্তু ভাবীর সাথে একটা মেয়ে। সে ও কান্না করছে। মেয়েটাকে এর আগে ভাবীর সাথে দেখি নি।
আমজাদ স্যার ভাবীর দিকে তাকালো – তুমি এখানে! তোমাকে কে বললো?
– আমি জানিয়েছি স্যার।
ভাবী আর মেয়েটি এসে স্যারের দুপাশে দুজন বসলো – তোমায় কতবার বলেছি বাইক সাবধানে চালাবা। আমার কথা একটু শুনলে কি হয়!
– আমার থেকে সুমনের বেশি ক্ষতি হয়েছে। আমার তো তেমন কিছুই হয় নি। ডাক্তার, সুমন ঠিক হতে কতদিন সময় লাগবে!
– ওনার হাতের কনুই এর অস্থির বিচ্ছেদ হয়েছে। তাই কিছু দিন সময় লাগবে। এর মাঝে উনি নিজের হাতে হয়তো খেতেও পারবে না।
– সরি ভাই। আমার জন্য তোমার ক্ষতি হয়ে গেলো।
– এসব এখন থাক। এগুলো তো আপনি ইচ্ছে করে কিছুই করেন নি।
ডাক্তার ভাবীকে বললো- আপনি একটা রিকশা বা অন্য কিছুতে করে উনাদের বাসায় নিয়ে যান।
– আচ্ছা ।
দুইটা রিকশা নিয়ে আসছে। ভাবী আমজাদ স্যারকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় উনার সাথে থাকা মেয়েটাকে বললো- রুহী, তুমি সুমনকে ধরে রিকশা পর্যন্ত নিয়ে আসো।
ভাবী এবং আমজাদ স্যার একটা রিকশায় অন্যটায় আমি এবং রুহী।
পুরোটা রাস্তায় তেমন কোনো কথা হলো না কিন্তু বাসায় আসার আগে আগেই হঠাৎ রুহী বললো- আপনারা তো এক বাইকেই ছিলেন তবে আপনার ক্ষতি এতো বেশি হলো কিভাবে!
– স্যার বুঝতে পেয়ে লাফিয়ে পড়ে কিন্তু আমি বাইকেই ছিলাম। অন্য দিকে তাকিয়ে। তাই এমনটা হয়ে যায়।
– ওহ আচ্ছা ।
এরপর আর তেমন কোনো কথা হয়নি।
এখন রাত।
রুমে শুয়ে আছি। রাসফি এসে আমার সাথে অনেক গল্প করছে। আজ স্কুলে কি হয়েছে, কার কার সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে এসব। এরপর হঠাৎই বললো- আংকেল তোমার মোবাইল টা কই! একটু গেম খেলবো।
শারীরিক ড্যা*মেজ এর জন্য এতক্ষণ মোবাইলের কথা মাথাতেই ছিলো না। পকেটে হাত দিলাম, সেখানে মোবাইলের অস্তিত্ব বুঝতে পেয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কিন্তু যখন সেটা পকেটে থেকে বের করলাম তখন চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। পুরো স্কিন প্রোটেক্টর ভেঙে গেছে।
– এটা তো ভেঙে গেছে বাবা।
সেই সময় রুহী নামের মেয়েটা খাবার হাতে দরজায় নক করলো।
– আসবো!
– হ্যাঁ , অবশ্যই।
– আপনার জন্য খাবার এনেছিলাম।
– আমায় ডাকলেই তো হতো।
– ভাবী এখানে দিতে বললো।
– আচ্ছা রেখে দিন। আমি খেয়ে নিবো।
– একা একা খেতে পারবেন!
– না পারলেও চেষ্টা তো করতেই হবে তাই না!
– রাসফি তুমি রুমে যাও মা ডাকছে।
রাসফি চলে গেলো। তবে আমার কল্পনাতেও ছিলো না রুহী নিজের হাতে আমায় খাইয়ে দিবে।
– স্যারের কি অবস্থা এখন!
– এইটুকু সময়ে কি আর অবস্থার পরিবর্তন হবে! তবে আপনার থেকে সুস্থ।
– উনি খেয়েছেন!
– হ্যাঁ।
– আপনি?
– আমি ও খেয়েছি। ( পাশে পড়ে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে বললো) এটার তো অবস্থা একবারেই শেষ ।
– তেমন কিছু হয়নি। শুরু স্কিন প্রটেক্টরটা ভেঙে গেছে। নতুন একটা লাগিয়ে দিলেই হবে। আচ্ছা আপনি এখানে!
– আমি আপনার স্যারের বোন। ঘুরতে আসছি এখানে।
– ওহ আচ্ছা ।
খাওয়া শেষ করে ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়েছি।
সময় কত হবে সেটা ঠিক আন্দাজ করতে পারছি না। তবে অদ্ভুত একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। কিন্তু নড়তে পারছি না। অনেকটা সময় চোখ বন্ধ করে থাকার পর ঘুম এসেছিল। সেটাও ভেঙে গেলো। পুরো শরীর ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে আছে। ব্যাথা সেটা মনের হোক বা শরীরের রাত নামলেই সেটা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। তবে শরীরের ব্যাথায় দুচোখ জুড়ে ঘুম নামলেও মনের ব্যাথায় ঘুম নীলিমায় বিলিন হয়ে যায়।
বাইরে কারো একজনের হাটার শব্দ কানে আসছে। হয়তো ভাবী কোনো প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছে তাই সেদিকে তেমন একটা মন দিলাম না। কিন্তু পরক্ষণেই হঠাৎ উদ্ভট একটা শব্দ হলো। শব্দ কানে আসতেই আমি তাড়াহুড়ো করে উঠতে লাগলাম কিন্তু শরীর অক্ষম। তাৎক্ষণিক আমজাদ স্যার আমার রুমের দরজা খুলে ভিতরে আসলেন।
– সুমন! তুমি ঠিক আছো? এই অদ্ভুত শব্দ আসলো কই থেকে!
– আমি ও তো সেটাই ভাবছি। ভাবী রুহী এরা ঠিক আছে!
তখনই ভাবীর ডাক কানে আসলো।
– এই শুনছো এদিকে আসো তাড়াতাড়ি।
আমজাদ স্যার সেদিকে গেলো। আমিও ধীরে ধীরে হেঁটে হেঁটে সেদিকে এগিয়ে গেলাম।
রুহী অচেতন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে। দ্রুত ওকে বিছানায় তুলে মুখে পানি দিতেই ওর জ্ঞান ফিরলো। বড় বড় চোখ করে ও সবাইকে দেখছে । কিছুই বলছে না।
– রুহী কি হয়েছে তোমার!
ভয়ে রুহীর চেহারা কুঁকড়ে নিয়েছে। ভাবীকে নিজের সব শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে ।
– ভাবী, ভাবী এখানে ভুত আছে। আমি একটা মেয়েকে দেখেছি। কি বিশ্রী দেখতে। সম্পুর্ন মুখ ঝ*লসে যাওয়া। আমার দিকে আসছিলো। মুখ দিয়ে কেমন শব্দ করছিলো। আমি এখানে থাকবো না ভাবী। এখানে ভুত আছে।
রুহী বলতে বলতেই কেঁদে দিলো। আমজাদ স্যার এবার আমার দিকে বিষ্ময় চোখ তাকালো। আমিও বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলাম স্যারের দিকে।
To be continue…