তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-২৪+২৫

0
661

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২৪

কুৎসিত চেহেরা কথাটা শুনেই আদিয়াত ভীষণ রেগে যায়। রাগে আদিয়াতের কপালের রগগুলো ফুলে ওঠে। কণার গাল চেপে ধরে।
চিৎকার করে বলে,

কতবার বলেছি তোকে নিজেকে কুৎসিত বলবি না। নিজেকে ছোট করে দেখবি না। তোর আমার পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতা আছে কী না নেই? সেই বিচার আমি করবো। তুমি কেনো বুঝতে পারো না তুমি আমার কাছে কি। তুমি আমার মনের রাজ্যের রাণী। আমার শেহজাদী। তুমি আমার কাছে অলওয়েজ সুন্দর। আমি তোমাকে ভাসোবাসি, তোমার সুন্দর মনটাকে ভালোবাসি। আমি তোমার সৌন্দর্যকে ভালোবাসি না। তুমি দেখতে কালো নাকি কুৎসিত সেটা আমার কাছে মেটার করে না।

আদিয়াত নিজের কপাল কণার কপালের সাথে ঠেকায়। জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছে। আদিয়াতের নিশ্বাসগুলো কণার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে। কণার শিঁরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে কণা। আদিয়াত টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালায়। আদিয়াত কণার গালের দুই পাশে হাত রেখে বলে,

আমার আর কিছু চাই না। আমি শুধু তোমাকে চাই। আই ওয়েন্ট টু ইউ। আমার শুধু তোমাকেই চাই। বিয়ে করবে আমায় তুমি?

কণা এক ঝটকায় আদিয়াতের থেকে দূরে সরে যায়। কণার শরীর এখনো কাঁপছে। তার কানে বার বার বাজছে ‘বিয়ে করবে আমায় তুমি’। কণার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। ভালো, খারাপ দুটোর মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। প্রিয় মানুষটার মুখ থেকে বিয়ের কথা শুনে কার না ভালো লাগে। কণারও ভালো লাগছে। আর চার পাঁচটা মেয়ের মতো তার জীবনটা স্বাভাবিক হলে সেও খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতো। কিন্তু সে খুশিতে হতে পারছে না। তার সাথে বিয়ে হলে যে আদিয়াতের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আদিয়াতকে সারাজীবন তার মতো একটা মেয়েকে বয়ে বেড়াতে হবে। কণা মলিন কন্ঠে বলে,

প্লিজ আপনি এখান থেকে চলে যান। আমাতে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাবেন নাহ। প্লিজ দেখিয়েন নাহ মিথ্যা সংসার স্বপ্ন। স্বপ্ন ভেঙে গেলো অনেক কষ্ট হয়। একবার স্বপ্ন ভেঙে গেলে তা আর জুড়ে দেওয়া যায় না।

আমি তোমাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছি না। দেখাচ্ছি না মিথ্যা সংসারের স্বপ্ন। আমি তোমাকে সত্যিই বিয়ে করতে চাই। আমি কোনো দিন তোমার স্বপ্ন ভাঙতে দিব না। তোমার প্রতিটা স্বপ্ন পুরণে পাশে পাবে আমাকে।

এটা কখনোই সম্ভব না। আপনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন। তাই বিয়ে করতে চাইছেন। কিন্তু আপনার মা? সে কী আমাকে মেনে নিবে? মেনে নিবে নিজের একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে এমন একটা মেয়েকে? মেনে নিবে না। ইনফ্যাক্ট কেউই মেনে নিবে না। সবাই নিজের ছেলের পাশে একটা রাজকন্যা চায় যে সবদিক দিয়েই পারফেক্ট।সেখানে আমি তো কোনো দিক দিয়েই পারফেক্ট নই। আপনি আপনার বাবা – মার একমাত্র সন্তান। তাদেরও তো আপনাকে স্বপ্ন আশা আছে। আপনার বিয়ে নিয়ে ও তাদের অনেক স্বপ্ন আশা আছে। আপনি এভাবে তাদের স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারেন নাহ। আমি বুঝি স্বপ্ন ভাঙার কতো কষ্ট। ভাঙা স্বপ্নগুলো ঠিক কতোটা পুড়ায়।

কণা একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে, আপনি এখান থেকে চলে যান। আপনি যেটা চাইছেন সেটা কখনোই সম্ভব না। আমি আপনাকে কোনো দিনও বিয়ে করবো না। ইনফ্যাক্ট আমি বিয়েই করবো না।

আদিয়াত কণার অনেকটা কাছে এসে বলে, বিয়ে তো তুমি করবেই এবং সেটা আমাকেই করবে। আজ হোক বা কাল। আমি ফিল্মের নায়কদের মতো ডায়লগ দিব না যে আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো। সারাজীবন অপেক্ষা করার মতো ধৈর্য আমার নেই। আমি আমার জিনিস জোড় করে আদায় করে নিতে পারি। আর তুমি তো আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তোমাকে তো আমার হতেই হবে। তোমার সমস্যা তো আমার বাবা-মা। মানে তুমি ভাবছো আমার বাবা-মা তোমাকে মেনে নিবে না। তোমার সেই ধারণা খুব তাড়াতাড়ি ভুল প্রমাণিত হবে। আমি অতি শীঘ্রই আমার বাবা-মাকে নিয়ে তোমাদের বাসায় আসবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। তোমাকে লাল টুকটুকে শাড়ী পড়িয়ে আমার বউ করে নিয়ে যাব। তারপর আমাদের বাসর হবে। আচ্ছা বাসর ঘরে কী কী হয় জান তো? না জানলে আমার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে।

কথাটা বলেই আদিয়াত কণার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট দুটো পাউট করে কিস দেখায়। আদিয়াতের এমন আচারণে কণা থতমত খেয়ে যায়। সে মোটেও আদিয়াতের কাছ থেকে এমন বিহেভ আশা করেনি। পরমুহুর্তেই কণার গাল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে রক্তিম আভা। লজ্জায় লালা রাঙা হয়ে যায় মুখটা। লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে। কণার এমন মুখ দেখে আদিয়াত বাঁকা হাসে। সেই হাসি দেখে কণা আরো লজ্জা পেয়ে যায়।

তোমার কাছে ভালোবাসা মানে কী আমি জানি না। আমার কাছে ভালোবাসা মানে। মাইলের পর মাইল এক সাথে হাটে যাওয়া,কিংবা ঘণ্টার পর ঘন্টা কারু জন্যে আপেক্ষার নাম ভালবাসা নয় ।ভালবাসা হল, হৃদয়ের সাথে মিশে থাকা,কারু অস্তিত্তের উপস্থিতি নিজের মাঝে ধারন করা ।নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে শুধু তাকেই অনুভব করা, তার ছোট থেকে ছোট চাওয়া গুলো, পুরন করার আস্থিরতা,তার ভালমন্দ সবখানেই নিজেকে খুজে পাওয়া ।

ভালবাসা হল,বেচে থাকার আশায় বেচে থাকা,যে বেচে থাকার আশা জাগায় তাকেই ভালবাসা,তার কাছেই নিজেকে সপে দেয়া ।ভালবাসা কোন ওয়াদা রক্ষা নয় ভালবাসা হল,কারু প্রতি বিশ্বস্ত থাকা ।শুধু তাকেই ভালবাসি,এ বিশ্বাসেই তার হাতটা ধরা ।তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা নয়,তার স্বপ্ন গুলোকে পুরন করা ।

কথাগুলো বলে আদিয়াক কণার কপালে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিয়ে চলে যায়। কণা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিয়াতের যাওয়ার দিকে। কণা কাথাটা গায়ে ভালো করে জড়িয়ে নেয়। তারপর আপন মনে বিড়বিড় করে বলতে থাকে।

আমার কাছে ভালবাসা মানে হল,মনের মাঝে কারো ছবি একে রাখা,তার যত্ন করা, তাকে মূল্যায়ন করা, তার সম্মান রক্ষা করা, ভালবেসে যাওয়া ।

আমার মনের মাঝে তো কবেই আপনার ছবি এঁকে রেখেছিলাম। শুধু বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে আপনিই আমার সেই প্রেমিক পুরুষ। আপনাকে এখানে দেখার পরও মানতে কষ্ট হচ্ছিল যে আপনিই আমার সেই প্রেমিক পুরুষ। যার প্রতিটি কথা আমি ভেদ বাক্যের মতো মেনে ছিল। ফোনের মাঝেও যার কথা শুনে আমি লজ্জায় লাল হয়ে যায়। যাকে কল্পনা করে আমার রাত কেটে যায়। আমিও আপনাকে ভালোবাসি প্রিয়ে। খুব ভালোবাসি।

কণা টেবিল ল্যাম্পটা অফ করে শুয়ে পড়ে। কণা শুয়ে পড়তেই আদিয়াত কণার রুমের দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। সে এখান থেকে যায়নি। আদিয়াত অপেক্ষা করছিল কণার কথাগুলো শোনার। তার বুকের ওপর থেকে মস্ত বড় একটা পাথর নেমে গেলো। তার প্রেয়সীও তাকে ভালোবাসে। আদিয়াতের কাছে কণাদের ফ্ল্যাটের এক্সট্রা চাবি আছে। তাই কণাদের ফ্ল্যাটে তার আসতে বা যেতে কোনো সমস্যা হয় না। আদিয়াক নিঃশব্দে কণাদের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায়।

৫৩

এলামের শব্দে আরুহির ঘুম ভাঙে। সে দ্রুত ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়। ভার্সিটির যাওয়ার জন্য। এর মাঝেই তার ফোনটা বেঁজে ওঠে। ফোনের স্কিনের নামটা দেখেই তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে। ফোনটা রিসিভ করেই আরুহি বলে,

উফ তুমি এতো অধৈর্য হচ্ছো কেনো? এতো অধৈর্য হলে চলে। অপেক্ষা করো আমি খুব তাড়াতাড়ি এখানে চলে আসবো। আমার এখানের কাজটা কম্পলিট হলেই চলে আসবো। জানো না অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়ে।

কথাগুলো বলেই আরুহি ফোনটা রেখে দেয়। আরুহি রেডি হয়ে আরেকবার নিজেকে আয়নায় দেখে নেয়। আজকে সে অনেক বড় কাজ করতে চাচ্ছে। কারো পাপের শাস্তি দিতে চাচ্ছে। আরুহি রেডি হয়ে আদিয়াতের সাথে বেরিয়ে পরে।

আদিয়াতের বাসা থেকে ভার্সিটি বেশি দুরে না বিধায়। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই ভার্সিটিতে পৌছে গেলো। আরুহিকে অন্য একটা ছেলের গাড়িতে দেখে আদ্রিয়ান ভীষণ রেগে যায়। আরুহি গাড়ি থাকে নামতেই পড়ে যেতে নেয় আদিয়াত এসে ধরে ফেলে। এটা দেখে যেনো আদ্রিয়ানের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। দৌড়ে এসে আদিয়াতকে ধাক্কা দিয়ে আরুহির থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আদিয়াতকে ধাক্কা দিতেই আরুহি আদ্রিয়ানের গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারে।

চলবে…….

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২৫

আদিয়াতের বাসা থেকে ভার্সিটি বেশি দুরে না বিধায়। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই ভার্সিটিতে পৌছে গেলো। আরুহিকে অন্য একটা ছেলের গাড়িতে দেখে আদ্রিয়ান ভীষণ রেগে যায়। আরুহি গাড়ি থাকে নামতেই পড়ে যেতে নেয় আদিয়াত এসে ধরে ফেলে। এটা দেখে যেনো আদ্রিয়ানের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। দৌড়ে এসে আদিয়াতকে ধাক্কা দিয়ে আরুহির থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আদিয়াতকে ধাক্কা দিতেই আরুহি আদ্রিয়ানের গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারে।

আকস্মিক ঘটনায় আদ্রিয়ান হতভম্ব হয়ে যায়। আদিয়াতের ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে বাঁকা হাসি। আদিয়াতকে অন্য কেউ ধাক্কা দিলে হয়তো তাকে এতোক্ষণে মেরে আধমরা করে দিতো। কিন্তু আদ্রিয়ানের বেলা সে এমন কিছুই করলো না। বরং আদিয়াতের চোখে মুখে ফুটে ওঠেছে খুশির ঝলক। আদ্রিয়ান গালে হাত দিয়ে আরুহির দিকে তাকিয়ে বলে,

আরুহি তুমি আমাকে মারলে?

হ্যাঁ মারলাম। তোমার সাহস হয় কী করে ওর গায়ে হাত তোলার?

তুলবো না তো কী করবো? এই ছেলের সাহস হয় কী করে তোমাকে ছোঁয়ার। ইচ্ছে তো করছে ওকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতে।

কথাটা বলেই আদ্রিয়ান আদিয়াতের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই আরুহি আদ্রিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আদিয়াত গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে।

ওকে টার্চ করলেও আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

এই তোমার এতো জ্বলে কেনো? হ্যাঁ? নতুন বয়ফ্রেন্ড নাকি? এখন আমাকে আর ভালো লাগে না? নতুন পাইছো?

আমার বয়ফ্রেন্ড নাকি বয়ফ্রেন্ড না সেই কৈফিয়ত কী তোমাকে দিবো?

কেনো দিবে না? তুমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য। তুমি আমার সাথে রিলেশনে থাকা অবস্থায় আরেক জনের সাথে রিলেশনে যেতে পারো না। টাকা দেখছো গাড়ি দেখছে আর গলায় ঝুলে পড়ছো। তোমরা এমনি একজন দিয়ে তোমাদের মন ভরে না। নিত্য নতুন বয়ফ্রেন্ড লাগে। জামা কাপড়ের মতো বয়ফ্রেন্ড চেইঞ্জ করো। তোদের লজ্জা করে না একজনের ইমোশন নিয়ে খেলতে।

যাস্ট সাট আপ। তুমি আমাকে লোভী বলছো। আমি টাকা আর গাড়ির লোভে একজনের গলায় জুলে পড়েছি। তোমার কোনো ধারণা আমি কত টাকার মালিক? না থাক তোমাকে এসব বলে লাভ নেই। আমার একজন দিয়ে মন ভরে না নাকি তোর একজন দিয়ে মন ভরে না। নিত্য নতুন গার্লফ্রেন্ড তো তুই চেইঞ্জ করিস। আজ একটা কাল একটা। বিয়ের কথা দিয়ে দুই তিন দিন প্রেম করে ছুঁড়ে ফেলে দিস। এই পর্যন্ত কতগুলো মেয়ের ইমোশন নিয়ে খেলেছিস তার কোনো হিসাব তোর কাছে আছে? জানি নেই। তোদের মতো ছেলেকে দেখলে আমার ঘৃণা হয়। ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসে। বুঝতে পেরেছিস? তোদের মতো নিকৃষ্ট মন মানসিকতার মানুষ এসব বুঝতে পারবে না।

আদ্রিয়ান মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে, এসব তুমি কী বলছো আরুহি? আমি আজ একটা কাল একটা এভাবে গার্লফ্রেন্ড চেইঞ্জ করি? আমি কোন দিন কোন মেয়ের ইমোশন নিয়ে খেললাম? কাকে বিয়ের কথা দিয়ে দুই দিন প্রেম করে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি? তুমি আমার নামে এসব মিথ্যা অপবাদ দিতে পারো না।

মিথ্যা কথা একটু কম বলো। একদম দুধে ধোয়া তুলসি পাতা হওয়ার চেষ্টা করবি না। আমি তোর ক্যারেক্টার সম্পর্কে সব জানি। মেয়েবাঁজ। আজ এই মেয়ে তো কাল অন্য মেয়ে।

সব মিথ্যা। আরুহি বিশ্বাস করো সব মিথ্যা। তুমি যা জানো সব মিথ্যা। তুমি আমার জীবনের প্রথম নারী। তোমার আগে আমার জীবনে অন্য কোনো মেয়ে আসেনি। তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা। তুমি ব্যতীত আমি অন্য কাউকে ভালোবাসিনি।

হা হা হা। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করবেন নাহ মিস্টার আদ্রিয়ান। তুমি যে কেমন তা এই ভার্সিটির অনেকেই জানে।অধিকাংশ স্টুডেন্টই তোমার চরিত্র সম্পর্কে অবগত। শুধু মাত্র তোমার জন্য কণার মতো একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। তোমার জন্য ওর ওপর এ্যাটাক করা হয়। ওর ফুলের মতো চেহেরাটাকে নষ্ট করে দেওয়া হয়। কণার সৌন্দর্য শেষ হয়ে যেতেই ছোঁয়ার সাথে রিলেশনে চলে গেলে। কণাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে। আমাকে পেয়ে ছোঁয়াকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে। আল্লাহ জানে এভাবে আর কতো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছো। ভালোবাসা শব্দটা আর যাই হোক তোমার মতো অমানুষের মুখে মানায় না।

আরুহি আমি চেইঞ্জ হয়ে গিয়েছি। বিশ্বাস করো আরুহি আমি আর আগের মতো নেই। আগে হয়তো আমি অনেক মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছি। টিস্যু পেপারের মতো মেয়োদের ইউজ করেছি। কিন্তু আমি এখন একদম পাল্টে গেছি। তোমার ভালোবাসা আমাকে পাল্টে দিয়েছে। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আর কাউকে না।

চুপ করো। শত্রুকে বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু কোনো প্রতারককে বিশ্বাস করা যায় না। কারণ এরা সুযোগ পেলেই প্রতারণা করবে। আজকে থেকে আপনার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।

তুমি এমনটা করতে পারো না। আরুহি প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করো। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেয়ো না।

আপনি যখন প্রেম প্রেম খেলা করে সম্পর্ক শেষ করে দিতেন তখন তারাও আপনাকে এভাবে বলতো। এরকম করে আহাজারি করতো। আপনার সামনে চিৎকার করে কাঁদতো। কিন্তু তাদের কান্নার শব্দ আপনার কানে পৌছায়নি। হয়তো পৌছে ছিল কিন্তু পাষাণ হৃদয়কে গলাতে পারেনি। আজকে আপনার আহাজারি আমার কাছে শুধু মাত্র অভিনয় মনে হচ্ছে। এতো কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। আজকে থেকে আপনার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ। আচ্ছা সম্পর্ক কী আদোও ছিল? আমার তো মনে হয় না। আমি আপনার সাথে শুধু অভিনয় করেছি ভালোবাসার। আপনাকে বুঝাতে চেয়েছি কাউকে ভালোবেসে ঠকে গেলে কতোটা কষ্ট হয়। জানি আমি যে উপায়ে আপনাকে সত্যিটা বুঝিয়েছি সেটা অন্যায়। কিন্তু আর কোনো উপায় ছিল না। আপনাকে এভাবে না বুঝালে আপনি সত্যিটা উপলব্ধি করতে পারতেন নাহ। একের পর এক মেয়ের জীবন নষ্ট করতে থাকতেন। আজকে থেকে আপনিও সেই সব মেয়েদের কষ্ট অনুভব করতে পারবেন। যাদের আপনি ঠকিয়ে ছিলেন। আমি আসি। আমি একজনকে অনেক ভালোবাসি তার কাছেই ফিরে যাচ্ছি। বলবো না ভালো থাকবেন বলবো তাদের কষ্টটা অনুভব করুন যাদের সাথে ভালোবাসা নামক প্রতারণা করেছিলেন। আসছি।

আরুহি গিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে। আদিয়াত গাড়িতে ওঠতে যাবে তখনি কেউ পিছন থেকে আদিয়াতকে জড়িয়ে ধরে। প্রথমে আদিয়াত ভীষণ রেগে গেলেও পরে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। সে বুঝতে পেরেছে এটা কে? তার প্রেয়সীর গায়ের স্মেল যে জানান দিচ্ছে এটা তার প্রেয়সী। আদিয়াত পিছন ঘুরে কণাকে নিজের বাহুর বন্ধনে আটকে নেয়। আদ্রিয়ান অবাক হয়ে কণা আর আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে।

কী ব্যাপার মেডাম এতো খুশি যে? খুশিতে এতো টাইট হাগ। মনে হচ্ছে ভীষণ খুশি হয়েছেন। খুশিতে স্থান, কাল, সময় সব ভুলে গেছেন। তা আপনার খুশির কারণ কী এই অদম জানতে পারে?

অবশ্যই। কেনো নয়? আজকে আমি ভীষণ খুশি আর তার সাথে অনেক এক্সাইটেট।

আচ্ছা আচ্ছা সব শুনবো। আগে গাড়িতে ওঠো। তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো। আর যেতে যেতেই তোমার খুশির কারণ জেনে নিবো।

ওকে।

আদিয়াত আর কণাও গাড়িতে ওঠে পড়ে। কণা একবারের জন্যও আদ্রিয়ানের দিকে ফিরে তাকায়নি। আদ্রিয়ানের সামনে দিয়ে আদিয়াতের গাড়ি চলে যায়। গাড়ির ভিতর থেকে কণার হাসির শব্দ ভেসে আসছে। আদ্রিয়ান হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়ে। আজ সে নিঃস্ব। পেয়েও সব হারিয়ে ফেলছে। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অনেকে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছে।

আদ্রিয়ান নিজের ওপরই নিজের হাসি পাচ্ছে। সে হিরে রেখে কাঁচের পিছনে ছুটেছে এতোদিন। ভালোবাসা পেয়েও সে হারিয়ে ফেলেছে। যে কণাকে সে ঠকিয়ে ছিল। সেই কণাও সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়ে গেছে। সে যাদেরকে ঠকিয়েছে সবাই সুখে আছে। শুধু সেই দুঃখের সাগরে ভাসছে।

চলবে…….