তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-২৮+২৯

0
626

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২৮

কণা দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে, আপনি উনাকে বলে দিবেন আমি উনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি বেঈমানদের মনে রাখি না। আর উনাকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিবেন। একটা বিষয়ে আমি উনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। উনি আমাকে এভাবে ছেড়ে না গেলে আমি আমার সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকে পেতাম নাহ। যার ভালোবাসার নেই কোনো ছলনা। যে আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। আসছি। আমার ভালোবাসার মানুষ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

কণা চলে যায়। ফাহিম কণার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আদ্রিয়ান খাঁটি ভালোবাসার কদর করতে পারলো না। আদ্রিয়ান ভালোবাসার মানুষ পেয়েও হারিয়ে ফেললো। সে তো পায়নি। সেও কণাকে ভীষণ ভালোবাসতো। কিন্তু ফাহিম জানে সে কণাকে সুখী করতে পারবে না। তার মা কখনোই কণাকে মেনে নিবে না।

তবে আজকে সে ভীষণ খুশি হয়েছে এটা শুনে যে কণা তার সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেছে। যে কণাকে আগলে রাখবে। সে হয়তো তার ভালোবাসার মানুষকে পায়নি। কিন্তু কণা যাতে তার ভালোবাসার মানুষটাকে পায়। ফাহিম মনে মনে দোয়া করলো কণা যেনো তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে সুখী হয়।

ফাহিমও লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে গেলো। এখন সে আদ্রিয়ানের কাছে যাবে আর কণার বলা কথাগুলো বলবে।

৫৮

সাফাত ভার্সিটির পিছনের দিকে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। এই কয়েক দিনে সে অনেকটাই সিগারেটে আশক্ত হয়ে গেছে। হঠাৎই তার ঘাড়ে কেউ হাত রাখে। কিন্তু সাফাত একটু চমকায়নি। সে জানে এটা কে। এই কয়েকদিন অহি কারণে অকারণে তাকে বিরক্ত করেছে। অহি মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত করেছে। সারাদিন তাকে ফলো করে। সাফাত কোথায় যায় না যায় সব। সাফাত অহির ওপর বিরক্ত হয়ে গেছে।

আপনি সিগারেটও খান? আগে তো আপনাকে সিগারেটের আশেপাশেও যেতে দেখি নাই। সিগারেটে ধোয়ায় আপনি কাশতে কাশতে যক্ষা রোগী হয়ে যেতেন। সেই আপনি সিগারেট খাচ্ছেন? হাউ ইট’স পসিবল? কবে থেকে সিগারেট খাওয়া শুরু করলেন? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি সিগারেট খাচ্ছেন।

পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। পাল্টে দেয় মানুষকে। পরিস্থিতির কারণেই নরম মানুষটাও পাথরে পরিণত হয়। সিগারেট খাওয়া তো একটা সামান্য ব্যপার। ইট’স নরমাল। অনেক সময় অনেক কিছু বিশ্বাসযোগ্য নাহলেও বিশ্বাস করতে হয়। বন্যা এখন আর আমার না অন্য কারো এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হয়। আমি কী কখনো ভেবেছিলাম বন্যা আমার না হয়ে অন্য কারো হবে? আমি কল্পনাও করি নাই বন্যাকে ছাড়া কোনোদিন থাকতে হবে। কিন্তু আজ দেখো। এতোগুলো দিন আমি বন্যাকে ছাড়া আছি। পৃথিবীর অনেক কিছুই আছে যেগুলো আমাদের বিশ্বাসযোগ্য না। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস করতে হয়। এই দেখো বন্যা এখন আর আমার নেই এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হয়।

সাফাত কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেই অহি পিছন থেকে ডেকে ওঠে। কোথায় যাচ্ছেন? কিন্তু সাফাত কোনো কথা না বলেই চলে যায়।

৫৯

নিতু ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল তখনি আসিফ পিছন থেকে নিতুকে জড়িয়ে ধরে। কাধ থেকে চুলগুলো সরিয়ে গাড়ে নাক দিয়ে স্লাইড করে। নিতু একদম স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আসিফের স্পর্শ তার মনের মাঝে কোনো রূপ অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে না। আসিফ নিতুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বন্যার দুই গালে দুই হাত রাখে।

নিতু তুমি আমাকে ভালোবাসতো?

নিতু কিছুটা রেগে বলে,

আর কতো বার বলবো আমি তোমাকে ভালোবাসি। কী করলে তুমি বিশ্বাস করবে আমি তোমাকে ভালোবাসি?

প্লিজ তুমি রাগ করোনা। তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে প্রতি মুহুর্তে কুড়েঁ কুড়েঁ খায়। মনে হয় এই বুঝি তোমাকে হারিয়ে ফেললাম। আমি এই ভয় থেকে মুক্তি পেতে তাই নিতু। চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি।

মশাই আপনার মাথায় এই বিয়ের ভূত কে ঢুকিয়েছে? হুম? আমার এখনো বিয়ের বয়স হয় নি। আমি এখনো বাচ্চা। আমাকে বিয়ে করলে তোমাকে শিশু বিবাহ করার অপরাধে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে।

রাজকন্যা তোমার জন্য আমি জেলে যেতেও রাজি। তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য একবার কেনো ১০ বার জেলে যেতে হলেও আমার কোনো আপত্তি নেই।

বাহবা আমি এতো ভালোবাসা কই রাখব?

আসিফ নিতুর গলায় পর পর তিনটা চুমু খায়। কারো চিৎকারের আওয়াজ শুনে নিতু আসিফ দুজন দুজনের কাছে থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়। আসিফ ছাদের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নিতুর মা দাঁড়িয়ে আছে। নিতু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিতু কন্ঠ শুনেই বুঝতে পেরেছে তার মা তাকে আর আসিফকে ঐ অবস্থায় দেখে ফেলেছে
নিতু লজ্জা মাথা তুলে তাকাতে পারছে না তার মায়ের দিকে।

_________________

আসিফ আর নিতু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ড্রয়িংরুমে। তাদের সামনে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্য। পরিবারের প্রত্যেক গুরুজনদের চোখ মুখে বিরাজ করছে গম্ভীরতা।বাকিদের মুখে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। পরিবারের বড় সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয় এই সম্পর্ক এখানেই শেষ করে দিবে। তারা আত্মীয়তার মাঝে আত্নীয়তা চায় না। নিতু আর আসিফ মামা ফুফাতো ভাই বোন। দুজনের বিয়ে হলে ব্যাপারটা বিশ্রী দেখাবে। নিতুর বাবা গম্ভীর গলায় বলে,

তোমরা দুজন কান খুলে শুনো রাখো আমাদের পক্ষে এই সম্পর্ক মেনে নেওয়া সম্ভব না। আমাদের মাঝে কখনো আত্নীয়ের সাথে আত্নীয়ের বিয়ে হয়নি। তাই তোমাদেরও হবে না। তোমাদের সম্পর্ক যতটুকু গড়িয়েছে ততটুকুতেই থামিয়ে দিবে। আমি চাই না এই বিষয় নিয়ে বাইরের লোক জানাজানি হোক। বাইরের লোক জানলে সমাজে আমাদের মান-সম্মান নষ্ট হবে। নিতুকে আমি আমি অন্য জায়গায় বিয়ে দিব। ইনফ্যাক্ট নিতুর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। নিতুর ১৮ বছর পূর্ণ হলেই ঐ ছেলের সাথের নিতুর বিয়ে দিয়ে দিব। তোমরা দুজনের দুজনের কাছ থেকে দূরে থাকবে। আশা করি আমার এই সিদ্ধান্তে কারো আপত্তি নেই। আর হ্যাঁ এই বিষয় নিয়ে নেক্সট টাইম যেনো এই বাড়িতে কাউকে কথা বলতে না শুনি। সবাই এই বিষয়টা এখানেই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবে।

নিতুর বাবা ওঠতে গেলেই আসিফ চিৎকার করে বলে ওঠে,

সবকিছু কী আপনাদের ইচ্ছে মতো হবে? আমাদের ইচ্ছের কোনো মূল্য নেই? আপনাদের আমাদের কাঠের পুতুল মনে হয়? যা বলতে বলবেন তাই করবো। আপনাদের আঙ্গুলের ইশারায় নাঁচবো। আমাদের জীবনটা কী আপনাদের কাছে ছেলে খেলা মনে হয়? যাকে যেভাবে পারবেন ধরে বেঁধে যার তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন। বন্যা আপুর সাথে যা করতে পেরেছেন তা আমার সাথে করতে পারবেন নাহ। আমি বন্যা আপু না। আপনি আমার সাথে জোর জবরদস্তি করতে পারবেন নাহ। নিতুর বিয়ে হলে শুধু আমার সাথেই হবে। আর কারো সাথে হবে না। বুঝতে পেরেছেন? অন্য কারো সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে এর ফল খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।

কথাগুলো বলে আসিফ হনহনিয়ে চলে যায়। নিতুর ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে পৈশাচিক হাসি। এট লাস্ট সে তার প্লেনে সফল হতে পেরেছে। আসিফ পুরোপুরি তার বশে চলে এসেছে। সে খুব তাড়াতাড়ি তার দেওয়া কথা রাখতে পারবে। নিতুর পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।

৬০

কণা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আদিয়াতকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। আশেপাশে চোখ বুলায়। কিন্তু আদিয়াতকে কোথাও দেখতে পায় না। কণা আরো পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে। কিন্তু আদিয়াতের দেখা নেই। কণা বিরক্ত হয়ে ব্যগ থেকে ফোন বের করে আদিয়াতকে কল লাগায়।

কিন্তু আদিয়াতের ফোন বন্ধ। কণা বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। আদিয়াতকে সামনে পেলে হয়তো ব্লেন্ডার দিয়ে জুস বানিয়ে খেয়ে ফেলতো। আবারো ফোন দেয় কিন্তু এবারও একই অবস্থা। কণা রাগে ফস ফস করছে। হঠাৎই কেউ কণার মুখে রুমাল চেপে ধরে। কণা কিছুতেই বুঝে ওঠার আগেই লোকটা কণাকে নিয়ে একটা গাড়িতে ওঠে পড়ে।

লোকটা কণাকে অঙ্গান করেনি। কথা যাতে না বলতে পারে তার জন্য জাস্ট মুখে রুমাল ধরে রেখেছে। কণা ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করছে। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর লোকটা কণার চোখ বেধে দেয়। আরো কিছুক্ষণ যাওয়ার পর গাড়ি থেকে নেমে লোকটা কণাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া শুরু করে। একটা রুমের সামনে যাওয়ার পর। রুমের দরজাটা খুলে ধাক্কা দিয়ে কণাকে কণাকে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়।

চলবে…..

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২৯

লোকটা কণাকে অঙ্গান করেনি। কথা যাতে না বলতে পারে তার জন্য জাস্ট মুখে রুমাল ধরে রেখেছে। কণা ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু লোকটার সাথে পেরে ওঠছে না। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর লোকটা কণার চোখ বেধে দেয়। কণার মুখও বেধে দেয়।

আরো কিছুক্ষণ যাওয়ার পর গাড়ি থেকে নেমে লোকটা কণাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া শুরু করে। কণাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কণা মুখ দিয়ে উম উম শব্দ করে যাচ্ছে।
একটা রুমের সামনে যাওয়ার পর। লোকটা রুমের দরজাটা খুলে ধাক্কা দিয়ে কণাকে রুমের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। মুহুর্তের মাঝেই কণা কারো বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। চোখের বাধন খুলে দেয়। লোকটা সামনে তাকিয়ে ধমকের সুরে বলে,

এভাবে তোকে নিয়ে আসতে বলেছিলাম? কমনসেন্স নেই? কাকে কীভাবে নিয়ে আসতে হয় জানিস না? স্যার জানলে কতোটা রাগ করবে তোর কোনো ধারণা আছে?

অপর পাশের ব্যক্তিটা আমতা আমতা করে বলে, সরি বস। আসলে আমি বুঝতে পারি নাই। সরি।

কণা লোকটাকে দেখেই ভয় পেয়ে যায়। লোকটা দেখতে অদ্ভুত টাইপ। গায়ের রং কুচকুচে কালো। চোখ দুটো দেখতেও ভয়ঙ্কর টাইপ। লোকটা অনেক লম্বা। কণার মনে হচ্ছে সে লোকটার পেটের কাছে পড়ে আছে। লোকটা অনেক চিকন। এত লম্বা একটা লোক বাঁশ পাতার মতো দেখতে ব্যাপারটা কণার কাছে বিশ্রী লাগছে। এই লোকটার হওয়ার দরকার ছিল ভীষণ মোটা। লোকটা কারো ওপর পড়লে যাতে ঐ ব্যক্তি আলু ভর্তা হয়ে যায়। কিন্তু এই লোকট কারো ওপর পড়লে তো কোনো রকম অনুভূতিই হবে না। মনে হবে শরীরের ওপর একটা তুলোর বস্তা পড়ে আছে।

লোকটা কণার মুখের বাধন খুলে দিচ্ছে। কণা ভুলেই গেছে যে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। সে তো তার ভাবনাতেই মত্ত্ব। এতো লম্বা আর এতো চিকন মানুষ হয়। সেই তো এই লোকটার থেকে অনেক মোটা। সে মনে মনে লোকটার একটা নামও ঠিক করে ফেলেছে। মি. ক্যাঙ্গারু। লোকটা কণার মুখের বাধন খুলে দিয়ে বলে,

ম্যাম আপনার কোথাও লাগেনি তো?

কণা লোকটার কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। লোকটার কথা শুনে কণার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কিডন্যাপ করে জিঙ্গেস করছে
ম্যাম আপনার কোথাও লাগেনি তো? আজব এতো জুড়ে হাত টেনে ধরেছিল মনে হচ্ছিল হাতই ভেঙে যাবে। কণা লোকটার দিকে এক আঙ্গুল তুলে বলে,

আপনি আমার সাথে ফাজলামো করছেন? এতো শক্ত করে চোখ মুখ বেঁধে নিয়ে এসে বলছেন, ম্যাম আপনার কোথাও লাগেনি তো?
ফাজলামো পাইছেন। যে লোকটা কিডন্যাপ করেছিল সেই লোকটা এতো জুড়ে হাত ধরেছিল যে, মনে হচ্ছিল হাতের হাড়গোড় ভেঙে যাচ্ছে।

সরি ম্যাম। ও আসলে বুঝতে পারেনি। প্লিজ আপনি স্যারকে কিছু বলবেন নাহ। স্যার শুনলে রেগে যাবে। এগেইন সরি ম্যাম।

আপনারা আমাকে কিডন্যাপ করেছেন কেনো? আর এই স্যারটাই বা কে? যে আমি ব্যথা পেয়েছি শুনে রেগে যাবে। এই আপনি চুপ করে আছেন কেনো? এতক্ষণ তো মুখ দিয়ে খই ফুটছিল। এখন চুপ করে গেলেন কেনো?

লোকটা কণার কথাকে পাত্তা না দিয়ে কাউকে একটা ফোন করে।

স্যার কাজ হয়ে গেছে।

ঐ পাশ থেকে কি বললো সেটা কণা শুনতে পায়নি। কিছুক্ষণ পরেই লোকটা তাড়াতাড়ি করে কণাকে একটা চেয়ারের সাথে বেধে ফেলে। কণা অনুভুতিহীন হয়ে গেছে। তার সাথে এসব কী ঘটছে? সে কিছুই বুঝতে পারছে না। লোকটা কণাকে চেয়ারের সাথে হালকা ভাবে বেঁধেছে। দড়িটা অনেক ঢিলে। কণা ইচ্ছে করলেই খুলে ফেলতে পারবে। কিন্তু সে তো আকস্মিক এমন অদ্ভুত কাজে হতভম্ব।

আরো কিছুক্ষণ পরে রুমের দরজা ঠেলে একটা ভদ্র লোক প্রবেশ করে। স্যুট কোঠ পড়ে মুখে মাস্ক। লোকটা প্রবেশ করতেই ঐ ক্যাঙ্গারু টাইপ লোকটা রুম থেকে বের হয়ে যায়। লোকটা এসেই কণার সামনে দাঁড়ায়। তারপর মুখ ভেঙিয়ে বলে,

অবশেষে বনের পাখিকে খাঁচায় ভিতর বন্দি করতে পারলাম।

সত্যিই অবশেষে বনের পাখিকে খাঁচায় ভিতর বন্দি করতে পারলাম। আর বনের পাখি যে এতো বোকা আমার জানা ছিল না। এতো সহজে ধরে দিবে যে আমার কল্পনারও বাইরে ছিল।

রুমের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির কন্ঠ শুনে কণা আর ঐ মাস্ক পরিহিত লোকটা পিছনে তাকায়। দুজনেই পিছনে তাকিয়ে দেখে দরজার সাথে হেলান দিয়ে আদিয়াত দাঁড়িয়ে আছে। আদিয়াতকে দেখে কণা সস্থির নিশ্বাস ছাড়ে। আর ঐ লোকটা অাদিয়াতকে দেখেই হকচকিয়ে যায়। সে এখানে কোনো ভাবেই আদিয়াত আশা করেনি। কিন্তু ঐ লোকটা আদিয়াতকে দেখে চিনতে পারে না কারণ আদিয়াতও মাস্ক পড়ে আছে।

এই তুই কে?

আদিয়াত বিদ্রূপ করে বলে, তোর যম।

আদিয়াত দরজা ছেড়ে একটু সামনে এগুতেই ঐ লোকটা হাত থেকে কিছু একটা ছুঁড়ে মারে। মুহুর্তের মাঝেই সম্পূর্ণ রুম ধোয়ময় হয়ে যায়। আদিয়াত কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঐ লোকটা পালিয়ে যায়। আস্তে আস্তে ধোয়া কেটে যেতেই আদিয়াত চোখ খুলে দেখে সে আর কণা ব্যতীত রুমে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি নেই। কণার সামনে একটা কাগজ পড়ে আছে। আদিয়াত কাগজটা হাতে তুলে নেয়। কাগজের মাঝে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,

আমি গভীর জলের মাছ। আমাকে ধরা এতো সোজা না।

আদিয়াত বুঝতে পারে লোকটা ভীষণ চতুর প্রকৃতির মানুষ। যেখানে যায় সেখানে নিজেকে সেইভ করার মতো পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েই যায়। একে ধরা এতো সহজ হবে না। আদিয়াত গিয়ে কণার হাতের বাধন খুলে দেয়। কণা আদিয়াতের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,

আপনিই সেই না যে আমাকে মিহু সোনা বলে ডাকতো আর আমাকে কিডন্যাপও করেছিল?

আদিয়াতকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কণার করা প্রশ্নে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। আদিয়াতের হয়তো ভাবনারও বাইরে ছিল যে কণা এই সময় এই রকম একটা প্রশ্ন করবে। আদিয়াত নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

আমি তোমাকে মিহু সোনা বলে কেনো ডাকবো? আমি তো তোমাকে ধূলিকণা বলে ডাকি। আমার তোমাকে কিডন্যাপ করার দরকার আছে। আমি বললেই তো তুমি আমার সাথে চলে যাবে।

আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিল শুনেও আপনি একটুও বিচলিত হননি কেনো? আপনি এমন একটা ভাব করছেন যেনো আপনি জানতেন আমাকে আগেও কিডন্যাপ করা হয়েছিল।

কণার প্রশ্ন আদিয়াত বিপাকে পড়ে যায়।

উফ কণা তুমি বড্ড বেশি প্রশ্ন করো। তোমাকে আগেও কিডন্যাপ করা হয়েছিল সেটা আমি জানবো কী করে? আমি তো জাস্ট অনুমান করেছি। এই লোকটা যখন তোমাকে এখন কিডন্যাপ করতে পেরেছে তাহলে আগেও হয়তো করেছে।

এক মিনিট এক মিনিট। আপনি কী করে জানলেন যে আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে? আপনি তো সেখানে ছিলেন নাহ। আর আপনি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন যে আপনি ভার্সিটির বাইরে অপেক্ষা করছেন। তাহলে আমি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে আপনাকে পেলাম না কেনো?

আবার প্রশ্ন। আচ্ছা শুনো। এতক্ষণ যা কিছু হলো সবকিছু আমার প্লেন করা ছিল। আর একটু আগে যে লোকটা আমাদের বোকা বানিয়ে চলে গেলো সবকিছু ঐ লোকটাকে ধরার জন্যই করেছিলাম। এই লোকটাই তোমাকে বার বার কিডন্যাপ করে। তোমাকে থ্রেট দেয়। তোমার ভাই মানে সাফাতের এক্সিডেন্ট ও ঐ লোকটাই করিয়েছিল। তাই আমি এই লোকটাকে ধরার জন্য একটা ফাঁদ তৈরি করি। ফাঁদে তো পড়েছিল ঠিকই আবার বেরিয়েও গেলো। লোকটা ভীষণ চালাক। এই লোকটাকে ধরা এতো সহজ হবে না।

এই লোকটার সাথে আমাদের কীসের এতো শত্রুতা? কেনো আমার বাবাকে কষ্ট দিতে চায়?

জানি না।

৬১

আদিয়াতের সাথে কথা বলতে এতোই ব্যস্ত ছিল যে কখন রাত তিনটা বেঁজে গেছে কণা খেয়ালই করেনি। দেরিতে ঘুমানোর ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ৯ টা বেজে গেলো। এতো বেলা করে কণা কখনোই ঘুম থেকে ওঠেনি। ডান্স ক্লাসেও আর যাওয়া হলো। আদিয়াতের চক্করে পড়ে তার সবকিছুর অনিয়ম হয়ে যাচ্ছে।

কণা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে যায়। কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। মুখের ওপর থেকে টাওয়াল সরাতেই কণা চমকে ওঠে। তার রুমে তারই বিছানায় এতোগুলো মেয়ে কোথা থেকে আসলো। কণাকে আরো অবাক করে দিয়ে মেয়েগুলো কণাকে বিছানার ওপর বসিয়ে সাজাতে শুরু করে। আকস্মিক ঘটনায় কণা হতভম্ব। তিশান আহম্মেদের কথায় যেনো কণার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।

চলবে……..