#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩০
কণা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে যায়। কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। কণা বা সাফাত না খেলে তিশান আহম্মেদও না খেয়ে থাকে। এটাই হয়তো বাবার ভালোবাসা। মেয়েদের কাছে বাবা মানেই সুপারম্যান। যে এক ছুটকিতেই সব সমস্যার সমাধান করে ফেলে। কণা তার মাকে কখনো দেখেনি। কিন্তু তার কাছে তার বাবা মা দুজনই তিশান আহম্মেদ। তিশান আহম্মেদ কখনো তাকে বা সাফাতকে কষ্ট পেতে দেয়নি। কথায় আছে না।
বাবাকে ঘামতে দেখেছি কিন্তু কখনো কাঁদতে দেখেনি।
মুখের ওপর থেকে টাওয়াল সরাতেই কণা চমকে ওঠে। তার রুমে তারই বিছানায় এতোগুলো মেয়ে কোথা থেকে আসলো। কণাকে আরো অবাক করে দিয়ে মেয়েগুলো কণাকে বিছানার ওপর বসিয়ে সাজাতে শুরু করে। আকস্মিক ঘটনায় কণা হতভম্ব। সে বুঝতে পারছে না তার সাথে এসব কী হচ্ছে? হুট করেই মেয়েগুলো কোথা থেকে আসলো আর তাকে সাজাচ্ছেই বা কেনো?
কণার রুমের দরজা ঠেলে রুমের ভিতর তিশান আহম্মেদ প্রবেশ করে। তিশান আহম্মেদ রুমে প্রবেশ করেই কণাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
আজকে তোমার বিয়ে। তাই তোমাকে এই মেয়েগুলো সাজাতে এসেছে। আশা করি তোমার কোনো আপত্তি নেই আমার সিদ্ধান্তে।
তিশান আহম্মেদ যেমন দ্রুত পায়ে এসেছিলেন তেমনি দ্রুত পায় রুম থেকে চলে যান। যেনো তিনি ভীষণ ব্যস্ত। কণাকে কোনো কথা বলার সুযোগই দেন নাই। তিশান আহম্মেদের কথায় যেনো কণার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আজকে তার বিয়ে? এটা কীভাবে সম্ভব? তার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আজকে তার বিয়ে। তার বাবা তাকে না জানিয়ে তার বিয়ে ঠিক করে ফেললো? একবার তার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। সে এখন কী করবে? সে তো আদিয়াতকে ভালোবাসে।
এর মাঝেই মেয়েগুলোর কণাকে সাজানো হয়ে গেলো। মেয়েগুলো কণাকে আয়নার সামনে দাঁড় করায়। কণা চোখ তুলে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে থমকে যায়। কণা অপলক তাকিয়ে আছে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। পড়নে নীল রঙের বেনারসি শাড়ি। মুখে ভারী মেকাআপ, কোমড় বন্ধনী গোল্ডেন কালারের উড়না, খোপায় চারটা টকটকে লাল রঙের গোলাপ, হাতে পায়ে গলায় ভারী নেকলেস। নিজের সাজ দেখে কণা নিজেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। এই চেহেরায় আবার এতো সাজ।
হঠাৎ আদিয়াতের কথা মনে হতেই কণা চমকে ওঠে। তার বিয়ে হয়ে গেলে আদিয়াতের কী হবে? আদিয়াতও তো তাকে এমন বধু বেসে দেখতে চেয়েছিল। সে আদিয়াতের মনের মতো করে বধু বেসে সেজেছে ঠিকই কিন্তু আদিয়াতের জন্য না অন্য কারো জন্য। কণা নিজের ফোনটা চার্জ থেকে খুলে আদিয়াতকে কল দেয়। কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে না।
কণা বার বার কল দিতে থাকে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে না। কণা আদিয়াতকে কল করতে করতেই সাফাতের রুমে যায়। কিন্তু সাফাতকে পায় না। তারপরে ড্রয়িংরুমে যায়। সেখানে মানুষে গিজ গিজ করছে। কণার পরিচিত অপরিচিত অনেক মুখ। বেশির ভাগই অপরিচিত। সবাই অবাক হয়ে কণার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের হয়তো কল্পনারও বাইরে ছিল যে বিয়ের কনে বিয়ের সাজে এভাবে সারা বাড়ি হেঁটে বেড়াবে। কণা গিয়ে সাফাতের সামনে দাঁড়ায়। সাফাত তখন আরো দুই তিনটে ছেলের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।
ভাইয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
এখন কথা বলার সময় নেই। এখন তুই এখান থেকে যা। এক মিনিট তুই এখানে কী করছিস? তোর তো রুমে থাকার কথা। এই তোমরা ওকে রুমে নিয়ে যাও।
সাফাত কয়েকটা মেয়েকে ইশারা করে কথাটা বলে। মেয়েগুলো সাফাতের কথা মতোই কণাকে রুমে রেখে আসে। রুমে এসে কণা আবার আদিয়াতকে কল দেয়। কিন্তু এবার ফোন বন্ধ দেখায়। কণা ফোনটা ছুঁড়ে মারে। রাগে দুঃখে তার কান্না চলে আসছে। কেউ তার কথা শুনতে চাইছে না। তাকে কেউ বুঝার চেষ্টা করছে না। কণা ভাবছে আদিয়াতও কী তার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছিল?
কণা আর ভাবতে পারছে না। সে অশ্রু সিক্ত নয়নে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। সবাই কতো হৈই চৈই করছে। যার বিয়ে তার হুশ নেই পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নেই। কণা ঠিক করে নিলো সে তিশান আহম্মেদের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবে। যার তাকে নিয়ে চিন্তা নেই সেও তাকে নিয়ে ভাববে না। যে তার ফোন পেয়ে বিরক্ত হয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়। সে তাকে আর বিরক্ত করবে না।
কণা চোখের কোণের জলটা মুছে নিলো। হঠাৎ কোমড়ে বলিষ্ঠ হাতের ছোঁয়া পেয়ে কণা কেঁপে ওঠে। হাত দুটো এসে কণার পেটের কাছে থামে। আদিয়াত কণাকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কণার শিঁড়দাড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। আদিয়াত ফিসফিস করে বলে,
বধূ বেসে তোমাকে অপ্সরীর মতো সুন্দর লাগছে।
কণা ঘাড় ঘুরিয়ে আদিয়াতের দিকে অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকায়। আদিয়াত কণার অশ্রু সিক্ত চোখের পাপড়ি দেখে কণাকে ছেড়ে দেয়। আদিয়াত কণাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কণার গালে হাত রেখে বলে,
কী হয়েছে? তুমি কাঁদছো কেনো?
আপনি জানেন বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে? আজকেই আমার বিয়ে।
আমার বিয়ে আর আমি জানবো না।
আপনার বিয়ে মানে?
আজকে তোমার আর আমার বিয়ে। তুমি কী ভেবেছিলে তোমার অন্য কারো সাথে বিয়ে হচ্ছে? এটা এই আদিয়াত বেঁচে থাকতে আদো সম্ভব? তুমি শুধু আমার শুধুই আমার আর কারো না। গতকাল রাতে তোমাকে বলেছিলাম না তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। এটাই হচ্ছে সেই সারপ্রাইজ।
কণা এবার আদিয়াতের দিকে তাকায়। আদিয়াতে পড়নে নীল রঙের বিয়ের শেরওয়ানী। ফর্সা শরীরে নীল রঙটা ফুটে ওঠেছে। কণার এবার বিশ্বাস হলো সত্যি সত্যি তার আর আদিয়াতের বিয়ে।
আপনি সেটা আগে বলেননি কেনো? টেনশনে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিলো। কেঁদে কেটে আমার সাজটাই নষ্ট হয়ে গেলো।
আগে বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো।
আমি আপনাকে কতোগুলো কল দিলাম আপনি রিসিভ করেননি কেনো? শেষে বিরক্ত হয়ে ফোনটা বন্ধ করে দিলেন। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমাকে ভালোই বাসেন নাহ। আজকে আমার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যাবে।
কণা কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে দেয়। আদিয়াত কণাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মাথা হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
ছেড়ে যাওয়ার জন্য তো ভালোবাসিনি। এই হাতটা যখন একবার ধরেছি আর কোনোদিন ছাড়বো না। আমি বিরক্ত হয়ে ফোন বন্ধ করে দিয়েছি কে বলেছে তোমাকে? হুম? ফোন সাইলেন্ট ছিল তাই আমি বুঝতে পারিনি যে তুমি কল দিচ্ছো। যখন দেখলাম তুমি কল দিচ্ছো তখন রিসিভ করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগেই আরুহি আমার কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নেয় আর বন্ধ করে দেয়।
কণাও আদিয়াতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সাফাত দরজার সামনে থেকে সরে যায়। সে আজকে অনেকটা নিশ্চিন্ত। তার বোনের তার ভালোবাসার মানুষের সাথেই বিয়ে হচ্ছে। যে কণাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। ভালোবেসে কণাকে সারাজীবন আগলে রাখবে। সে হয়তো তার ভালোবাসার মানুষকে পায়নি। কিন্তু তার বোন তে পেয়েছে। এতেই সে খুশি। সব ভালোবাসা তো আর পূর্ণতা পায় না।
৬২
একটি চোখের পলকেই বদলে গেলো সম্পর্ক। কবুল বলার পরই দুইটি মানুষ আবদ্ধ হয়ে গেলো বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে। কণার ভাবতেই অবাক লাগছে সে মিস থেকে মিসেস হয়ে গেলো। তার নামের পাশে আরেকটা নাম জুড়ে গেছে। আদিয়াত কণার হাতটা শক্ত করে ধরে। কণা আদিয়াতের দিকে চোখ তুলে তাকায়।
কণা আদিয়াতের চোখে দেখতে পাচ্ছে বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসা। আদিয়াতের চোখের ভাষা কণা বুঝতে পারছে। আদিয়াত কণার কানে কানে বলে,
আজকে থেকে তোমার সকল সুখ দুঃখের অংশীদার আমি। আমার সকল ভালো লাগা, ভালোবাসার অংশীদার তুমি। তোমার রাগ, দুঃখ, অভিমান, ভালোবাসা, ঘৃণা সবকিছু শুধু আমার।
ঘরোয়া ভাবেই আদিয়াত আর কণার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে। আদিয়াত চায় না তাদের বিয়ের ব্যাপারটা কেউ জানুক। আদিয়াত জানে মানুষ জন বিয়েতে আসলেই কণাকে কন্ঠাক্ষ করে কথা শোনাবে। আদিয়াত চায় না কণা কোনো ভাবে আপসেট হয়ে পড়ুক। চলে আসে সেই মহেন্দ্র ক্ষণ। মেয়ের বিদায় বেলা। এই সময়টা প্রত্যেকটা মেয়ের জন্যই ভীষণ কষ্টের।
চলবে……….
#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৩১
ঘরোয়া ভাবেই আদিয়াত আর কণার বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে। আদিয়াত চায় না তাদের বিয়ের ব্যাপারটা কেউ জানুক। আদিয়াত জানে মানুষ জন বিয়েতে আসলেই কণাকে কন্ঠাক্ষ করে কথা শোনাবে। পাঁচ জনে পাঁচ কথা বলবে। আদিয়াত চায় না কণা কোনো ভাবে আপসেট হয়ে পড়ুক। চলে আসে সেই মহেন্দ্র ক্ষণ।
মেয়ের বিদায় বেলা। এই সময়টা প্রত্যেকটা মেয়ের জন্যই ভীষণ কষ্টের। নিজের আপনজন, প্রিয়জনকে ছেড়ে অপরিচিত কতোগুলো মানুষকে আপন করে নিতে হবে। মন যুগিয়ে চলতে হবে তাদের। নিজের শৈশব কৈশর যেখানে কেটেছে সেই বাড়ি ছেড়ে পাড়ি জমাতে হবে অন্য কোনো ঠিকানায়।
বিয়ের পর প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনই পাল্টে যায়। ধরা বাধা কতগুলো নিয়ম মেনে চলতে হয়। বাবার আদরের ঘরের দুলালি হয়ে আর থাকা চলে না। যে মেয়েটা সকাল ৮-৯ টার আগে ঘুম থেকে ওঠতো না। তাকে ঘুম থেকে ওঠতে হয় সবার আগে। যেই মেয়েটা ঘুম থেকে ওঠেই মুখের সামনে খাবার পেয়ে যেতো। সেই মেয়েটাই বিয়ের পর নিজে না খেয়ে সবার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরে। মেয়েরা বোধ হয় সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার এক ক্ষমতা নিয়েই জন্মায়।
আদিয়াতের বাড়ির লোকজন তোড়জোড় শুরু করে দেয় বউ নিয়ে যাওয়ার জন্য। আদিয়াতের সাথে এসেছে হাতে গোনা কয়েকজন। অাদিয়াতের দুই তিনটে ক্লোজ ফ্রেন্ড আর কয়েকজন নিকট আত্নীয়। এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে এটা ভেবেই কণার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। আজকে থেকে সে শুধু এই বাড়ির অতিথি। কণা ভাবে মেয়েদের জীবন এমন অদ্ভুত কেনো? বিয়ের আগে বাবার বাড়ি বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি। নিজের কোনো বাড়ি হয় না। আবার দুই বাড়িই মেয়েদের ছাড়া অন্ধকার, অপূর্ণ । তবুও মানুষ মেয়েদের পরগাছা বলে। অদ্ভুত সমাজ অদ্ভুত তার নিয়ম।
এবার কণার যাওয়ার পালা। কণা গিয়ে তিশান আহম্মেদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তিশান আহম্মেদের চোখ দুটো ছলছল করছে। তিশান আহম্মেদ কণার মাথায় হাত রাখে। কণা তিশান আহম্মদকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। তিশান আহম্মেদও কণাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরেন।
তিশান আহম্মেদের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। যে মেয়েকে ছাড়া তিনি এক মিনিটও থাকতে পারতেন নাহ। আর আজকে থেকেই সেই মেয়েকে ছাড়ায় উনার দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, বছরের পর বছর থাকতে হবে। চাইলেও মেয়েকে দেখতে পারবে না। তবু শান্তি মেয়েকে একটা ভালো ছেলের কাছে তুলে দিতে পেরেছেন।
তিশান আহম্মেদ কণার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মেয়েটা কতো বড় হয়ে গেছে। উনার মনে হচ্ছে এই তো সেদিন এই মেয়েটা চকলেট খাওয়ার জন্য বায়না করছিল। কোলে ওঠার জন্য আবদার করছিল। আজকে সেই মেয়েটার বিয়ে। উনার মেয়েটা কতো বড় হয়ে গেছে। মেয়েরা চোখের পলকে বড় হয়ে যায়।
তিশান আহম্মেদ কণাকে নিয়ে আদিয়াতের সামনে দাঁড়ায়। কণাকে আদিয়াতের হাতে তুলে দিয়ে বলে,
বাবা আমার একটা মাত্র মেয়ে। আমাদের চোখের মনি। জীবনে কোনোদিন কষ্ট পেতে দেয়নি। সব সময় চেষ্টা করেছে হাসি খুশি রাখার। সেই চোখের মনিটা আজকে আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম। আশা করি তুমি ওকে সুখেই রাখবে। জানি আমার মেয়ে…..
আদিয়াত তিশান আহম্মেদকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
আংকেল আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ওকে সুখে রাখার। কথা দিচ্ছি আমার কারণে ওকে কোনোদিন কাঁদতে হবে না। কণা আমার জীবন ও ভালো না থাকলে তো আমিও ভালো থাকবো না।
আদিয়াতের বাবা এগিয়ে এসে বলেন, আপনি কোনো চিন্তা করবেন নাহ। কণা আমাদের বাড়িতে বউমা নয় মেয়ে হয়ে থাকবে।
কণা চোখ ঘুরিয়ে সাফাতকে খুঁজছে। সাফাত ড্রয়িংরুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। কণা গিয়ে সাফাতের সামনে দাঁড়ায়। সাফাত নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো চোখের পানি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে।
ভাইয়া।
কণার ডাক শুনে সাফাত চমকে কণার দিকে তাকায়। কণা সাফাতকে জড়িয়ে ধরে।
ভাইয়া তুমি বলতে না বিয়ে দিয়ে আমাকে শ্বশুড় বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। দেখো আজকে আমি সত্যি সত্যি শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছি। এখন থেকে কেউ তোমার পিছু লাগবে না। তোমাকে জ্বালানোর জন্য কেউ থাকবে না। তোমার সাথে ঝগড়া করার জন্য কেউ থাকবে না। তুমি না খেলে আমিও খাবো না এটা বলার জন্যও কেউ থাকবে না। তোমার কাছে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য আর কেউ বায়না করবে না।
তাড়াতাড়ি বিদায় হ। তুই চলে গেলে আমি সারা বাড়ি জুড়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবো। প্রথমেই তোর রুমটা দখল করবো।
একদম আমার রুম দখল করবে না। আমার কোনো কিছুতেই হাত দিবা না। আমি যেভাবে রেখে গেছি জিনিসগুলো যেনো ঠিক তেমনি পায়। ভাইয়া তোমার কষ্ট হচ্ছে না যে আমি চলে যাচ্ছি।
কষ্ট কেনো হবে? বাসা থেকে একটা শাকচুন্নি বিদায় হচ্ছে। এবার তো আমার শান্তির পালা। কেঁদে কেটে মুখটা একদম পেত্নীর মতো বানিয়ে ফেলেছিস। পরে আদিয়াত কিন্তু তোকে রেখেই চলে যাবে।
কণা সাফাতকে জড়িয়ে ধরে জুড়ে জুড়ে কেঁদে দেয়। সাফাত গিয়ে কণাকে গাড়িতে তুলে দেয়। আদিয়াত এসে একবার সাফাতকে জড়িয়ে ধরে সেও গাড়িতে ওঠে পড়ে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই অন্ধকারে হারিয়ে গেলো গাড়িটা। সাফাতের চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
সাফাত আর তিশান আহম্মেদ নিজেদের ফ্ল্যাটে ফিরে আসে। দুজনের থেকে একজনেরও মন ঠিকছে না। সবকিছু খালি খালি লাগছে। সারা বাড়ি খাঁ খাঁ করছে।
৬৩
কণা দাঁড়িয়ে আছে নিজের শ্বশুরবাড়ির দরজার সামনে। আদিয়াতের মা এসে কণাকে বরণ করে ঘরে তুলে। কিন্তু আদিয়াতের মায়ের মুখে হাসির কোনো ছাপ। মুখটা কেমন কালো আর গম্ভীর করে রেখেছে। যেনো তিনি কণাকে দেখে খুশি হননি। কণার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আদিয়াতের মায়ের কী তাকে পছন্দ হয়নি? আদিয়াতের মায়ের অমতে কী তাদের বিয়ে হলো? কণা আর ভাবতে পারছে না। এমনিতে কান্না করার ফলে মাথা ব্যথা করছিল। এখন আবার মনের মাঝে এতো এতো প্রশ্ন।
আরুহি কণাকে আদিয়াতের রুমে নিয়ে গেলো। আর আদিয়াতকে তার ফ্রেন্ডরা নিয়ে গেলো। কণা আদিয়াতের রুমে এসেই অবাক হয়ে গেলো। সারা রুম ফুলের গন্ধে মো মো করছে। রুম জুড়ে ফুলের ছড়াছড়ি। সবগুলো ফুলই কণার প্রিয় ফুল। বেডের সামনে যেতেই কণা আরো বেশি চমকে গেলো। বেডের সাথে দেয়াল জুড়ে কণার এক বিশাল ছবি। ছবিটা আজ থেকে চার বছর আগের। বন্ধুদের সাথে একটা গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিল। এটা তখনকার ছবি। কণা ভাবছে কিন্তু এই ছবিটা আদিয়াতের কাছে আসলো কীভাবে?
আরুহি কণাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়। কণা প্রহর গুণতে থাকে আদিয়াতের অপেক্ষায়। দরজায় খট করে আওয়াজ হতেই কণা চোখ তুলে তাকায়। আদিয়াত একটা মুচকি হাসি দিয়ে কণার দিকে এগিয়ে আসে।
মহারানী বসে না থেকে ফ্রেশ হয়ে আসুন। সারাদিন তো কম দখল যায়নি। এতো ভারী পোশাক পড়ে বসে থাকতে হবে না।
কথাগুলো বলেই আদিয়াত কাবার্ডের দিকে চলে গেলো। কাবার্ড থেকে একটা শাড়ি বের করে কণার হাতে দেয়। কণা কিছু বলতে গেলে আদিয়াত কণার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দেয়। কণার চুল থেকে ক্লিপগুলো খুলে চুলটা খুলে দেয়। আস্তে আস্তে শরীর থেকে সব গহনা খুলে দেয়। তারপর ঠেলে কণাকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়।
কণা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আদিয়াত নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই আদিয়াত ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে। কণা আদিয়াতের অপেক্ষাতেই বসে ছিল।
কণা আদিয়াতের দিকে এগিয়ে আসে কিছু বলার জন্য। কিন্তু তার আগেই আদিয়াত কণাকে কোলে তুলে নেয়। কোলে করে নিয়ে এসে কণাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
আদিয়াত আপনার সাথে আমার কথা আছে।
হুশশশ। কোনো কথা নয়। কথা বলার জন্য অনেক সময় পাবে। চুপচাপ ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে।
আদিয়াত কণাকে কিছু বলতে না দিয়েই কণাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। কণা বেশ বুঝতে পারছে আদিয়াত তার কথাগুলো এড়িয়ে চলতে চাইছে। তাই কণাও আর কোনো কথা বললো না।
৬৪
সকাল থেকে এমনিই সাফাতের মন মেজাজ ঠিক ছিল না। তার মাঝে অহির প্রোপোজ করাটা যেনো সাফাতের মেজাজটা বিগড়ে দিল। সাফাতের রাগটা তীর তীর করে বাড়তে লাগলো। আশেপাশের সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে সাফাতের মাথা ফেটে যাচ্ছে।
চলবে……