#তুমি_আমারই
#পর্ব_৩
#Sumaia_Jahan
— বউ বাপের বাড়ির সাথে তো দেখা করা হয়ে গেছে এবার চলো শ্বশুর বাড়ি। নতুন বউ শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে এতক্ষণ বাইরে থাকতে নেই। লোকে তো মন্দ বলবে।
কথাটা বলেই রোদ্দুর ভাইয়া আমার হাত ধরে বাইরের দিকে হাঁটা ধরে।
এটা দেখে বাপি রেগে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,
— তোর সাহস কি করে হয় আমার সামনে থেকে আমারই মেয়ের হাত ধরে নিয়ে যাস?
বাপির কথা শুনে রোদ্দুর ভাইয়া বাপি দিকে ঘুরে মুখে একটু হাসি এনে বলে,
— বাহ!শ্বশুর মশাই আপনি তো দেখি খুব ফাস্ট। এতো তারাতাড়ি যে আপনি আমাদের শ্বশুর জামাই সম্পর্ক টা কে এতো গভীরে নিয়ে জাবেন আমি ভাবতে পারিনি।একেবারে আমাকে ছেলের জায়গায় বসিয়ে তোই সম্মোধনও করে ফেলেছেন। আম ইমপ্রেসড।
বাপি বুঝে গেছে এই ছেলের সাথে কথায় পারবে না।তাই বাপি দাঁতে দাঁত চেপে বাড়ির দারওয়ান কে ডাক দিলো,
— ফরিদ ফরিদ….
বাপির দুই ডাকেই ফরিদ মানে দারওয়ান কাকা দৌড়ে এসে হাজির হলো।এসেই হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
— জি স্যার বলেন!
বাপি রোদ্দুর ভাইয়া কে ইশারা করে বললো,
— এই ছেলেটা কে এক্ষুনি বাড়ি থেকে বের করে দেও?
বাপির কথার উত্তরে দারওয়ান কাকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদ্দুর ভাইয়া বলে ওঠে,
— আরে শ্বশুর মশাই আমাদের জামাই শ্বশুরের ইয়ার্কি দারওয়ান কাকা বুজবে না। শুধু শুধু দারওয়ান কাকা কে কেন কনফিউজড করছেন।দারওয়ান কাকা তুমি যাও। তোমার স্যার তার জামাইয়ের সাথে একটু মজা করতেছিলো।
দারওয়ান কাকা “আচ্ছা” বলে চলে গেলো।বাপি আবার দাঁতে দাঁত চেপে রোদ্দুর ভাইয়া কে বললো,
— তুমি ভালো কথায় আমার বাড়ি থেকে যাবে নাকি আমি পুলিশ ডাকবো?
রোদ্দুর ভাইয়া বললো,
— পুলিশ ডেকে আপনি কি বলবেন?এই যে আপনার জামাই তার বউ কে নিয়ে যাচ্ছে। তাই আপনারা ওকে এরেস্ট করুন।
কথাটা বলেই রোদ্দুর ভাইয়া শব্দ করে হেসে দিলো।তারপর৷ আবার বললো,
— আমি কিন্তু চাইলেই আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি।আমি পুলিশ কে বলতেই পারি আমার বিয়ে করা বউকে আপনি আপনাার কাছে আটকে রাখতে চাচ্ছেন।আমার অভিযোগ কিন্তু পুলিশ নেবে।আমি এসবের কিছুই করতে চাই না। আমি এসেছিলাম আপনাদের কাছে দোয়া নিতে।আপনাদেরকে তো না জানিয়েই বিয়েটা হয়েছে। কোনো সম্পর্কই তো গুরুজনের দোয়া ছাড়া ভালো হয় না।তাই আপনাদের দোয়া নিয়ে আমাদের সম্পর্কটা শুরু করতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু আপনি তো আমাকে জামাই হিসেবে মানতেই চাইছেন না।আপনি মানুন আর না মানুন আমার আর আশপিয়ার বিয়েটা কিন্তু হয়ে গেছে। আপনাদের দোয়া ছাড়াই হয়তো আমাদের সম্পর্ক টা শুরু করতে হবে।
রোদ্দুর ভাইয়া কথা গুলো একনাগারে বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন।তারপর আমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন।
আবার আমরা গাড়িতে উঠে রওনা হই।এবার আমি জানি আমাদের গন্তব্য রোদ্দুর ভাইয়ার বাড়ি ওরফে আমার শ্বশুর বাড়ি। এখন আমার মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা হলো শ্বাশুড়ি। সিরিয়ালে তো দেখেছি বউ পাল্টে গেলে শ্বাশুড়িরা বাড়িতে ঝড় তুলে দেয়।বউকে মানে না, বউকে অনেক কড়া কড়া কথা শুনায়।তারপর বউকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করিয়ে নেয়।বউয়ের উপর এরকম আরো অনেক অত্যাচার করে।
আমার ক্ষেত্রেও কি এরকম হবে।এসব ভাবতেই তো আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সত্যি সত্যি যদি আমার সাথে এসব হয় তাহলে আমাকে দুদিন পর আর কেউ খুঁজেই পাবে না।
আমার ভাবনার মাঝে হঠাৎ গাড়ি থামলো।আসেপাশে তাকিয়ে দেখি একটা বাড়ির সামনে গাড়িটা থেমেছে।বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো। মনে হচ্ছে এটাই রোদ্দুর ভাইয়াদের বাড়ি।
আমাদের গাড়িটা থামার সাথে সাথে অনেকে এক সাথে চিৎকার দিয়ে ওঠলো “বউ নিয়ে এসেছে”।
রোদ্দুর ভাইয়া আগে গাড়ি থেকে নেমে আমাকেও নামালো।তারপর আমাকে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতর ডুকলো।
সবার নজর আমাদের দিকে।রোদ্দুর ভাইয়া আমাকে নিয়ে একজন মধ্যবয়সকো মহিলা সামনে নিয়ে দাড়ালো।মহিলার পরনে একটা একটা হালকা নীল রঙের শাড়ী গায়ে কিছু গহনা আর মুখে মিষ্টি একটা হাসি তাতে মহিলা টিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।বোঝাই যাচ্ছে অল্প সময়ের অপুর্ব সুন্দরী ছিলেন।রোদ্দুর ভাইয়া বললো,
— এই নেও মা তোমার জন্য বউ নিয়ে এসেছি।
আমার বুঝতে বাকি নেই যে এই মহিলাটি আর কেউ না রোদ্দুর ভাইয়ার মা মানে আমার শ্বাশুড়ি। রোদ্দুর ভাইয়ার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলো।শ্বাশুড়ি মানুষ তাকে তো সালাম দিতে হয়।তাই তারাতাড়ি মুখে সালাম দিলাম,
— আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
উনি আমার সালামের জবাব দিতে যাবে তার আগেই পাশের থেকে একজন মহিলা বলে ওঠলো,
— আজকালকার মেয়েরা হয়েছে যা শ্বাশুড়ির পা ধরে সালাম দিতেও বাধে।আমাদের কালেতো আমরা ওঠতে বসতে শ্বাশুড়ির পা ধরে সালাম করতাম।
আমি বুঝতে পারছি আমার মুখে সালাম দেওয়াতে উনার পছন্দ হয়নি।আমি মুখে একটু হাসিভাব এনে বললাম,
— আন্টি আমাদের ধর্ম তো ইসলাম। আপনি কি জানেন ইসলামে একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোনো কিছুর সামনে মাথা নত করা শিরক।আমরা কারো পায়ে সালাম করলে তার সামনে বসে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হয়।এতে কিন্তু ওই ব্যাক্তির সামনে মাথা নতো করতে হয়।তখন কিন্তু এটা শিরক হয়ে যায়।সেজন্য আমি আমার শ্বাশুড়ি মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করিনি।
আমি একটু শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আমি কি মুখে সালাম দিয়ে কোনো ভুল করেছি?
শ্বাশুড়ি মা আমার মুখে হাত রেখে একটু হেসে বললেন,
— একদমই না তুমি যেটা করেছো তা একদম ঠিক করেছো।তোমাকে নিয়ে আমার গর্ব হচ্ছে। এই বিষয় টা সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। তবে আমি তোমার উপর একটা কারণে রাগ করছি।
কথাটা বলে উনি মুখটা একটু ফুলিয়ে ফেললন।আমার তো ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমি আবার কি করে ফেললাম কে জানে।এরজন্য যদি শাস্তি দেয়।আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
— আ আ আমি কি হ কোনো অ অন্যায় ক করছি।
উনি বললেন,
— হুম তুমি অনেক বড়ো অন্যায় করেছো। তুমি আমাকে আন্টি বলে কেন ডাকলে? আমি কি তোমার আন্টি হই? আমি তোমার মা হই মা।আমাকে মা বলে ডাকবা। আর একবার যদি আন্টি বলে ডাকো তাহলে কিন্তু খবর আছে বলে দিলাম।
আমার বুকের উপর থেকে একটা ভারি পাথর নামলো।আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম। তারপর আমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম,
— আমি আর কখনো ডকবো না আন্টি বলে সবসময় মা বলেই ডাকবো ওকে।আর হে সরি।
উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
— সরি কেন?
আমি বললাম,
— এই যে একটু আগে আন্টি বলে ডাকার জন্য।
উনি বললেন হেসে বললেন,
— পাগলি মেয়ে।
রোদ্দুর ভাইয়া আমাদের কান্ড দেখে মুখ ফুলিয়ে বললেন,
— মা তুমি তো দেখি বউ পেয়ে ভুলেই গেছো তোমার ছেলে নামক একজন তোমাদের মাঝখানে অনেকক্ষণ পর্যন্ত দাড়িয়ে আছে।
রোদ্দুর ভাইয়ার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।
চলবে,,,,,
[ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]