#তুমি_আমারই
#পর্ব_৬
#Sumaia_Jahan
হঠাৎ আমার হাতের উপর কি যেন দিলো রোদ্দুর ভাইয়া। আমি তাকিয়ে দেখি আমার হাতে একটা কম্বল। রোদ্দুর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি স্বাভাবিক ভাবে দাড়িয়ে আছেন।আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না আমার হাতে কম্বল কেন দিচ্ছেন। তাই আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
— এসব কি শুরু করেছেন? আমার হাতে কম্বল কেন দরিয়ে দিয়েছেন?
রোদ্দুর ভাইয়া সোজাসাপটা উত্তর দিলো,
— কেন আবার! সোফায় ঘুমাতে কম্বল লাগবে তো তোমার তাই দিলাম।আমি আবার একটু বেশিই দয়ালু অন্যের কষ্ট দেখতে পারি না।
আমি বললাম,
— আমি সোফায় ঘুমাতে যাবো কেন? সোফায় কেউ ঘুমালে সেটা আপনি ঘুমাবেন আমি না।
কি লোকরে বাবা সারাজীবন গল্পে আর সিনেমায় দেখে এসেছি বর বউয়ের মধ্যে মিল না থাকলে বর বউকে বলে তুমি খাটে ঘুমাও আমি সোফায় ঘুমাই।আর এই লোক বউকে কম্বল দরিয়ে দিয়ে বলে সোফায় ঘুমাতে! আবার নিজকে দয়ালু মনে করে। এই আমি এসব কি ভাবছি আমি তো এই বিয়ে টাই মানি না তাহলে আবার কিসের বর বউ!আমি শুধু মাত্র অনির বউ হবো আর কারো না। কিন্তু আমি কিছুতেই সোফায় ঘুমাবো না। এই লোকটাকে সোফায় ঘুমাতে হবে হুম।
রোদ্দুর ভাইয়া বললো,
— আমার বাড়ি আমার ঘর আমার খাট আমি কেন সোফায় ঘুমাবো? সোফায় ঘুমাবে তো তুমি!
আমি বললাম,
— তো এখন কি আমি আমার বাড়ি থেকে আমার ঘর আমার খাট নিয়ে আসবো নাকি?শুনুন আমি কিছুতেই সোফায় ঘুমাতে পারবো না। আমি খাটে আর আপনি সোফায় ঘুমাবেন।
রোদ্দুর ভাইয়া বললো,
— সোফায় তোমাকে ঘুমাতে বলেছি তো তুমিই ঘুমাবে। আমি খাটেই ঘুমাবো।
আমি রেগে বললাম,
— এবার কিন্তু আপনি বারাবাড়ি করছেন। আমি বলছি তো আমি সোফায় ঘুমাতে পারবো না।
রোদ্দুর ভাইয়া একটু দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো,
— তাহলে কি আমার সাথে একই বিছানায় এক সাথে ঘুমাতে চাচ্ছো?
উনার এমন কথা শুনে আমি দুই লাফ দিয়ে সোফায় গিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম। তারপর বললাম,
— লাগবে না আপনার খাট। আপনার খাটে আপনিই শুয়ে থাকুন। আমার লাগবে না আপনার খাট!
ওদিকে রোদ্দুর আশপিয়ার এমন কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।তারপর রোদ্দুর খাটেও গিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
এদিকে আমার একটুও ঘুম আসছে না।আজ অনির কথা খুব মনে পরছে। অনি বলেছিলো আমাদের বিয়ে টা একদম অন্য রকম ভাবে হবে।আজ আমার বিয়ে টা সত্যি অন্য রকম ভাবে হয়েছে। কিন্তু অনি জায়গায় অন্য কেউ। আচ্ছা অনি কেন এতোদিনে একবারও আমার খোঁজ নেয় নি কেন? নাকি ও লুকিয়ে লুকিয়ে আমার খোঁজ নেয়!যদি সত্যি অনি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার খোঁজ নেয় তাহলে এই বিয়ে কথাও তো জেনে যাবে।আর ও যদি আমায় ভুল বুঝে। যদি ভাবে আমি ওকে দেওয়া কথা রাখিনি।কিন্তু এখানে তো আমার কোনো দোষ নেই তো শুধু দিয়ার জন্য এই বিয়ে টা করেছি। না আমি এসব ভাববো না আমি অনি কে সব কথা বললে ও ঠিক বুঝবে।তার আগে দিয়ার খোজ নিতে হবে। তারপর এখান থেকে পালাতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।
সকাল বেলা হঠাৎ করে আমার চোখে উপর জোরে পানি পরলো।জোরে পানি পরাতে আমি তারাতাড়ি উঠে বসে চোখ ডলতে ডলতে বললাম,
— মা তুমি কি শুরু করেছো?বাড়িতে কি ডাকাত পরেছে নাকি? এভাবে আমার চোখে পানি মারলা কেন? ডাকলেই তো উঠতাম।
— আগগে আমি আপনার মা না আপনার বর হই বর।আর আপনাকে আমি অনেকক্ষন ধরে ডাকছিলাম কিন্তু আপনার তো কোনো হুসই নেই। তাই বাধ্য হয়ে পানি মেরেছি।
রোদ্দুর ভাইয়ার গলা শুনে মনে পরলো আমিতো এখন আমার বাড়িতে নেই এই লোকটা তো কালকে আমাকে উনার বাড়িতে নিয়ে এসেছে।হতাস কন্ঠে বলাম,
— ও রোদ্দুর ভাইয়া আপনি!
রোদ্দুর ভাইয়া ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
— কি বললে তুমি আমায়?
আশ্চর্য উনি হঠাৎ এমন রেগে গেলেন কেন? আমি কি এমন বললাম?আমি বললাম,
— এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গেছে তো তাই ভেবেছিলাম আমি বাড়িতেই আছি।আর প্রতিদিন মা আমার ঘুম ভাঙ্গায় তো তাই মনে করেছিলাম মাই আমার চোখে পানি মেরেছে।
রোদ্দুর ভাইয়া চোখমুখ খিছে বললো,
— আমি সেটা বহলি নি। একটু আগে আমায় কি নামে ডাকলে?
আমি বললাম,
— রোদ্দুর নামে ডাকলাম। কেন আপনার কি অন্য নাম আছে?কিন্তু দিয়া তো আমাকে শুধু এই নামটাই বললো!
রোদ্দুর ভাইয়া বললো,
— আমার নামের সাথে ভাইয়া কেন বললে?আমি তোমার কোন জনমের ভাইয়া হে? আর একবার আমাকে ভাইয়া বললে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।
আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম,
— আমি তো আপনাকে আগে থেকেই ভাইয়া বলে ডাকতাম। এখন আর আমি অন্য কিছু বলতে পারবো না হুম।
রোদ্দুর ভাইয়া রেগে বললো,
— তুমি যদি আমাকে এই নামে আর একবার বলো তাহলে কিন্তু…… হ্যা দিয়ার কোনো একটা ক্ষতি করে দেব তখন ভালো লাগবে তো।
আমি বললাম,
— এই না না ঠিক আছে আমি আর ভাইয়া বলে ডাকবো না।কিন্তু আপনার নাম বলতে গেলেই তো ভাইয়া এসে যায়।আপনিই বলুন আমি কি করবো?
আমার কথা শুনে রোদ্দুর ভাইয়া চিন্তিত হয়ে পায়চারি করতে হতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো।অনেকক্ষণ পায়চারি করে আমার কাছে এসে বললো,
— ঠিক আছে তুমি তো রোদ্দুর বলতে গেলেই ভাইয়া এসে যায় তাই না?
আমি মাথা নেরে বললাম “হ্যা”। আমার কথা শুনে উনার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠলো।তারপর বললো,
— তাহলে তুমি আমায় অন্য নামে ডাকলেই তো হয় তুমি বরং আমায় অন্য নামে ডাকবা।
চলবে,,,,,