#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_৬
#Jechi_Jahan
আমি আর জোবান ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।আমি সামনে আর উনি পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ উনি আমাকে পেছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে।
জোবান-আমাকে একটু বিশ্বাস করা যায় না শিশির।
আমি-কি???
জোবান-যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলো।
আমি-হঠাৎ এমন করে বললে কি উত্তর দিবো।
জোবান-তার মানে বিশ্বাস করা যায় না।
আমি-না না যায়।
জোবান-তাহলে আমাকে সুমনের ব্যাপারে বললে না কেনো???
আমি-(আল্লাহ উনি হঠাৎ সুমনের কথা কেনো বলছে) ওর ব্যাপারে আবার কি বলবো।(ওনার থেকে সরে)
জোবান-ওর ব্যাপারে কি বলবে তুমি জানো না।
আমি-ওর ব্যাপারে আমি তেমন জানিও না যে বলবো।
জোবান-ওহ,,,
আমি-চলুন ঘুমাতে যাই।(বলে নীচে নামতে যাই)
জোবান-সুমন তোমাকে ভালোবাসে তাই না।
আমি-(ওনার কথা শুনে দাঁড়িয়ে যাই)
জোবান-বলো।
আমি-আপনাকে এসব কে বললো।(ওনার দিকে ফিরে)
জোবান-যেই বলুক,,,আগে তুমি বলো।
আমি-ও ভালোবাসলেও আমি ভালোবাসি না।
জোবান-গ্রেট,,,,এমন ভালোবাসা আমি প্রথম দেখলাম।এত ভালোবাসে যে থাপ্পড় মারতেও দ্বিধা বোধ করেনা।
আমি-আপনাকে এসব কে বললো।
জোবান-জেনেছি কেনো মতে,,,আচ্ছা আমি ঘুমাতে যাচ্ছি তুমি আসো।(বলে চলে গেলো)
ওনার যাওয়ার পর আমি একধরনের টেনশনে পরে গেলাম।উনি এসব কি করে জানলো,,,আচ্ছা সুমন বলেনি তো।টেনশনে আমার হাত গুলো কাঁপছে।উনি এসব কোথা থেকে জানলো সেটা ভেবেই কুল পাচ্ছি না।আচ্ছা উনি কি এসব জেনেই আমাকে বাড়ী থেকে নিয়ে এসেছেন।না না আর ভাবতে পারছি না।আচ্ছা শিরিন আর শান্ত কি কিছু জানে???একবার জিজ্ঞেস করে দেখিতো।হাতে ফোন থাকায় শান্তকে ফোন দিলাম রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছে না।এবার শিরিনকে ফোন দিলাম।শিরিনকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই ও রিসিভ করল।
শিরিন-আপু কেমন আছিস???
আমি-ভালো আছি।তুই কেমন আছিস??
শিরিন-আমিও ভালো আছি।
আমি-শোন,,তোকে একটু দরকারে ফোন দিয়েছিলাম।
শিরিন-কি দরকার বলো??
আমি-বাড়ীতে আজ সকালে কিছু কি হয়েছিলো??
শিরিন-কি হবে??
আমি-না,,,তোর ভাইয়া আমাকে হঠাৎ সকালে নিয়ে এলো তাই।
শিরিন-সেটা নিয়ে তো আমিও অবাক ছিলাম।ভাইয়া হুট করে বললো তোদের এক্ষুনি বাড়ী যেতে হবে তাই।
আমি-তোর ভাইয়া এ কথা কখন বললো??
শিরিন-তখন তো তুমি ঘুমাচ্ছিলে।
আমি-আচ্ছা আমি যখন ঘুমাচ্ছিলাম তখন কি বাড়ীতে সুমন এসেছিল???
শিরিন-না তো।
আমি-তাহলে উনি এসব কি করে জানলো।
শিরিন-কি জেনেছে আপু??
আমি-উনি না কিভাবে জেনে গেছে যে বিয়ের আগে সুমন আমাকে ভালোবাসতো।আর আজকে যে আমায় থাপ্পড় মেরেছে সেটাও জানে।
শিরিন-আপু তুমি সিওর তো যে ভাইয়া এসব জেনেছে?
আমি-উনি আমাকে কিছুক্ষণ আগে বলেছে।আচ্ছা তুই কি আজকে ভুলবশত এসব বলেছিস তোর ভাইয়া কে?
শিরিন-আপু আমি এসব কিছু বলিনি।তুমি বরং শান্ত কে জিজ্ঞেস করে দেখো।শান্তর পেটে তো কচু পাতাও থাকে না ওকেই জিজ্ঞেস করো।
আমি-ওকে তো ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু ও ধরছে না।
শিরিন-ওহ শান্ত তো গোসল করছে তাই হয়তো তোমার ফোন ধরতে পারেনি।
আমি-এতো রাতে??
শিরিন-কিছুক্ষণ আগে বাইরে পরে গেছেছি তাই।
আমি-ওহ,,,আচ্ছা যা ফোন দে।
——
শান্ত-হ্যালো আপু বল।
আমি-হুম,,,আচ্ছা শান্ত আজকে কি তুই তোর ভাইয়া কে সুমনের ব্যাপারে কিছু বলেছিস???
শান্ত-কেনো কি হয়েছে??
আমি-আরে বলনা বলেছিস কিনা??
শান্ত-হুম।
আমি-কি,,,কিন্তু কেনো???
শান্ত-কারণ ভাইয়া জিজ্ঞেস করেছিলো।
আমি-তোর ভাইয়া???
শান্ত-ওই তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন ভাইয়া আছরের দাগ আর থাপ্পড়ের দাগটা দেখে গেছিলো।এইসব দেখে ভাইয়া আর কাওকে না পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল।
আমি-তোকে জিজ্ঞেস করেছে বলে তুই বলে দিবি।
শান্ত-আমি প্রথমে মিথ্যা বললেও পরে বলতে পারিনি।কারণ ভাইয়া তোর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো।
আমি-তাও,,,,তুই না বলতি।
শান্ত-কেনো,,,ভাইয়া কি তোকে কিছু বলেছে।
আমি-কিছু বলেনি তবুও।
শান্ত-সরি।
আমি-আচ্ছা এখন রাখি,,,তুই ঘুমা।
শান্তু-আচ্ছা।
আমি আর দেরি না করে ছাদ থেকে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে দেখি জোবান টেবিলে বসে কিছু একটা লিখছে।আমি আস্তে আস্তে ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়াই।আমি যেই ওনার লেখা দেখতে যাবো উনি অমনি লেখা বন্ধ করে দিলো।আর আমার দিকে রেগে তাকিয়ে রইল
জোবান-দেখছোনা আমি ডায়রি লিখছি এখানে কেনো দাঁড়িয়েছো।
আমি-দাঁড়িয়েছি তো কি হয়েছে???
জোবান-তুমি খাটে গিয়ে বসো।
আমি-(কিছু না বলে খাটে বসে পরলাম)
জোবান-(ইস,,,একটুর জন্য দেখে ফেলতো)
আমি-আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন???
জোবান-না তো।
আমি-তাহলে এমন ভাবে কথা বলছেন যে।
জোবান-কেমন ভাবে কথা বলছি।(ডাইরিটা আলমারির
লকারে রেখে আমার পাশে বসে)
আমি-জানিনা।
জোবান-শিশির,,,আমি আমার ভালোবাসার মানুষের গায়ে কখনো হাত তুলতাম না।যেমনটা তোমার সুমন তোমার উপর তুলেছে।
আমি-হুম।
জোবান-আচ্ছা তুমি ঘুমিয়ে পরো আমার অফিসের কিছু কাজ বাকি আছে যা আমায় শেষ করতে হবে।
আমি-ঠিক আছে।(বলে শুয়ে পরলাম)
সকালে সবাই একসাথে নাস্তা করার পর যে যার কাজে চলে গেল।আজ থেকে নাকি জোবান অফিসে যাবে তাই তিনি অফিসে চলে গেলেন।আমিও আর কোনো কাজ না পেয়ে জেরিন আপুর রুমে গেলাম।রুমে গিয়ে দেখি জেরিন আপু বারান্দায় ফোনে কথা বলছে।হঠাৎ আমার নজর যায় আপুর রুমের টেবিলের উপর।টেবিলে আপুর অনেক রকমের বই সাজানো মনে হয় আপুর ভার্সিটির বই।বইগুলো দেখে আমার মাথায় টনক নাড়লো।এবার তো আমার ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু হুট করে বিয়ে হওয়ার কারণে আর ভর্তি হওয়া হলোনা।আচ্ছা লিনা(ব্রেস্ট ফ্রেন্ড)তো বলেছিল ও আমার সাথে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে।লিনা কি ভর্তি হয়ে গেছে নাকি এখনো হয়নি।
আমি-হ্যালো লিনা।(রুমে এসে ফোন দিলাম)
লিনা-আরে “নায়ি নাবিলি দুলহান” আপনি হঠাৎ ফোন দিলেন।তা এত দিন পর কি মনে করে ফোন দিলেন।
আমি-চুপ থাক,,,তুই ও যেন ফোন দিয়েছিস???
লিনা-আচ্ছা বাদ দে,,,ভালো আছিস???
আমি-হুম,,তুই ভালো আছিস??
লিনা-আমি তো অলওয়েজ ভালো থাকি।
আমি-তুই আর বদলাবি না।
লিনা-হুম,,,
আমি-আচ্ছা লিনা তুই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিস???
লিনা-হইনি তোবে ভেবে রেখেছি কোথায় ভর্তি হবো।
আমি-ওওও,,,তা কোথায় ভর্তি হবি?
লিনা-তোর শ্বশুর বাড়ির ওখানে একটা ভালো ভার্সিটি আছে আমি ওখানেই ভর্তি হবো।
আমি-এতো দূরে এসে পরবি।
লিনা-আরে ভার্সিটি টা নাকি ভালো তাই।
আমি-তাই বলে এতো দূরে??
লিনা-আরে ওখানে আমার এক চাচার বাড়ী আছে আমি ওখান থেকেই পরবো।
আমি-ওওও,,,তো কবে ভর্তি হবি??
লিনা-তুই যেদিন ভর্তি হবি সেদিন।
আমি-আমি কবে ভর্তি হবো জানিনা।
লিনা-মানে??
আমি-আমি ওনাদের এখনো বলিইনি পড়াশোনার ব্যাপারে।
লিনা-তো দেরি কেনো করছিস বলে ফেল।
আমি-যদি না মানে??
লিনা-আরে বললে ঠিকই মানবে তুই বলে দেখিস।
আমি-ঠিক আছে।
আমি আর লিনা কিছুক্ষণ কথা বললাম।দুপুরে দেখি উনি ফিরে এসেছে।ওনাকে এই ওসময়ে দেখে আমি একটু অবাক হয়ছিলাম।উনি যখন রুমে গেলেন আমিও ওনার পেছন পেছন রুমে গেলাম।
আমি-আপনি আজ এতো তাড়াতাড়ি??
জোবান-চলে এসেছি ভালো লাগছিলো না।
আমি-ওহ,,,শরীল খারাপ???
জোবান-বলতে পারো।
আমি-তো কিছুক্ষণ রেস্ট নিন আমি আসছি।
জোবান-তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছো???
আমি-আপনি কি করে বুঝলেন???
জোবান-বলে ফেলো।
আমি-আসলে আমি আবার পড়াশোনা,,,,
জোবান-শুরু করতে চাও।(চোখ বন্ধ রেখে)
আমি-হুম,,,আমি কি পড়াশোনা শুরু করতে পারবো??
জোবান-আমি না বললে পড়াশোনা শুরু করবে না।
আমি-আপনি না বলার তো কোনো কারণ দেখছি না।
জোবান-হুম,,,পড়াশোনা শুরু করতে পারবে কি পারবে না সেটা আমি রাতে জানাবো।এখন তুমি যাও।
আমি-এটা কেমন কথা??
জোবান-আচ্ছা এখন যাও আমি ঘুমাবো।
আমি-খাবার খাবেন না?
জোবান-খেয়ে এসেছি,,এখন ঘুমাবো কেও যেনো
ডিস্টার্ব না করে বলে দিও।
আমি-আচ্ছা।(বলে চলে এলাম)
-চলবে