তোর নামের রোদ্দুর ২ পর্ব-২৪+২৫

0
620

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৪

-আমার আর সিয়ার বিয়েটা আজই হচ্ছে ছোটকাকু!

কথাটা শেহনাজ মন্জিলে বাজের মতো পরলো যেনো।ড্রয়িংরুমে থাকা প্রতিটি মানুষ শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে।তাদের একেক জনের চাওনি একেকরকম।কেউ স্বস্তিতে,কেউ খুশিতে,বেশিরভাগ বিস্ময়ে আর কেউ তীক্ষ্মচোখে কপাল কুচকে তাকিয়ে শুদ্ধর দিকে।আমি রিয়্যাক্ট করাটাই ভুলে গেছি।মাথার উপর দিয়ে গেছে কথাটা।জীবনটার মতো চারপাশটাও ধোকা মনে হচ্ছে শুধু।এতোসবের মধ্যেও শুদ্ধ একধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হাসি নিয়ে দাড়িয়ে।কিছুক্ষন আগে বলা কথাটার কিঞ্চিত রেশ নেই তার চেহারায়।ঠিক কাল সন্ধ্যের মতোই।

.
আগেরদিন সন্ধ্যায় শুদ্ধ আর কিছুই বলেন নি আমাকে।কিছুটা সময় ওভাবেই বৃষ্টিতে দাড়িয়ে ছিলেন উনি।তারপর হঠাৎই চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরলেন।বিস্ময়ে কান্না থেমে গেলো আমার।রুমে নিয়ে আসছিলেন উনি আমাকে।কিন্তু দীদুন সামনে পরে গেলো।

-দাদুভাই?তুমি কখন এসেছো?এভাবে ভিজেছো কেনো দুজন?

-পরে সবটা বলছি দীদুন।সিয়া ভিজে আছে।জ্বর হবে ওর।

শুদ্ধের কথায় দীদুন পথ ছেড়ে দিলো।শুদ্ধ ওভাবে হাত ধরেই রুমে নিয়ে আসলেন আমাকে।রুমে এসে ইরামকে পেলাম এসাইনমেন্টের কাগজপত্র নিয়ে।শুদ্ধ দরজা লাগিয়ে তোয়ালে দিয়ে আমার মাথা মুছতে মুছতে বললেন,

-ছোটকাকু কোথায় ইরাম?

অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো ও।শুদ্ধর এমন আগমনে ওর ওমন রিয়্যাক্ট করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়ও।আমি নিজেই তার ব্যবহারে ফ্রিজড হয়ে আছি যেনো।শুদ্ধ ভ্রু নাচিয়ে আবারো ইরামকে বুঝাতেই ও ধ্যান ছেড়ে বলল,

-আব্বুকে সবে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম।উনি কাদছি্….

শুদ্ধ হাত দিয়ে থামিয়ে দিলেন ওকে।তোয়ালেটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা জামা এনে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

-চেন্জ করে আয়!

-আপনি যান।আমি….

-আমি যা বলছি তাই হবে।কথা বাড়াস না।হুম?

এতোটা শান্ত গলা!শিউরে উঠলাম আমি।শুদ্ধর রাগ দেখানোর চেয়ে এই নিরবতা আর ঠান্ডা আওয়াজে বেশি ভয় আমার।বিস্ময়ে তারদিক তাকিয়ে রইলাম।আবারো হাতে থাকা জামাটার দিকে ইশারা করলেন উনি।চুপচাপ ওটা নিয়ে চেন্জ করে আসলাম।আর যাই হোক,বিয়েটা হবে না।আপাতত আব্বু না আসা অবদি যে করেই হোক ওনাকে শান্ত রাখতে হবে।আমি বেরিয়ে এসে দেখি শুদ্ধ ভেজা জামাকাপড়েই আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলগুলো হাতে উল্টাচ্ছেন।আয়নায় আমাকে দেখে ইরামকে বললেন,

-ইরাম?ডিনারের পর জ্বরের ওষুধটাও দিয়ে দেবে ওকে ঠিকাছে?আমি খোজ নেবো কিন্তু!আর হ্যাঁ,আমি এসেছি এটা কাউকে বলো না কেমন?কাউকেই না।

ইরাম মাথা দুলালো।শুদ্ধ এগোলেন আমার দিক।আমার গালে একহাত রেখে হাসিমুখে বললেন,

-লক্ষ্মী বউয়ের মতো ওষুধটা খেয়ে নিস হুম?সুইট ড্রিমস্!

শুদ্ধ বেরিয়ে চলে গেলেন।দুহাত বুকে জরিয়ে ধরে বিছানায় বসে পরলাম।কান্না থেমেছে আগেই।কিন্তু শুদ্ধের কথা!ওনার বউ ডাক!কাপতে শুরু করলাম আমি।তাড়াতাড়ি চাদর মুড়িয়ে ইরাম শুইয়ে দিলো আমাকে।রুম থেকে বেরোইনি আর।আম্মু এসে বৃষ্টিতে ভেজা নিয়ে রচনা শুনিয়ে খাইয়ে দিয়ে গেছে,আব্বু একবার এসে পেছন থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গেছেন।ইরাম ওষুধও দিয়েছিলো।খাইনি।সারারাত মাথায় শুদ্ধর চিন্তা ঘুরপাক খেয়েছে।সকালে রুমের বাইরে বেরিয়েছিলাম একবার।শুদ্ধ ছিলেন না।কিন্তু দুপুর গরিয়ে যেতেই লাগেজ আর এতোএতো ব্যাগপত্র হাতে বাসায় ঢুকলেন উনি।আব্বু বিস্ময় নিয়ে বললেন,

-তুমি?এখানে?

-আনএক্সপেক্টেড?

এরমধ্যেই সেজোকাকুও বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বললেন,

-এই ছেলেকে নিয়ে আর পারি না।হুট করে নিজে বেরিয়ে এলো তো এলো,আবার আমাকেও এভাবে চলে আসতে বললো!

বড়মা বললো,

-আসাদ ভাই?আপনি?আপনাকেও শুদ্ধ…

-এসবের মানে কি সেজোভাই?হঠাৎ এভাবে….

-দু মিনিটে সবটা ক্লিয়ার করে দিচ্ছি ছোটকাকু!তোমার মতো দু বছর নানা রঙে নিজেকে প্রকাশ করে সবার ইমোশোনস্ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোনো ইচ্ছে আমার নেই!

আব্বুকে সোজা জবাব দিয়ে আমার দিকে তাকালেন শুদ্ধ।চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।হাত পা কাপছে আমার।ছুটে চলে যেতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু এতোটুকো জোর পাচ্ছি না গায়ে।উনি বললেন,

-রাতে ওষুধটা খাস নি তাইনা?

আমি চুপ রইলাম।এরমধ্যেই যীনাত আপু ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ডাক লাগালো,

-ইনসু….

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ওর দিকে।আপু এসে দৌড়ে জরিয়ে ধরলো আমাকে।কান্না পাচ্ছিলো।তবুও কাদিনি।মাথা গুজে থেকে পাথর হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।যেনো ও ছেড়ে দিলেই আমি পরে যাবো।আব্বু বললেন,

-যীনাত?তুমি এখন?এখানে?ইমা একা আসতে দিলো তোমাকে?

সেজোকাকু বললেন,

-আসার সময় ইমার বাসায় গিয়ে আমি নিয়ে এসেছি ওকে।তাই আসতে দিয়েছে।

বড়কাকু সবে বাসায় ঢুকলেন।সবাইকে দেখে বললেন,

-কি ব্যাপার?সবাই?এখানে?

-শেহনাজ মন্জিলে আজ বিয়ে।দু একজন বাড়তি লোকজন না আসলে চলে?

বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম তারদিক।কি করতে কি চাইছেন উনি?মেজোমা বললো,

-মানে?কার বিয়ে?কিসের বিয়ে শুদ্ধ?

শুদ্ধ আব্বুর দিকে এগিয়ে পকেটে দুহাত গুজে বললেন,

-আমার আর সিয়ার বিয়েটা আজই হচ্ছে ছোটকাকু!

.
কথাটা শেষ হলো ঠিকই,কিন্তু তার ফল?কি হতে চলেছে আবার?চোখ‌ দিয়ে পানি পরতে লাগলো আবারো।সেজোকাকু শুদ্ধর পেছন থেকে বললেন,

-আলহামদুলিল্লাহ্!

তারপরই কাউকে ফোন করে বলতে লাগলেন,

-আজাদ ম্যানশনকে নববধুর মতো সাজিয়ে দাও।ও বাসার একমাত্র বউমা আজ বধুবেশে পা ফেলবে ও বাসাতে।আয়োজনে যেনো কোনো ত্রুটি না থাকে।তুমি তো জানোই,তুমি ছাড়া এতোবড় দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার কেউ নেই আমার।আর হ্যাঁ,তোমার আন্টিকেও জানিয়ে দাও।আমি তাড়াতাড়িই ফিরছি।শুদ্ধ আর ওর বউকে নিয়ে।

দম মেরে দাড়িয়ে আমি।শুদ্ধ যীনাত আপুকে লাগেজটা এগিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-ওকে সাজিয়ে দাও যীনাত আপু।এই শুনশান শেহনাজ মন্জিল যতটা সাদামাটা হয়ে আছে,আমার সিয়াকে আজ তার থেকে হাজারগুন বেশি সাজে সাজাবে!ইমরোজ,তামিম ভাইয়া,রিফাত ওরা সবাই আমার বাসরঘরের দায়িত্ব নিতে সকালেই আজাদ ম্যানশন পৌছেছে কিন্তু!

তখনই তিনচারটে মেয়ে বাসায় ঢুকলো।চাকমাদের মতো চেহারা,হাতের ব্যাগপত্র বলে দিচ্ছে ওরা পার্লার থেকেই এসেছে।শুদ্ধ হেসে হাত বারিয়ে আমার দিকে পথ দেখিয়ে দিলেন ওদের।তারপর বড়মা, মেজোমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-টুকটাক যেটুকো প্রিপারেশন নেওয়ার,তা এখন থেকেই শুরু করো।তোমাদের অপ্রস্ততির জন্য আমার বউকে নিয়ে দেরীতে বাসায় ফিরবো তা তো আর হয় না তাইনা?ওদিকে আম্মুও বাসায় একা।মামীমা এসেছে কিনা কে জানে।দেরি করাটা ঠিক হবে না।সো কাজে লেগে পরো।

আব্বু মুখ খুললেন এবার।চেচানোপ্রায় আওয়াজে বললেন,

-মানে কি এসবের?কি বলছো টা কি এসব তুমি শুদ্ধ?ভুলে গেছো তিনদিন আগে কি কথা হয়েছে?বেশ,আজ যখন সেজোভাই এসেছেই,আমি….

-কিচ্ছু ভুলিনি আমি ছোটকাকু!তুমি ভুলে গেছো!দাদুভাইকে দেওয়া কথা তুমি ভুলে গেছো!আমি ভুলিনি!এন্ড দ্যাটস্ হোয়াই,আমার আর সিয়ার বিয়েটা কালই হচ্ছে!

আম্মু বললো,

-এভাবে আচমকা…

-আচমকা হোক বা সময় নিয়ে,তোমার মেয়েকে এতোটুকো কষ্ট পেতে দেবো না আমি ছোটমা।এতোটুকো বিশ্বাস করো তো তুমি আমাকে তাইনা?

শুদ্ধর কথায় আম্মুর চোখ ভরে উঠলো।ভাঙা আওয়াজে আম্মু বললো,

-তুমি বলেই তো এতোটা নিশ্চিন্ত আমরা শুদ্ধ।ইনসুর জন্য তোম্…

আব্বু বললেন,

-কোনো বিয়ে হবে না আজ!

দীদুন এতোক্ষনে বললো,

-শুদ্ধ বলে দিয়েছে যখন,বিয়েটা আজই হবে।

-কিন্তু মা,এই বিয়েটা….

আমিও মুখ খুলতে যাচ্ছিলাম।শুদ্ধ সে সুযোগ না দিয়ে বললেন,

-আমার ছোটকাকু আর সিয়ার সাথে আলাদাভাবে কথা বলার আছে!

আব্বু বললেন,

-আজ অবদি সবটা সবার সামনে হয়েছে,আজও সবাই জানবে।আমি চাইনা এই….

-ইয়াদ?তুমি চাও সবাই সবটা জানুক?

দীদুনের গম্ভীর গলায় আব্বু চুপ করলেন।তারপর হনহন করে পা বাড়ালেন পাশের রুমে।শুদ্ধ বাকা হেসে আমার হাত ধরলেন।যীনাত আপু ছেড়ে দিলো আমাকে।আমি কি করবো,কি বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।আব্বু যে রুমে,সেখানেই নিয়ে আসলেন শুদ্ধ আমাকে।দরজা লাগিয়ে সোজা আব্বুর সামনে একটা কাগজ ধরে বললেন,

-তোমার আর সিয়ার অনেক মিল।দুজনেই সারপ্রাইজ ভালোবাসো।তাইনা ছোটকাকু?দিস ওয়ান ইজ ফর ইউ!

কাগজটা দেখেই আব্বুর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।অবিশ্বাস,বিস্ময় সবটা এসে ভর করলো ওই চেহারায়।শুদ্ধ নিজের নখ দেখতে দেখতে ভাবলেশহীনভাবে বললেন,

-সিয়ার সাথে আমার বিয়েটা দু মাস আগেই হয়ে গেছে কাকু।আমরা দুজন তো শুধু তোমাদের সবার মতামতের জন্য ওয়েট করছিলাম।এখন যখন তোমার এতই আপত্তি…সবটা জানিয়ে আমার বউ,আমি নিয়ে যাচ্ছি!

আব্বু আমার দিকে অবিশ্বাস‌ নিয়ে তাকিয়ে বললেন,

-ইনসিয়া তুমি…

ঠিক ধরেছি।শুদ্ধ সেই রেজিস্ট্রি পেপার দেখিয়েছেন আব্বুকে।এগিয়ে বলতে গেলাম,

-আব্বু আমি এসব….

-থাক!কিছুই বলতে হবে না তোমাকে।কাল যখন আমাকে কেনো জিজ্ঞাসা করেছিলে তুমি,আমার তখনই বোঝা উচিত ছিলো!তুমি বদলে গেছো!

আর পারলাম না সহ্য করতে।তার জন্য কি না করেছি আমি,আজ আমাকে বলার সুযোগ না দিয়ে,যাকে অপছন্দ করেন,সেই শুদ্ধের কথায় আমাকেই অবিশ্বাস করছেন উনি।কাদতে কাদতে তার সামনে দাড়িয়ে বললাম,

-বদলানো?বদলানো কাকে বলে আপনি জানেন?দুবছর আগে ইমারজেন্সি রুমে দাদুভাইয়ের বেডের পাশে শক্তভাবে বসে থাকা মানুষটা আমার কথা না ভেবেই যখন দুর্বল হয়ে পরেন,তাকে বলে বদলানো।দাদুভাইয়ের সামনে আমার জীবনকে একজনের সাথে জুড়ে দিয়ে তার অনুপস্থিতিতে আমার জীবন থেকে তাকে ভুলে যেতে বলাকে বলে বদলানো।আংটি হাতে তোলার দিনটা রাতে রুপান্তর আগেই সে আংটি খুলে ফেলতে বলাকে বলে বদলানো।সবার সামনে সবটা মেনে নিয়ে,তাদের আড়ালে সবটা অস্বীকার করাকে বলে বদলানো।কিছুদিন আগেই নতুন করে শুরু করতে চেয়ে,হুট করে আবারো সবটা ভুলে যেতে বলাকে বলে বদলানো।এতোকিছুর পরও আপনার এখনো মনে হয়,আমি বদলে গেছি আব্বু?আমি?

শুদ্ধ তার বুকে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।বললেন,

-কাদিস না সিয়া!বুঝিস না কেনো?তোর কান্না সহ্য হয় না আমার!

আব্বু শক্তভাবে তাকিয়ে আমার দিকে।আমার চোখ পানিতে ভরে আছে।ঝাপসা দেখছি সবটা।উনি বললেন,

-তারমানে তুমি ভেবে নিয়েছো কি করবে।ভেবে নিয়েছো কেনো বলছি,বিয়েটাই তো করে নিয়েছো।আর কিই বা বলার আছে আমার।যাই হোক,একটা কথা মনে রাখবে,আমি কোনোদিনই খারাপ চাইনি তোমার।যে সিদ্ধান্ত তুমি নিয়েছো,তার দায় তোমারই।ভালো থেকো।

আব্বু বেরিয়ে গেলেন।শব্দ করে কেদে দিলাম আমি।বোঝাতে পারলাম না তাকে।আমার দিকটা আজও বুঝলেন না উনি।শুদ্ধর থেকে ছাড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম তার পিছনে।শুদ্ধ ছাড়েন নি আমাকে।আরো শক্ত করে আমাকে জরিয়ে ধরে বললেন,

-পাগলামি করিস না সিয়া!

-ছাড়ুন আমাকে!আব্বুর অমতে কোনো বিয়ে হবে না!করবো না কোনো বিয়ে আমি!

শুদ্ধ এবার দুহাত চেপে ধরলেন আমার।অগ্নিচক্ষু করে বললেন,

-আমার মাথা ঠিক নেই সিয়া!দু বছরের রাগটা অনেক বেশি ছিলো।সিফাত ভাইয়ার বাসরঘরের সামনে সে রাতে রাগে তোর গলায় ওড়না পেচিয়েছিলাম।সেটা আম্মু দেখেছিলো।সেদিনই কথা আদায় করিয়েছে আমার থেকে,তোর সাথে যেনো এতোটুকো রাগ না দেখাই।নিজেকে আস্তেআস্তে সামলাতে শিখেছি।তোকে জোর করার পরপর নিজেকেও কষ্ট দিয়েছি।সহ্য হয় না তোর কষ্ট আমার!তাই প্লিজ!তোকে জোর করতে প্লিজ জোর করিস না আমাকে!প্লিজ!

-জোর করা?আপনার মনে হয় না,এই কাজটা আপনিই করছেন?আপনি….

শুদ্ধ আবারো শক্ত করে বুকে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।চুলে পাগলের মতো একটানা কয়েকটা চুমো দিয়ে দুগাল ধরলেন আমার।চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বললেন,

-তোকে আজ কবুল বলতেই হবে সিয়া!ইসলামিক রীতিতে বিয়েটা হতেই হবে আজ!নইলে শেহনাজ মন্জিলে প্রথমবারের মতো পুলিশ আসবে আজ।আর কমপ্লেইনটা হবে মিস্টার ইয়াদুল আজাদের বিরুদ্ধে।আমার বিয়ে করা বউকে তার বাবা নিয়ে যেতে দিচ্ছে না এই দায়ে তার হাতে হাতকড়া পরবে।থানায় নিয়ে যাওয়া হবে ছোটকাকুকে।এন্ড ট্রাস্ট মি,আই,মাইসেল্ফ উইল মেক শিওর অফ দ্যাট!

থেমে গেলাম আমি।শুদ্ধও ছেড়ে দিলেন আমাকে।মুর্তির মতো দাড়িয়ে তারদিকে তাকিয়ে রইলাম।আজ উনিও এক অন্যরুপ দেখালেন আমাকে।সত্যিই আমার জন্য সীমাপারের ঘটনা ঘটাতে উদ্যত উনি।এতোবড় একটা কথা বলতেও বুক কাপে নি তার!যীনাত আপু খোলা দরজায় নক করলো।পার্লারের মেয়েগুলো দরজায় দাড়িয়ে।শুদ্ধ ঘাড় নাড়িয়ে ওদের ভেতরে আসতে বললেন।একপলক আমার দিকে তাকিয়ে চলে যাচ্ছিলেন।কি বুঝে আবারো পিছন ফিরে আমার কপালে ঠোট ছুইয়ে বেরিয়ে গেলেন উনি।

#চলবে….

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৫

টকটকে লাল লেহেঙ্গা,সর্বাঙ্গে গয়না,গলায় ফুলের মালা,মাথায় ঘোমটা,ইন্সট্যান্ট মেহেদীতে রাঙানো দুহাত সবটা মিলিয়ে বিয়ের কনে আজ আমি!কিন্তু ছোটছোট কারনে উৎসবমুখর হয়ে থাকা শেহনাজ মন্জিল আজ বিয়ের উৎসবে মেতে উঠতে পারে নি সেভাবে।বিয়েটা হয়েই গেলো।আমার আর শুদ্ধর।যার সাথে চেয়েছিলাম,তার সাথেই।তবে যেভাবে চেয়েছিলাম,সেভাবে নয়।সবরকম নিয়মনীতি মেনেই আজ বিয়েটা হলো।বাসার প্রতিটি মানুষের মুখে হাসিই ছিলো।আব্বু ব্যাতিত।সবাই হাসিমুখে নিজনিজ দায়িত্ব পালন করেছে।আর উনি?শুধু শান্ত হয়ে বসে ছিলেন।হয়তো দীদুন জোর করেছিলো,নয়তো শেষ অবদি তার অমতে বিয়েটা হয় কি না তাই দেখার জন্য বসে ছিলেন উনি।

পাথরের মতো বসে থেকে তিনবার কবুল বলে দিয়েছি।সবার সামনে শুদ্ধকে স্বামী বলে স্বীকার করে নিয়েছি।চোখের জল শেষ হয়ে এসেছে,নাকি থেমে গেছে তা জানি না।তবে কান্না থেমে যাওয়ার কারন অনেকগুলো ছিলো,এটা আমার মন জানে।দুঃখ একটাই,বিয়েটা যেভাবে হলো তা কোনোদিনও চাই নি আমি।আব্বুর কথা শুনেও আর পাঁচটা মেয়ের মতোই আশা বেধেছিলাম,হয়তো আব্বুর ভুল ভাঙবে,উনি নিজে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে আমার পাশে এনে দাড় করাবেন,এমনটাই পরিস্থিতি তৈরী করবে আমার সেই ভালোবাসার মানুষ।কিন্তু হলো তো উল্টোটাই।

আব্বু তার মতে অটল রইলেন,আর শুদ্ধও তাকে বোঝানোর জন্য তেমন কিছুই করেন নি।বরং রেজিস্ট্রির কাগজ দেখিয়ে আব্বুকে আরো রাগীয়ে দিয়েছেন।উনি চাইলেই পারতেন আব্বুকে বোঝাতে।সময় নিয়ে।অবশ্য সময়!আর কতোই বা সময় নেবেন উনি?পাঁচটা বছর কি কম ছিলো?কিন্তু তা বলে আমাকেও থ্রেট দিতে পিছপা হন নি উনি।আমি নিজেকে কি করে সামলাবো?

জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন দুটো মানুষের এতো ভিন্নরুপ মানতে পারছি না একদমই।ভয় হচ্ছে।সম্পর্কের মায়াজালে জরিয়ে নিজের দায়িত্বগুলো ঠিকমতো পালন করতে পারবো তো?বিয়েটা শেষে যীনাত আপু আর ইরাম ধরে বাইরে নিয়ে এলো আমাকে।আম্মু কাদছিলো অনেক আগে থেকেই।বড়মা,মেজোমা,ইরামও।ইরাম কাদতে কাদতে আমাকে জরিয়ে ধরে বললো,

-মিস করবো।একটুখানি।তোমাকে নয়।এক ড্রামেবাজের ড্রামাকে!

শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম ওকে।দীদুন এগিয়ে বললো,

-এতোটা আনন্দ!আফসোস একটাই,এই আনন্দে তোর দাদুভাই শামিল হতে পারলেন না।

আমি দীদুনকেও জরিয়ে ধরলাম।দীদুন ফিসফিসিয়ে বললো,

-আরেকটা আফসোস,তোর বাসরঘরে যাওয়াটা হলো না।শুদ্ধটার একটু বেশিই তাড়া কিনা!

দীদুনকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম।অনেকটাই পেছনে আম্মু দাড়িয়ে।এগিয়ে গিয়ে সামনে দাড়াতেই আম্মু আমাকে জরিয়ে ধরে আরো জোরে কেদে দিলো।নিশব্দে চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার।শুদ্ধ এগিয়ে এসে আম্মুকে একহাতে জরিয়ে বললেন,

-কেদো না ছোটমা।ভরসা রাখো।

আম্মু কান্না কমিয়ে‌ বললো,

-ওকে দেখে‌ রেখো শুদ্ধ।

শুদ্ধ মাথা নিচু করে বললেন,

-যো হুকুম।

গুটিগুটি পায়ে আব্বুর দিকে এগোলাম।উনি অন্যদিক মুখ করে দাড়িয়ে।আম্মু শুদ্ধকে ছাড়িয়ে এসে বললো,

-ইনসুর আব্বু,এবারতো স্বাভাবিক হন আপনি!মেয়েটা চলে যাচ্ছে!এখনও আপনি এভাবে….

আম্মু হুহু করে কাদতে লাগলো আবারো।আর কেউ বুঝুক,না বুঝুক।সহধর্মীনি হিসেবে আম্মুর বুঝতে বাকি নেই আব্বু চাননি বিয়েটা।তবুও শুদ্ধকেই‌ সাপোর্ট করেছে সে।এতোটা ভরসা,ভাবতেও অবাক লাগে।অবশ্য শুদ্ধ কি তেমন মানুষই নন?চোখ বন্ধ করে যাকে ভরসা করা যায়?তবে আজ আমাকে তার এইরুপ কেনো দেখতে হলো?আব্বু তখনও চুপ।আমিই আব্বুর হাত ধরে মাথায় নিয়ে বললাম,

-জানি,দোয়া চাইতে হবে না আপনার কাছে।সেটা আজীবন করে যাবেন আপনি আমার জন্য।কিন্তু আজ একটা নির্দিষ্ট দোয়া চাওয়ার আছে আপনার কাছে।তাই মুখ ফুটেই বললাম।দোয়া করবেন আব্বু,যে কারনটায় আপনি আমাকে ভুল দেখিয়েছেন,সেই কারনটাই যেনো আপনার আমার জীবনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে নামে।আমার বিশ্বাস,আপনিও মনে মনে এটাই চান।আর আপনি দোয়া করলে তা বিফলে যাবে না আব্বু।আজ ঠিক যে যে কষ্ট নিয়ে আমি শেহনাজ মন্জিল ছাড়লাম,সে দিনটা দুরে নেই,যেদিন ঠিক এই সমস্ত কষ্টগুলোই সুখের কারন হবে আপনার আমার।দোয়া করবেন।

আব্বু একপলক অসহায়ের মতো তাকালেন আমার দিকে।শুদ্ধ এসে পাশে হাত ধরে দাড়ালেন আমার।তার চোখমুখ শক্ত।একপ্রকার টেনেই নিয়ে আসলেন ওখান থেকে আমাকে।কাকুরা সবাই মিলে গাড়িতে তুলে দিলেন।উদ্দেশ্য!এক নতুন গন্তব্য!আজাদ ম্যানশন!শুদ্ধর বাসা‌ আর আমার শশুড়বাড়ি!

.
গাড়িতে কান্না করি‌নি‌ একদমই।শুদ্ধ‌ জরিয়ে‌ রেখেছিলেন সারা রাস্তা আমাকে।পৌছালাম আজাদ ম্যানশন।গাড়ি থেকে নেমে চোখ ধাধিয়ে‌ গেলো আমার।এটুকো সময়ের মধ্যেই দোতালা বাসাটা রঙিন বাতিতে সেজেছে।গেইট থেকে শুরু করে,ফুল লাইটিংয়ের কোনো কমতিই নেই।আকাশেও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।বৃষ্টি নেই,তবে একটু পরপর আলোর ঝলকানি।শুদ্ধ নেমে এসে হাত ধরলেন আমার।বাসার দিকে তাকিয়েই শান্ত গলায় বললেন,

-ওয়েলকাম।

আমি তাকিয়ে ছিলাম তারদিক।শান্তশিষ্ট চাওনি,হালকা লাল নাকচোখ,এলোমেলো চুল।অনেকটাই অগোছালো লাগছে তাকে।কারনটা আমি ছাড়া আর কি?কিন্তু বিয়েটা তো হয়ে গেছে।যেমনটা উনি চেয়েছিলেন।আমিও চেয়েছিলাম,কিন্তু এভাবে নয়।আজ ভালোবাসা থেকে নয়,মনের শতসহস্র কষ্ট থেকে কবুল বলতে হয়েছে আমাকে।তার ধমকি শুনে।তবে উনি এমন কেনো করছেন?আমার‌ সমবয়সীই একটা মেয়ে‌ দৌড়ে এসে হাত জরিয়ে ধরে বললো,

-ওওও মা!ইনসিয়া ভাবী তো সত্যিই দেখতে মাশাল্লাহ্!এই শুদ্ধ ভাইয়া সবসময় বেস্টটা কোথথেকে খুজে আনে কে জানে!

আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।আমাকে ওভাবে দেখে মেয়েটা একগাল হেসে বললো,

-আরেহ্!চিল!আমি তোমার একমাত্র ননদীনি আর শুদ্ধ ভাইয়ার একমাত্র মামাতো বোন।মাহি!বাকিসব পরে জানবে।চলো ভেতরে চলো এবার!

অন্য গাড়ি থেকে যীনাত আপুও নেমে এলো।শুদ্ধ আমার হাত ছেড়ে দিলেন।ওরা দুজন আমাকে নিয়ে এগোলো।বাসার ভেতরে কয়েকটা চেনাজানা মুখ।ইমরোজ ভাইয়া,তামিম ভাইয়া,রিফাত ভাইয়া,ইশান ভাইয়া,তাপসী আপু।সবাই হাসিমুখে দাড়িয়ে।সবাইকে দেখে নিলাম খানিকটা সময় নিয়ে।যীনাত আপু ইশারা করলো সেজোমার দিকে।এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলাম।হাটুগেরে বসে বললাম,

-কেমন আছো‌ সেজোমা?

-ভালো না থেকে উপায় আছে ইনসু?আম্মু বলে ডাকার জন্য তুই‌ এসে গেছিস যে!

জড়িয়ে ধরলাম তাকে।শুদ্ধর একটাই মামী,দুজন খালা।ওনারা মিলে দু একটা নিয়মকানুন শেষ করলেন।তারপর মাহী আর যীনাত আপুই ধরে এনে এক ঘরের ফুলের বিছানায় বসিয়ে দিয়ে গেলো আমাকে।চোখ মেলে সারা রুমটা দেখলাম।অত্যন্ত পরিপাটিভাবে সাজানো গোছানো।ফুলের সাজটাও মন কাড়ার মতো।কিন্তু কিছুতেই মন লাগছে না আমার।কেমন যেনো মনে হয়ে দম আটকে আসছে।হাশফাশ করতে লাগলাম।

টেবিলের বইয়ের সামনে কলমদানিটার পাশে একটা ফটোফ্রেম।ছবিটা শুদ্ধের।সাদা গেন্জির উপর কালো জ্যাকেট পরে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছেন উনি।বরাবরই ওই হাসিতে চোখ আটকে যায় আমার।দরজা খোলার শব্দে হুশ ফিরলো।শুদ্ধ এসেছেন।উনি দরজা লক করে বেডের দিকে এগিয়ে এসে তাচ্ছিল্যে হেসে বললেন,

-তামিম ভাইয়াকে সত্যিই ক্রেডিট কার্ড ধরিয়ে দিয়ে এসেছি সিয়া!কথা রেখেছি।ওয়েট করাই‌ নি তোকে!আমার বউ কে!

আমি চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে।শুদ্ধও চুপ।কিছুক্ষন আমার দিক তাকিয়ে রইলেন উনি দাড়িয়ে থেকে।আমি চোখ নামিয়ে নিতেই শেরওয়ানির গলার দিকটা টানতে টানতে ব্যালকনির দিকে এগোলেন উনি।থাই গ্লাসের ওপারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আলোর ঝলকানি।গ্লাস ঠেলে সরাতেই বজ্রপাতের শব্দটাও ভেতরে আসতে লাগলো এবার।বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি।শুদ্ধ একধ্যানে বাইরে তাকিয়ে।অনেকটা সময় কেটে গেলো।কিন্তু শুদ্ধ ওভাবেই দাড়িয়ে।লেহেঙ্গা,ভারীভারী গয়না সামলে এগিয়ে গেলাম তার দিকে।আমার উপস্থিতি টের পেয়ে শুদ্ধ বললেন,

-আজকের রাতটা এমন কেনো হলো সিয়া?আজ তো পূর্নিমা হওয়ার কথা ছিলো।পুর্ন চাঁদের আলোতে আমার এই বারান্দা আলোকিত হওয়ার কথা ছিলো।সে চাঁদের আলোতে চন্দ্রবিলাস করতে থাকা দুটো চকরের গুন্জন শোনার কথা ছিলো।তবে এই ভারীবর্ষন কেনো?এই বিদ্যুৎ চমকানোর আলো কেনো সিয়া?শব্দটা বজ্রপাতের গর্জন কেনো?কেনো সিয়া?কেনো এমন হলো সবটা?কেনো?

-আমারও একই প্রশ্ন শুদ্ধ।সবটা কেনো এমন হলো?আপনি কেনো এভাবে….

শুদ্ধ একটানে নিজের কাছে নিলেন আমাকে।কোমড় জরিয়ে ধরলেন শক্তহাতে।খানিকটা চমকে গিয়েছিলাম।কিন্তু তার কাছে যেতেই এক বিদ্ঘুটে গন্ধ নাকে আসলো।বিস্ময় সর্বোচ্চচূড়া স্পর্শ করলো আবারো।সমস্ত ইন্দ্রিয় জানান দিতে লাগলো,যাকে ভালোবেসেছি সেই শুদ্ধ আর শুদ্ধ নেই।উনি আজ আমার আব্বুকে জেলে পাঠানোর কথা বলেছিলেন।আমাকে জোর করেই বিয়েটা করেছেন।ড্রিংক করেছেন উনি আজ!শুদ্ধ করুনভাবে বললেন,

-কি করতাম?কি করতাম আমি?বল সিয়া?আর কিই বা করে তোকে নিজের করতাম আমি?অন্য কোনো উপায়….

-ইউ আর ড্রাংক!

শুদ্ধ আটকে গেলেন।ছেড়ে দিলেন আমাকে।তারপর রেলিং ধরে বাইরে তাকালেন।বাকা বৃষ্টির ছিটেফোটা গায়ে লাগছে না।তবে শুদ্ধর অবস্থা কাটার মতো বিধছে গায়ে।এভাবে তো তাকে দেখতে চাইনি আমি কোনোদিন।পারবো না দেখতে।হাত টেনে আমার দিকে ফেরালাম তাকে।কিন্তু উনি নিচদিক তাকিয়ে।শক্ত গলায় বললাম,

-আপনি বলেছিলেন আমি কাছে থাকলে কোনো অন্ধকার কোনোদিন আপনাকে গ্রাস করতে পারবে না শুদ্ধ!

শুদ্ধও এবার বিস্ময়ে তাকালেন আমার দিক।একটু চুপ থেকে আমার দুগাল ধরে বললেন,

-তুই কাছে আছিস আমার?

চোখ নামিয়ে নিলাম আমি।জবাব নেই‌ আমার কাছে।কাছে থেকেও হাজারো দুরুত্ব অনুভব হচ্ছে যে!গাল ছেড়ে শুদ্ধ আলতো করে কপালের টিকলি,কানের‌ দুল খুলে‌ দিলেন আমার।ঘোমটা খুলে‌ চুলগুলোও খুলে দিলেন।তার প্রতিটা কাজ শরীরের কম্পন বাড়িয়ে দিচ্ছে,হৃদয়ের স্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে।তবুও‌ চুপটি করে রইলাম।কাধে থাকা লেহেঙ্গার ওড়না ধরতেই পিছন ফিরলাম আমি।উনি পিছন থেকে ঘাড়ের চুলগুলো সামনে দিয়ে ওড়নাটাসহ আমার গলার সবগুলো গয়নাও খুলে ফেললেন।লেহেঙ্গার ফতুয়ার পিঠে থাকা ফিতাটা একটানে খুলতেই লেহেঙ্গা খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলাম।দুফোটা চোখের জল বেরিয়ে এলো আমার।অস্ফুট স্বরে বললাম,

-আপনি স্বজ্ঞানে নেই শুদ্ধ!

আমার উন্মুক্ত ঘাড়ে নাক ছোয়ালেন শুদ্ধ।কেপে উঠলাম।উনি ওভাবেই থেকে নাক ঘষতে ঘষতে ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,

-থাকতে চাইনা আমি স্বজ্ঞানে সিয়া!চাইনা।ডুবে থাকতে চাই তোর নামে।বিলীন হতে চাই তোর নামে।জুড়ে থাকতে চাই তোর‌ নামে।পাগল হতে চাই তোর নামে।সবটা ভালোবাসা উজাড় করতে চাই তোর‌ নামে।শুধুই তোর‌ নামে!

মন হয়তো প্রস্তুত ছিলো না।সবটা মানতে হয়তো আরেকটু সময় চেয়েছিলো সে।নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে চলে আসতে ইচ্ছে করছিলো।কিন্তু পারলাম না।ভেতরের কোনো এক দীর্ঘশ্বাস বলে গেলো,
” আজ এই মানুষটাকে কষ্ট দিস না ইনসু।মানা করিস না তাকে।পুড়তে দিস না আর তাকে,তোর নামের রোদ্দুরে।যাকে ভালোবাসিস,যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে,যে‌ সবটাই করেছে তোকে আপন করবে বলে,তার কাছে নিজেকে সমর্পন কর আজ!বদলে যাক অপেক্ষার রোদ্দুর,প্রেমের বর্ষনে!কোনো দোষ‌ নেই‌ এতে।কোনো দোষ নেই! ”

#চলবে…