প্রিয়তমা পর্ব-১৭

0
417

#গল্পঃপ্রিয়তমা
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৭

লাল টুকটুকে বেনারসি সাথে সাজের যাবতীয় জিনিসপত্র কিনে ফারুখ বাড়িতে যাবে।গতকাল রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।এখানে এসে একটা হোটেলে উঠেছে।আজ বিয়ের কেনাকাটা শেষ করেছে।একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকে ফারুখ আর তার বন্ধু মধ্যাহ্নভোজ সেরে নিয়েছে।এখান থেকে বাস স্ট্যান্ডে গিয়েই বাস ধরবে।
জানালার পাশের সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে রইলো ফারুখ।লাল টুকটুকে বেনারসিতে কল্পনা করছে স্বপ্নাকে।পরনে লাল শাড়ি,হাতে আর পায়ে আলতা,ঠোঁটে লাল রঙা লিপস্টিক।মুখে আর কোনো প্রসাধনী নেই।ঠোঁটে নজরকাড়া হাসি।চোখজোড়া কাজল শূন্য।ফারুখ স্বপ্নাকে বলে দিয়েছে তার মনের মতো করে যেনো স্বপ্না সাজে।চোখ খালি রাখবে।ওই হরিনী চোখ নিজ হাতে কাজল কালো করবে।বন্ধ চোখেই ঠোঁট কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে হাসলো ফারুখ।
————————————————★

এদিকে ফারুখ যাওয়ার পরপরই রাজিব শেখ রকির সাথে দেখা করে।স্বপ্নাকে তুলে আনার পরিকল্পনা করে।এবং সে কাজে সফলও হয়।স্বপ্না নিঃসন্দেহে সুন্দরী।যার কারণে রকি স্বপ্নাকে দেখে লালসায় চোখ ফেরাতে পারেনি।রাজিব শেখ চাননা ফারুখ এই মেয়েকে বিয়ে করুক।মেয়েটার প্রতি ফারুখের পাগলামি তিনি দেখেছেন।বারবার মনে হচ্ছে স্বপ্নাই তার ব্যবসার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।তাছাড়া এই মেয়েকে চওড়া দামে বিক্রি করা যাবে।তাইতো ফারুখকে ঢাকায় পাঠিয়ে রকির সাথে কথা বলে স্বপ্নাকে তুলে আনেন।স্বপ্নাকে দেখার পর রকি একটা আবদার করে বসে।
“এমন পরীর মতো মেয়েকে এত সহজে ছেড়ে দিলে হবে?আমি এর সাথে একরাত কাটাতে চাই।”

রাজিব শেখ এবার রকিকে তার ফাঁদে ফেললেন।তিনি শর্ত জুড়ে দিলেন।এবারের টাকা কথা অনুযায়ী তোমার সেভেন্টি পারসেন্ট আর আমাদের থার্টি পারসেন্ট পাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু এই মেয়ের সাথে রাত কাটাতে হলে আমাকে ফিফটি পারসেন্টই দিতে হবে।
রকি মুখ দিয়ে”ট”সূচক শব্দ করে বলল,ছেড়ে দিলাম।
রাজিব শেখ প্রশ্নাত্মক কন্ঠে বললেন,কি?
রকি হেসে উঠে বলল,টাকার ভাগ।টাকা আসবে যাবে।কিন্তু এরকম একটা *****সহজে পাওয়া যাবেনা।
রাজিব শেখ রকির পিঠে চাপড় মেরে বলল,বুদ্ধিমান ছেলে।
চট করে রকি প্রশ্ন করলো,কিন্তু ফারুখ যদি জানতে পারে?তখন কি করবেন?
রাজিব শেখ ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,ও আমি সামলে নেবো।তুমি তোমার কাজ করো।লেটস এনজয়।

রাতের অন্ধকারে ফারুখের কন্ঠস্বর নকল করে একজন স্বপ্নাকে বেরিয়ে আসতে বলে।স্বপ্না বের হতে রাজি হচ্ছিলোনা কিছুতেই।প্রতিদিনই ফারুখ জানালার একপাশে আর ও ঘরের ভেতর জানালার অন্যপাশে থেকে কথা বলতো।স্বপ্না চুপ থাকতো যা বলার ফারুখই বলতো।কিন্তু আজকে ফারুখ কেমন চাদর দিয়ে নাকমুখ ঢেকে এসেছে।স্বপ্না কারণ জিজ্ঞেস করতেই বলল,প্রচুর ঠান্ডা।তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসো।কালকে ঢাকায় যাবো বিয়ের কেনাকাটার জন্য।তখন আর দেখা হবেনা।নানা রকমভাবে ফোর্স করে স্বপ্নাকে বের করে আনে।সেখান থেকেই অজ্ঞান করে স্বপ্নাকে নিয়ে আসা হয় মেয়ে পাচারের মেইন ডেরায়।
জ্ঞান ফিরতেই কেমন গা চমচম করে উঠলো।চোখ খোলা থাকায় পাশের মেয়েগুলোকে দেখে আতকে উঠলো।বুঝতে পারলো ওকে কোথায় নিয়ো আসা হলো।ফারুখের প্রতি তীব্র ঘৃণা জন্ম নিলো স্বপ্নার মনে।তবে এতদিন সব মিথ্যে নাটক ছিলো?যদি তাকে দিয়ে ব্যবসাই করার ছিলো তবে মন নিয়ে কেনো খেললো?এরকম হাজারও ভাবনার মাঝে তাকে দুজন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসলো রাজিব শেখ আর রকির সামনে।রাজিব শেখকে দেখে প্রথমে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চার করলেও পরোক্ষণে রকি আর রাজিব শেখের কথোপকথন শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো স্বপ্না।তারমানে ফারুখের কোনো দোষ নেই।আগেই তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো রাজিব শেখের দিকে।তিনি স্বপ্নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,মোটেও রকিকে বিরক্ত করবিনা।আজ রাতে তাকে খুশি করতে হবে বলেই বিদঘুটে হাসি দিলেন।স্বপ্না ঘৃণায় মাথার উপর থেকে রাজিব শেখের হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে পিছিয়ে গিলো।একদলা থুতু ছুড়ে মারলো রাজিব শেখের মুখে।
রাজিব শেখ বামহাতে মুখ মুছে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো স্বপ্নার দিকে।সপাটে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।স্বপ্না সিটকে টেবিলের কোনে মাথা ঠুকে পড়ে।ব্যথায় আহ্!বলে আর্তনাদ করে ওঠে।রাজিব শেখ অকথ্যভাষায় কয়েকটা গালি দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

রকি স্বপ্নার হাত ধরে তুলে মাথা থেকে পা অব্দি লালসার নজরে দেখে তাকে টেনে নেয়ে যেতে লাগলো।স্বপ্না চিৎকার করে ছোটাছুটি করার চেষ্টা করে চলেছে।কিন্তু লাভ হচ্ছে না।উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।যেন তারা বেশ মজা পাচ্ছে।রকি একটা রুমে নিয়ে গিয়ে ছুড়ে মারলো স্বপ্নাকে।দরজা সপাটে বন্ধ করে দিয়ে এগিয়ে গেলো।স্বপ্না পিছিয়ে যেতে যেতে খাটের একেবারে কোনে গিয়ে ঠেকেছে।বেডসাইড টেবিলে পানির গ্লাস ছিলো।গ্লাস হাতে নিয়ে পানি ছুড়ে মারে রকির দিকে।রকি যখন রেগে গিয়ে গায়ের পানি ঝাড়তে ব্যস্ত তখনই শব্দ করে টেবিলের সাথে বাড়ি দিয়ে গ্লাস ভেঙে একটুকরো ভাঙা কাঁচ হাতে নিয়ে তাক করে রকির দিকে।

রকি খুব সাবধানে এগিয়ে আসে সামনের দিকে।স্বপ্না কাঁচের টুকরো দিয়ে আঘাত করতে যাবে তার আগেই রকি হাত মুচড়ে ধরে স্বপ্নার।গালে আরেকটা চড় মেরে কাঁচের টুকরো ফেলে দেয়।ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় স্বপ্নাকে।ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ঝাপিয়ে পড়ে স্বপ্নার উপর।প্রথম দিকে ছোটাছুটি করলেও পরক্ষণে একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়ে স্বপ্না।
সেই রাতে নিজের মনোবাসনা পূর্ণ করে রকি।আর স্বপ্না একটা জীবন্ত লাশ হয়ে পড়েছিলো।চোখের কার্ণিশ বেয়ে অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়েছিলো নোনাজল।
——————————————————★
ফারুখ ঢাকা থেকে ফিরে রাতেই বাসায় ফেরার পথে লোকমুখে শুনতে পেলো স্বপ্না মেয়েটাও নিখোঁজ।শুনলাম রাজিব শেখের ছেলের সাথেই দুদিনপর বিয়ে।এখন এই মুহূর্তে নিখোঁজ হয়ে গেলো।
এসব শুনে ফারুখ বাড়িতে গেলোনা।সোজা স্বপ্নাদের বাড়িতে গেলো।স্বপ্নার মা বাবার আহাজারি শুনে যা বোঝার বুঝে গেলো ফারুখ।বিয়ের সব সরঞ্জাম স্বপ্নাদের বাড়িতে ফেলে রেখেই ছুটলো তাদের নির্দিষ্ট গোডাউনে।
রকি ফারুখকে দেখে হেসে উঠে বলল,আরে ফারুখ যে,এতরাতে এখানে?ফারুখ ব্যস্ত চোখে স্বপ্নাকে খুঁজে চলেছে।হুঙ্কার ছেড়ে বলল,স্বপ্নাকে কোথায় রেখেছিস?এত বড় সাহস হয় কি করে ফারুখের কলিজায় হাত দেওয়ার?
রকি অবজ্ঞা সূচক হেসে বলল,এত ভালোবাসা?কিন্তু এই ভালোবাসা থাকবেতো? যখন শুনবে তোমার প্রেয়সী কাল সারারাত আমার বিছানায় ছিলো?
ফারুখ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলে,রকি!
রকি ইশারায় স্বপ্নাকে দেখিয়ে দেয়।মুহূর্তেই ফারুখ দৌঁড়ে স্বপ্নার কাছে যায়।কেমন মলিন চেহারা।অনুভূতি শুন্য হয়ে ফ্লোরে হাঁটু ভাজ করে বসে আছে।মুখে কোনো রা নেই।মাথার চুল সব এলোমেলো হয়ে আছে।শরীরের যে অংশ গুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলোতে অসংখ্য আঁচড়ের দাগ।গলদেশে লাল হওয়া চিহ্ন।নিস্তেজ হয়ে আছে স্বপ্না।মৃত মানুষকে যেমন ধাক্কা দিলে ঢলে পড়ে তেমনি মনে হচ্ছে স্বপ্নাও ঢলে পড়বে।

ফারুখের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।বক্ষস্থলে রক্তক্ষরণ চলছে।স্বপ্নাকে দুহাতে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকে।স্বপ্না কোনো প্রতিক্রিয়া করছেনা।ধপ করে আগুন জ্বলে উঠলো ফারুখের শরীরে।স্বপ্নাকে রেখে উঠে দাঁড়ালো।বেধড়ক মারতে শুরু করলো রকিকে।কেউ কারো চেয়ে কম যায়না।রকি আর ফারুখ দুজনই সমান সমান একে অপরকে মেরে চলেছে।ফারুখ রাগে কেঁপে উঠে বলল,কে সাহস দিয়েছে ওকে ছোঁয়ার?
রকি কুটিল হেসে বলল,তোর বাপ।সে আমার সাথে ডিল করেছে টাকা দুজনেই ফিফটি ফিফটি পাবো।ফারুখের ক্ষোভ আরো বেড়ে গেলো।আরো জোরে মারতে শুরু করলো রকিকে।রাজিব শেখকে পরে দেখে নেবে।
হঠাৎ স্বপ্না চিৎকার করে ডাকলো,ফারুখ!
ফারুখ নামটি কর্ণগোচর হতেই ফারুখ তড়িৎগতিতে ছুটে যায় স্বপ্নার কাছে।স্বপ্না নিষ্পলক নেত্রে তাকিয়ে রোবটের মতো অনুভূতিহীন হয়ে বলল,বিয়ে করবেন আমাকে?

ফারুখ জমে গেলো।তাকে চুপ থাকতে দেখে স্বপ্না প্রশ্নাত্মক চোখে তাকালো।ফারুখ কিছু না বলেই স্বপ্নার হাত ধরে হাঁটা ধরলো।সামনে রকি বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে ফারুখ স্বপ্নাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে।
এদিকে রকি রাজিব শেখকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে।

ফারুখ রাতে স্বপ্নাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বলল,তৈরি থেকো।কাল সকালেই আমি তোমাকে বিয়ে করবো।যেমনটা আগে বলেছিলাম তেমনই আমার মনের মতো করে সাজবে তুমি।
স্বপ্না কিছু না বলেই উদাসীন ভাবে তাকিয়ে রইলো।ফারুখ যাওয়ার সময় স্বপ্নার মা বাবাকে বলে গেছে যাতে স্বপ্নাকে এখন কিছু জিজ্ঞেস না করে।

রাতে আর রাজিব শেখ বাড়িতে ফেরেননি।ফারুখ অপেক্ষায় ছিলো কখন রাজিব শেখ বাড়িতে আসবে।কিন্তু নাহ সে বাড়ি ফেরেনি।সকাল হতে না হতেই রাজিব শেখ গ্রামে বাতাসের গতিতে ছড়িয়ে দিলেন স্বপ্না ছেলেদের সাথে রাত কাটিয়ে এসেছে।
মানুষ একটা কথা শুনলেই চলে।সত্যি মিথ্যা যাচাই না করেই কখন গিয়ে ওই মানুষ গুলোকে খোঁচাবে সেই চিন্তায় থাকে।
সকাল সকাল স্বপ্না ঠিক ফারুখ যেরকম চেয়েছিলো সেরকমভাবে সেজেগুজে বসে থাকে।এলাকার কিছু মহিলা এসেই উস্কানীমূলক কথা বার্তা শুরু করে।

“একেতো বিধবা,এখন আবার বেডা মাইনষের লগে রাত কাটিয়ে এসেছে।ছিঃ!এই ছেলের জীবনটা একেবারে ধ্বংস করে ছাড়লো।”
স্বপ্নার মাকে একজন বলল,কি জাদু করেছে তোমার মেয়ে ওই বড়লোকের ছেলেকে।তার টাকা দেখে বুঝি লোভ সামলাতে পারেনি।তাহলে আবার শরীরের জ্বালা মিটাতে অন্য বেডার কাছে গেলো কেনো?
সতীত্ব আগেই খুইয়ে বসে আছে এখন আবার ছিঃ!
স্বপ্নার কানে একেকটা কথা তীরের মতো বিঁধে গেলো।
একেকজন একেক কথা বলছে।স্বপ্নার মা বাবা দরজায় বসে চোখের পানি ফেলছেন।কেউ তাদের কথা শুনতে চাইছেনা।

রূপক তার মাকে নিয়ে সাথে কাজি নিয়ে এসেছে।কথা অনুযায়ী আজ গায়ে হলুদ হওয়ার কথা ছিলো।প্রীতি শশুর শাশুড়ীর সাথে আজকেই আসতো।
ফারুখকে দেখে সবাই আরো পেয়ে বসেছে।নানা ধরনের বাজে মন্তব্য করতে লাগলো স্বপ্নার বিরুদ্ধে।ফারুখ এক ধমকে সবাইকে চুপ করিয়ে দিলো।কাজিকে বিয়ে পড়াতে বলে স্বপ্নার মাকে বলল,স্বপ্নাকে নিয়ে আসতে।

দরজা হালকা ভিড়ানো ছিলো।ধাক্কা দিতেই খুলে যায়।স্বপ্নার মা ঘরের ভেতর ঢুকে স্বপ্না বলে চিৎকার করে ওঠেন।
উনার চিৎকারে ফারুখ সহ তার মা দৌঁড়ে ভেতরে যান।স্বপ্নার নিথর দেহ পড়ে আছে মাটিতে।পাশেই বিষের প্যাকেট।ঘরে ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় স্বপ্নার বাবা ইঁদুর মারার বিষ এনে রেখেছিলেন।স্বপ্না সেটাই এখন কাজে লাগিয়েছে।মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন স্বপ্নার মা।ফারুখ দৌঁড়ে গিয়ে স্বপ্নার মাথা কোলে নিয়ে ডাকতে থাকে স্বপ্না!এই স্বপ্না!কথা বলছোনা কেনো?ফারুখ দিশেহারা হয়ে বলল,দেখো কাজি বিয়ে পড়াচ্ছে।আমি চলে এসেছি,তুমি চোখ খুলছোনা কেনো?
স্বপ্নার মুখ দিয়ে ফ্যানা বের হতেই ফারুখ চিৎকার করে ওঠে স্বপ্নাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।লাল বেনারসি,হাতে আর পায়ের পাতায় আলতা,ঠোঁটে লাল টুকটুকে লিপস্টিক একেবারে ফারুখের মন মতো সাজ।
ফারুখ চিৎকার করে কেঁদে বলছে,তুমি এভাবে আমাকে রেখে যেতে পারোনা স্বপ্না।তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে বিয়ের রাতে নিজ হাতে তোমার অসম্পূর্ণ সাজ আমি সম্পুর্ন করবো।একসাথে পথ চলবো।তবে কেনো একমুখে দুমুখো আচরণ করলে?
ফারুখ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,মা দেখো না স্বপ্না চুপ করে আছে।চোখ খুলছেনা কেনো?তুমি ওকে চোখ খুলতে বলো মা।
ফারুখের মায়ের চোখেও পানি।গ্রামের মহিলা গুলো ভড়কে গেলো।কোনোমতে তাদের কথা সহ্য করতে না পেরে মেয়েটা আত্মহত্যা করেনিতো?
ফারুখের চিৎকারে ভারী হলো অন্তরিক্ষ।কেউ ওকে সরাতে পারলোনা স্বপ্নার কাছ থেকে।স্বপ্নার কথা গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই লোকজন আরো ভিড় জমালো।কয়েকজন ছেলে ধরে ফারুখকে টেনেহিঁচড়ে সরালো।

স্বপ্নার মৃত্যুর খবর শুনে প্রীতিও ছুটে আসলো।স্বপ্নাকে দেখতে গিয়ে প্রীতি স্বপ্নার হাতে একটা কাগজ দেখতে পায়।কাঁদতে কাঁদতে কাগজটি হাতে নিয়ে ভাঁজ খুললো।প্রথমেই “প্রিয় ফারুখ”বলে সম্বোধন করায় প্রীতি আর পড়লোনা।কাগজটা ফারুখের হাতে দিলো।
নাকে ছিঁচকে আওয়াজ করে ফারুখ কাগজের ভাঁজ খুলে পড়তে লাগলো।

” প্রিয় ফারুখ”

আপনার জন্য আমার অন্তরে ভালোবাসা ছিলো।যেটা আপনি শুনার অপেক্ষায় ছিলেন।বিদায়ের আগে বলে দিলাম আমি।আমার ভালোবাসা খুঁজে নেবেন অন্ধকারে নিজের কল্পনায়।
আমার সাজ অসম্পূর্ণ পড়ে আছে।বলেছিলেন নিজ হাতে কাজল পরিয়ে আমার সাজ সম্পুর্ন করবেন।আমি ঠিক সেরকমভাবেই সেজেছি যেরকমটা আপনি চেয়েছেন।আমি কাজল পড়িনি।কাজল দিয়ে আমার সাজ সম্পুর্ন করে দিন।আমার যে আর সময় নেই।আপনার প্রিয়তমা হতে পারলাম না আমি।তাড়াতাড়ি বিদায় দিন আমাকে।আর হ্যাঁ আপনি কাঁদবেননা।আমি শাস্তি চাই সবার।

ইতি
স্বপ্না।

ফারুখ কাগজটা হাত থেকে ফেলে দৌঁড়ে ভেতরের ঘরে গেলো।সবকিছু উলট পালট করে কাজল খুঁজে নিলো।সবাইকে সরিয়ে দিয়ে স্বপ্নার চোখের পাতা উল্টিয়ে খুব যত্ন করে কাজল পড়িয়ে দিলো।তারপর কাঁদতে কাঁদতে ধপ করে বসে পড়লো মাটিতে।
#চলবে……..