প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
পার্ট :৭
প্রীতি ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে চলে যায় ৷বড্ড খুদা লেগেছে তার ৷সকালে কিছু খাওয়া হয় নি ৷ক্যান্টিনে যেয়ে প্রীতি একটা চেয়ারে বসে পড়লো ৷তারপর এক প্লেট নুডলস অর্ডার করলো ৷খাবার প্রীতির সামনেই চলে এসেছে ৷প্রীতি চামচ দিয়ে খাবার মুখে দিবে এমন সময় সকালের মিলা নামের মেয়েটা আবার ওর সামনে ওলো ৷প্রীতি একপলক ওর দিকে তাকিয়ে আবারো খাবারে মনোযোগ দিল ৷কিন্তু প্রীতি খাবার মুখে দেওয়ার আগেই মিলা এক প্যাকেট মরিচের গুড়ো ঢেলে দিল খাবারে ৷প্রীতি খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে ৷মিলা তার সঙ্গীদের সাথে দাড়িয়ে হাসতে হাসতে বলল
কুকুরের পেটে যেমন ঘি হজম হয় না ৷ঠিক তেমনি তোর পেটেও এই ক্যান্টিনের খাবার ঢুকবে না ৷কালো ভুত একটা ৷মিলা কথাটা বলেই প্রীতির সামনে চেয়ারে বসে পড়লো ৷প্রীতি এখনো খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে ৷প্রীতি এবার মিলার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো ৷তারপর ঘাড় কাত করল ৷প্রীতির এই হাসিটা অস্বাভাবিক লাগছে মিলার কাছে ৷ চামচ দিয়ে প্রীতি মচির গুড়ো গুলো নুডলসে মাখাতে লাগলো ৷তারপর চামচ দিয়ে রক্তের মতো লাল নুডলস গুলো খেতে লাগলো ৷ মিলা সহ বাকি সবাই অবাক চোখে প্রীতির দিকে তাকিয়ে আছে ৷এত ঝাল একটা মানুষ কিভাবে খেতে পারে ৷প্রীতি খেতে খেতে মিলার দিকে তাকালো ৷ওর চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে ৷প্রীতি বাকাঁ হেসে বলল
আমার দিকে হাত বাড়িও না ৷ও হাত পুড়ে যাবে ৷ আমার থেকে দূরে থাকো ৷আর কি বললে আমার পেটে এখানের খাবার ঢুকবে না ৷আমি চাইলে যে কি কি করতে পারি তা তোমার ধারনাতেও নেই ৷তাই কেটে পরো এখান থেকে ৷
আমার সাথে এখানে কেউ ভয়েও মাথা তুলে কথা বলে না ৷আর তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো ৷জাননো আমার ভাই এখানের ভিপি ৷মিলা বলল ৷
তোমার ভাই ভিপি হোক আর যেই হোক ৷তাকে আমি ভয় পাই না ৷
দাড়াও আমি এখনই ভাইয়াকে ডাকছি ৷এই তোরা আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে আয় ৷
প্রীতি বসে আছে একটা চেয়ারে আর বই পড়ছে ৷একটু আগে কয়েকটা ছেলে মেয়ে মিলার বড় ভাই ভিপিকে ডাকতে গেছে ৷
হঠাৎ একটা পুরুষ কন্ঠ প্রীতির কানে ভেসে এলো ৷পরিচিত কন্ঠ বুঝতে পেরেই প্রীতি মাথা তুলে তাকালো ৷লোকটাকে দেখেই প্রীতির রাগ হলো ৷এই বজ্জাত লোকটা নাকি এখানের ভিপি ৷
ছেলেটা এসেই মিলাকে বলল কি হয়েছে ডেকেছিস কেন ৷আর কে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে ৷
মিলা ন্যাকা কান্না করতে করতে প্রীতিকে দেখিয়ে দিল ৷সুদর্শন দেখতে ছেলেটা যে বেশ অহংকারী তা প্রীতি বুঝে ফেলেছে তার তাকনোর স্টাইলে ৷ছেলেটা প্রীতির কাছে এসে বলল তোমার সাহস কি করে হয় এই নির্ঝর শাহরিয়ার বোনকে অপমান করার ৷
আমি অপমান করি নি ৷সে উল্টো আমায় অপমান করেছে ৷
কি করেছে আমার বোন ৷
প্রীতি সব বলল নির্ঝরকে ৷
নির্ঝর নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে বলল একদম ঠিক করেছে আমার বোন ৷তোমার কি যোগ্যতা আছে এখানে পড়ার ৷ একে তো এই শ্রী আবার মুখে খই ফুটছে ৷
যোগ্যতা মানুষের চেহারায় নয় ভিপি সাহেব ৷যোগ্যতা মানুষের গুনে থাকে ৷আর বলছেন চেহারার কথা এটা তো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি ৷আর যেই কালো রংকে এভাবে অপমান করছেন ৷দেখবেন আবার যেন এই রংয়ের প্রেমেই না পরে যান ৷
বাহ মুখে তো বেশ বড় বড় কথা ৷তা নাম কি ৷
প্রীতিলতা আমার নাম ৷
কি প্রীতিলতা ৷তা প্রীতিলতা তোমার সূর্য সেন কোথায় ৷আর তোমার তো ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা ৷তুমি আধুনিক যুগে কি করছো ৷কথাটা বলতেই সবাই হু হা করে হেসে দিল ৷নির্ঝরও হাসছিল ৷
কিন্তু হঠাৎ প্রীতি এমন এক কান্ড করে বসলো যে সবার হাসি থেমে গেল ৷প্রীতি নির্ঝরের হাসির মাঝেই তার গালে চুমু দিয়েছে ৷এটা দেখেই সবার হাসি বন্ধ হয়ে গেল ৷
প্রীতি নির্ঝরের কাছ থেকে সরে গেল ৷তারপর বলল
আজ থেকে আপনিই না হয় আমার সূর্য সেন ৷আগের প্রীতিলতা আর সূর্যসেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়েছে ৷আর আমরা প্রেম গাথা রচনা করবো ৷প্রীতি কথাটা বলেই নির্ঝরকে চোখ মারলো ৷সবাই ওদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ৷প্রীতি নির্ঝরের কাছে যেয়ে ফিসফিসিয়ে বলল
এটা গতকাল বিনা দোষে আমার কপালে পাথর মারার শাস্তি ৷আর আজকের টা তোলা রইলো ৷সময় মতো ফেরত দেব মিঃ সূর্য সেন ৷ প্রীতি বাকা হেসে চলে গেল ৷আর নির্ঝর রাগে কাপঁছে ৷এই কালো মেয়েটা তাকে এভাবে অপমান করলো ৷এর বদলা সে নেবেই ৷আর সেটা যেই ভাবে হোক ৷
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে ৷প্রীতি নিজের ভাইয়ের বাড়ীর থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে ৷ কিছুটা সময় পর প্রীতি নিজের শিকারকে গেটের বাইরে আসতে দেখলো ৷প্রীতি বাকাঁ হাসলো ৷তারপর তার শিকারকে ফলো করতে লাগলো ৷রাস্তায় লোক নেই ৷হ্যা একটু আগে নির্ঝরের বাড়ি থেকে ছদ্দবেশে আসা পাখি নামের মেয়েটার পিছু প্রীতি নিয়েছে ৷মেয়েটা দ্বীপ চৌধুরীর পাঠানো গাড়ীর কাছে যাওয়ার আগেই প্রীতি পেছন থেকে ওর মুখে রুমাল চেপে ধরলো ৷মেয়েটা কিছুক্ষনের মধ্যেই অঙ্গান হয়ে গেল ৷প্রীতির পাশে অন্য একজন অফিসার এসে বলল
ম্যাডাম এই মেয়েটাকে তো গ্রেফতার করলেও পারতেন ৷ এভাবে কিডন্যাপ কেন করছেন ৷
একে গ্রেফতার করলে আমাকে মিডিয়ার সামনে আসতে হতো ৷আর আমি দ্বীপ চৌধুরীর নজরেও চলে আসতাম ৷নির্ঝর চৌধুরীও ভয় পেয়ে যেতেন ৷আর আমি সব আস্তে আস্তে করতে চাই ৷একে তাড়াতাড়ি গাড়ীতে তোলো ৷ ওকে পুশিল হেফাজতে নিয়ে যাও ৷ওকে কেউ কিছু বলবে না ৷ওর সাথে আমি কথা বলবো ৷
পুলিশ মেয়েটাকে নিয়ে গেল ৷
অপর দিকে দ্বীপ চৌধুরীর ড্রাইভার অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত ৷শেষে সে দ্বীপ চৌধুরীকে কল করলো ৷
স্যার জেসিকা এখনো তো আসছে না ৷
ওকে আমি কল করছি ৷তুমি আরেকটু ওয়েট করো ৷
ওকে স্যার ৷
দ্বীপ চৌধুরী বারবার জেসিকাকে কল করছে ৷কিন্তু মোবাইল বন্ধ ৷দ্বীপ চৌধুরীর মাথা এবার গরম হয়ে গেছে ৷তিনি তার মোবাইলটা একটা আছাড় মারলো ৷তারপর বলল
ঐ ওসমানও আমার কল ধরছে না কাল থেকে আর এখন এই জেসিকাও ধরছে না ৷কি হচ্ছে সবার সাথে ৷না না আমাকে সতর্ক হতে হবে ৷
রাত বারোটা বাজে ৷পুলিশের টর্চার সেল থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসছে ৷জেসিকাকে প্রীতি লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করছে ৷ একটু আগে তার ঞ্জান এসেছে ৷সেলের বাইরে থাকা পুলিশরা ঘামছে ৷সেলের ভেতরে কেউ ঢুকতে পারছে না ৷নতুন মেয়ে অফিসার যে এতটা ভয়ংকর তা কেউ বুঝতেও পারে নি ৷প্রীতির নির্মম আঘাত জেসিকা আর সহ্য করতে না পেরে বলল
আমাকে ছেড়ে দাও আমি সব বলছি কাপঁতে কাপঁতে বলল ৷
প্রীতি পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল এই তো এতক্ষনে মুখে বুলি ফুটেছে ৷বল কেন গিয়েছিলি আবেশ চৌধুরীর বাড়ীতে ৷
আবেশ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আমাকে দুই কোটি টাকার বিনিময়ে ঐ বাড়ীতে পাঠিয়েছে ৷আবেশ চৌধুরীর ছেলে মেয়েকে মারতে ৷
কেন মারতে চাইছে ওদের ৷
সম্পত্তির জন্য ৷কিন্তু আরো কারন আছে তা আমি জানি না ৷
তোরা কবে বাচ্চা দুটোকে মারার প্লান করেছিস বল ৷
কাল ওদের কিডন্যাপ করে মারার প্লান করা হয়েছে ৷
তারপর আরো অনেক তথ্য জেসিকার কাছ থেকে প্রীতি জেনে নিল ৷অতঃপর ওকে ছেড়ে দিল ৷
পরের দিন সকালে প্রীতি ঘুমিয়ে ছিল ৷হঠাৎ ওর মোবাইলে একটা কল এলো ৷প্রীতি জানে কে কল করেছে ৷প্রীতি কলটা রিসিভ করে বলল
হ্যা শান্ত বলুন ৷
ম্যাডাম কালকের মেয়েটা মারা গেছে ৷আজ সকালে মেয়ে কন্সট্রেবল যেয়ে দেখে মেয়েটার মুখে সাদা ফেনা ৷পরে আমরা খবর পেয়ে ভেতরে যেয়ে দেখি সে মারা গেছে ৷কিছু তো জানতেও পারলাম না ৷ কাল এত মারলেন তাও নাকি সে কিছু বলে নি ৷আর আমরাও কাল রাতে আর সেলের ভেতর যাই নি ৷এখন কি হবে ম্যাম ৷মেয়েটা মনে হয় কথা গোপন করতে নিজের শরীরে নিজেই বিষ প্রয়োগ করেছে ৷সবাই সন্দেহ করছে বিষটা ওর কাছেই ছিল ৷আমরা ওকে চেক করি নি তাই জানতে পারি নি হয়তো ৷
তোমার ওয়েট করো আমি আসছি ৷প্রীতি কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিল ৷
চলবে …..