ফেইরিটেল পর্ব-৫২+৫৩

0
673

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur(ছদ্মনাম)
Part–52

অম্বরে ধূসর বর্ণের মেঘ জমেছে৷ বাতাবরণে তখন স্নিগ্ধতা ,শীতলতা বিরাজ করছে। পূর্বদিক থেকে ধেয়ে আসছে শরীরে কাঁটা তোলা হাওয়া। ইরা মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে দাঁড়ানো সে।৷ বৃষ্টির জন্য আটকা পড়েছে সে। ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে এক ফ্রেন্ডের সঙ্গে শপিংয়ে এসেছিল। বিরক্তিতে সারা শরীর দুলছে৷ আজকে মেহেদীর সঙ্গে দেখা করার কথা। ব্যাটা বড় ঝামেলা করছে। ইরা এবার ফাইনাল ইয়ারে। এজন্য আসাদ চাচ্ছে তার বাসায় প্রস্তাব পাঠাবে। কথাটা শোনামাত্র ইরা আকাশ থেকে পড়েছে৷ প্রেম করছে সবে দ’মাস ধরে এরমধ্যে এই ব্যাটা বিয়ে অব্দি ভেবে বসে আছে!

বৃষ্টি ঝুমঝুম শব্দ তুলে একাধারে পড়ছে৷ বৃষ্টির প্রকোপ বাড়লে, ইরার নাকে বৃষ্টির পানিতে ভেজা সোঁদা মাটির গন্ধ আসতে লাগে৷ এ’গন্ধ নাকে আসতেই সে নাক চেপে ধরে। বৃষ্টির ঘ্রাণে তার বমি পায়। কি বিশ্রী গন্ধ! মোবাইলের রিংটোন এ তার ঘোর কাটে। সে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইমাদের কণ্ঠ ভেসে আসছে, ” মিমো তুমি কোথায়?তোমাকে আনতে আসব? ড্রাইভার আংকেল বাসায় আসছে৷”

ইরা সাত-পাঁচ না ভেবে বলে,” আয়।”

যেহেতু গাড়ি মিরপুর থেকে বসুন্ধরায় ছুটে আসবে কাজেই তাকে মিনিমাম আধ-ঘন্টা তো অপেক্ষা করতেই হবে৷ সে আবারো ভেতরে গেল এবং লিফটের টপে গিয়ে ফুড কোর্টে বসে। এরপর ফোন হাতে নিতেই ম্যাসেঞ্জারে ছয়টা ছেলের ম্যাসেজ পেল। সব ম্যাসেজই তাকে ইমপ্রেস করার জন্য দেওয়া। এই যেমন একটা ম্যাসেজ এমন, তোমার চোখের দিকে তাকালাম রাত দশটায়, চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর দেখি ঘড়িতে একটা বাজে দশ মিনিট। ইরার হাসি পায় এ’সব দেখলে। সে মনে মনে ভাবে এই যুগের পোলাও এতো ষ্টুপিড আছে এখনো! এরা কী আজীবন এমনই গাধা থাকবে নাকি কোনদিকে এক পার্সেন্ট হলেও বুদ্ধিমান হবে৷ ম্যাসেঞ্জারে আরো একটা আইডির নামের উপর তার চোখ গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে মুখ উজ্জ্বল হলো। সে ম্যাসেজটা ওপেন করতেই দেখল, ” ইউ লুক সো হ/ট। ইরা হাসল। এই একটা মানুষ যার সব ধরনের কমেন্ট পাস সে নিতে পারে। ইরা লিখলো, ইউ মোর। সিন হলো না। সম্ভবত সে এখন ঘুমাচ্ছে৷ গাড়ি আসতে আরো সময় লাগবে৷ এই সময়ে সে অন্যজনের ম্যাসেজের রিপ্লে দিল। সঙ্গে সঙ্গে সিন হলো। ম্যাসেজ আসল৷

–” তুমি রিপ্লে দিবে আমি ভাবিও নি।”

ইরা লিখলো, ” এইতো দিলাম।”

— ” তুমি জানো আমি তোমাকে দেখার পর থেকে ফিদা৷”

ইরা দ্রুত রনক নামের ছেলের আইডিটা দেখল। ছেলে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে৷ কিন্তু কথা হলো, তাকে কোথায় দেখল? এর উত্তর অবশ্য পাওয়া গেল। রনক নাকি তার ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে এসেছিল৷ তখন ইরাকে স্টেজে দেখে ফিদা হয়ে যায়। তখনই মেহেদীর ম্যাসেজ আসে। ” তুমি কোথায়? অনলাইনে থেকেও আমার ম্যাসেজের রিপ্লে দিচ্ছো না কেন?”

ইরার মেজাজ গরম হলো। সে সিন করে রেখে দিল৷ সেকেন্ড ম্যাসেজ আসলো, ” তোমার সাহস তো কম না৷ আমার ম্যাসেজ সিন করে রাখো।”

ব্যাস এই একটা ম্যাসেজের জন্য ইরা রিপ্লে দিল, “ব্রেক আপ।”

মেহেদী যেন চমকে গেল। কিছুক্ষণ সিন করে রাখে, রিপ্লে দিল না৷ এরপর বলে, ” ব্রেক আপ কেন করবা তুমি? আমার মতো বুয়েটে পড়া ছেলে তুমি পাবা কোথাও?”

ইরা রিপ্লে দেয়, ” তোর মতো দশটা ছেলে আমি আমার পকেটে রাখি।”

এরপর মেহেদীকে সবখান থেকে ব্লক করে দিল। ইরার মনে অবশ্য মেহেদী কোনদিন জায়গা পায়নি। তার মনের ফ্রেন্ড লিস্টে সে ছিলই না। কাজেই মন থেকে ব্লক করা লাগলো না। গাড়ি ততোক্ষণে বসুন্ধরার সামনে এসে দাড়ানো। ইরা ষষ্ঠতম বার ব্রেক আপ করল আজ৷ এতে তার কোন আক্ষেপ নেই। বরং ফুরফুরে মেজাজে আছে সে। নিচে নেমে গাড়ির সামনে আসতেই ইরার মন ভালো হয়ে গেল। ড্রাইভার একা আসেনি। সঙ্গে ইমাদও এসেছে৷ তার হাতে চিপসের প্যাকেট। ইমাদ আবার গাড়িতে চড়ে বেড়াতে দারুণ পছন্দ করে। এখনই সে ড্রাইভিং শিখতে চায়৷ ইরা গাড়িতে উঠেই ইমাদের গালে চুমু দিয়ে বলে, ” একা একা চিপস খাও? মিমো কে দিবে না?”

ইমাদ পুরা চিপসের প্যাকেট এগিয়ে দিলেও ইরা নিল না বরং তাকে আরো আদর করে দিল৷

______________________

আজকে অফিসে কোন কাজই ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে না। সবার মধ্যে চাপা উত্তেজনা। গসিপিং চলছে। মিরা ভীষণ বিরক্ত হলো। তার কাজ শেষ। শুধু শুধু বসে থাকার মানে হয় না। তার চেয়ে বাসায় গেলে ভালো হয়। কিন্তু ন্যান্সি ম্যাডাম সবাইকে থাকতে বলেছেন। কীসব জানি লেকচার দিবে৷ সেটার অপেক্ষায় আছে সবাই। অবশেষে আরো আধ-ঘন্টা পর উনি আসলেন। নিজে এতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ওনার হলে কী হবে? তার ড্রেসিং সেন্স যেন হাঁটুতে। উদ্ভট সব রঙের কাপড় পড়েন উনি। শুধু তাই না রিসেন্টলি উনি আবার চুল কালার করিয়েছে৷ ক্যাটক্যাটা পিংক কালার তাও আবার! দেখলেই মাথা ধরে যায়৷

ন্যান্সি ম্যাডাম সবার উদ্দেশ্য বললেন, ” আশা করি সবাই ভালো আছেন৷ ইতিমধ্যেই সবাই জেনে গেছেন, আমাদের “মাই ফ্যাশন” কোম্পানির সিইও পদত্যাগ করেছেন। সুতরাং সবার মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করছে। সামনে কী হতে চলেছে জানার জন্য। এমপ্লয়িদের বলব আপনারা চিন্তিত হবেন না। একটা কোম্পানির উন্নয়নের পেছনে একজন বেস্ট লিডার দরকার। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আপনাদেরকে নতুন একজন বেস্ট লিডার দেওয়ার। আমার উপর বিশ্বাস রাখুন সবাই।”

এরপর আরো কিছু বললেন তিনি। মিরা শুনেও শুনল না। সে অনলাইনে কাজ করছে৷ অবশ্য তার আসল বিজনেস-ই অনলাইন প্লাটফর্মে। তার নিজের ডিজাইন করা ড্রেসের ব্যবসা করে সে অনলাইনে। বেশ ভালো নামডাক কামিয়েছে। প্রথমের দিকে অবশ্য ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের ড্রেস হোলসেলে এনে বিক্রি করত৷ পরবর্তীতে নিজের ডিজাইন করা মসলিন ড্রেস সেল করা শুরু করল৷ জমজমাট ব্যবসা তার এখন। অনলাইন প্লাটফর্মে কাজ করে আর্ণ করার সুযোগ তার জন্য আর্শীবাদ হিসেবে এসেছে যেন৷ তাদের ফেসবুক পেজ থেকে প্রতিদিন বেশ ভালো সেল হয়৷ যেদিন করে নতুন কালেকশন আসে তারা জনপ্রিয় মডেলদের হায়ার করে লাইভে আনে। ফলে ভিউ-রেসপন্স বাড়ে সঙ্গে সেল দ্বিগুণ থেকে চারগুণ হয়। মার্কেটিং পলিসি বেশ ভালোই রপ্ত করেছে সে৷ কোন যেন এক বিজ্ঞ মানুষ বলেছেন, মার্কেটিং ইজ ফান৷

লেকচার শেষ হলে তারা সবাই বেরিয়ে পড়ে। বাসায় ফিরে আসতে তার সময় ষোল মিনিট লাগলো। বাসায় এসেই তার মন ভরে গেল। ইমাদ গেইট খুলেছে। তারমানে ও নিশ্চয়ই আম্মুর জন্য ওয়েট করছিল৷ পৃথিবীর সমস্ত আক্ষেপ, দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, ক্লান্তি এই ছোট্ট নিষ্পাপ চেহারাটা দেখলে কোথায় যেন গায়েব হয়ে যায়৷

মিরা বাসায় প্রবেশ করতেই ইমাদ গাল ফুলিয়ে বলে, ” দেরি কেন হলো আম্মু?”

মিরা বলে, ” সর‍্যি বাবু। আজকে লেইট হয়ে গেল। তুমি বিকেলে খেয়েছো কিছু? ”

ইমাদ এর জবাব দিল না। সে ফিরে গেল সোফার দিকে। সুপ্তি বেগম ড্রয়িংরুমে এসে বললো, ” ইমাদ কিন্তু দুধ খাচ্ছে না। নাস্তাও খায়নি।”

মিরা বলে, ” আচ্ছা আমি খাইয়ে দিব৷ সমস্যা নেই৷

সে নিজে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্রেস হয়ে ইমাদের জন্য নাস্তা বানালো নতুন করে৷ ও চাওমিন পছন্দ করে। চাওমিন বানিয়ে সোফায় এসে বসল সে। ইমাদ টিভিতে টম এন্ড জেরি দেখছে৷ ওকে খাইয়ে দিতে লাগে৷

টিভির পর্দা চোখ না সরিয়ে সে বলে উঠে, ” আম্মু জানো আজকেও সৃজা আমার গায়ে পেন্সিল দিয়ে গুতা মারছে। আমি কিছু বলিনি।”

–” গুড।”

এরপর ইমাদ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে, ” ও যখন ওয়াশরুমে গেল, আমি ওর টিফিনে পানি ঢেলে দিয়েছি। আজকে আমরা এক বেঞ্চে বসেছিলাম।”

মিরা তৎক্ষনাৎ বলে উঠে, ” এটা ঠিক না বাবা। ওর টিফিন নষ্ট করে খুব খারাপ করেছো। ও না খেয়ে ছিল না?”

— ও আগে আমাকে গুতা দিয়েছে। সবসময় আমার পেছনে লেগে থাকে। এটা কী ঠিক আম্মু?”

মিরা উত্তর দিল না। ইমাদই বলে, ” আমি ওকে আমার টিফিন শেয়ার করতে বলেছিলাম৷ তখন ও আমাকে জিভ দেখাইছে৷”

মিরা না চাইতেও হেসে ফেলে। বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বললে এম্নিতেই মন ভালো হয়ে যায়৷ তখনই সুপ্তি বেগম আসল ফোন হাতে নিয়ে৷ উনি ফোন ইমাদের কানে লাগিয়ে দিয়ে বলে, বাবা কলে আছে৷

ইমাদ সঙ্গে সঙ্গে টম এন্ড জেরি দেখা বাদ দিয়ে লাফাতে লাফাতে বাবার সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেল। কিছু সিক্রেট কথা আছে যেগুলো আম্মুর সামনে বলা যাবে না সেজন্য সে রুমে চলে গেল৷ মিরা চাওমিন হাতে টম এন্ড জেরি কার্টুনের দিকে তাকিয়ে থাকল। জেরির টমকে ধাওয়া করার ধান্দা গুলো দেখতে মজাই লাগে। সুপ্তি বেগম মেয়ের কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মিরা বলে, ” রাতের রান্না করেছো মা?”

–” হ্যাঁ। মুরগীর মাংস৷ ইমাদের জন্য আলাদা করে ঝাল-মশলা কম করে রান্না করলাম।”

কথা শেষ করার পরও মা যখন মাথায় হাত বুলাচ্ছিল মিরা বুঝে গেল মা তাকে কিছু বলতে চান। সে বলে উঠে, ” কিছু বলবে মা?”

সুপ্তি বেগম বলে উঠে, ” শুন মা আমার, ইমান…….. ”

মিরা টিভি দেখায় মনোযোগ দিল। জেরির দুষ্ট বুদ্ধিতে টমের লেজে আগুন জ্বলে গেছে। এজন্য টম এখন লাফাচ্ছে৷ সে মাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” তোমার জামাই অনেক ভালো। সোনা ছেলে। এসবই তো বলবে তাই না?”

–” হ্যাঁ। ”

–” নতুন কিছু বল তো। আচ্ছা তোমার জামাই কী জাদু করলো তোমাকে বল তো শুনি!”

সুপ্তি বেগম ফোঁস কর শ্বাস ফেললেন। মেয়েটার অগোছালো জীবন নিয়ে তার আফসোসের শেষ নেই৷ অথচ তার মেয়ে কার্টুন দেখে হাসে৷

মিরা উঠে দাড়ালো এবং বিড়বিড় করে বলে, ” তোমার আদরের জামাইয়ের লেজে আমি জেরির মতো আগুন লাগাতে চাই।”

সে রুমে গিয়ে চিৎকার করে বলে, ” এতো কিসের সিক্রেট কথা?”

ইমাদ সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে আম্মুর কাছে আসল। মিরা কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে রুমের সামনে। সে চেয়ার টেনে এনে আম্মুর সামনে রেখে, ওখানে উঠে দাড়ালো এবং মায়ের কানের কাছে ফোন এনে বলে, ” বাবা কথা বলবে৷”

সঙ্গে সঙ্গে মিরা বিব্রতবোধ করল। এটা অবশ্য ডেইলি রুটিন হয়ে গেছে৷ ইমাদ প্রতিদিন বাবার কথামতো তার কানের কাছে ফোন এনে ধরে এবং রুটিন মাফিক প্রতিদিনই ইমান একই কথা বলে। আজও সেই একই কথা৷ প্রতিদিন ফোনের অপর প্রান্তের ঐ কণ্ঠস্বর শুনলেই তার বুক কাঁপে। এখনো!

–” কেমন আছো মিরা?”

মিরা উত্তর দিল, ” ভালো।”

এরপর খানিকক্ষণ নীরবতা তারপর সে বলে উঠে, ” আই এম সর‍্যি। আরো কিছু পল নীরবতা। তারপর আবারো বলে, ” আই লাভ ইউ।”

মিরা ফোন ইমাদকে দিয়ে বলে, ” দ্রুত কথা বলা শেষ করে আসো৷ দুধ খাও নি তুমি। দুধ খেতে হবে৷”

–” আম্মু আর পাঁচ মিনিট। ”

মিরা চলে আসল। বাবা কল দিলে তার আর হুশ থাকে না কোনদিকে। টম এন্ড জেরির কথাও মনে থাকে না। সে রুম থেকে বের হতেই শুনল ইমাদ নিজে নিজে বলছে, ” ইয়াহু বাবা আসবে৷”

মিরা থমকালো। চমকে উঠে। পরমুহূর্তেই মনে পড়ে, ভিডিও কলে আসবে নিশ্চয়ই।

রাত নয়টার মধ্যে মিরা ডিনার করতে আসল। তখন ইরাও ডাইনিং টেবিলে ইমাদের সঙ্গে গল্প করছে। সুপ্তি বেগম টেবিলে বসে ছিলেন। তাকে দেখে বলে, ” তোর দাদীর শরীর ভালো না। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আজকে বাসায় আনল। তোরা দুজন গিয়ে দেখা করে আয়৷”

মিরা বলে, ” তুমি ঐ বাড়ির খোঁজ জানলে কিভাবে? ”

–” সোনালী বলেছে৷ তোর দাদী নাকী তোকে দেখতে চাইছে খুব করে৷ তোদের কথা বলে কাঁদছে। ”

মিরা তাচ্ছিল্যময় হাসি হাসল। বাবার সঙ্গে যখন মায়ের বিচ্ছেদ ঘটলো, তখন সবাই মাকে দোষারোপ করছিল। সবাই সব সত্য জানে, তাও একতরফা দোষ কেবল তার মায়ের। ঐ সময় মিরা তার মায়ের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল জন্য দাদী তাকে খুব জঘন্য একটা কথা বলেছিল৷ সেদিনের পর মিরা তেমন একটা যোগাযোগ রাখেনি। ইমাদ হওয়ার সময় দাদী আসেওনি একটাবার দেখতে। তাদের আর্থিক সমস্যা গেছে কেউ ফিরেও তাকায়নি। অবশ্য মিরা চায়ও না কারো সাহায্য। তবুও আপনজনদের এমন রুপ সে মেনে নিতে পারে নাহ৷

চলবে।

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
part–53

মিরপুর, ঢাকা৷

কয়েকদিন পরের ঘটনা, দিনটি ছিল ৮ ই মে । আজ মা দিবস। মিরার অবশ্য মনেও ছিল না। ইমাদকে স্কুলে যাওয়ার জন্য যখন ঘুম থেকে ডাক দিল, সে এক ডাকেই উঠে পড়ল। এরপর মায়ের গালে চুমু দিয়ে বলে, ” হ্যাপি মাদারস ডে, আম্মু। আজকে আমি স্কুলে যাব না৷”

বলেই বেডে আঠার মতো চিপকে শুয়ে পড়ল। মিরা বলে উঠে, ” উইশ করলেই স্কুল মিস দেওয়ার পারমিশন দিব না আমি৷ উঠো।”

ইমাদ চোখ বন্ধ রেখেই বললো, ” আজকে আমি কোনভাবেই স্কুলে যাব না। গতকাল মিসকে বলে এসেছি।”

মিরা ভ্রু কুচকে বলে, “কেন?”

ইমাদ মুখ ফসকে বলে বলে, ” আজকে স্পেশাল ডে।”

মিরা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় এবং বলে, ” কিসের স্পেশাল ডে? শুনি? যতোই বিশেষ দিন হোক স্কুল মিস দেওয়া যাবে না।”

ইমাদ বলে, ” স্কুল মিস দেওয়া যাবে আম্মু। গতমাসে সৃজা চারদিন আসেনি। মিস ওকে কিছু বলেনি। আমি তো একদিনও মিস দেই না৷ আজকে আমি যাব না স্কুলে।”

মিরা তাও জোরাজোরি করতে লাগলো। বুঝাতে লাগলো স্কুল যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা৷ কিন্তু দুষ্ট ইমাদ কান বন্ধ করে রাখে। তবুও সে হাল ছাড়ে না৷

সুপ্তি বেগম রুমে প্রবেশ করে বলে, ” এতো চাপাচাপি করিস না তো৷ একদিন না গেলে কিছু হবে না। আমরা বাচ্চা বড় করি নি?”

নানুর সাপোর্ট পেয়ে ইমাদ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে গেল। মিরা আর ফোর্স করল না। নিজে কিচেনে যেতেই ভারী অবাক হলো। রান্নাঘর ভর্তি বাজার। গরুর মাংস, খাসির মাংস, দেশী মুরগী, হাঁসের মাংস। বিভিন্ন ধরনের সবজি। সঙ্গে আছে রুপচাঁদা মাছ, ইলিশ, চিংড়ি, রুই আর কৈ মাছ৷
কৈ মাছ দেখেই মিরার কেন যেন ইমানের কথা স্মরণ হলো। ও গরম ভাত আর কৈ মাছ ভাজী খেতে পছন্দ করে৷ রান্নাঘরে একজন সাহায্যকর্মী কাজ করছে। উনি মাছ পরিষ্কার করছে৷ সুপ্তি বেগম মিরা রান্নাঘরে আসার একটু পর এলেন।

মাকে দেখে মিরা প্রশ্ন করলেন, ” এতো বাজার কেন মা? বাসায় অনুষ্ঠান নাকী? আমি তো কিছুই জানি না।”

সুপ্তি বেগম পায়েস রাঁধতে ব্যস্ত হলেন৷ রান্নার মাঝে বলে উঠে, ” না। আজকে কোন অনুষ্ঠান নেই। দু’জন মেহমান আসবে।ওদের জন্য রান্না করছি। তোর কোন সমস্যা? ”

মিরা মায়ের প্রশ্নে চমকে উঠে বলে, ” আমার কী সমস্যা হবে? তোমার মেহমানদের জন্য যা খুশি রাঁধো। রান্না করে খাওয়াও৷”

— ” তাহলে তুই সাহায্য কর আমাকে। রোস্টটা বানিয়ে দিয়ে যা৷”

–” আচ্ছা৷”

মিরার কিছু কিছু রান্না খুব মজা হয়। সবাই প্রশংসা করে। যেমন তার রোস্ট খুব বিখ্যাত। তেমনই সেমাই ভালো বানাতে পারে।

মিরা বলে, ” মা, সেমাই করে দিয়ে যাই? তোমার গেস্ট জনাবের ভালো লাগবে।”

–” হ্যাঁ, বানা৷ দুধ জাল দেওয়াই আছে।”

মিরা দেখল মা দারুণ খুশি। তার খুশি-উল্লাস মুখে ধরা দিচ্ছে। সে পায়েস মুখে দিয়ে দেখল মিষ্টি ঠিল হয়েছে কীনা।

মিরা বলে উঠে, ” কে আসবে মা?”

–” আমার কাছের একজন আসছে৷”

–” আমি তাকে চিনি?”

–” সেটা এলেই দেখিস৷ আজ অফিস থেকে জলদি আসিস৷”

–” আচ্ছা। ইমাদ সারাদিন বাসায় থাকবে। ওর দিকে একটু খেয়াল রেখো। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করে যেন৷”

রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখল ন্যান্সি ম্যাডামের ম্যাসেজ। উনি লিখেছেন আজকে পরিপাটি হয়ে আসতে অফিসে৷ মিরা অবাক হলো না। এটা নতুন কিছু না। উনি প্রতিমাসেই একবার করে ড্রেস কোর্ড দেন। সবাইকে সে রঙের ড্রেস পড়ে আসতে হয়৷ মিরা নিজের আলমারি খুলল। ছোট্ট ইমাদ তখন ঘুমিয়ে গেছে। বড় বড় শ্বাস ফেলছে। সে হেঁটে এসে ছেলের গালে আর কপালে দুটো চুমু দিল। মিরা ভেবে পায় না, এই বিচ্ছু নয়টা মাস তার পেটে থাকল অথচ পেট থেকে বের হলো ইমানের কার্বন কপি হয়ে। শুধু তাই নয়, বাবার সঙ্গে তার বহু গোপন কথা থাকে কিন্তু মায়ের সঙ্গে তার কোন গোপন কথা নেই৷

সে আলমারির সামনে ফিরে গেল৷ আজকে কোন সালোয়ার কামিজই পছন্দ হচ্ছে না। একটা পছন্দ হলো, সেটার ওড়না মিলছে না। যেহেতু ম্যাডাম আজকে পরিপাটি হয়ে আসতে বলেছেন৷ কাজেই সালোয়ার কামিজ না পড়ে শাড়ি পড়া যাক। শাড়ির তাক থেকে ম্যাজেন্টা রঙের শাড়ি বের করল। সিল্কের শাড়ি৷ ভেতরে সাদা সুতার কাজ করা আছে৷ পাড়টাও সাদার উপর কাজ করা৷ সে দীর্ঘ সময় নিয়ে রেডি হলো।

টিভির রুমে ইরার সঙ্গে দেখা হলো তার৷ ইরা ফোন চালাচ্ছে। মিরা মুগ্ধ নয়নে ইরার দিকে তাকালো। তার বোনটা প্রতিদিন বুঝি একটু একটু করে সুন্দর হচ্ছে৷

মিরা বলে উঠে, ” আজকে ভার্সিটির ক্লাস নেই?”

–” আছে৷”

–” কখন যাবি?”

–” আজকে যাচ্ছি না আমি।”

–” তোকেও ইমাদের রোগ এসে ভর করলো?”

ইরা হেসে বলে, ” আজকে মিমো আর ইমাদ একসঙ্গে বাসায় চিল করবে৷ বাই দ্যা ওয়ে, তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। ”

–” বাজে বকিস না।”

–” সত্যি বলছি আপু। তুমি আর আগের মতো সাজ-গোজ করো না কেন শুনি? প্রতিদিন এমন সাজবে। তোমাকে দেখেই মন ভালো হয়ে যাচ্ছে৷”

মিরার অস্বস্তি হতে লাগলো। আজকে হুট করে কেন সে সেজে ফেললো? লিপস্টিক, কাজল মুছে ফেলবে? এতো সময় হাতে নেই৷ এখন অফিসের জন্য বের হতে হবে৷ নাহলে জ্যামে আটকা পড়বে। আর অফিসের জন্য লেইট হবে। হাতে সময় না থাকার জন্য সে মেকাপ আর মুছলো না। অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ল৷

অফিসে যেন উৎসব লেগেছে। বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। সিইও স্যারের কেবিন সাজানো৷ অফিসে এসে বোঝা গেল নিউ সিইও আজ জয়েন করবেন। ওনার ওয়ার্ম ওয়েলকামিং এর ব্যবস্থা চলছে৷ ন্যান্সি ম্যাডাম খুব ব্যস্ত৷ এদিক-ওদিক ছুটছেন। মিরাকে দেখে সে থেমে গিয়ে বলে, ” ওয়াও! মিরা, তোমাকে কী যে সুন্দর লাগছে। তুমি যে এতো সুন্দরী এটা আজ জানলাম। নিজের রুপ লুকিয়ে রাখো নাকী?”

মির সামান্য হাসলো৷ ন্যান্সি ম্যাডাম বলে উঠে, ” এইচ আরয়ের সঙ্গে তাহলে তুমিও যাও। এতো সুন্দর করে সেজে এসেছো যেহেতু।

মিরা বিব্রতবোধ করে বলে, ” আমি গিয়ে কী করব?”

–” শুধু ফুল দিয়ে আর বলবে ওয়েলকাম স্যার৷ আপনাকে আমাদের লিডার হিসেবে পেয়ে, আমরা খুব খুশি৷ দ্যাটস ইট!”

ন্যান্সি ম্যাডামকে না বলা যাবে না। কাজেই সে বিরক্ত মনে এইচ আর হাবিবুর রহমান ভাইয়ের সঙ্গে গেলেন।

এয়ারপোর্ট রোডের দিকে চলতে শুরু করলে মিরা প্রশ্ন করে, ” এয়ারপোর্টের দিকে কেন যাচ্ছি হাবিব ভাই?”

–” স্যারকে তো এয়ারপোর্ট থেকেই রিসিভ করব। ”

–” উনি দেশের বাইরে থাকেন?”

–” হ্যাঁ, আমেরিকা থেকে আসছেন৷”

আমেরিকা দেশটার নাম শুনতেই মনের পিঞ্জর থেকে বহু স্মৃতি ডানা ঝাপ্টা মারলো৷ গাড়ি এয়ারপোর্ট এসে নামতেই তারা বের হলো৷ আকাশ হুট করে মেঘলা হয়ে এসেছে৷ ইদানীং বৃষ্টির মৌসুম না তাও হুট করে আকাশ কালো করে মেঘ আসে। বৃষ্টি নামে মুষলধারে।

এয়ারপোর্টের ভেতরে অবশ্য কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তারা আধঘন্টা ধরে অপেক্ষা করে। হাবিব ভাই মিরাকে এয়ারপোর্টের ক্যাফে থেকে গলাকাটা দামে কফি খাওয়ালো। অবশেষে জনাবের আসার সময় হলো। এনাউন্সমেন্ট করল এয়ারপোর্ট থেকে।

হাবিব ভাই তার হাতের ফুলের তোড়া দিয়ে বলল, ” আপু আপনি আগে ওয়েলকাম করবেন৷ আমি পিছে আছি৷”

মিরা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকল। একঘন্টা পাড় হতে চললো। সে বুঝে পাচ্ছে না ব্যাটার এতো সময় কেন লাগছে? বিরক্ত লাগছে৷ আচমকা তার চোখের সামনে কেউ একজন এসে দাড়ালো। তার পারফিউমের গন্ধে মিরার মাথা ঝিম ধরল। চোখ যেন অক্ষিকোটর থেকে বের হতে চাইছে। মুখে কোন কথা ফুটলো না৷ কেমন হা হয়ে চেয়ে রইল সে। তার মাথায় যেন বিশাল এক বজ্রপাত পড়েছে৷ অতিরিক্ত শকে সে পাথর বনে গেল। ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে সে কিন্তু ফুল এগিয়ে দিল না। হাবিব ভাই দু’বার বললেন ফুল দিয়ে স্বাগতম জানানোর জন্য , কথা কানে গেল না তার। ইমান তার সামনে এসে দাড়িয়েছে। তার পরনে সেই সবুজ রঙের শার্ট যেটা নিউইয়র্কের কোন একদিন মিরা তাকে পরার জন্য সিলেক্ট করে দিয়েছিল। কিন্তু ও এই শার্ট না পরে কফি কালারের একটা শার্ট পরেছিল। এতোদিন পরেও এই শার্ট ও যত্নে রেখেছে?

তাকে দেখে মুচকি হাসলো ইমান। এরপর চোখে চোখ রাখে। চোখের ভাষায় বোঝাল, তুমি আমার কাছ থেকে যতোই পালাতে চাও, আমি ঠিক ততোখানি তোমার কাছাকাছি আসব।”

হাবিব ভাই তৃতীয়বারের মতো বললো, ” মিরা স্যারকে ফুল দিয়ে ওয়েলকাম জানাও৷”

ইমান অবশ্য মিরার কষ্ট করে এগিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় রইল না। নিজে দু’কদম এগিয়ে এসে ফুল নিল হাতে। ফুল নেওয়ার সময় ইচ্ছা করে নিজের হাতের ছোঁয়া দিল মিরার হাতে। মিরা কেঁপে উঠে। দীর্ঘ ছয়টা বছর পর মানুষটাকে সে সামনা-সামনি দেখছে। বুকের ভেতর উত্তাল ঢেউ জোয়ার বুনছে। সে ঘেমে উঠে।

–” থ্যাংক ইউ, ম্যাডাম।”

খুব চমৎকার করে হেসে কথাটা বলে উঠে ইমান৷ মিরা চমকে উঠে। চোখ নামিয়ে নেয়। হাবিব ভাই ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। লাগেজ নিজে টেনে নিয়ে গেলেন। যদিও বা ইমান বহুবার মানা করেছে৷ কিন্তু উনি শুনবেন না। হাবিব ভাই আগে আগে যাচ্ছেন৷ মিরা তাকে অনুসরণ করছে। এবং সবার শেষে ইমান আসছে।

এয়ারপোর্টের বাইরে এসে গাড়িতে ব্যাগ-পত্র তোলা হলে ইমান বলে, ” টানা চব্বিশ ঘন্টা প্লেনে থেকে এখন আর গাড়িতে উঠতে মন চাচ্ছে না৷ আমি রিকশা করে যেতে চাই। খোলা বাতাসে থাকতে চাই।”

বৃষ্টি ততোক্ষণে থেমে গেলেও, হাওয়া শীতল। পরিবেশে বৃষ্টির ছোয়া লেগে আছে৷ মন ভালো করার মতো আবহাওয়া আজ৷

হাবিব ভাই বলে, ” আপনি তো রাস্তা চিনবেন না স্যার৷”

ইমান মুচকি হেসে বলে, ” মিসেস কে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় উঠব৷ তাহলে সমস্যা হবে না৷”

হাবিবুর রহমান বুঝলো না এই মিসেসটা আবার কে?

ইমান মিরার দিকে তাকিয়ে খুব সুন্দর করে বলে, ” ম্যাডাম, আপনি কী আমার সঙ্গে রিকশা ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক?”

মিরা হ্যাঁ ও বললো না, না ও বললো না। তবে তার মৌনতাকে তারা সম্মতির লক্ষণ ভাবলো৷ হাবিব ভাই রিকশা ঠিক করে ভাড়া দিয়ে দিল। এখান থেকে সোজা অফিসে যাবে রিকশা। ভাড়া নিল এক’শ টাকা৷

রিকশায় পাশাপাশি বসে তারা। রিকশা আগাতেই মিরা ওদিকে চেপে বসে৷ ইমান তার দিকে তাকিয়ে বলে, ” দূরে কেন সরে যাচ্ছো?”

মিরা উত্তর দিল না। অন্যদিকে তাকালো। কেন যেন তার দু’চোখ ভরে উঠেছে। টলমল করছে। আচমকা তার উম্মুক্ত কোমড়ে শীতল হাতের স্পষ্ট স্পর্শ অনুভব করে সে। এই স্পর্শ, ছোঁয়া তার পরিচিত। আস্তে করে তাকে নিজের দিকে টেনে এনে কোমড় চেপে ধরেই, ইমান গুনগুন করে গাইতে লাগলো,

“ভেবে দেখেছো কী ?
তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে
তারো দূরে
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে…….. ”

মিরা আড়চোখে তাকালো। কে বলবে এই লোক ছয় বছরের এক বাচ্চার বাপ! বয়স যেন আরো কমেছে। তখনই ঝুমঝুম শব্দ তুলে বৃষ্টি নামে। এমন বৃষ্টি মুখর দিনেই বুঝি সবাই বাড়ি থাকে। কেবল ময়ূর পেখম তুলে নাচে৷ আজ তারাও ময়ূর!

রিকশাওয়ালা মামা একটা পলিথিন দিল তাদের৷ পলিথিন গায়ে মুড়িয়ে নিল তারা। এর ফলে দুজনের মধ্যে দূরত্ব কমে আসে। মিরার মুখের উপর ওর গরম নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে৷ ইমান তার হাত চেপে ধরে। সে ওর চোখের দিকে তাকালো। ইমান আস্তে করে বলে, ” বৃষ্টি যেমন করে ভূপৃষ্ঠের ময়লা ধুয়ে নিয়ে যায়, আমিও তোমার মনে পড়ে থাকা সবটা অভিমান-রাগ ভালোবাসা দিয়ে ধুয়ে ফেলব।”

বলেই অনেক গভীরভাবে শব্দ করে মিরার গালে চু-মু খে-ল। মিরার চোখ বড় হয়ে গেল৷

সে হেসে বলে, ” ওয়েলকামিং গিফট আদায় করে নিলাম।”

চলবে৷