#বউপাখি
#পর্ব_৪
#লেখনিতে_সিনথিয়া
-‘ও না থাকলে আমি এমনিতেই মরে যাবো, তার থেকে কি এইটুকু লাইফ রিস্ক বেঁচে থাকা ভালো না বাবা?’
-‘ইডিয়েট’
একই সুরে বলে উঠলো আহনাফ চৌধুরী আর তিতির। শুধু একজনেরটা শোনা গেলো, আর আরেক জনেরটা শোনা গেলো না।
নিজের বউকে ভালোবেসে এমন কথাও কেউ বলতে পারে? জানা ছিলো না তিতিরের। নিঃশব্দে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো তিতির। কাঁদতে কাঁদতেই তিতির ভাবলো- ও কাঁদছে কেনো? ও কি এই পাগলটাকে ভালোবাসে বলে কাঁদছে, নাকি কোনোদিন কারও কাছ থেকে এতোটা ভালোবাসা পায়নি বলে কাঁদছে?
-‘যদি তুমি পারমিশন দাও, আমি আসি বাবা? এখন আবার যেয়ে আমার বউপাখির কান্না থামাতে হবে। দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে মেয়েটা তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে !’
নিমেষেই কান্না বন্ধ হয়ে গেলো তিতিরের। ও যে দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে, সেটা ঐ পাগল বুঝলো কি করে? কোনোভাবে কি দেখে ফেলেছে ও তিতিরকে।
তড়িঘড়ি করে কান্না মুছে তিতির নিজের রুমের দিকে যেতে গেলেও বিপত্তি ঘটলো নিজের পরনের শাড়িতে। তাড়হুড়োতে কখন যে পা পেচিয়ে গেছে শাড়িতে খেয়ালই করেনি তিতির, তাই তো এক পা যেতেই হুমড়ি খেয়ে সোজা ল্যান্ড করলো আরাফের বাহুডোরে। হ্যা, ঠিক সময়ে আরাফ ওকে ধরে ফেলায় একটুর জন্য বেঁচে যায় তিতির। আর ঘটনার আকস্মিকতায় আবার ঠোঁট ভেঙে কেঁদে ফেলে তিতির।
আরাফও ঘাবড়ে যায়, তিতিরের কান্না দেখে। কি করবে, কি করে বউয়ের কান্না থামাবে বুঝতে না পেরে এক ঝটকায় কোলে তুলে নেয় ও তিতিরকে। তারপর তিতিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে-
-‘ এই বুড়ো বরটাকে এতেটাই মিস করছিলে যে, একেবারে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিচ্ছো বউপাখি? ভালো টালো বেসে ফেললে নাকি আবার এই পাগলটাকে?’
কান্না থেমে যায় তিতিরের। ওকে নিয়ে এভাবে মজা করায় রাগে নাকের ডগা লাল হয়ে ওঠে ওর। তারপর মুখ ফুলিয়ে বলে-
-‘ বয়েই গেছে আপনাকে ভালোবাসতে আমার। নামিয়ে দিন আমাকে। নামিয়ে দিন বলছি!’
আরাফ নামায় না ওকে। সোজা নিয়ে যায় নিজের রুমে। তারপর এক পা দিয়ে দরজা ভিরিয়ে, ভিতর থেকে লক করে দিয়ে তিতিরকে কোলে নিয়ে বসে পড়ে বেডের উপর।একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে গুটিসুটি হয়ে থাকা তার তার পুতুলের মতো বউপাখিটাকে।
তিতিরের চোখে এখনো পানি টলমল করছে। আরাফ হাতের আঙুল দিয়ে সেই পানি মুছে দেয়, তারপর সেই আঙুল ছোঁয়ায় নিজের ঠোঁটে। তারপর এক মাদকতা মেশানো কন্ঠে বলে-
-‘ কাঁদলে কাউকে এতো সুন্দর লাগে এই প্রথম দেখলাম। আমার বউপাখি, কি করেছো বলো তো তুমি আমায়? হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান টু মি ডার্লিং।’
আরাফের কথা শুনে আবারও ঠোঁট উল্টে কাঁদে তিতির। নিজের ছোট্ট হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আরাফের শক্তপোক্ত বুকের ওপর কিল বসাতে বসাতে বল-
-‘আপনি খুব বোকা, খুব খুব’
-‘বোকা? হ্যা শুধু যখন আমার বউপাখি আমার আশেপাশে থাকে তখন আমি তার কাছে বোকা, তার জন্য বোকা। এতটুকু বোকা হতে আরাফ চৌধুরীর লজ্জা করে না।’
তিতির আর কোনো কিছু ভাবে না। নিজের অজান্তেই জড়িয়ে ধরে আরাফের গলা।আর আরাফ? তার বউপাখি তার কোলে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরেছে! এটা যেনো তার কল্পনারও অতীত। বলিষ্ঠ হাত দুটো তিতিরকে নয়, খামচে ধরেছে নিরীহ বেডশীট টাকে। ‘কনট্রোল হারালে চলবে না আরাফ! তোর বউ পাখি এখনো তোকে চিনতে পারেনি। সামলা নিজেকে!’
নিজের মনেই নিজে বলল ও । কিন্তু বুকের ভিতর হতে থাকা ধুকপুকুনি? সেটা কি করে আটকাবে আরাফ? ওর বউপাখিকে আদর করার জন্য ওর ভিতরে যে তীব্র তোলপাড় শুরু হয়েছে, সেই তোলপাড় কি করে বন্ধ করবে ও?
বেশ অনেকক্ষণ পর তিতির ছাড়লো আরাফকে। আরাফের মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো আরাফ চোখ বন্ধ করে আছে, ওর গলার আর হাতের রগ গুলো ফুলে উঠেছে, যেনো ও আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে নিজের পৈশাচিক রূপটা তিতিরের সামনে প্রকাশ না করতে। ওর উপর নিজের অধিকার না ফলাতে।
মুখ টিপে হাসলো তিতির। তারপর আস্তে আস্তে আরাফের কোল থেকে নামলো ও। তিতির নামতেই চোখ খুলল আরাফ। হঠাৎই ওর চোখ গেলো বেডের পাশের টেবিলের উপর। সেখানে চোখ পড়তেই দেখলো তিতিরের খাবার ঢেকে রাখা আছে এখনও। তিতির খাবার খায়নি? নিমেষেই চোখের চাহনি বদলে গেলো আরাফের।
-‘ খাবার খাওনি কেনো তুমি?’
তিতির কিছুক্ষণ আমতা আমতা করলো ভীষণ। তারপর ধরা পড়া চোরের মতো বলল-
-‘ এতো দেরি হয়ে গেছে যে আর খেতে ইচ্ছে করছিলো না, আপনি রেখে দিন, আমি পরে খেয়ে নেবো।’
-‘ পরে কখন খাবে তুমি? কাল সকালে?’
তিতির ভড়কে গেলো। আবার রেগে যাচ্ছে নাকি পাগলটা? তিতির ‘ইয়ে মানে ইয়ে মানে’ করতে করতেই আরাফ পাল্টা জবাব দিলো-
– তোমাকে এখন আমি খাইয়ে দেবো! আর যদি না খাও তাহলে যেটা করা থেকে নিজেকে একটু আগে আঁটকে ছিলাম সেটাই কিন্তু..
-‘আমি খাবো, খাবো তো আমি, এই দেখুন.. আ…’
আরাফের কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর হাতে খাবারের থালা তুলে দিয়ে মুখ হা করল তিতির।
না চাইতেও হেসে ফেলল আরাফ। তারপর তিতিরের মুখে খাবার পুরে দিতে দিতে বলল-
-‘ গুড গার্ল! ‘
(চলবে)…