ভয়ংকর সে পর্ব-১৩

0
311

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_১৩
#M_Sonali

চাঁদনী ভয়ে হাত থেকে পালকটা দূরে ফেলে দিল।

ওটা দূরে ফেলতেই সামনে থাকা ভ্যাম্পায়ার লোকটার চোখ যেন চিকচিক করে উঠল। সে ছুটে এলো চাঁদনীর দিকে। চাঁদনী ভয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে সেখানেই বসে পড়ল। কিন্তু মুহূর্তের ওর মনে হলো ওর সামনে দিয়ে খুব দ্রুতগতিতে কিছু একটা ছুটে চলে গেল। সাথে সাথে চোখ খুলে সামনে তাকালো সে। দেখল তার আশেপাশে বা সামনে কেউ নেই। সে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকালো। পাশে পড়ে থাকা পালকটির দিকে তাকিয়ে দেখল সেটাও নেই। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

সে এবার নিজের প্রাণ বাঁচাতে সেখানে আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। দৌড়াতে শুরু করলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে। যদিও অন্ধকারে কোন দিকে যাচ্ছে কিছুই জানেনা সে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার তারওপর হাতে কোন টচ লাইট নাই। কোন দিকে আলোর ছিটেফোঁটাও নেই। অন্ধকারে ভয়ে কোন দিকে দৌড়াচ্ছে তার অজানা।

বেশ কিছুক্ষন দৌড়ানোর পর কিছু একটার সাথে হোচট খেয়ে নিচে মুখ থুবরে পড়ে যেতে নিল চাঁদনি। সাথে সাথে অনুভব করল সে কারো বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে আছে। মুহূর্তে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। কারণ সে বুঝতে পেরেছে এটা কার বাহুডোর। সে দেরি না করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো লোকটাকে। আনন্দে হু হু করে কাঁদতে শুরু করল। লোকটি কিছুই বলল না। আচমকাই ওকে কোলে তুলে নিয়ে উড়াল দিল।

প্রায় ১০ মিনিট উড়ে আসার পর চাঁদনীকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো লোকটি। সে এবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল। দেখল সে আগের পাহাড়ের চূড়ার সেই জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে শ্রাবণ তাকে এর আগেও নিয়ে এসেছিল। নিজের চোখ মুছে নিয়ে সামনের দিকে ফিরে তাকাল সে। দেখল শ্রাবণের চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে। ভীষণ রাগী এবং ভয়ানক দেখতে লাগছে তাকে। কিন্তু কেন জানে না এই মুহূর্তে ওকে দেখে মোটেও ভয় হচ্ছে না চাঁদনীর। ওর কাছে দু পা এগিয়ে গেল সে। অভিমানী কন্ঠে বলল,

“এত দেরি করলেন কেন আপনি? আর ওই লোকটা কে ছিলো? আমাকে মারতে’ই বা চাইছিল কেন? আপনি কোথা থেকে উড়ে এসে বাঁচালেন আমায়? আপনি জানেন আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। উনি যদি আমাকে মেরে ফেলতো তখন কি হতো? আপনি কি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছিলেন না?”

একনাগাড়ে এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করে থামল চাঁদনী। কিন্তু শ্রাবণ তার কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিল না। তাকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে পাহাড়ের চূড়ার একদম কিনারে দাঁড়াল। সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগল। পিছন থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে সে। নিজেকে শান্ত করার যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছে। চাঁদনী একটি শুকনা ঢোক গিললো। মনে মনে উল্টাপাল্টা চিন্তা করতে লাগলো। “সে কি ভুল করে ফেলল এভাবে শ্রাবনকে খুঁজতে গিয়ে? নইলে ওর সাথে কথা বলছে না কেন? এটা সত্যিই শ্রাবণ তো?”

কথাগুলো ভেবে যেন মাথা ঘুরতে শুরু করলো তার। তখনই শ্রাবন নিজেকে যথেষ্ট শান্ত করে ওর দিকে ঘুরে তাকালো। কর্কশ গলায় বলল,

“এই মেয়ে তোমার মাথায় কি বুদ্ধি বলতে কিছু নেই? নাকি তোমরা মানুষেরা এমন বোকা’ই হও?”

ওর এমন কথায় মুহূর্তে রাগ উঠে গেল চাঁদনীর। সে কোথায় ভেবেছিল ওকে দেখে শ্রাবণ ওকে জড়িয়ে ধরবে। কত রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলবে। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করবে। তা নয় প্রথমেই এভাবে ধমকের সুরে কথা বলছে! চাঁদনী ওর কাছে এগিয়ে এলো। কোমরে হাত দিয়ে রাগী গলায় বললো,

“কেনো কি এমন করেছি আমি? যে আপনার আমাকে বোকা বলে মনে হচ্ছে। আর আমরা মানুষেরা বোকা হই। তো আপনারা ভ্যাম্পায়ারেরা কি হন শুনি?”

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ ভ্রু কুচকালো। ওর আরো একটু কাছে এগিয়ে এসে ওর দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“তো বোকা নয় তো কি? তোমাকে কে বলেছিল বাসা থেকে বেরিয়ে আবারো সেই জঙ্গলের মধ্যে এসে আমাকে ডাকতে? ঠিক সময়মতো আমি না আসলে কত বড় সর্বনাশ হয়ে যেতো তোমার কোন ধারনা আছে? ওই ভ্যাম্পায়ারটা তো তোমাকে আজকে মেরেই ফেলত। তুমি জানোনা তোমার চারিপাশে বিপদে আছে। এত কেন বোকা তুমি?”

“দেখুন আপনি শুধু শুধু আমাকে বকছেন। আমি কিন্তু মোটেও বোকা নই। আর তাছাড়া আমি তো ওখানে সেধে সেধে যাইনী। আপনি’ই তো আমাকে বলেছিলেন আপনার কথা মনে পড়লে আপনাকে স্মরণ করলে চলে আসবেন। তো আমি যদি নিজের ঘরের মধ্যে দরজা জানলা লাগিয়ে রেখে আপনাকে ডাকে আপনি বুঝি সেখানে চলে আসতেন? কখনোই আসতেন না। তাইতো বাধ্য হয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে আপনাকে ডেকেছি। আমি কি জানতাম না কি যে আপনি না এসে ওই বজ্জাত বাঁদরমুখো ভ্যাম্পায়ারটা চলে আসবে! কিন্তু আপনি এত দেরি করে আসলেন কেন বলেন তো? আপনি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন নাকি এতদিন শুধু শুধু আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন।”

ওর কথার উত্তরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল শ্রাবণ। তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো,

“তুমি শুধু বোকাই নও তার চাইতে বেশি বাঁচাল। বড্ড বেশি কথা বল তুমি।”

কথাটি বলেই সেখান থেকে একটু সরে যেতে চাইলো শ্রাবণ। সাথে সাথে ওর হাত ধরে ফেলল চাঁদনী। রাগী গলায় বলল,

“ওই কি বললেন আপনি? আমি বাচাল? আমিতো আপনার সাথে সেভাবে কথাই বলিনি। এখনি বিরক্ত হয়ে গেলেন! এই আপনার ভালবাসা? আমাকে নিয়ে বাসায় রেখে আসুন লাগবেনা আপনার বউ হয়ে থাকা। আমি এমনি ভালো আছি। ভুল হয়েছে আপনাকে ডেকে।”

কথাগুলো বলেই গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালো চাঁদনী। ওর কথা এবং কাণ্ডে বেশ হাসি পেল শ্রাবণের। সে এবার পিছন থেকে চাঁদনীর কোমর জড়িয়ে ধরল। আচমকা ওর ঠাণ্ডা গায়ের স্পর্শে কেঁপে উঠলো চাঁদনী। কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেল সে। শ্রাবণ ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু গলায় বলল,

“ভালোবাসি বলেই তো তোমার ডাকে সব কিছু ফেলে এতদূর ছুটে এসেছি। কিন্তু তুমি কি জানো তোমার সামনে ওই ভ্যাম্পায়ার টা কে দেখে কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। কত বড় ক্ষতি করতে পারত তোমার সে। তার কোন ধারনা আছে? আমি একটি জরুরী কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তাই এতবার আমাকে ডাকা সত্ত্বেও আসতে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু তোমার তো বোঝা উচিত ছিল, যে তোমার চারিপাশে বিপদ। এ মুহূর্তে একা একা জঙ্গলে আসা মোটেও উচিত হয়নি তোমার।”

ওর এমন কথায় এবার কিছুটা নরম হলো চাঁদনী। সেও মৃদু গলায় বলল,

“হ্যাঁ আপনি হয়তো ঠিকই বলছেন। আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু এ কথাগুলো প্রথমে বললে কি হত? শুধু শুধু এতগুলো বকা দেওয়ার কি দরকার ছিল। এমনিতেই আমি বড্ড ভয় পেয়েছি। তার ওপর আপনি বকা দিয়ে আরও ভয় পাইয়ে দিচ্ছিলেন।”

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ এবার ওকে ছেড়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘোরালো। দুগালে হাত রেখে কপালে ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বললো,

“আমি বেঁচে থাকতে তোমার কোন ভয় নেই চাঁদপাখি। কিন্তু তবুও সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করে চলবে। তুমি যার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছো তার কারণে তোমার সারাজীবন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। আমাকে ভালোবাসার পরিণাম যে তোমার জন্য অনেক ভয়াবহ চাঁদপাখি। তবে কথা দিচ্ছি আমি বেঁচে থাকতে তোমার কোনরকম ক্ষতি হতে দিব না। সব সময় নিজের বুক দিয়ে আগলে রাখব তোমাকে।”

ওর কথায় মৃদু হাসল চাঁদনী। ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

“সে বিশ্বাস আমার আছে বলেই তো এই মাঝরাতে আপনি ভ্যাম্পায়ার সেটা জানা সত্ত্বেও নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এতদূর ছুটে এসে ছিলাম। আমিও যে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি শ্রাবণ। সারাজীবন আপনার সাথে থাকতে চাই। আপনার বউ হয়ে। আপনি ভ্যাম্পায়ার তবুও আমি আপনাকে ভালোবাসি। কারণ আপনি আমার #ভয়ংকর_সে।”

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ আর কিছু বলল না। ওকে শক্ত করে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরল। চাঁদনীও তাকে জড়িয়ে ধরল। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুটা সময়। একটু পর শ্রাবন ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে পাশে একটি উঁচু পাথরের উপর গিয়ে বসল। আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

“জানো চাঁদ পাখি, এই কয়েকদিন তুমি আমাকে না ডাকলেও আমি সারাক্ষণ তোমার উপর নজর রেখেছি। প্রতিটা রাতে তুমি যখন জানালা খুলে বসে থাকতে। আমি দূর থেকে তোমাকে নয়ন ভরে দেখেছি। আর সব সময় অপেক্ষা করেছি কখন তুমি আমাকে ডাকবে। নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করবে। কিন্তু তুমি এমন একটি সময় আমাকে ডাকলে যখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে ছিলাম।”

কথাগুলো বলেই আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকালো শ্রাবণ। চাঁদনী ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকাল। তারপর বলল,

“কিন্তু আজকে আপনি কোথায় গিয়েছিলেন শ্রাবণ? যে আসতে এত দেরী হলো! আপনার তো এত সময় লাগে না কোথাও যেতে!”

শ্রাবণ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। মনে মনে কিছু একটা ভেবে গম্ভির গলায় বলল,

“সেটা তোমাকে পরে বলব। এখন কার এই সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করতে চাই না। আর হ্যাঁ আরেকটা কথা বলছি তোমায়। আগামীকাল ঘোর অমাবস্যা। এই রাতে ভুল করেও তুমি বা তোমার পরিবারের কেউ বাসা থেকে বের হবে না। দ্বিতীয়ত তোমাদের দরজায় যদি কেউ রাতের বেলা কড়া নাড়ে। তোমাদের আত্মীয় বা পরিচিত কেউ। তবুও দরজা খুলবে না। ভুলেও যদি দরজা খোলো তাহলে তোমাদের বিপদ কেউ আটকাতে পারবে না।”

“কিন্তু আপনি এমন কেন বলছেন শ্রাবণ? আপনি তো বলেছেন আপনি আমাকে কিছু করবেন না। তাহলে আর কোন বিপদ আছে আমাদের?”

“আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করব না বলেই তোমাদের চারিপাশে বিপদ লুকিয়ে আছে চাঁদ পাখি। যদি আমি তোমার রক্ত চুষে তোমাকে মেরে ফেলতাম, তাহলে তোমার পরিবারের কোনো বিপদ হত না। কিন্তু তোমাকে ভালোবেসে নিজের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কারণেই তোমার চারিপাশে বিপদের ছড়াছড়ি লেগে গেছে। তাই ভুল করেও আগামীকাল সন্ধ্যার পর থেকে আর দরজা জানালা কিছু খুলবেনা। শত প্রয়োজন হলেও ঘরের মধ্যেই থাকবে। আর হ্যাঁ তোমাদের তিনজনের হাতে যে পালকগুলো দেওয়া আছে। সেগুলো নিজের থেকে এক সেকেন্ডের জন্যও দূরে সরাবে না। তাহলে বিপদ হবে। তোমার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কারণ অমাবস্যার রাতে বিপদে পরলে আমিও তোমাদের সাহায্য করতে আসতে পারবো না।”

ওর কথার উত্তরে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো চাঁদনী। তারপর কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। দুজনের মাঝে এখন নিরাবতা। কেউ কোনো কথা বলছে না। দুজনের দৃষ্টি আকাশের দিকে সীমাবদ্ধ। বেশ কিছুক্ষণ পর শ্রাবন বলে উঠলো,

“একটু পরেই সূর্য উঠব চাঁদ পাখি। আর দেরি করা চলবে না। চলো তোমাকে তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি। আর আমি যে কথাগুলো বললাম সেগুলো কিন্তু ভুলে যেও না।”

ওর কথার উত্তরে করুন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল চাঁদনী। তারপর আবেগী গলায় বলল,

“আবার আমাদের কবে দেখা হবে শ্রাবণ? আপনি কি আর আমাকে নিজের কাছে নিয়ে যাবেন না?”

শ্রাবণ একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। কয়েক পা সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো,

“যদি বেঁচে থাকি তাহলে খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে চাঁদ পাখি। আর যদি না থাকি তাহলে তোমার সকল বিপদ শেষ করে দিয়েই মরে যাবো। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো। আমি তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি। যে ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করে শেষ করতে পারবো না। প্লিজ আর কোন প্রশ্ন করোনা। এখন চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি। সূর্য উঠলে আমি আর থাকতে পারব না।”

ওর কথা শুনে চাঁদনীর মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। সে প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে গেল। চুপচাপ উঠে এসে শ্রাবণের পাশে দাঁড়ালো। শ্রাবণ এবার ওর দিকে ঘুরে শক্ত করে ওকে বুকে জড়িয়ে নিল। মুহুর্তেই তার পিছন দিয়ে লম্বা দুটি ডানা বেরিয়ে এলো। ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে চলল বাড়ির উদ্দেশ্যে। দশ পনেরো মিনিটের মাঝে পৌঁছে গেল তার বাড়ির সামনে। আস্তে করে নিচে নামিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখলো তাকে। কপালে চুমু দিয়ে বললো,

“সাবধানে থেকো আর নিজের খেয়াল রেখো। আর কোনো ভুল করো না চাঁদপাখি। তোমার মাঝে যে আমার জানটাই লুকিয়ে আছে।”

ওর কথার উত্তরে চাঁদনী কিছু বলল না। মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। বোঝাই যাচ্ছে তার মনটা ভীষণ খারাপ। শ্রাবণ একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর নিজের ডানা থেকে টান মেরে একটি পালক ছিঁড়ে নিল। সেটা চাঁদনীর হাতে দিয়ে বলল,

“এটা নিজের হাতে শক্ত করে বেঁধে নিও। আমি জানি তোমার হাতের পালকটা তুমি হারিয়ে ফেলেছ। তাই এটা বেধে নিও। এটা কোনোভাবেই নিজের থেকে দূরে সরাবে না। আর আমার প্রতিটা কথা মনে রেখো। দয়া করে আর কোনো ভুল করো না চাঁদপাখি। আমি এবার আসি সূর্য উঠার সময় হয়ে যাচ্ছে।”

কথাটি বলেই ডানা ঝাপটে উড়ে গেল শ্রাবণ। চাঁদনী সেখানে কিছুক্ষণ পালক টা হাতে নিয়ে ওর চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। বুক চিরে বেরিয়ে এল একটি দীর্ঘশ্বাস। কেন যেন বারবার মনে হতে লাগল শ্রাবনকে সে আর কখনো ফিরে পাবে না। এটাই হয়তো তাদের শেষ দেখা ছিলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,