ভয়ংকর সে পর্ব-১১+১২

0
208

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_১১
#M_Sonali

নিজের রুমে একা একা শুয়ে আছে চাঁদনী। কিন্তু কিছুতেই ঘুম ধরছেনা তার। সে এক নজরে তাকিয়ে আছে উপরে থাকা ফ্যানটার দিকে। সেটা কি সুন্দর ভন ভন করে ঘুরছে। আর ঠান্ডা হওয়া দিচ্ছে তাকে। কিন্তু তার মনটা এখন সেদিকে নেই। সে এখন অন্য সব ভাবনায় ব্যস্ত। কেন জানেনা শ্রাবণকে ছেড়ে আসার পর খারাপ লাগছে তার। বারবার ঘুরেফিরে শুধু ওর কথাই মনে পড়ছে। ইচ্ছে করছে আবারো ওর কাছে চলে যেতে। কিন্তু কে চায় নিজ ইচ্ছায় মৃত্যুর মুখে পা রাখতে। সে তো অনেক কষ্টে তার হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে। সে আর কখনোই সেখানে ফিরে যাবে না। কথাগুলো ভেবে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে চাঁদনী। তারপরে ঘুমের জন্য চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু ঘুমটা যেন আজ কিছুতেই ধরা দিবে না তার চোখে।

চাঁদনী একবার এদিক একবার ওদিক এভাবে ঘুরতে ঘুরতে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। তাই উঠে বসে পড়লো সে। বিছানা থেকে নেমে জানালার কাছে এগিয়ে গিয়ে জানালাটা খুলে দিল। বাইরে একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখন মধ্যরাত তাই বাইরে একদম নিরব নিস্তব্ধ। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার দূর-দূরান্ত থেকে ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। চাঁদনী অদূরে তাকিয়ে রইল এক পলকে। বারবার মন চাইলো শ্রাবণকে ডেকে নিয়ে এসে তার সাথে গল্প করতে। যদিও সে কখনোই এটা চায়না। এই কয়েকদিনের কথা ভুলে যেতে চায় মন থেকে। একটা ভ্যাম্পায়ার কে কখনোই নিজের জীবনের সঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে পারে না সে। যে কিনা মানুষের রক্ত খেয়ে মানুষকে হত্যা করে বেঁচে থাকে।

কথাগুলো ভেবেই আবার একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে চাঁদনী। নিজের হাতে থাকা সেই পালকটি উঁচু করে মুখের সামনে ধরে তার ওপর আলতো করে আনমনে হাত বুলায়। বিড়বিড় করে বলে,

“ইস আপনি যদি কোনো সাধারণ মানুষ হতেন শ্রাবণ। যদি এমন রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার না হতেন। তাহলে আমাদের জীবনটা কতই না সুন্দর হতো। কতই না ভালোবাসায় ভরে থাকতো আমাদের জীবন। কিন্তু আপনি তো একজন মানুষের রক্ত খেকো ভ্যাম্পায়ার। আমি আপনাকে কিভাবে নিজের স্বামী বলে মেনে নিব? কখনোই সম্ভব নয়। আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন এটাই ভালো আমাদের জন্য।”

কথাগুলো বলে জানালা টা লাগিয়ে দিয়ে আবারো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল চাঁদনী। ওদিকে অন্ধকারে অদূরে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে ছিল শ্রাবণ। ও যতগুলো কথা বলেছে ওই পালকটার কাছে সব কথা শুনতে পেয়েছে সে। কথাগুলো শুনে যেন বুকের মধ্যে হালকা ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। সে বুঝতে পেরেছে চাঁদনী তাকে কখনোই মেনে নেবে না। কখনো ভালবাসায় জড়িয়ে নিবানা ওকে। হয়তো এভাবে সারা জীবন দূরে থেকেই দেখতে হবে ওকে। আর জ্বলে-পুড়ে মরতে হবে নির্মম ভালবাসার আগুনে। কথাগুলো ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যায় তার।

তখনই সে পিছনে কারো উপস্থিতি টের পায়। পিছন দিকে ঘুরতেই দেখে দুজন ভ্যাম্পায়ার দাঁড়িয়ে আছে। যারা ওকে দেখতেই মাথা নিচু করে বলে ওঠে,

“ভ্যাম্পায়ার কিং আপনাকে শরণ করেছেন প্রিন্স।”

ওদের কথার উত্তরে শ্রাবণ ঝাঁঝালো গলায় বলল,

“তোরা এখানে কেন এসেছিস? দাদু আমাকে স্মরণ করে থাকলে আমি চলে যেতাম। তবে তোদের এখানে আসতে বলিনি। তোদের যেনো আশেপাশের এই এলাকায় কোথাও না দেখি। এলাকার কারো কোন ক্ষতি করতে চাইলে তোদের ব্যবস্থা আমি করব।”

কথাটি বলে মুহূর্তের মধ্যে ভ্যাম্পায়ারের রূপ নিয়ে উড়ে গেল শ্রাবণ। ওর পিছু পিছু ঐ ভ্যাম্পায়ার দুজনও উড়ে যেতে লাগলো।

উড়তে উড়তে জঙ্গলের মধ্যকার সেই কালো প্রাসাদটির সামনে এসে নামল শ্রাবণ। তারপর দ্রুত এগিয়ে গেল প্রাসাদের ভিতরে। ভিতরে যেতেই তার দাদু তাকে দেখতে পেয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,

“তুমি এসব কি করছ শ্রাবণ? তোমার কাছ থেকে আমি কখনোই এটা আশা করিনি। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের ভবিষ্যৎ কিং হয়ে তুমি এমন টা কিভাবে করতে পারলে?”

শ্রাবণের বুঝতে বাকি রইল না তার দাদু তাকে কি বলতে চাইছে। সে শান্তকণ্ঠে কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,

“আমি যেটা করেছি ঠিক করেছি। আর কেউ বুঝুক আর না বুঝুক অন্তত আপনি তো জানেন আমার মনের খবর। হ্যাঁ আমি ওই মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলেছি। হয়তো তাকে বিয়ে করার কারণেই তার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে আমার। এখন তাকে মেরে ফেলা তো দূর তার গায়ে একটি ফুলের আচরও লাগতে দিব না আমি। আপনি ভালভাবেই অবগত আছেন আমার জেদ সম্পর্কে।”

ওর কথার উত্তরে বেশ রাগান্বিত হলেন ওর দাদু। রাগী গলায় চিৎকার করে বললেন,

“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? বুঝতে পারছ এসব কি আবোল তাবোল বলছ তুমি? ভুলে গেছো নিজের বাবার পরিণতির কথা। ভুলে গেছো মানুষের সাথে একটি ভ্যাম্পায়ারের বিয়ে কখনোই সম্ভব নয়। এতে ওই মানুষটার সাথে সাথে ভ্যাম্পায়ারের জীবনটাও সংকটে পড়ে যায়। সেটা কি মনে করে দিতে হবে তোমাকে? তুমি কেন নিজের জীবন নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছ। কেন বুঝতে পারছ না আমার বংশের প্রদীপ তুমি একাই। তোমার আর কোনো ভাইবোন নেই যে ভবিষ্যতে এই রাজ্যের দায়িত্ব নেবে। তোমার কিছু হলে রাজ্য কে সামলাবে বল।”

“সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না দাদু। আমি নিজের দায়িত্ব বোধ ভালো করেই পালন করতে জানি। আমাকে কি করতে হবে সেটা আমার জানা আছে। আপনার কাছে শুধু একটাই অনুরোধ ওই মেয়েটা বা ওর পরিবারের কারো কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না। ওর পরিবারের কারো কিছু হলে আমার চাইতে খারাপ আর কেউ হবে না।”

ওর এমন কথায় দাদুর মুখে বেশ চিন্তার ছাপ পড়ে গেল। সে চিন্তিত কন্ঠ বলে উঠল,

“কিন্তু তুমি কেন বুঝতে পারছ না, ওই মেয়েটির রক্ত যদি তুমি অমাবস্যার রাতে পান না করো তাহলে তুমি তোমার শক্তি হারিয়ে ফেলবে। আর সেইসাথে হারিয়ে ফেলবে সকল ভ্যাম্পায়ার দের কন্ট্রোল করার শক্তিটুকুও। তখন আর কিছুই করার থাকবে না। সব ভ্যাম্পায়ার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মানুষের পৃথিবীতে চলে যাবে। আর সব মানুষের রক্ত চুষে মেরে ফেলবে। পৃথিবীতে কোন মানুষ থাকবে না। ধিরে ধিরে রক্ত চুষে সবাইকে শেষ করে ফেলবে ওরা। সেটা কতটা ভয়ানক হতে পারে তুমি জানো না।”

“আপনি চিন্তা করবেন না দাদু। আমার শক্তির কিচ্ছু হবে না। আমার শক্তি আমি ঠিক অর্জন করে ছাড়বো। সেজন্য আমি আলাদা প্ল্যান আগেই করে রেখেছি। তাই আপনি আর চিন্তা করে নিজের মাথা ঘামাবেন না। আমি এখন আসছি। আমাকে যেতে হবে। এখানে ভালো লাগেনা আমার।”

কথাটি বলে আর দাদুর কথার অপেক্ষা না করে দ্রুত সেখান থেকে ছুটে চলে গেল শ্রাবন। ওকে চলে যেতে দেখে দাদু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মনে মনে বললেন,

“তুমি যে ঠিক নিজের বাবার মত হয়েছো সেটা তোমার আচরণে বোঝা যায় শ্রাবণ। কিন্তু এটাই যে তোমার ধ্বংসের কারণ হবে। তুমি সেটা কেন বুঝতে পারছ না। নিজের বাবার মত নিজেও ভুল পথে পা বাড়াচ্ছো। নিজের সাথে সাথে ওই মেয়েটাকেও বিপদে ফেলে দিচ্ছো তুমি।”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_১২
#M_Sonali

সাত দিন পর,
সূর্যটা ঢলে পড়েছে পশ্চিম দিগন্তে। চারিদিকে আলো নিভে অন্ধকার নেমে আসছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যাচ্ছে। চাঁদনী জানালা খুলে নিজের ঘরে দরজা দিয়ে বসে আছ চুপচাপ। চোখটা তার অদূর জঙ্গলে সিমাবদ্ধ। কেন জানে না ইদানিং কিচ্ছু ভালো লাগে না তার। সারাক্ষণ শ্রাবনের কথা মনে পড়ে মনটা আনচান করে। বারবার ইচ্ছে করে তার কাছে ছুটে যেতে। সে ভ্যাম্পায়ার হলেও তাকে মেনে নিতে। তাকে ভালোবাসতে। সে হয়তো তাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিল। কিন্তু মৃত্যুর ভয়ে তার থেকে দূরে সরে এসেছে। কিন্তু দূরে সরে এসে যেন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে সে। না পারছে তার কাছে ফিরে যেতে, আর না পারছে তাকে ছাড়া একা থাকতে।

এদিকে ওর বাবা এবং দাদিও প্রতিদিন বারবার শ্রাবনের কথা জিজ্ঞেস করে করে মাথা খেয়ে ফেলছে তার। যদিও এখন অব্দি ওর সত্যিকার এর পরিচয় এর ব্যাপারে কিছুই বলেনি সে। চাঁদনী নিজের মনে গোপন করে রেখেছে। এ কয়েক দিনে ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে শ্রাবণ তার কোন ক্ষতি করবে না। সে হয়তো সত্যিই তাকে ভালবাসে। সে ভাম্পায়ার হলেও অনেক ভালো একজন ভ্যাম্পায়ার।

কথাগুলো ভেবে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে চাঁদনী। মনে মনে ভাবে সে যদি শ্রাবনকে ডাকে তবে কি সে আসবে? কথাটা ভেবেই আবার মনকে সতর্ক করে সে। আগামীকাল ভরা আমাবস্যা। চাঁদনী চায় আমাবস্যা পার হলেই শ্রাবনের সাথে দেখা করতে। কে বলতে পারে আমাবস্যার আগে দেখা করলে যদি আবার সে তার ভ্যাম্পায়ার রূপ নিয়ে চাঁদনী কে মেরে ফেলে!

হঠাৎ দরজায় টোকা পরার শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে চাঁদনীর। সে গম্ভীর গলায় জিগ্যেস করে,

“কে”

বাইরে থেকে মৃদু গলায় আওয়াজ আসে,

“কিরে চাঁদনী বুড়ি এ অসময় দরজা লাগিয়ে ঘরের মধ্যে একা একা বসে কি করছিস শুনি। দরজাটা খোল। তোর সাথে আমার কথা আছে।”

দাদির কন্ঠ শুনতেই আর দেরি করেনা চাঁদনী। দ্রুত উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। ওর দাদি ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

“এই হলো তোদের মত মেয়েদের নিয়ে একটি জ্বালা। নিশ্চয়ই বরের সাথে রাগারাগি করে এসেছিস। না মানলেও আমি সেটা একশ পার্সেন্ট বুঝতে পেরেছি। তাই তো সারাক্ষণ এত একা একা অন্যমনস্ক থাকিস। আর জামাইটাও একদিনে একটি বারের জন্যও এলো না।”

দাদির কথায় বেশ রাগ হয় চাঁদনির। নিজেকে সংযত রেখে গম্ভির গলায় বলে,

“দাদি যেটা জানো না সেটা নিয়ে আবোল তাবোল কথা বলবে না তো। আমি ওনার সাথে কোন রাগারাগি করে আসেনি।”

“তাই যদি হবে তাহলে সারাক্ষণ এমন অন্যমনষ্ক হয়ে বসে থাকিস কেন? আর জামাই কেন আসেনা? সেই কবে এসেছিস, এখন পর্যন্ত একটিবার তো খোঁজ নেওয়ার জন্য আসলোনা সে। আশেপাশের মানুষ কত খারাপ ভাবে দেখছে তা কি বুঝতে পারছিস?”

“দেখো দাদী আমি আশেপাশের মানুষের খাইওনা পরিও না। তাই তাদের কথা শোনার সময় নেই আমার। তুমি অন্তত এভাবে বলে আমাকে কষ্ট দিও না।”

ওর কথার উত্তরে দাদি এবার মুচকি হাসলেন। ওকে হাত ধরে নিয়ে এসে বিছানার উপর বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

“শুনরে চাঁদনীবুড়ি আমি তোর উপর কোন উল্টাপাল্টা কথা বলছি না। বরং তোকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, মেয়েদের বিয়ের পর তার স্বামী হয় তার সবকিছু। সেই কবে এসেছিস তুই। এখন পর্যন্ত জামাই একবারও তোর খোঁজ খবর নিল না। তাই একটু চিন্তা হচ্ছে আমাদের। তা ছাড়া কিছুই না। জানিস তো স্বামীর স্ত্রীর সংসারে সবচাইতে বেশি দরকার হয় ভালবাসা ও বিশ্বাসের। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যদি বিশ্বাস না থাকে তাহলে তাদের ভালোবাসা টেকে না। তাই ভয় হয় তোদের মাঝে আবার এমন কিছু হয়নি তো। যার কারণে ঝগড়া একেবারে চলে এসেছিস!”

চাঁদনী এবার কোন উত্তর দেয় না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

“তেমন কিছুই হয়নি দাদি। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না। এখন যাও তো আমি একটু ঘুমাবো। কিছু ভালো লাগছেনা। খাবার সময় হলে ডেকো।”

ওর কথার উত্তরে দাদি আর কিছু বলেন না। একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যান। চাঁদনী গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার উপর এসে বসে। মনে মনে চিন্তা করে, তার শ্রাবণের সাথে কথা বলা উচিত। সত্যি যদি শ্রাবণ তাকে ভালোবাসে তাহলে অবশ্যই সব সত্যি কথা খুলে বলবে তাকে। কেন সে অমাবস্যার রাতে রক্ত খাওয়ার জন্য তাকে নিয়ে গিয়েছিল।

কথাগুলো মনে মনে ভেবে সে ঠিক করে নেয় আজ রাতেই যে ভাবেই হোক শ্রাবণকে ডেকে তার সাথে কথা বলবে সে।
,
,
,
রাত ১২:৫৫ মিনিট,
চুপি চুপি দরজা খুলে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে চাঁদনী। অন্ধকারে বেরিয়ে বেশ কিছুটা দূরে চলে আসে বাসা থেকে। তারপর হাতে থাকা পালকটা স্পর্শ করে শ্রাবনকে স্মরণ করতে থাকে। মুহূর্তে যেন ঝড়ের বেগে কোথা থেকে ছুটে এসে তার সামনে দাঁড়ায় কেউ। অন্ধকারেও তার চোখ দুটো একদম লাল লাইট এর মতো জ্বলজ্বল করছে। তাকে এভাবে সামনে দেখে বেশ কিছুটা ভরকে যায় চাঁদনী। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

“আপনি এসেছেন? এত তাড়াতাড়ি চলে আসবেন ভাবতেও পারিনি।”

সামনে থাকা ব্যাক্তি কোন উত্তর দেয় না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্ধকারে ওর মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। বেশ কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠে ব্যক্তিটা,

“তোমার হাতের এই পালক টা খুলে দূরে ফেলে দাও চাঁদনী।”

ওর এমন কথায় কিছুটা আশ্চর্য হয় চাঁদনী। যে সারাক্ষণ এটা নিজের কাছে রাখতে বলেছিলো। সেই লোকটাই এখন তার হাতের পালকটা খুলে ফেলতে বলছে? তার গলাটাও কেমন কর্কশ লাগছে। এভাবে তো কখনও শ্রাবণ তার সাথে কথা বলেনি। কথাটা ভেবে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যায় চাঁদনী। তখনই লোকটা আবারো বলে ওঠে,

“কি হলো আমার কথা বুঝতে পারোনি? তোমার হাতের এই পালক টা খুলে ফেলে দাও। তারপরে তোমাকে আমি সবকিছু বলব।”

চাঁদনী কি করবে ভেবে পায়না। সে নিজের হাতে থাকা পালকটায় হাত বুলাতে থাকে। তখনই পালকটা কেমন জ্বলজ্বল করে ওঠে।

সাথে সাথে ওর সামনে থাকা ভ্যাম্পায়ার রুপি লোকটা কয়েক পা পিছিয়ে যায়। জোরে জোরে হাফাতে হাফাতে রাগি গলায় বলে,

“তোকে বললাম না ওটা খুলে দূরে ফেলে দিতে।”

ওর এমন কর্কশ কন্ঠে তুই তুই করে বলা কথাটা শুনে চাঁদনী এবার বুঝতে পারে যে, এটা শ্রাবণ নয়। অন্য কেউ। সে বুঝতে পারে এই পালকটার জন্যই ভ্যাম্পায়ারটা তার কোন ক্ষতি করতে পারছে না। সে এবার ভয়ে শুকনো ঢোক গেলে। পালকটাকে দুই হাতে আঁকড়ে ধরে। কোনোভাবেই সে নিজেই কাছ থেকে ছাড়বে না। সে যেনো নিজ ইচ্ছায় বিপদে পড়ার জন্য এখানে এসেছে। কিন্তু শ্রাবণ কেন আসছে না এখনো? সে তো কখন থেকে শ্রাবনকে স্মরণ করছে। তবে কি সে মিথ্যে বলেছিল? সে কি আর আসবে না তার কাছে? রাগ করে দূরে সরে গেছে।

চাঁদনী কে পালকটা আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্যাম্পায়ার টা যেন আরো বেশি রেগে যায়। সে গর্জন করে বলে ওঠে,

“কিরে কথা শুনতে পাচ্ছিস না? ওটা খুলে দূরে ফেলে দে। নইলে এখানেই শেষ করে ফেলব তোকে। পুরো গ্রাম কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে ফেলব। প্রতিটা মানুষের রক্ত চুষে মেরে ফেলবো। সবার ভালো চাস তো ওইটা খুলে ফেলে দে।”

ওর এমন গর্জনে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় সে। কয়েক পা পিছিয়ে যায়। চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে যায় তার। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে বাসা থেকে অনেকটাই দূরে চলে এসেছে। আশেপাশে কোন জনমানবের চিহ্ন টুকুও নেই। কোথাও কোন আলো দেখা যাচ্ছে না। একদম অন্ধকার। আজ কোন লাইট নিয়েও আসেনি সাথে করে। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। ভ্যাম্পায়ারের কথামত নিজের হাতে থাকা পালককা দূরে ফেলে দিবে! নাকি সেটা আঁকড়ে ধরে থাকবে এটা নিয়ে দোটানায় মধ্যে আছে সে।

ওকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এবার ভ্যাম্পায়ারটা ওর কাছে দুপা এগিয়ে আসে। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

“জানিস না আমি কতটা ভয়ংকর। আমার কথা শুনবে না তো? তাহলে দেখ তোর গ্রামটা কে আমি কিভাবে শেষ করি।”

কথাটি বলেই চোখ দিয়ে আগুন বের করতে নিলো সে। সাথে সাথে চাঁদনী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

“আপনি গ্রামের কারো কোন ক্ষতি করবেন না। আমি এটা খুলে ফেলছি। কারো কোন ক্ষতি করবেন না প্লিজ।”

ওর কথায় থেমে গেল ভ্যাম্পায়ারটা। তার মুখে ক্রু হাসি ফুটে উঠল। চাঁদনী কাঁদতে কাঁদতে নিজের হাতে থাকা পালকটা খুলে ফেললো। তারপর সেটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগল দূরে ফেলে দিবে কি দিবেনা। ওকে চুপ করে ওটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাশে থেকে ভ্যাম্পায়ারটা বলে উঠলো,

“কিরে ওঠার চেহারা দেখতে বলিনি, দূরে ছুঁড়ে ফেলে দে ওটা।”

চাঁদনী ভয় পেয়ে পালকটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,