ভয়ংকর সে পর্ব-১৪+১৫

0
335

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_১৪
#M_Sonali

“আজ তোর কী হয়েছে বলতো চাঁদনী বুড়ি। সেই সকালে ঘুম থেকে উঠছিস থেকে দেখছি, ঠিক ভাবে খাচ্ছিস না কোনো কথা বলছিস না। সারাক্ষণ মুখটা গোমড়া করে চুপচাপ বসে আছিস। বলছি জামাইয়ের কথা বড্ড মনে পড়ছে বুঝি তোর?”

জানালার ধারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল চাঁদনী। চারিদিকে সবেমাত্র বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। সেইসাথে চাঁদনীর মনের আকাশটায় অন্ধকার হয়ে আসছে। তখনই পাশে থেকে দাদির এই কথায় চমকে যায় সে। আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে তার দাদির দিকে তাকায়। এবার উনি আর একটু কাছে এগিয়ে আসেন। পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

“দেখ চাঁদনী বুড়ি আমি তোর কষ্ট বুঝতে পারছি। নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে তোর। আর জামাই এভাবে তোকে রেখে গিয়ে আর কোন খবর নিচ্ছে না। তোর কষ্ট লাগাটাই স্বাভাবিক। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তোদের মাঝে আসলে কি হয়েছে বলতো? জামাইয়ের কোন ঠিকানা জানিনা। ফোন নাম্বারটাও নেই যে একটু ফোন করে কথা বলবো। জিজ্ঞেস করবো কিছু।”

এতোটুকু বলতেই ওনাকে থামিয়ে দিয়ে চাঁদনী উঠে দাঁড়াল। জানালাটা লাগিয়ে দিয়ে আবারো তার পাশে এসে বসে বললো,

“ওসব নিয়ে চিন্তা করো না দাদী। ওনার সাথে আমার কিছু হয়নি। আমি সেজন্য মন খারাপ করে বসে নেই। ওনার সময় হলে উনি ঠিক আসবেন। আসলে আজকে কেন জানিনা কিছু ভালো লাগছেনা। আচ্ছা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম। আজকে কি আমাবস্যা?”

ওর কথার উত্তরে ওর দাদী রত্না বেগম একটু নড়েচড়ে বসল। নিজের ডান পা হালকা করে টিপতে টিপতে বলে উঠল,

“হ্যা রে আজ তো ভাদ্রমাসের ঘোর আমাবস্যা। তাইতো আমার পা দুটো কেমন ম্যাচম্যাচ করছে সকাল থেকে। জানিস তো প্রতি আমাবস্যার রাতেই আমার হাত পা ব্যথা করে।”

উনার কথার উত্তরে ভ্রু কুচকালো চাঁদনী। অবাক হয়ে বলল,

“আমাবস্যা রাতের সাথে তোমার শরীর ব্যথা হওয়ার কি সম্পর্ক দাদি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“সে তুই বুঝবি না। আসলে কি বলতো আমাবস্যার রাত টা সবাই ভয়ংকর রাত বলে জানে। এই রাতে যত খারাপ কাজ যত খারাপ জিনিসের চলাফেরা শুরু হয় বাইরে। তাইতো আমাবস্যার রাতে একা বাইরে বের হওয়া নিষেধ। কারণ এই সময় যত খারাপ জিনিস আছে সবকিছু বাইরে ঘুরে বেড়ায়। আর মানুষের ক্ষতি করে। তুই কিন্তু সকাল সকাল দরজা জানালা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে ঘুমাবি বুঝলি। ছোট বেলায় এই রাতটাকে নিয়ে কত গল্প শুনেছি।”

“আমাকে একটু বলো না দাদী। আমিও এই রাত সম্পর্কে জানতে চাই।”

“দেখ আমি আগেই বলেছি আমার হাত পা ম্যাচম্যাচ করছে। আমি এখন রুমে যাই। আর এসব গল্প আজ রাতে বলা ঠিক হবে না। অন্য কখনো সময় করে বলবো।”

কথাটি বলেই ওকে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যান রত্না বেগম। চাঁদনী একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেখানেই বসে থাকে। নিজের হাতে থাকা শ্রাবণের পালকটিতে হাত বুলায়। মনে মনে ওর কথা ভেবে অনেক কষ্ট লাগতে শুরু করে তার। বারবার মনে হয় শ্রাবণের কোনো বিপদ হবে নাতো?
,
,
,
রাত ১২ টা ২০ মিনিট,
পুরো গ্রাম ঘুমে বিভোর। চাঁদনী অনেকক্ষণ জেগে ছিল। সে অপেক্ষা করছিল শ্রাবনের জন্য। যদিও সে জানতো আজ শ্রাবণ আসবেনা। তবুও কেন জানি অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছিল। একটু আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তার। সাথে সাথে বুকের মাঝে কেঁপে উঠে ভয়ে। শ্রাবনের বলা কথা গুলো মনে পড়ে যায়। সে দ্রুত বিছানা থেকে উঠে বসে। যদি তার বাবা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। তাহলেতো বিপদ হতে পারে। তাই দ্রুত নিজের ঘরের দরজা খুলে বাইরে বের হয়। দেখে তার বাবা আর দাদিও বাইরে বেরিয়েছে। সবাই একে অপরের দিকে তাকায়।

“তোমরা দাঁড়াও আমি দেখছি বাইরে কে এসেছে।”

কথাটি বলেই রতন মিয়া এগিয়ে যেতে থাকে দরজার দিকে। তখনই দৌড়ে গিয়ে তার হাতটা ধরে ফেলে চাঁদনী। ভয়ে ভয়ে বলে,

“বাবা প্লিজ দরজা খুলো না। আজকে কোন ভাবেই দরজা খুলবে না। যে’ই দরজায় আসুক না কেন।”

ওর এমন কথায় ভ্রু কুচকায় রতন মিয়া। রত্না বেগম এর দিকে একবার তাকিয়ে আবার চাঁদনীর দিকে ফিরে তাকায়। গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,

“এটা কেমন কথা চাঁদনী? একজন বিপদে পড়েও তো আমাদের দরজায় কড়া নাড়তে পারে। আর দরজা খুলবো না কেন?”

“আমি যেটা বলছি সেটা শোনো বাবা। দয়া করে আজকে কোন ভাবেই দরজা খুলবে না তুমি।”

ওর কথায় বেশ বিরক্ত হন রতন মিয়া। তখনই আবারও দরজায় শব্দ হয়। রতন মিয়া এবার সামনে এগিয়ে না গিয়ে সেখান থেকে জিজ্ঞেস করে,

“বাইরে থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছে কে? কে আছে বাইরে কথা বলো।”

কিন্তু বাইরে থেকে কোনপ্রকার উত্তর আসে না। আবারও দরজার শব্দ হয়। এবার চাঁদনী শক্ত করে তার বাবার হাতটা জড়িয়ে ধরে বলে,

“প্লিজ বাবা আজকে আমাবস্যা রাত। এ রাতে অন্তত দরজা খুলো না। আমার মন বলছে দরজা খুললে অনেক বিপদ হবে আমাদের।”

ওর সাথে তাল মিলিয়ে পাশে থেকে রত্না বেগম বলে ওঠেন,

“হ্যাঁ রে রতন চাঁদনী ঠিকই বলছে। তুই দরজা খুলিস না বাবা। কে জানে বাইরে কি আছে। এমনিতেই তো এই এলাকায় নতুন নতুন দূর্ঘটনার শেষ নেই। কত মানুষ কিভাবে মারা গেল। আজকে রাতে দরজা না খোলাই ভালো হবে। চল আমরা যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি।”

কিন্তু রতন মিয়া উনাদের কথায় কোনরকম সায় দেন না। সে দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করেন,

“কি হলো বাইরে কে আছো কথা বলছো না কেন? কথা না বললে দরজা খুলবোনা। কে বারবার দরজা ধাক্কাচ্ছো”

এবার দরজাটা এমনভাবে শব্দ হতে শুরু করে যেনো দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে যাবে। এবার সবাই বেশ ভয় পেয়ে যায়। রতন মিয়া কয়েক পা পিছিয়ে এসে দাঁড়ায়। চাঁদনী তার হাতটা শক্ত করে ধরে থাকে। চাঁদনী এদিক ওদিক তাকিয়ে ওর বাবাকে বলে,

“বাবা এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে হবেনা। দরজার সামনে কিছু একটা দিয়ে আটকে দাও। আমার মন বলছে বাইরে খারাপ কিছু আছে। দরজা ভেঙে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”

ওর কথার উত্তরে রতন মিয়া কিছু বলেন না। দ্রুত পাশে থাকা শোকেস টা টেনে টেনে নিয়ে এসে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে দেন। উনাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে উনিও এবার বেশ ভয় পেয়েছে। যেহেতু এলাকায় অনেক বাজে বাজে ঘটনা ঘটে গেছে। তাই ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক।

সবাই একসাথে জড়োসড়ো হয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কানোর পর সবকিছু নিরব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এবার সবাই একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাফ ছেড়ে বাচে। তখন’ই বাইরে থেকে কেউ বলে ওঠে,

“চাঁদনী দরজা খোলো। আমি শ্রাবণ তোমাকে নিতে এসেছি।”

কথাটা শুনতেই বেশ চমকে ওঠে চাঁদনী। পাশে থাকা রতন মিয়া এবং রত্না বেগমেরও একই অবস্থা। সবাই একে অপরের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। তারপর রতন মিয়া সন্দেহের কন্ঠে বলে ওঠে,

“এত রাতে জামাই কেন আসবে তোকে নিতে? সে কি দিনের বেলা আসতে পারে না?”

চাঁদনী কোন উত্তর দেয় না। সে ভেবে পায় না এখন তার কি করা উচিত। দরজাটি খুলে দিবে নাকি লাগানো থাকবে। তবে তার যতটুকু জানা তা হলো শ্রাবনের তো আজ আসার কথা নয়।

ওদের কাছ থেকে কোনরকম উত্তর না পেয়ে বাইরে থাকা লোকটি আবারো বলে ওঠে,

“কী হলো চাঁদনী দরজা খুলছো না কেন? তাড়াতাড়ি দরজা খোলো আমি তোমাকে নিতে এসেছি। তোমাকে নিয়ে এখনই চলে যাব। এখানে বেশিক্ষণ দেরী করতে পারবো না। তাড়াতাড়ি দরজাটা খোলো আমি বিপদে পড়েছি।”

ওর বিপদে পড়ার কথাটা শুনেই রতন মিয়া দ্রুত সেখানে এগিয়ে যায়। শোকেজটা দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে দরজা খুলতে যাবে, তখন’ই চাঁদনী খেয়াল করে তার হাতে থাকা পালকটি জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আর তার হাতে বেশ জ্বালা করছে। মুহুর্তেই তার কোন একটা কথা মনে পড়ে যায়। সে দৌড়ে গিয়ে তার বাবাকে থামিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে,

“খবরদার বাবা দরজা খুলবে না। বাইরে উনি আসেনি। এসেছে অন্য কেউ। আমাদের মেরে ফেলার জন্য। এখন দরজা খুললে আমরা কেউ বাঁচতে পারব না।”

কথাটি বলেই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দরজার সামনে শোকেজ ও টেবিল এনে লাগিয়ে দেয় সে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_১৫
#M_Sonali

“এসব কি হচ্ছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। বাইরে আসলে কে দাঁড়িয়ে আছে? আর তোকে এমন ভাবে ডাকছে কেন চাঁদনী? জামাই না হলে আর কে হবে?”

কথাগুলো ভয় এবং বিরক্তি মিশ্রিত কন্ঠে বললেন রতন মিয়া। উনার কথায় চাঁদনী কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। সে সব সত্য কথা বলতেও পারবেনা আবার এখানে কিছু লুকালেও ঝামেলা হতে পারে। মনে মনে কিছুক্ষণ ভেবে নিলো সে। তার পর বলে উঠল,

“প্লিজ বাবা আমি তোমাকে সব কিছু খুলে বলবো। কিন্তু এখন দয়া করে এটা নিয়ে কোন কথা বলো না। শুধু আমি যেটা করছি সেটা করতে দাও। কোনভাবেই দরজাটা খোলা যাবে না। আজকে রাতে কেউ বাইরে বের হব না আমরা। বাইরে বিপদ ছাড়া আর কিছু নেই।”

ওর এমন কথায় বেশ বিরক্ত হলেন রতন মিয়া। কিন্তু আর কিছু বললেন না। মেয়ের কথা মেনে নিয়ে চুপচাপ সবাই ঘরের মধ্যেই থাকলেন। বেশ কিছুক্ষণ দরজায় টোকা পড়তে পড়তে এক সময় সবকিছু শান্ত হয়ে গেল। এবার যেন সকলের মাঝে প্রান ফিরে এল। সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

“আচ্ছা চাঁদনী বুড়ি সত্যি করে বলতো কি হচ্ছে এসব? বাইরে থেকে কে তোকে এভাবে জামাইয়ের মত করে ডাকলো? কিন্তু তুই দরজা খুলতে দিলিনা কেন? আমার যেনো সবকিছু কেমন গোলমেলে লাগছে। খুব সন্দেহ হচ্ছে তোর আর জামাইয়ের ওপর। সবকিছু খুলে বলতো সত্য সত্য!”

পাশ থেকে রত্না বেগম বলে উঠলেন কথাগুলো। ওনার কথা শুনে চাঁদনী একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দাঁড়ানো থেকে পাশে থাকা সোফার ওপর গিয়ে বসলো। তারপর দাদির দিকে তাকিয়ে বলল,

“দেখো দাদি এখন এসব কথা বলার সময় নয়। তোমরা আমাকে একটু সময় দাও। কথা দিচ্ছি তোমাদের কাছে সব সত্য কথা খুলে বলবো আমি। তবে এটা জেনে রেখো আমি যেটা করছি সেটা আমাদের সকলের ভালোর জন্যই করছি।”

এতোটুকু বলতেই হঠাৎ জানালায় জোরে জোরে শব্দ হতে লাগলো। এই যেন জানালা ভেঙে কিছু ঘরে ঢুকে পড়বে। সাথে সাথে ভয়ে কেঁপে উঠল সবাই। সবাই একসাথে জড়োসড়ো হয়ে গেল। চাঁদনী এসে ওর বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেললো। জানালা এত জোরে শব্দ হতে লাগলো যে এ যেন সেটা ভেঙে ভেতরে চলে আসবে। চাঁদনী এবার প্রচন্ড পরিমাণের ভয় পেতে লাগল। ভয়ে দরদর করে ঘামতে লাগলো সে। তার মত একই অবস্থা রতন মিয়া ও রত্না বেগমেরও।

সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে দরদর করে ঘামতে লাগলো। তখন’ই পুরো বাসার লাইট অফ হয়ে গেল। চারিদিকে অন্ধকার ঘুটঘুটে হয়ে গেল। কোন দিকে একটুখানি আলোর চিহ্নমাত্র নেই। এমন অবস্থায় কে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তিনজনে একসাথে হয়ে জড়োসড়ো হয়ে রইলো। চাঁদনী খেয়াল করল তার হাতটা ভীষণ জ্বালা করছে। সে বুঝতে পারলো তার আশেপাশে প্রচুর বিপদ লুকিয়ে রয়েছে। মনে মনে ভাবল এই বুঝি তাদের শেষ রাত। আজকেই হয়তো ভ্যাম্পায়ারগুলো মেরে ফেলবে তাদের। কথাগুলো ভেবে ভীষণ রকম কান্না আসতে শুরু করলো তার। তবুও সে নিজেকে সামলে নিলো। এখন দুর্বল হলে চলবে না। তাহলে হয়তো তার বাবা আর দাদী ও দুর্বল হয়ে পড়বে। সে নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল,

“বাবা দাদি তোমরা প্লিজ ভয় পেও না। শুধু শক্ত করে একে অপরের হাত ধরে রাখো। আর হ্যা তোমাদের হাতে থাকা পালকগুলো যেনো কিছুতেই হাত ছাড়া করো না।”

ওর কথার উত্তরে পাশ থেকে রত্না বেগম বলে উঠলো,

“তুই এখন পালক নিয়ে পড়ে আছিস। এদিকে আমার প্রান যায় যায়। সন্ধ্যা থেকে দেখছিলাম ওই পালকের জন্য হাতটা ভীষণ জ্বালা করছিল। তাই সেটা তো আমি কখন খুলে রেখেছি।”

ওনার এমন কথায় চমকে উঠল চাঁদনী। উত্তেজিত হয়ে বললো,

“এসব তুমি কি বলছো দাদি? ওইটা খুলে রাখার কারণেই চারিদিকে এত বিপদ ঘিরে ধরেছে। তাড়াতাড়ি বল ওটা তুমি কোথায় রেখেছো? তোমাকে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও কেন পালকটা খুলে রাখলে?”

“ঐ সাধারন একটা পালকের সাথে বিপদের কি সম্পর্ক? আর তাছাড়া ওটা আমার হাতে ভীষণ জ্বালা করছিল, তাই খুলে রেখেছি। কিন্তু তোর কথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“আমার কথা পরে বুঝবে দাদি। আগে বলো তুমি পালকটা রেখেছো কোথায়?”

“কোথায় আবার রাখবো, আমার ঘরে বিছানার বালিশের নিচে রেখেছিলাম।”

“আচ্ছা তোমরা এখানেই দাড়াও। কেউ কোথাও যাবে না। আমি আসছি।”

কথাটা বলে চাঁদনী আর দেরী করলো না। অন্ধকারেই হাতরাতে হাতরাতে দাদির ঘরে চলে গেল। আন্দাজে বিছানার কাছে গিয়ে বালিশটা তুলে তার নিচে হাত দিতেই দেখল পালকটা পড়ে আছে। সে দ্রুত সেটা নিয়ে আবারও সবকিছু ধরে ধরে বাইরে বেরিয়ে এল। বাবার নাম ধরে ডাকতেই তারা উত্তর দিল। সেখানে গিয়ে হাতে থাকা জিনিসটা অন্ধকারেই তাড়াতাড়ি দাদির হাতে বেঁধে দিল। সাথে সাথে তিন জনের হাতে থাকা পালকগুলো জ্বলজ্বল করে উঠলো। কিন্তু এবার আর কোনরকম জ্বালা হলো না। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল পালক গুলোর দিকে। তখন’ই জানালায় শব্দ হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। সবকিছু আগের মত স্বাভাবিক এবং শান্ত হয়ে গেল। সাথে সাথে ঘরের লাইট গুলোও জ্বলে উঠলো।

এবার যেনো চাঁদনী হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সে এবার বাবার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,

“আর কোন ভয় নেই। ইনশাআল্লাহ এবার সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। সব বিপদ কেটে গেছে।”

ওর কথায় রতন মিয়া এবং রত্না বেগম দুজনেই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে। রতন মিয়া এবার বলে উঠেন,

“এসব কি হচ্ছে চাঁদনী? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার এখন কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে। সত্যি করে বলতো এগুলোর পেছনে রহস্য কি?”

চাঁদনী একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তারপর ক্লান্ত গলায় বলে,

“আমি তোমাদের সবকিছুই বলবো বাবা। তবে এখন নয়। কালকে সকালে। আমার এখন ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। তোমরা যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আর কোনো বিপদ নেই। তবে হাত থেকে কিন্তু এইগুলো কোনমতে খুলবে না। আমিও ঘুমাতে যাই সকালে সব কিছু বলবো।”

ওর কথার উত্তরে কেউ আর কিছু বলেনা। কারন সবাই অনেক টায়ার্ড হয়ে পড়েছে। এবার যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। যদিও সবার মাঝেই ভয়ে টা এখনো কাজ করছে।
,
,
,
সকাল ৭:০৩ মিনিট,
রাত জাগার কারণে বিভরে ঘুমিয়ে আছে চাঁদনী। দরজা জানালা ভিতর থেকে লাগিয়ে দেওয়া। ঘুমের মাঝেই হঠাৎ চাঁদনীর মনে হতে লাগলো তার মুখের ঠিক সামনে কিছু একটা আছে। যে জিনিসটা লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যখন তখন হয়তো আক্রমণ করবে তার ওপর।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,