ভয়ংকর সে পর্ব-১৬+১৭

0
241

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_১৬
#M_Sonali

সকাল ৭:০৩ মিনিট,
রাত জাগার কারণে বিভরে ঘুমিয়ে আছে চাঁদনী। দরজা জানালা ভিতর থেকে লাগিয়ে দেওয়া। ঘুমের মাঝেই হঠাৎ চাঁদনীর মনে হতে লাগলো তার মুখের ঠিক সামনে কিছু একটা আছে। যে জিনিসটা লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যখন তখন হয়তো আক্রমণ করবে তার ওপর।

পাশের রুমে রতন মিয়া এবং রত্না বেগম বিভোরে ঘুমাচ্ছে। প্রতিদিন অনেক ভোরে উঠে পড়লেও গতরাতে এত ঝড় ঝাপটা যাওয়ার কারণে তারাও এখন পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠতে পারেনি। সবাই যে যার রুমে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

ভয়ে এবার চাঁদনীর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যেতে লাগলো। ভয়ে যেন শরীরের প্রতিটা পশম দাঁড়িয়ে গেলো। সে চোখ না খুলেও ভয়ে শিউরে উঠতে লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগল চোখ খুলতেই হয়তো এমন কিছু দেখবে, যা দেখে সে সহ্য করতে পারবেনা। জিনিসটা হয়তো চোখ খোলার সাথে সাথে তার ওপর আক্রমণ করে বসবে। কথাটা ভাবতে ভাবতেই সাহস করে চোখ মেলে তাকাল সে। আর তাকাতেই সামনে যা দেখলো তা দেখে চোখ বড় বড় করে জোরে চিৎকার দেওয়ার জন্য মুখ খুলল সে।

তখনই সামনে থাকা জিনিসটা ওর দু গালে হাত রেখে ঠোট দুটো নিজের ঠোটে আঁকড়ে নিলো। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। চাঁদনী যখন শান্ত হয়ে গেল। তখন তাকে ছেড়ে দিলে সে। এবার চাঁদনী জোরে জোরে হাফাতে লাগলো। শ্রাবণকে নিজের সামনে বসে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রইল। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল দরজা-জানালা সব কিছু ঠিক আগের মতোই লাগানো আছে। তাহলে শ্রাবণ ভিতরে এলো কিভাবে? কথাটা ভেবে ভীষণ রকম ভয় হতে লাগলো তাঁর। কিন্তু সে চিৎকার করলো না। কারণ শ্রাবণ তার সামনে মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে বসে আছে।

চাঁদনী হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল,

“আপনি, আপনি এখানে কিভাবে এলেন? দরজা-জানালা সব তো লাগানো। আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি?”

কথাটি বলতেই শ্রাবণ দুষ্টুমি করে ওর হাতে একটি চিমটি কাটল। সাথে সাথে আউচ করে উঠলো সে। হাতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

“আমি তো সত্যিই জেগে আছি। কিন্তু আপনি ভিতরে এলেন কিভাবে? দরজা-জানালা সব তো ভিতর থেকে লাগানো।”

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ লাফ দিয়ে উঠে ওর পাশে বসলো। ওর দিকে কিছুটা ঝুঁকে ওর মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

“আমার বউটাকে এত বেশি মিস করছিলাম যে এক মিনিটও দেরি সইলো না। তাই দরজা জানালা বন্ধ থাকা অবস্থাতেই ভিতরে ঢুকে পড়েছি।”

ওর কথার উত্তরে শোয়া থেকে উঠে বসলো চাঁদনী। শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“কিন্তু দরজা-জানালা বন্ধ থাকা অবস্থায় আপনি কিভাবে ভেতরে এলেন শ্রাবণ?”

“ও আমার জান পাখি। তুমি কি ভুলে গেছো তোমার স্বামী কোন সাধারন মানুষ নয়। সে একজন ভ্যাম্পায়ার। তাহলে এতো কেন ভয় পাচ্ছো? আমি যেখানে খুশি সেখানে পৌঁছে যেতে পারি। নিজের ইচ্ছায় বুঝেছ? এখন এসব কথা না বলে আমাকে আদর করো।”

ওর কথায় এতক্ষণে যেন সবকিছু মনে পড়ল চাঁদনীর। গত রাতের কথা মনে পড়ে ভয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল তার। মুখটা মুহূর্তেই শুকিয়ে গেল। ওর মনের কথা বুঝতে পেরে শ্রাবন মৃদু হাসলো। ওর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,

“সত্যিই তোমাকে পেয়ে আমি অনেক খুশি চাঁদপাখি। তুমি যেমন বুদ্ধিমতী তেমনি সাহসী। গতরাতে তুমি যদি নিজের বুদ্ধি এবং সাহস দিয়ে সবকিছু মোকাবেলা না করতে, তাহলে হয়তো অনেক বড় বিপদ হতে পারত।”

ওর কথার উত্তরে চাঁদনী ওর দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকাল। তারপর অভিমানি গলায় বললো,

“কিন্তু আপনি গতকাল কোথায় ছিলেন শ্রাবণ? আমাদের এত বিপদ দেখেও কেন এলেন না?আর ওই লোকটা কে ছিলো যে আপনার কণ্ঠস্বরে আমাদেরকে বারবার দরজা খোলার জন্য বলছিল?

ওর কথার উত্তরে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শ্রাবণ। তারপর ওর হাতটা ধরে বলল,

“সবকিছুই বলবো তোমায়। তোমার কাছে কোন কিছুই লুকাব না। তবে এই মূহূর্তটাকে আমি নষ্ট করতে চাই না। তুমি কি এই মুহুর্তটা আমার নামে করে দিবে? শুধু তোমাকে ভালোবাসার জন্য?”

ওর কথায় বেশ লজ্জা পেল চাঁদনী। মাথাটা নিচু করে ফেলল সে। মুহূর্তে গাল দুটো যেন টকটকে লাল টমেটোর মত হয়ে গেল। লজ্জায় আর শ্রাবণের মুখের দিকে তাকাতে পারলো না সে। সেটা বুঝতে পেরে শ্রাবণ মৃদু হাসলো। ওর দু গাল টিপে দিয়ে আদুরে গলায় বলল,

“মানুষ যে এতটা কিউট হয় সেটা তোমাকে না দেখলে জানতাম না চাঁদ পাখি। যাও এত লজ্জা পেতে হবে না। এখনকার মত ছেড়ে দিলাম। কারণ তোমার কাছে অনেক কিছুই খোলাসা করে বলার আছে। এখন চলো রুম থেকে বের হওয়া যাক।”

ওর কথায় চাঁদনী এবার ওর দিকে বড় বড় চোখে তাঁকালো। তারপর উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

“কি বলছেন আপনি? এখন আমার সাথে বাইরে বের হবেন কি করে? বাবা আর দাদী দেখলে কি ভাববে? তারা তো একের পর এক প্রশ্ন করবে। আপনি কখন এলেন কিভাবে এলেন। আমি কি উত্তর দিব তাদের? আমি কি তাদের বলে দিব আপনি একজন ভ্যাম্পায়ার? আর তাছাড়া এমনিতেই তো গত রাতে তাদের মনে নানা রকম প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আমি সেটাই ভেবে পাচ্ছি না তাদের কিভাবে সামলাবো।”

ওর কথার কোন উত্তর দিলেনা শ্রাবণ। উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে নিজের হাতটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“আমার হাতটা ধরো। আর এসো আমার সাথে।”

ওর এমন কথায় ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো চাঁদনী। কিন্তু উঠলো না। শেষে শ্রাবণ বাধ্য হয়ে ওর হাতটা টেনে ধরে ওকে দাড় করালো। তারপর ওকে টানতে টানতে নিয়ে দরজা খুলে বাইরে বের হল। বাইরে বের হতেই দেখল ওর দাদী এবং বাবা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারাও এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।

ওদের দুজনকে দেখে বেশ অবাক হলেন রতন মিয়া এবং রত্না বেগম। রতন মিয়া কাছে এগিয়ে এসে বললেন,

“আরে জামাই বাবা তুমি কখন এসেছ?”

উনার কথার উত্তরে শ্রাবণ মুচকি হাসল। চাঁদনীর হাত ছেড়ে দিয়ে কাছে এগিয়ে এসে বলল,

“আমিতো রাতে এসেছি বাবা? আপনার মেয়ে দরজা খুলে দিয়েছিল। আপনারা ঘুমিয়েছেন বলে আমি আর আপনাদের ডাকতে দেইনি।”

“একটু খবর দিয়ে আসতে পারোনি বাবা! দেখোতো কত বেলা হয়ে গেলো অথচ এখনো কিছুই করা হলো না। বুঝলাম না আজকে এত বেলা হল কিভাবে ঘুম থেকে উঠতে। আচ্ছা তুমি থাকো আমি এক্ষুনি বাজারে গিয়ে বাজার করে আনছি। চাঁদনীমা দেখিস জামাই বাবার যেন কোন রকম সমস্যা না হয়।”

কথাগুলো বলেই ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন রতন মিয়া। উনি যেতেই রত্না বেগম কাছে এগিয়ে এলো। একটু রাগী সুরে বলল,

“এই যে নাতজামাই তোমার উপর কিন্তু বড্ড রেগে আছে আমি। বলছি আমার নাতনিটাকে সেই যে সেদিন রাত্রে রেখে দিয়ে চলে গেলে, আর একটি বার খোঁজ নিতে এলে না। তুমি জানো আমার নাতনি তোমাকে কত মিস করেছে। সারাক্ষণ মনমরা হয়ে বসে থাকতো। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করতো না।”

উনার কথায় মৃদু হেসে চাঁদনীর দিকে তাকালো শ্রাবণ। তারপর আবারও ওনার দিকে তাকিয়ে বলল,

” চিন্তা করবেন না দাদী। এখন থেকে আপনার নাতনি এর সকল দায়িত্ব আমার। তাকে খাইয়ে খাইয়ে কিভাবে মোটা বানাতে হয় সে দায়িত্ব আমি পালন করবো। তাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।”

“হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ সেটা করলেই ভালো। আচ্ছা তোমরা ঘরে যাও আমি তোমাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করছি।”

কথাটি বলেই সেখান থেকে চলে গেলেন রত্না বেগম। এদিকে চাঁদনী যেন অবাক এর অপর অবাক হচ্ছে। সে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না এসব কি হচ্ছে? গত রাতের কথা কি সব ভুলে গেছে তার দাদী এবং বাবা? তারা কিভাবে এত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে?

ওকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণ মৃদু হাসে। ওর হাত ধরে নিয়ে আবারো রুমে প্রবেশ করে। ওকে নিয়ে খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে বলে,

“আমি জানি তুমি এখন কি ভাবছো। এত কিছু ভেবে নিজের মাথা খারাপ করো না। তোমার বাবা এবং দাদির গত রাতের কথা কিছুই মনে নেই। তারা কোন কিছুই মনে করতে পারবে না। তাদের স্মৃতি থেকে সব মুছে দিয়েছি আমি যাদু করে। তাই তাদের কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না তোমাকে।”

“সবই বুঝলাম শ্রাবণ। কিন্তু একটি কথা বুঝতে পারছি না। আপনি তো আমার কাছে বলেছিলেন আপনি দিনের বেলা কোথাও বের হতে পারেন না। সূর্যের আলোতে আপনার সমস্যা। তাহলে এখানে এলেন কিভাবে? চারিদিকে তো সূর্য উঠে পড়েছে! আপনি বাইরে বের হবেন কিভাবে? আর তাছাড়া দাদি এবং বাবা যেভাবে আপনার খাবার আয়োজন করতে গেল। তাতে তারা আজ আপনাকে খাবার খাইয়েই ছাড়বে। কিন্তু আপ,,,!”

এতোটুকু বলতেই ওকে থামিয়ে দিল শ্রাবণ। তারপর ওর হাতটি ধরে বললো,

“হয়েছে বাবা তোমার এত চিন্তা করতে হবে না। সবকিছুই আমি সামলে নিব। এত ভেবে নিজের মাথা নষ্ট করো না চাঁদপাখি। আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আর তাছাড়া এখন আমি অনেক শক্তির অধিকারী। সূর্যের আলোতে আমার আর কোন ভয় নেই। যতক্ষন পর্যন্ত সূর্যের আলো ডাইরেক্ট আমার বুক স্পর্শ না করবে, ততক্ষণ আমার কোন ক্ষতি হবে না। আর আমি যে জামাটা পড়ে আছি, এটার কারণে সূর্যের আলো আমার বুক কখনোই স্পর্শ করতে পারবে না। তাই আমি এখন একদম সেভ বুঝতে পেরেছ।”

ওর এমন কথায় এবার যেন আরও বেশী বিশ্মিত হলো চাঁদনী। সে বড় বড় চোখে ওর দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“কিন্তু আপনি শক্তি পেলেন কিভাবে শ্রাবণ? আপনিতো বলেছিলেন শক্তি পেতে হলে আমার রক্ত চুষে আমাকে মারতে হবে আপনার। তবেই আপনি আপনার পূর্ণ শক্তি ফিরে পাবেন। কিন্তু আমি তো এখনো আপনার সামনে জীবিত বসে আছি। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব হলো?”

কথাগুলো বলেই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। মুহূর্তেই শ্রাবনের মুখটা মেঘে ঢেকে গেলো। সে মাথা নিচু করে কিছু একটা ভাবতে লাগলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_১৭
#M_Sonali

পুরো ডাইনিং টেবিল সাজানোর নানা পদের রান্না করা খাবার দিয়ে। তার সামনে বড় বড় চোখ করে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ। পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদনী মিটিমিটি হাসছে তার অবস্থা দেখে। কারণ সে ভালো করেই জানে শ্রাবন এগুলোর কিছুই খেতে পারবে না। ওকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাশ থেকে রত্না বেগম বলে উঠলেন,

“কি হলো জামাই এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? রান্না কি পছন্দ হয়নি? বস বস তোমার জন্যই তো এত আয়োজন।”

ওনার কথায় কি উত্তর দিবে তা যেন ভেবে পাচ্ছেনা শ্রাবণ। সে এবার করুন দৃষ্টিতে চাঁদনীর দিকে তাকাল। কিন্তু সে মিটিমিটি হেসে চলেছে তখন থেকেই। এবার বেশ রাগ হল তার। সে একটি চেয়ার টেনে সেটাতে বসে পড়ল। রত্না বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলল,

“দাদি খাবার গুলো দেখে লোভ হচ্ছিল অনেক। তাই এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের মনকে সান্তনা দিয়ে বলছিলাম যে এগুলো সব আমার জন্যই। এখন দেরি না করে তাড়াতাড়ি আমার প্লেটে সব কিছু দিন তো, খাওয়াটা শুরু করি। ওর এমন কথা এবং কান্ডে চাঁদনীর চোখ যেন কপালে উঠে গেল। সে বড় বড় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বিশ্মিত গলায় বলল,

“কি বলছেন কি আপনি? আপনি সত্যিই এসব খাবেন?”

ওর এমন প্রশ্নে রত্না বেগম অবাক হয়ে ঝাঁঝালো গলায় পাশ থেকে বলে উঠলো,

“এটা কেমন প্রশ্ন করছিস রে চাঁদনী বুড়ি? সবকিছু তো ওর জন্যই রান্না করা হয়েছে। তাহলে এসব ও খাবে না তো কে খাবে? আর এমন করে বলছিস যেন জামাই এসব কিছুই খায় না?”

ওনার প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল চাঁদনী। কি বলবে ভেবে পায়না সে। এদিক ওদিক তাকিয়ে উসখুস করতে লাগল। ওর অবস্থা দেখে শ্রাবন মিটিমিটি হেসে বলল,

“আসলে হয়েছে কি জানেন তো দাদি? আপনার নাতনি না আমার খাওয়া একদমই সহ্য করতে পারে না। বাসায় থাকতে তো সারাক্ষণ আমার খাবার নিজেই চুরি করে খেত। আমাকে ঠিকমতো খেতে দিত না। তাইতো এত মোটা হয়ে গেছে দেখছেন না? কিন্তু আজকে ওকে দিব না। সব আমি একাই খাবো হুমম।”

“হ্যা জামাই হ্যা, তুমি বস আমি তোমারে খাবার বেরে দিতাছি।”

কথাগুলো বলে শ্রাবণের সামনে একটি প্লেট দিয়ে তাতে একে একে সব খাবার তুলে দিলেন রত্না বেগম। প্লেটটা এখন মাছ-মাংসে একদম ভরপুর হয়ে আছে। সেটা নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো শ্রাবণ। চাঁদনী শুধু চোখ বড় বড় করে ওর অবস্থা দেখছে। সে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কারণ সে তো জানে ভ্যাম্পায়ার শুধু রক্ত ছাড়া অন্য কিছুই খেতে পারে না। শ্রাবনও সেরকমই ছিলো। তাহলে আজকে সে খাবার খাওয়ার সাহস করছে কিভাবে?

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চেয়ে দেখল শ্রাবণ অলরেডি খাওয়া শুরু করেছে। একদম মানুষের মতো করে সব খাবারগুলো চেটেপুটে খাচ্ছে সে। দেখে মনে হচ্ছে যেন অনেক মজা করে খাবারগুলো খাচ্ছে। চাঁদনী এবার ধপ করে পাশে একটি চেয়ার টেনে সেটাতে বসে পড়ল। হা করে তাকিয়ে রইল ওর খাওয়ার দিকে। সে যেন অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে ওর অবস্থা দেখে। ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশ থেকে রত্না বেগম বলে উঠলেন,

“কিরে চাঁদনী বুড়ি এভাবে জামাইয়ের খাবারের দিকে নজর না দিয়ে নিজে একটি প্লেটে ভাত নিয়ে খেতে পারিস তো। তোকে তো কেউ ধরে রাখে নি। যে ভাবে তাকিয়ে আছিস বেচারার পেট খারাপ হবে তো ওই ভাবে তাকিয়ে থাকলে।”

চাঁদনী কোন উত্তর দিল না। একই ভাবে তাকিয়ে থেকে ওর খাওয়া দেখতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে উঠে পরল শ্রাবণ। কিন্তু চাঁদনী কিছুই খেলো না। সে ওর পিছে পিছে উঠে গেল। দুজন মিলে রুমে চলে গেল। রত্না বেগম অবশ্য অনেক বার ওকে খেতে বলেছেন। কিন্তু ও বলেছে পরে খাবে। রুমে গিয়ে চাঁদনী দরজা লাগিয়ে শ্রাবণের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মুখের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিস্মিত গলায় বলল,

“সত্যি করে বলেন তো আপনি কে? আপনি কি সত্যিই সেই ভাম্পায়ার শ্রাবণ! নাকি অন্য কেউ? আমার যেন কেমন ডাউট হচ্ছে আপনাকে!”

ওর কথার উত্তরে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শ্রাবন। তারপর বিছানার উপর বসে ওর দিকে তাকিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

“আমার পাশে এসে বসো চাঁদপাখি।”

চাঁদনী তার হাতটা ধরল না। বরং দু পা পিছিয়ে গিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করল,

“আমাকে সবকিছু সত্যি করে বলুন। আমার আপনাকে সন্দেহ হচ্ছে। কেন যেন বারবার মনে হচ্ছে আপনার মধ্যে অনেক বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু সেটা কিভাবে?”

ওর কথার উত্তরে এবার বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো শ্রাবণ। তারপর গুটি গুটি পায়ে হেঁটে জানালার কাছে চলে গেল। জানালার গ্রিল টা হাত দিয়ে ধরে বাইরের দিকে দৃষ্টি রেখে শান্ত গলায় বলে উঠল,

“তা তুমি ঠিক ধরেছ চাঁদ। আমার মাঝে অনেক বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ এখন আমি আগের চাইতেও হাজার গুন বেশী শক্তিশালী একজন ভ্যাম্পায়ার। যার মাঝে মানুষ এবং ভ্যাম্পায়ারের দুরকম শক্তিই রয়েছে। তাই মানুষের মতো খাবার খাওয়াও আমার জন্য কোনো ব্যাপার নয়।”

“কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব হলো? আপনার তো কোনো শক্তি পাওয়ার কথা নয়। আপনি তো আমাকে মারেননি। তাহলে আপনি এতো শক্তি কোথায় পেলেন? আমাকে সব কিছু খুলে বলুন শ্রাবণ। আমার আর এই গোলকধাঁধায় থাকতে ভালো লাগছেনা।”

“বলেছি তো তোমাকে আমি সবই বলব। কিন্তু তার আগে আমাকে একটু এলাকাটা ঘুরে দেখাবে চলো। এর আগে আমি কখনও দিনের বেলা পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখি নি। আজ তোমার সাথে পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখতে চাই। নিয়ে যাবে না আমায়?”

চাঁদনী কোন প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি একটু বসুন আমি খেয়ে রেডি হয়ে আসছি।”

কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে। তবে তার মনটা অনেক খারাপ সেটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সে বেরিয়ে যেতেই শ্রাবণ একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মনে মনে বললো,

“সত্যিটা তুমি জানতে পারলে হয়তো আমাকে ভুল বুঝবে চাঁদ পাখি। কিন্তু এছাড়া যে আমার আর কোনো উপায় ছিল না। সকলের ভালোর জন্যই এত বড় পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল আমায়। কিন্তু এ কথাটা আমি এত সহজে তোমার কাছে বলতে চাই না। আমি চাই তোমার সাথে কিছু সুন্দর সময় কাটাতে।”

গ্রামের রাস্তা ধরে হাত ধরে হেটে যাচ্ছে চাঁদনী এবং শ্রাবণ। দুজনের মুখে মুচকি হাঁসি। কিছুক্ষণ পরপর গল্প করছে আর রাস্তা ধরে সামনে এগিয়ে চলেছে। আশেপাশের মানুষগুলো তাদের দেখে ফিসফিস করে একে অপরের সাথে কথা বলছে। চাঁদনীর ছোটবেলার বান্ধবীদের সাথে দেখা হয়েছে ইতিমধ্যে। তারা শ্রাবনকে দেখে একপ্রকার হিংসার দৃষ্টিতে তাকিয়েছে চাঁদনীর দিকে। যেটা বুঝতে পেরে মনে মনে ভীষণ খুশি হয়েছে চাঁদনী।

প্রায় একঘন্টা হলো এভাবে হাটতে হাটতে বাসা থেকে অনেক দূরে চলে এসেছে তারা। জায়গাটা বেশ জঙ্গলের মতো। সময় যেনো কখন পেড়িয়ে গেছে বুঝে উঠতে পারেনি তারা। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেছে অনেক আগেই।

বেশ কিছুদূর এগিয়ে যেতেই জঙ্গলের মধ্যে বেশ কয়েকজন এর কথা শুনতে পেলো চাঁদনী। সে দ্রুত শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

“আমরা অনেক দূরে চলে এসেছি শ্রাবণ। এখন আমাদের বাসায় ফেরা উচিত। চলুন তাড়াতাড়ি বাসায় যাই। এখানে থাকা ঠিক হবে না।”

ওর এমন কথায় ওর দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকায় শ্রাবন। গম্ভির গলায় জিজ্ঞেস করে,

“কেন এখানে কি হয়েছে? আমার সাথে থাকতে তোমার কিসের ভয় চাঁদপাখি?”

“না কিছুনা, কোন ভয় নাই। কিন্তু আমরা এখন বাসায় ফিরব। চলুন আমার সাথে।”

কথাটি বলেই শ্রাবনের হাত ধরে পিছনদিকে হাঁটার জন্য উদ্যত হয় চাঁদনী। তখনই জঙ্গলের মধ্য থেকে কয়েকজন নেশাখোর লোক বাইরে বেরিয়ে আসে। ওদের উদ্যেশ্য করে বলে,

“কই যাও সোনামনি। শুধু একজনকে নিয়ে থাকলে চলবে? আমাদের কাছেও একটু আসো।”

কথাগুলো কানে যেতেই রক্তচক্ষুতে ওদের দিকে ফিরে তাকায় শ্রাবণ। মুহূর্তেই যেন হাতের মুঠো শক্ত করে চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করে তার। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চাঁদনী সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তার কাছে হাতজোড় করে বলে,

“প্লিজ শ্রাবণ এখানে আর দাঁড়াবেন না। আমার সাথে বাসায় চলুন। এখানে থাকা ঠিক হবে না। আমি কোন রকম ঝামেলা চাইনা।”

কথাটি বলেই ওর হাত ধরে আবারও সামনে এগিয়ে যেতে চায় সে। তখনই ঐ লোকগুলো এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়। নেশা ভরা গলায় ঢুলতে ঢুলতে বলে,

“কেন মামনি এত তাড়া কিসের তোমার। আমাদের কেও তো একটু সময় দাও। শুধু সুন্দর ছেলেদের পিছনে ঘুরলে হবে? আমরা অসুন্দর বলে কি আমাদের সাথে থাকা যায় না?”

কথাটি বলেই চাঁদনীর হাত ধরার জন্য হাত এগিয়ে দেয় একজন। সাথে সাথে লোকটির হাত ধরে ফেলে শ্রাবণ। অগ্নী দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। মুহূর্তেই ওর চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে যায়। চোখের মনি লাল বর্ণ ধারণ করে। এমন ভয়ঙ্কর রূপ দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় লোকগুলো। কিন্তু তারা ভাবে তারা নেশার কারণে ভুল দেখছে। তাই চোখ ডলে নিয়ে বলে,

” আমি যা দেখছি তোরাও কি তাই দেখছিস? ওর চোখ কি আসলেই লাল হয়ে গেছে?”

ওর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ পায় না বাকিরা। মুহূর্তেই শ্রাবণ নিজের ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করে। কিছুক্ষণের মাঝেই একে একে সকলের গলায় নিজের বিষাক্ত দাঁত বসিয়ে দিয়ে রক্ত চুষে মেরে ফেলে। ঘটনার আকস্মিকতায় চাঁদনী যেন পাথর হয়ে যায়। তার সারা শরীর থর থর করে কাঁপতে শুরু করে। এমন নৃশংস ঘটনা সে আগে কখনো দেখেনি। এত ভয়ানক দৃষ্ট সহ্য করতে না পেরে এক সময় জ্ঞান হারিয়েছে ঢলে পড়ে সে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,