মেঘের ওপারে পর্ব-১০

0
289

#মেঘের_ওপারে
#পর্ব:১০
#Devja_Ni

ভার্সিটি থেকে বাসায় গিয়ে অদ্রি নিঃশব্দে সারা বাড়ি তার বড় আম্মুকে খুঁজতে লাগে।ওনাকে জানাবে সে খুব দ্রুত চিকিৎসা করবে।সে বাঁচবে।মরবে না। অদ্রি খুব খুশি।আজ অনেকদিন পর শ্রেয়ান তার সাথে কথা বলেছে!তার মনে হচ্ছে শ্রেয়ান পাল্টায় নি।যদি পাল্টাতো তাহলে আজ কথা বলতো না।আর যদি ধরেও নেয় শ্রেয়ান পাল্টে গেছে,তাহলেও তার মনে হচ্ছে শ্রেয়ান আবার আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। যদিও অদ্রি ঠিক করে রেখেছে এত সহজে তার সাথে কথা বলবে না। ভার্সিটির প্রথম দিনের ঘটনাটা এখনো ভুলেনি সে।

অদ্রি সারা বাড়ি খুঁজে ফেলে। কিন্তু তার বড় আম্মুকে পায় না।এরপর নিজের উপরই নিজের রাগ হয়।সে কেন বড় আম্মুকে খুঁজছে?তার তো আয়ানকে খোঁজা দরকার। হ্যাঁ!সে আয়ানের কাছেই যাবে। কিন্তু আয়ান তো এখন অফিসে!এখন কিভাবে বলবে সে?ফোন দিবে?নাহ্!দিবে না।যদি ব্যস্ত থাকে!

হঠাৎ আয়ানের রুম থেকে কথা বলার আওয়াজ শুনে অদ্রি।ভয় পেয়ে যায়। আয়ানের রুমে এখন কে আছে?কে কথা বলছে?ভূত টুত না তো!

অদ্রি ভয়ে সিটিয়ে যায়। নিঃশব্দে পা টিপে টিপে আয়ানের রুমে উঁকি দেয়।একি!আয়ান তো নিজের রুমেই আছে!তার মানে আজ অফিস যায় নি।তবে সাথে আরেকজন আছে।সে হলো শ্রেয়া। অদ্রি না চাইতেও কান পেতে শোনার চেষ্টা করে।সব স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।আয়ান আর শ্রেয়া কথা বলছে। তাদের কথার ধরনটা ঠিক এমন,,,,,

— আয়ান তুমি তো আগে এমন ছিলে না!

— এমন ছিলাম না তো কেমন ছিলাম?

— তুমি আগে কেয়ারিং ছিলে।আমাকে নিয়ে কত জায়গায় ঘুরতে যেতে।আমাকে সময় দিতে।আর এখন আমাকে একটু দেওয়ার মতো টাইমও তোমার কাছে নেই।

— দেখো শ্রেয়া! তোমার যদি টাইম নিয়ে সমস্যা থাকতো তাহলে মানতাম। কিন্তু তোমার আসল সমস্যা তো অদ্রিকে নিয়ে।

— আমি কি বলেছি অদ্রিকে নিয়ে আমার প্রবলেম?

— বলো নি! কিন্তু তোমার কথার ধরনে সেটা প্রকাশ পায়।

— তুমি আমাকে এটা বলতে পারলে আয়ান!অদ্রিকে আমি নিজের বোনের মতো ভালোবাসি।

— অদ্রিকে বিশ্বাস কর?

— অবশ্যই করি।

— তাহলে কাল রাতে কেন বললে যে অদ্রির অসুস্থতা ওর অভিনয় হতে পারে!এত যখন বিশ্বাস কর তাহলে এই কথা কিভাবে বলতে পারো?

— তুমি ভুল করছো।আমি শুধু বলেছি অদ্রি একটু বাড়াবাড়ি করছে,,,,,,,

— মানেটা তো একই দাঁড়াল। তুমি তো এমন ছিলে না,শ্রেয়া!কি হয়েছে তোমার!

শ্রেয়া চুপ করে আছে।তার চোখ পানিতে টলমল করছে। আয়ানের হাতটা টেনে ধরে বলে,আমি শুধু তোমার কাছে তোমার সময় চাই।আর কিছু চাই না। শুধু ওটুকুই দিও।

শ্রেয়ার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।
আয়ান গিয়ে শ্রেয়ার চোখের পানি মুছে দেয়।

হাতগুলো নিজের হাতের ভাজে নিজে বলে,আমার কাছে তোমার জন্য সময় কখনোই কোনো ব্যাপার না। কিন্তু অদ্রিকে নিয়ে কিছু বলো না।প্লিজ।আমি যত ব্যস্তই থাকি না কেন তোমাকে টাইম দেব।

— সত্যি বলছ!

— হুম।

— তাহলে চল না কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি।

— কোথায় যাবে?

— কক্সবাজার!

— এখন! আচ্ছা।আমি অদ্রির সাথে কথা বলব।

— হঠাৎ অদ্রির কথা এখানে কেন আসছে?

— অদ্রির টাইম আছে কিনা জানতে হবে না!

— অদ্রির টাইম দিয়ে কি হবে?এক মিনিট! তুমি কি অদ্রিকেও আমাদের সাথে নিয়ে যেতে চাইছো?

— হ্যাঁ!অদ্রি কি একা থাকবে নাকি?

— সেটা কি আমাদের দেখার বিষয়!আমরা কি একটু একা টাইম স্পেন্ড করতে পারবো না!

— শ্রেয়া ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা কর। অদ্রি কোনো সুস্থ মানুষ নয়।ও অসুস্থ।ওর মাথায় প্রবলেম আছে।ওকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া আম্মুও নেই।নানাজি অসুস্থ।ওনাকে দেখতে গিয়েছে।এতো বড় বাড়িতে ও একা কিভাবে থাকবে!ওতো নিজের ওষুধগুলোও নিজে নিয়ে খেতে পারে না।

— আয়ান অদ্রি অসুস্থ নয়।জাস্ট ওর মাথায় একটু প্রবলেম। কিন্তু এটা তো বড় কোনো সমস্যা নয়।ওকে শিখিয়ে দিলে ও ঠিক পারবে।আর ওর যদি একা থাকতে সমস্যা হয় তবে তোমাদের কাজের মেয়ে সুহাকে ওর সাথে থাকতে বলো।

আয়ান দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বিছানায় বসে।বলে,তোমার প্রবলেম,,,,

শ্রেয়া দৌড়ে গিয়ে আয়ানের পাশে বসে।
— প্লিজ রাজি হয়ে যাও না! কতদিন দূরে কোথাও যাই না।

— পারবো না।

— বুঝেছি। আমাদের সম্পর্কটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তুমি বদলে গেছো আয়ান।

শ্রেয়া চোখের পানি মুছতে মুছতে দরজা দিয়ে বের হতেই অদ্রিকে চোখে পড়ে। শ্রেয়া ভাঙ্গা গলায় বলে, আমি খুব শীঘ্রই আমেরিকা ফিরে যাব আয়ান!

আয়ান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।
— এসব কি বলছ তুমি শ্রেয়া?

— ঠিকই বলছি।

আয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।বলে,ঠিক আছে। তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হবে। আমরা আগামী সপ্তাহে যাব।

— না!এই সপ্তাহে। আগামীকাল!

আয়ান মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।বলে, ঠিক আছে।

অদ্রির আর কোনো কিছু শোনার মতো অবস্থায় নেই। দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়।তার জীবনটা কত অদ্ভুত! কিছু না করতেই কতগুলো সুন্দর সম্পর্ক তার জন্য ভেঙ্গে যায়।
তার জন্য আয়ান আর শ্রেয়ার সম্পর্কটা কত খারাপ অবস্থা ধারন করেছে।আগে কত মিল ছিল তাদের মধ্যে।আর এখন! পরোক্ষভাবে হলেও এটার সাথে তো সেই দায়ী।

অদ্রি চোখের পানি মুছে ফেলে।
অদ্রির মাথায় সেসব কথার চেয়েও একটা একটু বেশিই ঘুরছে।সেটা হলো আয়ান কি বললো এটা !তার মাথায় প্রবলেম আছে? কিন্তু কি প্রবলেম?কই সেতো কোনো প্রবলেম অনুভব করে না।হয়ত যার সমস্যা সে বোঝে না।তাই সেও বুঝে না।
তার মাথায় প্রবলেম আছে বলেই হয়তো শ্রেয়ান তাকে পছন্দ করে না।আর শ্রেয়া যেহেতু জানে শ্রেয়ানও হয়ত জেনেছে।এটাই হবে!মনকে স্থির করে নেয় অদ্রি।আজকে সকালের ঘটনায় ভেবেছিল শ্রেয়ান আবার আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নাহ্!এটা হয়ত শ্রেয়ানের দয়া ছিল।

হঠাৎ দরজায় কড়া নড়ে।বাইরে থেকে আয়ানকে ডাক শোনা যাচ্ছে।
অদ্রি চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।
আয়ান অদ্রিকে একবার দেখে নেয়। পাশ কাটিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকে। টেবিলের উপর একটা বক্স রাখে। জিজ্ঞেস করে, কখন এলি?

অদ্রি কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, এতো একটু আগে।

— ওহ্।

— বড় আম্মু কোথায়?

— নানাজি অসুস্থ।তাই ওনাকে দেখতে গিয়েছে।আয়ান আবারও অদ্রিকে বলে,আমি অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছি।তোকে ওষুধগুলো বুঝিয়ে দিতে এসেছি।

অদ্রি আয়ানের অগোচরে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে মুছে ফেলে।বলে,ওহ্। কয়দিন লাগবে?

— বেশিদিন না। তাড়াতাড়ি চলে আসবো।

আয়ান অদ্রিকে সব বুঝিয়ে দেয়।
আয়ান অদ্রির দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

অদ্রি অবার কেঁদে উঠে। অস্ফুট স্বরে বলে,আমাকে মিথ্যে বললে কেন ভাইয়া?সত্যি বললে কি আমি কোনো বাহানা ধরে না করতাম! মিথ্যে কেন বললে,আয়ান ভাইয়া?

চলবে,