শখের সাদা শাড়ি পর্ব-০৩+০৪

0
465

#শখের সাদা শাড়ি
#ফাতেমা তুজ
#পর্ব-০৩+০৪

উর্মি বাড়ি ফিরলো রাত এগারো টায়। ছোট ভাবি তুলি চোখ দিয়ে যেন গিলে খাবে। এদিক থেকে অবশ্য বড় ভাবির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে খাবার এনে রাখলো টেবিলে। যদি ও পেট ভরা তবু ও অল্প খেল। এর কারণ ও রয়েছে। একবার ভার্সিটিতে বান্ধবী জন্মদিনে লাঞ্চ ট্রিট দিয়েছলো। সেই কথা যখন বাড়ি তে এসে বলল তখন দুই ভাবি মিলে বিষয় টা নিয়ে একে বারে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছিলো। কারন সেদিন বাসায় রান্না হয়েছিলো আলু ডিম এর তরকারি। আর উর্মি খেয়ে এসেছে মুরগির লেগ পিছ। তুলি এসে বসলো পাশে। বোধহয় কিছু বলতে চায়। তবে মানুষ যখন চাকরিজীবি হয় রোজকার করে তখন কুটনৈতিক মানুষ গুলো ও বুঝে কথা বলে। এই দিক টা দুদিন ধরেই দেখছে উর্মি। তুলি বলল–
” তা এতো দেড়ি করলে কেন? ”

” ফরেন কান্ট্রির সাথে মিটিং ছিলো। তাই লেট হলো। ”

” ও ভালোই তো। বেতন কত তোমার? ”

” আঠারো হাজার। ”

ইচ্ছাকৃত ভাবে চার হাজার টাকা কম বললো উর্মি। সে জানে নিজের হাত খরচের টাকা টা নিয়ে ও একসময় কথা উঠবে। তুলি বেশ অবাক হয়েই বলল–
” আঠারো হাজার? ”

” হুম। ”

” ভালো তো। আজকাল চাকরির যা দাম বাবা। তোমার তো কপাল খুলে গেল। ”

কিছু বললো না উর্মি। তুলি নিজ থেকেই আপন মনে আরো কিছুক্ষণ ধরে উর্মির ভাগ্যের প্রশংসা করলো। তারপর নিজের দুঃখের কথা শুরু হলো।
” বুজলে উর্মি। তোমার ভাইয়ের বেতন পঁচিশ হাজার টাকা। মাসে দশ হাজার টাকা করে সংসার খরচ দেয়। তারপর আমাদের ব্যক্তিগত খরচ ও আছে।মাস শেষে সেভিংস হয় না এক টাকা ও। ”

তুলির কথার মানে বুঝে উর্মি। সে নিজের টাকা তেই পড়াশোনা করেছে এতোদিন। বাবা মারা যাওয়ার পর একটা টিউশনি বাড়িয়ে দিয়েছিলো। যেটা থেকে চার হাজার টাকা পেতো। আর সেই টাকা টা সংসারে তুলে দিতো। এখন তো আবার সাথে মেঘনা জুটেছে। তার খাওয়ার টাকার কথাই বলতে চাচ্ছে তুলি। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে এক ঢোক খেল উর্মি। তুলি আবারো এক কথা জুড়েছে। উর্মি ভনিতা না করে ছোট করে শ্বাস ফেলে বলল–
” আপার জন্য আমি আরো চার হাজার টাকা বাড়িয়ে দিবো ভাবি। এ মাস টা না হয় যাক। ”

” ছিই ছিই আমি তো সেসব বলি নি উর্মি। আমি শুধু বললাম তোমার ভাইয়ার কথা। বুঝোই তো। ”

” আমি বুঝতে পেরেছি ভাবি। অনেক রাত হয়েছে। ঘুমোও তুমি। ”

হাই তুলে তুলি। তারপর বলে–
” হ্যাঁ আমি যাই তবে। তুমি ও যাও। ”

মলিন হাসলো উর্মি। তুলি চলে যেতেই তাচ্ছিল্য নিয়ে তাকালো। উর্মি দুধের বাচ্চা না।সে বোঝে সব। বিয়ের আগে ছোট ভাইয়া যে ত্রিশ হাজার টাকা বেতনের জব করতো। আর বিয়ের পর পর ই সেটা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোম্পানি তে জব নিলো। তুলির বুদ্ধি তেই বলেছিলো কোম্পানি নাকি এখন তাকে কাজে নিচ্ছে না। মন্দা যায় ব্যবসা। সেই কারনে জব ছাড়তে হয়েছে। অথচ উর্মি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে চল্লিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরির জন্য আগের চাকরি ছেড়েছে ছোট ভাইয়া ।কষ্ট লাগে ওর। টাকা পয়সা সেভিংস করা টা কোনো দোষের না। তবে এভাবে হিংসে করা ও উচিত না। দীর্ঘশ্বাস নামায় উর্মি। তার বাইশ হাজার টাকার বেতনে এখন সবার চোখ পরেছে।

রাতে ঘুমানোর সময় মেঘনা বল‍ল–
” তোর দুলাভাই কে একটা কল করি? ”

” প্রয়োজন কি আপা। সে তো সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তোমার জায়গা নেই এই বাড়িতে। ”

” তবু ও একবার চেষ্টা করে দেখি। ”

” আচ্ছা কর। ”

সটান থেকে অন্য দিক পাশ হয়ে শুয়ে রইলো উর্মি। মেঘনা প্রবল উত্তেজনায় কল করে যাচ্ছে। গলার স্বর কাঁপছে তার। রিং হচ্ছে তবে ধরছে না। উর্মি এবার মেঘনার দিকে ঘুরলো। মেঘনার চোখে জল।
” কাঁদিস না আপা। সব ঠিক হয়ে যাবে। সে তোকে মনে করে না তাকে তুই কেন মনে করিস। ”

” আমার সন্তান কাকে বাবা বলবে বল তো। ”

” চিন্তা করিস না আপা। দুলাভাই যদি ঠিক না হয় তবে তোকেই ওর বাবা মা হয়ে উঠতে হবে। ”

” আমি কি পারবো রে উর্মি? ”

” একশ বার পারবি। এখন ঘুমো তো। ”

মেঘনা কে জড়িয়ে ঘুমোয় উর্মি। মেয়েটার চোখে ঘুম নেই। তবু ভান ধরে আছে। সে চায় তার আপা একটু শান্তি তে থাকুক। এমনি তে ও বিয়ের পর থেকে শান্তি তে নেই। মানুষ তো!

পরদিন ভোর বেলা উঠেই টিউশনি তে ছুটলো উর্মি। এ মাস টা পড়াতেই হবে। না হলে খাবে কি? হাজার হোক মেঘনার পিছনে এখন টাকা খরচ করতেই হবে। বাচ্চা টা কেমন আছে সেটার জন্য চেকাপ করাতে ও হবে। এসব চিন্তা নিয়েই ছুটছে সে। হেটেই যায়। কি দরকার রিক্সা চড়ে একশ টাকা নষ্ট করার। তার থেকে ভালো একটু আগে রওনা দিয়ে হেটে যাওয়া। টাকা ও বাঁচলো স্বাস্থ্য ও ঠিক রইলো। পর পর তিনটে টিউশনি। দুটো শেষ করে এবার তিন নাম্বার টায় এলো। নয় তলা এক বিল্ডিং। অথচ লিফ্ট নেই। আশ্চর্য মানুষ এরা! চার তলা তে থাকে উর্মির স্টুডেন্ট। এবার নবম শ্রেনি তে পড়ছে। সিড়ি বেয়ে উঠে ঘেমে চুপচুপ। কলিং বেল চেপে দিয়ে উড়না তে ঘাম মুছলো।
” আসসালামু আলাইকুম আপা। ”

” ওয়ালাইকুম আসসালাম। সালমা আপা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিবেন তো। আর ফ্যানের পাওয়ার টা ও বাড়িয়ে দিন। ”

” আইচ্ছা। ”

উড়না টা একটু সরিয়ে বসলো উর্মি। পানি দিলে পানি পান করলো এক নিশ্বাসে। এতো টাই বাজে অবস্থা। কিছুক্ষণ পর শশী এলো। চোখ দুটো লাল। এতোক্ষণ ঘুমোয় মেয়েটা!
” বসো শশী। তোমায় না বলেছি এতো ঘুমাবা না। ”

” ঘুমাই না তো আপু। আজ ভাইয়াদের সাথে আড্ডা দিয়ে আমি কাহিল। ”

ভাইয়াদের শব্দ টা একটু কেমন লাগলো ওর। উর্মির জানা মতে শশীর একটাই ভাই। নাম শৌখিন।
” আপু। ”

” হুম বলো। ”

একটু ভরকে উত্তর করে উর্মি। সব চিন্তা ফেলে শশীর হোম ওয়ার্ক দেখতে চায়। মেয়েটা একটু আমতা আমতা করছে।উর্মি বুঝে যায় এ মেয়ের ফাকিবাজি। তাই বাজ খাই কন্ঠে বলে–
” কেন করো নি। ”

” বললাম না ভাইয়াদের সাথে আড্ডা–”

” মিথ্যে বলার জায়গা পাও না হু? ”

” শশী সত্যিই বলছে। ”

পরিচিত কন্ঠ। ঘাড় বাকিয়ে তাকায় উর্মি। চোখের সামনে সমীর হাসছে। একটু অবাক হলো উর্মি তবে মুখে কিছুই বললো না। শশী লাল চোখে তাকালো। ওকে আশ্বস্ত করতে সমীর বলল–
” শশীর দোষ নেই। আমিই কাল জোর করে আমাদের আড্ডা তে বসিয়েছি। ”

” ও তাহলে ঠিক আছে। ”

” দেখলি তো তোর ম্যাডাম কিছুই বললো না। শুধুই টেনশন করছিলি। ”

” টেনশন হবে না। ”

” হয়েছে এবার পড়েন আপনি। ”

শশী খুশি মনে বই খুললো। উর্মি কে চিন্তিত দেখাচ্ছে। সম্ভবত শশীর সাথে সম্পর্ক টা মিলানোর চেষ্টা করছে। ভেতর থেকে শৌখিন এর ডাক এলো। আসছি বল‍ে চলে গেল সমীর। মিনিট দশেক পর শৌখিন আর সমীর এলো। উর্মি সালাম জানাতেই শৌখিন বলল–
” কেমন আছো উর্মি? ”

” জী ভাইয়া ভালো আছি। এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছেন। ”

” সামনেই। ”

” মেয়ে দেখতে। ”
মাঝে ফোরন কেটে বলে সমীর। গোল গোল করে তাকায় শৌখিন। উর্মি হা হয়ে রইলো। শশী বলল–
” তাই তো বল‍ি ভাইয়ার জামাকাপড়ের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই। সেই ভাই আজ নায়ক কেন সাজছে। ”

” একদম রে। এর জন্যই তো কাল আমায় টেনে হিচড়ে নিয়ে আসলো। ”

” হু হু বুঝলাম এবার। ”

শশী কে ধমক দিলো শৌখিন। সমীর মিটমিটে হাসছে। উর্মি যেন কিছুই বুঝলো না। ওরা চলে যেতেই বলল–
” তোমার ভাইয়ার সাথে কে ঐ টা? ”

” সমীর ভাই। জানো তো খুব ভালো কস্টিউম ডিজাইন করে। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ”

” ওহ। কেমন ভাই সে? ”

” ভাইয়ার কলেজ ফ্রেন্ড। ”

” আচ্ছা পড়ো। ম্যাথে কিন্তু খুব কাঁচা তুমি। সামনে এক্সাম ভুলে যেও না। ”

চলবে…….

#শখের_সাদা_শাড়ি
৪.
বড় ভাইয়ার ছেলের নাম অন্তু। সবে ক্লাস থ্রি তে পড়ে। একদম ই শান্ত নয়। পুরো ঘর মাতিয়ে তুলে। তবে কিছু দিন ধরে বেশ চাপ যাচ্ছে পড়াশোনা নিয়ে। সেই জন্যই বের হয় নি ঘর থেকে। আজ ফ্রি। উর্মি গোসল করে চুল মুচছিলো। ওমনি করেই চুলের মধ্যে টান। আহ করে ককিয়ে উঠে উর্মি। আর হাসে অন্তু।
” বাদরামো শুরু হয়ে গেছে? ”

” ইসস কতো দিন তোমায় জ্বালানত করি না বলো তো ফুপি। ”

” হ্যাঁ অনেক দিন হলো রে। এক্সাম কেমন হয়েছে রে? লেটার মার্ক থাকবে তো। ”

” একদম। সব গুলো তে প্লাস। ”

” যাক টেনশন মুক্ত। ”

” কোথাও যাচ্ছো? ”

” হ্যাঁ রে বাবা, অফিস যেতে হবে না। ”

” তাহলে তোমার ভারসিটি? ”

” অর্নাস তো শেষ। টাইম ম্যানেজ করে মাস্টার্স করবো রে। তুই শোন, বড় ফুপি কে দেখে রাখবি। আপু কাজ করলে হেল্প করিস বাবা। ”

” ওকে। তুমি টেনশন নিও না। ”

” আমার সোনা ছেলে। ”

অন্তুর গালে চুমু দিলো উর্মি। মুহুর্তেই লাল হয়ে গেল তার মুখ। এমন লজ্জা পাওয়ার রহস্য কি?
” ফুপি একটা কথা বলবো। ”

” বল। ”

” কাল কে না আমি একটা কাজ করেছি।”

মুখ ভর্তি রুটি নিয়ে প্রশ্ন করে উর্মি।
” কি কাজ। ”

” একটা মেয়ে কে চুমু দিয়েছি। ”

মেঘনা এদিকেই আসছিলো। অন্তুর কথা শুনে হাসতে হাসতে হামাগুড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। উর্মি চটজলদি দরজার দিকে তাকালো। না কেউ নেই। দরজা লাগিয়ে বলল–
” কি করেছিস বেয়াদব। ”

” আই লাইক হার। জানো কি সুন্দর ওর ঠোঁট টা। ”

” ইয়াক ছিই, কি অশ্লীল কথা। ”

উর্মি কে নাক কুচকাতে দেখে মেঘনা বলল–
” তুই সর তো। আমাকে কথা বলতে দে। ”

” পেকে গেছে এই ছেলে। ”

” হ্যাঁ রে অন্তু। তারপর কি হলো? ”

” বলছি। কাল আমার এক্সাম শেষ হলো। আমি রোজ ঐ মেয়ে টাকে দেখতাম। টু তে পড়ে। আমাদের হলেই সিট পরেছে। ”

উর্মি উদ্বিগ্ন গলায় বলল–
” ঐ মেয়ে কে দেখার চক্করে এক্সাম খারাপ দিছ নি তো। কি রে বল। ”

” আরে ধুর শোনো না। ”

উর্মি দমে গেল। খাবার নামছে না গলা দিয়ে। এই টুকু ছেলে এমন নির্লজ্জ আর পাকা!
” শোনো বড় ফুপি, তো পরীক্ষা শেষ হলে আমি বললাম ওকে দাঁড়াতে। মেয়ে টা দাড়ালো। আমি একটা চকলেট দিতেই ও নিলো। আর তখনি ওর গালে টুপ করে চুমু দিয়ে দৌড়।”

মেঘনা হেসে কুটি কুটি। এদিকে চিন্তায় পরলো উর্মি। এই ছেলে দেখি বাড়িতে নালিশ আনাবে। অফিস যাওয়ার আগে ভালো করে বুঝালো উর্মি। আর এসব কথা কাউ কে না জানাতে নির্দেশ দিলো। বিশেষ করে তুলির কানে যেন না যায়।

অফিসে এসে ক্লান্ত লাগছে উর্মির। এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না। এখানে চা কোথায় পাওয়া যায় কে জানে। আশে পাশের মানুষ গুলো কেমন স্থির। যেন কাজ করতে করতে যন্ত্র হয়ে গেছে। চেনা জানার মাঝে শুধু মাইশা। তার কেবিনে নক করা কি ঠিক হবে? কিছু একটা ভেবে নক করলো না আর। কাজের ফাঁকে সে নিজেই চা নিতে বের হলো। নিচ তলা তে ক্যান্টিন দেখেছিল। সেখান থেকেই চা নিয়ে এলো। এবার একটু শান্তি লাগছে। ক্লান্ত লাগলে ও কিছু করার নেই। কেউ তো বসে বসে বাইশ হাজার টাকা দিবে না। পরিশ্রমী উর্মি। তবে আজকাল এতো টেনশনে মাথা ঠিক থাকে না। সমস্ত ফাইল রেডি করে সৌমেন এর কেবিনে এলো। কিছু টা রেগে আছে সৌমেন। উর্মি কে দেখে রাগ খানা প্রশমন করলো। হাত বাড়িয়ে ফাইল নিলো।
” সন্ধ্যার পর কজন কাজ করবে সেট করেছো তো? ”

” হ্যাঁ স্যার। এখন মাইশা ম্যাম এর কাছে সাবমিট করবো কি? ”

” না দরকার নেই। তুমি গিয়ে দেখো কাজ কতো টুকু হয়েছে। ইটস ভেরি আর্জেন্ট। ”

” ওকে স্যার। ”

সৌমেন ফোন ঘাটতে ব্যস্ত। আড়চোখে দেখে নিয়ে কেবিন থেকে বের হলো। তখনি ধাক্কা লাগলো এক কলিগ এর সাথে। বয়স টা খুব বেশি নয়। পঁচিশ এর আশ পাশ।
” স্যরি আমি আসলে দেখি নি। ”

” ইটস ওকে। আপনি যেতে পারেন। ”

” থ্যাংকস। ”

সম্মান হিসেবে আগে যেতে বললো উর্মি কে। উর্মি চলে যেতেই সৌমেন এর কেবিন এ প্রবেশ করলো।

বিকেল এর দিকে ঘুম এসে গিয়েছিল। রাতে ঘুম না হওয়ার ফল। একটু রেস্ট নিয়ে কল করলো মেঘনা কে। মেঘনা ঘুমিয়ে ছিলো বিধায় বেশি সময় নিলো না উর্মি।শুধু বললো ঠিক মতো খাবার খেতে। কথা শেষ করবে তখনি সৌমেন এর কেবিন থেকে চেচামেচির আওয়াজ পেল। ভরাট কন্ঠের আওয়াজে কেঁপে উঠে উর্মি। ছুটে যায় কেবিন এর সামনে। আচমকাই বের হয় কল্লোল। চোখ মুখ গেঁধে গেছে কোটরে। দরজা খোলা থাকায় সৌমেন কে ও দেখতে পায় উর্মি। রাগে থরথর কাঁপছে ছেলেটা। মনে হলো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সৌমেন। দ্রুত গতিতে কেবিনে ঢুকলো। সৌমেন এর শ্বাস এর গতি তীব্র। হাতের সাহায্যে ইশারা করলো। উর্মি চোখের পলকে ইনহেলার এনে দেয়। প্রায় দশ মিনিট সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে উর্মি। সৌমেন এখন বেটার ফিল করছে। উর্মি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
” থ্যাংকস উর্মি। আমার শ্বাসের রোগ রয়েছে। অধিক উত্তেজিত হলে এমন হয়। থ্যাংকস অ্যা লট। ”

উর্মি সাবলীল কন্ঠে বলল–
” আপনি তখন এমন রাগান্বিত হয়েছিলেন কেন? ”

” এমনি। নিজের কেবিনে যাও। ”

” ওকে স্যার। ”

” শুনো উর্মি। ”

” জী স্যার। ”

” আজকের সিডিউল চেঞ্জ। এখনি সবাই কে ছুটি দিয়ে দাও। আর তুমি ও চলে যাও। ”

” বাট স্যার,এতে তো কাল অনেক চাপ যাবে। ”

” যাবে না। এক মাসের সিডিউলে একটু একটু করে পুষিয়ে নিবো। ”

দীর্ঘশ্বাস নামায় উর্মি। কে জানে কি হয়েছে। একবার মনে হলো ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন।
” স্যার আম স্যরি। ”

” কেন? ”

” তখন আপনাকে প্রশ্ন করার জন্য। আসলে আমি ঠিক বুঝি নি। ”

” ইটস ওকে। এটা নর্মাল ই্যসু। নট অ্যা স্পেশাল অর সিক্রেট। ”

” থ্যাংকস স্যার। আমি তাহলে যাচ্ছি। ”

মৃদু হাসলো সৌমেন। মন টা স্থির করে কাজে মনোযোগ দিলো। সব কিছুর আগে নিজের কোম্পানি।

বাসে বসে বসে ফোন স্ক্রল করছে উর্মি। হঠাৎ ই একটা ম্যাসেজ এলো। আননোন নাম্বার। কেন যেন ম্যাসেজ টা চেইক করলো।
” হাই আমি সমীর। আপনার সাথে কিছু কথা আছে। কল করা যাবে? ”

ভদ্রতা দেখে অবাক হলো উর্মি। তবে ওর নাম্বার পেল কোথায়। নিজ থেকেই কল করলো। একবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো।
” হাই, বিরক্ত করলাম তাই না। ”

” না না বিরক্ত করবেন কেন। বলুন আমি শুনছি। ”

” প্রচন্ড প্যারায় আছি বুঝেছেন। সৌমেন ভাই এর নাম্বার টা বিজি বলছে। একটু আগে কল করলাম
এখন বলে বন্ধ। তো সেই জন্য আপনাকে করা। ”

” ও আমি তো এসে গেছি। স্যার আগে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। ”

” ও সীট। এখন কি করা যায় বলুন তো। ইটস ইমপরট্যান্ট। ”

” এক টা কাজ করুন আপনি মাইশা ম্যাম কে কল করুন। তিনি হয়তো কিছু বলতে পারবেন। ”

ওপাশ থেকে ঘন নিশ্বাসের শব্দ এলো। সমীর বলল–
” মাইশা কে কল করেছি আমি। সুইচ অফ বলছে। সেই জন্যই আপনাকে কল করা।”

” ও। ”

” তো বাসায় যান। রাখছি আমি। দেখি কি করা যায়। ”

কল কেটে নিজের মাথায় নিজেই চাটি মারে উর্মি। এতো টা গাঁধা কেন সে! এই টুকু কমনসেন্স নেই কাউ কে না পেয়েই তো সমীর তাকে কল করেছে। না হলে দুদিনের দেখা তে সোজা তাকেই কেন কল করবে।

সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে দেখে চমকে গেলেন জোৎস্না। মনে মনে কিছু টা ভয় ও পেলেন। দ্রুত বললেন–
” কি রে এতো দ্রুত ফিরলি যে। সব ঠিক আছে তো। ”

” হ্যাঁ ভাবি সব ঠিক ঠাক। কাজ শেষ তাই স্যার সবাই কে আগে ছুটি দিয়েছেন। ”

” ও তাই বল। আমি ভাবলাম কি না কি। তা ভাত খাবি তো? ”

” না ভাবি। রাতে একেবারে খাবো। অন্তু কই গো। ”

” দেখ ছাদে গিয়ে বসে আছে হয়তো। ”

” ছাদে কেন গেছে। কতো বার করে বলেছি ছাদে যেন না যায়। ”

” কথা শোনে না। ”

” ব্যাগ টা ধরো আমি ওকে নিয়ে আসি। ”

চিন্তা নিয়ে ছাদে ছুটলো উর্মি। চার তলা বিল্ডিং এর দোতলা টা ওদের। আর বাকি তিন তলা আরো তিন ফ্যামেলির। ছাদে যাওয়া নিয়ে একবার বেশ ঝগড়া হয়ে ছিলো। সেই থেকে বাড়ির ছোট দের ছাদে আসা যাওয়া পুরোপুরি নিষেধ।

চলবে