#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়
সকাল বেলা একে অপরকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে৷ নির্বণের ঘুম ভেঙে যায় নিয়তির আগে৷ নির্বণ ঘুম থেকে উঠে দেখে নির্বণ নিয়তিকে দুই বাহুর মাঝখানে আগলে রেখেছে। নিয়তিও ছোট বাচ্চার মতো নির্বণকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে৷ যেন নির্বণের বুকে নিয়তির সবথেকে নিরাপদ জায়গা।
নির্বণ এক ধ্যানে নিয়তির নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণ নিজের কাজে নিজেই খুব জর্জরিত। কিভাবে পারল নিজের বউকে অবিশ্বাস করতে৷ সাত পাকের সময় কথা দিয়েছিলাম সব সময় তার পাশে থাকব৷ কিন্তু আমিই তাকে বাহিরের একটা মেয়ের জন্য অবিশ্বাস করলাম।
নিয়তি রাতের বেলা শাড়ি ছেড়ে নাইটি পড়ে ঘুমিয়েছে৷ নির্বণের চোখ যায় নিয়তির ঘাড়ের দিকে। নিয়তির ঘাড়ে এখনও বেল্টের দাগ স্পর্শ। সাদা দেহে লাল বর্ণ ধরণ করে জখম হয়ে আছে৷ বেল্ট দিয়ে আঘাতের দাগ দেখে নির্বণ নিয়তির সেই জায়গায় আলতু করে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।
নিয়তি ঘাড়ে কারো গরম নিঃ শ্বাস পেয়ে ঘুম ভেঙে যায়৷ কিন্তু নিয়তি চোখ মেলতে পারছে না৷ তার উপর ভারি কিছু অনুভব করছে৷ শ্বাস নিতেই কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজের অজান্তেই নির্বণকে ধাক্কা দেয়৷ নির্বণ তার থেকে দূরে সরে যায়।
নিয়তি আঁখি মেলে দেখে নির্বণ তাকে জড়িয়ে ধরে আছে৷ কিছুটা খুশি হলেও পরক্ষণেই পাল্টে যায়।
— আপনি এত নিচ আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন৷ ক্ষেপে নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে বলে৷
— নির্বণ আরও নিয়তিকে কাছে টেনে নিয়ে নিয়তির নাকের সাথে নিজের নাক ঘঁষে আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে বউ। কই ছিল সেই ফুলসজ্জার দিন৷ যাকে বউ বলে মেনেই নিতে পারেননি৷ যাকে দেখে মনে হয়েছে একটা রাস্তার সস্তা মেয়ে৷ টাকার বিনিময়ে দেহ বিক্রি করে।
— দেখ নিয়তি সেগুলো সব ভুল বুঝাবুঝি ছিল৷ বিয়ের রাতে যদি কোন ছেলে জানে তার বউ দেহের চাহিদা মেটানোর জন্য অন্যের ছেলের সাথে মেলামেশা করে তাহলে কিভাবে মেনে নিবে?
— আচ্ছা৷ কিন্তু তার তো বুঝা উচিত ছিল সাত পাকে বাঁধার সময় কথা দিয়েছে তার সব অতীতকে ভুলিয়ে আমি তার ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করে তুলব৷ এটা কি সেই ছেলের মনে ছিল না৷
— দেখ নিয়তি তুমি কিন্তু আমাকে,, কিছু বলতে পারল না৷
— আমি স্নান করতে যাব৷ আমাদের আজই বাসায় ফিরতে হবে৷
নির্বণ অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু নিয়তি কিছু না শুনেই ওয়াসরুমে চলে যায়।
নিয়তি ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। নিয়তির দুই নয়নের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে কপোল বেয়ে৷ নির্মম সেই বাসর রাতের কথা বার বার তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে৷ কিভাবে তার হাত পা বেঁধে টর্চার করা হয়েছে। নিয়তির কান্না দেখার মতো কেউ নেই৷ প্রায় এক ঘন্টা ধরে ঝর্ণার নিয়ে বসে বসে কান্না করে৷
নিয়তি শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে নির্বণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। চুলগুলো উশখু হয়ে আছে৷ সোনালী প্রভার হালকা আলো পড়ছে নির্বণের উপর৷ নিয়তি দেখেও না দেখার ভান করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে নিচে চলে যায়।
নিয়তি চলে যেতেই নিঝুম পিছন থেকে এসে নির্বণকে জড়িয়ে ধরে। নির্বণ ভেবেছে নিয়তি তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে৷ কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিল নিঝুম৷
— আমি জানতাম তুমি আমার উপর রেগে থাকতে পারবে না৷ (নির্বণ)
— ঠিক বলছো নির্বণ। কি করে আমি তোমার উপর রেগে থাকতে পারি৷ তুমি মিশে আছো আমার এই হৃদপিণ্ডে।
নির্বণ নিঝুনের কন্ঠ শুনে পিছনে ঘুরে। কিন্তু নিঝুম কিছুতেই নির্বণকে ছেড়ে দিচ্ছে না। জোর করে জড়িয়ে ধরেই থাকবে৷ নির্বণ নিঝুমকে ধাক্কা দিয়ে নিঝুমের কাছ থেকে মুক্ত হয়৷
— তোমার লজ্জা করে এভাবে পর পুরুষকে জড়িয়ে ধরার৷
— পর পুরুষ নয়৷ তুমি আমার স্বামী৷ আর স্ত্রী তার স্বামীকে জড়িয়ে না ধরলে কিভাবে তাদের ভবিষ্যৎ আসবে।
নির্বণ নিঝুমের এমন বাজে কথা শুনে নির্বণের রাগ উঠে যায়৷ চোখ বন্ধ করে হাতের মুষ্টি শক্ত করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে।
— এখান থেকে চলে যাও ভালোই ভালোই বলছি৷ আমি চায়না তোমার জন্য নিয়তি কষ্ট পাক।
— নিয়তি কে? কোথাকার নিয়তি৷ তাকে আমি আমাদের জীবনে কাটা হয়ে থাকতে কিছুতেই দিব না৷
— লজ্জা থাকা দরকার। নিজের ছোট বোনের সংসার ভাঙতে চাও৷ ইভেন তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চাও।
— কে আমার বোন,, নিয়তি,,, নিয়তি আমার সৎ বোন। সৎ বোনের জন্য আমার কেন দরদ থাকবে। তাকে পা দিয়ে পিশিয়ে অনেক আগেই মেরে ফেলতাম৷ কিন্তু বাবার জন্য পারি নি৷ যখনই তাকে কিছু করতে নিব বাবা হাজির৷ এখন কাউকে ছাড়ব না৷ না নিয়তি না তার মাকে।
— কি তোমরা সৎ বোন,,
— হুম আমরা সৎ বোন৷ সৎ বোনের উপর আমার কোন মায়া নেই৷
[নিঝুমের যখন ৪ বছর তখন নিঝুমের না হার্ট অট্যাক করে দুনিয়া ছেড়ে যান৷ নিঝুমের দেখা শোনা করার জন্য নিঝুমের বাবা নিয়তির মাকে বিয়ে করে৷ নিঝুম প্রথম থেকেই নিয়তির মাকে মা বলে ডাকত না৷ নিয়তির মা নিঝুমকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিলে মার কাছে যেত না৷ নিঝুমের ধারণা তার বাবা এই মহিলাকে বিয়ে না করলে তার মা ফিরে আসত। সে এখনও জানে না তার মা মারা গেছে৷ তাকে বলা হয়েছে তার মা তাকে রেখে অনেক দূরে চলে গেছে৷ তার মায়ের কোন ছবি এই বাড়িতে রাখেনি তার ঠাম্মা৷ সেজন্য নিঝুম অনেক জেদি হয়ে যায়।
নিয়তি নিঝুমকে নিজের বড় দিদি হিসেবে অনেক ভালোবাসে। নিয়তি কখনও নিঝুমকে সৎ দিদি মনে করে না৷ ইভেন নিঝুম অনেক অন্যায় করার পর যখন বাড়িতে কেউ তাকে মেনে নেয়নি তখন নিয়তি সবাইকে বুঝিয়ে নিঝুমকে আপন করে নিয়েছে৷ ]
— নিয়তির সাথে তুমি কিছু করতে পারবে না৷
–সেটা সময় বলে দিবে সুইটহার্ট N
সুইটহার্ট N কথাটা শুনে নির্বণ আরও রেগে যায়। নিঝুম আগে নির্বণকে N বলে ডাকত৷ নির্বণ নিয়তিকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।
— আর কতদিন দূরে থাকবে নির্বণ। আমি তোমার হবই৷ কেউ আটকাতে পারবে না৷ আর নিয়তি,,, বলেই একটা শয়তানি হাসি দিল,, তাকে আমি দেখে নিব৷ তোমার চিন্তা করতে হবে না৷
নিঝুম রুমে থেকে চলে যাবে ঠিক তখনই নিয়তি রুমে আসে৷
— দিদি তুমি আমার রুমে কি করছ?
— নির্বণকো দেখতে এসেছিলাম৷ কিন্তু নির্বণ ওয়াসরুমে চলে গেছে৷ দেখা হলো না।
— ভালো,, তাহলে চলে যাচ্ছো কেন? ওয়াসরুম থেকে বের হক তারপর দেখা করে যাও৷
দেখা করব কি আর দেখা তো করেই ফেলছি? আমার সাথে রাগ করেই তোর ভীতুর ডিম ওয়াসরুমে পালিয়েছে৷ (মনে মনে)
— আসলে আমি তোদের কথার মাঝে থাকতে চায় না৷ ওয়াসরুম থেকে বের হলে আমাকে দেখে কি মনে করবে বল? আমি চলে যাচ্ছি।
বিঝুম তারাতাড়ি করে নিয়তির রুম থেকে চলে যায়।
নিয়তি দ্বার লাগিয়ে মনে মনে দিদি তুমি আমাকে বোকা ভেবে ভুল করছো? আমি তোমার সব খবর জানি। তুমি কেন এখানে এসেছ তা জানি৷ কিভাবে তুমি নির্বণকে সুইটহার্ট বলে ডেকেছো তা আমার কানের & চোখের আড়াল হয়নি৷ তোমার কৃতকর্মের শাস্তি আমি দিব৷ দেখে যাও৷ সময় তোমার ঘুরবে না৷ সময় ঘুরবে আমার৷
নির্বণ স্নান করে বেট হয়ে দেখে নিয়তি কিছু একটা ভাবছে৷ নির্বণ কাশি দিয়ে।
— কি ভাবছ?
— কিছুনা৷
— আমি ১০ মিনিট থেকে খেয়াল করছি তুমি এক অবস্থায় দাড়িয়ে আছো?
— আসলে মনটা আমার ভালো লাগছে না৷ খাবারের জন্য আপনাকে ডাকছে।
— খাওয়ার পর প্রস্তুত থেকো?
— কিসের জন্য?
— আমরা এখান থেকে চলে যাব। অফিসে আমার অনেক কাজ জমা পড়ে গেছে।
— আর দিন থেকে গেলে চলে না৷
— না আর একদিনও এখানে থাকব না
— কেন? এখান থেকে আপনি অফিস করতে পারবেন তো?
— হুম পারব। কিন্তু নিঝুম।
— দিদি কি?
আমি কি করে বলব তোমায় নিঝুম তোমার ক্ষতি চায়৷ তোমার কিছু হতে দিব না আমি। আমি তোমাকে সব সময় রক্ষা করে যাব৷ আর কেউ তোমার নামে বাজে মন্তব্য আনতে পারবে না৷
— কিছু না৷ যা বলছি তাই করবে। খাওয়ার পর চলে যাব। মানে চলে যাব৷
— ওঁকে.
— একটা কথা বলব?
— আবার কি কথা?
— আজ বিকেল বেলা গেলে চলে না৷
— তোমার থাকার ইচ্ছা থাকলে থেকে যেতে পার৷ কিন্তু আমি এখানে এক মুহুর্তও থাকব না৷
আমারও এখানে থাকার কোন ইচ্ছা নেই৷ আপনার আমার সাথে যা করেছেন তার শাস্তি আপনাকে দিতে হবে। বুঝিয়ে দিব কারোর উপর মিথ্যা অপবাদ দিলে কি হয়? কেমন লাগে তার? আমার কাছেও কিছু প্রমাণ রেখে দিছি। মনে মনে
— মুখটা প্যাচার মতো করে ওঁকে,, খাওয়ার পরই চলে যাব৷
খাওয়ার পর নিয়তি আর নির্বণ চলে যাচ্ছে। নিয়তি সারা বাড়ি চোখ বুলিয়ে দেখে নিয়েছে কোথায়ও তার দিদি নিঝুম নেই৷ কারের দ্বার খোলতেই,,
চলবে