#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(৪)
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা
ফুচকা স্টলে ভীড় জমিয়েছেন তিনজন রমনী। আনিকা খান, সোনিয়া খানম ও পারু শেখ তিনজনই ফুচকা খেতে ব্যস্ত। একটু সাইটেই দাড়িয়ে আছেন তাদের তিনজনের স্বামী। তাদের দৃষ্টিও নিজেদের স্ত্রীদের দিকে, বিয়ের এতো বছর হলো ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে, তবুও তাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা কমেনি। আজোও নিজের স্ত্রীদের ফুচকা খাওয়ার দৃশ্য দেখে নতুন করে প্রেমে পড়ছেন তিনজন পুরুষ। তিনজন রমনী ফুচকার প্লেট নিয়ে এগিয়ে আসলেন তাদের অর্ধাঙ্গদের দিকে। তিনজনই নিজ নিজ স্বামীর মুখে একটা করে ফুচকা পুরে দিলেন। দূরে বসে থাকা কল্প ও সূর্য তাদের মা বাবাদের ভালোবাসার মুহুর্ত গুলো দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। কল্পের হাত ধরে সূর্য বলে- দুস্ত আমি যাকে বিয়ে করবো, তাকে ঠিক এমনই ভাবে সারাজীবন ভালোবাসবো। ইশশ কবে যে আমারো বউ হবে!
কল্প ভ্যাবাচ্যাকা খায়, হালকা কেশে বলে- সে তো সময় হলে এমনই বউ পেয়ে যাবি, এখন তো আর চিন্তা করলে বউ মিলবে না। আগে তো পড়াশোনা শেষ করি, চাকরি না করি বাবাদের ব্যবসায় তো হাত লাগাতে হবে। তারপর সব আয়ত্তে নিয়ে যখন বুঝতে পারবো নিজের স্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সবরকম যোগ্যতা অর্জন করেছি তখনই বিয়ে করবো।
গালে হাত রেখে সূর্য বলে- সে তো আমিও, কিন্তু তোর তো ঠিক করা আছে, তোর সিনিয়র আছে। আমার তো কেউ নেই, ইশশ না জানি আমার ভবিষ্যত বউ কোন বেডার সাথে টাংকি মারতাছে বলেই কাঁদো কাঁদো মুখ করলো সূর্য,
সূর্যের কথা শুনে কল্প হাসি আটকাতে পারলো না, শব্দ করে হেসে হাসি থামানোর জন্য মুখ চেপে ধরে। সূর্য কটমট করে তাকিয়ে বলে- তুই তো হাসবিই, তোরই তো দিন। তোর তো সিনিয়র ভাবিকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, তাকে তুই পেয়ে যাবি। সব চিন্তা আমার, আমার সিনিয়র বউ না জানি কোথায় আছে।
ভ্রু কুঁচকে কল্প বলে- সিনিয়র বউ?
হালকা কেশে সূর্য বলে-, দেখ তুই তো সিনিয়র বিয়ে করবি, তাই আমিও ভেবে রেখেছি।
কি ভেবে রেখেছিস?
আমিও তোর মতো সিনিয়র বিয়ে করবো, আমারো একটা সিনিয়র লাভ বার্ড হবে! আর তাছাড়া তুই আর আমি তো সবসময়ই সেইম সেইম থাকি, বিয়ে করলেও সেইম করবো। মানে বউ সেইম না, সিনিয়র হবে আরকি- বলেই দাঁত কেলালো সূর্য।
তুই যদি সিনিয়র বউ না পাস তো কি করবি?
না পেলে তোর সিনিয়রকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে নিবো।
কটমট করে তাকিয়ে আছে কল্প, সূর্য দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে। – আরে ইয়ার রাগ করছিস কেনো? আমি তো মজা করেছি,
এরকম মজা কখনে করবি না। আমার সিনিয়র শুধুমাত্র আমার, আর কারো না। কেউ ভাগ বসাতে আসলে খুন করে ফেলবো।
ক্ষমা করে দে মেরি বাপ, আর তোর সাথে সিনিয়র ভাবিকে নিয়ে মজা করবো না।
বাপ! আমি তোর বাপ? আচ্ছা তাহলে আজ থেকে আমার সিনিয়র কে মা বলে ডাকবি, আর আমার মা বাবাকে দাদা দাদি। আম্মু আব্বু খুশি হবে, তাদের ছেলে বিয়ে না করেই ছেলের বাপ হয়ে গেছে।
ফুসফুস করছে সূর্য, কল্প মুখ চেপে হাসছে। কল্পের হাসি দেখে ঠাসস ঠাসস করে কিল বসিয়ে দিলো সূর্য, কল্পও কম কিসে সে ও সূর্যের পিঠে দুম দুম করে কিল বসিয়ে দেয়। সূর্য না পেরে কল্পকে কাতুকুতু দিতে শুরু করে, কল্প ও সূর্যকে কাতুকুতু দিচ্ছে, দুজনে খিলখিল করে হাসছে। তা দেখে দূরে দাড়িয়ে থাকা তাদের মা বাবাদের মুখেও হাসি।
‘এতো বড় ছেলে হয়ে রাস্তার মধ্যে বাচ্চাদের মতো করছো’
কারো কথা শুনে হাসি থামিয়ে সামনে তাকালো কল্প ও সূর্য। হাত ভাজ করে পূরবিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো দুজনই। সূর্য কল্পকে ছেড়ে তাদের মা বাবার দিকে চলে গেলো, রয়ে গেলো কল্প ও পূরবি। কল্প মাথা চুলকে পূরবির দিকে তাকালো, পূরবির দৃষ্টিও তার দিকেই ছিলো, একে অপরের চোখাচোখি হয়ে যায়। চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে নেয় কল্প, পূরবি তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে কল্পের পাশে বসে।
আমার আসল পরিচয় জেনে গেছো জানি, তাই অপরিচিতদের মতো ব্যবহার না করলেও চলবে।
পূরবির কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় কল্প, কল্পের দিকে তাকিয়ে পূরবি বলে- আমি না চাইলে কখনোই মা আন্টিকে ছবি দিতেন না, আমি চেয়েছি বলেই তুমি আমার পরিচয় জানতে পেরেছো, আমার ছবি দেখতে পেরেছো।
এতো লুকোচুরি কেনো সিনিয়র?
আপাতত তোমাকে সত্যিটা বলতে পারবো না, তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত কল্প। তবে শুধু এতোটুকু জেনে রাখো আমি তোমার ভার্সিটিতে একটা প্রয়োজনে স্টুডেন্ট হয়ে প্রবেশ করেছি। সেই প্রয়োজনের বিষয়গুলো জেনে নেই, তারপর তোমাকেই সবার আগে সবকিছু বলবো।
আস্তে করে নিজের হাত দিয়ে পূরবির হাত ধরলো কল্প, হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো- আমি জানতে চাইবো না তুমি কি জন্য এসব করছো, তবে তুমি যাই করো না কেনো, সবসময় নিজের খেয়াল রেখো। আর তোমার কোনো সাহায্য লাগলে আমাকে বলবে আমি তোমাকে সবরকম সাহায্য করার চেষ্টা করবো।
আমার উপর অভিযোগ নেই তোমার?
মাথা নিচু করে কল্প বলে- অভিযোগ অভিমান সবই ছিলো, সেটা সময় হলে পুষিয়ে নিবো। চলো মা বাবার কাছে যাই বলেই পূরবির হাত ধরে একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা রমনী ও পুরুষদের দিকে এগিয়ে গেলো।
এতোদিন পরে নিজের মেয়েকে দেখতে পেয়ে দুচোখ ভরে এলো পারু শেখ এর। পূরবিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু একে দিয়ে বলেন- এতোদিন পর মায়ের কথা মনে পড়লো?
এক হাত দিয়ে কান ধরে পূরবি বলে- স্যরি আম্মু, স্যরি আব্বু। আ’ম এক্সটেমলি স্যরি অল!
আনিকা খান পূরবির কান থেকে হাত সরিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। পূরবি মুচকি হেসে বলে- স্যরি আন্টি,
আরে ধুর পাগলি, তোকে স্যরি বলতে হবেনা। আমি তো তোকে চিনি, তুই কোনো কারণ ছাড়া কখনো কিছু করিস না। আমাদের পূরবি কেমন তা আমরা জানি, সো মন খারাপ না করে আসো আমরা সময়টা এনজয় করি। ফুচকা খাবে তো?
মুচকি হেসে পূরবি বলে- খাওয়া যায়,
তিনজন মায়ের সাথে যোগ হলো পূরবি, চারজন ফুচকা খাচ্ছে। পূরবি এগিয়ে এলো কল্পের দিকে, প্লেট থেকে ফুচকা নিয়ে কল্পের মুখের সামনে ধরলো। কল্প মুচকি হেসে হা করলো। পূরবি কল্পের মুখে ফুচকা দিয়ে আজমিন খানের সামনে গিয়ে দাড়ালো, প্লেট থেকে ফুচকা তুলে তার মুখের সামনেও ধরলো, আজমিন খান পূরবরি মাথায় হাত ভুলিয়ে হা করেন, পূরবি আজমিন খানকে ফুচকা খাইয়ে দিয়ে সৌরভ আহমেদ এর সামনে গিয়ে দাড়ালো, প্লেট থেকে ফুচকা তুলে তার মুখের সামনেও ধরলো, সৌরভ আহমেদ মুচকি হেসে হা করে ফুচকা মুখে নিলেন। পূরবি নিজের বাবার সামনে গিয়ে দাড়ালো, মুখের সামনে ফুচকা ধরতেই ফাইয়াজ শেখ হা করে মুখে নেওয়ার আগেই পূরবি সেটা নিজের মুখে ঢুকিয়ে নেয়। ফাইয়াজ শেখ মেয়ের কান টেনে ধরেন, পূরবি বাবার এক কাঁধ জড়িয়ে ধরে খিলখিল করে হাসছে। হাসি থামিয়ে বলে- আচ্ছা যাও, এবার দিচ্ছি।হা করো, ফাইয়াজ শেখ হা করতেই পূরবি তার মুখে ফুচকা ঢুকিয়ে দেয়। সূর্যের সামনে গিয়ে প্লেট এগিয়ে দেয় পূরবি, সূর্য প্লেট থেকে ফুচকা তুলে হাতে নিয়ে বলে- ধন্যবাদ সিনিয়র ভাবি, বলেই ফুচকা মুখে পুরে নেয়।
আপনার কোনো বান্ধবী থাকলে বলবেন তো ভাবি।
ভ্রু কুঁচকে পূরবি বলে- কেনো?
মাথা চুলকে সূর্য বলে- না মানে ইয়ে, আমিও কল্পের মতো সিনিয়র বিয়ে করবো আরকি।
আচ্ছা সময় হলে আপনার জন্য ব্যবস্থা করে দিবো।
সূর্যের খুশি দেখে কে? সে আর কাউকে না পেয়ে পাশে দাড়িয়ে থাকা কল্পকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খায়।
কল্প গালে হাত দিয়ে চোখ কটমট করে সূর্যের দিকে তাকায়, সূর্য তা দেখে কল্পকে ছেড়ে দিয়ে দাত কেলিয়ে তাকিয়ে রয়।
পূরবি দুজনের এসব দেখে আবারো খিলখিল করে হেসে উঠে।
চলবে,ইনশাআল্লাহ