#সৎ_মা (১১)
#সামসুজ্জামান_সিফাত
দুপুর পর্যন্ত ঘুরা ঘুরি করে আমি আর সাথী বাড়ি চলে এলাম। তারপর গোসল করে এসে খাওয়া দাওয়া করে ভাইয়ার জন্য খাবার নিয়ে দোকানে চলে গেলাম। অন্যদিন অবশ্য আমরা বাহিরের খাবার খেতাম। যেহেতু আজকে আমি বাড়ি আছি তাই মাকে বলে খাবার নিয়ে চলে এলাম। ভাইয়া আমাকে দেখে ই রাগ দেখিয়ে বলতে লাগলো,”তকে কি আজকে নরসিংদী যেতে বলেছিলাম ?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,”হ্যাঁ।”
– তাহলে যাসনি কেন ?
– সামনের সপ্তাহে যাবো।
– সামনের সপ্তাহে লাগবে না। তুই এখন যাবি কালকে আবার চলে আসবি।
– আজকে না ভাইয়া সামনের সপ্তাহে।
– যা বলেছি তা কর। বেশি কথা বলিস না।
কি আর করার ? ভাইয়ার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। তারপর ভাইয়ার হাতে খাবার গুলো ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি এসে তৈরি হয়ে নরসিংদীর উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম। নরসিংদীর ট্রেনে পা রাখতেই আমার শ্বাস বেড়ে গেছে, শরীরে লোম দাঁড়িয়ে গেছে, শরীরের ভেতর গরম পানির মত কি যেন বয়ে গেল। মনের ভেতর ছটফট করতে শুরু হলো। কোনোরকমে আমার সিটে বসলাম। বসে থাকতে পারছি না, মনের মধ্যে অজানা কিছু একটা খুব জ্বালাতন করছে।
সিটে মাথা হেলিয়ে বসে ভাবতে লাগলাম, বাবা আমাকে দেখে কি করবে আল্লাহ ই জানেন। না না আমি বাবার সামনে যাবো না। কিন্তু বাড়ি না গিয়ে ত আর সার্টিফিকেট আনা সম্ভব না। কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে ই মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, শরীর দিয়ে ঘাম ঝরতে শুরু করেছে। আমার পাশের সিটে বসে থাকা একজন লোক জিজ্ঞেস করে ফেলল,”কি ভাই এভাবে ঘামছেন কেন ?”
– জানিনা ভাইয়া।
– কোনো চিন্তায় আছেন নাকি কোনো অপকর্ম করে আসছেন ?
– আরে না ভাইয়া তেমন কিছু না।
– তাহলে কেমন কিছু ?
আমি আর কিছু বললাম না। কারণ, এমনি ভালো লাগছে না তাই আমি চাই না আর কথা বাড়াতে। বসে ভাবতে ভাবতে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম আমি বাড়ি যাবো না। বরং কাউকে পাঠিয়ে সার্টিফিকেট গুলো আনিয়ে নিব। কিন্তু কাকে পাঠানো যায় ? হ্যাঁ পেয়েছি, শিফা কে পাঠাবো। এখন একটু চিন্তা কমে গেল। ট্রেন তার নিজ গতিতে নরসিংদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
অবশেষে ট্রেন এসে নরসিংদী স্টেশনে থামলো। ট্রেন থেকে নেমে মাটিতে পা রাখতে ই বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সেই চিরপরিচিত শহর টা যেন চাইছে না আমি এই শহরে থাকি। শহর টা ও আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু শহর টা তো আর জানে না যে, আমি থাকতে আসিনি।
একটা গাড়ি নিয়ে মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে মামার বাড়ির সামনে থামলো। গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে মামাদের বাড়ি প্রবেশ করতেই শিফা দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরল। আমি তাকে জড়িয়ে ধরার আগে ই সে আমায় ছেড়ে দিয়ে থাপ্পড় মারে। তার থাপ্পড়ে আমার গালে বিন্দু পরিমাণ আঘাত ও হানেনি। কিন্তু সে ছোট বোন হয়ে আমার গালে থাপ্পড় মারলো এটা ভেবে খুব খারাপ লাগলো। আমি ছল ছল নয়নে জিজ্ঞেস করলাম,”তুই তোর ভাইকে থাপ্পড় মারতে পারলি ?”
– ভাই! কে ভাই ?
– কেন আমি!
– তুমি যদি ভাই ই হতে তাহলে এতদিন একটা বার ও কি আমার কথা মনে পড়েনি ?
– মনে পড়বে না কেন ? মনে তো পড়েছে ই। মনে পড়েছে বলে ই ত আগে তোর কাছে ই এলাম। যাইহোক শোন।
– কি শুনবো হ্যাঁ ?
– কালকে সকালে তুই বাড়ি যাবি। বাড়ি থেকে আমার সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে আসবি।
– কেন ?
– দরকার আছে।
– আমি আগে ই এনে রেখেছি।
– কবে এনেছিস ?
– বাবা যেদিন তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এর তিনদিন পর ই বাবা রাগে তোমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ফেলে দিতে যাচ্ছিল। ঠিক সেই মূহূর্তে আমি বাড়ি গিয়ে হাজির হই। তারপর আমি বাবাকে বাঁধা দিয়ে এগুলো নিয়ে আসি।
– ভালো কাজ করেছিস। আচ্ছা মামা-মামী আর তানিয়া কোথায় ?
– মামী আর তানিয়া আপু ঘরে আছে আর মামা মনে হয় একটু বাজারে গেছে।
– আচ্ছা ঘরে চল তাহলে।
শিফার সাথে ঘরে যাওয়ার পর মামী আর তানিয়া আমাকে দেখে ই মুখ ফিরিয়ে নিল। তাই আমি বললাম,”ভেবেছিলাম এক রাত থাকবো এখানে। কিন্তু মনে হচ্ছে আর থাকা হবে না।” এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে মামী বলল,”তাহলে এসেছিলি কেন ?”
– আমার সার্টিফিকেট নিতে।
– ওহ্ আচ্ছা সার্টিফিকেট ই তোর কাছে আমাদের থেকে বড় হয়ে গেল।
– না, তা না।
– তাহলে কি ? সার্টিফিকেটের জন্য এসেছিস আমাদের জন্য ত আর আসিস নাই।
– আচ্ছা বাদ দাও। এখন বলো কেমন আছো ?
– এই তো ভালো, মন্দ, সুখ ও দুঃখ মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো ই আছি। তুই কেমন আছিস ?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো ই আছি।
– আগে জিরিয়ে নে তারপর না হয় কথা বলবো। এই তানিয়া সিফাত কে কিছু খেতে দে। আর শিফা তুই তোর ভাইকে তোর ঘরে নিয়ে শুতে দে।
শিফা আমাকে তার ঘরে নিয়ে এলো। শরীর টা খুব ক্লান্ত ছিল, তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। একটু পর তানিয়া বিস্কুট আর শরবত নিয়ে এলো। তারপর শিফাকে বলল,”শিফা তুই একটু বাহিরে যা ত। তোর ভাইয়ের সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
শিফা কিছু না বলে চলে গেল। তানিয়া আমার দিকে একটু এগিয়ে বলল,”সিফাত, তোকে কিছু জিজ্ঞেস করবো বলবি তো ?”
– আমাকে কি জিজ্ঞেস করবি আবার ?
– যা জিজ্ঞেস করার করবো। আগে বল বলবি কি না ?
– ঠিক আছে বল।
– আচ্ছা ফুফা যা বলেছে তা কি সত্যি ?
আমি তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কি বলেছে ?”
সে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,”তুই নাকি তোর মায়ের জন্য খরিদ্দার এনে দিতি ?”
আমি তার কথার জবাব না দিয়ে শুধু তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠল,”কি রে বলছিস না কেন ?”
এবার ও কিছু বললাম না। আবার ও সে বলে উঠলো,”কি হলো ? বোবা হয়ে গেলি নাকি কিছু বলছিস না কেন ? তাহলে কি ভেবে নিব ফুফার কথা সত্যি ?”
এবার আর আমি মুখ বন্ধ রাখতে পারলাম না। আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,”আচ্ছা তোর কি মনে হয় তোর ফুফার কথা ই ঠিক না ভুল ?”
– মনে ত হয় ভুল। কারণ, আমার জানামতে তুই খুব ভালো ছেলে। এসব করার মতো ছেলে তুই না।
– তাহলে এইটুকুতেই থাক। আর আল্লাহ ত দেখেছেন ই। তবুও বলি, আমি এমন কিছু করিনি। সব কিছু মায়ের একটা চাল।তবে আমি বুঝতে পেরেছি মা এসব কেন করেছে।
– কেন করেছে ?
– মা এসব করেছে, যেন আমাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে পারে। আর আমাকে তাড়াতে পারলে, বাবার জায়গা জমিন যা আছে সব আরিয়ান পাবে। তবে আমি যদি আবার ভাগ বসাতে আসি তখন ত আর আমার ভাগ না দিয়ে পারবে না। তাই বাবার কাছে আমাকে খারাপ বানিয়েছে যেন, বাবা আরিয়ান বা মায়ের নামে সব কিছু করে দেয়।
দরজার আড়াল থেকে মামা বলে উঠলো,”সিফাত তোর ধারণা মনে ঠিক।”
– মামা কেমন আছো ?
– আছি ত ভালো ই। তুই কেমন আছিস ?
– ভালো ই।
বলে ই উঠে গিয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরলাম। মামা ও আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,”এতদিন কোথায় ছিলি ? কীভাবে ছিলি ?”
– যেখানে ছিলাম সেখানে খুব ভালো ই ছিলাম আমি।
– ছিলি টা কোথায় ওটা বল।
– না মামা ওটা বলবো না।
– কেন ?
– এমনি।
– আচ্ছা বলতে হবে না। তা এখন কি করবি চিন্তা করেছিস ?
– লেখা পড়া চালিয়ে যাবো।
– ঠিক আছে, তাহলে কালকে থেকে ভার্সিটি যাওয়া শুরু কর।
– না মামা। আমি এখানে পড়বো না।
– তাহলে কোথায় পড়বি ?
– যেখানে গিয়েছি ওখানে ই পড়বো।
– ঠিক আছে তবুও পড়া লেখা করিস। আচ্ছা থাক তুই আমি তোর জন্য কিছু নিয়ে আসছি আর বাজার করে নিয়ে আসছি।
– না মামা, আমার কিছু লাগবে না।
– তুই বললেই আমার শুনতে হবে নাকি ?
মামা কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ই বের হয়ে গেল।
[ এই পর্বটার মধ্যে অনেক ভুল ত্রুটি আছে। আর আমি লিখার মধ্যে একটু গোলমাল লাগিয়ে দিয়েছি তার জন্য দুঃখিত।]