#বিবাহ_অভিযান (৬)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
অয়নের এনগেজমেন্টের ডেট ফাইনাল হয়ে গেছে। তার কেনাকাটা করা প্রয়োজন কিন্তু একার দ্বারা সেইসব করা সম্ভব না। তাই সমুদ্রকে পটানোর চেষ্টা করছে,
– “এই ভাই চল না প্লিজ।”
– “তোর এনগেজমেন্টের কেনাকাটা আমি গিয়ে কি করব?”
– “আমার পছন্দ কত খারাপ জানিস তো, প্লিজ চল না।”
সমুদ্র বিরক্ত নিয়ে তাকাল। অয়ন যেইভাবে ধরেছে তাতে না গিয়ে উপায় আছে! তাই বলল,
– “ওকে যাচ্ছি। তবে তাড়াতাড়ি করবি সবকিছু, আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে।”
– “হাঁ সে আর বলতে।”
অয়ন সমুদ্রকে বগলদাবা করে শপিংমলে চলল।অন্যদিকে,
– “তোর সাথে শপিং-এ ইম্পসিবল, আমাকে মাফ কর আমি পারব না।”
রাশির কথা শুনে রিতা গাল ফোলাল। সেই কখন থেকে রাশিকে শপিং করতে যাবার জন্য বলছে কিন্তু রাশি কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।
– “এই রাশি প্লিজ চল না আমার সাথে।”
– “আমাকে কি পাগলে কামড় দিয়েছে! আগের বার শপিং করতে গিয়ে কি কান্ড ঘটিয়ে ছিলিস মনে আছে?একটুর জন্য গনপিটুনি খাইনি, না বাবা আমার মার খাবার শখ নেই আমি যেতে পারব না।”
রাশির এককথা, ওহ কিছুতেই যাবে না আর রিতা নাছোড়বান্দা ওহ কিছুতেই ছাড়বে না।
– “দ্যাখ তুই না যদি যাস তাহলে আমি কিন্তু তোর সাথে আর কথা বলব না।”
– ‘বলতে হবে না।”
– “প্লিজ চল না। দ্যাখ এনগেজমেন্টের শপিং তুই না গেলে আমি কি না কি কিনে আনব তারপর মা আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দেবে।”
– “আন্টিকে নিয়ে যা।”
– “মা বলল তোকে নিয়ে যেতে।”
রাশি বিরক্ত হয়ে বলল,
– “ওকে যাবো তবে এইটাই লাস্ট বার। এর পরের বার থেকে আমি আর যাবো না ওকে।”
রিতা খুশিতে রাশিকে জড়িয়ে ধরল, তারপর গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
– “আমার সোনা রাশি।”
রাশি মৃদু হাসল, মেয়েটা একটু দুষ্টু হলেও মনটা অনেকটা ভালো। বয়স হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাচ্চামো যায়নি নাহলে আর বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করে!
রিতা আর রাশি শপিংমলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
—- —–
রিতা কোনটা ছেড়ে কোনটা নেবে সেইটাই বুঝতে পারছে না, রাশির মাথা রীতিমতো খারাপ করে ছাড়ছে।
– “এই রাশি বল না কোনটা নেব?”
রাশি একটা পছন্দ করে দিয়ে বলল,
– “এইটা নে।”
– “ওকে থ্যাঙ্কু।”
কেনাকাটা করার মাঝে রাশির ফোন কল আসে, রিসিভ করে কিন্তু দোকানের ভেতরে ঠিকমতো শুনতে পারছিল না তাই রিতা’কে বলল,
– “রিতা তুই একটু থাক, আমি কথা বলে আসছি।”
– “ওকে।”
রাশি চলে যেতে রিতা নিজের মতো পছন্দ করতে থাকে। তখনি ওর চোখ পড়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সমুদ্রের দিকে, রিতা নিজেও বোঝে না সমুদ্রের সাথে ওর কিসের শত্রুতা যেদিন থেকে দেখা হয়েছে সেইদিন থেকেই ঝগড়া লেগে আছে। আজকে সবকিছু ঠিকই ছিল, সমুদ্র’কে দেখেও রিতা কিছু রিয়াক্ট করছিল না কিন্তু সমুদ্রের সাথে অয়নকে দেখেই মাথা গরম হয়ে গেল। এক পা এক পা করে আগিয়ে গিয়ে অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “ওনার সাথে তোমার কি?”
আচমকা এইরকম প্রশ্ন শুনে অয়ন থতমত খেয়ে যায়। রিতা এমনভাবেই কথাটা বলল যেন অয়ন কোনো ছেলের সাথে নয় মেয়ের সাথে আছে, আর রিতা এসে জিজ্ঞেস করছে ওনার সাথে কি!
রিতাকে দেখা মাত্রই সমুদ্রের মেজাজ গরম হয়ে গেল, এই মেয়ের জন্য একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই যাচ্ছে। আর আজকেও এর মুখোমুখি হতে হলো! সমুদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই অয়ন মুখটা কাঁচুমাচু করে বলল,
– “আমার ফ্রেন্ড সমুদ্র। কেন কি হয়েছে?”
সমুদ্র একবার রিতার দিকে আর একবার অয়নের দিকে তাকাল। এরা দুজন দুজনকে চেনে সেইটা তো বুঝতে পারল কিন্তু কিভাবে চেনে সেইটা ধরতে পারল না। এর মাঝেই রিতা বলে উঠল,
– “কি এই বজ্জাত ছেলেটা তোমার বন্ধু! অয়ন তোমাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি এর সাথে ফ্রেন্ডশিপ রাখলে আমার সাথে কিন্তু তোমার ব্রেকআপ হয়ে যাবে।”
অয়ন আকাশ থেকে পড়ল। সমুদ্রের ও বুঝতে আর অসুবিধা হলো রিতা আর অয়নের সম্পর্ক কি। অয়নের কারনেই রিতা ওকে রিজেক্ট করেছিল আর ওদের এনগেজমেন্টের জন্যই কেনাকাটা করতে এসেছে।
অয়ন রিতার কথা কিছুই বুঝতে পারল না তাই জিজ্ঞেস করল,
– “কি বলছো এইসব? তুমি কি আগে থেকেই সমুদ্রকে চেন?”
– “ওনাকে আমি ভালো করেই চিনি। এক নম্বরের বজ্জাত ছেলে।”
এইবার সমুদ্র ক্ষেপে গেল। অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “ভাই তুই প্রেম করার জন্য আর মেয়ে খুঁজে পেলি না। এই মেয়ের সাথেই তোর প্রেম করতে হলো!”
– “এই খবরদার আমার নামে কিছু বলবেন না।”
– “কেন কি করবে। আর অয়ন তুই ঠিকই বলেছিস তোর চয়েস একদম বাজে নাহলে এই মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারতিস না।”
– “আপনাকে তো….
রিতা সমুদ্রের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল অয়ন আটকে দিল।এরা কি শুরু করেছে এইখানে কি মারামারি লাগবে নাকি!
– “এই তোমরা কি করছো? এইভাবে ঝগড়া করছো কেন?”
সমুদ্র রাগী গলায় বলল,
– “অয়ন তুই তোর গার্লফ্রেন্ড’কে সামলা। যেভাবে আমার পেছনে পড়ে আছে ওহ মেয়ে না হলে আমার হাতে দু-চারটে চড় থাপ্পর খেয়ে যেত।”
রিতা রাগে ফসফস করছে, সমুদ্রের উপরে যেকোন সময়ে আক্রমণ হতে পারে শুধুমাত্র অয়ন আটকে রেখেছে বলে পারছে না।
– “এই আপনি কি বললেন আমাকে মারবেন? কই মারুন তো দেখি।”
– “রিতা কুল শান্ত হও…
– “তুমি দেখছ তোমার বন্ধু আমাকে কিভাবে বলল আর তুমি কিছু বলবে না!”
ততক্ষনে আশেপাশে কয়েকজন লোকের ভীড় জমা হয়েছে। রাশিও সেখানে উপস্থিত হয়েছে, প্রথমে তো কিছুই বুঝতে পারেনি কি হয়েছে এইখানে! তারপর আন্দাজ করল কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে যাতে রিতা প্রচন্ড ক্ষেপে গেছে। রাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অয়নের উদ্দেশ্যে বলল,
– “অয়ন’দা ওকে নিয়ে সাইডে যাও, পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।”
অয়ন রিতাকে জোর করে টেনে টেনে সাইডে নিয়ে চলে গেল। আশেপাশের মানুষজন কমতে লাগল, রাশির চোখ পড়ল সমুদ্রের দিকে। দাঁড়িয়ে রাগে ফোঁসফোঁস করছে, রাশির লোকটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। মাথায় একটু চাপ দিতেই মনে পড়ল,
– “আপনি সেই ছেলেটা না, সেদিন লিফট দিতে চাইছিলেন?”
রাশির কথা শুনে সমুদ্র ওর দিকে তাকাল। সামনে মেয়েটাকে ঠিকমতো চিনতে পারল না।
– “সরি আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।”
– “আরে সেইদিন রাতে রাস্তায় একটা ছেলের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হচ্ছিল।”
সমুদ্রের খেয়াল পড়ল সেইদিনের কথা। মেয়েটা ওকে এক দেখাতে মনে রেখেছে বিষয়টা ওর কাছে একটু অদ্ভুত লাগল, তাই জিজ্ঞেস করল,
– “আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?”
রাশি মৃদু হেসে বলল,
– “আমি কাউকে একপলক দেখলে সহজে তাকে ভুলি না। তাই আপনাকেও চিনতে পেরে গেছি।”
– “ওহ।”
– “বাই দ্যা ওয়ে রিতার সাথে আপনার কি নিয়ে ঝামেলা লাগছিল?”
রাশির কথা শুনে সমুদ্রের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায়। রিতার কাজকর্ম গুলো একদম বিরক্তিকর।
– “আর বলবেন না, ওই মেয়েটা মানে রিতা অযথাই আমার সাথে ঝামেলা করছে।”
– “মানে?”
– “রিতাকে আমি দেখতে গিয়েছিলাম তখন আমাকে জানাই ওর বয়ফ্রেন্ড আছে তারপর আর কথাটা আগায়নি। সেইদিন আমি অন্য একজন মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলাম সেইখানে আমাকে নিয়ে উল্টো পাল্টা বলে তাতে আমার বিয়েটা ভেঙে যাই। আর আজকে দেখা হতে ঝামেলা করছে..
এতক্ষনে রাশির সবটা বোধগম্য হলো। সেইদিন কফিশপে ছেলেটা যে সমুদ্র ছিল সেইটা বুঝতে অসুবিধা হলো না। ওর সমুদ্রের জন্য ভীষন মায়া হলো সাথে রিতার উপর রাগ হলো। এইভাবে কাউকে হ্যারাস করা কিন্তু ওর একদম ঠিক হয়নি।
সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– “আর সবথেকে কষ্টকর কি জানেন।”
– “কি?”
– “ওই রিতা আমার ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড আর ওদের কয়েকদিন পর এনগেজমেন্ট।”
রাশির মাথা ঘুরিয়ে উঠল। সমুদ্র আর অয়ন দুজন দুজনের বন্ধু আর রিতা-সমুদ্র দুজন দুজনকে সহ্যই করতে পারে না। মানে মাঝখান থেকে অয়ন বেচারা মার খাবে, একবার রিতার কাছে আর একবার সমুদ্রের কাছে। বেচারা তো শেষ। অয়নের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রাশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, না জানি অয়নের কপালে কি ঘুরছে।
সমুদ্রে’র খেয়াল হলো রাগের মাথায় অচেনা একটা মেয়ের সাথে অনেককিছুই শেয়ার করে ফেলেছে। তাই কথা ঘোরানোর জন্য বলল,
– “আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব।”
– “কি বলুন।”
– “সেই দিন সেই ছেলেটা’কে এক্সসেপ্ট করছেন না কেন?”
রাশি মৃদু হেসে বলল,
– “একটা কারন তো জানেনই আর অন্য কারনটা না হয় অন্য কোনদিন দেখা হলে বলব। আজ আসি, ভালো থাকবেন।”
সমুদ্র’কে কিছু বলতে না দিয়ে রাশি চলে যায়। সমুদ্র আশেপাশে একবার তাকিয়ে অয়নের দেখা না পেয়ে শপিংমল থেকে একাই বেরিয়ে গেল গজগজ করতে করতে।
#চলবে…