বিবাহ অভিযান পর্ব-০৫

0
145

#বিবাহ_অভিযান (৫)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

– “আপনি এইখানে?”

সমুদ্র সামনে তাকিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে ঠিক চিনে উঠতে পারল না। তাই মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল,
– “আপনি কে?”

সমুদ্রের পাল্টা প্রশ্নে রিতা বিরক্ত হয়ে বলল,
– “এই একদম ন্যাকামী করবেন না। সেইদিন আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন ভুলে গেছেন?”

সমুদ্র নিজের মস্তিস্কে কিছুটা চাপ দিতেই খেয়াল পড়ল, সামনে থাকা মেয়েটা রিতা, যাকে কিছুদিন আগে দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু বয়ফ্রেন্ড থাকায় বিয়ের কথাটা আর আগায়নি।

সমুদ্র ভদ্রতার খাতিরে বলল,
– “সরি আপনাকে ঠিক চিনতে পারিনি।”

রিতা মুখ বেঁকিয়ে বলল,
– “চিনতে পারেননি নাকি, ভাব নিচ্ছিলেন?”

রিতার কথা শুনে সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– “আরে ভাব নেবার কি আছে। আপনাকে আমি এতটাও ভালো করে লক্ষ্য করিনি যে সারাজীবন আপনার চেহারা আমার মনে থেকে যাবে।”

সমুদ্রের কথা শুনে রিতার মুখটা চুপসে যায়। এই ছেলে দেখা হলেই অপমান করে কেন ভাই! আগের দিন ওইভাবে কথা শোনাল, আবার আজকেও! রিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরো একটা নারী কন্ঠস্বর শুনতে পেল,

– “হেই আপনি সমুদ্র না?”

সমুদ্র ও রিতা দুজনেই সামনে তাকাল। একটা বেশ সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সমুদ্র মেয়েটাকে চিনতে পারল। এই মেয়েটাই সে যার জন্য এইখানে অপেক্ষা করছে। সমুদ্র মিষ্টি হেসে বলল,
– “হ্যাঁ আমিই সমুদ্র। আপনি সাথী রাইট?”

সাথী মিষ্টি করে হেসে বলল,
– “হুমম।”
– “বসুন। আপনি কিন্তু অনেকটা লেট করে এসেছেন।”

সাথী ফেসটাকে বাচ্চাদের মতো করে বলল,
– “সরি, আসলে রাস্তায় জ্যাম ছিল।”

সাথীর ফেস দেখে সমুদ্র আর কিছু বলতে পারল না। মৃদু হেসে বলল,
– “ইটস ওকে।”

রিতা দাঁড়িয়ে বিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।মেয়েটা কে সেইটা ওর মনে প্রশ্ন জাগছে। ওদের দুজনের কথা শুনে রিতার বুঝতে বেশি সময় লাগল না, দুজন এখানে কেন এসেছে। তখনি রিতার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল, মনে মনে শয়তানি হাসি দিল। সমুদ্র’কে টাইট দেবার একটা সুযোগ পেয়েছে সেইটা কিভাবে হাতছাড়া করবে!

রিতা মনে মনে প্ল্যানটা কষে নিয়ে হুট করেই সমুদ্রের পাশের সিটে বসে পড়ল। সমুদ্র ও সাথী দুজনেই অবাক হলো বিষয়টিতে। সাথী রিতাকে দেখিয়ে সমুদ্র’কে জিজ্ঞেস করল,
– “কে উনি?”

সমুদ্র উত্তর দেবার আগেই রিতা মিষ্টি হেসে বলল,
– “আমি সমুদ্রের গার্লফ্রেন্ড।”

সাথী ও সমুদ্র দুজনেই চমকে উঠল।এই মেয়ে বলে কি! সমুদ্র বিরক্ত হয়ে রিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
– “এই আপনি এইসব কি বলছেন? আপনি আমার গার্লফ্রেন্ড মানে কি?”

সমুদ্রের কথা শুনে রিতা কিছুটা ন্যাকামি স্বরে বলল,
– “আমি মানছি তোমার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে তাই বলে তুমি এইভাবে আমাকে অস্বীকার করবে?”

সবকিছু সাথীর‌ মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। রিতা বলছে সমুদ্র ওর বয়ফ্রেন্ড আর সমুদ্র অস্বীকার করছে! ওদের
কান্ড দেখে সাথী সমুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল,
– “এইসব কি?”
– “বিশ্বাস করুন আমি ওনাকে ঠিকমতো চিনি না, উনি আমাকে মিথ্যা ফাসাচ্ছেন।”

রিতা ন্যাকা কান্নার অভিনয় করে বলল,
– “বোন আপনিই বলুন একটা মেয়ে কি নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলে? ওর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে আর ওহ রাগ করে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে।”

রিতার কথা শুনে সাথী বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের উদ্দেশ্যে তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
– “লজ্জা লাগে না একটা মেয়ের সাথে রিলেশন করে আমাকে বিয়ে করতে আসছেন? আপনাকে তো পুলিশে দেওয়া উচিত।”
– “আরে আমার কথাটা শুনুন।”
– “কি শুনব! কিছুই শোনার নেয়, আমি বাড়িতে গিয়েই বিয়ের জন্য না করে দেব। এইরকম ছেলেকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা নেই আমার, যতসব ফালতু ছেলে।”

সাথী রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। সমুদ্র বারবার সাথীকে ডাক দিলেও সে পেছনে ফিরে তাকায় না। এইদিকে রিতা তো হাসতে হাসতে শেষ।

সমুদ্র রাগী চোখে রিতার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– “এই আপনি এইটা কি করলেন?”

রিতা ভাব নিয়ে বলল,
– “বেশ করেছি।আমাকে করা অপমানের বদলা নিলাম। আর অভিশাপ দিলাম আপনার কপালে বউ না জুটুক।”

কথাটা বলে রিতা হাসতে হাসতে চলে যায়।সমুদ্রের রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে, ইচ্ছা করছে রিতাকে আছাড় মারতে। আজ শুধুমাত্র রিতার জন্য হওয়া বিয়েটা ভেঙে গেল, অসহ্য লাগছে সবকিছু।

— —- —

রিতা হাসতে হাসতে বন্ধুদের কাছে ফিরে গেল। এখানে বন্ধুদের বিয়ের ট্রিট দিতে এসেছিল, সমুদ্রকে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

রিতাকে এইভাবে হাসতে দেখে রাশি জিজ্ঞেস করল,
– “কিরে পাগলের মতো হাসছিস কেন?”
– “একজনকে আচ্ছা মতো জব্দ করে এসেছি।”
– “মানে?”

রিতা হাসতে হাসতে বন্ধুদের সবটা বলল। কথাগুলো শুনে সবাই হাসলেও রাশি কিন্তু হাসল না। উল্টে রিতার মাথায় চাঁটি দিয়ে বিরক্ত ভরা স্বরে বলল,
– “এইরকম কেউ করে? শুধু শুধু একজনের বিয়ে ভাঙলি!”
– “আরে বাদ দে তো। ওই বজ্জাত ছেলের সাথে এইরকম হওয়াই উচিত।”

রাশি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
– “মানে তুই কি আগেই ছেলেটাকে চিনতিস?”
– “হুমম।”
– “কিভাবে?”

রিতা সমুদ্রের ওকে দেখতে যাবার ঘটনা’টা খুলে বলল।রাশি সবটা শুনে বলল,
– “যায় বলিস রিতা আমার কিন্তু বিষয়টা ঠিক লাগল না। তুই শুধু শুধু ছেলেটার লাইফে ঝামেলা করলি।”

রিতা মুখ বেঁকিয়ে বলল,
– “এতই যখন দরদ, যা তুই গিয়ে ওকে বিয়ে করে নে।”

রাশি রিতার দিকে তাকিয়ে হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল। এইসব মানুষকে কিভাবে বোঝাবে! এক বলতে গেলে আরেক মানে বার করে যতসব।

—- —

সমুদ্র বাড়িতে আসতেই ওর উপর প্রশ্নের ঝড় উঠল। সাথীর ফ্যামিলি সমুদ্রের বাবাকে ফোন করে বলেছেন,

– “আপনার ছেলের রিলেশন আছে আপনারা কি সেই খবর রাখেন?”
– “আপনি এইসব কি বলছেন? আমার ছেলের রিলেশন আছে মানে কি!”
– “মানে তো আপনারা বলবেন। আমার মেয়ে নিজে চোখে দেখে এসেছে, শুনে এসেছে। মেয়েটা কান্নাকাটি করছিল আপনার ছেলে নাকি মেয়েটার সাথে ঝগড়া করে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে। বলি ভাই এইভাবে মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলবেন না। ওই মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিয়ে দিন, কেমন।”

সমুদ্রের বাবা কি বলবেন কিছুই খুঁজে পেলেন না। যেখানে সমুদ্রকে প্রেম নিয়ে দুইবেলা খোঁটা দেন সেইখানে এইরকম একটা নিউজ সত্যি অপ্রত্যাশিত ছিল।সবকিছু একপ্রকার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল।

– “কি হলো মেয়ের বাবা কি বললেন?”
– “উনি বললেন তোমার ছেলের নাকি রিলেশন আছে।”
– “কি?”
– “হুমম।”

দুজনের মনেই হাজারো প্রশ্ন। সমুদ্র না আসা পর্যন্ত কোনো কিছুই ক্লিয়ার হবে না। সমুদ্র বাড়িতে ফিরতেই ওর মা বিরস মুখে বললেন,
– “এইসব কি শুনছি বাবু?”

সমুদ্রের বুঝতে অসুবিধা হলো না যা ঘটার ঘটে গেছে। বাবা মায়ের কান পর্যন্ত সবকিছুই চলে গেছে, এখন কি হবে?

– “কি হলো চুপ করে আছিস কেন? তোর মা কি প্রশ্ন করছে তার উত্তর দে।”
– “কি বলব, বললে কি বিশ্বাস করবে?”
– “মানে?”
– “প্রথম যে মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলাম মনে আছে?”
– “হ্যাঁ কেন?”
– “আজ সেই মেয়েটার সাথে দেখা গিয়েছিল কফিশপে। আর ওইখানেই…

সমুদ্র মা বাবাকে সবকিছু খুলে বলল। সবটা শুনে সমুদ্রের মা মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
– “কি ডেঞ্জারেস মেয়েরে বাবা, ভাগ্যিস বিয়েটা হয়নি নাহলে আমার বাবুর জীবনটা একে বারে তেজপাতা করে ছাড়ত।”

সমুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ওর কপালে কি বিয়ে নেই? একটার পর একটা বাঁধা এসেই যাচ্ছে, কবে যে বিয়ের বাজনা বাজবে!

#চলবে…