বিবাহ অভিযান পর্ব-০৭

0
99

#বিবাহ_অভিযান (৭)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

সমুদ্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে গত কয়েকদিনের কথা ভেবে চলেছে। এই কয়েকদিনের মধ্যে কতকিছুই না ঘটে গেল, সমুদ্রের রাগ হচ্ছে রিতার উপরে তার সাথে অয়নের উপরেও। ছেলেটা সেই যে গেল তারপর একটা ফোন পর্যন্ত করেনি, হয়তো গার্লফ্রেন্ড’কে পেয়ে বন্ধুকে ভুলতে বসেছে।

এইসব ভাবনার মাঝে সমুদ্রের খেয়াল পড়ল রাশির বলা শেষ কথাটা। অন্য কোনদিন দেখা হলে বলব, রাশি আর সমুদ্রের কি আবার দেখা হবে!

– “মেয়েটা এত কনফিডেন্স নিয়ে বলল কিভাবে আমাদের আবার দেখা হবে! মেয়েটা কি আমার চেনা কেউ?”

সমুদ্র উত্তরটা পেল না। কারন রাশি আর রিতা যে দুজন বান্ধবী সেইটা ওর অজানা আর সমুদ্র যেহেতু অয়নের ফ্রেন্ড তাই ওদের বিয়েতে থাকা’টা অস্বাভাবিক কিছু না। আর বিয়েতে গেলেই দুজন দুজনের মুখোমুখি হবে সিম্পল ব্যাপার।

সমুদ্রের ভাবনার মাঝে ফোন বেজে উঠল। হাতে ফোন নিয়ে দেখল অয়ন ফোন করেছে, সমুদ্র একবার ভাবল ফোনটা রিসিভ করবে না কিন্তু আবার কি ভেবে ফোনটা রিসিভ করল। ফোনটা রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে অয়ন বলে উঠল,
– “সরি ভাই।”
– “কিসের জন্য?”

অয়ন আমতা আমতা করে বলল,
– “আমি বুঝতে পারেনি রিতা তোর সাথে এইরকম করবে!”
– “বুঝে গেছিস? দেখে নিয়েছিস! এইবার আর আমাকে কোথাও ডাকবি না। আমি তোর বিয়েতে ও যাবো না।”

অয়ন আঁতকে উঠল। সমুদ্র বিয়েতে আসবে না মানে কি! তাহলে যে ওহ মাঠে মারা যাবে। একা হাতে সবকিছু সামলানো ওর পক্ষে সম্ভব না, সমুদ্রকে ওর ভীষনভাবে দরকার।

– “ভাই ভাই এইরকম করিস না প্লিজ, তুই ছাড়া আমি একদম মরে যাবো প্লিজ এইরকম করিস না।”

সমুদ্র কিছু একটা ভেবে বলল,
– “আমি যেতে পারি তবে একটা শর্তে।”
– ‘কি শর্ত?”
– “রিতা যদি আমাকে সরি বলে তাহলেই আমি তোর সবকিছূই থাকব আর সব দায়িত্ব পালন করব।”

অয়ন বেচারা ফাঁদে পড়ে গেছে। রিতা’কে দিয়ে কিভাবে সরি বলাবে! ওকে বলতে গেলেই তো খুন করে ফেলবে। আর যদি সরি বলাতে না পারে তাহলে সমুদ্র থাকবে না এখন অয়ন কোনদিকে যাবে?

– “কিরে চুপ করে গেলি?”

অয়ন কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
-“আচ্ছা দেখছি কি করতে পারি।”

— —- —

অয়ন আর সমুদ্র পার্কে অপেক্ষা করছে। অয়ন একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর পায়চারী করে চলেছে। সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– “আর কতক্ষন, তুই থাক আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি।”

সমুদ্র বসা থেকে উঠে যেতে যাবে অয়ন হাত ধরে আটকে বলল,
– “ভাই আর একটু প্লিজ।”

অয়ন সমুদ্রকে থামিয়ে দিয়ে ফোনটা বার‌ করল কল‌ করার জন্য তার আগেই একটা মেয়ের কন্ঠস্বর শুনতে পেল,
– “অয়ন’দা।”

অয়ন, সমুদ্র দুজনেই সামনে তাকাল।‌রাশি আর‌ রিতা দাঁড়িয়ে আছে। রাশিকে দেখে সমুদ্র প্রচন্ড রকমের অবাক হলো সাথে পাশে থাকা রিতা’কে দেখে বিরক্ত হলো।

রিতার চোখে মুখে বিরক্তি যেটা সমুদ্র’কে দেখে আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেল। অয়নের দিকে চোখ পড়তে রিতা মুখটা কিছুটা স্বাভাবিক করল, কারন অয়ন বারবার রিকুয়েস্ট করছে কুল থাকার জন্য।

রাশি রিতার কাছ ঘেঁষে ফিসফিস করে বলল,
– “যদি অয়ন’দাকে বিয়ে করতে চাস তাহলে ওনাকে সরি বলে দে নাহলে..

বাকিটা আর বলার প্রয়োজন হলো না। রিতা দাঁতে দাঁত চেপে রাশির মতোই ফিসফিস করে বলল,
– “শুধুমাত্র তোর কথাতে আমি সরি বলছি নাহলে ওনাকে সরি বলতে আমার বয়েই গেছে।”
– “যা এখন বল।”

রিতা সমুদ্রদের দিকে কিছুটা আগিয়ে গিয়ে নরম গলায় বলল,
– “সরি ফর এভরিথিং। প্লিজ আপনি আমার ব্যবহারে কিছু মনে করবেন না।”

সমুদ্র ভাব নিয়ে বলল,
– “ইটস ওকে। পরের বার এইরকম করার আগে খেয়াল রাখবে।”

রিতা রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগে রাশি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
– “অয়ন’দা তুমি রিতাকে নিয়ে ওইদিকে গিয়ে একটু টাইম স্পেন্ড করো যাও।”

রাশির চোখের ইশারা পেয়ে অয়ন রিতাকে নিয়ে তড়িঘড়ি সাইটে চলে গেল। রাশি গলাটা একটু ঝেড়ে বলল,
– “রিতা তো আপনাকে সরি বলল এইবার আপনি হ্যাপি তো।”

সমুদ্র মৃদু হেসে বলল,
– “রিতা আমাকে সরি বলেছে ঠিকই কিন্তু মন থেকে বলেনি।”
– “আসলে…

রাশিকে বলতে না দিয়ে সমুদ্র বলল,
– “কিছু বলতে হবে না। আমি সবটাই জানি এবং বুঝি। আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম রিতা অয়নের কথা রাখে কিনা।”

সমুদ্রের কথার প্রেক্ষিতে রাশি আর কিছু বলতে পারল না। সময়টা এমনি বয়ে যেতে লাগল, দুজন মানুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তাদের মুখে কোনো কথা নেয়। আসলে কে কোথা থেকে শুরু করবে সেইটাই বুঝে উঠতে পারছে না।

অন্যদিকে,

রিতা অয়নের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
– “তোমার বন্ধুকে তোমার কথামতো সরি বললাম আর ওহ আমাকে কিভাবে খোঁচা দিয়ে কথা বলল দেখছ?”

অয়ন মৃদু হাসল। সেটা দেখে রিতার রাগ আরো কিছুটা বেড়ে গেল, সমুদ্র খোঁচা দিল আর তাতে অয়ন হাসছে! রিতা ফুঁসে ওঠে বলল,
– “তুমি হাসছ!”

অয়ন রিতার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
– “তুমি এতটা অবুঝ কেন বলো তো!”
– “মানে?”
– “সমুদ্র তোমাকে খোঁচা দিয়েছে সেইটাই শুধু দেখল কিন্তু ওহ কেন তোমাকে সরি বলতে বলেছে সেইটা তো একবারও বুঝলে না।”

সবটা রিতার মাথার উপর দিয়ে গেল। অয়ন কি বলতে চাইছে? রিতা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
– “তুমি কি বলতে চাইছ ভালো করে বলো।”

অয়ন মৃদু হেসে বলল,
– “এখনো পর্যন্ত তুমি সমুদ্রের সাথে যা যা করেছ তার সবকিছুই আমি জানি। তবে তার কোনকিছুই সমুদ্র আমাকে বলেনি, রাশি বলেছে। আচ্ছা তুমি একটাবার ভেবে বলো তো তুমি সমুদ্রে সাথে যেইগুলো করেছ সেইগুলো ঠিক কি?”

রিতা ভাবুক হলো। সত্যি তো ওহ এই কয়েকদিনে সমুদ্রের সাথে যেইগুলো করেছে সেইগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অয়ন আবারো বলতে শুরু করল,
– “তুমি যেগুলো করেছ তার কোনো কিছুই সমুদ্র আমাকে জানায় নি। কিন্তু ওহ চাইলেই আমাকে সবটা বলতে পারত এমনকি তোমার আর আমার বিয়েতেও প্রবলেম করতে পারত। জানো আমার মা সমূদ্র’কে নিজের ছেলের মতো ভালবাসে, ওহ যদি একটাবার তোমার কাজকর্ম গুলো আমার মাকে বলত তাহলে আমার মা তোমাকে কখনোই মেনে নিত না। আর সবথেকে বড়ো কথা কি জানো, আজকে এই সরি বলা’টা সমুদ্র মন থেকে বলেনি ওহ শুধু দেখতে চেয়েছিল তুমি আমার কথা কতটা শোন। আমার কথার দাম তোমার কাছে ঠিক কতটা। আমার অনেক বন্ধু আছে কিন্তু আমার লাইফে সমুদ্র একটাই আছে আর সারাজীবন থাকবে। কারোর জন্য আমার জীবনে সমুদ্রের অবস্থান কখনোই পরিবর্তন হবে না।”

অয়নের শেষ কথাগুলো রিতা’কে বুঝিয়ে দিল অয়নের জীবনে সমুদ্র ঠিক কি। রিতা নিজের ভুলটা বুঝতে পারল কিন্তু সমুদ্র ওর অপছন্দের তালিকায় থেকেই গেল।

—- — —-

দুজন মানুষ আর কতক্ষন এইভাবে রোবটের মতো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে? রাশি নিরবতা ভেঙে বলল,
– “চুপ করে আছেন যে?”

সমুদ্র গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
– “অপর পাশের মানুষটা চুপ করে থাকলে আমি আর কি করতে পারি।”

রাশি বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না, আবারো নীরবতা বিরাজ করতে লাগল।বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর, সমুদ্র নিরবতা ভেঙে বলল,
– “সেই ছেলেটাকে এক্সসেপ্ট না করার কারনটা কিন্তু বললেন না।”

রাশির খেয়াল পড়ল আগের দিন সমূদ্র’কে বলেছিল অন্য কোন দিন দেখা হলে বলবে। ছেলেটা এখনো সেই কথা মনে রেখেছে! রাশি মৃদু হাসল, সেইটা দেখে সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

– “আপনি হাসছেন কেন?”
– “এমনিতেই।”
– “ওহ।”
– “কারন জানতে চাইছেন?”
– “হুমম। আপনিই বলেছিলেন বলবেন।”

রাশি মৃদু হেসে বলতে শুরু করল,

#চলবে…