বেলা শেষে শুধু তুমি পর্ব-১৪+১৫

0
580

#বেলা_শেষে_শুধু_তুমি
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৪

–“দেখো মা আমি ওই বাড়িতে যেতে পারব না। আমার অনেক কাজ আছে। আর অফিসেও তো যেতে হবে না? ঐশানীকে পাঠিয়ে দাও একাই। যতদিন ইচ্ছে থেকে আসুক। পারলে আর না-ই আসুক।”
অকপট ভাবেই কথাগুলো বলে সোজা হয়ে বসে অভয়। কথাগুলো শুনে মিসেস. তনয়া বড়ই অসন্তুষ্ট হন। রাহাত সাহেবও মুখটা গম্ভীর করে ফেলেন। বিয়ের পরে আজ দুজনের জন্য ছোটখাটো রিসেপশন হবার কথা আছে। আর রিসেপশনে ঐশানীর পরিবার আসবে ঐশানী আর অভয়কে নিতে। কিন্তু অভয় যেতে নারাজ। রাহাত সাহেব মুখ খুলেন এবার।

–“অন্যসময় তো ঠেললেও অফিসে যাবার নাম নিস না। এখন যেই তোর শ্বশুরবাড়িতে যাবার নাম নিতেই আগে অফিস অফিস করে দৌড়াচ্ছিস? আমি অন্যদিন যেভাবে অফিসে সামলে নিই। এবারও সেভাবেই সামলে নেব। মোটকথা, ঐশানীর সাথে শ্বশুড়বাড়ি যাচ্ছিস! আরে বাবা বিয়ের পর জোড়াই শ্বশুরবাড়ি যাবারই তো নিয়ম। একবার গিয়ে দেখ। জামাই আদরের শেষ হবে না।”
–“বাবা যাব না। এখানেই যতটা জ্বালাচ্ছে মেয়েটা। নিজের বাড়িতে গিয়ে আমার সাথে কি না কি করে!”

রাহাত সাহেব ছেলেকে বোঝাতে ব্যর্থ হলেও আবার বলেন….
–“তাছাড়া গ্রাম থেকে তোর দাদিজান বার বার ফোন করছেন। জার্নি করতে পারে না বলে নাতির বিয়েতে আসতে পারেনি। এখন নতুন নাতবউ এর মুখ না দেখে শান্তি পাচ্ছে না। ওখান থেকে ফিরে গ্রামে যাব সবাই হইহই করে। বেশি দিন না শুধু নিয়ম রক্ষার্থে একদিন থেকে এলেও পারিস।”
বাবার কথার সাথে না পেরে অবশেষে অভয় হাফ ছেড়ে বলে….
–“ওকে জাস্ট একদিনই কিন্তু! মনে থাকে যেন।”
–“হ্যাঁ হ্যাঁ চলবে।”
স্বস্তির হাসি ফুটিয়ে বলেন রাহাত সাহেব।

রুমের দরজা খোলা থাকায় ভিতরে ঢুকে পড়ে অভয়। সামনে ঐশানী উল্টোদিকে ঘুরে কিছু করছে। মনে হচ্ছে কিছু খাচ্ছে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কিছুক্ষণ ঐশানীর কর্মকান্ড দেখে আচমকা বলে ওঠে….
–“কি করছো তুমি?”
হঠাৎ অভয়ের কন্ঠে যেন আঁতকে তাকায় ঐশানী। আতংকিত চোখমুখে ঘাড় ঘুড়িয়ে অভয়কে একবার দেখে নিয়ে নিজের ট্রলিব্যাগে কিছু একটা ঢুকিয়ে পানির গ্লাস নিয়ে সামনে ঘোরে। তা দেখে অভয় এগিয়ে আসতে আসতে বলে….
–“চোর যখন চুরি করে তখন তার মুখটা এমনই হয়। কি করছিলে?”

–“পা…পানি খাচ্ছিলাম। আর আপনার ঘ…ঘরে এমন কোনো মহামূল্যবান জিনিস রাখা নেই যে আমাকে সেটা চুরি করতে হবে।”
–“তাহলে কেন মনে হলো আমার যে ব্যাগে কিছু লুকিয়ে রাখলে? কি রাখলে? লেট মি চেক!”
বলেই ঐশানীর ব্যাগে হাত দিতে যায় অভয়। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগটা টান দিয়ে নিজের দিকে করে নেয় ঐশানী। মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে….
–“আমাকে যদি আপনার এতোই চোর মনে হয় তাহলে আপনার ঘরের সব জিনিস চেক করে নিন। আর আপনাকে কেন আমার ব্যাগে হাত দিতে হবে হুহ? আপনি জানেন না মেয়েদের ব্যাগে পারমিশন ব্যতীত হাত দেওয়া মহাপাপ! এর জন্যও ফাঁসিও হতে পারে। জানেন না? জানেন না?”

অভয় বুকে হাত রেখে চোখমুখ জড়িয়ে কথাগুলো শোনে। থমথমে গলায় একটাই জবাব দেয়….
–“ওভার এক্টিং কুইন!!”
বলেই বিছানায় বসে ধপ করে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ে অভয়। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত। গতকালও ঠিকঠাক ঘুমাতে পারেনি। বুকের ওপরে এমন মেয়ে থাকলে তো অশান্ত মনকে শান্ত করতেই রাত কাবার হয়ে যাবে। ঐশানী তার ব্যাগটাকে নিয়ে গিয়ে খাটের নিচে ঢুকিয়ে দেয়। ব্যাগটা খাটের নিচে ঢুকিয়ে দেওয়ার আগে ভালো করে ছোট তালা দিয়ে লক করে দেয় সে। অভয় টা দেখে মজা ছলে বলে ওঠে……
–“এবার তো আমার মনে হচ্ছে ব্যাগে কোনো হীরে-জহরতের ভান্ডার রেখে দিয়েছো যার কারণে এতোকিছু সিকিউরিটি দিচ্ছো ব্যাগটাকে। আচ্ছা তোমার সব কাপড়চোপড় তো ওয়ারড্রবে মা আমার কাপড় সাইড করে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আবার আলমারিতেও বেশ কিছু কাপড় দেখলাম তোমার। তাহলে ব্যাগে কি এমন আছে?”

–“একটা ডাইনোসরের ডিম রেখে দিয়েছি। পৃথিবীতে তো ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই বলা যায় না ডিম দেখে আপনার মতো মানুষ হামলে পড়তে পারে।”
অভয় নিজের প্রশ্নের আজগুবি উত্তর পেয়ে বিরক্ত হয়ে শ্বাস নেয়। সে বুঝতে পারে না মেয়েটার কথা বলার ধরনই কি এমন? নাকি শুধু তার সাথেই এভাবে কথা বলে? এতো কিছুর পরেও অভয়ের কেন জানি মনে হলো ঐশানী তার আজগুবি কথা বলে আসল কথা গোপন করে গেল। অবশ্য তাতে তার কি? লুকিয়ে রাখুক যত কথা। তার জানার কোনো আগ্রহ নেই।

নিজেকে কথাগুলো বুঝিয়ে ঐশানীর দিকে তাকাতেই অভয় দেখে ঐশানী মাথা ধরে টলছে। অভয় দ্রুত ঐশানীর পায়ের দিকে তাকায়। ও পায়ের ধাপ ফেলতে পারছে না ঠিকঠাক। নড়বড়ে করে হাঁটছে। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে অভয়। হাত বাড়িয়ে বলে…..
–“তুমি ঠিক আছো?”
–“হ্যাঁ আমি ঠিকই আছি। মনে হচ্ছে বেশি স্ট্রেস নেওয়ার কারণে শরীর দুর্বল লাগছে। লো প্রেসার তো!”
আস্তেধীরে বেডে বসে ঐশানী। অভয় বিদ্রুপাত্মক কন্ঠে বলে…..
–“এতোটুকু মেয়ের লো প্রেসার!! বাড়িতে ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করো না? নাকি আমার বর্তমান শ্বাশুড়ি খেতে দেন না।”

অভয়ের বিদ্রুপে চোখ গরম করে তাকায় ঐশানী। ফুঁসে বলে….
–“আমি এইটুকু মেয়ে না। লো প্রেশার হতেই পারে এই বয়সে। বাইশ বছর বয়স আমার।”
–“আমার বয়স জানো?”
–“কি করে জানব? বলেছেন কখনো?”
–“ঊনত্রিশ বছর বয়স। ৭ বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও কি করে তুমি গণহারে আমার সাথে তর্ক করে যাও। ভাবা যায়!”
ঐশানী বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলল….
–“বয়সটা বাড়লেও আমার মতো আপনি পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে ভোলেন না।”

অভয় ঐশানীর সাথে তর্কে কখনো জিততে পারবে না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টায় সে।
–“তোমার শুয়ে রেস্ট নেওয়া উচিত। একটু আগেই মাথা যেহেতু ঘুরে গেছিল। শুয়ে পড়ো!”
–“না থাক।”
অভয়ের খেয়াল হয় অভয় বেডের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে শুয়ে আছে। দ্রুতই উঠে বসে সে। হয়ত ঐশানীও একারণেই শুতে চাইছে না। গলা খাঁকারি দিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলে….
–“বললাম তো শুয়ে পড়ো। শরীরটা খারাপ হলে দোষটা কার হবে জানো তো? আমার! সো শুয়ে পড়ো। তোমার জন্য তোমার ফ্যামিলি আমাকে কথা শুনাবে। আবার নির্যাতনের কেস করে দিলে সোজা জেলে। মেইন কথা ইউ হ্যাভ টু টেক রেস্ট।”

ঐশানী অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে মনে মনে হাজারো বকতে বকতে শুয়ে পড়ে। মিনিট দশেক ঐশানীর দিকে তাকিয়ে থেকে ফেসবুকে লগইন করার কথা ভাবে অভয়। কিন্তু ফোন খুঁজে পায় না আশেপাশে। তার মনে পড়ে অনিন্দিতা তার ফোন নিয়ে গিয়েছিল। সেই সাথে মনে পড়ে সায়রার কথা। নিজের ওপর নিজেই চমকে যায় অভয়। নিজেই নিজেকে মনে মনে প্রশ্ন করে….
–“হোয়াটস রং উইথ ইউ অভয়? কি হয়েছেটা কি তোর? আজ পর্যন্ত তুই যতই ব্যস্ত থেকেছিস সায়রার নামটা তোর মনে থেকেই গেছে। আর আজ তোর এমন দিন এলো যে তোকে জোর করে সায়রার নাম মনে করতে হচ্ছে? যার সাথে একদিনও কথা না বলে থাকতে পারতিস না এখন তাকে ভুলেই কতটা সুন্দর ভাবে কাটিয়ে দিচ্ছিস সময়? তুই কি কোনো ভাবে ঐশানীর মোহে আটকাচ্ছিস? অনিন্দিতার সাথে তোকে তবে চ্যালেঞ্জ হারতে হবে।”

অভয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উঠে বেরিয়ে যায় অনিন্দিতার কাছ থেকে ফোনটা আনতে। ফোনটা এনে ঘরে পায়চারি করতে করতে টান টান উত্তেজনা নিয়ে কল করতে থাকে সায়রাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে এক দুর্বল ও বিষন্নতায় ভরা কন্ঠে ভেসে আসে।
–“অবশেষে তোমার সময় হলো আমাকে কল করার?”
অভয় এই কন্ঠ চিনতে পারে না। সায়রারই গলা তবে এই কন্ঠে এতোটাই দুঃখ মেশানো যে যেকারোই বুঝতে অসুবিধা হবে।
–“একসময় আমি আমার সারাটা দিন তোমায়ই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্য সবটাই পাল্টে দিল।”

–“ওহ একসময় চেয়েছিলে? এখন আর আমাকে চাও না। তাহলে ফোন করেছো কেন? নতুন বউকে নিয়ে আনন্দে আছো না? দুজনে খুব খুশিতে আছো?”
কান্নারত অবস্থায় বলে সায়রা। সে পারছে না অভয়ের সাথে অন্য মেয়েকে জুড়তে। অন্য মেয়ের সাথে অভয়ের নাম জুড়তেই তার কান্না আসছে। অভয় সায়রাকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
–“ঐশানী তোমার কথা জানে সায়রা। ওর সাথে মিল হতে পারে না আমার।”
–“তাহলে প্লিজ আমার সাথে দেখা করো। আমি তোমাকে আমার সামনে দেখতে চাই। নিজেকে বোঝাতে চাই তুমি আমারই আছো। প্লিজ দেখা করো।”

অভয় ঘাবড়ে যায়। এসময় দেখা করতে বাইরে বের হতে হলে যে কেউ সন্দেহ করবে। তারপর কি হতে পারে তা ওর জানা নেই।
–“সরি সায়রা। আমি পারব না এই মূহুর্তে দেখা করতে। বাড়িতে হয়ত মেহমান আসতেও শুরু করে দিয়েছে। সন্ধ্যে বেলায় রিসেপশন। এখন বাইরে বের হলে অনেক বড় সিনক্রিয়েট হতে পারে।”
–“মিথ্যে কথা বলছো তুমি আমায়। আসলে তুমি দেখাই করতে চাও না। বাহানা দেখাচ্ছো আমাকে। ইউ আর এ লায়ার অভয়।”
ফোন কেটে দেয় ওপর পাশ থেকে সায়রা। অভয় ‘হ্যালো হ্যালো’ বলেও কলে না পেয়ে দেখে সে অলরেডি কল কেটে দিয়েছে।

দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ফোনটা রেখে দেখে ঐশানী একনাগাড়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হয়ত সে অনেক কথায় শুনেছে। নিরব থাকার পর ঐশানী বলে…..
–“ভালোবাসায় মান অভিমান হয়। ভালোবাসা সেই সম্পর্কে থাকলে মান-অভিমান ভুলে দুজন একও হয়। আপনাদের মাঝে ভালোবাসা থাকলে আপনারাও একসময় এক হবেন। এটা নিয়ে হতাশ হবেন না।”
–“তুমি এতোকিছু জানো কি করে?”

অভয়ের প্রশ্নে আলতো হেসে শোয়া থেকে ওঠে ঐশানী।
–“জীবনে অনেককিছু জানতে হয়। পরিস্থিতি অনেক কিছু শিখিয়ে দেয় জানিয়ে দেয়। আমি এতোটাও ছোট নই যে ভালোবাসা কি সেটা জানব না। আমার বাড়ি থেকে ঘুরে এলেই আপনি বরং সায়রার সাথে দেখা করে ওকে সারপ্রাইজ দিয়ে ওর অভিমান ভাঙিয়ে দেবেন।”
–“কি সারপ্রাইজ!”
–“ওহ হো! আপনি সিনেমায় দেখেননি? হিরো হিরোইনকে কত সুন্দর করে প্রপোজ করে? আপনি তো পারেন রেস্টুরেন্ট বুক করে ওর জন্য সারপ্রাইজ প্রপোজ করতে।”

ঐশানীর আইডিয়াটা খারাপ নয়। করাই যায়। অনেক ভেবে সে বলে….
–“এই প্রথম দেখলাম কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে প্রেমিকার রাগ ভাঙিয়ে দিতে আইডিয়া দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।”
ঐশানী এই কথায় নির্বাক হয়ে পড়ে। তার মায়াভরা চাহনি বেশ কিছু কথা বলছে। তবে অভয় যে ঐশানীর চাহনিতে ভেসে থাকা কথা পড়তে পারছে না। ঐশানী নিজেই বুঝতে পারছে না তার মাঝে কি হচ্ছে। অভয় আর কি বুঝবে? তার কন্ঠ কাঁপছে। তার নিঃশ্বাস ওঠানামা করছে। হয়ত কোনো অজানা যন্ত্রণায়! যেটা সব স্ত্রীর-ই হয়। কাঁপা কাঁপা গলায়ই সে জানায়…..
–“আমাদের মাঝে কি কখনো স্বামী-স্ত্রী এর সম্পর্ক হয়েছে?”
অভয়ও এবার বাকরুদ্ধ। আসলেই থেকেও নেই তাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রী এর সম্পর্ক। এর উত্তর না দিতে পারে কোনোমতে ঐশানীর নজর থেকে পালিয়েই বাইরে আসে অভয়।

সন্ধ্যাবেলা! বাড়ির কাছে অভয়দের একটা বাংলো আছে। সেখানেই হয়েছে আয়োজন। আশেপাশে সোনালী রঙের আলোয় ঝকমক করছে। অভয় আর ঐশানীকে বসিয়ে রাখা হয়েছে দুটো পাশাপাশি চেয়ারে স্টেজের ওপর। অভয় বরাবরের মতো মুখটা হাসিবিহীন করে রেখেছে। নাকের ডগা হালকা লাল। ঐশানী দাঁত বের করে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। তার গজদাঁতের হাসি হাসিকে যেন অন্যরুপ দিয়েছে। তবে তার হাসি অন্য কারণ রয়েছে। তা হলো অনুষ্ঠানের আগেই মিসেস. তনয়া অভয় ও ঐশানীকে দুটো ড্রেস দিয়েছিল। একটা সোনালী রঙের আরেকটা সাদা রঙের। অভয় সাদা পছন্দ করলেও ঐশানী পছন্দ করল সোনালী রঙের ড্রেস। মিসেস. তনয়া তার কথায় দুজনকেই সোনালী রঙের ড্রেস পড়তে দিলেন। যার কারণে অভয় রাগে বম হয়ে আছে আর ঐশানী হাসি নিয়ে আছে। সে হাসি নিয়ে দৃঢ় প্রতিক্ষা করছে নিজের পরিবারের।

অনিন্দিতাকে এক মুঠো রঙ মাখিয়ে ভূতের মতো করে তার হাত থেকে বাঁচতে বাংলোর বাইরে দৌড়ে আসে ইশান। অসাবধানতায় কারো সাথে ভুলক্রমে ধাক্কা খেয়ে বসে সে। দ্রুততার সাথে বলে….
–“সরি সরি সরি!! খেয়াল করিনি।”
বলেই সে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়েছে সে। মাথা চুলকে আগামাথা পর্যবেক্ষন করে মেয়েটিকে। অতিরিক্ত ফর্সা গড়নের মেয়ে। চোখ তার টানা টানা। নাকটা একটু বোঁচা। চুলগুলো বেশি বড় না। কাঁধের একটু নিচ পর্যন্ত। সন্দেহ ছাড়াই সে রূপসী!! মাথা চুলকে ইশান বলে….
–“কে আপনি নন্দিনী?? আগে তো দেখেনি? কনের বাড়ির কেউ?”
–“সরি! আমি নন্দিনী নই। আমি সায়রা। এখানে অভয় খানের রিসেপশন হচ্ছে তো?”
–“হুম হুম! অভয় খান। আমার মামাতো ভাই বুঝলেন? কে হন আপনি অভয়ের?”

–“অনেক কাছের কেউ। এক্সকিউজ মি!”
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যায় সায়রা। ইশান মাথা চুলকায়।
–“যাহ শালা! এমন করে মাইয়াটা বলল যেন অভয়ের আরেক বউ হয়। অভয় কি ঐশানী ভাবির সতিনও রেখেছে নাকি?”

চলবে……

#বেলা_শেষে_শুধু_তুমি
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৫

সায়রা বাংলোর ভেতরে ঢুকতেই লোকজনের ভীড়ে হারিয়ে যাবার মতো অবস্থা হয়। এমনিতেই সারাদিন একটুও না খেয়ে থাকায় মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে ওর। এই ভীড়ে তার নাজেহাল অবস্থা। ভীড় থেকে কোনোমতে বেরিয়ে আসে সে। মোটা লাল কার্পেটের সাথে তার হিল জুতো পড়া পায়ের হোঁচট খেতেই পড়ে যেতে নেয় সে। একটি আগন্তুক মেয়ে ছুটে এসে তার হাত দুটো ধরে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দেয়। সায়রা মেয়েটির আপাদমস্তক খেয়াল করে। কালো রঙের সোনালী পাড়ের পাতলা শাড়ি মেয়েটির পরনে। ঘন কালো চুল ছেড়ে দেওয়া। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক পড়া। আগন্তুক মেয়েটি আর কেউ নয় অনিন্দিতা নিজে। অনিন্দিতা ভালো করে লক্ষ্য করে সায়রাকে। ও প্রথমে চিনতে না পারলেও তার ভাইয়ের ফোনে সায়রার ছবি দেখায় সে চিনেই ফেলে সায়রাকে।

অনিন্দিতা খানিকটা ঘাবড়ে যায় সায়রাকে এই অনুষ্ঠানে দেখে। ও কি করতে এসেছে এখানে? কোনো সিনক্রিয়েট করতে এলে কারোর মানসম্মান থাকবে না। ঝটপট সে বলে ওঠে…..
–“সায়রা রাইট?”
সায়রা অবাক চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়। এর আগেও সে অনিন্দিতাকে ছবিতে দেখেছিল। তাই সেও বলল….
–“অনিন্দিতা?”
–“হ্যাঁ ঠিকই ধরেছো। তা এখানে? কোনো কাজ ছিল? নাকি ভাইয়া ইনভাইট করেছে গেস্ট হিসেবে?”

–“আমি নিজে থেকে এসেছি। তুমি তো একটা মেয়ে! আমার মনের অবস্থা নিশ্চয় বুঝতে পারবে। আমি পারছি না এভাবে অন্য কারোর সাথে আমার অভয়কে মেনে নিতে। তাই ওর সাথে বোঝাপড়া করতে এসেছি।”
কথাগুলো বলতে বলতে চোখে পানি ভরে এলো সায়রার। আর একটু হলেই কান্নার বন্যা বইয়ে দিতে তার সময় লাগবে না। অনিন্দিতার বেশ খারাপ লাগলো সায়রাকে দেখে। তবে প্রকাশ করল না। অনিন্দিতা হুট করেই সায়রার হাতটা ধরে সাইডে নিয়ে এলো। সায়রার চোখেমুখে বিরক্তির আঁচ দেখা যায়।

–“কি করছো? আমি অভয়ের সাথে কথা বলতে এসেছি। অভয় কোথায়?”
–“এই দিনে ভাইয়ার কোথায় থাকার কথা জানো না তুমি? হ্যাঁ আমি একটা মেয়ে। একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙার সাহস আমার নেই। তোমায়ও এটা বুঝতে হবে তুমি একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙতে পারো না। তোমার যতই কষ্ট হক না কেন!”
সায়রার বেশ রাগ হয় অনিন্দিতার কথা শুনে। সে কেন করবে স্যাক্রিফাইজ? এটা তার ভালোবাসা। সে করবে না কোনো স্বার্থত্যাগ।

মৃদুস্বরে সায়রা রাগ বজায় রেখে বলে…..
–“আমার স্বপ্নে বানানো সংসারের কি হবে? যেখানে অভয়কে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছি আমি? আমার কোনো ইচ্ছে নেই অন্য কোনো মেয়ের সংসার ভাঙার। কিন্তু এটা আমার জীবন মরণের প্রশ্ন! ভালোবাসা না পেলে আমি বেঁচে থেকেও মরে যাব। নিজেকে মরতে দিতে পারব না আমি। তুমি কি পারতে? আমার জায়গায় নিজেকে একবার বসিয়ে দেখো।”
–“হয়ত কষ্ট হতো একটু। কিন্তু পারতাম আমি। এমনকি আমি অন্যের সংসার না ভেঙে এই সিদ্ধান্তই নিতাম। কারণ কারোর জীবনে তৃতীয় ব্যক্ত হয়ে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। সেল্ফ রেসপেক্ট বলেও তো একটা জিনিস আছে!”

সায়রা হাসে। হাসিটা বিদ্রুপের। হাসি বজায় রেখে বলে….
–“কাকে তৃতীয় ব্যক্তি বলছো? আমি নই অভয়ের জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি। অভয়ও আমাকে ভালোবাসে। ও আমাকে বলেছে।”
–“ভালোবাসে না। ভালোবেসেছিল! সরি একটু বলতে ভুল করলাম। তোমার মোহ বা মায়াতে আঁটকা পড়েছিল। আরে একটা কুকুরবিড়ালের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলেও তো মানুষের মায়া হয়। মানুষ এমন একটা জীব যার মাঝে সবথেকে বেশি মায়া বিরাজমান। ও ভুলে যাবে তোমায়। যাবে কেন বলছি অলরেডি গেছে।”

সায়রা এবার বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে। ও মেনে নিতে পারছে না। অবিশ্বাসের সাথে ও বলে…..
–“আমি মানতে পারছি না তোমার কথা। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না আমার এই কথা।”
–“ঠিক আছে এসো আমার সাথে। নিজেই দেখেও নাও অভয় আর ভাবিকে।”
অনিন্দিতা ভীড়ের মধ্য দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। পেছন পেছন কাঁপা কাঁপা পায়ের ধাপ ফেলে অনুসরণ করে সায়রা অনিন্দিতাকে। ওর সবটা দুঃস্বপ্ন লাগছে। গলায় যেন কাটা বিঁধে আছে। ও শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই। এর থেকে অশান্তির বোধহয় আর কিছু হয় না।

–“এই মেয়ে এভাবে হাসছো কেন? একে তো গজদাঁত। তার ওপর পুরো সব পাটি দাঁত বের করে হাসছো। গজদাঁতওয়ালা মেয়েদের দাঁত বের করে না হাসাই ভালো বুঝলে? দেখতে বিশ্রী লাগে।”
একটি অচেনা মহিলার এমন মক্তব্য শুনে মুখ থেকে হাসিটা গায়েব হয়ে যায় ঐশানীর। সরু দৃষ্টিতে চেয়ে দেখে মহিলাটিকে। তার পাশে আরেক মহিলা। ঐশানী কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না। তার মায়ের কঠোর আদেশ শ্বশুড়বাড়ি কারোর মুখে মুখে জবাব দেওয়া চলবে না। শান্ত হয়ে থাকতেই হবে। ওপর পাশের মহিলা আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে ঐশানীকে দেখে বলে…..

–“তনয়া কাকে পছন্দ করে ঘরে তুলল? অভয় পোলাডা লম্বায় মাশাআল্লাহ। এমন লম্বা ছেলের পাশে এমন খাটো বউ মানায় নাকি? তনয়ার হুঁশজ্ঞান নেই নাকি?”
নিজেকে শান্ত রাখা দায় হয়ে যাচ্ছে ঐশানীর। আশেপাশের সবাই তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঐশানী লম্বায় একটু খাটো। ৫ ফিট ১ কি ২ হবে। খুব খাটো তাও নয়। হয়ত অভয়ের মতো লম্বা মানুষের সাথে তাকে খাটোই লাগে। রাগে ও অপমানে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে মাথা নিচু করে বসে থাকে সে। ইচ্ছে করছে অনেক কিছু বলতে। কিন্তু পারছে না। চোখে পানি টলটল করছে।

অভয় প্রথম মহিলাটির কথা শুনে চুপচাপ ছিল পাশে। কিন্তু তার রাগ হচ্ছে অসম্ভব পরিমাণে। তাদের এতো বড় অধিকার কে দিল ঐশানীকে এসব বলার? আবারও দ্বিতীয় কথাটিও যেন অভয়ের রাগের আগুনে ঘি ঢালার কাজটা অনায়াসেই করে দিল। ঐশানীর দিকে এক পলক তাকায় অভয়। মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে। অভয় এবার চেয়ারের হ্যান্ডেলে এক হাত রেখে আয়েশ করে বসে বলল…..
–“আপনারা কি দাওয়াত রক্ষা করতে এসেছিলেন না? আমার বউয়ের খুঁত ধরার জন্য আমি আছি তো। আপনাদের আত্নীয় হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আমার বউয়ের খুঁত ধরার জন্য নয়।”

ঐশানী অভয়ের এমন কথাগুলো এক্সপেক্টই করেনি। পাহাড়ের সমান হতভম্বতা নিয়ে চোখ ছলকে পাশে তাকায় সে। অভয় তার হয়ে প্রতিবাদ করছে ভাবতেই মনে অন্যরকম দোলা লাগছে। দুইবার ‘আমার বউ’ শব্দটা শুনে বুকটা দুরুদুরু করছে। ইশশ….কতই না সুন্দর মোহনীয় লাগছিল সেই শব্দটি। ঐশানীর ইচ্ছে করে আবারও ‘আমার বউ’ শব্দটি শুনতে।

কথা শোনানো মহিলা দুটো এক গালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। যারা ঐশানীকে কথা শোনাচ্ছিল তারা হলেন মিসেস. তনয়ার চাচাতো বোন। তনয়ার নিজের কোনো ভাই-বোন নেই বলে বড়ই সাধ করে উনাদের দাওয়াত দিয়েছেন।
–“মা গো মা! ছেলের কথা শুনো। একদিন যেতে না যেতে বউয়ের আঁচলের তলায় ঢুকে পড়ে কিভাবে বউয়ের গুনগান গাইছে আর আমাদের অপমান করছে? এই অনুষ্ঠানে আর থাকা যাবে না।”

অভয় হেসে ঐশানীর হাতটা খপ করে নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করে নেয়। হাসিটা প্রসারিত করে বলে…..
–“আর কি যেন বলছিলেন? ঐশানীর গজদাঁতের হাসি ভালো লাগে না। হাসতে নেই আরো অনেক কথা। আপনাদের ওর হাসি বাজে লাগলে চোখ বন্ধ করে থাকবেন দয়া করে। আমি ওকে সবসময় হাসতে বলব। ওর গজদাঁতের হাসি এতোটাই সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ যে ওর হাসিটা দেখেই আমি ওকে পছন্দ করেছিলাম। আর আন্টি, গতবছর যে শুনলাম আপনার ছেলে ভালোবেসে একটা উঁচু দাঁতওয়ালা মেয়েকে ঘরে বউ করে তুলেছে! কথাটা কি সত্যি?”

প্রথম মহিলাটি আর কোনো উত্তর দেওয়ার মুখই পেলেন না। চোখ গরম করে গটগট করে চলে গেলেন অন্যদিকে। দ্বিতীয় মহিলাটি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকায় অভয় প্রশ্ন করে…..
–“আপনিও কি এখানে উচিত জবাব শোনার অপেক্ষা করছেন?”
সেই মহিলাটিও মুখ ভেঙিয়ে বিদায় নেন সেখান থেকে। ঐশানী তো নিজের বিস্ময় কাটাতেও পারছে না। পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে তার সেই হাতের দিকে যেই হাতটি আবদ্ধ অভয়ের হাতে।

অভয় সেটা খেয়াল করে দ্রুতই ছেড়ে দেয় তার হাত। ঐশানীও নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে পড়ে। অভয় হালকা কেশে গম্ভীর ভাবভঙ্গি নিয়ে বলে….
–“উচিত জবাব দিতে অনেক কিছুই বলেছি। তুমি আবার সিরিয়াসলি নিও না যেন।”
–“সিরিয়াসলি নিতে আমার বয়েই গেছে। আপনার মতো লোক আমাকে পছন্দ করবে? এটা অসম্ভবের চেয়েও অসম্ভব ব্যাপার। আমার মতো শান্ত মেয়েকে আপনার মতো লোক পছন্দ করতেই পারে না।”

অভয় ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়। নিজের কানটা ঠিকঠাক পরিষ্কার করে নেয় ও। তারপর ফিক করে হেসে বলে…..
–“তুমিও আবার শান্ত? তোমার সাথে শান্ত শব্দটা ঠিকঠাক যায় না! তোমার নাম শুনলেই তো শান্ত শব্দটা দৌড়ে পালাবে। তুমি নাকি আবার শান্ত! হাউ ফানি।”
অভয় ঐশানীর কথায় মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বসে থাকে। অভয় আবারও তার উদ্দেশ্যে বলে…..
–“আমার সাথে তো খুব তর্কাতর্কি করতে দক্ষ। তাহলে ওরা যখন অপমান করল তখন এই মুখটা ছোট্ট হয়েছিল কেন? ওহ হো! সবার বেলায় ষোলো আনা ছাড় দাও আর আমার বেলায় চার আনাও না!”

–“আমি কি করতাম? আমার মা তর্কাতর্কি করতে মানা করেছে বড়দের সাথে।”
–“এতোই মায়ের কথা মানো জানতাম না তো! যাই হোক ওদের কথায় আবার হাসিটা বন্ধ করো না। আগের মতোই সবসময় হাসতে থাকবে। ওকে?”
ঐশানী এবার হাসে। গজদাঁত বেরিয়ে আসে হাসিতে। ওই হাসিতে যেন সত্যিই আলাদা সৌন্দর্য। হাসি বজায় রেখে সে বলে……
–“আপনার কি মনে হয়? উনাদের জন্য আমি হাসি ছেড়ে দেব? কোনো প্রশ্নই আসে না। আপনার মতো আমি হাসি ছাড়া থাকতে পারব না।”

–“এই এই মানে কি হ্যাঁ? আমি হাসতে জানি না?”
–“জানেনই না তো। গোমড়ামুখো শ্যামলা ঘোড়া, রামগরুড়ের ছানা হাসতে তার মানা।”
বলেই নিজের জিহ্বা কাটে ঐশানী। একচোখ বন্ধ রেখে অন্যচোখ দিয়ে অভয়ের দিকে তাকায়। অভয় রাগে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে। সবার সামনে আর কিছু বলাটা বোধহয় ঠিক হবে না। তাই আর কথা বাড়ায় না অভয়। চোয়াল শক্ত করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। তবুও চোখজোড়া ঘুরেফিরে যায় সেই ফাজিল মেয়েটার দিকেই। কারণ মেয়েটা হাসছে। অভয়কে রাগিয়ে যেন সে অন্য মজায় মেতেছে। সেই মজা থেকেই মন খুলে হালকা হালকা শব্দ করে হাসছে।

এই প্রথম ঐশানীর হাসি গভীরভাবে লক্ষ্য করে অভয়। তার হাসি সত্যিই মোহনীয় এবং লোভনীয়। এই লোভনীয় হাসিতে সবসময় তাকিয়ে থাকতে যে কেউই চাইবে। কে বলেছে গজদাঁতের হাসিতে তাকে অসুন্দর লাগে? বরং তার সৌন্দর্য মান যে দ্বিগুন বেড়েছে। এই প্রথম বারের মতো ঐশানীকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখেও নেয় সে। সোনালী রঙের লেহেঙ্গা পরনে তার। খুব বেশি ফর্সা নয়। চেহারায় গোলাপি আভার মতো একটা ভাব রয়েছে। হাসিতে তার ঘন পাপড়িতে আবৃত চোখজোড়া ছোট হয়ে এসেছে। একগোছা চুল বাঁকা করে খোঁপা করা। কপালের প্রায় পুরো অংশ ঢেকে গেছে তার টিকলিতে। হঠাৎই অভয়ের খেয়াল হতেই চোখ সরিয়ে ফেলে সে। মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করতে থাকে। তার মন বলে ওঠে…..

–“বার বার তুই কি করছিস অভয়? ওর এই সৌন্দর্য, হাসি, বাচ্চামোতে ভুলছিস তুই। কিন্তু এটা তো অনুচিত! তুই না অন্যকাউকে ভালোবাসিস? তাহলে ওকে এভাবে দেখিস না। বের কর যতদ্রুত পারিস ওকে মন থেকে।”
ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে অভয়। বিড়বিড়িয়ে বলে….
–“আমি কি ভয় পাচ্ছি এই মেয়ের প্রেমে পড়ার? অভয় নাম আমার! তবুও ভয় পাচ্ছি আজ। এতো ভয় পাচ্ছি কেন??”

চলবে…….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]