#সুখের_প্রেমাসুখ(০২)
#ওয়াসেনাত_আরাবী
মাশহুদের বলা বাক্যটি কানে পৌঁছাতেই মাহার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেল। কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল, “আপনার জন্য?”
“না।”
“তাহলে?”
“ও যে ছেলেটাকে ভালোবাসতো, যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল শুনলাম গতকাল সে নাকি তার নয়া প্রেমিকার সঙ্গে রুমডেট করতে যেয়ে ধরা খেয়েছে। সেটা দেখে অতিরিক্ত কষ্টে প্লাস পরীক্ষার ফলাফলের অতিরিক্ত অবনতি দেখে প্রেমা এমন স্টেপ নিয়েছে।আমি ওকে বারবার মানা করেছিলাম কোনো ভুল স্টেপ না নিতে। তারপরেও মেয়েটা শুনলো না। আমাকে নাকি একবার দেখতে চেয়েছে, মাফ চাইবে বলে। ওর ধারণা আমাকে কষ্ট দিয়েছিল বলেই ওর সঙ্গে এমন হয়েছে।কিন্তু বিশ্বাস কর মাহা আমি কখনও ওর খারাপ চাইনি।” মাশহুদের প্রতিটি বাক্য জড়িয়ে যায়।
মাহা কথার খেই হারিয়ে ফেললো। মাশহুদের চেহারায় অসহায়তার ছাঁপ স্পষ্ট। আজকের মধ্যেই এমন কিছু শুনবে আশা করেনি সে। এমনিতেই বিয়ে নিয়ে সারাটি দিন ব্যস্ততা ও ধকলের মধ্যে কাটিয়েছে। তার ওপর এখন মানসিক অশান্তি। মাশহুদের কষ্ট হচ্ছে। প্রেমাকে সে আসলেই পছন্দ করতো।সেটা অনুভব করেই মাহা প্রশ্ন করে,
“এখন কেমন আছে প্রেমা আপু?”
“সার্ভাইভ করার চান্স কম। হসপিটালে যাওয়ার পথে ওদের গাড়িটার এক্সিডেন্টও হয়েছে।”
মাহা কিছু একটা ভেবে বলল,”চলুন।”
মাশহুদ মাহার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কোথায়?”
মাহা খুবই গোপনীয় কথা বলার ভঙ্গিতে বলল, “প্রেমা আপুকে দেখতে।আপনি বলেছেন আপনাকে যেন আমি আগে বন্ধু ভাবি। আমি সেটা ভেবেছি। এখন আপনার আপুর কাছে যাওয়া উচিত। তাই চলুন।আমি সাথে না গেলে বাড়িতে সমস্যা হতে পারে তাই আমিও যাবো। আমি না হয় হসপিটালের বাইরে থাকবো।”
মাশহুদ চোখ রাঙিয়ে তাকায়। চেহারায় কাঠিন্যভাব প্রকাশ পায়। কন্ঠে তেজ ঢেলে বলে, “অনেক বুঝতে শিখেছিস? একা একা ভেবে নিচ্ছিস সব। এখন যেতে হবে না। তুই ঘুমাতে যা। আমি কাল সকালে গিয়ে দেখে আসবো।”
“আজ যদি যেতে না পারেন, আপনি আফসোস করবেন না তো? আমার কথা শুনুন, কেউ তো জানবে না। গিয়ে, দেখে চলে আসবো। আপনার মনও শান্ত হবে নিজের চোখে আপুকে একবার দেখে আসলে।”
মাশহুদের তরফ থেকে কোনো উত্তর এলোনা।মাহার কান্না পেয়ে গেল মাশহুদের ভারাক্রান্ত চেহারা দেখে। চোখের সাথে সাথে নাকেও পানি চলে আসে। নাক টেনে মাহা প্রায় কেঁদে বলল,
“আপু ওতটাও খারাপ ছিল না। চলুন না, গিয়ে দেখে আসি। আপু যদি মা’রা যায় তাহলে আমারও কষ্ট হবে। আপনার কষ্ট হচ্ছে। একবার দেখে আসলে কী হয়? আপনাকে কষ্টে দেখে আমার ভালো লাগছে না। আপনাদের কারোর কষ্ট সহ্য হয়না আমার। আপনি জানেন না? ”
মাহার নাক টানার শব্দে মাশহুদ স্পষ্ট টের পেয়েছে এই ছিঁচকাঁদুনে মেয়েটা আবারও কেঁদে ভাসাবে। মেয়েটার সবার প্রতি এত মায়া! কারোর কষ্ট দেখতে পারেনা। ওর এই কথাগুলো শোনার পর মাশহুদেরও খারাপ লাগছে। আগের তুলনায় অত্যধিক চাপ অনুভব করছে বুকে। না যাওয়া পর্যন্ত মাহা থামবে না,কান্নাকাটি শুরু করে দেবে। এরপর কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে যাবে।মাহার কান্না থামানোর জন্য হলেও মাশহুদকে এবার যেতে হবে। মাশহুদ পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে বাইকের চাবি আছে কীনা চেক করে। সৌভাগ্যবশত ভাবে চাবিটা আছে। মাশহুদ চাবি বের করে বলল,
“শালটা জড়িয়ে নে গায়ে। বাইরে ঠান্ডা। তোর ঠান্ডার দোষ আছে, এভাবে গেলে অসুস্থ হয়ে যাবি।”
মাশহুদের এই ছোট্ট বাক্যতিনটি শুনে চমকে গেল মাহা। বুকের ভেতর কেমন চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হলো। সুখ অনুভূত হলো। মাশহুদের এমন মুহূর্তেও মাহার যত্ন নেওয়াটা মাহাকে বিস্মিত করে। একজন পার্ফেক্ট মানুষ মাশহুদ। যে এই মানুষটার প্রেমের অনুভূতি পেয়েছে সে নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবতী। মাহার হয়তো সে সৌভাগ্য নেই। তাতেও মাহা অখুশি নয়। কারন প্রেম ছাড়াও যে যত্ন সে মাশহুদের কাছ থেকে পেয়েছে, পায় সেটাও বা কম কিসে? মাহা চায় ছেলে, ভাই, বন্ধু, হিসেবে মাশহুদ যতটা নিঁখুত। স্বামী হিসেবেও যেন ততটা হয় ভবিষ্যতে।
চুপিসারে গেটের বাইরে এসে বাইকে বসে মাশহুদ। মাহা উঠতে পারছে না শাড়ি পড়ে থাকায়। কুচি ঢিলে হয়ে গেছে। যার দরুন শাড়ির বেগ পেতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। মাশহুদ আহত গলায় বলল,
“আমাকে ধরে ওঠ। দ্রুত কর মাহা। আমাদের ফিরতেও সময় লাগবে।”
মাহা মাশহুদের কাধে হাত রেখে বাইকে উঠে বসে। আজ প্রথমবার মাশহুদের বাইকে উঠেছে সে। আগে কখনও ওঠেনি। মাহা সবসময় ঠাট্টা করতো এটা বলে, “আপনার বাইকের ফার্স্ট রাইড আমাদের ভাবি পাবে মাশহুদ ভাই। যে বাইকে খালামনিও ওঠেনি, সে বাইকে কেউ উঠবে না ভাবি ছাড়া। হয় খালামনি নাহলে আপনার বউয়ের জন্য জায়গাটা বাঁচিয়ে রাখুন। বিনিময়ে আপনি চাইলে, আমাদের খাওয়াতে পারেন। আমরা আপনাকে ছাড় দিচ্ছি, আর আপনি আমাদের দেবেন। হিসাব ক্লিয়ার।” স্মৃতিচারণ করে পুনরায় জড়তায় জড়িয়ে গেল মাহা। বাইকে উঠে দূরত্ব বজায় রেখে বসে। মাশহুদ রেগে বলল,
“আমাকে ধরে বোস।একমাইল দূরে গিয়ে বসেছিস কেন? পেছন থেকে পড়ে গেলে টের পাবো? সরে আয় সামনে। শাড়ির আঁচল, শাল দেখে বল ঠিক আছে কীনা।”
মাহা সরে এসে মাশহুদের কাধে হাত রেখে শাড়ি, শাল চেক করে। এরপর কোমল স্বরে বলে, “ঠিক আছে।”
“বাইক স্টার্ট দিবো?”
“হুম।”
হাওয়ার বেগে ছুটতে থাকে বাইক। মাশহুদ বরাবরই স্পীড বাড়িয়ে রাইড করে।যেটা দূর থেকে দেখলেও মাহার ভয় লাগতো। আজ সচক্ষে দেখে উপভোগ করে মাহার হাত পা কাঁপে। প্রচন্ড ভয়ে মাশহুদের শার্ট খামচে ধরে সে।
নখ ডেবে গেল ঘাড়ে। ব্যাথা পায় মাশহুদ। সাথে এটাও অনুভব করে মাহা স্পীড দেখে ভয় পাচ্ছে। মাশহুদ ওর ভয় কাটানোর জন্য বলে,
“ভয় পাস না মাহা।আমি বেঁচে থাকতে তোর গায়ে একটা আঁচড়ও লাগতে দেবো না। আমাকে তুই এটুকু বিশ্বাস করতেই পারিস।”
“আমি আপনাকে বিশ্বাস করি মাশহুদ ভাই।”কেঁপে ওঠে মাহার কন্ঠ।
ঘন্টাখানেকের মধ্যে হসপিটালে পৌঁছে গেল ওরা। মাহা বাইরে অপেক্ষা করতে চেয়েছিল, মাশহুদ রাজি হয়নি। মেয়েটাকে সঙ্গে করে এনেছে একা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নয়। মাহা কেবিনের সামনে যেতেই প্রেমার বোন আর মা’কে দেখতে পেল। প্রেমার বোন পৃথিশা মাশহুদকে চেনে তাই মাশহুদকে দেখামাত্র দ্রুত ওকে ভেতরে নিয়ে যেতে চাইলো। পেছনে মাহাকে সে খেয়াল করলো না। মাশহুদ থেমে মাহাকে দেখিয়ে পৃথিশাকে বলল,
“ও মাহা। প্রেমাকে দেখতে এসেছে।”
পৃথিশা এবার মাহাকে লক্ষ করে। বিয়ের পোশাক দেখে বুঝতে বাকি রইলো না তার পরিচয়।পৃথিশা গম্ভীরকন্ঠে বলল, “ওকে তুমি না আনলেও পারতে মাশহুদ। প্রেমা রিয়াক্ট করতে পারে। ওকে দেখলে উত্তেজিত হয়ে পড়বে।”
মাহা দ্রুত বলল,”আমি বাইরেই থাকছি। উনি গিয়ে দেখে আসুক।”
মাশহুদ পৃথিশাকে বলল,”ওকে একটু দেখবেন আপু। ও এখনো বাচ্চাদের মতো। এদিক ওদিক চলে গেলে খুজে পাওয়া যাবে না। আর মাহা, পৃথিশা আপুর সাথে সাথে থাকবি, আমি না আসা অবধি কোথাও যাবি না। ঠিক আছে?”
মাহা মাথা নেড়ে “হুম” বলল।
মাশহুদ ভেতরে যেতেই পৃথিশা অবাক চোখে তাকায় মাহার দিকে। মাশহুদের বাক্য, কন্ঠে যে দরদ, দায়িত্ব দেখলো। মাহার ব্যবহারে যে মানবিকতা দেখলো তা যদি সত্য হয় তাহলে ওর বোনের প্রতি এদের মনোভাব আসলে কী? বিয়ের রাতে, বাসর না করে মাশহুদ হয়তো প্রেমার টানে ছুটে এসেছে। কিন্তু মাহা? সে কেন এসেছে? তার তো মাশহুদের জন্য এটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত ছিল অথচ স্বামীর প্রেয়সীর এক্সিডেন্টের কথা শুনে মেয়েটা এমন ভাব নিয়ে এসেছে যেন প্রেমা ওর নিজের বোন। মাহার প্রতি পৃথিশার স্নেহসুলভ ভাব জাগে মনে। মাহা চমৎকার একটি মেয়ে। এই একটি বাক্যই অনবরত মনের দরজায় কড়া নেড়ে বলছে বোনের স্নেহের সকল অনুভূতিরা।
ভেতর থেকে প্রেমার মৃদু চিৎকার ভেসে আসে। প্রেমা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “আমাকে ভালোবাসবে মাশহুদ? আগের মতো। ভালোবাসবে?বলো? কথা বলো মাশহুদ। নাকি নতুন কাউকে পেয়েছ বলে আমার ওপর থেকে মন উঠে গেছে?তুমিও ওদের মতো। ওইসব ছেলেদের মতো, যারা শুধু..”
বলতে বলতে হাঁপানি উঠে গেল প্রেমার। মাহা দরজার সামনে এসে দাড়ায়। পৃথিশা মাহার দিকে সরুচোখে তাকিয়ে বলে,
“বিলাপ করছে। ওর কথায় তুমি কষ্ট পেয়ো না মাহা।”
“একটা সত্য কথা বলবেন?”
“কোন সত্য?”
“প্রেমা আপু কী কখনও মাশহুদকে ভালোবেসেছিল?”
“সবাই যেটা জানে আমিও সেটাই জানি মাহা। প্রেমাকে আমি কখনও মাশহুদের প্রতি দুর্বল হতে দেখিনি। এখন এমন কেন বলছে বুঝতে পারছি না।আমার বোনটার কী হবে জানিনা তাই ওকে কোনো কাজে বাঁধা দিচ্ছি না। ও হয়তো ভালো কোনো কাজের জন্যই এমন করছে।”
“আত্মহ’ত্যা ভালো কাজ?”
“মহাপাপ। তবে ও ম’রার জন্য এতটা প্রস্তুতি নেয়নি। যাস্ট কিছু স্লিপিং পিলস খেয়েছিল। এখন এত খারাপ অবস্থা হয়েছে এক্সিডেন্টের জন্য। তোমরা হয়তো এসব জানো না। গাড়ির এক্সিডেন্টটা হওয়ার পর গাড়িতে থাকা দুজন স্পটডেথ। আমার চাচার বাম পায়ের হাড় ভেঙে গেছে, ঘাড়ে আঘা’ত লেগেছে। আমার পায়ের দিকে তাকাও, র’ক্ত লেগে আছে যেখানে সেখানে চারটা সেলাই লেগেছে।”
মাহা অবাক হয়ে বিচলিত গলায় বলে,”আপনি বসুন আপু। আপনার পায়ে ব্যাথা।”
“ব্যাথা? এ তো সামান্য ক্ষত। চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি। তোমাকে একটা কথা বলি মাহা, এখন যেমন আছো সর্বদা তেমন থাকার চেষ্টা করবে। তুমি অনেকটা প্রেমার মতই, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর।”
মাহা বুঝলো না পৃথিশার বলা কথাগুলোর অর্থ। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।পৃথিশা মেঝের দিকে পাণ্ডুর চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে।পৃথিশার মা এখানে নেই। উনি অজ্ঞান হয়ে পড়ায় তাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। মাহা ভীত চেহারায় কেবিনের দরজা খুলে ঢুকে গেল। মাহাকে দেখে প্রেমার বিলাপ করা থেমে যায়। মাশহুদ মাহাকে দেখিয়ে বলল,
“ও আমার বউ প্রেমা। আমরা আজই বিয়ে করেছি।”
প্রেমা বিস্মিত কন্ঠে বলে,”কী?”
“হ্যাঁ, আর তুমি জানো মাশহুদ দায়িত্ব এড়িয়ে চলার মতো ছেলে নয়। মাহাকে ছেড়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না,আর না তোমাকে এখন বিয়ে করা সম্ভব। তুমি দুদিন আগেও যদি বিয়ের কথা বলতে তাহলে হয়তো সব ভুলে আমি তোমাকে বিয়ে করতাম। কিন্তু তুমি অনেকটা দেরি করে ফেলেছো প্রেমা।”
প্রেমার প্রখর দৃষ্টি দেখে স্বল্পভয়ে মাহা মাশহুদের বলিষ্ঠ দেহের পেছনে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে। সেটা দেখে প্রেমার ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা দিল। প্রেমা অস্ফুটস্বরে বলে,
“তাহলে তো ভালোই হলো। ভালো থেকো তোমরা।”
প্রেমার হাসি দেখে মাহা বলল,”আপনি ঠিক হয়ে যাবেন আপু। দেখবেন খুব সুন্দর একটা বর পাবেন।”
মাশহুদ মাহার দিকে তাকায়। প্রেমা বলে,”বেঁচে থাকলে ইনশাহ্ আল্লাহ আমার বিয়েতে তোমরাও থাকবে।”
প্রেমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে না আর। উত্তেজনা কমে এসেছে। প্রেমা ধীরেসুস্থে বলল, “ভেবেছিলাম আমার জন্য মাশহুদ কখনও কাউকে ভালোবাসতে পারবে না। ওর প্রতি অন্যায় করেছিলাম। ওকে প্রেমের নাটকের একটি গুটি বানিয়েছিলাম বন্ধুদের কথায়। কিন্তু কখন যে ওর ভালোবাসা আমার জন্য বদদুআ হয়ে গেল সেটা বুঝে উঠতে পারলাম না। ওকে ঠকানোর পরিবর্তে নিজে ঠকে গেলাম আমার ভালোবাসার মানুষটির কাছে। স্লিপিং পিল খেয়েছি ঘুমানোর জন্য। মন শান্ত করতে। বুয়া ভাবলেন সুইসাইড করার চেষ্টা করেছি। সবাইকে ডেকে এই আত্মহ’ত্যার সংবাদ তিনিই প্রচার করেছেন। চাচা নাকি আমাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। আমি এমন অপয়া মেয়ে, যার কারনে গাড়িতে থাকা দুজন মানুষ ম’রে গেল। চাচা, আপু, জখম হলো। বাঁচবো কীনা জানা নেই। মাথার পেছনে কাঁচ ঢুকে আছে, তাই ভাবলাম ম’রার আগে একটা মানুষের উপকার করে যাই যে আমাকে সত্যিকারে ভালোবেসেছিল। মাশহুদ দুর্দান্ত প্রেমিক মাহা।তোমাকে সুখে রাখবে। আমি শুধু ওর মনে নিজের জন্য ঘৃনা জন্মাতেই এসব বলেছি। তুমি যেন কষ্ট পেয়োনা এসব শুনে। আসল কথা কী জানো? এই প্রেমটা একটা অসুখ। ছোঁয়াচে ভীষণ। নাহলে তোমাকে আজ এখানে দেখতে পাই? তুমি আমাদের প্রেমটাকে মুগ্ধতার নজরে দেখেছ, আর আমি তোমাদের। আমি কখনও তোমার মাশহুদ ভাইকে ভালোবাসিনি এটা সত্য।তাই চেয়েছি তুমি আমাকে ভুলে নতুন করে প্রেমে পড়ো মাশহুদ। যার প্রেমে তোমার প্রথম থেকেই পড়া উচিত ছিল। বরং এই প্রেমটাই উপযুক্ত। হালাল, ভেজালমুক্ত প্রেম। শুভকামনা রইলো তোমাদের জন্য। আর পারলে মাফ করে দিয়ো আমাকে। আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম আর সর্বদা তেমনই থাকবো। মাশহুদকে নিয়ে সুখে থেকো মাহা। মুখোশধারী মানুষের মাঝে এমনটাই মানবিক সত্ত্বা নিয়ে থেকো। আমাকে তুমি তোমার এই বিশেষ রাতে, নিজের সুন্দর মুহূর্তের বরবাদ করে দেখতে এসেছো বলে ভালো লাগলো। তবে অতিরিক্ত ভালো না হয়ে, একটুখানি স্বার্থপর হও। প্রিয়মানুষটাকে নিজের, একান্তই নিজের করে রাখার মতো মধুর এবং সুখের স্বার্থপরতার অনুভূতি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করোনা।”
প্রেমার কথা শুনে মাহা মাশহুদের দিকে তাকালো।চোখে চোখ পড়তেই মাহা শিউরে ওঠে। মাশহুদের চোখ ওর ওপরেই নিবদ্ধ ছিল। প্রেমা মৃদু হাসে। মাশহুদ বলল, “দুআ করবো তোমার জন্য যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারো। আমাদের সকল কথা শেষ। এবার মাহাকে নিয়ে ফিরতে হবে। আসি প্রেমা।”
প্রেমা হেসে বলে,”আসতে হবে না।যদি বেঁচে থাকি, তাহলে সুযোগ পেলে আমি গিয়ে তোমাদের সাথে দেখা করে আসবো।” মাশহুদ সেটা শুনে হালকা হেসে মাহার হাত ধরে বেড়িয়ে গেল কেবিন থেকে। মাশহুদ বাইকে উঠে মাহাকে ওর পেছনে বসতে ইশারা করে। মাহা পূর্বের ন্যায় বাইকে উঠে, মাশহুদের কাঁধে হাত রেখে বসলো।
“শোন!” মাশহুদের কন্ঠে ব্যকুলতা অনুভব করে মাহা। “কী” বলে মাহা মাশহুদের দিকে তাকাতেই মাশহুদ বলল,
” তুই আমার জীবনে প্রথম না হলেও শেষ নারী হবি মাহা।”
“কিন্তু প্রেম, ভালোবাসা? সেসব তো নেই আমাদের মধ্যে।”
“তোর মধ্যে প্রেমে পড়ার মতো কিছু আছে কীনা সেটা দেখার পর, এটা নিয়ে ভাববো।আর তুইও আমাকে পরখ করে নিস। তোর পছন্দেরও তো একটা ব্যাপার আছে। তোর মতও সমান গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।”
“আর প্রেমা আপু?”
“তোকে তো আগেই বলেছি, বিয়ের আগের অনুভূতিটা আমি বিয়ের পর অবধি টেনে আনবো না। প্রেমার অধ্যায় তো সেদিনই শেষ হয়েছিল যেদিন জেনেছিলাম ও নাটক করেছে। তবে ওর প্রতি আমার একটা আবেগ কাজ করছিল, এখন সেটার কাজ করার সিস্টেম অকেজো হয়ে গেছে।”
“তাহলে এখন কী চান?”
“প্রতিটি স্বামী যা চায়। আমিও তাই চাই।”
মাহা চোখ বড় বড় করে তাকায়। প্রতিটা স্বামী যা চায় মানে? প্রতিটি স্বামী কী চায়? মাশহুদও সেটা চাইবে কেন? সে কী নিজেকে মাহার স্বামী ভাবছে? হঠাৎ কেন ভাবছে? মাহা চিন্তায় পড়ে গেল। মাশহুদ বাইকের মিররে মাহার চিন্তিত চেহারা দেখে রসিকতা করে বলে,
“ভেবে বল মাহা, তুই কী সত্যিই সতীন চাস? প্রেমা কিন্তু বিয়ে করতে চাচ্ছে আমাকে। তুই চাইলে আমি ওকেও বিয়ে করতে পারি তবে তোকে তালাক দেবো না। তাই মনের ভুলেও বিচ্ছেদের চিন্তা মাথায় আনিস না।তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। মনে রাখিস আমার কথাগুলো। প্রয়োজনে বাড়ি ফিরে লিখে রাখিস সাদা কাগজে যে,
‘মাশহুদ সাইফান তার স্ত্রী রাদিআহ্ সামরীন মাহাকে কখনও চোখের আড়াল করবে না। বিচ্ছেদ তো কল্পনাতীত ব্যাপারস্যাপার। প্রেয়সী হারিয়েছে তবে বউ হারাবে না বরং বউ দিয়েই সে এখন প্রেয়সীর যাবতীয় অভাব পূরণ করবে।’ বুঝেছিস?”
মাহা দুদিকে মাথা নাড়ে। সে বোঝেনি। মাশহুদ হেসে ফেলে বোকা মাহার অবুঝ চাহুনি দেখে।
চলবে..
রিচেক করিনি। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং অনুভূতি প্রকাশ করে যাবেন।❤️