সুখের প্রেমাসুখ পর্ব-০৭

0
232

#সুখের_প্রেমাসুখ(০৭)
#ওয়াসেনাত_আরাবী

বিয়ের একমাস পূর্ণ হয়েছে আজ। মাহা এখন পূর্বের তুলনায় কঠিন মেজাজি হয়েছে। পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত সে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি এখন থেকেই অ্যাডমিশনের জন্য পড়া শুরু করেছে।যে ভাবেই হোক তাকে ভালো একটা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে। মাহা প্রথমে ভেবেছিল সে ডাক্তার হবে। কিন্তু নিজের ওপর ভরসা পাচ্ছে না। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ওর জন্য নিতান্তই একটা ছেলেমানুষি ব্যাপার। যার ভুলে যাওয়ার রোগ আছে, সে চেষ্টা করলে বড়জোর সবকিছু জানতে পারবে, শিখতে পারবে কিন্তু বাস্তবিক জীবনে তা ব্যবহার করতে পারবে না। তাই মাহা ঠিক করেছে সে ইংরেজিতে অনার্স করবে। ইংরেজি সে ভালো পারে, তার প্রিয় বিষয় এটা।

অফিস থেকে ফিরে মাশহুদ সোজা ওয়াসরুমে ঢুকেছে। একেবারে গোসল করে তারপর বেরিয়েছে।প্রেমার সঙ্গে বিকেলে দেখা হয়েছিল। মাহার কথা জিজ্ঞেস করছিল। প্রেমা এখন সুস্থ এটা মাহাকে জানাতে বলেছে। মাশহুদ তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বিছানার ওপর বসে। মাহা টেবিলে বসে পড়ছে। মাশহুদ এসেছে সেটা লক্ষ করেছে। মাশহুদ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

“বর সারাদিন এত পরিশ্রম করে ঘরে ফিরেছে।আর বউকে দেখো, কোথায় এসে একটু আদর সোহাগ করবে তা না বইয়ে মুখ গুজে বসে আছে। বিয়েটা কী বইয়ের সাথে হয়েছে আপনার? মিসেস রাদিআহ্ সামরীন।”

মাহা মুখটা কুঁচকে বলল, “বরকে কী কোলে নিয়ে বসে থাকতে হবে? সব রেডি আছে,খেয়ে ঘুমান। এই চ্যাপ্টার শেষ না করে ওঠা যাবে না। কাল এক্সাম আছে।”

“বউ আমার বুদ্ধি পেয়ে বদলে গেছে। আমার বোকা বউটাই ঠিক ছিল।”

মাহা পেছনে ঘুরে বসে। মাশহুদ বরাবরের ন্যায় একটা ট্রাউজার পড়ে খালি গায়ে বসে আছে। মাহা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। মাশহুদ সেটা দেখে ব্যঙ্গ করে বলল,

“ত্রিশদিনে কম করে হলেও পনেরোবার আমাকে এভাবে দেখেছো। হঠাৎ দেখতে না চাওয়ার কারন কী? এই ফিটনেস, সিক্সপ্যাক ধরে রেখেছি কেন যদি বউ’ই না দেখে?”

মাহা বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,”আজ দেখা যাবে না।”

“কিন্তু আমার আজ দেখাতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছের লিস্ট বেড়েছে। একটা ইচ্ছা আজ পূরণ করতে না পারলে ঘুম হবে না রাতে। এখন কী করবো?”

“পরীক্ষা শেষ হবে তারপর আপনার ইচ্ছাগুলোর লিস্ট দেখবো। এখন না। এখন কোনো ইচ্ছাপূরণের সময় নেই আমার হাতে।”

“তেমন গুরুতর ইচ্ছা নেই। এই আপনি থেকে তুমিতে আনানোর ইচ্ছাটাই আছে এখন।”

“সময় লাগবে। পনেরো বছরের অভ্যাস।”

“ধুর, দুদিনে ভাই থেকে জামাই হয়ে গেলাম। রাতারাতি ভালোবাসা-বাসি করে ফেললাম। এসবের কাছে এই ছোটখাটো অভ্যাস কিছু না। ট্রাই করো হয়ে যাবে।”

মাহা বিরক্তচেহারায় বলে, “কাইন্ডলি চুপ করো তুমি। বিরক্ত করো না। খাবার গুছিয়ে রেখেছি। খেয়ে ঘুমাও। সকালে আবার দ্রুত উঠতে হবে। ক্লান্ত হয়ে ফিরেছো তারপরেও এত কথা বলে এনার্জি লস করছো কেন? তুমি করে বলেছি এবার আর একটা কথাও বলবেন না।”

মাশহুদ উঠে এসে মাহার ঘাড়ে চিবুক রাখলো। মাহার হাত থেমে নেই। খাতার ওপর কলমের আঁচড় অনবরত পড়ছে। আইসিটির প্রোগ্রামিং চ্যাপ্টার। মাশহুদ খেয়াল করে, মাহার হাতের লেখায় পরিবর্তন এসেছে। আগের তুলনায় অত্যধিক সুন্দর হয়েছে। মাঝে মাঝে বিশেষ লাইনে ক্যালিগ্রাফিও করেছে। মাহা নতুন পার্ফিউম ব্যবহার করেছে। ঘ্রাণটা মধুর। মাশহুদ মাহার গলায় মুখ ঘসতেই মাহার কলম থেমে গেল। দাঁড়ির খোঁচায় ব্যাথা পেল। মাশহুদ বলল,

“দ্রুত শেষ করো পড়া। রাত জেগে পড়া যাবে না।”

“দ্রুত শেষ করতে বলেও শেষ করতে দিচ্ছেন না। এটা ঠিক?”

“আনরোম্যান্টিক হয়ে গেছো। দুদিন আগেও টাচ করলে সেন্সলেস হয়ে যেতে এখন উল্টে ঝারি দাও। তোমাকে ডাক্তার দেখানো ঠিক হয়নি।”

মাহা মুখটা নিরেট করে বলে, ” চলুন খেয়ে ঘুমাই। পড়া না হলেও, ঘুমটা হোক।”

মাহা উঠে যেতেই মাশহুদ পাণ্ডুর চেহারায় বিছানায় এসে বসলো। একটা টিশার্ট পড়ে নিঃশব্দে হেটে গেলো ডায়নিং টেবিলের দিকে। মাহা খাবার বাড়ছে। চেহারায় কাঠিন্যভাব স্পষ্ট। কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত, কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু বলছে না। গত দু-তিনদিন ধরে ব্যাপারটা খেয়াল করছে মাশহুদ। মাশহুদের ওপর রাগ করে আছে নাকি অভিমান সেটাও বোঝার উপায় নেই। পরিবর্তনটা হুট করে হয়ে, সবকিছু হুটহাট’ই হচ্ছে। খাবার টেবিলে কথা হলো না। মাশহুদ আগে এসেছে ঘরে। বিছানা ঠিক করে সে শুয়ে শুয়ে মাহার জন্য অপেক্ষা করছে। মাহা এলো মিনিট দশেক পর। এসেই ঘরের দরজা লাগিয়ে, লাইট অফ করে মাশহুদের পাশে শুয়ে পড়ে।

জানালা খোলা।ঘরজুড়ে চাঁদের আলো। পিনপতন নীরবতা।দুজন পাশাপাশি থেকেও মনে হচ্ছে পুরো ঘরে দুজনেই একাকী। নীরবতা ভেঙে মাশহুদই প্রথম কথা বলে,

“কী হয়েছে?”

মাহার তৎক্ষণাৎ উত্তর, “কিছু না।”

“তাহলে এভাবে ইগনোর করছো কেন? কিছু হলে তো বলবা, না বললে বুঝবো কী করে? আমি কী কোনো ভুল করেছি? অজান্তে কষ্ট দিয়েছি?”

“না। তেমন কিছু না। শুধু পরীক্ষার জন্যই।”

মাশহুদ মাহার দিকে এগিয়ে গিয়ে মাহার মাথা নিজের ডান হাতের ওপর রেখে মাহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাহার চোখ গড়িয়ে এক ফোটা পানি পড়তেই মাশহুদ ভগ্নস্বরে বলে,

“বলো। কী হয়েছে?”

মাহা নাক টেনে বলে, “আপনাকে ফোন দিলে আপনার পি.এ ফোন রিসিভ করে। আমাকে ননদের মতো ট্রিট করে। আপনার সাথে তার মাখোমাখো সম্পর্ক বর্ণনা করে। এসব নাহয় বাদই দিলাম। আপনি চরিত্রহীন নন সেটা আমি জানি কিন্তু প্রেমা আপুর সাথে দেখাসাক্ষাৎ হচ্ছে সেটা জানানোর প্রয়োজনবোধ যে করেনা তার সাথে থাকবো না আমি।”

“প্রেমার সঙ্গে তিনদিন আগে রাস্তায় দেখা হয়েছিল সেটা তুমি জানতে? কীভাবে? আর আজ দেখা হয়েছে সেটা তো বলতামই। সুযোগ পাইনি বলে বলা হয়নি। ”

“জানবো না? আপনার পি.এ ছবি তুলে রেগুলার সেন্ড করে আমাকে। এদিক নেই,ওদিক আছে। সরুন, সরুন। একদম টাচ করবেন না। বিয়ের পর কত মিষ্টি মিষ্টি কথা আর এখন? আমি আপনাকে সহ্যই করতে পারছি না। শুনেছেন?”

“বউ ছাড়া যাবে না। বউ ছাড়া ঘুম আসবে না আমার। অন্য কোনো সলুশন থাকলে বলো। উম্মিকে পি.এ পদ থেকে সরিয়ে অন্য সেক্টরে দিলে মেজাজ ঠিক হবে?”

“আমাদের সম্পর্কটা বিয়ের আগেও যেমন ছিল পরেও তেমনই আছে। মাঝে মাঝে এমন মনে হয়, আপনি শুধু দায়িত্ববোধ থেকেই সম্পর্কটি টিকিয়ে রেখেছেন। আমাকে ছোট থেকে বোন হিসেবে ভালোবাসতেন। সেই স্নেহ থেকেই আমার যত্ন নেন। আর স্ত্রী হয়েছি বলে আমার যেটুকু প্রাপ্য শুধুমাত্র সেটা দিচ্ছেন।”

মাশহুদ মাহাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের বালিশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। মাহা নিজের মনোভাবগুলোকে সত্য ভাবলো মাশহুদের এমন আচরণে। তাই মনে মনে যা ঠিক করে রেখেছিল সকাল হতেই সেটার প্রস্তুতি নেবে বলে সিদ্ধান্ত নিল সে। মাহা ঘুমিয়ে যেতেই মাশহুদ ফোন নিয়ে বাইরে চলে গেল। ফিরে আসে কিছু সময়ের মধ্যেই। ঘরে ঢুকে দেখে মাহা বিছানায় নেই। ওয়াসরুমে আলো জ্বলছে। মাশহুদ ফোন টেবিলের ওপর রাখে। মাহা ওয়াসরুমের দরজা লাগাতেই মাশহুদ টের পেল মাহা আসছে। তাই মাহার দিকে তাকিয়ে বলল,

“আগামীকাল বিকালে আমরা ঘুরতে যাবো।”

“সময় পাবো না। পরীক্ষা শেষ হলে, আমি টানা দুদিন রেস্ট নিবো।”

“আচ্ছা। তাহলে পরশু যাবো।”

মাহা উত্তর দিলো না।

_____________________

পরদিন বিকেলেই মাশহুদ অফিসের সব কাজ মিটিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। মাহার জন্য ওর পছন্দের চকলেট, আইসক্রিম, ফুলসহ একটা শাড়ি কিনে এনেছে। বউয়ের মন খারাপ। এসবের সঙ্গে মন ভালো করার সংবাদ দিয়ে তাকে সার্প্রাইজ দিবে এটাই মাশহুদের লক্ষ্য। কিন্তু বাড়ি ফিরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো সে। রাগে, চিন্তায় মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। মায়ের ঘরে গিয়ে মাশহুদ সরাসরি জিজ্ঞেস করে,

“মাহা কোথায় মা?”

মা সোয়েটার বুনছিলেন। ছেলের প্রশ্নে মাথা তুলে সরু চোখে তাকালেন। নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দিলেন,

“তোর শ্বশুরবাড়ি গেছে।দুদিন ওখানেই থাকবে। রাহারা এসেছে।”

“ফোন করে বলো রাহা আপুদের নিয়ে এ বাড়িতে আসতে।”

“তুই বল। তোর ফোনে কী হয়েছে?”

“ধরছে না।”

“ফোন ধরছে না কেন? রেগে চলে গেছে নাকি? আশ্চর্য রাগারাগি করেছিস আমাকে বলবি না? এমন হলে আমি ওকে যেতে দিতাম? ও যাওয়ার সময় বারবার করে বলে গেছে তুই যেন অফিস বন্ধ করে ওবাড়ি না যাস। ”

“ঝগড়া হয়নি। আর তুমি আমাকে না জানিয়ে ওকে যেতে দিলে কেন?কুইক মা। জলদি ফোন করো। আর দ্রুত আসতে বলো ওকে।”

“ওহ।ঝগড়া যখন হয়নি, আর মেয়েটা যখন ওবাড়িতে থাকতে চাচ্ছে তখন থাকুক। দুদিন পরে তো এমনিতেই চলে আসবে। তুই ফ্রেস হয়ে আয়। আমি ভাত বাড়ছি।”

মাশহুদ রাগতস্বরে বলল,”তোমার এত কষ্ট করতে হবে না। সব আমি করে নিবো। তুমি শুধু তোমার বোনের মেয়েকে আনার ব্যবস্থা করো। আমার জিনাসপত্র ও গুছিয়ে রাখে, আমি এখন কিছু খুজে পাচ্ছি না।”

“আচ্ছা আমি খুজে দিচ্ছি চল।”

মাশহুদ চিন্তায় পড়ে গেল। মা বুঝতেই পারছে না সে কী খুজে পাচ্ছে না। ঘরে সব আছে, বউ নেই এটা বলবে কী করে? মনটা ছটফট করছে, পড়ার টেবিল শূণ্য পড়ে আছে। খুঁনশুটি করার মানুষ নেই। ঘরে এসে মাশহুদের নীল শার্ট খুজে দিলেন মা। শার্ট খুজে পেতেই বাইকের চাবি হারিয়ে গেল। মা বিরক্তচোখে তাকালেন। মাশহুদ আমতা আমতা করে বলল,

“আমি খুজে নিচ্ছি। তুমি যাও।”

মা যেতে যেতে বললেন, “এই না, বিয়েতে তোর অমত ছিল?”

মাশহুদ চমকে বলল, “তুমি জানতে?”

“আমরা সবাই জানতাম। তবে বিয়ের দিন জেনেছি। রাহা বলেছিল। তা এখন কী করবি? মাহা যদি থাকতে না চায়, তাহলে..”

“কীসের তাহলে? থাকতে চাইবে না মানে? হাতপা বেঁধে ফেলে রাখবো ঘরে। মাহা থাকতে চায়না,এমন কিছু বলেছে তোমাকে? ও কী বলেছে?” উত্তেজিত কন্ঠস্বর মাশহুদের।

মা কোনো উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন। মাশহুদ ভাবে, মাহা যদি রেগে থাকে তাহলে মাশহুদ ওবাড়িতে গেলেও মাহা আসবে না। রাগ দেখাবে, জেদ করবে। দুদিন গড়িয়ে সেটা দিনের পর দিন হতে পারে। মেয়েটার তেজ বেড়েছে খুব। মাশহুদ ভাবছে কী করা যায়। সেহনাতের সঙ্গে মাহার বেশ ভাব হয়েছে। ওকে কিছু বলেছে কীনা? সেহনাতের পরামর্শ মাহা বেশ মান্য করে। মাশহুদ সেহনাতকে ফোন দিল।

______________

রাহার দুই ছেলের সঙ্গে খেলছে মাহা। ঘরভর্তি খেলনার ফাঁকে ফাঁকে লুকাচ্ছে তারা, আর মাহা তাদের খুজছে। ওদের খুজে পেতেই পুরো ঘরজুড়ে হাসির ঝংকার। এই মন খুলে হাসিটা মাহা বড্ড মিস করেছে। একমাস পরে বাচ্চাদুটোকে কাছে পেয়ে মাহা পূর্বের মতো অবুঝ হয়ে উঠলো যেন।

পরীক্ষা ভালো হয়েছে। গতদুদিন ধরে রাতবিরাতে কল আসতো মাশহুদের। উম্মি ফোন দিতো। মাশহুদের তার পি.এর সঙ্গে এত কথা বলা মাহার পছন্দ না। কাজের জন্য কিছু বলাও যায়না। তারপরেও সারা শরীর জ্ব’লে যায়। গতকাল রাতেও মাশহুদের বাইরে গিয়ে কথা বলা মাহার সহ্য হয়নি।মাশহুদ হয়তো উম্মিকে পছন্দ করেনা সেভাবে, তারপরেও কেন লাই দিয়ে মাথায় তুলবে? ওর উচিত ছিল প্রথমেই উম্মিকে অন্য সেক্টরে দিয়ে দেওয়া। যেটা সে করেনি। প্রেমার কথা তৎক্ষনাৎ বলেনি এটা গুরুতর অপরাধ। তাই এর শাস্তি ওকে দিতেই হবে। তবে এ বাড়িতে আসার পেছনে আরও একটি কারন আছে। কারনটি হচ্ছে মাহা দেখতে চায়, বুঝতে চায় মাহা চলে আসার পর মাশহুদ কী করে? দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ থেকে মাহার প্রতি ভালোবাসা দেখালে সে মাহার এখানে আসা মেনে নেবে। মাহা চায়না মাশহুদ এটা মেনে নিক। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাশহুদের আসার কোনো নামগন্ধ নেই। মাহা চিন্তায় পড়ে যায়, তবে কী মাশহুদ ওকে এখনও সেভাবে ভালোবেসে উঠতে পারেনি? মাহার অনুপস্থিতি মাশহুদকে পোড়াচ্ছে না? মাহার তো কষ্ট হচ্ছে। মাহা ফোনটা নেড়েচেড়ে সেহনাতকে কল দিল। দুবার রিং হতেই সেহনাত রিসিভ করলো কল। মাহা হতাশ গলায় বলল,

“এখনও নিতে আসেনি। উনি মনে হয় সত্যিই আমাকে ভালোবাসে না আপু। তুমি শুধু শুধু আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলে।”

“রাত শেষ হয়নি।তুমি দেখছি মাশহুদের আদুরে বউ হয়ে গেছো মাহা? বর ছাড়া একদম চলছে না।হা হা হা।”

“উহু।”

“পরীক্ষা কেমন হলো?”

“ভালো। টেনশন হচ্ছে আপু। তুমি তো বলেছিলে উনি আমাকে না পেলে ছুটে আসবে। আসছে না তো।”

সেহনাত ঠাট্টা করে বলল,”তাহলে বোধ হয় ভালোবাসে না।”

“সত্যিই?” অস্পষ্ট কন্ঠস্বর মাহার।

সেহনাত হেসে বলল, “ধুর বোকা মেয়ে। তোমার বর সন্ধ্যায় ফোন দিয়েছিল। তুমি আমাকে কিছু বলেছো কীনা সেটা জানতে। আমি কিছু বলিনি। দেখো দ্রুতই তোমাকে নিতে আসবে।”

“আসলে চলে যাবো?”

“যদি চাও তোমার বর তোমার বিরহে দেবদাস হয়ে যাক তাহলে যেয়োনা। কিন্তু আমি ভাবছি অন্যকথা। মাশহুদ নাকি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করার পরও বললো না। আমার মনে হয় মা’রাত্মক কোনো অসুখ। তোমাকে এটা বলতে মানা করেছিলো। কিন্তু আমার মনে হয় তোমার জানা উচিত। ফোনে ওর গলা শুনে ভালো লাগেনি আমার।”

“কী হয়েছে ওনার? কেমন আছে? আমাকে বারবার ফোন দিয়েছে, রিসিভ করিনি। আমি বাড়ি যাচ্ছি আপু। উনি সুস্থ হলে শাস্তি দেওয়া যাবে। অসুস্থ মানুষকে কষ্ট দিতে হয়না। তাইনা বলো?”

মাহার যুক্তি শুনে হাসি পেল সেহনাতের। মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে। তাই সায় দিয়ে বলল, “হ্যাঁ, তাইতো। তোমার যাওয়া উচিত। হয়তো অসুখ বেড়েছে তাই তোমাকে নিতে আসতে পারেনি। তুমি বরং নিজেই চলে যাও। সাবধানে বাড়ি পৌঁছে, গিয়ে দেখো বরের কী অবস্থা।”

“আচ্ছা আপু। রাখছি।”

মাহা ফোন কেটে দিল। সেহনাতের ফোনে পুনরায় অন্য একটি নাম্বার থেকে কল আসে। মাশহুদ কল করেছে। সেহনাত দুজনের পাগলামি দেখে মুচকি হাসে। কল রিসিভ করতেই মাশহুদ তাড়াহুড়া করে বলল,

“বলেছেন?”

“বলেছি। তবে ওকে বোকা বানানো কী ঠিক হচ্ছে? রাগ করে এবার সত্যি সত্যি চলে গেলে আমি কিন্তু আর কিছু বলতে বা করতে পারবো না।”

“বাড়ির বাইরে অনুমতি ছাড়া এবার একপা দিয়ে দেখাক।” এরপর আহত গলায় বলে,” তাছাড়া বোকা বানাচ্ছি কোথায়? আমি তো অসুস্থই। কঠিন অসুখ হয়েছে আমার। কোনো ঔষধে কাজ হচ্ছে না।”

“হ্যাঁ তাই তো। এই অসুখ তো যে সে অসুখ না। প্রেমের অসুখ। ভালোবাসার অভাবে, বউয়ের অভাবে রোগটা হয়েছে। বউ এলে নিজে সুস্থ হয়ে, মাহাকে নিয়ে ওর লাস্ট কাউন্সিলিং করিয়ে নেবেন আগামীকাল। আমি বলে রেখেছি,ডক্টর ফারাহ্ ওর লাস্ট ডোজের মেডিসিনটা আনিয়ে রেখেছেন।”

“ধন্যবাদ সেহনাত।”

সেহনাত হেসে ফোন কেটে দিল। মাশহুদ অপেক্ষা করছে তার বউয়ের জন্য। আজ বাড়ি ফিরুক মাহা।খুব চালাক হয়েছে তাইনা? স্বামীকে শায়েস্তা করা শিখে গেছে। ওর এই চতুরতার মজা টের পাবে আজ। কত সাহস মেয়ের, মাশহুদের ভালোবাসা পরীক্ষা করে!

চলবে..