সুখের প্রেমাসুখ পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
279

#সুখের_প্রেমাসুখ(০৮, অন্তিম পর্ব)
#ওয়াসেনাত_আরাবী

রাত এগারোটা বেজে আঠারো মিনিট। মাহা সবেমাত্র বাড়ি ফিরেছে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। মাশহুদ একাই জেগেছিল। মাহা চুপিসারে দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো। মাশহুদ চোখ বুজে আছে। মাহা পা টিপে টিপে মাশহুদের শিয়রে এসে দাঁড়ায়।বেশ কিছু সময় মাশহুদের চেহারা অবলোকন করে। দাড়িগুলো বড় হয়েছে। গতকালও খেয়াল করেনি মাহা। মাশহুদের ঘনদাড়ি মাহার ভালো লাগে। মাহা তো মনে মনে চায় দাড়িগুলো বয়স্কদের মতো লম্বা করে ফেলবে। একটা চাচা চাচা ভাব আসবে। তাহলে কেউ আর মাশহুদ চাচার দিকে নজর দেবে না। দিন দিন মানুষটা সুন্দর হচ্ছে। এভাবে সেজে গুজে বাইরে গেলে মেয়েরা তো নজর দেবেই। ওদের কী দোষ? সব দোষ এই জনাবের। মাহা মাশহুদের মাথায় হাত রাখলো। তাপ বোঝা যাচ্ছে না। মাহা নিজের হাত উল্টে পুনরায় তাপমাত্রা পরখ করে। একদম স্বাভাবিক তাপমাত্রা। মাশহুদ নড়েচড়ে উঠতেই মাহা দ্রুত ছিটকে পেছনের দিকে সরে যায়। এরপর হামাগুড়ি দিয়ে খাটের নিচে চলে গেল। মাশহুদ ড্রেসিংটেবিলের আয়না দিয়ে বিড়ালছানার মতো চার হাতপা এক করে লুকিয়ে থাকা মাহাকে দেখে মুচকি হাসে। আতঙ্কে মেয়েটার মুখ শুকিয়ে গেছে। মাশহুদ খুকখুক করে কেঁশে ওঠে। বাহাতে টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাসটা মেঝের ওপর ফেলে জোরে জোরে কাঁশে। মাশহুদকে যক্ষ্মা রোগীদের মতো কাঁশতে দেখে মাহা দ্রুত খাটের নিচ থেকে বের হয়ে দৌড়ে বাইরে চলে গেল।চোখের পলকেই জগভর্তি পানি নিয়ে হাজির হলো। মাশহুদকে পানি পান করিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো সাবধানে। মাশহুদ শুয়ে কাঁতরগলায় প্রশ্ন করে,

“তুমি? কখন এলে?”

“কী হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ লাগছে অনেক? খালামনিকে ডাকবো? পানি খাবেন? ঔষধ নিয়েছেন?”

“আমি ঠিক আছি। তুমি আবার আসতে গেলে কেন? ঘুরতে গিয়েছিলে,আনন্দ করতে গিয়েছিলে আমাকে রেখে। আমার কী হয়েছে বা হবে তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি যাও।”

“আপনিও তো আমাকে আনতে গেলেন না। গেলেই তো চলে আসতাম।”

“কেন যাবো? তুমি তো শান্তিতে থাকতে চেয়েছিলে। আমি তো তোমাকে শান্তি দেইনি। এজন্যই তো আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছো।”

“আপনি ঝগড়া করতে চাচ্ছেন?”

“না। তুমি কী চাও বলো।”

“আমি আবার কী চাইবো?”

“কিছু তো চাও। এই চাওয়ার মধ্যে নিশ্চই আমি নেই। থাকলে তুমি আমার কাছে থাকতে। ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম, বললে রেস্ট চাও। অথচ আমি বাড়িতে আসার আগেই বাবাদের বাড়ি চলে গেলে। তুমি যাও। আমার দেখাশোনা করার জন্য তোমার প্রয়োজন নেই।”

মাশহুদ বালিশে মুখ গুজে শুয়ে রইলো। মাহা পেছনে বসে অস্থিরতায় আসফাস করছে। মাশহুদ পুনরায় বলে উঠলো,

“যার মনে আমার জন্য দরদ নেই তার সঙ্গে আমি কেন থাকবো? তুমি যখন থাকতে চাও না। তখন যেখানে মন চায় চলে যেয়ো।আমি নিজে অনুমতি দিচ্ছি।কেউ কিছু বলবে না। তুমি যাও মাহা। আমি তোমাকে আটকে রাখবো না।”

মাহার চোখ মাশহুদের ফোনে। সাইলেন্ট করে রাখা ফোনটায় অনবরত এসএমএস আসছে উম্মির। তাকে কেন অন্য সেক্টরে নিয়োগ করা হলো? সে কী করেছে? তাকে কিছু কেন জানানো হয়নি? এসব লিখেছে। কল দিচ্ছে। মাহা কল রিসিভ করে সালাম দিল। মাশহুদ ভাবলো মাহা নিজের ফোনে কথা বলছে তাই সেটাকে গুরুত্ব দিল না। ফোনের ওপাশ থেকে ভেজা কন্ঠস্বর ভেসে আসে,

“আমার অপরাধ কী সেটা তো বলবেন স্যার।”

“উনি এখন ব্যস্ত আছেন।আগামীকাল অফিসে যাওয়ার পর এটা নিয়ে কথা বললে ভালো হয় আপু।রাত অনেক হয়েছে। ঘুমান।”

“কে? মাহা? তুমি কেন ফোন ধরেছো? স্যার কোথায়? এত রাতে স্যারের ফোন তোমার কাছে কেন?”

মাহার মেজাজ খারাপ হলো।উম্মির ওপর না, মাশহুদের ওপর। বিয়ের মিষ্টি খাওয়ানোর পাশাপাশি বউটাকেও দেখানো উচিত ছিল। মাহা যেতে চেয়েছিল মাশহুদ সঙ্গে নেয়নি। তাই এখনও অনেকেই জানে মাহা মাশহুদের খালাতো বোন। মাহা নিজ থেকে খুব কম মানুষকে স্বয়ং জানিয়েছে যে তার স্বামী মাশহুদ। আজ সেই মানুষদের তালিকায় উম্মিকেও যোগ করবে। বিবাহিত পুরুষের পেছনে লেগে থাকা বেহায়া মেয়েটাকে কিছু গা জ্বা’লানো কথা না বললে মাহার নিজেরই রাতে ঘুম আসবে না। তাই বেশ জমিয়ে জমিয়ে বলল,

“হুম। আপনার স্যার এখন আমার পাশেই শুয়ে আছে। আর আমাদের সম্পর্কটাই এমন যে একত্রে থাকার জন্য রাত-দিন দেখার প্রয়োজন নেই।”

“মানে? কী যা তা বলছো?”

মাশহুদ মাহার দিকে ফিরলো। দেখলো মাহার কানে ধরে রাখা ফোনটা ওর। মাহার চোখ দিয়ে যেন আগুণ ঝরছে। তা দেখে মাশহুদ ডানহাতে লাজুক ভঙ্গিতে গলা থেকে ঘাড় অবধি হাত বুলিয়ে মুচকি হাসে। মাহা বলল,

“যা তা নয় আপু। আপনাকে বোধ হয় আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বেশি কিছু বলা হয়নি।তাই অজান্তেই আমার স্পাই হয়ে নানা কাজ করে দিয়েছেন। ভেবেছিলাম,যদি পরিচয় জেনে যান তাহলে মাশহুদের খোজখবর এভাবে নাও দিতে পারেন তাই কিছু বলিনি। কিন্তু এমন রাতবিরাতে বিরক্ত করা আমার পছন্দ না। আপনাকে কাজের প্রেসারে দেখতে ভালো লাগছিলো না। রাতেও কত চাপে থাকেন কাজের। যে রাত বারোটা-একটার পর স্যারকে ফোন দিতে হয়। তাই আপনাকে অন্যসেক্টরে দেওয়া হয়েছে।”

“তোমাদের সম্পর্ক? তোমার কোন পরিচয়?”

“যে শালীন পরিচয়ে একটা মেয়ে একটা ছেলের ঘরে যখন-তখন সেই ছেলেটারই বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে পারে। যখন তখন সেই ছেলেটার স্পর্শে মাতোয়ারা হতে পারে।”

মাশহুদ চোখ বড় বড় করে তাকায়। এসব শুনে দ্রুত গিয়ে মাহার কোলে মাথা রাখে। মাহার বামহাত নিজের চুলে ছুঁইয়ে ইশারা করে চুল টেনে দিতে। মাহা সেটাও নোট করে বলল,

“এই যে দেখুন,এখন আপনার স্যার আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আমি তার চুল টেনে দিচ্ছি।”

“তুমি স্যারের বউ?”

মাহা মাশহুদের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল, “নিন এই নির্বোধ উম্মিকে আমার পরিচয় জানান। এত কিছু শুনেও..”

মাশহুদ দ্রুত ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,”মাহা আমার একমাত্র বউ উম্মি। আমাদের প্রাইভেট মোমেন্টে আর ডিস্টার্ব না করলে খুশি হবো। রাখছি।”

মাশহুদ ফোন কেটে মাহার দিকে তাকালো। মাহা জোরে জোরে চুল টানছে। মনে হচ্ছে সবগুলো চুল আজকেই গোড়া থেকে তুলে ফেলবে। মাহা মাশহুদের চুল ধরে ঝাকিয়ে বলল,

“আহা! উম্মি! কত দরদ। সুন্দরী মেয়ে দেখলে মাথা আর শব্দ ঠিক থাকে না তাইনা?”

“কী এমন বললাম যে আবার রেগে যাচ্ছো?”

“এতো ব্যাখ্যা দিয়ে নরম গলায় কথা বলতে হবে কেন? ওই মেয়ের সাথে?”

“তুমি যে বললে?”

“আমি বলবো। আমার পেছনে তো লাগছে না। আপনি কেন বলবেন? নিজে আশকারা দিয়ে মাথায় তুলেছেন বলেই তো এই দশা।”

“আচ্ছা,আমার ভুল হয়েছে। এরপর থেকে কঠিন বসের মতো কথা বলবো।ঠিক আছে?এখন বলো ডেফিনেশন যেভাবে দিলে ওভাবে একটা ট্রায়েল দিলে কেমন হয়?”

“কীসের ট্রায়েল?কী ডেফিনেশন? আপনার না আমাকে প্রয়োজন নেই? সরুন, আমি এখুনি চলে যাবো।”

মাশহুদ মাহার কোমর জড়িয়ে শুয়ে রইলো। মাহা রেগে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। মাশহুদ মাথা নাড়িয়ে নরম গলায় বলল,

“তুমি গেলে আমার কী হবে?”

“কিচ্ছু হবে না।বেশ ভালো থাকবেন। নতুন নতুন সুন্দরী মিষ্টভাষিণী পাবেন। আমার দরকার আছে নাকি?”

“আছে। প্রচুর। তুমি গেলে আমার শরীর ভালো থাকবে না। তাপমাত্রা বেড়ে যাবে, অস্থির লাগবে, ঘুম আসবে না, খেতে পারবো না।”

“মিথ্যা কথা। এত কিছু হলে বাড়ি এসে সাতঘন্টা বসে থাকতেন না। ছুটে গিয়ে নিয়ে আসতেন আমাকে।আমি অপেক্ষা করছিলাম।কিন্তু তা তো হবে না। আমি গেলেই তো আপনার শান্তি।”

“প্রেমা সুস্থ। তোমাকে এটা বলতে বলেছিলো। তোমার প্রসঙ্গ ব্যতীত ওর সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি আমার। উম্মির বাবা আমাদের বেশ পুরোনো এমপ্লয়ি তাই ওকে কিছু বলতে পারিনা। তবে আজ যা করলে তারপর বলতে বাধ্য হতে হবে। এভাবে একটা বাইরের মেয়ের জন্য ঘরের বউ চলে গেলে আমার বেশ সমস্যা হবে।”

মাহা মাশহুদকে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এই লোক নাকি অসুস্থ? এখন তো একদম সুস্থ। কাঁশি নেই, গলার স্বরও পরিষ্কার। অর্থাৎ? নাটক করছিল? মাহা রেগে বলল,

“আপনি না অসুস্থ ছিলেন?”

“এখন সুস্থ। সী আ’ম পার্ফেক্টলি ওকে।”

“নাটক করছেন? সেহনাত আপুকেও মিথ্যা বলেছেন?”

“মিথ্যা বলিনি। আমার সত্যিই কঠিন অসুখ হয়েছে। যত বার বউ চোখের আড়াল হবে, আমার ততবার অসুখ হবে। চোখের সামনে না থাকলে সেটা দুঃখের অসুখ আর সামনে থাকলে সুখের অসুখ। তুমি জলজ্যান্ত একটা অসুখ মাহা। এই অসুখে অসুস্থ হয়ে আমার বেহাল দশা হয়ে গেছে। বুঝতে পারছো না কেন?”

মাহা অভিমানে মুখ গোমরা করে থাকে।মাশহুদ ইশারা করে শাড়ির প্যাকেট দেখিয়ে বলল, “শাড়িটা পড়ে আসো। ”

“এত রাতে? অসম্ভব।”

“ওকে, আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।”

“না।” চেঁচালো মাহা।

মাশহুদ দুষ্টুহেসে বলে, “আরে সমস্যা নেই, আমি ভালো শাড়ি পড়াই। মনে নেই, প্রথমদিন তোমাকে আমি নিজে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছিলাম। খারাপ হয়েছিল? আজও সুন্দর লাগবে। আসো, ”

মাহা দ্রুত সরে গিয়ে বলল, “না। একদম না।”

“ও বউ! এত না না করো কেন? মাঝে মাঝে হ্যাঁ, হ্যাঁ বলতে কী সমস্যা? বরটা শান্তিতে থাকুক চাও না কেন? এত নিষ্ঠুর কেন?”

“আমি নিষ্ঠুরই। আপনি শাড়ি পড়ানোর নাম করে অন্য কাজ করেন। আপনাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। শাড়ির নাম মুখে আনবেন না আর।”

“এই কথা? তাহলে তো আজ শাড়ি পড়িয়েই ছাড়বো।”

মাহা নিচে নেমেই দৌড়। মাশহুদও দৌড়াচ্ছে। বিছানার এপাশে ওপাশে, পর্দার আড়ালে, টেবিলের চতুর্দিক ঘিরে ওদের ছোটাছুটি। হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে মাহা। তবুও থামছে না। মাশহুদও ছাড়বার পাত্র নয়। মন যখন চাচ্ছে বউকে শাড়িতে দেখবে তখন যা’ই হয়ে যাক না কেন আজ বউকে শাড়ি পড়াবেই। মাহা দরজা পার করে বাইরে ছুটে যেতে যেতে বলল,

“ধরতে পারলে পড়বো।”

“এখন শুধু শাড়ি পড়ানোতে ক্ষান্ত হবো না বউ। কড়া ঔষধ প্রয়োজন। আজ রাতে তুমি ঘুমানোর চিন্তা বাদ দাও। যেভাবে ছোটাচ্ছ, যতক্ষণ ছোটাবে ততসময় ঘুম থেকে দূরে থাকবে। আজ তোমাকে ছাড়বো না।”

“আমি নালিশ দিবো।”

“ওসব নালিশে আমার কিছু যায়-আসে না। আর তোমার মুখ দিয়ে এখন নালিশ বের হবে না সেটা জানি আমি। তাই ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। একবার ধরি, তারপর দেখো, বরকে ফেলে যাওয়ার চিন্তা করার কী পরিণতি হয়।”

মাহা ছুটতে ছুটতে রান্নাঘরে চলে আসে। মাশহুদ রান্না ঘরে ঢুকেই ছিটকিনি তুলে দিল। মাহা আতঙ্কে তাকায়। ছিটকিনি খোলার সাধ্য নেই ওর। ওর থেকে বেশ উঁচুতে ছিটকিনি। লাফিয়ে খোলার চেষ্টা করতে করতে ওকে মাশহুদ ধরে ফেলবে। মাহা দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে হাঁপায়। মাশহুদ গরমে শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে বুকে ফু দিল। এরপর শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে এগিয়ে আসে। মৃদু হেসে বলে,

“এবার কোথায় পালাবে বউ?”

মাহা হার মেনে নিল। ক্লান্ত হয়ে তাকের ওপরেই বসে পড়ে। মাশহুদ মাহার কাছে গিয়ে ওকে পাঁজকোলা করে তুলে নিল। মাহা দুহাতে মাশহুদের গলা জড়িয়ে ধরে। মাশহুদ ছিটকিনি খুলে, মাহাকে কোলে নিয়েই সিড়ি বেয়ে বেডরুমে আসে। মাহাকে বিছানার ওপর বসিয়ে শাড়ি বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো মাশহুদ। মাহা করুনচোখে তাকায়। মাশহুদ অনড় কন্ঠে বলে,

“ওভাবে তাকালেও আজ গলবো না।”

কিছুটা থেমে মাশহুদ পুনরায় বলল,”গলবো তো বিশেষ ঔষধিতে। প্রস্তুত তো সেটা দেওয়ার জন্য?”

মাশহুদের চোখের সংকেতে মাহা নিজের দৃষ্টি নত করে ফেললো লজ্জায়। মনে মনে বলল,”আপনার এই অসুখ যেন সারাজীবন থাকে মাশহুদ। আপনার এই প্রেমাসুখ আমার সবথেকে প্রিয় সুখ। সুখের শুরুটা আপনাকে দিয়েই শুরু হয়েছিল, শেষটাও যেন আপনাকে ঘিরেই হয়।ভালোবাসি আপনাকে। নর-নারীর ভালোবাসা কী সেটা বোঝার পর থেকে শুধু আপনাকেই ভালোবাসি।”

মাশহুদ মাহাকে শাড়ি পড়িয়ে ওকে বিছানায় বসিয়ে রেখে লাইট অফ করলো। জানালার পর্দা সরিয়ে কাঁচ লাগিয়ে দিলো। চাঁদের আলোতে মাহাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মাশহুদ মাহার সামনে এসে বসে। মাহার হাতটা নিজের শক্ত হাতের মুঠোয় পুরে ধীরকন্ঠে বলল,

“ভালোবাসি মাহা। স্ত্রী এবং প্রেয়সী হিসেবে। বিয়ের আগে কী সম্পর্ক ছিল সেটার ওপর ভিত্তি করে নয়। এই পবিত্র বন্ধনটির কারনে আমার মনে তোমার জন্য যে অনুভূতি জন্মেছে তা মৃত্যুর আগ অবধি মিটবে না। কথা দিচ্ছি,সারাজীবন আগলে রাখবো। ভালোবাসবো। সব আবদার মেটাবো, সকল ইচ্ছা পূরণ করবো, সব কথা শুনবো, সব রাগ সহ্য করবো। সবকিছুর পরিবর্তে তুমি শুধু দুটি কথা দাও মাহা,ঝগড়া, রাগ, মা’রামা’রি কাটাকাটি যা’ই হোক না কেন। আমাকে ছাড়া বাবার বাড়ি, নানার বাড়ি, দাদার বাড়ি, চাচা-ফুফু-মামাসহ কারোর বাড়ি যাবে না। আর আমি যা বলবো তাই মেনে চলবে।”

“পারবো না।”

মাশহুদ ঈষৎ বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করে,”কী? কেন?”

“আপনার লাস্ট লাইনের জোর অনেক। যা বলবেন তাই মেনে চলার মধ্যে সবকিছু পড়বে।”

মাশহুদ বিরক্ত হয়ে বলল, “বউয়ের এই অতিরিক্ত বুদ্ধি আমাকে ডোবাবে। আগামীকাল গিয়ে বোকা বানানোর কাউন্সিলিং করাবো আমি। বুঝ পেয়ে লস হয়েছে। এই লোকসানের ক্ষতিপূরণ আগে নিয়ে নেই। তারপর বাকি সব দেখছি।”

মাশহুদ মাহার দিকে এগিয়ে যেতেই মাহা পিঁছিয়ে যায়। একপর্যায়ে দেওয়ালের সাথে মিশে গেল পিঠ। লাজুক, আর’ক্ত চেহারা মাহার।
মাহার কপালে এসে পড়া একগুচ্ছ অবাধ্য চুল ওর কানের পেছনে গুজে দিল মাশহুদ। মাহা চোখ তুলে তাকায়। চোখাচোখি হয়। মাশহুদ হেসে মাহার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। মাহা চোখ বুজে নেয় সুখে। এরপর খুবই স্বল্পস্বরে আওড়ে ওঠে, “ভালোবাসি।”

সমাপ্ত।

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।