সুখের প্রেমাসুখ পর্ব-০৩

0
195

#সুখের_প্রেমাসুখ(০৩)
#ওয়াসেনাত_আরাবী

বাড়িতে ফিরে মাশহুদ হট শাওয়ার নিল। বিছানার ওপর বসে আছে মাহা। মাশহুদের বউ, প্রেয়সী টাইপের কথার অর্থ সে বুঝতে পারেনি। মাশহুদ তখন ওগুলো কেন বলেছে?মাহার প্রতি বিয়ের আগে কখনও মাশহুদ ভাইয়ের প্রেম প্রেম অনুভূতি ছিল না। এটা মাহা জানে। তাহলে হসপিটালের বন্ধ কেবিনে প্রেমার সঙ্গে কী এমন কথা হলো? যে মাশহুদ মাহাকে বউ ভাবতে শুরু করেছে। প্রেমাকে পেল না বলেই কী মাহাকে বউ ভাবছে? মাহা শুধুমাত্র একটি অপশন?এই শব্দের বেড়াজাল মাহাকে কষ্ট দিচ্ছে। দোটানায় ফেলছে। মাহা কী করবে? ওর কী করা উচিত কিচ্ছু মাথায় আসছে না।

মাহার ভাবনার মাঝেই মাশহুদ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসে। পরনে শুধুমাত্র একটা তোয়ালে রয়েছে। এমন দৃশ্য মাহা পূর্বেও একবার দেখেছিল। তখন মাহার বয়স বারো-তেরো হবে। ভুল করে, নক না করে মাশহুদের ঘরে ঢুকে পড়েছিল সে। মাহা চোখ দ্রুত বন্ধ করে অসহায় গলায় বলে,

“ঘরে আমিও আছি মাশহুদ ভাই।”

“জানি। ওয়াসরুমে গেলে যা, না গেলে বসে থাক। আমাকে ঘটা করে তোর উপস্থিতি জানানোর দরকার আছে?”

মাশহুদের এমন উত্তরে চমকে গেল মাহা। এই মানুষটার হঠাৎ পরিবর্তন হজম হলো না। তার মাশহুদ ভাই তার সঙ্গে কখনও এভাবে কথা বলেনি। এভাবে কথা বলতেই পারে না সে। মাশহুদ ভাই তো নরম মনের মানুষ, মিষ্টি ব্যবহার তার। কোমল স্বরে কথা বলে সে। কখনও মাহার সঙ্গে এমন রুক্ষ আচরণ করে না। মাহা দুঃখ পেল। কেঁদে ফেললো চোখমুখ কুঁচকে। মাশহুদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বিরবির করে বলে, “শুধু কাঁদতেই জানে।” নাকের পানি, চোখের পানি এক হতেই ধমক দিল মাশহুদ,

“কাঁদছিস কেন?”

মাহা শব্দ করে কেঁদে উঠে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে, “কেন ধমকাচ্ছেন? বাজে ব্যবহার করছেন। আমার কষ্ট হয় এমন বাজে ব্যবহারে। জানেন না?”

“সব জানার ঠেকা নিয়ে বসে আছি আমি?”

“আমার ব্যাপারে জানা উচিত।আমি আপনার সবথেকে ক্লোজ বোন ছিলাম মাশহুদ ভাই।”

পরপর ‘বোন’ ও ‘মাশহুদ ভাই’ শুনে মাশহুদ পুনরায় হতাশায় ডুবে গেল। বিকেলে রাহা ওকে ডেকে বলেছিল,
“মাশহুদ ভাই ডাকটাকে আর প্রশ্রয় দিস না। পরে দেখা যাবে তোর বাচ্চারাও তোকে বাবা না ডেকে মামা ডাকছে। তাই সময় থাকতে সতর্ক হ, মাশহুদ। বউকে বোন ভেবে ভবিষৎ নষ্ট করিস না। তাছাড়া আমি তো ভেবে রেখেছি, তোদের মেয়েদের সাথে আমি আমার ছেলেদের বিয়ে দেবো। ঠিক আম্মুদের মতো। দারুন হবে না ব্যাপারটা?”

মাশহুদ তখন রেগে গেলেও এখন চিন্তা হচ্ছে। মা’রাত্মক চিন্তা! মাশহুদ কল্পনা করছে, ওর ছোট ছোট হাত-পায়ের বাচ্চাগুলো, ওর নিজের বাচ্চাগুলো ওকে মামা মামা বলে ডাকছে। কী সাংঘাতিক কল্পনা। মাশহুদ আতঙ্কে কেঁপে উঠলো। মাহার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন এক দৃষ্টিপাতেই ভস্ম করে দেবে মাহাকে। মাশহুদের এমন রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে মাহার কান্নার গতি বেড়ে গেল। মাশহুদ আলমারি থেকে ট্রাউজার বের করতে করতে বলল,

“কান্নার সাউন্ড অফ কর। মেজাজ খারাপ করবি না মাহা। এমনিতেই বেশ টেনশনে আছি।”

মাহা হিঁচকি তুলে কাঁদে। মাশহুদ টেনশনে আছে জেনে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারলো না। মাশহুদ বিরক্ত চোখে তাকায়। মাহা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে সমগ্র শরীর ভাইব্রেট করে কাঁদছে। মাশহুদের ভাবনায় আরও একটি চিন্তা যোগ হলো, যদি ওর বাচ্চারাও মাহার মত ছিঁচকাঁদুনে হয়?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাশহুদ ট্রাউজার পড়ে। এরপর তোয়ালে ব্যালকোনিতে নেড়ে দিয়ে ঘরে আসে।
মাহা ততক্ষণে উঠে ওয়াসরুমে চলে গেছে। গোসল করেছে। শাড়ি বদলে একটা সবুজ রঙের থ্রিপিচ পড়েছে। ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়েছে। মাশহুদ বিছানার ওপর বসে ফোন দেখছিল। মাহাকে আলমারি থেকে চকলেট বের করে নিতে বলবে বলে,সে মাথা তুলে তাকায়।
মাহা শাড়ি হ্যাঙ্গারে বাধিয়ে ঝুলানোর চেষ্টা করছে। ভেজা চুলে জামার পেছনের দিকটা ভিজে গেছে। মেঝেও ভিজে গেছে অনেকাংশ। মাশহুদের চোখের পলক পড়লো না। মাহা নিচের ঠোঁট চেপে এখনও কাঁদছে। গোলাপী ঠোঁটজোড়া, ফরসা, আরক্ত, গোলগাল মিষ্টি চেহারা। মাশহুদ ঢোক গিললো। মনে মনে বলল, “তুই এত সুন্দর হলি কবে মাহা? আগে তো তোকে এত সুন্দর লাগেনি। নাকি আমার চোখই চোখের সামনে ফুটে থাকা দুর্লভ ফুলটা দেখতে পায়নি। তোকে প্রচন্ড স্নেহ করতাম বোন হিসেবে। এখন যখন আমার কোনো অতিত বা পিঁছুটান নেই তখন তোকে ভালোবাসবো। সর্বস্ব দিয়ে সুখ দেওয়ার চেষ্টা করবো আমার বউকে।”

মাহা শাড়ি ঝুলিয়ে পা পেছনে নিতেই ধপাস করে নিচে পড়ে গেল। মাশহুদ নিশ্চল চেয়ে আছে। মাহা মাশহুদকে দেখে, ও যে ব্যাথা পেয়েছে সেটা লজ্জায় প্রকাশ করতে চায় না। মাশহুদ সেটা বুঝতে পারে। দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। উঠে হালকা হেসে এগিয়ে আসে। মাহা হাসার চেষ্টা করে বলে,

“আমি ব্যাথা পাইনি, ঠিক আছি। একটু স্লিপ খেয়েছি। কিন্তু ব্যাথা..”

মাশহুদ এসে কিছু না বলেই মাহাকে পাঁজকোলা করে তুলে নিল। মাহা হতবাক। হতবিহ্বল নয়নে তাকায়। মুখ দিয়ে কথা বের হয়না। প্রথমে ব্যাথা আর এখন মাশহুদের দেওয়া শক খেয়ে বাক্যহারা হয়ে পড়ে। চোখ পিটপিট করে মাশহুদের চেহারা দেখে। ঘন চাপদাড়ির সুদর্শন চেহারার মাশহুদ ভাই। মাহা এখন তার কোলে। এটা মনে পড়তেই মাহা ভয়ে লজ্জায় জ্ঞান হারালো।

মাশহুদ মাহাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইলো।সামান্য কোলে নেওয়াতেই বউ সেন্সলেস? মাহার সাথে সারাজীবন এভাবেই কাটাতে হবে? মাশহুদ আর কিছু ভাবতে পারলো না। মাহার চুলগুলো যত্ন করে মুছে দিয়ে গায়ে কম্বল টেনে দিল। এরপর লাইট বন্ধ করে মাহার পাশেই কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো।

সকালে মাহার ঘুম ভাঙে গালে খসখসে কিছুর স্পর্শে। বিরক্ত মাহা ঘুমের ঘোরেই দুহাতে সেটা সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারলো না। জোর করে দূরে ঠেলার চেষ্টার বদলে সেটা মাহার হাত চেপে ধরেছে। মাহার ঘুম ভেঙে গেল ভয়ে। চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো মাশহুদ রাগি চেহারা নিয়ে ওর হাত উচু করে ধরে রেখেছে।
এটা দেখে পুনরায় সেন্সলেস মাহা। মাশহুদ হাসবে নাকি কাউকে ডাকবে বুঝতে পারছে না। এই মেয়ে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে কেন? মাশহুদকে এত ভয় পাওয়ার কারন কী? আগে তো সারাদিন মাশহুদ ভাই মাশহুদ ভাই করতো। শুধু মুখে নাম বলা ছাড়া, পাশে বসা, হাতে হাত রাখা এসব তো সাবলীল ভাবেই করেছে। মাশহুদ শীতলচোখে তাকায়। নিজেকে বোঝায়, মাহা সেসব ওকে ভাই ভেবে করেছে। এখানেই মেজাজ আরও চটে গেল। চারিদিকে শুধু ভাই ভাই আবহ।

মাশহুদ বসে মাহার সরল চেহারা অবলোকন করছে। মাহা চোখ মেলে তাকালো। চোখ খুলে মাশহুদকে পাশে বসে থাকতে দেখে পুনরায় অস্বস্তিতে পড়ে গেল। মাশহুদ কঠিন গলায় বলল,

“এবার সেন্সলেস হলে, মা’র একটাও নিচে পড়বে না।”

মাহা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। মাথা নেড়ে স্বল্পস্বরে জানায়, সে আর সেন্সলেস হবে না। মাশহুদ হতভম্ব। এই মেয়ে আবার নিজের মুখেও বলছে সেটা? মাহা বলল,

“স্যরি।”

“কেন?” মাশহুদ সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করে।

“ইয়ে, মানে, ওই..”

“আমি ব্রেকফাস্টে ডিম ভাজি আর পরোটা খাবো। গিয়ে বানিয়ে আন।”

“আমি?”

“তোর বানাতে আপত্তি থাকলে বল। আমি গিয়ে বানিয়ে আনি?”

“না, না আমি যাচ্ছি।”

“দুজনের জন্যই আনবি। একসাথে খাবো।”

“আমি পরে খেয়..”

মাশহুদ চোখ রাঙাতেই মাহা থেমে গেল।আমতা আমতা করে বলল, “না, একসাথেই খাবো।”

মাহা একদৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেল। ব্রাশ করে চুল বেঁধে সে রান্নাঘরে চলে যায়। মাশহুদ আড়চোখে সবটা দেখে। এরপর পৃথিশাকে কল করে প্রেমার খবর নিল।

রান্নাঘরে এসে সবাইকে দেখে থমকে দাঁড়ায় মাহা। ওর মামাতো বোন মীরা এসে টিপ্পনী কেটে বলল,”বাসররাত কেমন কাটালে জানু? ভাই কী দিল?”

মাহা মুখ কুঁচকে শাশুড়ি ওরফে খালামনির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ব্যস্ততা নিয়ে বলে, “দেখি সরো, আমি বানাচ্ছি। আটা কই? মাশহুদ ভাই পরোটা খাবে।”

মুহূর্তেই সমগ্র রান্নাঘর যেন কেঁপে উঠলো দুটি শব্দে। “মাশহুদ ভাইইই..” মাহা চোখেমুখে ভীতিভাব নিয়ে পেছনে ফিরতেই দেখলো সবাই ওকে দেখে কেমন অদ্ভুতভাবে হাসছে। মাহার মা এগিয়ে এসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,

“স্বামীকে ভাই বলতে হয়না। নাম ধরে ডাকতে ইচ্ছে না করলে সম্বোধনের প্রয়োজন নেই। আর তোকে পরোটা বানাতে হবে না। আমি আর আপা রান্না করবো আজ। তুই যা গিয়ে খাবার টেবিলে বোস।”

মাশহুদ নিচে নেমে গলার স্বর বাড়িয়ে বলল, “মাহা দ্রুত নাশতা দে।”

মাহা করুনচোখে তাকায়। সাইফ মুখটা বাঁকিয়ে বলে, “তোমরা আসো তো ফুপি। মাশহুদ ভাই তার বউয়ের হাতে বানানো নাশতা খাবে। এসো, এসো, ওকে বিরক্ত করো না। মাহা তুই মনোযোগ দিয়ে নাশতা বানা। চাপ নিস না, যা বানাবি তাই গলা দিয়ে নেমে যাবে। না নামলে বাঁশ দিয়ে গাদানো সম্ভব। তোর জন্য এটুকু করা যায়।”

মাহা সাইফের কথার পাত্তা না দিয়ে খালামনির কাছে গিয়ে অভিযোগ করে, “তোমার ছেলে বিয়ের পর বদলে গেছে। আমাকে এখন কষ্ট দেয়। দুবার সেন্সলেস হয়ে গেছি ভভয়..”

খালামনি এবং মা বাকিটা না শুনেই কেমন পালিয়ে গেলেন। ভাইবোনগুলো কৌতুহল নিয়ে ছুটে আসে মাহার কাছে। আরশ বলল, “তারপর?”

মীরা বলল,”দু-বার সেন্সলেস হয়েছিস?পুরো ঘটনা খুলে বল।”

সাইফ দ্রুত পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলল, “তোরা থাক। আমার কাজ আছে।”

মীরা আর আরশ মাহার বয়সী। তাই ওদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া যাবেনা ভেবে মাহা সবটা বলতেই যাবে এমন সময় রাহার আগমন ঘটলো। দুই ছেলেকে মামা ও খালার কাছে দিয়ে বলল,

“খাবার টেবিলে গিয়ে বোস। ”

মীরা ও আরশ বাধ্য হয়ে চলে গেল। রাহা ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে চুলার পাশে রেখে বলল, “তোদের দুজনের ঘরের মধ্যকার কথা ঘরের মধ্যেই রাখবি মাহা। এসব বাইরে সবার সামনে বলতে হয়না বোন।”

“কোন সব?”

“স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো।”

“কিন্তু আপু, বিষয়গুলো তেমন ব্যক্তিগত না। মাশহুদ ভাই..”

“আবার ভাই? মাশহুদ তোকে পেটাইনি? ওকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে ভাই বললেই তোকে পেটানোর। এমনিতে শুধরাবে না এই ডাক। পিঠে পড়লে মনে থাকবে।”

“তুমি ওনার হয়ে কথা বলছো?”

“ও আমার ভাই।”

“আমি তোমার কিছু না, তাইনা? ঠিক আছে তুমি থাকো তোমার মাশহুদকে নিয়ে। আমার সঙ্গে কথা বলবে না আর।”

“আচ্ছা।”

“আচ্ছা? আচ্ছা! আমি তো পর হয়ে গেছি তাইনা। নিজের আপন বোনের থেকে খালাতো ভাই বেশি হয়ে গেল তোমার কাছে। ভাই ঘরে জ্বালাচ্ছে, বোন বাইরে, আবার নালিশও করা যাবে না। আমি সন্ন্যাসিনী হবো। শুনেছো?”

মাশহুদ রান্নাঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। মাহার কথা শুনে বুকের ওপর হাত গুজে বলল, “বেশ ভালো। নাশতা দিয়ে এটার কার্যক্রমও শুরু কর।আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বের হবো। রাহা আপু দুলাভাই তোমাকে খুজছে।”

রাহা মাশহুদের ইঙ্গিত বুঝে, যেতে লাগলে মাহা রাগত স্বরে বলে, “দেখলে আপু কীভাবে কথা বলছে? তুমি কিছু বলবে না? চলে যাচ্ছো কেন?”

রাহা যেতে যেতে বলে,”মাশহুদ মাহাকে তুই-তোকারি করে কথা বলবি না আর। ওর সঙ্গে নরম গলায় কথা বলবি।”

মাশহুদ ভদ্র ছেলের ন্যায় উত্তর দিল, “ওকে আপু।”

মাহা দাঁতে দাঁত চেপে আটায় পানি ঢালে। মাশহুদ ঠোঁট চেপে হাসে। পরে ভীষণ চমকে বলে, “এই তুই আটায় নুন দিয়েছিস? দেখলাম না তো। পরোটার টেস্ট খারাপ হলে সকালে আমার মুখ ধরে টানাটানির শাস্তি এখন পাবি। এটা মাথায় রেখে নাশতা বানিয়ে আন। খাবার নিয়ে সোজা ঘরে আসবি।”

“ঘরে কেন?সবাই তো নিচে খাবে।”

“আমি সবার সঙ্গে খাবো না। তুই আমার খাবার ঘরে দিয়ে যাবি। অন্যকারোর হাতে পাঠালে তোর কপালে দুঃখ আছে। সশরীরে, নিজে আসবি। বুঝেছিস?”

“আপনি স্বামী স্বামী ভাব নিচ্ছেন কেন?”

“তো, পরপুরুষ ভাব নেবো? তোর সেন্স অর্ডান কাজ না করলে আবারও বলছি, গতকাল পুরো বংশ সাক্ষী রেখে কাবিন করে, দেনমোহর দিয়ে তোকে বিয়ে করেছি। রেজিস্ট্রি পেপার থেকে এখনও কালি শুকায়নি অথচ তোর মস্তিষ্ক শুকিয়ে স্মৃতি ফকফকে গড়ের মাঠ! আশ্চর্য বিরল মাথা নিয়ে জন্মেছিস তুই।”

মাহা ভেবে পায়না কয়েকমুহূর্তের মধ্যে ওর এত চেনা মাশহুদ ভাই অচেনা হয়ে গেল কীভাবে? বিয়ে করেই এমন হয়েছে। ওর মাশহুদ ভাই ওকে আর ভালোবাসে না তাই এমন করছে। মাহা প্রেমার জায়গা নিয়েছে তো, সেজন্য শোধ নিচ্ছে। বুঝতে পারছে মাহা। সব বুঝতে পারছে। সে তো বোকা নয় যে মাশহুদের টর্চার টের পাবে না। মাশহুদ ভ্রু কুচকালো, মাহার মেঘে ঢাকা চেহারা দেখে, মাহার বিরবির করে মাশহুদকে বকা দেওয়া দেখে। মাশহুদ মুচকি হাসে এরপর গম্ভীরগলায় বলল,

“তোর কী মনে হচ্ছে, আমি তোকে টর্চার করছি?”

মাহা আনমনেই “হু” বলে দ্রুত পেছনে ঘুরে তাকালো। মাশহুদ এগিয়ে আসছে। মাহা ভয়ে জড়সড় হয়ে যায়। দুকদম পিছিয়ে যেতেই তাকের সঙ্গে মিশে যায়। মাশহুদ একদৃষ্টে তাকিয়ে মাহার সামনে এসে দাঁড়ায়। মাহার দিকে হালকা ঝুকে কিছু বলার প্রস্তুতি নেয়। মাহা কাঁদোকাঁদো গলায় বলে, “আমি শুনিনি। আন্দাজে হু বলেছি। সত্যি। আপনি আমাকে টর্চার কেন করবেন? এটা কী সম্ভব? আমি বুঝি না? আপনি আমাকে কত ভালোবাসেন।”

মাশহুদ মাহার ওরনা টেনে গলার কিছুটা নিচে নামিয়ে, মাহার মাথায় ওরনা দিয়ে ঘোমটা টেনে দিল।এরপর রাগতস্বরে বলল,

“জামাকাপড় ঠিকঠাক রেখে চলাফেরা করবি। ওরনা যেখানে থাকা উচিত সেখানে না থেকে আর একবার ভুলভাল জায়গায় উঠুক, তোর এই ওরনা পড়াই বন্ধ করে দেবো। কানে ঢুকেছে কথা?”

“হু! ঢুকেছে। কানে ঢুকেছে।”

মাশহুদ কিছুটা থেমে কোমল স্বরে বলল,”ঘরে এসো দ্রুত। অপেক্ষা করছি।”

মাশহুদ চলে গেল। মাহা এখনও সেভাবেই দাড়িয়ে আছে। বেসিনের আয়নায় নিজেকে দেখে চমকালো মাহা। ঈষৎ রক্তিম হয়ে আছে চেহারা। মাহা ধীরকন্ঠে আওড়ে ওঠে, “আপনি কী শেষে তুমি বলে সম্বোধন করলেন আমাকে? নাকি ভুল শুনলাম?”

চলবে…