সুখের প্রেমাসুখ পর্ব-০৬

0
250

#সুখের_প্রেমাসুখ(০৬)
#ওয়াসেনাত_আরাবী

জেনিথ এসেছে। বসার ঘরে বসে মামা-মামিদের সঙ্গে কথা বলছে।গতকাল রাতে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গিয়েছিল জেনিথ।আজ আসতে পারে এমন কথাও বলে যায়নি। মাশহুদ মাহাকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে বসার ঘরে এলো। মাশহুদকে দেখে জেনিথ ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“এসে কী শুনলাম ভাই? তুই নাকি একঢিলে দুবার পাখি শিকার করেছিস। বাহ, ভাই বাহ!”

মাশহুদ বসতে বসতে বলল,”তুই আবার শুরু করিস না। সবাই সত্য জানে, শুধু শুধু পচাচ্ছে আমাকে। মাহা ছোট থেকেই অবুঝ এটা জানার পরেও সবাই এমনভাবে তীর নিক্ষেপ করছে, যেন আমি মহাপাপী। এই পাপীতাপী মানুষটার ওপর রহম কর বইন।”

জেনিথ সোফায় মাথা ঠেকিয়ে হাসছে। মাশহুদ টেবিলের ওপর রাখা কফির কাপটা হাতে নিয়ে বলল,
“কাল ওভাবে চলে গেলি কেন?”

“আর বলিস না। ভার্সিটির এক নতুন ছাত্রকে র‍্যাগ-ট্যাগ দিয়ে বেহাল দশা করে ফেলেছে সিনিয়ররা।কেস ফাইল হয়েছে, সেটা দেখতে গিয়েছিলাম। ছেলেটাকে পিটিয়ে আধা লা’শ করে ফেলেছে তারপরেও ছেলেটা সিনিয়রদের নাম নিচ্ছে না। স্বাভাবিক তাদের নাম নিলে ওর বাকি লাইফটা হেল করে তুলবে তারা। যাক এসব বাদ দিয়ে বল, বুরাকের কাছে গিয়েছিলিস তো.. কী হলো ওখানে? আমার সাথে বুরাকের কথা হয়নি। ব্যস্ত মানুষ বারবার ডিস্টার্ব করা যায় না। তাই এখানে চলে আসলাম।”

“বুঝতে পারছি না। মাহাকে সেহনাতের কাছে রেখে বুরাক আমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। তারপর একঘন্টা কেটে যায়। মাহা যখন আসলো তখন থেকেই ওর গায়ে জ্বর।”

“কী বলিস?আচ্ছা চিন্তা করিস না আমি সেহনাতকে কল দিয়ে জেনে নিচ্ছি মাহার হঠাৎ জ্বর আসলো কেন?”

জেনিথ কল দিল। কিছুসময় কথা বলে কফিমগের কানায় চুঁমুক দিল। মাশহুদ অপেক্ষা করছে।জেনিথ সেহনাতের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে, মাশহুদকে বলল,

“ওর ভয়ে,চিন্তায়,মানসিক চাপে জ্বর এসেছে। মানসিক দিক থেকে মাহা বেশ দুর্বল।তবে এখন চিন্তার কিছু নেই। ধীরে ধীরে মাহার মাঝে পরিবর্তন আসবে।”

“সেহনাতের সঙ্গে মাহার কী কথা হয়েছে?বলেছে তোকে?”

“বলেছে।সেহনাতকে মাহা যেসব বলেছে,তোকেও শীগ্রহই মাহা সেসব বলবে। তাই সরাসরি মাহার মুখ থেকেই শুনিস।তাছাড়া সেহনাত আসবে জানলে তোকে আমি ওর কাছে যেতেই সাজেস্ট করতাম। আমার ওই বন্ধুর অবজার্ভেশন স্কিল মা’রাত্মক। তারপরেও মেয়েটা সম্মোহন করার বিশেষ গুণ অর্জন করেছে। তাই নিশ্চিন্তে থাক মাহার মানসিক অসুস্থতা দ্রুত নিবারণ হবে। ওর সুস্থ হওয়ার প্রসেসিং যে অলরেডি শুরু হয়েছে, তা এই জ্বর কমে গেলেই টের পাবি।”

“ওর প্রবলেমটা ঠিক কী নিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট নাকি অন্যকিছু? ওর অপারেশনও তো ঠিকঠাক হয়েছিলো। ডাক্তার বলেছিল ধীরে ধীরে সুস্থ হবে। সুস্থ হয়েছে বাট বুদ্ধিবিকাশে কিছুটা অপরিপক্ক রয়ে গেছে। এগুলো তো ওকেও সেভাবে বলা হয়নি। ও নিজেই তো পরিপূর্ণ তথ্য জানে না। তাহলে নতুন করে কী বলবে মাহা? ”

জেনিথের ফোনটা বেজে ওঠে। জেনিথ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অনবরত গোলাগুলির শব্দ কানে ভেসে আসে। জেনিথের কানে একটা ঠিকানা আসামাত্র কল কেটে গেল। জেনিথ দাঁড়িয়ে পড়ে। কোমরে গুজে রাখা গ্লক২৩ (পিস্তল) বের করে দ্রুত যেতে যেতে বলল,

“আম্মুকে একটু বলে দিস, আমার বাড়ি ফিরতে লেট হবে। চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।”

“কোথায় যাচ্ছিস? কী হয়েছে? সেটা তো বল।”

“জানি না। বলার মতো সিচুয়েশনে নেই কেউ। একমাত্র সেখানে গেলেই বোঝা যাবে কী হচ্ছে।”

__________________

রাত ন’টা। বিছানায় শুয়ে বই পড়ছে মাহা। মাশহুদ বের হয়েছিল আধঘন্টা আগে। সবেমাত্রই ফিরেছে। মাহাকে শুয়ে শুয়ে পড়তে দেখে সে এগিয়ে এসে মাহার কপালে হাত রাখে। মাহা সরে গেল না। বিয়ের আগের মতোই স্বাভাবিক আচরণ মাহার। মাশহুদ প্রশ্ন করে,

“খেয়েছো?”

“না। বসুন খাবার আনছি।”

“আমি আনছি। তুমি শুয়ে থাকো। বেশি ছটফট করো না। তাহলে আবার জ্বর আসবে।”

মাহা উঠে যেতে যেতে বলল, “আসবে না। আমি এখন একদম ঠিক আছি। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমার মনে হয়, সেগুলো আজ বলা উচিত।”

“বলো।”

“না, খাওয়ার পর।”

“আচ্ছা।”

__________________

মাহা আঙ্গুল কচলিয়ে মাশহুদের দিকে তাকালো। চোখে ব্যকুলতা। বুক ধড়ফড় করছে। কপাল ঘামছে। মাথা ব্যাথা করছে। মাশহুদকে গোপন কথাগুলো বলার পর ও কী ভাববে? কীভাবে রিয়াক্ট করবে? সেটা ভাবছে মাহা। সেহনাতকে কল দিলে সুবিধা হতো। যদি মাহা বুঝিয়ে বলতে না পারে তাহলে সেহনাত বলবে। সে তো সব জানে। মাহা আমতা আমতা করে বলল,

“বলছি সেহনাত আপুকে যদি কল দিয়ে রাখি?”

মাশহুদ ভ্রু কুচকে বলল, “তোমার আপুও জুটে গেছে? আচ্ছা কল দাও। যদি ইচ্ছে হয়।”

মাহা সেহনাতকে কল দিল। সেহনাত কল রিসিভ করে বলল, “প্রিটি গার্ল, মাশহুদকে সব বলেছ?”

“এখন বলবো।”

“বলো। তবে আমার মনে হয় তোমরা নিজেরা একান্তে এসব বললে ভালো হতো।কিন্তু তোমার যখন অস্বস্তি হচ্ছে তখন থাকছি কলে,এবং মাশহুদ ভাই দুঃখিত, ইন্টারাপ্ট করার জন্য। আমি একদম নীরব থেকে শুনবো। বিরক্ত করবো না আপনাদের।”

মাশহুদ রেগে তাকালো। ওর চেয়ে বাইরের একটা মেয়ে মাহার কাছে এতটা গুরুত্ব পায়?অপমানিতবোধ করলো মাশহুদ। সেহনাতের কথাগুলো খারাপ লাগলো বৈকি। মাহা মাশহুদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফোনের ওপাশ থেকে সেহনাত গুণগুণ করে ওঠে,

“যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরোনো কথা,
যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা।(২)
তবে বুঝে নিয়ো, চাঁদের আলো কত নিরুপায়।

মাহা কথা বলো। মাশহুদ ভাই, আপনি হয়তো এটা ভাবছেন আপনার বউ আপনার থেকে আমাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আদোতে তা সত্য নয়।সবটা শোনার পর আপনি কীভাবে রিয়াক্ট করবেন সেটা ভেবে চিন্তা করছে মাহা। আমি জানি আপনি সবটা শুনে একদম স্বাভাবিক থাকবেন। যেটা মাহা বুঝতে চাইছে না।একটা মানুষ হঠাৎ পরিবর্তন হতে পারে না। সময়ের প্রয়োজন পড়ে। তারপরেও যদি আমার কলে থাকা আপনার পছন্দ না হয় তাহলে আমি কলটা কেটে দিচ্ছি।”

মাশহুদ দ্রুত বলল,”না, না এমন কিছু নয়। আপনিও থাকুন সমস্যা নেই। সবটা যখন জানেন তখন গোপনীয়তার কী আছে। ”

সেহনাত হেসে বলল,”মনে মনে এসবই ভাবছিলেন। আমার ঘরেও একজন আছে। আপনার থেকেও সে বেশি পজেসিভ। তাই এমন খতরনাক জেলাসি সম্পর্কে জ্ঞান আছে আমার।”

মাশহুদ লজ্জা পেল। মাহা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে,
“আমি তখন থ্রি’তে পড়ি। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম নয়ন কাকু রিনিতা আপুকে টেনেহিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আপু আমাকে নিষেধ করলো তার কাছে যেতে। আমি দৌড়ে পালাতে যাবো এমন সময়, নয়ন কাকুর ভাইপো অয়ন আমাকে ধরে ফেলে। আমাকেও নিয়ে গেল একটা অন্ধকার ঘরে। ঘরে কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। কোনো দরজা বা জানালা দেখা যাচ্ছিলো না। আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম কেউ শোনেনি। অন্ধকারে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। পুরো ঘর হাতরে একটা জানালা পাই। আমি জানালার পাল্লা খোলার চেষ্টা করি। একটু খুলতেই দেখলাম আপুকে বিবস্ত্র করে.. ওরা দুজনে, আমি চিৎকার দিতেই অয়ন এসে আমার ঘরের দরজা খুলে আমাকে চ’ড় মারে। আমার গায়ে বাজেভাবে হাত দেয়। আমার খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। তারপর আমি ওর হাতে কামড় দেই, তারপর ও সরে দাড়ায়। আমাকে ধরে ফেলার চেষ্টা করে কীনা জানি না, আমি খোলা দরজা দেখে দৌড়ে বাইরে চলে এলাম। মেইনরোডে আসতেই একটা সাদা গাড়ির সাথে ধাক্কা খাই।আমার ঘাড়ে থাকা ব্যাগ পড়ে যায়। তারপর কিছুই মনে নেই। এসব মনে ছিল না আমার। অয়নকে দেখার পর হঠাৎ,”

মাহা হাঁপাচ্ছে।ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।মাশহুদ মাহাকে টেনে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে বলল,”আর কিচ্ছু বলতে হবে না। তুই শুধু শান্ত হয়ে বোস।”মাশহুদ মাহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মাহা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ফোনের ওপাশ থেকে সেহনাত বলল,

“আপনারা ওকে ওর এক্সিডেন্টের কথা বলেননি এটা উচিতকার্য ছিল। বললে তখন থেকেই ওর সমস্যা হতো। ও বেশ কিছু সময়ের স্মৃতি ভুলে গেছে। এটাও ভুলে গিয়েছিল। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পিটিএসডি সাংঘা’তিক রকমের রোগ নয়। সাময়িক সময়ের জন্য কিছু স্মৃতি ভুলে যায় মানুষ। পরবর্তীতে সেসব ধীরে ধীরে মনে পড়ে। এসব আমি বুরাকের থেকে জেনেছি। সুতরাং সেটার ওপর ভিত্তি করে এবং মাহার আচরণ পর্যবেক্ষণ করে যেটা বুঝতে পেরেছি সেটা হচ্ছে, ওর ইন্টিমেসিতে প্রবলেম হয়। বাট একবার যদি ওর ভয়টা কাটানো যায় তাহলে হয়তো ধীরে ধীরে আপনার স্পর্শ নিতে পারবে। বিয়ের আগে থেকে ও আপনাকে পছন্দ করে, তবে আপনি প্রেমিকা বানানোর পর ও সেসব চিন্তা থেকে সরে আসে। সবার ভালো চাওয়ার যে বিরল গুণ মাহার সেটাই ওর কাল হয়ে ওঠে। ওর এক্সিডেন্ট হওয়ার পর মাহাকে যে ডাক্তার অপারেট করে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। মাহার মাথায় আঘা’তের কারনে সেরিব্রাল ইনফার্কশন অর্থাৎ অপর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের কারনে কোষগুলোর একটি গুচ্ছ মা’রা যায়। যে কারনে ওর বোঝার ক্ষমতা কিছু অংশ লোপ পায়। সময়ের সাথে সাথে ওর বুঝতে পারার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেত, কিন্তু ওর মস্তিষ্কে গেঁথে থাকা সেই নিকৃষ্ট চিত্র ওকে স্বাভাবিক হতে দেয়নি। ওর থেকে ওর স্বাভাবিকতা কেড়ে নেয়। ও নারী-পুরুষের কোনো অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখতো না কিংবা গল্প শুনতো না। প্রেম জিনিসটা আপনার থেকে, আপনাকে দেখে যতটুকু বুঝেছিল, সেটাও নির্মুল হয় আপনার প্রেমিকার কথা শুনে। বিয়ের আগে ও যদি কাউকে চোখ বুজে বিশ্বাস করে সেটা আপনি।তাই আপনার কষ্ট হলে ও আপনাকে স্পর্শ করতে সংকোচ বোধ করতো না। কিন্তু বিয়ের পর রাহা ওকে পুনরায় কিছু শিখিয়েছে, তাই আপনি ওকে কোলে নিতেই মাহা সেন্সলেস হয়ে যায়। আপনারা ওকে সব সময় এতো ভালোবাসা দিয়েছেন যে ও চাইলেও কঠিন হতে পারেনি। আবেগী, আহ্লাদী হয়ে উঠেছে। তবে চেষ্টা করবেন ওকে স্বনির্ভর হতে দেওয়ার। আপনাদের ছোট ছোট ব্যবহারে ও কষ্ট পায়, এটা থেকে বের হতে হবে। জীবনের সকল কঠিন মুহূর্তে ও আপনাদের কাছে পাবে না। তাই নিজের ভালোটা, ওকে নিজেকে বুঝতে হবে। ওর একটা সিটিস্ক্যান করিয়ে নেবেন। রেগুলার ঔষধ সেবন করবে। মনোবল পেয়েছে, সাহস জোগান। বাকি পাঁচটা মেয়ের মতো ওকেও স্বাভাবিক দেখতে পাবেন। লাস্ট একটা কথা, এক্সিডেন্টের পুরো ঘটনা ওকে খুলে বলুন। এখন ভয়ের কিছু নেই। তাই ওর জানা উচিত কী ঘটেছিল।”

মাশহুদের রাশভারী প্রশ্ন,”মাহার জন্য আপনি এতকিছু কেন করেছেন?”

সেহনাত হাসে, “আমি আমার বন্ধুদের ভালোবাসি। এটা আপনার বউ মাহার জন্য নয়, আমার বন্ধু জেনিথের জন্য করেছি। জেনিথ আমাকে বিভিন্ন সময়ে,নানাভাবে সাহায্য করেছে। ওর প্রিয় ভাইয়ের জন্য,ওর ভাবির জন্য এটুকু করা আমার কর্তব্য। নিন অনেক রাত হলো। আপনারা রাতের বাকি সময় কী করবেন সেটা ভাবুন আমি ঘুমাই। ”

“আচ্ছা।”

মাশহুদ সেহনাতের বলা প্রতিটা শব্দের অর্থ বুঝেছে। সে এটাও বুঝেছে, মাহাকে কাছে টেনে না নিলে মাহা সর্বদা দূরেই থেকে যাবে। যদি এই সংবেদনশীল সময়ে মাহাকে ছোট ভেবে, ও কষ্ট পেতে পারে, ভয় পেতে পারে বা কাঁদতে পারে ভেবে,মাশহুদ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে সেটা মাহার জন্য যথোপযুক্ত হবে না।আসলেই তো! মাহাকে আবেগী, আহ্লাদী, নমনীয় করার ক্ষেত্রে পরিবারের অত্যধিক যত্নই বেশি ভূমিকা রেখেছে। মাহা মাশহুদের চোখে চোখ রেখে বলল,

“আমি আমার অস্বস্তি দূর করতে চাই।”

“সময় নিবি নাকি আজ..”

“আজই। আপনার সমস্যা থাকলে বলুন। আপনার মনে যদি অন্যকেউ থাকে তাহলে অন্য উপায় খুজতে হবে।”

“অন্য উপায়?”

“আরেকটা বিয়ে। আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো। যে বর কাজে আসে না। সে বর চাইনা আমার।”

“এত বড় কথা? একটু আগে কেঁদে চোখমুখ লাল করে ফেললি।তোকে দেখে মায়া হলো বলে, তোর কষ্ট হবে ভেবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছি আর তুই আমাকে বরের কাজ শেখাচ্ছিস? আজ দেখবি বরের কাজ কত প্রকার আর কী কী? একঘন্টায় তোকে সেহনাত কী এমন জ্ঞান দিল সেটা আগামীকাল জেনে নিবো। যে রাতারাতি বউ আমার বেকুব থেকে বুদ্ধিমতি হয়ে গেল।”

“আপনি আমাকে বেকুব বললেন?”

“বলেছি।শুনতে পাসনি?আবার বলবো?বেকুব মেয়ে।”

মাহা রেগে মাশহুদের শার্টের কলার টেনে ধমকের সুরে বলল,”চুপ।আর একবার যদি এমন বলেন তাহলে..”

মাশহুদ ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি বজায় রেখেই বলল, “বাহ! পা ধরে ঝুলে থেকে কান্না করা বেকুব মেয়ে কলার ধরতেও শিখে গেছে? বেকুব শব্দটা ভালো না লাগলে নির্বোধ। এই ওয়ার্ডটা একদম পার্ফেক্ট।শুনতে তেমন খারাপ না। লেভেল আছে।”

“আমি নির্বোধ?”

“হ্যাঁ, এটা তুই ছাড়া পুরো দুনিয়া জানে। আজ তোকেও জানালাম। তোর চারিত্রিক গুণাবলি তোকে না জানালে হয়?”

মাহা আচমকা মাশহুদের কলার ছেড়ে ওর হাত টেনে ধরে হাতে কামড় বসালো। অকস্মাৎ ব্যাথায় আৎকে ওঠে মাশহুদ। মাহা পুনরায় কামড় বসালে মাশহুদ মৃদু চেঁচিয়ে বলে, “মাহা কামড় দিবি না, একদম কামড় দিবি না। আমি কামড় দিলে কিন্তু সহ্য করতে পারবি না।”

মাহার চেহারা র’ক্তিমবর্ণ ধারণ করে। চোখমুখ আর’ক্ত করে পরের কামড় বসাবে এমন সময় মাশহুদ মাহাকে ধরে বিছানার ওপর ফেলে দিল। এরপর নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,

“সকালে এই কামড়ের দাগ দেখে সবাই যেটা নিয়ে কথা শোনাবে, এবার সেটা করে কথা শুনবো।”

“এক মিনিট। শুরু আপনি করেছিলেন।”

“তাহলে শেষটাও আমিই করি।”

মাহা ঘামছে। চেহারায় ভয় প্রকাশ পাচ্ছে। স্মৃতিতে সেই অস্পষ্ট বিশ্রী দৃশ্য। মাহা চোখ বুজে আছে। মাশহুদ মাহার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে নমনীয় কন্ঠে বলল,
“এত সাহস দেখালি, এখন চোখ বন্ধ কেন? চোখ খোল। একবার আমার দিকে তাকা, মাহা। দেখবি সব ভয় কেটে যাবে।”

মাহা চোখ মেললো। মাশহুদ ওর দিকে ঝুঁকে মৃদু হাসে। পরপরই মাহার শ্বাস আটকে গেল। মাহা দুহাতে ঠেলেও সামনের মানুষটিকে নড়াতে সক্ষম হলো না বরং মানুষটি মাহার হাত নিজের কাঁধে জড়িয়ে রেখে বলল, “ডিস্টার্ব করিস না। আজ রাতে যখন সেন্সলেস হোসনি তখন এই সুযোগটা কাজে লাগাতে দে।”

মাহা শ্বাস নিয়ে রেগে বলল, “এভাবে না বলে আমার ঠোঁট চেপ..”

মাহা থেমে যায়।মাশহুদ হেসে বলল, “সমস্যা কী? আগে না বলে যেটা করলাম, সেটা নাহয় এবার বলে করবো। তোর নিশ্চই বলে করা কাজগুলোতে আপত্তি নেই।”

“কিন্তু আমি ভেবেছিলাম, চেষ্টা আমি করবো। সেহনাত আপু আমাকেই এই অস্বস্তি দূর করার চেষ্টা করতে বলেছিল।”

“সেহনাত তোকে এটা বলেছে?এক্সিলেন্ট অ্যাডভাইস। নে স্টার্ট কর। রাহা আপু যা যা শিখিয়েছে তার একটা পার্টও বাদ দিবিনা। আচ্ছা বাদ দিলে দিস, এই ছাড়টুকু তোকে দেওয়া যায়। কারন যেটা বাদ পড়বে সেটা যোগ করার দায়িত্ব আমার।”

চলবে…

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।