অচেনা শহর পর্ব-২ও৩

0
500

#গল্পের নাম-অচেনা শহর
#লেখনীতে-Alisha Rahman Fiza
পর্বঃ২+৩

সামনে থাকা ব্যক্তিটি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
~গতকাল ভার্সিটি আসো নি কেন?
তীর্যক পূর্ণ প্রশ্ন শুনে হেমন্তি পিটপিট করা চোখে ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বললো,
~আসলে গতকাল বাসায় মেহমান এসেছিলো ইমজাদ ভাইয়া।
ইমজাদ হেমন্তির কথায় একটা জোড়ে সোড়ে নিশ্বাস নিয়ে বললো,
~তার জন্য ক্লাস কামাই করেছো তোমার পড়ালেখা তো দেখছি লাটে উঠছে।
ইমজাদ হেমন্তির ভার্সিটিতেই পড়ে ২বছরের সিনিয়র সে সেই প্রথম দিন থেকেই ইমজাদ হেমন্তিকে চোখে চোখে রাখে কেন রাখে তা হেমন্তির জানা নেই।
হেমন্তি ইমজাদকে একটু বেশিই ভয় পায় ইমজাদের হুটহাট আচরণে সে ভয় পেয়ে যায়।ইমজাদ এ বিষয়ে অবগত কিন্তু তার মজা লাগে এভাবে হেমন্তিকে ভয় পেতে দেখে।হেমন্তি ইমজাদের কথা শুনে মিনমিন করে বললো,
~আর কিছুদিন পর জ্বালাতে পারবেন না আমার বডিগার্ড এসে পরছে।
হেমন্তি কথাটা অনেক আস্তে বলায় ইমজাদ ভ্রু কুচকে বললো,
~কিছু বলছো নাকি আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছিনা।
হেমন্তি নড়েচড়ে বললো,
~আসলে ভাইয়া আমার ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।
ইমজাদ বললো,
~ঠিক আছে যাও ছুটির পর দেখা করবো তোমার সাথে।
হেমন্তি আর একদন্ডও সেখানে না দাড়িয়ে ছুটে চললো ক্লাসের দিকে ইমজাদ হেমন্তির যাওয়ার পাণে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
~তোমার এই সরলতাটা দেখে আমি সেই প্রথম দিন ঘায়েল হয়েছিলাম।
হেমন্তি ক্লাস রুমে এসে দেখলো তার বান্ধবী অনু আগে এসেই বসে আছে।হেমন্তি স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে অনুর পাশে বসে পরলো অনু হেমন্তিকে দেখে বললো,
~কী রে বাঘের খবল থেকে বাঁচতে পেরেছিস?
হেমন্তি মুখটা ছোট করে বললো,
~নাহ তোর সাথে দেখা হয়েছিল?
অনু বললো,
~আবার জিগায় আমাকে তো কাড়ি কাড়ি প্রশ্ন করেছে আমি বলেছি কিছুই জানিনা।
হেমন্তি মুচকি হেসে বললো,
~ভালো করেছিস।
অনু হেমন্তিকে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে বললো,
~তা কথা কতদূর?
হেমন্তি বললো,
~সব ঠিক থাকলে আগামী শুক্রবার কাবিন।
অনু একলাফ দিয়ে বললো,
~কী বলছিস দোস্ত দুলাভাইয়ের ছবি দেখা।
হেমন্তি অনুর চিল্লানো শুনে বললো,
~এমন ভাবে চিল্লিয়ে সবাইকে জানাতে চাস?বস তুই সব কিছু বলছি।
অনু চুপচাপ হেমন্তির পাশে বসে পরলো আর হেমন্তি সব কিছু বলতে শুরু করলো।

_____________________♥______________________

ইলহাম অফিসের কাজে ব্যস্ত রাখছে নিজেকে ইলহামের মতে পারসোনাল লাইফ ভালো না থাকলে পুরো মন দিয়ে প্রোফেশনাল লাইফে কাজ করতে থাকো সেখানেই সব শান্তি মিলবে।ইলহাম ই-মেইল চেক করছে তখনই তার মোবাইলের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো।অতি মাত্রায় বিরক্ত হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো হিয়ার ম্যাসেজ কৌতুহল নিয়ে সেটা অন করেই দেখতে পেলো একজন যুবতীর ছবি।
“লাল রঙ্গের শাড়ি পরে আছে চুলগুলো ছাড়া মাথায় ঘোমটা দেওয়া ঠোটে হালকা লাল রঙ্গের লিপস্টিক মেয়েটির চেহারায় অজানা এক মায়া রয়েছে”
ইলহাম খেয়াল করে দেখে বুঝলো এটা হেমন্তির ছবি।ছবিটার নিচে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে
~হবু বউয়ের ছবি মোবাইলে সযত্নে রেখে দিবি বুঝতে পেরেছিস।
ইলহাম মোবাইলটা টেবিলের ওপর রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।মাথায় নানান চিন্তা ঘুরছে সে কী নতুন জীবনে এই মেয়েটাকে নিয়ে সুখী থাকবে?
ইলহাম কিছুক্ষন এভাবেই চোখ বন্ধ করে রইলো কখনো কখনো চোখ বন্ধ করে এই পৃথিবীটাকে দেখলে মনের শান্তি মিলে।
হিয়া ফারুকের সাথে তার শ্বশুর বাড়ি চলে এসেছে বাসার ভিতরে ডুকতেই হিয়ার দেবর রাতুল তাদের সামনে এসে দাড়ালো।হিয়া ফারহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে স্কুলের ইউনিফর্ম পরে আছে।হিয়া ফারহানের কান ধরে বললো,
~তুই স্কুল থেকে ফিরে ড্রেস কেন চেঞ্জ করোস নি?
ফারহান বললো,
~ভাবিমা,তুমি এভাবে কান টেনো না তো।দেখবে আমার কান একদিন লম্বা হয়ে যাবে
ফারহানের কথায় হিয়া তার কান ছেড়ে বললো,
~এখন এসব বলে লাভ নেই চেঞ্জ করে এসে টেবিলে খেতে বস।আর মা কোথায়?
ফারহান মুখ ফুলিয়ে বললো,
~রুমেই আছে।
হিয়া আর অপেক্ষা না করে সোজা তার শাশুড়ি রেহেনা খানমের রুমে চলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখলো রেহেনা খানম কোরআন তিলাওয়াত করছেন।হিয়া মুচকি হেসে রেহেনা খানমের পাশে বসে পরলো রেহেনা খানম তিলাওয়াত শেষ করে কোরআনটা বন্ধ করে বললেন,
~ইলহাম রাজি হয়েছে?
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~বাবা এবার যে টাইট দিয়েছে রাজি না হয়ে যাবে কোথায়।
রেহেনা খানম বললেন,
~অনেক খুশী হলাম শুনে নাহলে তুমি চলে যাবার পর তাদের সামলাবে কে?
হিয়া বললো,
~মা,আপনি আর ফারহান এ বাসায় একা থাকবেন না। বাবা বলেছে আমাদের বাড়িতে থাকতে
রেহেনা খানম বললেন,
~পাগল হয়েছো আর ২টো কাজের মেয়ে রেখেছো আমাদের আর কী লাগবে?
হিয়া রেহেনা খানমের হাত ধরে বললেন,
~মা,হেমন্তিকে সংসারটা সামলাতে আপনি সাহায্য করবেন আমার মা থাকলেও তো তাই করতো।
রেহেনা খানম হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
~ঠিক আছে তোমার কথাটা আমি রাখলাম।

_____________________♥_____________________

অফিস শেষ করে বাসায় পৌছাতেই ইলহাম একটা বড়সড় ধাক্কা খেলো আজাদ সাহেব তাকে জানালো আগামী শুক্রবার তার বিয়ে তাই যেন অফিস থেকে কিছু দিনের ছুটি নিয়ে নেয় সে।
ইলহাম সব শুনে বললো,
~সব কিছু এতো জলদি কেন হচ্ছে বাবা?
আজাদ সাহেব ছেলের অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন,
~তোমার জন্য হয়তো জলদি হচ্ছে আমার জন্য অনেক দেরিতে হচ্ছে।তোমার বিয়েটা কিছু বছর আগে হলে হয়তো তোমার মাও তার বউমা দেখে যেতে পারতেন।
এতটুকু বলে আজাদ সাহেব চুপ হয়ে গেলেন ইলহামের মুখটা কালো হয়ে গেলো।আজাদ সাহেব বললেন,
~আর মাত্র ২দিন বাকি কালকে ছুটি নিয়ে হিয়ার সাথে শপিংএ যাবে আমি কোনো বাহানা শুনতে চাইনা।হেমন্তিকে সাথে নিলে হয়তো আরো বেশি ভালো হয় মেয়েটারও তো পছন্দ আছে।
হেমন্তির নাম শুনে ইলহাম একটু নড়ে উঠে বললো,
~তাহলে আমার যাওয়ার তো কোনো প্রয়োজন দেখছিনা মেয়েদের কাজে আমি গিয়ে কী করবো?
আজাদ সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
~অবশ্যই তোমার প্রয়োজন আছে তুমি নিজের বউকে কীভাবে সাজাতে চাও সেটা একান্তই তুমি জানো।
ইলহাম বললো,
~ঠিক আছে আমি অফিসে কথা বলে নিচ্ছি কালকে সকালে শপিংয়ে বের হবো।
আজাদ সাহেব বললেন,
~হাত-মুখ ধুয়ে আসো খাবার টেবিলে দেওয়া আছে একসাথে খাবো।
ইলহাম আর কিছু না বলে নিঃশব্দে রুমে চলে গেলো আজাদ সাহেব ইলহামের মায়ের ছবি হাতে নিয়ে বললেন,
~আমার উপর সব দায়িত্ব দিয়ে তুমি নিশ্চিন্তে আছো তাই না খুব জলদি তোমার কাছে চলে আসবো।তোমার গাধা ছেলেটাকে আগে ঠিক পথে আনি তারপর চলে আসবো তোমার কাছে।
কেয়া হেমন্তির সাথে মজা করেই যাচ্ছে যখন থেকে বিয়ে ফাইনালের কথা শুনেছে হেমন্তির পিছে সে পরেই আছে।কেয়ার এমন মজা দেখে পারভীন বেগম তার কান মলে দিয়ে বললেন,
~তোর কী মুখে কিছু আটকায় না সেই কখন থেকে মেয়েটাকে নিয়ে মজা করছিস।
কেয়া বললো,
~উফ মা তুমি সবসময় আপুর সাইড নেও আর মাত্র দুদিন তারপর আপু উড়াল দিয়ে চলে যাবে।
কেয়ার কথাটা শুনে পারভীন বেগমের চোখে পানি চলে আসলো। মেয়েটা চলে যাবে তার থেকে দূরে নতুন জীবন শুরু করবে মনটায় যেমন খুশী লাগছে তেমনি কষ্টও কম হচ্ছে না।
হেমন্তি খাবার টেবিলে ভূনা খিচুরি আর মাংসের তরকারি সাজিয়ে চলে গেলো পারভীন বেগমকে ডাকতে।আজ সে নিজ হাতে সব রেধেছে বাবার পছন্দের খাবার সবাই একসাথে বসে রাতের খাবারটা খেয়ে নিবে।

_________________♥____________________

সকাল সকাল হিয়া চলে এসেছে এ বাসায় ভাইয়ের বিয়ের জন্য সে অনেক এক্সাইটেড। সকালে এসেই ইলহামকে ঘুম থেকে তুলে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
আজাদ সাহেব মেয়ের খুশী দেখে নিজেও আনন্দিত হয়ে বললেন,
~তোর হাসিমাখা মুখটা আমার অনেক ভালো লাগে।
হিয়া বাবার কথায় মুচকি হেসে বললো,
~তোমার ছেলেকে নিয়ে আগে হেমন্তির বাড়ি যাবো।হেমন্তি আর কেয়াকে পিক করে সোজা শপিং মলে চলে যাবো কেমন হয়েছে আইডিয়াটা?
আজাদ সাহেব আলতো হেসে বললেন,
~একদম পারফেক্ট তা ফারুক কোথায়?
হিয়া বললো,
~কাজের শেষ আছে তার আমাকে ভুলে যায় সে এখন।
আজাদ সাহেন বললেন,
~কাজের চাপটা ওর উপর বেশি তাই এমন হচ্ছে।
হিয়া বললো,
~হুম বুঝতে পারছি আমি। দেখে আসি তোমার ছেলেকে নাহলে সেই হাদারাম এভাবেই বসে থাকবে।
বলেই হিয়া ইলহামের রুমের দিকে ছুটলো ইলহাম শার্ট গায়ে দিয়ে বোতাম লাগাচ্ছে হিয়া সেই মুর্হুতে রুমে প্রবেশ করে বললো,
~তোর বউকেও সাথে নিয়ে যাবো গাড়িটা নিয়ে নিস।
ইলহাম আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো,
~জানি কাল রাতেই বলা হয়েছে আমাকে।
হিয়া বললো,
~মুখটা এমন করে রেখেছিস কেন?
ইলহাম পিছন ঘুরে হিয়ার সামনাসামনি দাড়িয়ে বললো,
~আমার অতীতটা জানিয়ে দিলে ভালো হতো।
হিয়া ইলহামের কথা শুনে বললো,
~সবার জীবনেই এমন প্রেম ভালোবাসা আসে এগুলো বিয়ের পরও বলা যাবে।
ইলহাম বললো,
~প্রেম ভালোবাসা আসে কিন্তু সেই প্রেম ভালোবাসা প্রেমিককে জেলের ভাতও খাওয়াতে পারে যেটা তোর ভালো মতো জানা আছে।
হিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~২ বছর আগে তোর কোনো দোষ ছিল না ইলহাম।
ইলহাম মৃদু হেসে বললো,
~তা তুই মানতে পারিস এই সমাজ নেই।গাড়িতে অপেক্ষা করছি চলে আসিস
বলেই ইলহাম রুমের বাহিরে চলে গেলো হিয়া তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে বললো,
~যা বলার সঠিক সময়ে আমিই বলে দিবো।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

#গল্পের_নাম_অচেনা_শহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৩
হিয়া দাড়িয়ে আছে হেমন্তিদের বাড়ির দরজায় কলিংবেল টিপে সে নিজের হাতের ঘড়িটা ঠিক করে নিলো।তখনই কেয়া এসে দরজা খুলে দেখলো হিয়া দাড়িয়ে আছে সে একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
~কেমন আছো কেয়া?
কেয়া কিছুক্ষণ হিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
~আপনি কী আমার হবু দুলাভাইয়ের বোন?
কেয়ার কথায় হিয়া হেসে বললো,
~জ্বী আমিই সেই ভিতরে আসতে পারি।
কেয়া তাড়াহুড়ো করে দরজা থেকে সরে দাড়িয়ে বললো,
~অবশ্যই ভিতরে আসুন আপু।
হিয়া বাসায় প্রবেশ করে বললো,
~হেমন্তি কোথায়?
কেয়া বললো,
~আপু রুমে আছে আপনি বসেন আমি মাকে ডেকে নিয়ে আসছি।
হিয়া সোফায় বসে বললো,
~কেয়া তুমি গিয়ে রেডি হয়ে নেও আজ শপিংয়ে যেতে হবে যে।
কেয়া বললো,
~বিয়ের শপিং।
হিয়া বললো,
~হ্যাঁ।
কেয়া দৌড়ে আগে পারভীন বেগমের রুমে চলে গেলো তাকে সব জানিয়ে সে হেমন্তির রুমে চলে গেলো।পারভীন বেগম রুম থেকে বের হয়ে হলরুমে চলে আসলো হিয়া তাকে দেখে সালাম দিয়ে বললো,
~আন্টি আমি হেমন্তি আর কেয়াকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে চাই।
পারভীন বেগম বললেন,
~ওদের যাওয়ার কী দরকার আছে তুমি নিজ পছন্দে সব কিনে আনো।
হিয়া বললো,
~না আন্টি হেমন্তির জীবনের একটা বিশেষ দিন হচ্ছে তার বিয়ের দিন অবশ্যই তার পছন্দ অনুযায়ী সব থাকতে হবে।
পারভীন বেগম হেসে বললেন,
~ঠিক আছে নিয়ে যাও।
তখনই হেমন্তি আর কেয়া রুম থেকে বের হয়ে আসলো হেমন্তি হিয়াকে দেখে একটু লজ্জা পেলো হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~হেমন্তি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেও।
হেমন্তি মায়ের দিকে তাকালো পারভীন বেগম চোখের ইশারায় তাকে সব বুঝিয়ে দিলো হেমন্তি মাথা দুলিয়ে নিজ রুমে চলে গেলো।কেয়া বললো,
~দুলাভাই আসেনি?
হিয়া বললো,
~সেটা সারপ্রাইজ থাকুক।
ইলহাম গাড়ি নিয়ে হেমন্তিদের বাড়ির নিচে দাড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে তার এখন বিরক্ত লাগছে।সে গাড়ি থেকে নেমে চায়ের দোকানে চলে গেলো সেখানে বসে রইলো আর হিয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো।
তখনই তার নজর পরলো একটা ছেলে হেমন্তিদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে আর বার বার হেমন্তিদের বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে।ব্যাপারটা ইলহামের কাছে ভালো ঠেকছেনা পরমুহূর্তে নিজের মনের ভুল ভেবে কথাটা উড়িয়ে দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক বসালো।ছেলেটা কিছুক্ষণ এভাবেই দাড়িয়ে থেকে সেখান থেকে চলে গেলো ইলহাম আর সেদিকে পাত্তা না দিয়ে হিয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো।

_________________♥_____________________

হিয়া,হেমন্তি,কেয়া একসাথে বাসার নিচে এসে দাড়ালো গাড়ির সামনে।হিয়া ইলহামকে না পেয়ে নিজ মোবাইল বের করে ইলহামকে ফোন করতে নিবে তখনই দেখলো ইলহাম চায়ের দোকানে বসে আছে।হিয়া সেদিকে পা বাড়াতেই আবার নিজ জায়গায় দাড়িয়ে গেলো আর হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~ইলহাম ওই চায়ের দোকানে বসে আছে যাও ওকে ডেকে নিয়ে আসো।
হিয়ার কথা শুনে হেমন্তি আকাশ থেকে পড়লো ইলহাম যে এসেছে তা সে জানতোনা তাহলে হয়তো সে আসতোই না।লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে আবার তাকে ডেকে আনতে বলছে এতো তাকে মেরে ফেলার বাহানা।কেয়া হেমন্তির কাঁধে হাত রেখে বললো,
~হেমন্তি বেগম যান আপনার শাহাজাদাকে ডেকে নিয়ে আসুন।
বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো সে হিয়া তার তালেতাল মিলিয়ে হাসতে রাখলো।হেমন্তি অসহায় মুখে হিয়া আর কেয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো হিয়া হাসি বন্ধ করে বললো,
~যাও ডেকে নিয়ে আসো।
হেমন্তি মাথা নিচু করে বললো,
~আমার অনেক লজ্জা করছে আপু।আপনি গিয়েই ডেকে নিয়ে আসুন
কেয়া বিরক্তি নিয়ে হিয়াকে বললো,
~আপু এই আনরোমান্টিক মেয়ে দিয়ে কিছু হবে না আমি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসছি।
হিয়া সম্মতি জানিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো ইলহামের কাছে।কেয়া যেতেই হেমন্তি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো সে হিয়ার পাশে এসে দাড়িয়ে পরলো আর ভাবতে লাগলো এখন সে কী করবে?
কেয়া ইলহামের কাছে গিয়ে বললো,
~দুলাভাই চলুন আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কেয়ার কথায় ইলহামের মুখ থেকে সবটুকু চা বেরিয়ে আসলো সবাই ইলহামের দিকে তাকিয়ে আছে।ইলহাম কেয়ার দিকে তাকাতেই চিনতে পারলো তাকে কেয়া মুখ টিপে হেসে বললো,
~চা দিয়ে কী কুলি করছিলেন নাকি যে মুখ থেকে ফেলেদিলেন?
ইলহাম চায়ের কাপটা দিয়ে রুমাল বের করে মুখ পরিষ্কার করে বললো,
~এভাবে কেউ ডাকে?
কেয়া বললো,
~আমি ডাকি।
বলেই সে ইলহামের একহাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
~আপনার অপেক্ষায় আপনার বউ দাড়িয়ে আছে।
ইলহাম বুঝতে পারলো কেয়া অনেকটাই চটপটা স্বভাবের তাই সে কিছু মনে করলোনা।
ইলহামকে নিয়ে কেয়া চলে আসলে গাড়ির কাছে কেয়া হেমন্তির পাশে দাড়িয়ে বললো,
~এখন তো যাওয়া যাবে কারণ দুলাভাই চলে এসেছে।
ইলহাম একবার হেমন্তির দিকে তাকালো হেমন্তি তার দিকে একবারও তাকালো।ইলহামের একটু ইগো হার্ট হলো সে সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে হিয়াকে বললো,
~গাড়িতে উঠে বস।

____________________♥_____________________

গাড়ি চলছে আপন গতিতে ইলহাম গাড়ি ড্রাইভ করতে ব্যস্ত।পিছনের সিটে হিয়া আর কেয়া কথা বলেই যাচ্ছে হেমন্তি চুপচাপ বসে তাদের কথা শুনছে সে বরাবরই চুপ স্বভাবের মানুষ অতিরিক্ত কথা তার দ্বারা সম্ভব না।হেমন্তিকে পুরোপুরি লক্ষ্য করছে ইলহাম কেয়ার মত কোনো স্বভাবই হেমন্তির মধ্যে নেই সে তো পুরো উল্টো।
হিয়া হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~শাড়ি লাল কিনলে বেশ সুন্দর দেখাবে বিয়েতে লালটাই সুন্দর।
হেমন্তি কিছু না বলে শুধু মাথা দুলালো কিছুক্ষণ পর তারা শপিংমলে পৌছে গেলো ইলহাম গাড়ি পার্ক করে আসতেই সবাই একসাথে শপিংমলে ডুকে পরলে।প্রথমেই তারা শাড়ির দোকানে চলে গেলো বিয়ের শাড়ি দেখতে দেখতে হেমন্তির একটা শাড়িতে চোখ আটকে যায় কিন্তু সে কিছুই বললো না একবার শুধু শাড়িটাকে ছুয়ে দেখে নিলো।হিয়া আর কেয়ার চোখ এড়িয়ে গেলেও ইলহামের চোখ এড়ালো না ব্যাপারটা।সে হিয়াকে এক সাইডে ডেকে বললো,
~ওই সাইডে মেরুন রঙ্গের একটা শাড়ি আছে সেটা ওর অনেক পছন্দ হয়েছে সেটা প্যাক করে নে।
হিয়া বললো,
~বাহ তাহলে পছন্দেরও খোজ রাখা হচ্ছে।
ইলহাম বললো,
~সবার মুখ আছে কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ওর মুখ নেই তাই আমি বলে দিলাম।
হিয়া আলতো হেসে বললো,
~ঠিক আছে ঠিক আছে আমি দেখছি ব্যাপারটা।
হিয়া সেই শাড়িটাও কিনে নিলো তারপর তারা শাড়ির দোকান থেকে বের হয়ে অন্য দোকানে চলে গেলো।
ইমজাদ হেমন্তির জন্য অপেক্ষা করছে ঠিক এই সময় হেমন্তি ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে কিন্তু আজ কেন আসছে না সে বুঝতে পারছেনা।
তখনই অনু ক্লাস থেকে বের হয়ে আসলো ইমজাদ গিয়ে তার সামনে দাড়িয়ে বললো,
~কোথায় তোমার বান্ধবী?
অনু একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললো,
~আসলে আমাকে আজ কিছুই জানায়নি যে কেন সে আসবেনা।
ইমজাদ বললো,
~সত্যি বলছো?আজ আমি ওর বাসার সামনেও গিয়ে ছিলাম দেখতে পেলাম না ওকে।
অনু বললো,
~হয়তো বাসায় নেই আমি যাই ভাইয়া দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ইমজাদ বললো,
~ঠিক আছে যাও আর শোনো আমি দুদিনের জন্য ঢাকার বাহিরে যাচ্ছি হেমন্তিকে জানিয়ে দিও।
অনু মাথা দুলিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো ইমজাদ একটু চিন্তায় পরে গেলো হেমন্তিকে নিয়ে।
সে ভাবলো আজ একবার সে হেমন্তিকে ফোন করবে আর ঢাকায় ফিরে আসলেই নিজের মনের কথা সে বলে দিবে।ইমজাদ আলতো হেসে সেখান থেকে রওনা হলো নিজ বাসার উদ্দেশ্যে

___________________♥______________________

শপিং শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো ৪জনই ক্লান্ত সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।পুরো দিনে হেমন্তিকে ইলহাম অনেকবার খেয়াল করেছে কিন্তু হেমন্তি একদমও ইলহামের দিকে তাকায়নি এটা ইলহামের ধারণা।আসলে ইলহামের ধারণা ভুল হেমন্তি ইলহামকে বহুবার আড়চোখে তাকিয়ে আছে যতবার দেখেছে ততবারই মুগ্ধ হয়েছে।ইলহাম গাড়ি থামালে হেমন্তির বাড়ির সামনে কেয়া আর হেমন্তি গাড়ি থেকে নেমে পরলে হিয়া তাদের বিদায় দিলো।কেয়া আগে আগেই বাসার ভিতরে পৌছে গেলো হেমন্তি বাড়ির গেইটের সামনে দাড়িয়ে একবার ইলহামের দিকে তাকালো।ভাগ্যবসতো ইলহামও সেদিকে তাকায় আর দুজনেরই চোখাচোখি হয়ে যায় হেমন্তি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ভিতরে চলে যায়।ইলহাম হেমন্তির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো হিয়া বললো,
~তোর হাসা শেষ হলে বাসায় চল উনি অফিস থেকে এসে পরেছে।
ইলহাম হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তোর চোখ আজকাল বেশি চলে।
হিয়া বললো,
~যা ঘটে তাই দেখে আমার চোখ।
ইলহাম গাড়ি স্টার্ট দিলো রওনা হলো বাসার দিকে।হেমন্তি বাসায় প্রবেশ করতেই দেখতে পায় অনু বসে আছে তাকে দেখে হেমন্তি অনেক খুশী হলো।অনু বললো,
~কেমন হলো শপিং?
হেমন্তি বললো,
~ভালো তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
হেমন্তি আর কেয়া ফ্রেশ হয়ে এসে অনুর সাথে আড্ডা দিতে লাগলো আর শপিং দেখাতে লাগলো
পারভীন বেগম তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসলেন অনু ঠিক করলো বিয়ের দিন পর্যন্ত সে এবাসায় থাকবে পারভীন বেগম তার মায়ের সাথে কথা বলে রাখবেন।অনুর মাথা থেকে ইমজাদের কথা সরে গেলো হেমন্তিকে আর জানানো হলো না ইমজাদের কথা।
এভাবেই হলুদের দিন চলে আসলো দুহাতে মেহেদী দিয়ে বসে আছে হেমন্তি আজ রাতে হলুদ পুরো বাসায় মেহমান দিয়ে ভরা।হেমন্তির দাদা বাসার আর নানা বাসার সবাই এসে উপস্থিত হৈচৈ পুরো বাসা জুড়ে।
তখনই পারভীন বেগম হন্তদন্ত হয়ে হেমন্তির রুমে এসে বললেন,

চলবে