অতিরিক্ত চেয়েছি পূর্ণতায় পর্ব-০৩ এবং বোনাস পর্ব

0
382

#অতিরিক্ত_চেয়েছি_পূর্ণতায়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৩

অন্ধকার রুমে ইফতিয়াসের ছবির দিকে চেয়ে এক মেয়ে দাঁতে নখ কাটছে। শুধু যে নখ কাটছে তা নয় বরং নখের গোড়া ছিঁ’ড়ে র’ক্ত ঝরাছে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ হওয়ায় কেউই তার সংস্পর্শে যেতে পারছে না। ক্রন্দনরত কণ্ঠে ইফতিয়াসের ছবিতে র’ক্তাক্ত হাতে দাগ কষছে আর বিলাপ করে বলছে।

‘তুমি মিথ্যে বলছিলে তাই না? মজা করে আমাকে তাড়িয়েছো। পরে সারপ্রাইজ প্ল্যান করে আমাকে আগলে নেবে আমি জানি। বাকি সবাই পচাঁ। খালি তোমায় পচাঁ ডাকে। তুমি তো আমার আর বাবুর লাভলী পার্সন।’

ছবিটিকে বুকে আগলে পেটে হাত বুলাতে লাগে মেয়েটি। দরজায় তীব্র কড়া নাড়ার শব্দে মেয়েটি ঘাবড়ে মাথা চুলকাতে থেকে বলে,

‘কে কে এসেছো চলে যাও! এখা এখানে আসলে আমি মে’রে ফেলব।’

তখনি কারো আদুরীয় কণ্ঠস্বর শুনতে পেল মেয়েটি। ধীরস্থির হলো তার শরীর। চুপছে যাওয়া চেহারা নিয়ে দরজা খুলল। তৎক্ষণাৎ মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে অন্য এক মেয়ে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘বোন আমার এভাবে কষ্ট দিতে নেই। তোর আপাইয়ের কষ্ট হয় বুঝিস না কেনো?’

মেয়েটি কি বুঝল কে জানে! হিহি করে হেসে তার র’ক্তাক্ত হাতটা দেখায়। আতঁকে উঠে অপর মেয়েটি। বোনের মানসিক ভারসাম্যহীন রুপ দিনকে দিন বেড়িয়েই যাচ্ছে। সুস্থ হবার পথ যেন বন্ধ প্রায়। তবে পারিপার্শ্বিকের কথা বাদ দিয়ে গলা চেঁচিয়ে ডাক্তারদের ডাক দেয়। তারা দরজার বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিল। অনুমতি বা ডাক শুনার জন্য আগ্রহদীপ্ত হয়ে ছিল। ডাক পেতেই সময় বিলম্ব করেনি তারা। দুজন মানসিক হাসপাতালের ডাক্তার ও মহিলা নার্সগণ এসে রুমের মধ্যে বিছানাপাটি করল। ডাক্তাররা দুটো র’ক্তে’র প্লাস্টিকব্যাগ এনে স্যালাইন স্বরুপ দিতে স্ট্যান্ডে র’ক্তের ব্যাগ লাগায়। মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটিকে বিছানায় ধীরস্থির করে শুয়ে দেয় অপর মেয়েটি। তার চোখজোড়া থেকে শীতল অশ্রু গরিয়ে পড়ে। দৃষ্টিজোড়া উচুঁ হওয়া পেটের মধ্যে। যেখানে এক ছোট প্রাণের অস্তিত্ব বড় হচ্ছে। মেয়েটি হাসছে আবার মুখ বাঁকিয়ে কাঁদছে। ইশ! সকলে কেনো প্রতারণা পেয়ে মেনে নিতে পারে নাহ্! তারা কি নিজের জীবনের চাইতেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেগে বশে প্রিয় মানুষের প্রতি। যার ফলে সে হারিয়ে ফেলে নিজের পরিচয়, আকঁড়ে রাখে শুধু প্রিয় মানুষটির ছোঁয়া ও স্মৃতি। হাতের উল্টোপিঠে চোখের পানি মুছে বিছানা থেকে খানিক দূরে সরল অপর মেয়েটি। ডাক্তাররা অসুস্থ মেয়েটির হাতে প্রথমত ঘুমের ইঞ্জেকশন পুষ করে। মিনিট কুড়ি বাদে ঘুমের তলে নিস্তব্ধ হলো মেয়েটির শরীর। ঠোঁট কামড়ে অপর মেয়েটি ডাক্তারদের জিজ্ঞেস করে।

‘স্যার এ পর্যন্ত চিকিৎসা করে আসছেন। তো সামিয়ার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু বুঝলেন!’

ডাক্তাররা নিজেদের মধ্যে চাওয়াচাওয়ি করে। একজনে বলে উঠে।

‘ম্যাম যথাসাধ্য চেষ্টায় আছি। তবে মনে হচ্ছে না উন্নতি হবে। কারণ রোগীর শরীর সিটিস্ক্যান করিয়েছি। এর রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে আসলে মেয়েটির শরীরে কিসের অসুস্থতা বা রোগ বিরাজ করছে।’

অপর মেয়েটি শুনে তপ্ত শ্বাস নিয়ে বলে,

‘টাইম মত আমাকে ডিটেলস জানাবেন। আর হে সামিয়ার কোনোরুপ ক্ষতি যেন না হয়। হলে আমিও কি করতে পারি সেটা নিশ্চয় জানেন!’

কথাটুকু বলে একপলক সামিয়ার দিকে চেয়ে বেরিয়ে পড়ে। ডাক্তাররা ঢোক গিলে রোগীর সেবায় মনোনিবেশ করল।

____

বাসায় পা রাখতেই ধাক্কা খেয়ে দু ব্যক্তি মেঝের উপর ধপাস করে পড়ে। রাফিয়া কোমরে হাত রেখে অগ্নি দৃষ্টিতে সামনে তাকায়। দেখতে পেল ব্যারিষ্টার গন্ডাল মেঝেতে শুয়ে হা করে তাকিয়ে আছে। মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড়ে বলে,

‘শুভ ধারণায় বাসায় আসতে না আসতেই বিড়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে অশুভ হলো।’

কথা শেষে চোখ ফিরাতেই ব্যারিষ্টার গন্ডাল দেখি তার খুব নিকটস্থে শায়িত হয়ে আছে। থতমত খেয়ে বসারত অবস্থায় পিছিয়ে গেল রাফিয়া। রুজহান চোখের ইশারায় ‘কি’ বোঝায়। সে আমতা ভাব নিয়ে হেসে বলে,

‘কিছু না আহ্ কোমর।’

আস্তে ধীরে দুজনে দাঁড়িয়ে গেল। কিঞ্চিৎ সময় অতিবাহিত হলে রাফিয়া খেয়াল করে রুজহানকে ব্যারিষ্টারের ইউনিফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে। মানুষটার সুঠাম দেহের গড়নে, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণটা ফুটে উঠেছে ইউনিফর্মের সঙ্গে,সাজবিহীন তাকে গ্লো লাগছে, মুচকি হাসি তার ঠোঁটে বিরাজিত, যার ফলে ছোট আকৃতির টোল ভেসে উঠেছে গালে। আকস্মিক তুড়ি বাজানোর শব্দে হুঁশ এলো রাফিয়ার। রুজহানের চেহারায় দুষ্টু হাসি সেই সঙ্গে লাজুকের মত মুখের একপাশ বাঁহাত দিয়ে ধরে রেখে লাজুকতার কণ্ঠে বলে,

‘যে হারে নজর দিচ্ছিস, সে হারে কোনো আবার আমার ডায়েরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছিস না তো।’

রেগে বোম হয়ে গেল রাফিয়া রুজহানকে ধাক্কিয়ে ধপধাপ পা ফেলে রুমে চলে গেল। তার দিকে তাকিয়ে থেকে তৃপ্তির হাসি দেয় সে। হঠাৎ কানে ব্যথা লাগায় সে ‘আহ্ মা ছাড়ো!’ বলে নিজের কান ছাড়ানোর চেষ্টা করে রুজহান। কিন্তু তার মা ছেলের কান মলে দিয়ে বলে,

‘ছোট থেকে দেখছি তোকে মেয়েটারে জ্বালিয়ে মারিস। বিদেশে গিয়েও তোর এই রুপ পরিবর্তন করলি না। মেয়েটাকে জ্বালালে কি তোর পেটের ভাত হজম হয়! খালি যখন দেখি তখন মেয়েটার রাগের পিছে ঘুরঘুর করিস। আমি তো জানি বিদেশ থেকে যারা আছে তাদের মধ্যে গম্ভীরতা, চেঁতে যাওয়ার মত বুদবুদে রাগ থাকে। তোর ক্ষেত্রে কেন সব উল্টো!’

কোনোমতে নিজের কান ছাড়িয়ে রুজহান কলার ঠিক করে হাতের ফাইল সোজা করে ধরে। তার আদর্শ মায়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,

‘ওহে জননী মিসেস আরজিয়া বেগম তোমার অসভ্য স্বামী জনাব দিবায়েত হাসানের প্রভাব পড়েছে বলে আমিও জম্মগত বেঁকে না গিয়ে পেঁকে গেছি।’

নিজের স্বামীর কথা শুনে লজ্জায় পড়ল তার মা। হাত উঁচিয়ে মা’রার ভান ধরতেই রুজহান এক ছুটে দরজা থেকে বেরিয়ে যায়। দিবায়েত সাহেব ড্রয়িংরুমে বসে অরজান কোম্পানি থেকে আসা নতুন ব্যান্ডের কাপড়গুলো তে সিলমোহর লাগাচ্ছে। ফ্যানের বাতাসেও তার ঘাম ঝরা কমছে না বৈকি বাড়চ্ছে। মিসেস আরজিয়া স্বামীর নিকট গিয়ে বসে। আহ্লাদী গলায় বলে,

‘আমিও কিছু সাহায্য করে দেয়!’

‘না গো বউ তুমি শুধু আমাকে তোমার হাতের বানানো সুস্বাদু বেলের শরবত খেতে দাও। দেখবে তোমার স্বামীর এনার্জি চলে এলো।’

স্বামীর কথায় তৃপ্তির হেসে মিসেস আরজিয়া নিজ হাতে বেলের শরবত বানাতে রান্নাঘরে গেল। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দিবায়েত সাহেব হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নেই।

_____

ইফতিয়াসকে বদ্ধ রুমে আটকে রাখা হয়েছে। কোনো থানা নয় এই স্থানটি। বরং একটি অন্দরস্থান বলা যায়। যেখানে নেই কোনো সূর্যের কিরণ, নেই বাতাস। তার সামনে ‘মিস্টার আর’ নামের এক ব্যক্তি বসে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে তার চোখ দিয়ে ভস্ম করে দেবে ইফতিয়াসকে। শান্ত নিবিড় গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘অন্যের জিনিসে নজর দিতে ভালোই জানিস বন্ধু।’

ঢোক গিলল ইফতিয়াস। ‘বন্ধু’ শব্দটার সংস্পর্শ থেকে আজ বহু দূরে সে। আর নামের ব্যক্তিটি কালো ইউনিফর্ম নেড়েচেড়ে বলে,

‘মনে পড়ে সেই দিনের কথা যেদিন আমি প্রথম রাফিয়াকে প্রপোজ করতে আগ্রহদীপ্ত হয়ে ছিলাম। সেদিন তুই কোথাকার কোন ছেলে! হঠাৎ এসে আমার খাবারে ভাগ বসিয়ে নিলি।আগেবাগে প্রপোজ করে আমার প্রাণভোমরাকে কেড়ে নিলি। আরের কলিজার পূর্ণতায় অপূর্ণতার তর্কমা লাগিয়ে দিলি। দুনিয়ার জন্য আমি যতই ভালো,সিধাসাধা হয় না কেনো! অন্তঃস্থলে হলাম হিংস্র নেশাক্ত এক মানব। যার বুকপিঞ্জরের জ্বালা,নেশা মেটানোর ক্ষমতা রাখে রাফিয়া। আচ্ছা তোকে কি মে’রে দেব নাকি ছে’ড়ে দেব! ইশ! মে’রে দেয় পৃথিবীর বুক থেকে এক বোঝা কমে যাবে।’

গালে হাত রেখে ভাবান্তর হওয়ার ভান ধরে মিস্টার আর। যেহেতু সে একজন গুপ্তরক্ষক সেহেতু নিজ পদক্ষেপে কোনো সাজা নিধারণ করছে না। আফসোসের সুরে বলে,

‘না রে বন্ধু আমানতের খেয়ানত তুই করতে পারিস আমি নয়। মিস্টার আর তার কথার খেলাফ করে না। মিস্টার আর কি এমনিই খেয়ে দেয়ে হয়ছি! ইংরেজি লেটার আরের অক্ষরের ঠেং যেমন উল্টো তেমনি তোকে কড়া শাস্তি দেওয়ার জন্য মোক্ষম প্রাপ্তী জোগাড় করে রেখেছি। দেখা হবে আগামী প্রজম্মে।’

বিশ্রী হাসি দিয়ে মিস্টার আর ইফতিয়াসের সামনে থেকে চলে যায়। তার পরিবর্তে এলো পুলিশ অফিসারটি যিনি রাফিয়ার সঙ্গে ছিল। নাবিল হায়দার নাম তার। ইফতিয়াসকে আটকে রেখে মিস্টার আরের নিকটস্থ হলো। সন্তপর্ণে জানালার দিকে চেয়ে আছে সে। নাবিল কাশি দিয়ে বলে,

‘তুই ভাবীকে তোর ভালোবাসার কথা বলছিস না কেন! এখন থেকে তো সে ঐ ব্যারিষ্টার রুজহানের বাসায় থাকবে।

‘ভালোবাসা অদ্ভূত শব্দ রে। এর পরিধির পরিমাপ করা যায় না। প্রকাশে আনলে বুঝি উৎপেতে যাবে। আমি চাই না সে জানুন আমি তাকে চাই, অতিরিক্ত চাই। সে আড়ালে জানবে তার জন্য কেউ ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে।’

নাবিল মুচকি হেসে বলে,

‘ভালোই পল্টি খেতে জানিস।’

শুনে ঠোঁট কামড়ে হাসি নিয়ন্ত্রণ করে মিস্টার আর। নাবিল তার কাঁধে হাত রেখে দুঃখী গলায় আওড়ায়।

‘কষ্ট হয়েছে ভাবীর আহত অবস্থা দেখে।’

কথাটার তীব্রতা এত ছিল যে সে সজোড়ে এক ঘু’ষি দেয় জানালার গ্লাসে। ভেঙ্গে চুরমার হলো গ্লাসটি। নাবিল ঘাবড়ে গেল। বন্ধুর পুরু হাত রক্তে রাঙিয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ ডেস্ক থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে বন্ধুর হাতে ব্যান্ডেজ করতে লাগে। মিস্টার আর নির্লিপ্ত গলায় আওড়ায়।

‘কষ্টের চেয়েও বেশি দহন হয়েছে। মন চেয়েছিল এক নিমিত্তে পৃথিবী উজার করে দেয় ইফতিয়াসের পরিবারের। তবে দোষী একজন। অন্যজনদের অপমান করা হলো ভুলবশত অজান্তে। তাই সামান্য খবরাখবর নেওয়া উচিৎ বলে মনে করি।’

কথাটি শুনে চমকে গেল নাবিল। আশ্চর্য হয়ে বলে,

‘মানে কি করবি তুই এখন!’

শয়তানি হাসি দিয়ে মিস্টার আর ফোন বের করে এক সাংবাদিক কে কল দেয়। গলা ছোট করে কিছু তথ্য তাকে জানায়। আর পাবলিকলি হ্যান্ডেল করতে বলে। নাবিল চোখ বড় বড় করে বলে,

‘এত ড্রামাবাজ তুই। তাদের অবস্থা দেখে ব্যারিষ্টারের বাসায় ভাবীর কি খবর হবে তা ভাবতে পারছিস!’

মিস্টার আর কণ্ঠে কুবুদ্ধিতার ন্যায় স্বর এনে বলে,

‘মেয়েটা অবুঝ না হলে ঘাড় বেঁকে বিয়ে করে ফেলতাম। যাই হোক জামাই না ছাই স্যামপ্যাথি পাওয়ার আশা তো রাখতেই পারি। একখানা চিঠি পাঠাব ন্যাকা কান্নার। মেয়েটারেও সত্যিকার কাঁদাব। আমিও এখানে কাঁদব সেও কাঁদবে। মিয়াবিবি মিলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ কাঁদব সুন্দর আইডিয়া নাহ!’

নাবিল কপাল চাপড়ে বলে,

‘তোর পল্টি খাওয়া দেখলে আমারই বদ’হজম হয়ে যায়। যাক আমার বউটা নরম,বোকাসোকা। না হলে খুন্তির মা’ইর খেতে হতো।’

মিস্টার আর ঠোঁট কামড়ে বলে, ‘আজ থেকে নিশ্চিয় খাবি। নিজের মাথায় নিজেই কুড়াল মা’রলে যাহ হয় আরকি।’

ভ্রু কুঁচকে নাবিল বলে, ‘কেন বউ কি আর আমার কথা শুনতে পারতেছে নাকি! হাহ্ কোথায় ঘরের ঘরওয়ালী আর কোথায় আমি পুলিশ অফিসার।’

‘যারা পিছে তো মোড় কে দেখো ব্যাটা।’

নাবিলও খুশিমনে পিছনে তাকাতেই হা হয়ে যায়। তার বউ রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে তার উপর। ঐ চোখের দহন দিয়েই তাকে ভস্ম করে দেবে। কোমরে হাত রেখে বলে,

‘থানায় সাহসীগিরি করে আমার বদ’নাম করা, বাসায় এসে ভেজাবিড়াল সাজা। বাহ্ আজকে খালি বাসায় আসিয়েন। অপেক্ষায় থাকব আপয়্যনের।’

কথাটুকু বলে নাবিলের বউ চলে যায়। নাবিলের ঠোঁট নড়ছে বেকায়দায়। হয়তো এখনি কান্না করে দেবে সে। মিস্টার আর হেসে লুতুপুতু খাচ্ছে। বন্ধুকে ব্যঙ্গ করে ডাকছে ‘বউয়ের ভেজাবিড়াল হাহাহা।’
নাবিল অতিষ্ঠ হয়ে ধুমধাম চাপ্পড় লাগায় তার বন্ধুর পিঠে। এতে মিস্টার আরও কয়েক গা দেয়।

_____

রাফিয়া সবেই শাওয়ার করে বের হলো। মাগরিবের সময় শাওয়ার নিতে যাওয়ার সময় তার মামুনি অথাৎ রুজহানের আম্মু খুব বকে ছিল। তবে রাফিয়ার শরীর কেনো যেন ছটপট করছিল। বিধেয় শাওয়ার নেওয়া সঠিক ভেবে ঢুকে পড়ে ছিল।
গুন গুন করে গান গেয়ে তোয়াল পেঁচিয়ে রেখে চুল শুকাচ্ছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। কারো ‘আহেম আহেম’ তোঁতলানো কাশি শুনে স্তদ্ধ হয়ে যায় সে। হুট করে পিছে ফিরে দেখে বিছানায় মস্ত বড় ব্যারিষ্টার গন্ডাল আয়েশে শায়িত হয়ে ফোন টিপছে। ‘আহ’ করে একনিশ্বাসে চিৎকার দিয়ে উঠে রাফিয়া। ব্যারিষ্টার গন্ডাল দেখি তাও আয়েশে ফোন টিপেই যাচ্ছে। চিৎকার যেন তার কর্ণগোচর হলো না। আমতা আমতা করে রাফিয়া পা চালিয়ে ওয়াশরুমের ভেতর প্রবেশ করতে গিয়ে ঘটল আরেক বিপত্তি। রুজহান ওয়াশরুমের দরজার পাশে স্বল্পখানিক বডি পাউডার মেখে ছিল মেঝেতে। যেন পিছলা হয় মেঝে সেই সুবাদে। রাফিয়া ঠিক সেই স্থানে পা দেওয়ায় ধপাস করে পড়ল। একে তো বিশ্রী এক রুপে আছে সে, তার উপর মেঝেতে পড়ে যাওয়ার শব্দ। সবটা মিলিয়ে রাফিয়া ‘রুজহাননননন’ বলে চেঁচিয়ে উঠে। এবার যেন রুজহান তার ফোনের জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো। আড়চোখে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ধুর কিছুই নেই কেন তোর মধ্যে ! ভাবছিলাম কোথায় কি কি দেখব। এখানে তো পুরুই ভেজা মশলা। টাটকা শাক হতে পারলি না। ছেহ্ করলার চ’টি দেখি নিচে পড়ে আছিস। আচ্ছা আমার হিরোগিরি দেখার সুযোগ লুপে খেতে চাস। বাবু এটা তো হতো না। তুমি নিজ উদ্যোগে উঠবে আমার কাজ শেষ। আমি গেলাম ঘুমুতে।’

‘ব্যারিষ্টার গন্ডাল কোনখান। খালি পল্টি খায়। তোকে তো চড়ানো উচিৎ।’

‘চ’ড়াবি আসি কাছে!’

কথাটার মধ্যে দুষ্টু মনোভাবের সংমিশ্রণ থাকায় ভেবাচ্যাকা খেয়ে বিছানার বেডশীট দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলে রাফিয়া। রুজহান মিটমিটিয়ে হেসে শিষ বাজাতে থেকে রাফিয়ার বেলকনির মধ্যে এসে দাঁড়ায়। পাইপ বেয়ে নিজের রুমের বেলকনিতে চলে গেল সে। তার কার্যে রাফিয়া বুঝল দরজা বন্ধ থাকার সত্ত্বেও কেমনে বারিষ্টার গন্ডাল রুমে এসেছিল। ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে উঠে পড়ে অপ্রতিভ অবস্থা থেকে জলদি কাপড় পরিদান করে নেয়। বিছানায় বসে শুতে নিলে কেউ দরজায় কড়া নাড়ে। সন্তপর্ণে দরজা খুলে দেখে রুজহানের মা হেসে ভেতরে এলো।
হাতে তার নাস্তার ট্রে। মেয়ের মুখে বিস্কুট পুরে দিয়ে বলে,

‘তোর মা ও বোনকে দেখতে খুব মন চাইছে। জানি তোর যাওয়ার রাস্তা নেই। তবুও চেষ্টা করব তাদের নিয়ে আসার।’

‘মামুনি এত কেন ভালোবাসো আমাদের। কোথায় এক মধ্যবিত্ত শিক্ষকের পরিবার মেয়ে আমরা। বাবা ছিল দূর্ঘটনায় নিহত হয়ে পরপারে চলে যায়। সংসারের ভার কাঁধে নেয় খালু। তবে ছেলের কুকীর্তির ফাঁসে আমিই ত্যাজ্য হয়ে গেলাম।’

‘তুই আমার ছোট সোনা ছিলি আর থাকবিই। আচ্ছা তুই তাওসীফকে কি বলে ডাকিস!’

‘মাঝে মাঝে তাওসীফ ভাই তো আবার রুজহান। রুজহানই বেশি ডাকি।’

‘কেনো!’

‘ক্লাস টেনে পড়ার সময়ে রুজহান নিজে বলে ছিল তাকে যেন খালি আমিই যেন রুজহান ডাকি।’

‘কেনো ডাকতে বলছে জানিস!’

‘সম্পর্কে ফুফাতো ভাইবোন। তার চেয়ে বড় কথা সে সিনিয়র হলেও বন্ধুসুলভ আচরণ করে আমার সঙ্গে। এজন্য আমাকে এত আদর করে রুজহান ডাকতে বলেছে।’

মিসেস আরজিয়া ঢোক গিলে আনমনে। হাস্যজ্জ্বল রাফিয়ার দিকে চেয়ে ভাবান্তর হলো।

‘তুমি জানোই না মামুনি কোন বিপদে তুমি পা ফেলে আমাদের সংস্পর্শে এসেছো। তোমাকে তোমার বাবা-মা কখনোই আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে দিতো না। ভাবী হয়ত জানেই না তুমি কোথায়! অতীত যে বড্ড পিড়াদায়ক। যদি জানতে পারো তোমার অতীতে ঘটা তোমার বাবার দূঘর্টনার রহস্য। তবে কি তুমি ছেড়ে চলে যাবে। এমনটা হলে যে বাহিরে থাকা জ্যান্ত হিংস্র উম্মাদ তোমার পিছু নেবে। সে যে বড্ড উম্মাদ তোমার জন্যে। কম উম্মাদ হয়নি তোমার বিরহে। তোমায় এখানে দেখে শান্ত থাকলেও রাতের আঁধারে তোমারই নেশা করে বেড়ায়। এটা আমি ভালোই জানি। তাওসীফ আছে বলে তুমি বেঁচে যাও। কিন্তু কোথাও না কোথাও সে লুকিয়ে চলেই আসে তোমার কাছে।’

মনেমনে তিক্ত কথাগুলো ভেবে গতরাতের কথা ভাবতেই আতঁকে উঠে তিনি। রাফিয়া তার মামুনিকে অন্যমনস্ক দেখে বলে,

‘কি হলো মামুনি খাওয়ে দাও।’

সম্বিত ফিরলে তিনি নিঃশব্দে হাসিমুখে খাওয়াতে লাগে রাফিয়াকে। জানালার ওপার থেকে কেউ যে আফিমের চোখজোড়ায় রাফিয়াকে দেখে যাচ্ছে তার ধারণাই নেই রাফিয়ার।

চলবে….

#অতিরিক্ত_চেয়েছি_পূর্ণতায়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#বোনাস_পর্ব

‘ঐ অপয়া মেয়ে বউ হয়ে এসে সংসারটাও ঠিকতে দিলি না। তোর কারণে ছেলেও গেল,বোনের মেয়েও গেল। তোর মত কালনাগিনীর কারণে সমাজের মুখ নষ্ট হচ্ছে।’

মিসেস রহমানা চেঁচিয়ে কথাগুলো বলছে আর ইশিতার চুলের মুঠি ধরে নাড়ছে। ব্যথায় ইশিতা দাঁতে দাঁত চেপে শ্বাশুড়ির হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। করুণ কণ্ঠে বিনতি করে।

‘আহ্ মা ছেড়ে দেন। কি ভুল করেছিলাম আমি! ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার লোভে নিচু হয়েছি। এতে তো গুনাহ নেই।’

মুখে মুখে তর্ক যেন মিসেস রহমানার রাগে ঘি ঢালার মত হলো। তিনি এক চ’ড় লাগায় ইশিতার গাল বরাবর। বিনিময়ে তার শরীর ঝুকল। মুখ গিয়ে লাগল কালো পাতিলের মধ্যে। পুরু মুখটাই যেন কালোতে মাখামাখি হয়ে গেল তার। জনাব নাহিরউদ্দীন উদাসীন মনে সোফায় বসে আছে। গত কয়েকদিন পূর্বেও এই বাসায় হৈহুল্লোড় চলছিল। আদরের ভাগ্নীর সঙ্গে মন্দ কর্ম করার ফল পাচ্ছে বর্তমানে। তার মুখও নেই ভাগ্নীর মুখোমুখি হওয়ার। তপ্ত শ্বাস ছেড়ে টিভি চালু করে।
কিন্তু এমন কিছু শুনতে পেয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায় তিনি।

‘শহরের নামকরা বিদ্যুৎ কারখানার মালিক নাহিরউদ্দীন আহমেদের ছেলে ইফতিয়াস আহমেদের চরিত্রের খোলাসা হচ্ছে। যিনি রাস্তাঘাটে সৎ সাধুবেশে চলেন। তিনিই যে বহিরুপী ধর্ষক, অসৎ রুপে ঘুরাঘুরি করছেন কেই বা জানতো। বাবা-ছেলের মধ্যকার সম্পর্কও হয়তো মিলিত আছে। তিন মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে বেড়ানো ছেলেদের যেন এই যুব সমাজ থেকে বিতাড়িত করা হোক। পরবর্তী খবর জানতে পাশে থাকুন বিটিভি চ্যানেলের সঙ্গে। ধন্যবাদ আসসালামুয়ালাইকুম।’

সাময়িক খবরের রেশ যে কতটুকু রটবে তা ভাবতেই নাহিরউদ্দীন সাহেবের বুকে ব্যথা আরম্ভ হলো। বছরের পর বছরের জমানো সম্মান ছেলের কুকর্মের দায়ে নিলামে উঠেছে। ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। মিসেস রহমানা স্বামীকে চা দিতে এসে স্বামীর বিধস্ত চাহনী দেখে আতঁকে উঠে। তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করে।

‘কি হয়েছো গো তুমি ঠিক আছো!’

নাহিরউদ্দীন সাহেব হাতের তর্জনী আঙুলের ইশারায় টিভির স্ক্রিনে তাকাতে আদেশ দেয় স্ত্রীকে। তিনিও মুখ ঘুরিয়ে টিভির স্ক্রিনে বিটিভি চ্যানেলের খবর দেখে। নাহিরউদ্দীন সাহেব রিভিউ দিয়ে চালু করে চ্যানেলটি। পূর্বের শুনা খবরটি শুনে মিসেস রহমানার দুনিয়া উজার হওয়ার উপক্রম। অসহায় দৃষ্টিতে তিনি স্বামীর দিকে তাকায়। সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

‘ওগো আমাদেরকে রাফু মামুনি বাঁচাতে পারবে। সে পুলিশের আন্ডারে জব করে। দেখো তুমি আর আমি ক্ষমা চেয়ে কথা বললে নিশ্চয় সে মেনে নেবে আমাদের।’

ইশিতা আড়াল থেকে শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির কথা শুনে মনেমনে চেঁতে যায়। চোয়াল শক্ত করে বিড়বিড় করে বলে,

‘এত অত্যাচার তো নিজের দুশমনও সহ্য করবে না। আমি করছি কারণ এই ঘরের স্থায়ী ঠিকানা আমার নিজের করতে। ইফতিয়াসের বউয়ের উপাধি আমি ছাড়ছি না। রাফিয়ার হক তো বসতেই দেব না। সে এ ঘরের হয়ে কিভাবে সহায়তা করে আমিও দেখব। বুড়া বুড়ি যতই প্ল্যান সাজান না কেনো! আমিও আপনাদের আদরের শয়তানি বউমা। রাফিয়ার কদম কখনো এ ঘরের মধ্যে পড়বে না।’

হিংস্র দৃষ্টিতে চেয়ে ঠোঁটের র’ক্ত হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে নির্বিঘ্নে মুছে নেয়। কুড়িয়ে হেঁটে রান্নাঘরে এসে টুলের মধ্যে বসে পড়ে। কাজে হাত লাগায়। বাঁচার জন্য কাজ যেমন করবে তেমনি শত্রুর হস্তান্তর না হতে মিথ্যে বানোয়াট অভিনয়ও করবে। ঐ যে কথায় আছে না, উদোরপিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে।
তেমনি ইশিতা নিজের শ্বশুর শ্বাশুড়ির মধ্যে হওয়া কথোপকথনের মিথ্যে কথা বানিয়ে রাফিয়াকে শুনাবে। যার ফলস্বরুপ সে বাধ্য ইশিতার কথায় অপমান করতে তার খালা-খালুর।
পাতিল মাজতে থেকে বাঁকা হাসে ইশিতা।

_____

ব্যাচলার অফ ইকোনমিক এন্ড ব্যাংকিং অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ভর্তির কাগজপত্র জোগাড় করে রাফিয়ার হাতে ধরায় রুজহান। এতে বেশ উজবুক দৃষ্টিতে চাই সে। রুজহান ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘কি চোখ ওমন ফাটাবাঁশের মত করে তাকিয়ে আছিস কেন!’

‘না দেখছি তুই কোন গন্ডালের চামড়ায় পয়দা হয়েছিস। আমাকে একটু রেস্টিং টাইমেও থাকতে দিলি না। অসুস্থতা এখনো আমার মুখে, ঠোঁটে ভাসমান। আর তুই কিনা অনার্সের ভর্তির সিলমোহর নিলে এলি।’

হামি দিয়ে রুজহান তার বাবার পাশে ধপাস করে বসে বলে,

‘বাবা কারো মনে হয় মূর্খ থেকে যাওয়ার ইচ্ছে জাগছে।’

দিবায়েত সাহেব নির্বোধ মুখে পেপার দেখছে। ছেলে-মেয়ের কথার মাঝে তিনি টু শব্দ করবে না। এইটাই তার পুত্রের নিয়ম। চোয়াল শক্ত করে রাফিয়া বলে,

‘এই যে ব্যারিষ্টার বাবু আমাকে মূর্খ বলছেন কোন সাহসে!’

‘কি তুই আমারে বাবু ডাকলি! বাহ্ সূর্য আজ কোন দিকে অস্ত গিয়ে ছিল বাবা। তোমার মামুনির শুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তো। বিয়ের পিরীতে বসিয়ে দাও। দেখবে বছর না ঘুরতেই দাদার ডাক শুনিয়ে দেবে।’

লাগামহীন কথায় যেন রাফিয়ার কান পেঁকে গেল। কাগজগুলো চেপে ধরে রুমে চলে যায়। আর কিছুক্ষণ কাগজপত্র না গুছালে তার চৌদ্দগ্রাম উম্মুক্ত করে দেবে বজ্জাত ব্যারিষ্টার গন্ডালটা। রাফিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেহে করে হেসে দেয় রুজহান। দিবায়েত সাহেবের হাত কাঁপছে। ছেলের লাগামহীন কথ্য বুড়ো বয়সে এসে শুনতে থাকলে একদিন ফিট খেয়ে প্যারালাইজড হওয়া লাগবে তার। বাবার কাঁপুনি দেখে রুজহান কি বুঝল কে জানে! নির্লিপ্ত কণ্ঠে তার বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

‘মৃগী রোগ দ্বারা মাকে ডাকার ইচ্ছে পোষণ করতে হবে না বাবা। আমি বুঝে গেছি। বাসরের ফিলিং জাগছে তোমার। আলহামদুলিল্লাহ মা এখনো যুবতী আছে কাজ সেরে ফেলো। ওমাহহহ তুমি কোথায় এসে দেখো যাও তোমার স্বামীর মৃগী রোগ ধরা পড়েছে।’

কথা পরিপূর্ণ করে তৎক্ষণাৎ পালাল সে। কারণ একমুর্হুত থাকলে দিবায়েত সাহেব যে তার মাথায় জোরালো চা’টি মার’তো। এ নিয়ে পূর্ব থেকে অবগত রুজহান। রাফিয়া রুমে বসে কাগজে তথ্য পূরণ করছে। সেখানে বিস্তারিত বর্ণনা করছে পূর্বের ভার্সিটি থেকে জরুরিভিত্তিক ট্রান্সফার নিয়েছে। কিন্তু এর কাগজ জোগাড় করতে তো পুরুনো ভার্সিটিতে তার যাওয়া লাগবে। ভাবতেই তার গা রিরি করে উঠল। ওই ভার্সিটির প্রতিটি মেয়েছেলে ইফতিয়াসের দলবল। হাতে গোনা তিনচার জন বান্ধবীরা প্রায় বিদেশ না হয় জেলা পরিবর্তন করে ফেলেছে। চিন্তিত মনে ভাবল, ট্রান্সফার সার্টিফিকেট জরুরী লাগবে। অন্যথায় রুজহানের দেওয়া ফরমের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারবে না।

কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে চুরিচুপে বেরিয়ে পড়ে রাফিয়া। কোনো ধরনের লোকের কোলাহল নেই রাস্তায়। তবুও সে নিরুপায়। প্রিন্সিপালের কাছ থেকে আব্যশিক ট্রান্সফার সার্টিফিকেট লাগবেই। সে জানে এ মুহুর্তে ভার্সিটির মধ্যে ইফতিয়াসের দলবল থাকবে না। সকালের নয়টা চল্লিশ বাজে। দশটায় চলে আসবে প্রিন্সিপাল। রিকশায় চড়ে ভার্সিটি এসে ভাড়া মিটিয়ে তৎক্ষণাৎ প্রিন্সিপালের রুমের সামনে চলে এলো। দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগে। চল্লিশ মিনিট পেড়িয়ে পঞ্চান্ন মিনিট হয়েছে। এতে সে শান্তভাবে বসতে পারল না। কখন না জানি ইফতিয়াসের দলবল চলে আসে। পায়চারী করতে লাগল। দশটা দশ মিনিটে প্রিন্সিপাল এলো। তিনি এসে রাফিয়াকে দেখে হতবুদ্ধির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। অবাকের গলায় জিজ্ঞেস করে।

‘তুমি এখানে এত সকালে কি করছো? ক্লাসে যাবে না।’

রাফিয়া উৎকণ্ঠার গলায় বলে, ‘স্যার আমার ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিলে খুশি হতাম।’

প্রিন্সিপাল হতাশা প্রকাশ করল। তাদের ভার্সিটি থেকে বিনা কারণে মেধাবী এক ছাত্রী চলে যাচ্ছে। এই যেনো এক দুঃখজনক ব্যাপার। নিঃশব্দে তিনি তার কেবিনে ঢুকে পড়ে। আলমারির মধ্যে ডকুমেন্টারি ফাইল থেকে রাফিয়ার ট্রান্সফার সার্টিফিকেট বের করে।
নিজের কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পেয়ে কৃতজ্ঞের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকায় রাফিয়া। প্রিন্সিপাল নিজের চশমা ঠিক করে বলে,

‘মামুনি তুমি অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলে মাশাআল্লাহ। হঠাৎ চলে যাওয়া বড্ড বেমানান লাগল। তবে তোমার পার্সনাল ম্যাটারে আমি কিছু বলছি না। তুমি নিঃসন্দেহে যেতে পারো।’

‘থ্যাংকিউ স্যার এন্ড প্রে ফর মি। আল্লাহ হাফেজ।’

প্রিন্সিপালের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খোশমনে গেইটের নিকটস্থ হতে গেল রাফিয়া। কিন্তু কে জানতো এমন এক ঝড় তার মাথার উপর ঘুরঘুর করছিল। গেইটের কাছে আসতে না আসতেই কে যেন তার বাহু ধরে মুখের মধ্যে স্প্রে করে দেয়। অচেনা ব্যক্তি চোরা দৃষ্টিতে সর্বদিক চোখ বুলিয়ে ভার্সিটির পেছনের পুরুনো বদ্ধ রুমের মেঝেতে ছুঁ’ড়ে দেয় রাফিয়াকে। এমন আলো-বাতাসহীন পরিবেশে কয়েকদিন থাকলে নিশ্চিত দম বন্ধ হয়ে মা’রা যাবে যে কেউ ! দরজাটা তালাবদ্ধ করে চাবিটা পচাঁ ডোবায় ফেলে দেয় সেই অচেনা ব্যক্তি। মুখের মধ্যে বিশ্রী হাসি টেনে বলে,

‘তোর জীবনের হায়াত এখানেই শেষ। খুব শখে লাগতে চেয়ে ছিলে আমাদের সঙ্গে। এবার আরামে ফলাফল ভোগ করেন মিস রাফিয়া বুহিয়ান।’

চলবে…..